
বিশিষ্ট অভিনেতা, চলচ্চিত্রকার, শব্দসৈনিক মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সুভাষ দত্ত (৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৩০-১৬ নভেম্বর ২০১২) সর্বৈবভাবে ছিলেন একজন সৃজনশীল সত্তা, কুশলী কৃতবিদ, সৎ ও স্বচ্ছমনের অধিকারী। প্রায় এক যুগ আগে নিজের সহযাত্রী আত্মীয়ের সড়ক দুর্ঘটনায় মর্মান্তিক মৃত্যু দেখে জীবন ও জগৎ সম্পর্কে তার উপলব্ধির স্তরে এমন আলোড়ন সৃষ্টি হয় যে পরবর্তীকালে তিনি সর্ববাদী, সাত্ত্বিক সাধনায় নিবেদিত হন। তার ‘আলিঙ্গন’ ছবিতে এ ধরনের একটি চরিত্রের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটেছিল আমাদের। তার মধ্যে আমরা এমন একটি চরিত্রের সন্ধান পাই যার কাছে সব ধর্ম ও মতের মধ্যে ঐকমত্যের মর্মবাণী অনুভূত হয়। রামকৃষ্ণ মিশনের অনুরক্ত অনুসারী, বেলুড়মঠের নরেন্দ্রপুরের আত্মিক সাধনার সাত্ত্বিক পুরুষ সুভাষ দত্ত‘মনরে চল নিজের নিকেতনে’ স্বামী বিবেকানন্দের এই ভূয়োদর্শনে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন। সব ধরনের সংকীর্ণতা রহিত সুভাষ দত্ত সর্ববাদী মতাদর্শের ছিলেন। তিনি অকপটে লিখেছেন
‘আমি ধর্মান্ধ নই, আমার ভেতর কোনো সংকীর্ণতা নেই। আমি আজমির শরিফে গিয়েছি বেশ কয়েকবার। শাহজালাল, শাহপরান, শাহ মোস্তান, হাইকোর্টের মাজার, মিরপুরের মাজারএসব জায়গায় আমি গিয়েছি। টুপি পরে বা মাথায় পাগড়ি দিয়ে ধ্যান করেছি, মোনাজাত করেছি। আমি মিলাদ-মাহফিলে শরিক হয়েছি। চার্চে নতজানু হয়ে যিশুর সামনে প্রার্থনা করেছি, গিয়েছি বৌদ্ধ বিহারে।’
অনন্য সৃজনশীল প্রতিভার অধিকারী সুভাষ দত্তের শিল্পভাবনার শর্ত ও মূল্যবোধ ছিলজীবন-সংগ্রামে মুখর তুখোড় তৎপরতা শেষে শিকড়ের কাছে প্রত্যাবর্তন, নিজের উপলব্ধির কাছে ফিরে আসা। পৈতৃক নিবাস বগুড়ার সারিয়াকান্দি ধুনটের হাটশের গ্রামে আর লেখাপড়ার হাতেখড়ি দিনাজপুরে মাতুলালয়ে, বড় হয়েছেন সেখানে। নিজে পড়াশোনার পাঠ মাঝপথে চুকিয়ে ‘ফিল্মের টানে’ সুদূর বোম্বেতে পাড়ি জমিয়েছিলেন, সেখানে ‘অনেক কিছু’ করার পর দেশে, সেই দিনাজপুরেই ফিরেছিলেন। ‘জীবিকার শহর ঢাকায়’ তার পদার্পণ ১৯৫৩ সালের ২৩ নভেম্বর।
ঢাকায় সিনেমার প্রচারপত্র ও আর্ট ডিরেকশন এবং বাংলা-উর্দু ছবিতে কৌতুকপ্রদ চরিত্রে অভিনয় করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছিলেন। অসম্ভব অনুসন্ধিৎসু এবং সূক্ষ্ম দৃষ্টির অধিকারী কঠোর পরিশ্রমী এই মানুষটির সব সময় আগ্রহ ছিল সৃজনশীল কিছু করার। জীবনকে যেমন দেখতেন তীক্ষ্ন দৃষ্টিতে তেমনি এর শিল্পিত রূপায়ণেও ভাবতেন বেশি। আর এর জন্য তার পড়াশোনা ও অধ্যবসায় শেষমেশ মেশে সেলুলয়েডের ফিতার ক্যানভাসে জীবনের নিত্যতাকে তুলে ধরার।
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের চলচ্চিত্র শিল্প যখন পশ্চিম বাংলার সেরা সব বাংলা ছবি এবং পশ্চিম পাকিস্তানের উর্দু ছবির প্রচন্ড ঢেউয়ের ধাক্কায় নিরুদ্দেশ যাত্রী, এই ঢাকাতেও উর্দু ছবি নির্মাণের বন্যা বইতে শুরু করেছিল, বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনে রক্ত দিতে হচ্ছিল, স্বাধিকার থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অয়োময় আকাক্সক্ষা যখন দানা বাধছিলসে সময় ১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্ত ‘সুতরাং’ ছবি নির্মাণ করে বাঙালির, বাংলা সংস্কৃতির, সৃজনশীলতার, মৌলিকত্বের মর্মমূলে যেন আত্মবিশ্বাসের বিজয় নিশান উড়িয়ে দিলেন। সুতরাং সবই নতুন-চিত্রনাট্যকার, পরিচালক, সংগীত পরিচালক, গীতিকার, নায়িকা, নায়ক, প্রযোজক, এরা সবাই যেন এক কাতারে শামিল হলেননতুন পথের, প্রত্যয়দীপ্ত নবযাত্রার অভিষেক ঘটাতে।
সুভাষ দত্ত ‘সুতরাং’ করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প নেন ১৯৬২ সালের শেষের দিকে। পত্রিকায় সুতরাং বানানোর বিজ্ঞাপন দেখে বাংলাবাজারের মেসে বসবাসকারী জনৈক সত্যসাহা (১৯৩৪-৯৯) সত্যই সাহস করে এসে সুরকার হতে চাইলেন। সুভাষ দত্তের ভাষায়‘আমি সত্যসাহার দু-একটা পরীক্ষা নিলাম। কেমন সুর-টুর জানে। তারপর ছবির সিচুয়েশন নিয়ে বসলাম। বললাম এ ধরনের গান লাগবে আমার ছবিতে। সৈয়দ শামসুল হকের সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে। এটা হওয়ার পর আমি নায়িকা খুঁজব। যেহেতু আমি বেঁটে মানুষ। তাই ছোটখাটো একটা মেয়ে দরকার আমার বিপরীতে, নায়িকা হওয়ার জন্য।’
তার নায়িকা চট্টগ্রামের মিনা পাল। তার আবিষ্কারের কাহিনীটিও অভিনব।
‘আমি ছবির ষোলোটি দৃশ্যের স্কেচ এঁকে পাঠালাম। স্কেচ দেখে মীনার ছবি তুলে আনলেন সত্য সাহা। কয়েকটি ফটোগ্রাফ খুবই ভালো লাগল। বললাম, ঠিক আছে। ওকে আসতে বলো। তারপর মীনা তার বাপ এবং বোনদের নিয়ে ঢাকা এলো। এখন আমার দুই প্রোডিউসার ওকে দেখে হই চই করে উঠলেন। আরে, এ দেখছি খুবই ছোট মেয়ে। বাচ্চা মেয়ে। একে দিয়ে হবে নাকি। মীনা পাল ফ্রক পরা ছিল। আমি বললাম, ফ্রকটা ছেড়ে শাড়ি পরে এসো। ওরা নবাবপুরে, ঢাকা বোর্ডিংয়ে উঠেছিল। সে হোটেলে গিয়ে শাড়ি পরে এলো। দেখলাম ভালোই লাগছে। মুহূর্তে শুঁয়োপোকা থেকে প্রজাপতির মতো মীনা পাল থেকে কবরী বেরিয়ে আসে। ওর চেহারার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল ওর হাসি।’
তার সেরা চলচ্চিত্রগুলোর মর্মবাণী হলো শিকড়ের কাছে ফিরে আসা। ‘সুতরাং’ ছবিতে তার নিজের অভিনীত চরিত্র সিপাহি জব্বার শহরে ব্যস্ত সমস্ত কর্মজীবন ছেড়ে ‘ওরে মন ছুটে চল মধুমতি গায়’, গাইতে গাইতে ফিরেছে গ্রামে। ‘কত ঘুরে এলাম কত দেখে এলাম অশান্ত মনে আমি ছুটে এলাম... আমার গায়ের মত কভু দেখিনি, সে যে আমার জন্মভূমি...’। ‘আলিঙ্গন’র সাধু বাবার মতো সুভাষ দত্ত তার শিল্পকর্মে, ‘বসুন্ধরা’য় সেই মাটির কাছে ফিরে যাওয়ার আকুতি প্রকাশ করেছেন। দেশিকোত্তম এই ব্যক্তিত্ব নিজের দেশ, মাটি ও মানুষকে সর্বোচ্চ মহিমায় দেখিয়েছেন। ১৯৭১ সালে হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দি হয়েও সেই অভিনয় সুনামের সুবাদে পাঞ্জাবি ক্যাপ্টেনের শ্রদ্ধা ও সমীহবোধের কারণে মুক্তি পেয়েছিলেন। নিজের সেই মুক্ত পাওয়ার স্মৃতিকে ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষীতে’ আনোয়ার হোসেনের অভিনয়ের মধ্যে তুলে ধরেছেন।
‘সুতরাং’ ছবিতে নিজের প্রেমিকা জরিনার মাতৃহারা সন্তানকে লালনপালনের দায়িত্ব নেওয়ার ঔদার্য যেমন দেখিয়েছেন, তেমনি ১৯৭২ সালে যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে বীরাঙ্গনাদের সামাজিক পুনর্বাসনে রেখেছেন মানবীয় দর্শনের ব্যাখ্যা ও সমাধানের প্রেরণা। অধ্যাপক আশরাফ সিদ্দিকীর ‘গলির ধারের ছেলেটি’র চলচ্চিত্রায়ণে (ডুমুরের ফুল) একই সঙ্গে শিশু মনস্তত্ত্বের ও মানবীয় দৃষ্টিভঙ্গির এমন কাব্যিক শোকগাথা নির্মাণ করেন, যা একটি ধ্রুপদি শিল্পকর্মে উন্নীত হয়। ‘আবির্ভাব’ ও ‘ ‘বসুন্ধরা’ ছবিতে সন্তানময়ী মায়ের আবেগ ও আকিঞ্চন আকাক্সক্ষাকে শৈল্পিক তুলিতে বিমূর্ত করেছেন। তার তাবৎ চলচ্চিত্রেই মানবিক মূল্যবোধের, সমাজ দর্শনের, এবং নিবিষ্ট চিন্তা-চেতনার ভাষ্যে বাক্সময় হয়ে উঠেছে।
নারীশিক্ষার অগ্রদূত মহীয়সী মহিলা বেগম রোকেয়ার ওপর সরকারি অনুদানে তার নির্মীয়মাণ শেষ ছবি শেষ করার ব্যাপারে তিনি বিশেষ আগ্রহী ছিলেনএ ছবিতে তিনি বেগম রোকেয়ার সামাজিক ভূমিকাকে বিশেষ ব্যঞ্জনায় তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। দৈনিক ইত্তেফাকে ‘বেগম রোকেয়ার সামাজিক ভূমিকা’ শীর্ষক আমার একটি প্রবন্ধ পড়ে এ ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহ বোধ করেছিলেন। সামাজিক গবেষণার প্রতি তার নিষ্ঠা ছিল, প্রচুর পড়াশোনা করতেন। দুর্ভাগ্য, অলঙ্ঘনীয় জটিলতার আবর্ত ও অবগুণ্ঠন থেকে বেগম রোকেয়ার ওপর ছবিটি নির্মাণে পৃষ্ঠপোষকতা সুনিশ্চিত করা যায়নি। এ নিয়ে তিনি প্রায়ই উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করতেন। কালজয়ী এক সৃজনশীল কাজের অপ্রকাশের এই অব্যক্ত বেদনাবোধ নিয়েই তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।
সুভাষ দত্ত একজন মহৎপ্রাণ শিল্পী ছিলেন। চলচ্চিত্রকে শিল্প মর্যাদায় অভিষিক্ত করতে তার প্রয়াসের যেমন অন্ত ছিল না, আবার তার হাতেই বাংলা চলচ্চিত্রে পুঁজি বিনিয়োগের সার্থকতার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বলাবাহুল্য, তিনিই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে নাবালকত্ব থেকে সাবালকত্বে, উর্দু ছবির ভাববন্ধন থেকে বাংলা ছবিকে রক্তমাংসসহ সবল-সতেজ ও শিল্প বিনিয়োগ উপযোগী করে তোলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। পুরো ষাট ও সত্তরের দশকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন তিনি।
লেখক: সাবেক সচিব, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান
তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্ত এলাকার কয়েকটি শহর ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, ১৯ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। তুরস্কের ভূমিকম্পের খবর গণমাধ্যমে এভাবে এসেছে, ‘ঘুমন্ত দুই দেশে মৃত্যুর সকাল। তখন ভোররাত। বাইরে ঝিরিঝিরি তুষার পড়ছে। তীব্র শীতে ঘরের উষ্ণতায় বেশির ভাগ মানুষই গভীর ঘুমে। কিন্তু সে ঘুম যে আর ভাঙবে না তা জানা ছিল না হাজারো মানুষের। সোমবার ভোর সোয়া ৪টার সময় তীব্র ভূমিকম্পের আঘাতে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে ঘরবাড়ি। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার বহু শহরের বাসিন্দারা।’
মানুষের কর্মকুশলতা পরীক্ষার জন্য আল্লাহতায়ালা সৃষ্টি করেছেন ‘জীবন ও মৃত্যু’। সুরা মুলকের সূচনায় আছে, ‘আল্লাহ জীবনের আগেই মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন।’ আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করেন নানাভাবে। মানুষ অনিবার্য কিয়ামতের দিকে ধাবিত হচ্ছে, যা এক মহাপ্রলয়ংকরী ভূমিকম্প। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন প্রবল কম্পনে জমিন প্রকম্পিত করা হবে। আর জমিন তার ভার বের করে দেবে। আর মানুষ বলবে, এর কী হলো? সেদিন জমিন তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে।’সুরা জিলজাল : ১-৪
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আয়াত পাঠ করলেন এবং বললেন, ‘তোমরা জানো, পৃথিবীর বৃত্তান্ত কি? সাহাবিরা (রা.) বললেন, আল্লাহ এবং তার রাসুলই ভালো জানেন। নবী করিম (সা.) বললেন, তার বৃত্তান্ত এই যে, নর অথবা নারী এ মাটির ওপর যা কিছু করছে এই মাটি তার সাক্ষী দেবে। আর বলবে, অমুক অমুক ব্যক্তি অমুক অমুক দিনে অমুক অমুক কর্ম করেছে।’মুসনাদে আহমদ : ২/৩৭৪
বস্তুত ভূকম্পনের মাধ্যমে আল্লাহ তার বান্দাদের সতর্ক করেন, যাতে তারা অনুতপ্ত হয় এবং আল্লাহর পথে ফিরে আসে। এই সঙ্গে আমাদের অবশ্যই চিন্তা করা উচিত, কেন এত ভূমিকম্প হচ্ছে? মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি ভয় দেখানোর জন্যই (তাদের কাছে আজাবের) নিদর্শনগুলো পাঠাই।’সুরা বনি ইসরাইল : ৫৯
বাংলাদেশেও মাঝেমধ্যে ভূমিকম্প হয়। তখন দেখা যায়, ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিতে লোকজন ঊর্ধ্বশ্বাসে ছোটাছুটি করছে। কেউ কেউ তো নিজেকে বাঁচাতে বহুতল ভবন থেকে লাফ দিয়ে প্রাণ হারিয়েছে। সামান্য সময়ের ভূমিকম্প শুরু ও শেষ হওয়ার পর অল্প কিছু মানুষ ছাড়া অধিকাংশের কাজ ছিল ভূমিকম্পের সময় কার কী অবস্থা হয়েছিল এবং ভূমিকম্পের আশঙ্কা কোথায়কতটুকু আছে এসব নিয়ে আলোচনা। বড় একটি অংশকে দেখা গেছে, ভূমিকম্পের দশ-পনেরো মিনিট পর থেকেই ফুর্তি ও আনন্দের আমেজ নিয়ে উল্লাস করতে। যেন এটা তেমন কিছুই নয় এবং এতে সতর্ক হওয়ার কিছুই নেই। অল্প কিছু মানুষ এ সময় অন্যান্য সতর্কতার পাশাপাশি তওবা-ইস্তেগফার করেছেন। মনেপ্রাণে আল্লাহকে ডেকেছেন, আল্লাহর দরবারে দোয়া করেছেন। ভূমির কম্পনের সঙ্গে সঙ্গে হৃদয়ে পাপ ত্যাগ করে ভালোর পথে প্রত্যাবর্তন ও অনুতাপের কম্পন অনুভব করেছেন।
ভূমিকম্পের মতো বিপর্যয়কর একটি কুদরতি দুর্যোগ যখন চলে আসে, তখন কোনো মানুষেরই কিছুই করার থাকে না। বিজ্ঞানের এত উন্নতি সত্ত্বেও কোনো পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হয় না। এটা অবশ্যই আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে সতর্কীকরণ। তার পরও দেখা যায়, সমাজের একটি বড় অংশ এমন একটা গা-ছাড়া অবস্থায় অভ্যস্ত হয়ে গেছে যে, এতে কোনোভাবেই সতর্ক ও অনুতপ্ত হওয়ার মতো কোনো বোধ জাগ্রত হতে চায় না। অথচ মুমিনের অবস্থা এমন হওয়ার কথা নয়। পবিত্র কোরআনের ভাষায় এ বৈশিষ্ট্য কাফের ও মুনাফিকদের। সুরা তওবার ১২৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তারা কি লক্ষ করে না, প্রতি বছর তারা দু-একবার বিপর্যস্ত হচ্ছে। অথচ তারা এর পরও তওবা করে না কিংবা উপদেশ গ্রহণ করে না।’
বান্দা তো সর্বাবস্থায় অসহায়। একটু সমস্যায় পড়লেই সেটা টের পাওয়া যায়। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও ভূমিকম্পসহ নানা পর্যায়ের বিপদে সেটা অনুভব করা যায়। মুমিন বান্দার কাজ এমন অসহায় অবস্থায় আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা এবং জীবনব্যাপী করতে শেখা।
সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে ছোট-ছোট বিপদাপদরূপে কিছু শাস্তি যখন আসে, তখন আল্লাহর কথা স্মরণ হওয়া, অন্তরে তার ভয় জাগ্রত হওয়া, তার দিকে ফিরে আসা কাম্য। তাহলে মৃত্যুর আগেই মানুষ তার রবের পরিচয় পেয়ে যায় এবং আখেরাতের শাস্তি থেকে নাজাত পেয়ে যায়। পক্ষান্তরে ছোট-ছোট বিপদে মানুষ যদি সাবধান না হয়, এমনকি অন্যের ওপর পতিত বড় বড় বিপদ কিংবা প্রাণঘাতী বিপদেরও নানা ‘ব্যাখ্যা’ দাঁড় করিয়ে দয়াময় আল্লাহকে ভুলে থাকার চেষ্টা করে, সেটাই ‘অন্তরের কাঠিন্য।’ যা মানুষের জন্য অতি বড় বিপদ এবং ভয়াবহ বিপদের পূর্বাভাস। এ অবস্থার আরেক নাম ‘আল্লাহর পাকড়াও সম্পর্কে নির্ভয় ও বেপরোয়া হওয়া।’ কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর পাকড়াও সম্পর্কে নির্ভয় তো হয় শুধু ক্ষতিগ্রস্ত লোকরা।’সুরা আরাফ : ৯৯
আল্লাহতায়ালার পাকড়াও সম্পর্কে নিশ্চিন্ত ও বেপরোয়া হওয়া কবিরা গোনাহসমূহের একটি। সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘সবচেয়ে বড় গোনাহ চারটি। আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা, আল্লাহর পাকড়াও সম্পর্কে বেপরোয়া হওয়া, তার ক্ষমা ও করুণা সম্পর্কে নিরাশ হওয়া, তার দয়া ও দান সম্পর্কে আশাহীন হওয়া।আল মুসান্নাফ, আবদুর রাযযাক : ১৯৭০১
বর্তমানে পৃথিবীর নানা স্থানে বিধ্বংসী ভূমিকম্প, প্রলয়ংকরী বন্যা, মাত্রাতিরিক্ত তুষারপাত, ধ্বংসাত্মক ভূমিধস ও অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে। এগুলো মহান আল্লাহর প্রেরিত সতর্ককারী নিদর্শন বৈ অন্যকিছু নয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে বিপদ-আপদই তোমাদের ওপর আসুক না কেন, তা হচ্ছে তোমাদের নিজেদের হাতের কামাই। আর আল্লাহ তোমাদের অনেক (অপরাধ) ক্ষমা করে দেন।’সুরা শুরা : ৩০
তাই যখন কোথাও ভূমিকম্প হয়, সূর্যগ্রহণ হয় কিংবা ঝড়ো বাতাস অথবা বন্যা হয়, তখন মানুষের উচিত আল্লাহতায়ালার কাছে অতি দ্রুত একনিষ্ঠভাবে তওবা করা। তার কাছে আত্মসমর্পণ করা, নিরাপত্তা চাওয়া, আশ্রয় লাভের জন্য দোয়া করা। দয়াময় আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ এবং ক্ষমা প্রার্থনা করা। সমাজে প্রচলিত জিনা-ব্যভিচার, অন্যায়-অবিচার রোধ করা।
প্রাকৃতিক নানা বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ মানুষের অপকর্ম। এগুলোর পথ ধরেই মানুষ কিয়ামতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সতর্ক করে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যখন জাতির নিকৃষ্ট ব্যক্তি তাদের নেতা হবে, ক্ষতির ভয়ে মানুষকে সম্মান করা হবে, সে সময় তোমরা অপেক্ষা করো রক্তিম বর্ণের ঝড়ের (অ্যাসিড বৃষ্টি), ভূকম্পনের, ভূমিধসের, রূপ বিকৃতির (লিঙ্গ পরিবর্তন) পাথর বৃষ্টির এবং সুতো ছেঁড়া (তাসবিহ) দানার মতো একটির পর একটি নিদর্শনগুলোর জন্য।’জামে তিরমিজি
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক
পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার বিখ্যাত ফুরফুরা শরিফকে ভাবা হয় আজমির শরিফের পর ভারতের সবচেয়ে প্রভাবশালী দরবার শরিফ। বাংলাদেশ ও ভারতে ফুরফুরা শরিফের প্রচুর হিন্দু-মুসলিম ভক্ত রয়েছে। ফুরফুরা শরিফ মূলত সামাজিক সেবামূলক কর্মকান্ডে নিয়োজিত থাকলেও দরবারের বর্তমান পীরজাদারা রাজনীতির মাঠে বেশ সক্রিয়।
দরবারের প্রয়াত ছোট হুজুরের নাতি আব্বাস সিদ্দিকী প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট’ নামে রাজনৈতিক দল। দল গঠনের পর গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে মমতার সঙ্গে আসন ভাগাভাগির চেষ্টা করেছিলেন আব্বাস সিদ্দিকী। যদিওবা শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের সঙ্গে সংযুক্ত মোর্চায় যায় দলটি। আব্বাস সিদ্দিকীর ভাই নওশাদ সিদ্দিকী সে জোটের হয়ে নির্বাচন করে রাজ্যের বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
বর্তমানে কলকাতার রাজনীতির মাঠ সরগরম নওশাদ সিদ্দিকীর গ্রেপ্তার নিয়ে। মূলত ভাঙড়েতে (নওশাদ সিদ্দিকীর আসন) দলীয় পতাকা লাগানোকে কেন্দ্র করে তৃণমূল ও সেক্যুলার ফ্রন্টের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। সে সংঘর্ষের জেরে কলকাতায় সমাবেশ হলে সেখান থেকে নওশাদ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তার করা হয়। নওশাদ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তারের পর পীরজাদারা সম্মিলিত প্রতিবাদের ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া, এ ঘটনায় অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এর মধ্যে কৌতূহল জোগায় পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের প্রতিক্রিয়া নিয়ে। তিনি বলেন, ‘আমি নওশাদ ভাইয়ের মুক্তি দাবি করছি’। ২০২১-এ আব্বাস সিদ্দিকীরা যখন রাজনীতিতে এসেছিলেন তখন দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, ‘আমার যদি নির্বাচনে লড়াই করার অধিকার থাকে, তবে আব্বাস সিদ্দিকীরও রয়েছে।’ বিজেপির মুসলমানদের রাজনৈতিক দল গঠনকে উৎসাহ এবং মুসলিম নেতাদের মুক্তির দাবি করার এই কৌশলের বিশেষ রাজনীতি রয়েছে।
ভারতের যে কটি প্রদেশের নির্বাচনে মুসলিম ভোট ফ্যাক্টর তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ একটি। পশ্চিমবঙ্গের প্রতি তিনটি ভোটের একটি ভোট মুসলিম ভোট। দিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব ডেভেলপিং সোসাইটি’র মতে, ২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে হিন্দু ভোটের ৫০ শতাংশ পেয়েছে বিজেপি। অন্যদিকে মুসলিম ভোটের ৭৫ শতাংশ পড়েছে তৃণমূলের বাক্সে। ফলে আর কিছুটা হিন্দু ভোট বাড়াতে পারলে এবং মুসলিম ভোট বিভক্ত করতে পারলে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ শাসন করার স্বপ্ন পূর্ণ হতে পারে। মুসলমান ভোট বিভক্ত করে বিজেপির জেতার এই কৌশল বেশ কটি রাজ্যে বেশ সফল হয়েছে।
আসামের মুসলমানদের রাজনৈতিক দল অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ)। দলটি ২০১৬ সালের আসাম বিধানসভায় স্বতন্ত্র নির্বাচন করে। ফলে মুসলিম ভোট কংগ্রেস থেকে সরতে শুরু করে। মুসলিম ভোটের এই বিভক্তির ফলাফল যায় বিজেপির ঘরে। ২০১৬ সালের আসাম বিধানসভায় জয়লাভ করে আসামে সরকার গঠন করে বিজেপি, অথচ আসাম রাজ্যের মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৩৫ শতাংশ। আসামে মুসলিম ভোটের বিভক্তি বিজেপির জয়কে সহজ করে দেয়। আসামের সে ফর্মুলা পশ্চিমবঙ্গে বাস্তবায়ন করতে চায় বিজেপি।
নওশাদ সিদ্দিকীর দল ‘ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট’ যতই মমতার মুখোমুখি দাঁড়ায় ততই বিজেপির সুবিধা। কারণ একচেটিয়া (৭৫ শতাংশ) মুসলিম ভোটপ্রাপ্তি মমতাকে সর্বশেষ বিধানসভায় জয় এনে দিয়েছে। আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনের আগে ও ২০২৬-এর পরবর্তী বিধানসভাকে সামনে রেখে মমতার সঙ্গে মুসলিম কমিউনিটির দূরত্ব তৈরি করতে পারলে বিজেপির জেতার একটা সম্ভাবনা তৈরি হবে।
ভারতের ৫৩০ লোকসভা আসনের মধ্যে অন্তত ১০০ লোকসভা আসনে মুসলমান ভোট ম্যাটার করে। তাই শুধু পশ্চিমবঙ্গ বা আসাম নয় সারা ভারতের যেসব জায়গা মুসলিম ভোট ফ্যাক্টর হয়ে উঠছে, সেসব জায়গায় বিজেপি এই কৌশল নিয়েছে।
উত্তর প্রদেশের ২৪ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠী মুসলিম, অর্থাৎ সাড়ে চার কোটি মুসলমানের বাস উত্তর প্রদেশে। তুরস্কের পর সবচেয়ে বেশি মুসলিম বাস করে উত্তর প্রদেশে। অথচ বর্তমান সরকারে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য হলেও মুসলিম সম্প্রদায় থেকে কোনো বিধায়ক নেই। মুসলিম ভোট বিভক্তি করে মাত্র ২০১৭ সালে বিজেপি উত্তর প্রদেশে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। সেবার ৪০৩টি বিধানসভা সিটের মধ্যে ৩২২টিতে জিতেছিল বিজেপি অথচ তাদের পপুলার ভোট ছিল ভোটের ৪০ শতাংশ। কীভাবে সাড়ে চার কোটি মুসলিম জনসংখ্যাকে পাশ কাটিয়ে বিজেপি নিরঙ্কুশ হিন্দু সরকার গঠন করছে উত্তর প্রদেশে! বিশ্লেষণ বলে দেয়, মুসলিম ভোট বিভক্তির কৌশলই বিজেপিকে নির্বাচন জিতিয়ে এনেছে।
বর্তমান উত্তর প্রদেশ সরকারের ৪০৩টি বিধানসভার সিটের মধ্যে বিজেপি জিতেছে ২৭৪টি, যা গতবারের চেয়ে ৪৮টি কম। আর বিরোধী দল সমাজবাদী পার্টি জিতেছে ১২৪ আসন, যা গতবারের চেয়ে ৭২টি বেশি। ২৭৪টি আসনে জয় পাওয়া বিজেপির পপুলার ভোট ৪৫ শতাংশ আর ১২৪ আসন পাওয়া সমাজবাদী পার্টির পপুলার ভোট ৩৬ শতাংশ আবার মাত্র ১ আসন পাওয়া বহুজন সমাজবাদী পার্টির (বিএসপি) পপুলার ভোট ১৩ শতাংশ। কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে সমাজবাদী পার্টি ও বিএসপির মোট পপুলার ভোট হয় ৪৯ শতাংশ, যা বিজেপির চেয়ে ৪ শতাংশ বেশি। অথচ তাদের আসনসংখ্যা হয় ১২৫টি, যা বিজেপির চেয়ে ১৪৯টি কম।
জওয়াহেরলাল নেহরুর জন্মভূমি উত্তর প্রদেশের বিধানসভায় কংগ্রেস কোনো সমীকরণে নেই। রাজ্যটি দীর্ঘদিন শাসন করেছে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি ও মায়াবতির বহুজন সমাজ পার্টি। দু-দলই বিজেপির বিরোধিতা করলেও তাদের মধ্যে ন্যূনতম ঐক্য নেই। গত বিধানসভা নির্বাচনে মায়াবতির বহুজন সমাজবাদী পার্টি ৪০৩ জনের মধ্যে ১১৩ জন প্রার্থী দেয় মুসলিম কমিউনিটি থেকে। অখিলেশ যাদবের দল থেকে দাবি করা হয়, ‘বিজেপির বি টিম হয়ে কাজ করেছে বিএসপি, মূলত সমাজবাদী পার্টি থেকে মুসলিম ভোট সরিয়ে বিজেপিকে সুবিধা দিতে মায়াবতী এতজন মুসলিম প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন।’ বিজেপি থেকে মাত্র ৯ শতাংশ পপুলার ভোট কম পাওয়া অখিলেশ যাদবের এমন আক্ষেপ থাকতেই পারে।
তবে সে নির্বাচনে হায়দ্রাবাদের আসাদউদ্দীন ওয়াইসির দল অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) গিয়েও হাজির হয়। তেলেঙ্গানা, মহারাষ্ট্র ও বিহারের বিধানসভায় আসন পাওয়ার পর দলটি উত্তর প্রদেশেও লড়াই করে। কোনো আসন জিততে না পারলেও বেশ কিছু মুসলিম ভোট বাক্সে পেয়েছিল, যা হয়তো পড়ত সমাজবাদী পার্টির বাক্সে। সমাজবাদীর এই আক্ষেপ আরও তীব্র হয় যখন দেখা যায় তাদের প্রার্থী অনেক আসনে হাজারেরও কম ভোটে বিজেপির প্রার্থীর কাছে হেরেছে। এভাবে এমআইএম, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজবাদী পার্টি ও কংগ্রেসে বিভক্ত হয়ে যায় ২০ শতাংশ মুসলিম ভোট। বিরোধীদের এমন বিভক্তি মূলত বিজেপিকে সহজ ও নিরঙ্কুশ জয় এনে দেয়।
মুসলিমদের ধর্মভিত্তিক রাজনীতিতে দিলীপ ঘোষদের আরও নানা ধরনের সমীকরণ রয়েছে। মুসলিমদের সেক্যুলার রাজনীতি থেকে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের দিকে ঠেলে দিতে পারলে তাদের রাজনৈতিক সুবিধা হয়। এতে বিজেপি সমর্থকদের গরম বক্তব্য দিয়ে উজ্জীবিত রাখার সুযোগ পাওয়া যায়। মুসলিমদের বিশেষভাবে সংজ্ঞায়িত ও চিহ্নিত করা যাবে। অন্যদিকে কংগ্রেস ও বিজেপি বিরোধী দলগুলোর মুসলিম ভোটের কাঁধে সাঁকো পার করাও বন্ধ করা যাবে।
ভারতের রাজনীতিতে হিন্দুদের কট্টরতার উদাহরণ দিয়ে মুসলমান দলের জনপ্রিয়তা বাড়ানো এবং মুসলমানদের কট্টরতার উদাহরণ দিয়ে হিন্দু দলের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর এক ধরনের কৌশলও রয়েছে। হায়দ্রাবাদের মুসলিম রাজনৈতিক দল অল ইন্ডিয়া মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) দলটি বেশ পুরনো। কিন্তু ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর বিজেপির মুসলমান বিরোধিতাকে কাউন্টার করে দলটি সারা ভারতের মুসলমানদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বিশ্লেষকরা বলেন, পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম না হলে বা পাকিস্তান ও ভারত জিন্নাহর ঘোষণা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার মতো বন্ধুবৎসল প্রতিবেশী হলে বিজেপি ভারতের ক্ষমতায় বসতে পারত না। (জিন্নাহর তথ্যসূত্র শশী থারুর, ২০১৮)। এখনো পাকিস্তানের জেনারেলের এক একটা হুমকি ভারতে হু হু করে বিজেপির ভোট বৃদ্ধি করে।
ভারতে মুসলমানদের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল গঠনও সেক্যুলার ভারতের জন্য সুখকর নয়। কারণ রাজনীতি ও ধর্মের ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। রাজনীতি বলে ক্ষমতার কথা, ধর্ম বলে বিশ্বাসের কথা। ক্ষমতার জাঁতাকলে প্রায়ই বিশ্বাস ধামাচাপা পড়ে যায়। ধর্মভিত্তিক রাজনীতিতে জনগণ ধর্ম ও রাজনীতিকে আলাদা করতে পারে না। ফলে ধর্মের আবেগে তারা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রায়শই যৌক্তিকভাবে নিতে পারে না। এই যুক্তি ও আবেগের মাঝখানে ভারতের মুসলিম ভোট ভাগ হয়ে যাচ্ছে কয়েক গ্রুপে। এই ভাগাভাগি মমতার তৃণমূল কংগ্রেস, অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি বা রাহুল গান্ধীর জাতীয় কংগ্রেসের মুসলিম ভোটব্যাংকের নিরঙ্কুশতাকে চ্যালেঞ্জে ফেলে দিচ্ছে।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
আইনজীবী, সমাজকর্মী ও ইতিহাসবিদ অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় অবিভক্ত বাংলার নদীয়া জেলার নওয়াপাড়ায় ১৮৬১ সালের ১ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৮৮০ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে এফএ এবং ১৮৮৩ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ১৮৮৫ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে তিনি বিএল পাস করে রাজশাহীতে আইন ব্যবসা শুরু করেন। গবেষণা ও ইতিহাসচর্চায় তার প্রবল আগ্রহ ছিল। তিনি বাংলার প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় ইতিহাস, শিল্পকলা ও পটশিল্প সম্পর্কে গভীর ও প্রামাণিক জ্ঞান অর্জন করেন। ঐতিহাসিক চিত্র শিরোনামে সিরাজউদ্দৌলা, মীর কাসিম, রানী ভবানী, সীতারাম প্রমুখ ব্যক্তিকে নিয়ে ইতিহাসবিষয়ক প্রথম বাংলা সাময়িক পত্রিকা প্রকাশ করেন। বরেন্দ্রবাসীর গৌরবময় অতীত সম্পর্কে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণাকে উৎসাহিত করতে তিনি সম্মিলিতভাবে বরেন্দ্র রিসার্চ সোসাইটি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন এবং বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা করেন। রাজশাহী পৌরসভার কমিশনার থাকাকালে তিনি রাজশাহীর নাগরিক সুবিধা-সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত করেন। ডায়মন্ড জুবিলি ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কুলের সূচনালগ্নে তিনি এ প্রতিষ্ঠানকে যথেষ্ট পৃষ্ঠপোষকতা দান করেন। এমনকি স্কুলের অবৈতনিক প্রশিক্ষক হিসেবে তিনি ছাত্রছাত্রীদের রেশম চাষ পদ্ধতি শিক্ষা দিতেন। বেশ কিছুসংখ্যক সংস্কৃত নাটকের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন এবং ভালো ক্রিকেট খেলোয়াড় ও চিত্রকর হিসেবেও তার পরিচিতি ছিল। ১৯৩০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
যদি কেউ প্রশ্ন করেনশিক্ষার মূল উদ্দেশ্য কী? এক কথায় বিষয়টি ব্যাখ্যা করা অসম্ভব। তবেআমাদের দেশের বাস্তবতা, শিক্ষা সম্পর্কে আলাদা ব্যাখ্যা দেয়। এখানে পুথিগত বিদ্যালাভই শিক্ষা। এর মানে, সার্টিফিকেট!
মানবিকতা, ভব্যতা, পরমতসহিষ্ণুতা, শিষ্টাচার এবং শ্রদ্ধাবোধের সমন্বয় হচ্ছে সভ্যতা। বিদ্যাগ্রহণের ফলে আপনাতেই হৃদয়ে জন্ম নেয় এসব বোধ। মানুষ আলোকিত হয়ে ওঠে। তখন স্বাভাবিকভাবেই একজন মানুষ বিনয়ী হয়ে ওঠেন। অপরকে ভালোবাসেন। জড়িয়ে নেন অপার আনন্দে। শিক্ষার আলোয় মানুষ জ্যোতির্ময় হয়ে ওঠে। পানি মেশানো দুধ খেতে দিলে একটি হাঁস যেমন শুধু দুধটুকু খেয়ে নেয়, থাকে শুধু পানি। শিক্ষা তাই-ই। গ্রহণ এবং বর্জনের আলোকিত চিন্তার ক্ষমতাই শিক্ষা। নইলে, কোনো অর্জন সম্ভব নাসমস্তই বিসর্জন।
এইচএসসির ফল প্রকাশিত হয়েছে। ইন্টারমিডিয়েট পাস করা এসব ছেলেমেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে। যাদের সামর্থ্য বেশি তারা উচ্চশিক্ষায় যাবেবিদেশ। কিন্তু ভালো রেজাল্ট করা ছেলেমেয়ের মধ্যে বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা করার সামর্থ্য কত শতাংশ মানুষের আছে? দেশে যারা থাকছে তাদের মধ্য থেকেই বা কত শতাংশ সুযোগ পাচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার? আবার এরপর রয়েছে চাকরি। সেই সোনার হরিণ ধরতে পারছে কতজন! গতকাল ৯ ফেব্রুয়ারি দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৮৭ জন। পাস করেছে ১০ লাখ ১১ হাজার ৯৮৭ জন। পাসের হার ৮৫.৯৫ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন। এটি মোট উত্তীর্ণের ১৭.৪২ শতাংশ। এই যে প্রতি বছর লাখ লাখ ছেলেমেয়ে কলেজ থেকে বের হচ্ছে, তারা যাচ্ছে কোথায়? কত শতাংশ ছেলেমেয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে? আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করে পড়ানোর সামর্থ্য কত শতাংশ পরিবারের আছে?
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমিত আসনের বিপরীতে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে থাকছে ভর্তির অপেক্ষায়। তাদের মধ্যে সামর্থ্যবান পরিবারের ছেলেমেয়েরা যাচ্ছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর বাকি ছাত্রছাত্রী! কোনো গবেষণা হয়েছে? খোঁজ নিলে জানা যাবে এদের কারও বিয়ে হয়েছে। পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে কেউ নাম লিখিয়েছে চাকরিতে।
৫০, ৬০, ৭০-এর দশক পর্যন্ত এই ভূখন্ডের রাজনীতির মূল নিয়ন্ত্রণ ছিল ছাত্রদের হাতে। ফলে, বাঙালির প্রধান তিন অর্জনবায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, শুরু করেছে ছাত্ররাই। এমনকি ৯০-এর গণ-আন্দোলনেও ছাত্রদের মুখ্য ভূমিকা ছিল। এ এক দীর্ঘ করুণ অধ্যায়। ‘অশুভ-কাল’ ছায়া গ্রাস করেছে ছাত্রসমাজকে। সেই কাল-প্রেতাত্মা জানে ছাত্রশক্তিকে বিভ্রান্ত, আদর্শচ্যুত এবং অর্থলোভে আকৃষ্ট করতে পারলে এই জনগোষ্ঠী থেকে মঙ্গলকর, জনকল্যাণকর কোনো ইতিহাসের জন্ম নেবে না। অনেক হয়েছে, এবার স্থবির থাকুক বাংলাদেশের ইতিহাস! বাস্তবে অনেকটা তাই হচ্ছে। এখন ছাত্ররা কীসে মুগ্ধ হয়? কী, ভীষণ প্রয়োজন তার? গবেষণা করলে দেখা যাবেঅধিকাংশ ছাত্র এখন নিজের ভবিষ্যৎ নিয়েই ভাবে। সেখানে অন্য কেউ নেই। সমাজ-সংস্কৃতি গোল্লায় যাক! তাতে আমার কী?
জাপানে অপরাধ০ ভাগ! এমন সমাজব্যবস্থার ভিত্তি কীভাবে হলো? মানে, সবার মানসিকতা এত উন্নত হলো কীভাবে! দেখা যাবে এই নৈতিকতার শিক্ষা সে পেয়েছে স্কুল জীবনেই। আশা জাগানিয়া হচ্ছে জাপানের শিক্ষাব্যবস্থা, বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে। তবে বেসরকারিভাবে। ‘কুমন পদ্ধতি’র মাধ্যমে শিশুরা এমন কিছু শিখবে, যা জীবনের জন্য ভীষণ দরকার। ক্লাসে প্রথম হওয়া বা এ-প্লাস পাওয়া জরুরি নয়। প্রয়োজন বিশ্লেষণী ক্ষমতা এবং আত্মবিশ্বাস।
বিদ্যালাভে মানুষই উন্নত হয়। সেই-ই উন্নত যে নিজেকে উন্নত করার পাশাপাশি অন্যের কথাও ভাবে। ‘একা’ উন্নত হলে কোনো লাভ নেই। সমাজ উন্নত না হলে এই আমি বিচ্ছিন্ন হব সমাজ থেকেই। তখন বিদ্যা থেকে ‘বিনয়’ তিরোহিত হতে বাধ্য।
গাজীপুরের টঙ্গীর বিসিক শিল্পনগরীতে ৩৬০ টাকা বেতনে কর্মজীবন শুরু করা আসাদুর রহমান কিরণ এখন গাজীপুর মহানগরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর বিভিন্ন দল বদলে ক্ষমতার পাশাপাশি প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। বিভিন্ন সূত্র মতে, কিরণ এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। তার এত সম্পদের মালিক হওয়ার পেছনে রয়েছে দখলবাজি, জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর দুর্নীতি ও অনিয়ম।
কিরণের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ ৩১টি দপ্তরে যে অভিযোগ জমা পড়েছে, তাতে ডিগবাজি দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসা এই ভারপ্রাপ্ত মেয়রের ৬০০ কোটি টাকার দুর্নীতি-অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এই অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য হাইকোর্ট দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছে।
২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর নির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। নগরীর ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ তখন ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পান।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণকে একাধিকবার ফোন করা হয়েছে। মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।
৩১ দপ্তরে অভিযোগ : গত বছর ২০ জুলাই ৩১টি দপ্তরে সচেতন নাগরিক, বাংলাদেশের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন মো. নজরুল ইসলাম। লিখিত অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে, দুদক, স্থানীয় সরকার, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে গত বছর জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালন না করেও সিটি করপোরেশনের তহবিল থেকে টাকা আত্মসাৎ করেছেন কিরণ।
জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার অভিযোগপত্রে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের দুর্নীতি ও অনিয়ম চিত্র তুলে ধরেছি।’
কিরণের অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র : ভারপ্রাপ্ত মেয়রের চেয়ারে বসে কিরণ দুর্নীতি-লুটপাট, কমিশন বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। দায়িত্ব নেওয়ার পর তার নজর পড়ে পুবাইলের চিরুলিয়ায় অর্পিত সম্পত্তির ওপর। ২৩ বিঘা জমি নিজের কবজায় নেন কিরণ। এর জন্য ভুয়া জমির মালিক বানান একজনকে। এ জমি নিজের করায়ত্তে নিতে সিটি করপোরেশনের ১৮ লাখ টাকা কর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। জানাজানি হয়ে গেলে কিছুদিন আগে কর পরিশোধ করেন। তবে অবৈধ প্রক্রিয়ায় জমির মালিক হওয়ায় ওই জমির খাজনা এখনো দিতে পারেননি কিরণ।
পোশাকশিল্প কারখানার সবচেয়ে বড় নগরী গাজীপুর। সিটি করপোরেশনের আয়ের সবচেয়ে বড় মাধ্যম শিল্প ও হোল্ডিং ট্যাক্স। আর সেখানেই অনিয়মের বড় ক্ষেত্র তৈরি করেছেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র। তিন/পাঁচ কোটি টাকার বকেয়া হোল্ডিং, শিল্প ট্যাক্স অর্ধেকে নামিয়ে এনে করপোরেশনের কোষাগারে মাত্র ৫০ লাখ টাকা জমা দিয়ে বাকি টাকা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে রেহাই দিয়ে দেন করদাতাদের। কিরণের এই কৌশলে বেঁচে যান কর ফাঁকি দেওয়া শিল্প-মালিকরা। কিন্তু রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় রাষ্ট্র। নগরের আটটি জোনে করের টাকা আত্মসাৎ করার অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিরণ ২০১৬-১৭ সালে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় একটি টেন্ডার আহ্বান করেন। টেন্ডার নম্বর : জিসিসি/জেড। ওই টেন্ডারের কাজের অগ্রগতি না থাকায় জাহাঙ্গীর আলম মেয়র নির্বাচিত হলে ওই টেন্ডারের কোনো বিল পরিশোধ করতে পারেননি কিরণ। ২০২১ সালে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই বিল পরিশোধের উদ্যোগ নেন। ওই সময়ের বিভিন্ন ঠিকাদারকে ডেকে তাদের কাছ থেকে কাজের হিসাব করে তার কমিশন আদায় করেন কিরণ। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কিছু চিত্র সিটি করপোরেশনের চেক রেজিস্ট্রার বই ঘেঁটেও পাওয়া গেছে।
উত্তরায় ‘অস্থায়ী কার্যালয়’ : উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরে ৭ নম্বর রোডে ১০ নম্বর বাড়ির ছয়তলায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের একটি ‘কার্যালয়’ করেছেন কিরণ। উত্তরার এ কার্যালয়ে বসে ঠিকাদারদের নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। লেনদেন-দরবার সবই হয় এ বাড়িতে বসেই। পার্সেন্টেজ ছাড়া যেমন ঠিকাদারদের কাজের বিল পরিশোধ করা হয় না, তেমনি পার্সেন্টেজ ছাড়া ঠিকাদারি কাজও পান না কেউই। কোন কাজ কে পাবে, কে পাবে না, কে কত পার্সেন্ট কমিশন দেবে এসব হিসাব ও মধ্যরাতের প্রমোদ-ফুর্তির যে ব্যয় হয় সিটি করপোরেশনের এলআর ফান্ড থেকে নির্বাহ করা হয়। শিল্পাঞ্চল-সমৃদ্ধ গাজীপুর নগরীর অধিকাংশ ব্যবসায়ী-ঠিকাদার ‘১০ পার্সেন্ট’ হিসাবেও কিরণকে চিনে-জানে।
বর্তমানে গাজীপুর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা সারা জীবন রাজনীতি করেছি দলের জন্য। অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছি কিন্তু মূল্যায়ন পাইনি। একটি কাজের জন্য আমি ছয় মাস ঘুরছি। কিন্তু কিরণ আমাকে কাজ দিচ্ছেন না। কারণ আমার কাছ থেকে পার্সেন্টেজ নিতে পারবেন না।’
শুধু কী তা-ই, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজনের নামে গত বছর ১৭ মার্চ কোনো আয়োজন না করেই কিরণ সিটি করপোরেশনের খরচের তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগও আছে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৭৬ জন কাউন্সিলর এবং কিছু কর্মকর্তার সিলেটে পিকনিক আয়োজন করার নামে করপোরেশনের তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা খরচ বাবদ দেখিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগও আছে।
কিরণের সম্পদ : টঙ্গীর পাগাড়, ঢাকার আশুলিয়া এবং গাজীপুরে নিজ নামে, স্ত্রী, শ্যালক ও শ্যালিকার নামে ১১২ বিঘা জমির মালিক কিরণ। টঙ্গীর পাগাড়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কিছু জমি রয়েছে, যা নয়ছয় ও ভয়ভীতি দেখিয়ে দলিল করে নিয়েছেন তিনি। নজরুল ইসলামের অভিযোগ অনুযায়ী, উত্তরায় ১১ নম্বর সেক্টরে ৭ নম্বর রোডের ১০ নম্বর বাড়িটি সাততলা। এটি নির্মাণ করতে কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। একই এলাকার ৭ নম্বর সেক্টরে ১৮ নম্বর রোডে ৯৫ নম্বর বাড়ি রয়েছে। বারোতলা নির্মাণাধীন ওই ভবনের আনুমানিক মূল্য ৩৫ কোটি টাকা। গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কে ফ্ল্যাটের তথ্যও পাওয়া গেছে। ২ হাজার ৫০০ বর্গফুটের ওই ফ্ল্যাটের মূল্য কমপক্ষে সাত কোটি টাকা।
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় স্ত্রী ও নিজের নামে অন্তত ২০০ বিঘা জমির ওপর ভারপ্রাপ্ত মেয়রের কারখানা রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ৩০০ কোটি টাকা হতে পারে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অধীনে টঙ্গীতে তিনটি কারখানা আছে তার। এগুলোর আনুমানিক মূল্য ৩০০ কোটি কোটি টাকা।
কিরণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত কয়েকশ কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিজের ও স্ত্রীর নামে যুক্তরাষ্ট্রে নিউ ইয়র্ক শহরে বাড়ি করেছেন বলেও অভিযোগ আছে। কিরণ দ্বৈত নাগরিক বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।
হাইকোর্টের আদেশ : গত বছরের ২০ জুলাই দুদকে জমা পড়া অভিযোগ লাল ফিতায় আটকে গেলে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন হয়। গত বছর ২১ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করা হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালত কিরণের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে। হাইকোর্ট চার মাসের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে সময় বেঁধে দেন। একই সঙ্গে গাজীপুরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত।
রাজনীতিতে উত্থান : প্রিন্টিং প্রেস কারখানায় বাইন্ডার-ম্যান হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন আসাদুর রহমান কিরণ। ১৯৮৪-৮৫ সালে এলিট প্রিন্টিং প্রেস নামে ওই কারখানায় চাকরি করা কিরণ ১৯৮৬ সালে রাজনীতিতে আসেন। ওই সময় তিনি জাতীয় পার্টির যুব সংগঠন যুব সংহতির টঙ্গীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই সময় গাজীপুর নিয়ন্ত্রণ করতেন হাসান উদ্দিন সরকার। তিনি জাতীয় পার্টি ও পরে বিএনপির রাজনীতিতেও যুক্ত হন। ওই সময়ের সবচেয়ে ক্ষমতাধর হাসান উদ্দিন সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা ও তার ঘনিষ্ঠ পরিচিতি লাভ করে শুরু করেন জমি দখল। টঙ্গী, পাগাড় মৌজায় হিন্দু-খ্রিস্টানের মালিকানায় থাকা জমি দখল করে নেন তিনি। পরে প্লট বানিয়ে চড়া দামে বিক্রি করেন। তবে প্রিন্টিং প্রেসের শ্রমিক কিরণ ওই সময় টঙ্গীর বিসিক এলাকায় শ্রমিক নেতা হিসেবেও আধিপত্য বিস্তার করেন। হিন্দু-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কেউ জমি দিতে না চাইলে রাজনৈতিক চাপ ও সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে উচ্ছেদ করতেন। পাগাড় শিল্পাঞ্চল এলাকা হওয়ায় ওই এলাকায় টার্গেট করে জমি দখল করেন কিরণ। টঙ্গী পৌরসভা হিসেবে প্রথম ভোটে ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কমিশনারও নির্বাচিত হন। তত দিনে ক্ষমতা-সম্পদ ও অঢেল অর্থের মালিক হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর গুরু পাল্টে কিরণ হয়ে যান সাবেক পৌর মেয়র গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লার ‘মাইম্যান’। এই সুযোগে ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত হয়ে ওঠে কিরণের। ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে আজমত উল্লা মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক আবদুল মান্নানের কাছে পরাজিত হন। কিরণ মূলত দুর্নীতি-অনিয়ম শেখেন তখন থেকেই। বিএনপি নেতা মান্নান মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হলে তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান। গাজীপুরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচন কেন্দ্র করে আজমত উল্লার সঙ্গেও সুসম্পর্ক নেই কিরণের।
গাজীপুরের মাওনা এলাকার আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চেয়ার ছুঁয়েই কিরণ স্বেচ্ছাচারিতা, লুটপাট, ভূমিদখলসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তিনি করেননি। দলীয় লোককে সরিয়ে রেখেছেন, সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রেখেছেন। কারণ, কিরণ আওয়ামী লীগ নয়, মূলত সুবিধাবাদী।’
ভারপ্রাপ্ত মেয়রের বিষয়ে জানতে চাইলে আজমত উল্লা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিরণ অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে এসেছেন সত্যি, তবে তিনি দলের জন্য কাজ করেছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের যে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে সেটা তো প্রমাণ হয়নি এখনো। প্রমাণ হলে তখন মন্তব্য করা যাবে।’
ভাড়া করা বিমানে উড়িয়ে নিয়েও মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রথম ম্যাচে একাদশে রাখল না দিল্লি ক্যাপিটালস। আসরে তাদের শুরুটাও ভালো হলো না। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারল মোস্তাফিজবিহীন দিল্লি।
ঘরের মাঠে ৫০ রানের জয়ে আসর শুরু করল লক্ষ্ণৌ। ১৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দিল্লি থামে ৯ উইকেটে ১৪৩ রানে। ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়ে লক্ষ্ণৌয়ের জয়ের নায়ক মার্ক উড।
এদিন দিল্লির ব্যাটিং ছিল পুরো ফ্লপ। দলের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ৪৮ বলে ৫৬ রান করেছেন। পাশাপাশি রাইলি রোশো ২০ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু বাকিরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ফলে যা হরার তাই হলো ম্যাচের ফল।
এর আগে স্বাগতিক দলের হয়ে ঝড় তোলেন কাইল মেয়ার্স। এই ক্যারিবীয়ান ৩৮ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন। ২টি চারের সঙ্গে হাঁকান ৭টি ছক্কা। এ ছাড়া নিকোলস পুরান ২১ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯৩ রানের পুঁজি গড়ে লক্ষ্ণৌ।
গত অক্টোবরের পর আর্সেনালের জার্সিতে প্রথম গোলের দেখা পেলেন গাব্রিয়েল জেসুস। তার আবার জোড়া গোল। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের জ্বলে ওঠার দিনে লিডস ইউনাইটেডকে উড়িয়ে ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ফের আট পয়েন্টে এগিয়ে গেল আর্সেনাল।
ঘরের মাঠে শনিবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ৪-১ গোলে জিতে আর্সেনাল। স্পট কিকে দলকে প্রথম এগিয়ে দেন জেসুস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বেন হোয়াইট ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। এর খানিক পরই জোড়া গোল পূর্ণ করেন জেসুস।
এরপর লিডস একটি গোল শোধ করলেও গ্রানিত জাকার গোলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
আন্তর্জাতিক বিরতি থেকে ফেরার পর এটিই প্রথম ম্যাচ ছিল আর্সেনালের। বিরতিতে যাওয়ার আগে নিজেদের মাঠে একই ব্যবধানে তারা হারিয়েছিল ক্রিস্টাল প্যালেসকে।
এই জয়ে ২৯ ম্যাচে ৭২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল গানাররা। ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর প্রথমবার প্রিমিয়ার লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখছে আর্সেনাল। তাদের সঙ্গে গত লিগের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ব্যবধান ৮।
গানারদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে সিটি। একই দিন তারাও নিজেদের মাঠে লিভারপুলকে উড়িয়ে দিয়েছে ৪-১ গোলে।
বরকতময় রমজান মাস পাওয়া প্রতিটি মুমিনের জন্য মহা সৌভাগ্যের বিষয়। কেননা এ মাসের মর্যাদা অনেক বেশি। যাতে বান্দার জন্য মহান মনিবের সন্তুষ্টি অর্জন করা অন্য সময়ের চেয়ে সহজতর। কোরআনে কারিমের ভাষায়, ‘তোমরা সংখ্যা পূর্ণ করবে এবং তোমাদের সৎপথে পরিচালিত করার কারণে তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করবে এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।’ -সুরা বাকারা : ১৮৫
বর্ণিত আয়াতে ‘শাহিদা’ (উপস্থিত ও বর্তমান থাকা) শব্দ দিয়ে রোজা সম্পর্কিত বহু হুকুম-আহকাম ও মাসয়ালা-মাসায়েলের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। আর আয়াতের শেষাংশে বান্দাকে ‘কৃতজ্ঞ’ হতে বলা হয়েছে। কৃতজ্ঞতর সাধারণ অর্থ উপকারীর উপকার মনে রাখা ও স্বীকার করে। এর সঙ্গে প্রশংসা, মহিমা, মূল্য ও যোগ্যতার বিষয়গুলো জড়িত। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ইসলামের শিক্ষা হলো- সর্বাবস্থায় সবকিছুর জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো। কেননা তিনিই তো এর প্রাপ্য। চোখের প্রতি পলকে এবং হৃৎপিণ্ডের ওঠানামার সঙ্গে আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে তার দেওয়া অসংখ্য নিয়ামতে ডুবিয়ে রেখেছেন। এই নিয়ামত এবং দান, যেগুলো প্রতি দিনে-রাতে নবায়ন হচ্ছে, সেগুলোর জন্য আমাদের উচিত আল্লাহকে ধন্যবাদ জানানো। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং যারা উপদেশ গ্রহণ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশে ইচ্ছুক, তাদের জন্য রাত এবং দিনকে সৃষ্টি করেছেন পরস্পরের অনুগামীরূপে।’ -সুরা আল ফুরকান : ৬২
ইসলাম কৃতজ্ঞতাকে উচ্চাসন দিয়েছে। তাই তো উপকারী ব্যক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে। এ কৃতজ্ঞতা যদি কেউ প্রকাশ না করে, তাহলে সে সমাজের চোখে তো নিন্দিত হয়ই, সে নিন্দিত হয় মহান রাব্বুল আলামিনের কাছেও। নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে মানুষের কৃতজ্ঞতা আদায় করে না, সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞ হয় না।’ -জামে তিরমিজি : ১৯৫৪
উল্লিখিত কোরআনের আয়াত ও হাদিস দ্বারা এটা স্পষ্ট যে মানুষের অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা আদায় করা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশেরই অংশ। ইসলাম বলে, কৃতজ্ঞতার মানসিকতা লালন করে যেতে হবে। এমন যেন না হয়, আমার বিপদে একজন পাশে দাঁড়াল, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিল, কিন্তু আমি তা ভুলে গেলাম, তার প্রতিপক্ষ হয়ে গেলাম। এমন হলে পারস্পরিক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়।
অকৃতজ্ঞতা নীতিহীনতার পরিচয়। এর মাধ্যমে নিয়ামতের অপরিসীম ধারাকে দাতার সামনেই অসম্মান করা হয়। এ ধরনের আচরণের ফলে আরও বেশি কিছু চাওয়া কিংবা পাওয়ার অধিকার হ্রাস পায়। মানবজাতির প্রতি আদেশ হলো, তাদের প্রতিপালকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে।
কৃতজ্ঞতা কোনো কঠিন দায়িত্ব নয়, যেখানে ধৈর্যের সঙ্গে পথ চলতে হয়; বরং এটি হলো পরিপূর্ণতার পথ, যেটি দৃঢ় সংকল্প এবং উদ্দেশ্য নিয়ে পাড়ি দিতে হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ! আমি তোমাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে পবিত্র বস্তু আহার করো এবং আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো; যদি তোমরা শুধু তারই ইবাদত করে থাকো।’ -সুরা বাকারা : ১৭২
মধুর আবেগ এবং হৃদয়ের উপলব্ধি দিয়ে আল্লাহর নিয়ামতের শোকরিয়া আদায়, একজন ব্যক্তিকে আরও বেশি পাওয়ার যোগ্য করে তোলে। তার রহমতের বর্ষণ ঠিক সেই উর্বর জমিতে ঢালা পানির ন্যায়, যা জমিনকে ফুলে-ফলে সুশোভিত করে তোলে। কৃতজ্ঞতা শুধু ঠোঁটে প্রকাশযোগ্য কোনো শব্দ নয়; বরং কৃতজ্ঞতা হলো হৃদয়ের এমন এক অনুভূতি যা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তার জীবনের প্রতিটি কাজ এবং আচরণের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন। অকৃতজ্ঞতার পরিণাম সম্পর্কে মানবজাতিকে ভয়ংকর পরিণতির ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতএব তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব। তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, আর অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ -সুরা বাকারা : ১৫২
রমজান মাসে অনেক পুণ্যের সমাহার ঘটে। পুণ্যময় এসব কাজের একটি হতে পারে আল্লাহকে স্মরণ ও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা। কারণ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারীকে অনুগ্রহ লাভের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে।
লেখক : খতিব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ
জীবনালেখ্য
কারি আবদুল খালিক। এক নামে তাকে ঢাকার আলেমরা চেনেন। হাজার হাজার আলেমের ওস্তাদ। কোরআন শিক্ষায় নিবেদিত শ্যামবর্ণের মানুষটির জীবন ত্যাগ ও সাধনার। দুনিয়াবিমুখ এই মনীষীর জীবনের পরতে পরতে মিশে আছে আল্লাহর ওপর অগাধ বিশ্বাস। যে বিশ্বাসের দ্যুতি তার জীবনের কর্মশক্তি। লিখেছেন মুফতি এনায়েতুল্লাহ
ধর্মপ্রাণ হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের সুনাম রয়েছে। বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে দ্বীন দরদি মানুষের অংশগ্রহণ ঈর্ষণীয়। সাধারণ সম্পদশালীরা তাদের সম্পত্তির কিছু অংশ মসজিদন্ডমাদ্রাসা, খানকা-ঈদগাহ ও গোরস্তানসহ বিভিন্ন জনসেবামূলক কাজে দান করে থাকেন। এর ব্যতিক্রম দৃষ্টান্তও আছে। রয়েছে আল্লাহর ওপর ভরসা করে ঘর-বাড়িসহ ভিটেমাটি দান করার নজির। ইসলামের প্রচার-প্রসার আর কোরআন-হাদিস শিক্ষার জন্য এমন নিবেদিতপ্রাণ মানুষ আছেন বলেই এখনো দুনিয়ার বুকে ইসলাম টিকে আছে। দুনিয়ার কোনো স্বার্থ নয়, একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের নিমিত্তে এমন আত্মত্যাগের ঘটনা সমাজে বিরল। কখনো তা ইতিহাসে পাতায় লেখা হয়, আবার কখনো তা থাকে অনুচ্চারিত।
আজ এমনই এক মহৎপ্রাণ মানুষের কথা আলোচনা করব, যিনি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার জন্য উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত নিজের ভিটেমাটিসহ একমাত্র ঘরটি ওয়াকফ করে দিয়েছিলেন। আলোকিত এই মানুষের নাম হাফেজ কারি আবদুল খালিক আসআদী।
কারি আবদুল খালিকের জন্ম বর্তমান বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জে ১৮৩৮ সালে। পিতা মৌলভী আরশাদ আলী (রহ.)। ১২ বছর বয়সে তিনি মাকে হারান। মাতৃবিয়োগের শোক তাকে দ্বীনের পথে আসতে অনুপ্রেরণা দেয়। গ্রামের মক্তবে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে মোরেলগঞ্জ রাজৈর সিনিয়র মাদ্রাসায় কিছুদিন পড়ালেখা করেন। পরে ভগ্নিপতি মরহুম মাওলানা ইউসুফের হাত ধরে আলিয়া মাদ্রাসা ছেড়ে দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখানে কিছুদিন পড়াশোনা শেষে ঢাকার ফরিদাবাদ মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে হেফজ শেষ করেন। হেফজ শেষে হেদায়াতুন্নাহু কিতাব পড়ার পর তিন বছর (১৯৬২-৬৪) পাকিস্তানের লাহোরে অবস্থিত তাজবিদুল কোরআন মাদ্রাসায় কারি ইহসান আহমদ থানভী (রহ.) ও কারি শাকের আহমদ (রহ.)-এর কাছে ইলমুল কেরাত পড়েন। পাকিস্তানে থাকা অবস্থায় তার আব্বার ইন্তেকাল হয়।
১৯৬৫ সালে পাকিস্তান থেকে ফিরে খুলনা শিরোমণি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। ওই বছরই তিনি বাগেরহাট জেলার রামপাল নিবাসী মরহুম মাওলানা আতহারুল ইসলাম খানের বড় মেয়ে আমিনা খাতুনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
এখন থেকে ৬১ বছর আগে বাগেরহাটের মতো একটি প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ইলমে দ্বীন শিক্ষার জন্য ঢাকা-পাকিস্তান গমন সোজা কথা নয়। তখনকার আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি, যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থার প্রতিকূলতা জয় করতে সক্ষম হন শুধু কোরআনের ভালোবাসায়। নানা কারণে শিক্ষা জীবনের আনুষ্ঠানিক সফল পরিসমাপ্তি তার হয়ে ওঠেনি। এই না পাওয়াকে তিনি অনুপ্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করে মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। শিক্ষকতায় তার একনিষ্ঠতা, আন্তরিকতা তাকে সাফল্য এনে দেয়। তিনি পরিচিতি পেয়েছেন, কিন্তু থেমে যাননি, এই পরিচয়কে দুনিয়ার পদন্ডপদবি লাভ ও সহায়-সম্পত্তি উপার্জনের হাতিয়ার বানাননি। তার স্বপ্ন ও ধ্যান ছিল ইসলামকে বিজয়ীরূপে দেখা। সমাজের আনাচে-কানাচে কোরআনের শিক্ষা প্রসার ঘটানো।
ঢাকার বিভিন্ন মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্ন থেকে ছিলেন। গেণ্ডারিয়া জামালুল কোরআন মাদ্রাসার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি, এর নামকরণও তার। ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তার ভূমিকা রয়েছে। স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বিহারিরা আরজাবাদ মাদ্রাসা জ্বালিয়ে দেয়। তখন তিনি সতীশ সরকার রোড, জোরপুল লেন মসজিদে নামাজ পড়াতেন। সেখানে একদিন মুক্তিযোদ্ধাদের সফলতার জন্য দোয়া করলে রাজাকাররা তাকে মেরে ফেলার চক্রান্ত করে। পরে মসজিদের মোতোয়ালি রাতের আঁধারে তাকে নিরাপদে সরিয়ে দেন। ওই সময় তিনি কিছুদিন চট্টগ্রামের শোলকবহর মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের এক-দেড় বছর পর পুনরায় আরজাবাদ মাদ্রাসায় যোগ দেন।
যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর সেখানে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। পরে ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত ফরিদাবাদ মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। ১৯৮৮ সালের জানুয়ারিতে পুনরায় আরজাবাদ ফিরে আসেন। এখন পর্যন্ত তিনি আরজাবাদেই শিক্ষকতা করছেন। বার্ধক্যজনিত নানাবিধ অসুস্থতার দরুন তিনি বাসা থেকে খুব একটা বের হন না। তার পরও নিয়ম করে মাদ্রাসায় যাওয়ার চেষ্টা করেন।
সাদামাটা জীবনের অধিকারী কারি আবদুল খালিক কখনো সহায়-সম্পদের দিকে আগ্রহী হননি। হাজার হাজার ছাত্রই তার কাছে সাত রাজার ধন। আশির দশক পর্যন্ত তার নিজ গ্রামে কোনো কওমি মাদ্রাসা ছিল না। এমনকি এখনো ওই এলাকার মানুষ কওমি মাদ্রাসাকে ‘খারেজি’ মাদ্রাসা বলে ডাকে। এমন পরিবেশে তিনিই প্রথম মাদ্রাসা হোসাইনিয়া ইসলামিয়া মৌলভীরহাট ও সায়্যিদ আরশাদ মাদানি মাদ্রাসাতুল বানাত নামে দুটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। মাদানি পরিবারের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কারণে সায়্যিদ আসআদ মাদানি (রহ.), সায়্যিদ আরশাদ মাদানি ও সায়্যিদ আসজাদ মাদানিও তাকে ভালোবেসে, দুর্গম এলাকায় অবস্থিত তার প্রতিষ্ঠানে একাধিকবার সফর করেছেন।
১৯৮০ সালে দক্ষিণ চিংড়াখালী গ্রামে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সময় তিনি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত নিজের ভিটেমাটিসহ ঘরটি মাদ্রাসার জন্য ওয়াকফ করে দিয়ে স্ত্রী এবং ছোট ছোট ৬ সন্তানকে নিজের চাচার ঘরে রেখে ঘর খুলে মাদ্রাসার ঘর নির্মাণের জন্য নিয়ে যান। পরবর্তীতে তার শ্বশুর জায়গার দাম পরিশোধ করে নতুন করে ঘর তুলে দেন। সম্পদ বলতে তার এতটুকুই।
কারি আবদুল খালিকের নয় সন্তান। ছয় ছেলে, তিন মেয়ে। বড় ছেলে হাফেজে কোরআন। পরের চারজন মাওলানা। দুই মেয়ের একজন আলেম। দুই জামাতার একজন দারুল উলুম দেওবন্দ পড়–য়া আলেম, অন্যজন মুফতি। তৃতীয় মেয়ে হেফজ শেষ করার পর এবং এক ছেলে ১ বছর বয়সে ইন্তেকাল করে জান্নাতের মেহমান হয়েছেন। এখন সাত সন্তান নিয়ে তার সংসার। কারি সাহেবের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের মাঝে হাফেজে কোরআন ১০ জন, মাওলানা ৯ জন, (দাওরা শেষ করে) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর শিক্ষা লাভকারী ২ জন। বর্তমানে কারি সাহেবের পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের ১৫ জন মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে। কারি আবদুল খালিক শুধু শিক্ষকতাতেই মনোনিবেশ করেননি। সুলুক-তাসাউফের মেহনতও করেছেন। প্রথমে সায়্যিদ আসআদ মাদানি (রহ.) ও পরে সায়্যিদ আরশাদ মাদানির হাতে বায়াত হন। এদিকে আরজাবাদ মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস মুফতি তাজুল ইসলামও তাকে খেলাফত প্রদান করেছেন। দীর্ঘ কর্মময় জীবনে তিনি বহু বুজুর্গের সান্নিধ্য পেয়েছেন।
ষাটের দশকে পড়াশোনার জন্য পাকিস্তান সফর করেছেন। এ ছাড়া একাধিকবার ভারত সফর করেছেন। পবিত্র হজব্রত পালনের উদ্দেশে তিনি সৌদি আরবও গমন করেছেন। আজীবন প্রতিবাদী চেতনার কারি আবদুল খালিক ওস্তাদ হিসেবে মোজাহেদে মিল্লাত আল্লামা শামসুদ্দীন কাসেমীর সান্নিধ্য পেয়েছেন। আল্লামা কাসেমীর নেতৃত্বে ইসলামবিরোধী নানাবিধ কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন। জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে ১৯৮৬ সালে গুলিস্তানে গোলাপ শাহ মসজিদ ভাঙার প্রতিবাদে তৌহিদি জনতার আন্দোলন চলাকালে তিনি মসজিদের স্থলে খুতবা পাঠের সময় পুলিশের বেয়নেট চার্জে রক্তাক্ত হন।
রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো শিক্ষাচুক্তি না থাকায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসায় ভর্তির জন্য দেওবন্দ কর্র্তৃক মনোনীত নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে সত্যায়নপত্র নিতে হয়। বিগত ১৮ বছর ধরে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সত্যায়নপত্র দাতাদের একজন কারি আবদুল খালিক আসআদী। এ ছাড়া গত চার দশক ধরে বাংলাদেশে সায়্যিদ হোসাইন আহমদ মাদানি (রহ.)-এর পরিবারের সদস্যদের দ্বীনি সফরের ব্যবস্থাপনায় জড়িত।
স্পষ্টবাদী ও আমানতদার হিসেবে যথেষ্ট সুনাম রয়েছে তার। পরিচিত যে কেউ তাকে একবাক্যে দ্বীনের একজন নিঃস্বার্থ খাদেম হিসেবে অভিহিত করেন। নিজের আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতদের অনেকেই তার মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে। তার মাধ্যমে আর্থিক সাহায্য পেয়ে অসংখ্য পরিবার স্বাবলম্বী হলেও তিনি ছয় দশক ধরে ঢাকায় বাস করলেও এখনো ভাড়া বাসায় থাকেন। ঢাকায় তার কোনো সহায়-সম্পদ নেই এবং গ্রামেও কোনো ফসলি জমিজমা নেই। সারাজীবন মসজিদন্ডমাদ্রাসা, দ্বীনি সংগঠন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এবং খতমে নবুওয়ত আন্দোলনের পেছনে নিজের সময়, শ্রম ও মেধা ব্যয় করছেন।
কারি আবদুল খালিকের মতো নিঃস্বার্থ মানুষ এ সময়ে বিরল। ছাত্র অন্তঃপ্রাণ এই দরদি শিক্ষকের স্নেহ, মায়া-মমতা আর ভালোবাসার ফসল হিসেবে দেশের আনাচে-কানাছে ছড়িয়ে আছে হাজার হাজার আলেম, হাফেজ ও কারি। আলোকিত এক সমাজের দিকপাল তিনি। দোয়া করি, আল্লাহতায়ালা তাকে সুস্থতার সঙ্গে দ্বীনি খেদমতে নিয়োজিত থাকার তওফিক দান করুন। তার স্বপ্নগুলো আলোর মুখ দেখুক।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।