
নির্বাচন প্রশ্নে অনড় অবস্থানে থাকা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি অবস্থান কর্মসূচিতে সংঘাতের ঘটনার অন্য দিকটি নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়া বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমানকে হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিরা দেখতে যান এবং পুলিশের পিটুনিতে আহত গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে ডিবি অফিসে আপ্যায়ন করা হয়। রাজনীতির এমন অভিনব ঘটনা দেখে সব মহলেই আলোচনা চলছে শান্তি-সমঝোতার বার্তা দিতে চেয়েছে সরকার? নাকি চাপে পড়ে ভুল শোধরানোর চেষ্টা করেছে, অথবা এটা আওয়ামী লীগের নতুন রাজনৈতিক কৌশল কি না?
এ ছাড়া আজ সোমবার সারা দেশে বিএনপির সমাবেশ কর্মসূচি পাল্টা আওয়ামী লীগও সমাবেশ ডেকেছিল। কিন্তু পরে তা বাতিল করা হয়েছে।
অন্যদিকে পুলিশের একাধিক সূত্র বলেছে, আপ্যায়নের বিষয়ে বাহিনীর মধ্যে দুই ধরনের মত রয়েছে। কেউ বলছে, এ ঘটনায় পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। কেউ বলছে, বিদেশিদের কাছে ‘ভাবমূর্তি উজ্জ্বল’ করতে এটা করা হয়েছে। তবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এতে বিরক্ত হয়েছেন।
অবশ্য আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মন্তব্য ভিন্ন। ক্ষমতাসীন দলের দাবি, শান্তি-সৌহার্দ্যরে রাজনীতির চর্চা শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। বিএনপির দাবি, বিভ্রান্তি ও অস্বস্তিতে ফেলার জন্য সরকার এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত শনিবারের দুটি ঘটনাই আওয়ামী লীগের পরিকল্পিত। তাদের উদ্দেশ্য, বিএনপির ভেতরে অস্বস্তি সৃষ্টি করা।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতার সঙ্গে দেশ রূপান্তরের এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তারা দাবি করছেন, এটা কোনোভাবেই সমঝোতার ইঙ্গিত দেওয়া নয়, শান্তি-সৌহার্দ্যরে চর্চা এবং একই সঙ্গে সরকারের গরম ও নরম অবস্থানের প্রকাশও।
এ নেতারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে বিএনপির মাঠের আন্দোলন দমনে পুলিশ অ্যাকশন মুডে থাকবে। পাশাপাশি বিএনপি নেতাকর্মীর প্রতি আন্তরিকতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে শান্তি-সৌহার্দ্যরে বার্তাও দিতে চায়, আওয়ামী লীগ মূলত সেটিই জানান দিয়েছে। সরকারি দল আন্তরিকতার প্রকাশ দেখিয়েছে, পাশাপাশি রাজনীতিতে ফায়দা হাসিলের জন্য নতুন কৌশল নিয়েছে।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তরের প্রতিবেদকের প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান হাসতে হাসতে বলেন, ‘রাজনীতি তো কৌশলই। তবে কাউকে দেখতে যাওয়া, আতিথেয়তা করা রাজনীতির বাইরের কোনো ঘটনা নয়। রাজনীতিতে এ ধরনের চর্চা থাকা ভালো।’
সরকারি দলের শীর্ষপর্যায়ের একাধিক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, মাঠে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলাও চলবে। বাসাবাড়ি ও অসুস্থ নেতাদের ফলমূল-পথ্য নিয়ে হাসপাতালে দেখতে যাওয়াও চলবে। বিএনপির নেতাদের মধ্যে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করা এবং অস্বস্তিতে ফেলা এ কৌশলের উদ্দেশ্য।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিএনপি সংঘাতের পথ বেছে নিয়ে সরকার পতনের আন্দোলন করছে। আওয়ামী লীগ শান্তি-সমাবেশ করছে। শুধু শান্তি-সমাবেশই নয়, আওয়ামী লীগ শান্তি-সৌহার্দ্যরে রাজনীতির চর্চাও করতে চায়। বিএনপি মিথ্যাচার করে বিদেশিদের সরকারের বিরুদ্ধে নিতে চেষ্টা করে চলেছে। এটি মিথ্যা প্রমাণ করতে আওয়ামী লীগ শান্তি-সৌহার্দ্যরে রাজনীতির চর্চা করে এ ঘটনার মধ্য দিয়ে বিদেশিদের দেখাতে চায়।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, আগে থেকে না বলায় হঠাৎ হাসপাতালে আমানউল্লাহ আমানকে দেখতে যাওয়া সম্ভব হয়েছে। জানিয়ে গেলে হতো না, বাধার মুখে পড়তে হতো। যেমনটি ঘটেছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শোক জানাতে গিয়ে।
আওয়ামী লীগের ওই নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতার বাসভবনে যান সন্তান হারানো মাকে সমবেদনা জানাতে। কিন্তু তাকে তখনকার বিরোধী দল নেতা খালেদা জিয়ার বাসভবনে ঢুকতে বাধা দেওয়ায় সমালোচনা হয়। বিএনপি নেতাদের দাওয়াত করে খাওয়ানো ও অসুস্থ নেতাকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে ইতিবাচক রাজনীতির চর্চা করতে চায় আওয়ামী লীগ। এগুলো দেশের মানুষ দেখুক, বিদেশিরাও দেখুক।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত শনিবার যে দুটি ঘটনা ঘটেছে, তাতে দোষের কী হয়েছে। রাজনীতিতে শান্তি-সৌহার্দ্য নেই বলে নতুন মনে হচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ ধরনের ঘটনা হরহামেশাই ঘটে।
তবে গয়েশ^র ও আমানকে নিয়ে যা হয়েছে, সেটাকে নাটকীয়তা বলে আখ্যায়িত করে পুরোটাই কৌতুকে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।
গত শনিবার পবিত্র আশুরার দিন বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পাঁচ ঘণ্টার ঢাকার সব প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি দেয় বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ জনগণের জানমাল রক্ষার কথা বলে একই কর্মসূচি দেয়।
গাবতলীতে কর্মসূচি পালনের সময় পুলিশ আটক করার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ। পরে তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে দেখতে প্রধানমন্ত্রী তার সহকারী একান্ত সচিব গাজী হাফিজুর রহমান লিকুকে পাঠান। তিনি খাবার, ফল ও জুস নিয়ে আমানকে দেখতে যান। অন্যদিকে ধোলাইখাল এলাকায় কর্মসূচিতে পুলিশের পিটুনিতে আহত হন গয়েশ্বর রায়। তাকে আটক করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়। কার্যালয়ের দোতলায় সংস্থাটির প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশীদের কক্ষের পাশের একটি কক্ষে তাকে আপ্যায়ন করা হয়।
এ ঘটনার পর আমানউল্লাহ বলেছেন, চলমান আন্দোলনে তার ভূমিকার পিঠে ছুরি মারা ও নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করতে নাটক সাজানো হয়েছে। গয়েশ^র বলেছেন, এটা নিম্নমানের মশকরা। দেশের মানুষ এত নির্বোধ নয়।
আপ্যায়নের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিষয়টি নিয়ে বিব্রতও হয়েছেন। গতকাল পুলিশ সদর দপ্তরসহ পুলিশের সবকটি ইউনিটেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা নিজেরাই আপ্যায়নের বিষয়টি খণ্ডন করার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে বলে মন্তব্যও করেছেন। আবার কেউ বলছেন, বিদেশিদের দেখাতে এটা করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মর্যাদার তিনজন ও পুলিশ সুপার (এসপি) মর্যাদার দুই কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুলিশের নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা আছে। আবার ভালো কাজও নিয়ে আলোচনা আছে। অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা করার পাশাপাশি যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন। এমন ঘটনার সময় ধোলাইখাল এলাকা থেকে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে আটক করে ডিবির কার্যালয়ে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন পুলিশ কর্তারা। সংঘর্ষের সময় গয়েশ^রের কপাল কেটে যায়। পুলিশ তাকে শুশ্রƒষা করারও ব্যবস্থা করেন। পরে তাকে ডিবির প্রধানের কক্ষের পাশেই একটি কক্ষে কয়েক পদের খাবার পরিবেশন করা হয়। ডিবির প্রধান হারুন অর রশীদ তাকে আপ্যায়িত করেন। গয়েশ্বরের প্লেটে তাকে খাবার তুলে দিতেও দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, হারুন অর রশীদ বলছেন, তার জন্য খাবারগুলো সোনারগাঁও হোটেল থেকে আনা হয়েছে।
ওই কর্মকর্তারা আরও বলেন, পুলিশের কেউ না কেউ আপ্যায়নের দৃশ্যের ছবি ও ভিডিও বাইরে পাঠালে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছড়িয়ে পড়ে। এতে পুলিশের ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও ক্ষুণœ হয়েছে। আটক হওয়া ব্যক্তিকে এভাবে আপ্যায়ন করা যায় না। তবে আপ্যায়ন করলেও তা প্রকাশ করা যায় না। সামনের সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের চাপ আছে সরকারের ওপর। আবার মানবাধিকার বিষয় নিয়ে র্যাবের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব কারণে বিদেশিদের দেখাতে ডিবি পুলিশ আপ্যায়নের ব্যবস্থা করে বলে তারা মনে করছেন। তাছাড়া গয়েশ^র রায়কে আপ্যায়নের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানতেন না।
সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনড় অবস্থান শেষ পর্যন্ত সংঘাতের দিকে মোড় নিয়েছে। সংঘর্ষের পাশাপাশি আগুন দেওয়ার ঘটনায় আবার জনসাধারণের মধ্যে পুরনো সেই অগ্নিসন্ত্রাসের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
গত শনিবার বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও বাস পোড়ানোর ঘটনা ঘটে। হঠাৎ করে মাতুয়াইল-আশুলিয়াসহ কয়েকটি স্থানে কয়েকটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। তবে কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই পক্ষই পরস্পরকে দোষারোপ করেছে।
আগুনভীতি নিয়ে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের কর্মসূচি দমনে কঠোর হতে পারে। বিএনপি সামনে পাল্টা শক্ত অবস্থান নিতে চেষ্টা করবে। ফলে দুই পক্ষ আগুন সন্ত্রাসের পক্ষে না থাকলেও তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নেওয়া চেষ্টা করবে। আর যদি সেটি হয়, তাহলে শনিবারের সংঘাত ও বাস পোড়ানোর ঘটনা দেশের রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য ভালো ইঙ্গিত বহন করবে না। সে কারণে বাসে আগুন দেওয়ার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।
২০১৩-১৪ সালে বিএনপির নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলনে সারা দেশে অগ্নিসংযোগ-পেট্রোলবোমায় প্রাণহানি ও সম্পদহানি ঘটেছে। অনেকে আগুনে পুড়ে ঝলসে যাওয়া অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে।
আওয়ামী লীগ বলছে, নাশকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আগুন সন্ত্রাস চালাতে বিএনপি একের পর এক কর্মসূচি দিয়ে চলেছে। জনগণের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব পালনে দলটি শান্তি সমাবেশ নিয়ে মাঠে থাকে। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগুন সন্ত্রাস সৃষ্টি করে আন্দোলন সফল করা যাবে না। মানুষকে জিম্মি করে, ভয়ভীতি সৃষ্টি করে রাজনীতির ফল কখনো ভালো হয় না। শেখ হাসিনা সহনশীলতা পছন্দ করেন, তার মানে দুর্বলতা নয়।’
বিএনপি বলছে, দায় চাপানো আওয়ামী লীগের পুরনো রীতি ও পদ্ধতি। শনিবারের ঘটনা হাস্যকর কৌতুকে পরিণত হয়েছে বলেও দলটির নেতারা মনে করেন।
রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আবার আগুনের ঘটনা প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেউ কাউকে দোষ না দিয়ে কারা আগুন সন্ত্রাস চালাতে চায়, তাদের চিহ্নিত করা সবারই দায়িত্ব। রাজনীতিতে ২০১৩-১৪ মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে ভয়াবহ ক্ষতি হবে। এটি স্মরণ রেখে সবাইকে রাজনীতি করা উচিত।’
২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে যেভাবে বাসে আগুন দিয়ে নাশকতা সৃষ্টি করা হয়েছিল, ঠিক সেই স্টাইলেই রাজধানীতে তিনটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে গানপাউডার, কেরোসিন তেল বা পেট্রোল ব্যবহার করে হয়েছিল। শনিবার বাসে আগুন দেওয়ার ধরনও ছিল আগের মতো। ব্যবহার করা হয়েছিল কেরোসিনের মতো দাহ্য বস্তু।
ঈদুল আজহার পর থেকে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকা- ছিল সভা-সমাবেশমুখী। এসব কর্মসূচিতে প্রতিপক্ষের চেয়ে বিপুল লোকসমাগমের প্রতিযোগিতা ছিল চোখে পড়ার মতো। শান্তিপূর্ণ এসব কর্মসূচির কারণে জনমনে কিছুটা স্বস্তি ছিল। শনিবার রাজধানীর প্রবেশমুখে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচির ঘটনায় তাদের সেই স্বস্তিবোধ আতঙ্কে রূপ নিয়েছে। ওই কর্মসূচি ঘিরে বিএনপি, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য এসেছিল। ফলে কর্মসূচি যে শান্তিপূর্ণ হবে না তা বোঝা যাচ্ছিল। অবস্থান কর্মসূচির স্থানগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন নেতাকর্মীদের দখলে ছিল। কিছু জায়গায় বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রতিরোধ করতে দেখা গেলেও নিয়ন্ত্রণ ছিল না।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মাতুয়াইল ও শ্যামলীতে গাড়িতে আগুন দেওয়ার ও ভাঙচুরের ঘটনার জন্য বিএনপিকে দায়ী করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। পত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় সুস্পষ্ট প্রমাণ দিয়ে খবর বেরিয়েছে, পুলিশের সামনেই এসব ঘটনা ঘটিয়ে ভিডিও করে অপরাধীরা নির্বিঘ্নে চলে গেছে। কারা এটা করতে পারে তা অনুমানের জন্য বেশি বুদ্ধিমান হওয়ার প্রয়োজন নেই। নিজেরা অপরাধ করে বিএনপির ওপর দোষ চাপানোর অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দিচ্ছি।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘পুলিশ যেখানে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা বাস পোড়াবে, এটা কেউ বিশ্বাস করবে না। পাগলেও না। বরাবরই তারা (আওয়ামী লীগ) নিজেরা এসব কাজ করে দায় চাপায় বিএনপির ওপর। কারা জ্বালাও-পোড়াও করে, ২০১৩-১৪ সালে আপনারা প্রমাণ পেয়েছেন। শনিবারে বাসে আগুনের ঘটনায় স্বয়ং বাসচালক বলছেন, মাত্র ১০ গজ দূরে ছিল পুলিশ।’
বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কর্মসূচির স্থান ছিল পুরান ঢাকার নয়াবাজার, যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া, গাবতলী, আবদুল্লাপুর ও চিটাগাং রোডে মুক্তি সরণি। মহাসমাবেশ থেকে এ অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। কর্মসূচির আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে করে স্থান পর্যন্ত জানিয়ে দেওয়া হয়। সারা দেশ থেকে সরকারই ওইদিন বাস বন্ধ রাখতে বাধ্য করেছিল মালিকদের। রাজধানী কেন, এর আশপাশেও বাস চলতে দেয়নি সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যে বাসগুলোতে আগুন দেওয়া হলো, সেগুলো এলো কোথা থেকে? পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সমর্থকরা পুরো এলাকায় অবস্থান নিয়ে রেখেছিল। তাদের ছত্রছায়া ছাড়া এ কাজ কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে দাবি করেন তারা।
দলটির দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি ছিল অনেকটা টেস্ট কেসের মতো। বিএনপি দেখতে চেয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীনরা কীভাবে রিঅ্যাক্ট করে। এর মধ্য দিয়ে দলটি দুটি বিষয় পরিষ্কার হতে চেয়েছিল। প্রথমত, ভিসানীতি ও সর্বশেষ জাতিসংঘের অধীনে নির্বাচন চেয়ে মার্কিন ছয় কংগ্রেসম্যানের চিঠির পর রাজনৈতিক দলগুলোকে সভা-সমাবেশের বিষয়ে সরকারের উদারনীতি বজায় থাকবে, নাকি তারা পুরনো চেহারায় ফিরে যাবে। দ্বিতীয়ত, কর্মসূচিতে হামলা বা বাধা এলে সেটি কোন পর্যায় গিয়ে ঠেকতে পারে। এ ছাড়া এই কর্মসূচির পর যে অবস্থা তৈরি হবে, সেটি বিদেশিদের কাছে তুলে ধরে আবারও এ সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না সেটি জোরালোভাবে তুলে ধরা। এ পরিস্থিতিতে জ্বালাও-পোড়াওয়ের মতো বিষয় চিন্তার মধ্যেও ছিল না।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, শনিবার আওয়ামী লীগ যা করেছে তা এক বাসচালকের কথাতেই সব ফাঁস হয়ে গেছে। বাসচালক বলেছেন, যে গাড়ি পোড়ানো হয়েছে তার এই পাশে-ওই পাশে পুলিশ ছিল। বিরোধী দলের কোনো মিছিল ছিল না। ওই এলাকাতেই শুক্র ও শনিবার মোটরসাইকেলে মহড়া দিয়েছে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা।’ তিনি বলেন, ‘এটা তাদের (আওয়ামী লীগ) বলা উচিত ছিল, দুষ্কৃতকারীরা করেছে আমরা খুঁজে বের করব। বিরোধী দলের ওপর না চাপিয়ে এ বক্তব্য দিলে বরং আরও বাস্তবসম্মত হতো।’
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তিনটি বাসে আগুন দেওয়ার বিষয়টি আমি বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে করি। কারণ ২০১৩-১৪ সালের মতো করে এটি আবার রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হবে বলে মনে হয় না। এটা কারা ঘটিয়েছে, এটা বের হয়ে যাবে। তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে এসব ঘটনা ঘটিয়ে পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে দুই দল যদি আলোচনার মাধ্যমে বর্তমান সংকট সমাধানে এগিয়ে না আসে, তাহলে রাজনীতিতে সংঘাত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।’
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, ‘সংঘাত ও বাস পোড়ানোর ঘটনা দেশের রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য ভালো ইঙ্গিত বহন করে না। সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সুষ্ঠু পরিবেশের যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, সেটি নতুন করে আলোচনায় আসবে। আবার বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বাদ দিয়ে সংঘাতে জড়াল, সেটি নিশ্চয়ই সব স্টেকহোল্ডার ভালোভাবে নেবে না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনের নামে দেশে ২০১৩-১৪ সালের মতো আগুন সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি যাতে কেউ করতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে কেউ ২০১৩-১৪ সালের মতো আগুন সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি করে বাংলাদেশের ক্ষতি করতে না পারে।’
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে পঞ্চম ধাপে আটটি বিভাগের ৩৪টি জেলায় আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী নতুনগুলোসহ এ পর্যন্ত সারা দেশে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মীয়মাণ ৫৬৪টির মধ্যে ২৫০টি মসজিদ উদ্বোধন করেছেন।
গত শনিবার বেশ কয়েকটি বাসে বিএনপির অগ্নিসংযোগের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের চরিত্র আপনারা ভালো করেই জানেন, এরা সন্ত্রাসী। গতকালও (শনিবার) তারা বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দিয়েছে। তারা ২০১৩-১৪ সালেও চলন্ত বাস, ট্রেন ও লঞ্চে আগুন দিয়ে মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছে। দেশের মানুষ গতকাল (শনিবার) তাদের (বিএনপি) ভয়ংকর চেহারা দেখেছে, কারণ তারা আবারও আগুন সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটিয়েছে।’
তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) ইসলামের নামে রাজনীতি করেছে, কিন্তু ইসলামের প্রতি তাদের ভালোবাসা নেই। ইসলামের প্রচার ও প্রসারে তাদের কোনো অবদানও নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা এবং তাবলিগ জামাতের জন্য টঙ্গীতে এক টুকরো জমি বরাদ্দ করে সারা দেশে ইসলামের সত্যবাণী ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেছিলেন। সৌদি আরবে হজের পর টঙ্গীতে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সমাবেশ করার জন্য বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও অর্জন করেছিলেন।
তিনি বলেন, দেশবাসী যাতে স্বল্প খরচে সৌদি আরবে পবিত্র হজ পালন করতে পারে, সেজন্য বঙ্গবন্ধু ‘হিজবুল বাহার’ জাহাজ কিনেছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে জাতির পিতার আন্তরিক উদ্যোগে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) সদস্য পদ লাভ করে।
সরকারপ্রধান আরও বলেন, তার সরকার সারা দেশে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করে সমাজে ইসলামের প্রকৃত চেতনা ছড়িয়ে দিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। সরকার প্রতিটি জেলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অফিস স্থাপন এবং বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উন্নয়ন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী আলেম-ওলামা, ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের নামাজের সময় মসজিদে বিশেষ করে জুমার নামাজের সময় সামাজিক হুমকি সম্পর্কে ওয়াজ করতে বলেন যেন যুবকরা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতি এবং অন্যান্য অভিশাপ থেকে দূরে থাকতে পারে। তিনি বলেন, ‘আলেম-ওলামাদের এমনভাবে ওয়াজ করা উচিত যাতে যুবকরা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ এবং মাদকের সঙ্গে জড়িত না হয়।’
শেখ হাসিনা এর আগে ২০২১ সালের ১০ জুন, ২০২৩ সালের ১৬ জানুয়ারি, ১৬ মার্চ, ১৭ এপ্রিল এবং গতকাল প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম ধাপে প্রতিটিতে ৫০টি করে মসজিদ উদ্বোধন করেন। অবশিষ্ট মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণকাজ ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
মডেল মসজিদ এবং ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাসহ ওজু ও নামাজের জন্য আলাদা জায়গা রয়েছে। এ ছাড়া হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র ও ইসলামিক লাইব্রেরি, অটিজম কর্নার, দাফনের আগে আচার ব্যবস্থা, গাড়ি পার্কিং সুবিধা, হিফজখানা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা, ইসলামিক সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এবং ইসলামি দাওয়াতের জন্য কনফারেন্স রুম, ইসলামি বই বিক্রয়কেন্দ্র, মসজিদের সঙ্গে দেশি-বিদেশি অতিথিদের জন্য বোর্ডিং সুবিধা থাকবে।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এবং সচিব এমডি এ হামিদ জমাদ্দার অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া।
অনুষ্ঠানে কক্সবাজার সদর উপজেলা ও খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার স্থানীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতারা, সরকারি কর্মকর্তা, আলেম-উলামাসহ সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ওপর একটি ভিডিও-ডকুমেন্টরি প্রদর্শন করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা (আলেম-ওলামা) শুক্রবার জুমার খুতবায় মানুষকে সচেতন করলে অভিভাবক, পিতা-মাতা ও শিক্ষক সবাই আরও সচেতন হবেন যাতে তাদের সন্তানরা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি এবং অন্যান্য অসামাজিক কাজে লিপ্ত হতে না পারে।’ বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি সবাইকে এর বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে এবং সমাজে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানান।
ইসলামকে শান্তির ধর্ম আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইসলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে সহনশীল ধর্ম। ইসলাম শান্তির ধর্ম, কিন্তু জঙ্গিবাদের মাধ্যমে এর সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিছু লোকের জন্য আমাদের পবিত্র ধর্ম প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।’ সরকার জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে বলে জানান তিনি।
মডেল মসজিদ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ যাতে ইসলামের মর্মবাণী বুঝতে ও অনুধাবন করতে পারে, তার জন্য সরকার মডেল মসজিদ নির্মাণ করছে। তিনি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মধ্যে অনলাইন নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘মসজিদগুলো সরাসরি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে চালানো উচিত যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ মসজিদগুলোর ক্ষতি করতে না পারে।’
বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের খাদ্যের কোনো অভাব নেই, যদিও জিনিসপত্রের দাম কিছুটা বেড়েছে।’
দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় ব্যাপক বৃক্ষরোপণ প্রয়োজন হওয়ায় তিনি সবাইকে অন্তত তিনটি গাছ লাগাতে বলেন একটি ফল, একটি কাঠ এবং একটি ভেষজ চারা।
নতুন চালু হওয়া ৫০টি মসজিদের মধ্যে রয়েছে মাগুরা জেলা মডেল মসজিদ এবং ৪৯টি উপজেলা মডেল মসজিদ। ৪৯টি উপজেলা মডেল মসজিদ গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলা, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ ও হোসেনপুর উপজেলা, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর ও দৌলতপুর, শরীয়তপুরের ডামুড্যা, টাঙ্গাইল সদর, বগুড়ার আদমদীঘি ও সোনাতলা, নওগাঁর রানীনগর, বদলগাছী ও নওগাঁ সদর; চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, নাটোরের সিংড়া, পাবনার বেড়া, ঈশ্বরদী ও পাবনা সদর; রাজশাহীর পুটিয়া ও দুর্গাপুর; গাইবান্ধার পলাশবাড়ী, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী, দিনাজপুরের বিরামপুর, লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ, খালিয়াঝুড়ি ও নেত্রকোনা সদর; জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ, ময়মনসিংহের ত্রিশাল, বরিশাল সদর, ভোলার দৌলতখান, ঝালকাঠির নলছিটি, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল, চাঁদপুরের হাইমচর ও হাজীগঞ্জ; নোয়াখালী সদর, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট ও সদর; কক্সবাজার সদর, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, ফেনীর ছাগলনাইয়া, রাঙ্গামাটির রাজস্থলী, কাউখালি ও নানিয়ারচর; খুলনার ফুলতলা ও পাইকগাছা; মাগুরা সদর, মেহেরপুর সদর ও সিলেটের গোলাপগঞ্জ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কক্সবাজার সদর ও খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলা সংযুক্ত ছিল। সেখানে আলেম-ওলামা, ইমাম, মুসল্লি, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তাসহ স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন। বাসস
পরিবেশ ও সামাজিক খাতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য গ্রিন লিডারস অ্যাওয়ার্ড পেলেন রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খাঁন মুকুল। ওমেন্স ফেডারেশন অব ওয়ার্ল্ড পিস অব বাংলাদেশের আয়োজনে গতকাল রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘গ্রিন ফেস্ট ২০২৩’ অনুষ্ঠানে রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ পাঁচজনকে এ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তরা হলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট, রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খাঁন মুকুল, থিংক ট্যাংক কমিউনিটি ফর ক্লাইমেট চেঞ্জের সদস্য দিলরুবা আহমেদ ও ইনতেখাব মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খাঁন মুকুল উপস্থিত থাকতে না পারায় তার পক্ষে অ্যাওয়ার্ডটি গ্রহণ করেন তার জ্যেষ্ঠপুত্র ও রূপায়ণ গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান মাহির আলী খাঁন রাতুল। তার হাতে অ্যাওয়ার্ডটি তুলে দেন ওমেন্স ফেডারেশন অব ওয়ার্ল্ড পিস অব বাংলাদেশের সভাপতি মেহরীন মাহমুদ।
এ সময় মাহির আলী খাঁন ওমেন্স ফেডারেশন অব ওয়ার্ল্ড পিস অব বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান এবং তাদের এ উদ্যোগকে অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন।
ঢাকার প্রবেশমুখে বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ১৭টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৭২৪ জনকে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন থানা, সাভার, আশুলিয়া ও নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় এসব মামলা হয়েছে।
এসব মামলার মধ্যে ডিএমপির ৯টি থানায় ১৩টি মামলা হয়েছে। বিস্ফোরক উদ্ধার, বাস পোড়ানো, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধাদানের ঘটনায় করা এসব মামলায় বাদী হয়েছে পুলিশ। ডিএমপির মামলায় ৬২৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। আসামিরা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। এসব মামলায় গতকাল পর্যন্ত ১৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন, শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় সাত শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। গতকাল রবিবার সচিবালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের টেনেট ফিন্যান্স ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও নির্বাচনী পর্যবেক্ষক টেরি এল ইসলের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকেদর এ কথা জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা সাতশরও বেশি হাতেনাতে ধরেছি। যারা আগুন ধরাতে গিয়েছিল তাদের আমরা হাতেনাতে ধরেছি। এদের মধ্যে যাদের সংশ্লিষ্টতা থাকবে না, তাদের থানা থেকেই ছেড়ে দেওয়া হবে।’
এদিকে মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, আসামিদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইমাম সরকার ওরফে ইসহাক সরকার ও অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবী, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ শাখা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সাত্তারসহ স্থানীয় নেতারা রয়েছেন।
জানতে চাইলে ডিসি ফারুক হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, শনিবার বিএনপি যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে সে কর্মসূচির কোনো অনুমতি দেওয়া ছিল না। তারা বেআইনি সমাবেশ করে অগ্নিসংযোগ করে, বাস ভাঙচুর করে, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে, পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং সরকারি কাজে বাধা দেয়। এসব অপরাধে আমাদের ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় এখন পর্যন্ত ১৩টি মামলা হয়েছে। এজাহারনামীয় আসামিদের গ্রেপ্তারে ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিবি (গোয়েন্দা বিভাগ), বিভিন্ন ক্রাইম ডিভিশনের থানার টিম অভিযান পরিচালনা করছে।
বিএনপি-পুলিশের সংঘর্ষের সময় আওয়ামী লীগের অনেককে অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে যেতে দেখা গেছে, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না, জানতে চাইলে ডিসি ফারুক হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেছিল। তারপর বিএনপি যখন ভাঙচুর করে সে সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষ হয়। ওই সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তাদের এলাকায় অবস্থান করেছিল। আমাদের পুলিশি কার্যক্রমের সঙ্গে তাদের কার্যক্রমের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
গত শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করে দলটি। সেই মহাসমাবেশ থেকে গত শনিবার ঢাকার প্রবেশমুখগুলোয় অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়। বিএনপির পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গত শনিবার ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ সব প্রবেশমুখে বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, গাবতলী, উত্তরাসহ বিভিন্ন প্রবেশের রাস্তায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আহত হয় পুলিশ ও বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী। অনেক স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
ডিএমপি সূত্র জানা গেছে, শনিবার রাজধানীর মাতুয়াইলে বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় কদমতলী থানায় পুলিশ বাদী হয়ে যে মামলা করেছে, সেখানে ৭০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। যাত্রাবাড়ীতে সংঘর্ষের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। গতকাল বাস পোড়ানো ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় করা দুটি মামলায় আসামি করা হয়েছে ১০৯ জন করে। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।
মামলার একটির এজাহারে বলা হয়েছে, শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে যাত্রাবাড়ী থানাধীন ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক আউট গোয়িং আসমা আলী সিএনজি স্টেশনের পাশের প্রধান সড়কে বিএনপি নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্রসহ অবস্থান নিয়ে সরকারবিরোধী সেøাগান দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে। এতে যান চলাচল বন্ধ হলে জনগণ ভোগান্তিতে পড়ে। আন্দোলনকারীদের বারবার অনুরোধ করলেও রাস্তা ছাড়েনি। তারা স্বদেশ পরিবহনের বাসসহ তিন-চারটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় ডিএমপির এক যুগ্ম পুলিশ কমিশনারসহ বেশ কিছু পুলিশ সদস্য আহত হন।
যাত্রাবাড়ী থানার আরেক মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, শনিবার দুপুর পৌনে ৩টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ইনকামিং সান্টু ফিলিং স্টেশনের সামনে মূল সড়কে বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করে রাস্তা অবরোধ করেন। এ সময় রাস্তার ওপর দুই-তিনটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেন।
এ ছাড়া রাজধানীর গাবতলী এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় দারুস সালাম থানার এসআই মো. আছিবুর রহমান তুষার বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা করেছেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে বিএনপির স্থানীয় ৫২ নেতাকর্মীকে।
ডেমরা থানায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবী ও জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ ১০৭ স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসআই অংকন সরকার বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন।
ডিএমপি সূত্রে আরও জানা গেছে, উত্তরায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে পাঁচটি মামলা হয়েছে। উত্তরা পূর্ব থানায় তিনটি ও উত্তরা পশ্চিম থানায় দুটি করে মামলা হয়েছে। পাঁচটি মামলায় ১৩১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।
উত্তরা পূর্ব থানার মামলায় আসামি করা হয়েছে উত্তরা পূর্ব থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি কফিল উদ্দিন, উত্তরা পূর্ব থানার ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. সুরুজ আলম ও উত্তরা পূর্ব থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সিফাত ইসলাম ওরফে দিপু শিকদারসহ ৩১ জনকে। উত্তরা পূর্ব থানার আরেক মামলায় আসামি উত্তরা পূর্ব থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি কফিল উদ্দিন, উত্তরা পূর্ব থানার ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. সুরুজ আলম, উত্তরা পূর্ব থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক অপু সিকদারসহ ৩৪ জন।
ধোলাইখাল এলাকায় সংঘর্ষ ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় সূত্রাপুর থানায় একটি মামলা করেছে পুলিশ। মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ শাখা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবদুস সাত্তারসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা হয়েছে। এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বংশাল থানার মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইমাম সরকার ওরফে ইসহাক সরকারসহ ২৫ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।
এ ছাড়া একই ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ৪০০ আসামির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলায় আটক করা হয়েছে সাতজনকে। থানার উপপরিদর্শক মুমিনুল হক বাদী হয়ে গতকাল মামলা করেন।
নাশকতা, ককটেল বিস্ফোরণ ও গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে সাভারে পৃথক ঘটনায় বিএনপির ৭৩ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় দুই শতাধিক নেতাকর্মীর নামে তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সাভার মডেল থানায় একটি ও আশুলিয়া থানায় দুটি মামলা হয়েছে। তিন মামলার একটি বাদী ক্ষতিগ্রস্ত একজন বাসচালক হলেও বাকি দুটি মামলার বাদী পুলিশ। তবে এসব মামলায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পাউরুটি আর গাজরে মুখ লাগালেও লাউ বা অন্য খাবারে মন নেই খরগোশের। তবে তাদের খাবারে ভাগ বসাতে অপেক্ষায় আছে এক কাঠবিড়ালী। কিছুক্ষণ পর খাবারের পাশ থেকে নিথর পড়ে থাকা কালো খরগোশটি সরে গেল। এক পা-দুই পা করে এগিয়ে এল কাঠবিড়ালী। খরগোশের খাঁচায় কাঠবিড়ালী কেন? কাঠবিড়ালী আর খরগোশের বন্ধুত্বের কথা গল্পেই মানায়। শিশুতোষ গল্পের এমন বাস্তব রূপ কি দর্শকদের অবাক করার প্রয়াস? আসলে এটি প্রাণীদের প্রতি জাতীয় চিড়িয়াখানার দায়িত্বরতদের অমনোযোগিতার, প্রাণী ব্যবস্থাপনার অভাবের প্রমাণ।
শুধু খরগোশের খাঁচায় কাঠবিড়ালীই নয়, শিশুদের খেলার জায়গায় কুকুর, বিভিন্ন স্থানে মশার লার্ভা, অরক্ষিত সীমানাপ্রাচীর টপকে আসা মাদকসেবীদের আড্ডা কী নেই এখানে! বাংলাদেশের জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার ছাপ ফুটে উঠেছে প্রতিটি প্রাণীর চেহারায়। ফলে দর্শনাথীরা যেমন আগ্রহ হারাচ্ছে, তেমনি গতি হারাচ্ছে প্রাণী নিয়ে গবেষণার কাজ।
২২ জুলাই দুপুরে মিরপুর চিড়িয়াখানার শিশুপার্ক ঘুরে দেখা যায়, তৃণভোজী প্রাণীদের খাঁচাগুলোর জীর্ণ দশা। খরগোশের খাঁচায় দেওয়া খাবার খেতে এসেছে কাঠবিড়ালী। খাঁচার চারপাশের লোহার জালে মরচে ধরে বড় ছিদ্র তৈরি হয়েছে। ওখান দিয়েই হয়তো কাঠবিড়ালী ঢুকেছে। খাঁচার মতোই খরগোশগুলোও যে অযতেœ-অবহেলায় রয়েছে তা বোঝা যায়।
২৩ জুলাই মোবাইল ফোনে জাতীয় চিড়িয়াখানার নানা বিষয়ে এ প্রতিবেদক কথা বলেন পরিচালক ড. মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম তালুকদারের সঙ্গে। খরগোশের খাঁচায় কাঠবিড়ালী প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চিড়িয়াখানায় উন্মুক্ত অনেক কাঠবিড়ালী আছে। খরগোশের খাঁচার ছিদ্র দিয়ে সেগুলো ঢুকতেই পারে।’ পরিচালকের কথার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মনিরুল এইচ খান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের প্রাণীর খাঁচায় প্রবেশের সুযোগ থাকা উচিত নয়। খরগোশের নির্দিষ্ট পরিমাণে খাবার সরবরাহ করা হয়। অন্য প্রাণী ভাগ বসালে ওই খাবার যে হিসাবে দেওয়া হয়েছে তা ঠিক থাকল না। বাইরের প্রাণী খাঁচায় ঢুকলে রোগ-জীবাণু বিস্তারের ঝুঁঁকিও থাকে। এ রকম অনুপ্রবেশ কাম্য নয়।’
কর্তৃপক্ষীয় অমনোযোগিতার কথা
জাতীয় চিড়িয়াখানায় ঢোকার আগেই প্রতারণার শিকার হন দর্শনার্থীরা। সেখানকার পার্কিংয়ে মোটরসাইকেলের জন্য নির্ধারিত ফি ১০ টাকা। কিন্তু ৪০ টাকা পর্যন্ত ফি রাখতে দেখা গেছে। মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার প্রভৃতি হালকা গাড়ির জন্য ফি ২০ টাকা; কিন্তু রাখা হচ্ছে ১০০ টাকা।
২২ জুলাই দুপুরে মাইক্রোবাসের চালক জলিল মিয়া বলেন, ‘গাড়ি রাখার ভাড়া ২০ টাকা লেখা আছে, কিন্তু আমার কাছ থেকে ১০০ টাকা রেখেছে। তারা বলছে, রাখতে হলে ১০০ টাকা দিয়েই রাখতে হবে। রাখার অন্য জায়গা না পেয়ে বাধ্য হয়ে এখানে রেখেছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পার্কিংয়ে কর্মরতরা সদুত্তর দিতে পারেননি।
এরপর চিড়িয়াখানায় ঢুকতেই চোখে পড়ল পাল থেকে বিচ্ছিন্ন একটি হরিণ নিয়ে আলোচনা করছেন দুই ব্যক্তি। দেখা গেল মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত একটি হরিণ বসে ঝিমাচ্ছে। রাকিবুল ইসলাম নামে এক তরুণ বলছিলেন, ‘বোঝা যাচ্ছে হরিণটা অসুস্থ। মাথায় কোনোভাবে আঘাত পেয়েছে। দাগ দেখে মনে হচ্ছে, আঘাতটা অনেক দিনের। হরিণটার চিকিৎসা দরকার।’
হরিণটির অসহায়ত্বের কথা ভাবতে ভাবতে ভেতরে যেতেই চোখে পড়ল জমে থাকা পানিতে মশার লার্ভা। চিড়িয়াখানার দর্শনার্থীদের জন্য হাত-মুখ ধোয়ার ও খাবার পানি সরবরাহের জায়গায় এমন দৃশ্য! অনেক দিন ধরে পানি জমে থাকায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটা কর্তৃপক্ষের কারও চোখে পড়ছে না।
চিড়িয়াখানার শিশুপার্কের জীর্ণ দশা। দোলনাগুলোতে মরচে ধরেছে কিছু ভেঙে আছে অনেক বছর ধরে বোঝা যায়। শিশুদের খেলার জায়গায় উন্মুক্তভাবে কুকুর ঘুরাফেরা করছে। কুকুরগুলো কীভাবে এলো, কেউ বলতে পারছে না।
সপরিবারে ঘুরতে এসেছেন চাকরিজীবী মাহমুদুল হক। তিনি বলেন, ‘দুই ছেলেকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এসেছি। শিশুপার্কে শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় উপকরণ বা প্রাণী থাকবে ভেবেছিলাম। কিন্তু দেখছি সব ভাঙাচোরা, পরিত্যক্ত এলাকার মতো। কুকুর দেখে শিশুরা ভয় পায়। কিন্তু কুকুর ঘুরছে কীভাবে?’
শিশুপার্ক থেকে বেরিয়ে অন্য প্রাণী দেখার জন্য বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেল চিড়িয়াখানা নোংরা হয়ে আছে। ঝড়ে ভাঙা গাছ পড়ে আছে। সবুজ খোলা জায়গায় আবর্জনার স্তূপ। অরক্ষিত সীমানাপ্রাচীর, অনায়াসে ঢুকে পড়ছে বহিরাগতরা। মাদকসেবীরা বিভিন্ন অংশে জমিয়েছে আড্ডা। আরেক দল ঢুকেছে অস্বাস্থ্যকর বিভিন্ন খাবার নিয়ে। ঘুরে ঘুরে সেসব বিক্রিও করছে। না বুঝেই অভিভাবকরা এসব কিনে দিচ্ছেন শিশুদের।
চিড়িয়াখানা পরিদর্শনে বোঝা গেল, অধিকাংশ প্রাণী সঠিক পরিচর্যা পায় না। তাদের খাবার ও স্বাস্থ্য কিছুই খতিয়ে দেখা হয় না।
হায়েনার আক্রমণ নিয়ে লুকোচুরি
চিড়িয়াখানায় ঘুরতে ঘুরতে চোখে পড়ল আলোচিত সেই হায়েনার খাঁচা। একটি চিত্রা হায়েনার কামড়ে দুই বছরের এক শিশুর এক হাতের কনুই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে আসা শিশু সাইফ অজান্তে প্রাথমিক নিরাপত্তাবেষ্টনী পার হয়ে হায়েনার খাঁচার কাছে চলে যায়। কামড় দিয়ে সাইফের ডান হাত কনুই থেকে ছিঁড়ে নেয় হায়েনাটি।
গত ৮ জুনের ঘটনা। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ আলাদাভাবে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করে এ ঘটনায়। তদন্তের ব্যাপারে চিড়িয়াখানার পরিচালক ড. মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম তালুকদার মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে কথা বলবেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।’
মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক যুগ্ম সচিব (প্রাণিসম্পদ-১) শাহীনা ফেরদৌসী জনসংযোগ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. ইফতেখার হোসেন ২৪ জুলাই সন্ধ্যায় বলেন, ‘আমার কাছে তদন্ত-সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই। তা ছাড়া এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানাতে কোনো নির্দেশনা আসেনি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তিনটি কমিটির তদন্ত শেষে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, ঘটনার জন্য শিশুটির পরিবার দায়ী। তারা শিশুটিকে প্রাথমিক নিরাপত্তাবেষ্টনী পার করে দিয়ে অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলেন। এর মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে ২৪ জুলাই কথা হয় শিশু সাইফের বাবা সুমন মিয়ার সঙ্গে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষর কোনো দোষই যদি না থাকে, তাহলে ওই জায়গা নতুন করে নিরাপত্তাবেষ্টনী কেন তৈরি করল? ঘটনার পর তারা আমাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু সহযোগিতা তো দূরের কথা, একবার ফোন করে খোঁজও নেয়নি।’
চিড়িয়াখানা নিয়ে ক্ষোভ দর্শনার্থীদের
জাতীয় চিড়িয়াখানার নানা বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দর্শনার্থীদের অনেকে। ২২ জুলাই তাদের সঙ্গে কথা হয় দেশ রূপান্তরের। ফারুক হোসাইন নামের এক যুবক বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় নোংরা জমে আছে। কর্তারা হয়তো নিজেরাই ভালো করে দেখেন না। দেখলে তারা পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করতেন। প্রাণীদের খাঁচার অবস্থাও ভালো নয়।’
শিক্ষক মোহাম্মদ রাশেদুল হক নিলফামারী থেকে এসেছেন ছাত্রদের নিয়ে ঘুরতে। তিনি বলেন, ‘চিড়িয়াখানার অনেক বিষয় উন্নত করা দরকার। টয়লেটগুলো দুর্গন্ধযুক্ত ও অস্বাস্থ্যকর। ভেতরে গিয়ে দাঁড়ানোই যায় না।’
এসব বিষয়ে মোবাইল ফোনে রফিকুল ইসলাম তালুকদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য না করে কার্যালয়ে গিয়ে কথা বলার পরামর্শ দেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মনিরুল এইচ খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চিড়িয়াখানা অনেক আগে তৈরি করা হয়েছে। এখন অনেক উন্নয়ন প্রয়োজন। একটি মহাপরিকল্পনা হয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত প্রাণীদের সঠিক খাবার ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দরকার।’
একদিকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানির দিকে হাঁটছে, অন্যদিকে রপ্তানি আয় স্বাভাবিক থাকলেও প্রবাসী আয় গত সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যেই বিদেশি ঋণে বড় ধাক্কার মুখে বাংলাদেশ। সরকারি কর্মকর্তাদের অদক্ষতায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারায় একদিকে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমে গেছে, অন্যদিকে ঋণ পরিশোধের চাপ ক্রমেই বাড়ছে। আগস্ট শেষে ঋণ পরিশোধ করতে গত বছরের তুলনায় ৩৮ শতাংশ বেশি, বিপরীতে অর্থছাড় কম হয়েছে ১৭ শতাংশ। অর্থাৎ এ বছর ঋণ পাওয়ার চেয়ে ঋণ পরিশোধের চাপ গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমে দাঁড়িয়েছে ৭৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারে। গত বছর একই সময়ে তা ছিল ৮৬ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমেছে ১৭ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের দুর্বলতার কারণে অর্থছাড় কমেছে। তাছাড়া ঋণ পরিশোধে আরও বেশি চাপের মুখে পড়তে হবে বলেও মনে করেন তারা।
ইআরডির হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছর আগস্ট শেষে সুদসহ ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ৪০ কোটি ডলার বা ৪ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। অথচ গত বছর একই সময়ে সুদসহ ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল ২৮ কোটি ৯৭ লাখ ডলার বা ২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ বছর বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ৩৮ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। ঋণ থেকে সুদকে আলাদা করলে দেখা যায়, সুদের চাপও দ্বিগুণ হয়েছে। আগস্ট শেষে সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ১৪ কোটি ৬৩ লাখ ডলার বা ১ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের শুরু থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে উন্নয়ন প্রকল্পে বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়েছে। উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রীর মূল্য ঊর্ধ্বমুখী ছিল। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও এলসি ওপেনিং নিয়ে অনেক প্রকল্পে জটিলতায় পড়তে হয়েছে। এ কারণে ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন হার কম ছিল। এ ছাড়া সক্ষমতার অভাবে এডিপিতে বৈদেশিক ঋণের বরাদ্দের ব্যবহার এর আগের অর্থবছরের চেয়ে কিছুটা কম ছিল।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগে আমরা বড় বড় প্রকল্পের যেসব ঋণ নিয়েছিলাম, অধিকাংশ ঋণের ম্যাচিউরিটি শেষ হয়েছে। এ ঋণগুলোর সুদহারও বেশি আবার গ্রেস পিরিয়ডও কম। গ্রেস পিরিয়ড কম অর্থাৎ আমাদের ঋণ পরিশোধের সময় দ্রুততর হয়ে আসছে।’
সংস্থাগুলো সুদের হার বাড়াচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটা সময় ছিল গ্রেস পিরিয়ড ১০ বছর দেওয়া হতো, এখন বেশিরভাগ ঋণেই ৫ বছর দেওয়া হয়। সুদের হার বাড়াচ্ছে ঋণদাতা সংস্থাগুলো। ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাংক ৫ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে কথা বলেছে, অথচ তারা আমাদের শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ ঋণ দিত।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঋণদাতা সংস্থাগুলোর মধ্যে এ দুই মাসে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে জাপান। এ দেশের কাছ থেকে ছাড় হয়েছে ৩০ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা এডিবির কাছ থেকে। এ সংস্থার কাছ থেকে ঋণের অর্থছাড় হয়েছে ১৫ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। তৃতীয় সর্বোচ্চ করেছে বিশ^ব্যাংক। এ সংস্থার আইডিএ প্রোগ্রামের অর্থছাড় হয়েছে ১৩ কোটি ২৯ লাখ ডলার।
চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে অর্থছাড় কম হলেও এ সময়ে ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে প্রায় চারগুণ। আগস্ট শেষে অনুদানসহ বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে ১১৪ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। গত বছর একই সময়ে প্রতিশ্রুতি ছিল ৩০ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের। এ সময়ে পাইপলাইনে থাকা সম্ভাব্য ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৭০ কোটি ডলারের বেশি।
ইআরডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সুদের হার বৃদ্ধির ফলে সরকারের বৈদেশিক ঋণের পরিশোধের চাপ বেড়েছে। এর ফলে ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।
ইআরডির হিসাবে, সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের সুদ ও আসল মিলিয়ে ২ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে। এর মধ্যে সুদ হিসাবে পরিশোধ করেছে ৯৩৫ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ডলার আর আসল পরিশোধ করেছে ১ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকার আসল ও সুদ বাবদ পরিশোধ করেছে ২ দশমিক ০১৭ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে আসল ১ দশমিক ৫২ বিলিয়ন এবং সুদ ৪৯১ মিলিয়ন ডলার।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) রেট বেড়ে ৫ শতাংশের বেশি হয়েছে। এ কারণে বাজারভিত্তিক ঋণের জন্য বাংলাদেশকে এখন ৫ শতাংশের বেশি সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের আগে এই রেট ছিল ১ শতাংশের কম।
ঋণের চাপ আরও বাড়বে বলে মনে করেন ড. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের ঋণ পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে। যদিও এখন পর্যন্ত রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের শতাংশ হিসাবে বা জিডিপির শতাংশ হিসাবে এটি কম। কিন্তু তারপরও এটি ধীরে ধীরে বেড়ে এখন ৩৮ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। এমন সময়ে ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে যখন আমাদের রিজার্ভও চাপে আছে।’ তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের প্রতিবছর প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স মিলিয়ে আমাদের আয় ৮০ বিলিয়ন ডলার। এ অর্থ আবার আমদানির জন্য ব্যয় করতে হচ্ছে। রিজার্ভের নিরিখে এটি এখন অবশ্যই চাপ। যখন রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছিল তখন এ চাপ অনুভূত হয়নি। এখন রিজার্ভ কমতির দিকে আর ঋণ পরিশোধের দায়ভার বৃদ্ধির দিকে।’
বর্তমানে চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য সরকার যে ঋণ নিয়েছে, সেসব ঋণের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হলে ঋণ পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে বলে ধারণা করছে ইআরডি।
সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রের প্রভাব পড়েছে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে। এডিপি বাস্তবায়নও চলছে ঢিমেতালে। অর্থ সংকট ছিল না, এমন প্রকল্পের অগ্রগতিও আশানুরূপ হয়নি। অগ্রাধিকার পাওয়া মেগা প্রকল্পের কাজও চলছে ঢিমেতালে। আর ব্যয় করতে না পারায় বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমে গেছে।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণের সিংহভাগই এসেছে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির মতো বড় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে পাইপলাইনে বৈদেশিক ঋণ রয়েছে ৪৪.৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এ ঋণের জন্য সরকার ইতিমধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে।
ফরিদপুরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। গত এক মাসে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ৪৫ ডেঙ্গু রোগীর। আর গত এক সপ্তাহেই মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। চলতি বছর সব মিলিয়ে জেলাটিতে এ নিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ৬১ জন। জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে এবার ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ৬৩২। এর আগে এক বছরে এত আক্রান্ত আর মৃত্যু দেখেনি জেলাটি। রোগীর চাপে বিভিন্ন হাসপাতালে দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। ডেঙ্গু রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছে হাসপাতালের বারান্দা ও সিঁড়িতে। তাতে ব্যাহত হচ্ছে অন্য রোগীদের চিকিৎসাসেবাও।
ডেঙ্গুতে জেলার এমন পরিস্থিতির জন্য সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে জেলা প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সব কার্যক্রম চলমান। সরকারি সংস্থাগুলোর পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিভিন্ন এলাকায় মশা নিধন কার্যক্রম চলছে। বিভিন্ন হাসপাতালে বিনামূল্যে স্যালাইন বিতরণ করা হচ্ছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসাবে এ বছর জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ১২ হাজার ৬৩২ রোগী। বর্তমানে ফরিদপুরে ভর্তি হয়ে ৮২৪ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে সেবা নিচ্ছে। ডেঙ্গু আক্রান্তের সঙ্গে যেন পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে মৃত্যুও। এদের অধিকাংশই নারী। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, গত এক মাসে এ জেলার হাসপাতালগুলোতে মৃত্যু হয়েছে ৪৫ জনের। এর মধ্যে ফরিদপুরের ৩১ এবং অন্যান্য জেলার ১৪ জন। আর এ বছর জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ৬১ জন। এর মধ্যে ফরিদপুরে ৪১ জন, বাকি ২০ জন রাজবাড়ী, মাগুরা, গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরের।
হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় শয্যা সংকটের পাশাপাশি তীব্র গরমে অনেকটাই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা। তবে ডেঙ্গু রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে দিন-রাত চেষ্টা করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সব স্কুল-কলেজ, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থানে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার আশা প্রকাশ করেন, শিগগিরই সবার সমন্বয়ে ডেঙ্গু মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
সিভিল সার্জন অফিস বলছে, বিভিন্ন হাসপাতালে দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে জেলার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ২ হাজারের অধিক রোগী। ফলে রোগীদের চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এনামুল হক বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের চিকিৎসকসহ সব বিভাগের কর্মীরা দিন-রাত কাজ করছেন। তবে শুধু সেবা দিলেই চলবে না। এর প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে মৃত্যুর মিছিল থামানো যাবে না। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শুধু ফরিদপুর নয়, এ অঞ্চলের ৫ থেকে ৬টি জেলার রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
ডেঙ্গু রোগীদের বিষয়ে জেলার সিভিল সার্জন ডা. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘গত এক মাসে এ জেলায় অতিরিক্ত ডেঙ্গু রোগীর চাপ লক্ষ করা গেছে। আমরা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জেলার সব হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে বলেছি। তিনি জানান, ফরিদপুরে এ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১২ হাজার ৬৩২ ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছে ১১ হাজার ৭৪৭ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ৬১ জনের। গতকাল সোমবার জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল ৮২৪ জন।
ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেছেন, মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ, নীতি ও দর্শন বর্তমান বিশ্বের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ বন্ধে মহাত্মা গান্ধীর শান্তি ও সম্প্রীতিকে ছড়িয়ে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু ও মহাত্মা গান্ধী উভয়ে অসাম্প্রদায়িক নেতা। তাদের মতাদর্শ বিশ্বের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। গতকাল সোমবার দুপুরে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট ক্যাম্পাসে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক যুব পিস ক্যাম্পের শেষ দিন ও মহাত্মা গান্ধীর ১৫৫তম জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) জীবন কানাই দাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন নোয়াখালী-১ আসনের সাংসদ এইচ এম ইব্রাহিম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবিব, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেন, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুল আনম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক সহিদ উল্যাহ খান সোহেল প্রমুখ। অনুষ্ঠান শুরুর আগে গান্ধীর ম্যুরালের সামনে প্রভাত প্রার্থনা ও ম্যুরালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। শেষে গান্ধী আশ্রম প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকী এবং মহাত্মা গান্ধীর ১৫৫তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক যুব পিস ক্যাম্পের সমাপনী ঘোষণা করা হয়। ক্যাম্পে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ১২টি দেশের দেড় শতাধিক প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজ দেশের মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। কারণ এ সরকার খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রেখেছে। তার মুক্তির বিষয়ে ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে। এরা কাপুরুষ। এরা জানে খালেদা জিয়া সুস্থ হলে তাদের ক্ষমতার মসনদ ভেঙে পড়বে। বন্দি রেখে খালেদা জিয়াকে এরা হত্যা করতে চায়।
গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তির’ দাবিতে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল আয়োজিত কৃষক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও সকাল থেকে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন নেতাকর্মীরা। কাকরাইল থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত সড়কে হলুদ-সবুজ রঙের টুপি মাথায় দিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মী ‘খালেদা জিয়ার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’, ‘এক দফা এক দাবি শেখ হাসিনা কবে যাবি’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য তারা (সরকার) বিভিন্ন রকম আইনকানুন দেখাচ্ছে। যখন আপনার (শেখ হাসিনার) কানের সমস্যা হয়েছিল তখন আপনি আমেরিকা চলে গিয়েছিলেন। যান নাই? আজকে খালেদা জিয়ার যখন জীবন-মরণের সমস্যা তখন এইসব কথা বলছেন কেন? কারণ রাজনৈতিকভাবেই তারা বেগম জিয়াকে হিংসা করে, তাকে সুস্থ করতে চায় না। বেগম জিয়াকে রাজনীতি করতে দিচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সম্পূর্ণ লক্ষ্য একটাই, এ দেশে কোনো বিরোধী দল থাকবে না, তারাই সরকার চালাবে, সরকারে থাকবে। তাদের কথাবার্তা শুনলে মনে হবে তারাই শুধু এ দেশের মালিক আর আমরা সব প্রজা।’
তিনি আরও বলেন, ‘পিটার হাসকে (মার্কিন রাষ্ট্রদূত) নিয়ে তারা (সরকার) খুব রেগেছে। তাদের নেতা-মন্ত্রীরা সমস্ত ডিপ্লোমেটিক নর্মসকে উপেক্ষা করে তার বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলছে। তাদের বংশবদ টেলিভিশন চ্যানেলগুলো মিথ্যাচার করছে। এরা এত দায়িত্বজ্ঞানহীন। যে দেশটাতে আমরা সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করি, সেই দেশের সঙ্গে সমস্যা তৈরি করেছে। আরেকটা খবর আছে, সেপ্টেম্বর মাসে সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে। এর অর্থ বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর তাদের আস্থা নেই। সেজন্য তারা অর্থ পাঠাচ্ছে না।’
দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা খালেদা জিয়া উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ নেতারা) তো মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। তারা পাকিস্তানের সরকারের ভাতা খেয়েছিলেন।’
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে কেনো বিকল্প নেই। একটাই পথ। সরকারকে সরাসরি বলতে চাই, এখনো সময় আছে মানে মানে পদত্যাগ করে একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিন, সংসদ বিলুপ্ত করুন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় দেশের মানুষ জানে কীভাবে স্বৈরাচারকে, ফ্যাসিবাদকে দূর করতে হয়।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখানে আমাদের রংপুর-দিনাজপুরের মানুষ আছেন। এক কৃষক নেতা ব্রিটিশ পিরিয়ডে বিদ্রোহ করেছিলেন। কৃষককে ডাক দিয়েছিলেন, কোনঠে বাহে জাগো সবাই। এই হচ্ছে ডাক। কোথায় আছেন, সবাই জাগেন, জেগে ওঠেন। প্রতিরোধ গড়ে তুলি, সমস্ত নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই।’
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, ‘সরকারের দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে দেশের কৃষকরা পণ্যের ন্যায্যমূল্য, সার-কীটনাশক-বীজ কোনো কিছুই পাচ্ছেন না। মেগা প্রকল্পের নামে সরকার লুটপাট করে বিদেশে অর্থ পাচার ও বাড়িঘর করে আখের গোছাচ্ছে।’
কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির শাহজাহান ওমর, বরকতউল্লা বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, ফরহাদ হালিম ডোনার, রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ বক্তব্য দেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রস্তুত থাকার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশর (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান। গতকাল সোমবার বিজিবির সিলেট সেক্টর সদর দপ্তরে সব পর্যায়ের বিজিবি কর্মকর্তা ও সৈনিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ নির্দেশনা দেন। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে বিজিবির প্রতিটি সদস্যকে সর্বোচ্চ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনেরও আহ্বান জানান।
এর আগে ডিজি বিজিবির বিভিন্ন ইউনিটের অপারেশনাল, প্রশিক্ষণ ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিদর্শনের অংশ হিসেবে গত রবিবার ও গতকাল সোমবার বিজিবির সিলেট সেক্টর সদর দপ্তর এবং আওতাধীন সিলেট ব্যাটালিয়ন (৪৮ বিজিবি) এবং অধীনস্থ ১০ নম্বর পোস্ট ও পাথরকোয়ারি বিওপি, সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (২৮ বিজিবি) এবং অধীনস্থ দুর্গম ডুলুরা বিওপি এবং জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (১৯ বিজিবি) অধীনস্থ আমলশিদ বিওপি ও রহিমপুর খাল পরিদর্শন করেন।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে জকিগঞ্জে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে রহিমপুর খালের সংযোগস্থল বন্ধ রয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশি কৃষকরা সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ বিষয়ে গত জুন মাসে বিজিবি-বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলনে বিজিবির পক্ষ থেকে বিষয়টি অত্যন্ত জোরালোভাবে উত্থাপন করা হয়। বিএসএফ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য বিজিবিকে আশ্বাস দেন। এরই ধারাবাহিকতায় রহিমপুর খালের সংযোগস্থল পুনঃউন্মুক্তকরণ কাজের অগ্রগতি সরেজমিনে পরিদর্শনের জন্য বিজিবি মহাপরিচালক গতকাল রহিমপুর খাল পরিদর্শন করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।