
ভোগান্তির আরেক নাম হয়ে উঠেছে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) ভুল সংশোধন প্রক্রিয়ার। এনআইডি সংশোধন করতে গিয়ে পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে অনেককে। নির্বাচন কমিশনের এনআইডি অনুবিভাগ নতুন এনআইডি তৈরি ও ভুল হলে তা সংশোধন করে। সংশোধনের ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা একের পর এক নানারকম কাগজ চেয়ে থাকেন। সঠিক কাগজ উপস্থাপনের পরও সংশোধন করতে হয়রানি হতে হয় নাগরিকদের।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন অফিসের ইলেকটোরাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (ইটিআই) ভবনের নিচে প্রতিদিনই থাকে মানুষের জটলা। তথ্যকেন্দ্রের সামনে থাকে লম্বা সারি। সরেজমিনে এনআইডি সংশোধন, হারিয়ে যাওয়ার পর নতুন করে তুলতে আসা লোকজনের ভিড় লেগে থাকতে দেখা যায়। সপ্তাহখানেক আগে এনআইডি ট্রান্সফার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আগারগাঁওয়ে আসেন নুরুল ইসলাম গাজী। এ সময় তার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি বলেন, তার বড় ভাই আগে ধানম-ির ভোটার ছিলেন। গত কয়েক বছর ধরে বেশ অসুস্থ। তাই তিনি গ্রামে চলে যাবেন। তার এনআইডি ঢাকা থেকে চাঁদপুরের কচুয়াতে গ্রামের ঠিকানায় ট্রান্সফার করতে এসেছিলেন। তাকে বলা হয়, উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে। সেখানে যাওয়ার পর কিছু কাগজপত্র দিতে বলা হয়। যেমন জন্ম নিবন্ধন, বিদ্যুৎ বিলের কাগজ, প্রত্যয়নপত্র। ইউনিয়ন পরিষদে গেলে বলা হয় জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করা নেই। এটা অনলাইন করতে হবে। তারা নানা অজুহাতে ঘুরাতে থাকে। বেশ কয়েক দিন পর জন্ম নিবন্ধন ও প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়। তার জন্য বাড়তি টাকাও দিতে হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী সব কাগজ জমা দিয়েছেন। এখন অপেক্ষা করছেন, কবে ট্রান্সফার হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিবারের প্রায় সবারই এনআইডিতে সমস্যা রয়েছে। এর আগে আমার আইডি কার্ডে মায়ের নামের বানান ভুল ছিল। বানান ঠিক করতে আবেদন করার পর তারা বলেছিল ১৫ দিন সময় লাগবে। কিন্তু সংশোধিত এনআইডি ছয় মাস সময় লেগেছে। আমাকে পাঁচ থেকে সাতবার নির্বাচন কমিশনে যেতে হয়েছে। পরিবারের আরও কয়েকজনের একই অবস্থা। মনে হয় জীবনের বাকি সময় এই ভুল সংশোধন করতে কেটে যাবে।’
জন্মতারিখ সংশোধন করতে এক বছর ধরে নির্বাচন কমিশনের বারান্দায় ঘুরছিলেন নোয়াখালীর আশ্রাফ উদ্দিন। জন্ম নিবন্ধন সনদ অনুযায়ী তার জন্ম ১৯৮২ সালে কিন্তু এনআইডি কার্ডে ১৯৭৭ সাল। স্থানীয় নির্বাচন অফিসে গেলে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখান থেকে কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়। সেখানে যাওয়ার পর তারা আবার নিজ জেলায় যোগাযোগ করতে বলে।
আশ্রাফ উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এক বছর আমাকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে হয়েছে। অনেক কর্মকর্তার হাতে-পায়েও ধরতে হয়েছে। নানা জায়গায় হয়রানি ও টাকা খরচ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সংশোধন হয়েছে।’
জাতীয় পরিচয়পত্র ও সংরক্ষিত তথ্য-উপাত্ত (সংশোধন, যাচাই ও সরবরাহ) প্রবিধানমালা ২০১৪-এর প্রবিধি ২(৫) অনুযায়ী, এনআইডি সংশোধন আবেদনের ক্ষেত্রে ৪টি শ্রেণি (ক্যাটাগরি) করা হয়েছে। ক ক্যাটাগরির আবেদন নিষ্পত্তির জন্য উপজেলা-থানা নির্বাচন কর্মকর্তা, খ ক্যাটাগরির আবেদনের জন্য জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, গ ক্যাটাগরির আবেদনের জন্য আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এবং ঘ ক্যাটাগরির আবেদন নিষ্পত্তির জন্য এনআইডি উইংয়ের মহাপরিচালককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে ক, খ, গ ক্যাটাগরিতে এবং সব থেকে বেশি গ ও ঘ ক্যাটাগরিতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন নাগরিকরা। মাসের পর মাস আবেদন জমা থাকছে। আবেদন প্রক্রিয়া ডিজিটাল হলেও নাগরিকরা এর সুফল ঠিকমতো পাচ্ছে না।
আগারগাঁওয়ে এনআইডি অফিসে আসা একজন ভুক্তভোগী শাহে আলম বলেন, ‘আমার ভোটার আইডি (এনআইডি) কার্ডে নামের বানান ভুল ছিল। তারা যেসব কাগজপত্র চেয়েছে সবই জমা দিয়েছি। এখন শুনানির জন্য ডেকেছে। গত সপ্তাহে আসার পর তারা বলেছে এ সপ্তাহে আসতে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সিরিয়াল পাইনি।’
নামের বানান ভুল নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জাকিয়া ইসলামকে। তার জন্মস্থান সিলেট। জাকিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তাই দেশে এসেছি নবায়ন করে ই-পাসপোর্ট করতে। সবকিছু ঠিকঠাক করে পাসপোর্ট নবায়নের জন্য জমা দিলে সেখান থেকে বলা হয় আমার এনআইডি ভুল। জন্মতারিখ মিলছে না। স্থানীয়ভাবে সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করা হলেও তারা কিছুই করতে পারবে না বলে জানায়। তাদের পরামর্শে ঢাকায় নির্বাচন ভবনে এসে কয়েক দিন ঘুরেছি, কাগজপত্র সবই জমা দিয়েছি। এখন অপেক্ষায় আছি কবে নাগাদ ঠিক হয়।’
রাজধানীর বসিলা থেকে আসা মজিবুর হক নামে এক ভুক্তভোগী জানান, তারা জন্মতারিখ এবং নামের বানানে ভুল রয়েছে। নির্বাচন কমিশনে এলে জন্ম নিবন্ধন ও এসএসসির সার্টিফিকেট আনতে বলা হয়। তিনি বলেন, ‘আমি ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। আমার তো ম্যাট্রিক পাসের সার্টিফিকেট নেই। আমি এই সার্টিফিকেট কোথায় পাব।’
দেশে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০। এর মধ্যে অনেকেরই এনআইডিতে কোনো না কোনো সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধান করতে এসে যাতে নাগরিকের ভোগান্তি না হয়, সেজন্য ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বিকেন্দ্রীকরণ করা হয় জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তির সেবা কার্যক্রম। এনআইডি সংশোধন, হারানো কার্ড উত্তোলন এবং নতুন কার্ড মুদ্রণে উপজেলা, জেলা ও আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি) কার কী ক্ষমতা তা-ও নির্ধারিত হয় প্রজ্ঞাপনে। এসএসসি সনদধারীরা কিছুটা সেবা পেলেও, যাদের কোনো সনদ নেই তাদের বেশি বেগ পেতে হয়।
জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সার্ভারের অবস্থা এই আছে, এই নেই। এতে জন্মনিবন্ধন সনদ ব্যবহার করে ১৭ ধরনের সেবা পেতে সারা দেশের মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। পাশাপাশি মৃত্যুনিবন্ধন করতে না পারায় মৃত ব্যক্তি উত্তরাধিকারদের সম্পত্তি বণ্টন, পারিবারিক পেনশন প্রাপ্তিতেও হয়রানিতে পড়ছে তারা। আর মৃত্যুনিবন্ধন না করলে প্রকৃত জনসংখ্যাও নির্ণয় করতে পারে না সরকার।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এক মাসের বেশি সময় ধরে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সার্ভারে আবেদন করতে পারছেন না গ্রাহকরা। সরকারের সেন্ট্রাল সার্ভার হ্যাকড হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে। যদিও জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধকের কার্যালয় তা স্বীকার করছে না; তারা বলছে, সার্ভার আপডেট কাজ চলছে। তবে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের যাদের আইডি নম্বর রয়েছে, তারা জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন করতে পারছেন। এসব আইডি থেকে দৈনিক ১৫ থেকে ১৮ হাজার জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন হচ্ছে। যদিও ঢাকার দুই সিটির বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন করতে পারছেন না।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের আবেদন সার্ভারে উন্মুক্ত থাকায় সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গ্রাহকদের আবেদন করে দেওয়া হতো না। একান্ত যারা ওই কর্মকর্তাদের দিয়ে এসব আবেদন করাতেন, তাদের নিবন্ধন ফির বাইরে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে করানো হতো। নইলে তারা কাউকে কোনো ধরনের সহযোগিতা করতেন না। এখন বাইরে থেকে আবেদন বন্ধ হওয়ায় ওইসব আইডি নম্বরধারীরা অসাধু চক্রের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন করে দিচ্ছেন।
মহাখালী রাসেল কম্পিউটারের স্বত্বাধিকারী মো. রাসেল আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, কয়েক বছর ধরে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের আবেদনসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের অনলাইন আবেদনের কাজ করছি। অন্য দপ্তরের সার্ভারে সহজে কাজ করা যায়। কিন্তু জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সার্ভারের কাজ করতে ভোগান্তির শেষ নেই।
তিনি বলেন, ‘এক মাসের বেশি হবে অনলাইনে বাইরে থেকে কোনো আবেদন করা যাচ্ছে না। এজন্য গ্রাহকরা জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন করতে না পেরে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তবে খবর পাচ্ছি, সিটি করপোরেশনের জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন শাখার কর্মীরা সার্ভারে ঢুকতে পারছেন। তারা সব গ্রাহককে এই সেবা দিচ্ছে না; যারা উৎকোচ দিচ্ছেন তারা শুধু জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন করতে পারছেন।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, গত জুন মাস থেকে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের ফি সরকারি কোষাগারে জমা করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে ওই ফি দাবি করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। বিষয়টির সুরাহা না হওয়ায় জুন থেকে জন্ম-মৃত্যু সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বন্দ্বে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সেবা বন্ধ থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন দক্ষিণ ঢাকার বাসিন্দারা। এসব দেখার যেন কেউ নেই।
ঢাকা দক্ষিণের জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন শাখার এক কর্মী বলেন, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন শাখা খামখেয়ালিপনা করে। সিটি করপোরেশনে প্রশাসন ক্যাডারের সহকারী সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করে থাকেন। অথচ জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের সংশোধনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ডিসিকে, যিনি একজন উপসচিব। এ সিদ্ধান্তের কারণে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের ভুল-ত্রুটি সংশোধন করতে রাজধানীর সব এলাকা থেকে নগরবাসীকে ডিসি অফিসে যেতে হচ্ছে। যানজটের এ শহরে নগরবাসীকে একটি ভুলের জন্য ডিসি অফিসে দৌড়াতে দৌড়াতে নাকাল হতে হচ্ছে। এসব ভাববার বা দেখার কেউ নেই। সচিবালয়ে বসে কর্মকর্তারা যখন যা খুশি, সেই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছেন। আমরা যারা সরাসরি জনগণের সেবা দিচ্ছি; আমরা বুঝতে পারছি মানুষের কত কষ্ট হচ্ছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ২০১১ সালে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের জন্য অনলাইন সার্ভার ব্যবহার শুরু করা হয়। কিছুদিন ভালো চলার পর সার্ভারের সমস্যার কারণে নগরবাসীর বকাবকি শুনতে শুনতে আমরা অতিষ্ঠ। সার্ভার কিছু সময় থাকে, আবার চলে যায়। নগরবাসীর সেবা দিতে আমাদের কর্মীরা গভীর রাতে এসব কাজ করে বাসায় ফিরত। সময়মতো নিবন্ধন দিতে না পারলে নানা কথা শুনতে হয়েছে।
তারা আরও বলেন, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন শাখাকে বিদ্যমান সমস্যার কথা বলতে গেলে তারা শুনতে চায় না। মানুষ সার্ভারে ঢুকতে পারছে না। আর জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধকের কার্যালয় বলছে, সার্ভার ঠিক আছে। আজগুবি সব কা-। উত্তর ও দক্ষিণের মেয়রদ্বয় স্থানীয় সরকার মহোদয়কে একটি সেমিনারে বিদ্যমান সমস্যার সুরাহা করতে বললেও তারা সেটা করছেন না। এ ছাড়া আগে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের সংশোধন সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে করা হতো। ওই কার্যালয় থেকে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, এখন ছোটখাটো ভুলের জন্য ডিসি অফিসে দৌড়াতে হচ্ছে। মানুষ আমাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। কিন্তু তারা ভাব নিয়ে বসে আছেন, বলছেন এসব সরকারি সিদ্ধান্ত তাদের কিছু করার নেই। মানুষের দুর্ভোগ হয় এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা কী মজা পাচ্ছেন আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না।
খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা দিদারুল আলম। মেয়ের জন্ম নিবন্ধনের আবেদনে মায়ের নামের বানান ভুল হয়েছে। সংশোধনের জন্য ছুটে গেলেন সিটি করপোরেশনের স্থানীয় অফিসে। আবেদন করতে বলা হলো, তিনি আবেদন করলেন। এরপর একটি সিøপ দিয়ে বলা হলো ডিসি অফিসে চলে যান। কর্মীদের অনেক অনুরোধ করলেন, কিন্তু তারা তাকে বুঝিয়ে বললেন, তাদের কিছু করার নেই। প্রায় এক মাসে তিন থেকে চারবার ডিসি অফিসে ছোটাছুটি করে সংশোধন করেছেন তার মেয়ের জন্ম নিবন্ধন।
কুড়িলের বাসিন্দা সিমু আক্তারের মা মারা গেছেন ২০১০ সালে। তার মায়ের জন্ম নিবন্ধন, স্কুল সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয়পত্র বা বয়স প্রমাণের কোনো প্রমাণপত্র নেই। কয়েক বছর ধরে সরকারের দপ্তরগুলোতে ঘুরে ঘুরে কোনো কূল-কিনারা করতে পারছেন না। ভুক্তভোগী এ নগরবাসী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এটা কেমন নিয়ম ভাই। আমার মায়ের বয়স প্রমাণপত্র থাকবে না বলে আমরা কোনো সমাধান পাব না। এ ধরনের ক্ষেত্রে আগের মতো জনপ্রতিনিধিদের প্রত্যয়নকে গ্রহণ করলে তো হয়। হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত দিলে আমরা কোথায় যাব, কীভাবে আমাদের সমস্যার সমাধান করব।’
১৭ কাজে জন্মসনদ : জন্মসনদে পাওয়া যায় ১৭ ধরনের সেবা। সেগুলো হলো পাসপোর্ট, বিবাহ নিবন্ধন, বিদ্যালয়ে ভর্তি, সরকারি-বেসরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় নিয়োগ, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু, ভোটার তালিকা প্রণয়ন, জমি-ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন, ব্যাংকে হিসাব খোলা, আমদানি-রপ্তানির লাইসেন্স প্রাপ্তি, পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাস ও টেলিফোন সংযোগ প্রাপ্তি, ট্যাক্স আইডেনটিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) প্রাপ্তি, ঠিকাদারের লাইসেন্স প্রাপ্তি, ভবনের নকশা অনুমোদন, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, ট্রেড লাইসেন্স, জাতীয় পরিচয়প্রাপ্তি এবং বয়স প্রমাণ করতে।
৩ কাজে মৃত্যু নিবন্ধন : তিন ধরনের কাজে মৃত্যু নিবন্ধন প্রয়োজন। সেগুলো হলো মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বণ্টন, পারিবারিক পেনশন প্রাপ্তি এবং দেশের প্রকৃত জনসংখ্যা নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের অতিরিক্ত সচিব এবং জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধক মো. রাশেদুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়ের কারিগরি জনবল সংকট রয়েছে। এজন্য নতুন সাংগাঠনিক কাঠামো প্রস্তাব করা হয়েছে। অনুমোদন প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হওয়ায় জটিলতাগুলো কার্যকর সমাধান করা যাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের উচ্চপর্যায়ের নীতিগত সিদ্ধান্তের আলোকে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রমে কিছু পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা হয়েছে। এখানে ভালো-মন্দ বিভিন্ন দিক রয়েছে। সেসব পর্যালোচনা করা হচ্ছে। কোনো কিছু স্থায়ী নয়; সরকার প্রয়োজন মনে করলে সেসব সংশোধন করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন অনলাইন সার্ভারের কিছু ত্রুটি দেখা দেওয়ায় সংস্কারকাজ চলছে। এজন্য সাধারণ মানুষের আবেদনের সুযোগ আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে এটিও চালু করা হবে। জরুরি হলে সেবাপ্রত্যাশী সংশ্লিষ্ট এলাকার সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদে গেলে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন সেবা নিতে পারবেন। জরুরি প্রয়োজনে প্রতিদিন সারা দেশের ১৫ থেকে ১৮ হাজার জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন হচ্ছে।
২০০৪ সালে সরকার জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন পাস করে। আর ২০০৬ সাল থেকে নিবন্ধন সনদ দেওয়া শুরু করে। প্রথমে অফলাইন সার্ভারের মাধ্যমে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদ ইস্যু করা হতো। এরপর ২০১০ সালে সরকার অনলাইন সার্ভার চালু করে। তখন আগে ইস্যু করা জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদগুলো সেখানে পাওয়া যায়নি। এজন্য আগে যারা জন্ম বা মৃত্যু নিবন্ধন করেছেন, তারা আবার সেসব সনদ ইস্যু করেছেন। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন সনদের গলদের কোনো শেষ নেই; দেশে ১৬ কোটি ৯৭ লাখ জনসংখ্যা হলেও জন্মসনদ ইস্যু করা হয়েছে ১৯ কোটি ৩৫ লাখ।
আহসান বারী পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছেন। তিনি নতুন করে পাসপোর্ট নেওয়ার জন্য নিয়ম অনুযায়ী ই-পাসপোর্টের আবেদন করেন। পরে ছবি তোলার নির্ধারিত সময় গত ৩০ এপ্রিল আগের পাসপোর্ট (এমআরপি) নিয়ে উপস্থিত হন যাত্রাবাড়ী (বর্তমানে কেরানীগঞ্জে অবস্থিত) পাসপোর্ট অফিসে। কিন্তু তার তথ্য যাচাই করতে গিয়ে অবাক হয়ে যান সেখানকার দায়িত্বরত ব্যক্তি। তিনি জানতে পারেন তার পাসপোর্ট অন্য কারও পরিচয়ে করা হয়েছে।
আহসান বারী বলেন, ‘অপারেটরের কাছে আমার কাগজপত্র দিয়ে ছবি তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছি তখন তিনি বলছেন জন্মনিবন্ধন দিয়ে পাসপোর্ট করেছেন কেন। আর এটা কার জন্মনিবন্ধন। আমি তার কথায় বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। স্ক্রিনে দেখাচ্ছে মফিজুর রহমান নামে এক ব্যক্তির তথ্য আসছে আমার পাসপোর্টে। এমন ভুলের বিষয়টি আমি আগে জানতে পারিনি। জানার পর বিষয়টি সমাধানের কোনো উপায়ও পাচ্ছিলাম না, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও জানাতে পারছিলেন না কী করতে হবে। এরপর প্রায় এক মাস আগারগাঁও ও যাত্রাবাড়ী পাসপোর্ট অফিসে বারবার গিয়ে সীমাহীন ভোগান্তি পেতে হয়েছে।’
তবে এমন ভুলের কথা অস্বীকার করেন উপপরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এটা কখনো হবে না। এখানে আমাদের কোনো ভুল করার কারণ নেই। আবেদনকারী ফরম যেটা পূরণ করবে সেটা আর এনআইডি থেকে ডেটা আসবে সেটাই আমরা ব্যবহার করি। তিনি (আহসান বারী) নিজে এমআরপি ফরম পূরণ করে আমাদের দিয়েছেন। এরপর বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে পাসপোর্ট পেয়েছেন। তাহলে এ সময়ের মধ্যে তিনি জানলেন না কেন? অন্যের তথ্য দিয়ে এটা সে উদ্দেশ্যমূলকভাবে করেছেন।’
পাসপোর্টে আবেদনের ক্ষেত্রে অনেকেই ভুলে করে থাকেন। কিন্তু আবেদনে সঠিক তথ্য দিয়েও ভুল পাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে অসংখ্য মানুষের। তারা আহসান বারীর মতো কর্র্তৃপক্ষের করা বিভিন্ন ধরনের ভুলের ভোগান্তিতে পড়ছে। তাদের অধিকাংশই জানিয়েছে নাম ও পিতা-মাতার নামের বানানে ভুলের কথা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী কমল কান্তি মন্ডল কর্র্তৃপক্ষের এমন ভুলের অভিযোগ করেছেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি ২০১৭ সালের দিকে আগারগাঁও অফিসে পাসপোর্ট করি (এমআরপি)। তখন পাসপোর্টের আবেদনে নামসহ অন্যসব তথ্য সঠিকভাবে দিয়ে পাসপোর্ট নিয়ে দেখি আমার নামে ভুল এসেছে। ইংরেজিতে কমল কান্তির শেষের ‘আই’ বাদ পড়েছে।’
কমল আরও বলেন, ‘এই পাসপোর্ট নিয়ে আমি ভারতে ঘুরে এসেছি। সংশোধন করতে গিয়ে আমি ভোগান্তিতে পড়িনি। ওই পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর গত বছর নতুন ই-পাসপোর্ট নিয়েছি। সেখানে নামের বানান সঠিক পেয়েছি।’
এদিকে পাসপোর্ট আইনে বা অধ্যাদেশের কোথাও কর্র্তৃপক্ষের ভুলে গ্রাহক হয়রানির জন্য আইনি কোনো ব্যাখ্যা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবী মনজিলা সুলতানা ঝুমা। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কর্র্তৃপক্ষের ভুলে অথবা অবহেলার কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির ব্যাপারটা সবসময় ভুল হবে তা কিন্তু নয়। দেখা যায় একটা ভুলের কারণে নতুন করে আবার তথ্য দেওয়া প্রয়োজন হয়। অনেকেই এ ঝামেলায় যেতে চায় না, অফিসে কোনো কর্মচারী তখন বলে আমাকে দায়িত্ব দিয়ে যান আমি ঠিকঠাক করে দেব। এটা মূলত একটা সিন্ডিকেট। হলফনামা থেকে শুরু করে পরবর্তী সব ডকুমেন্টস ঠিকঠাক হবে শুধু কিছু টাকার বিনিময়ে।’
ঢাকা ও খাগড়াছড়ির জেলা এবং দায়রা জজ আদালতের এ আইনজীবী আরও বলেন, ‘কারও কাছে যদি প্রমাণাদি থাকে তিনি সঠিক তথ্য দেওয়ার পরও ভুল আসছে, তখন তিনি পাসপোর্ট অফিসে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করতে পারেন। জবাবদিহিতা না থাকার কারণে পাসপোর্ট অফিসে কর্মচারী অথবা কর্র্তৃপক্ষের অবহেলায় সাধারণ পাসপোর্ট প্রার্থীর হয়রানি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
এদিকে কর্র্তৃপক্ষের ভুল সংশোধনে গিয়ে দালালের খপ্পরে পড়ে বাড়তি জটিলতার কথা জানাচ্ছেন অনেক ভুক্তভোগী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার বাসিন্দা মো. আল-আমিন। এজন্য তিনি পাসপোর্ট নিয়েছেন। তবে সঠিক তথ্য দেওয়ার পরও তার পাসপোর্টে জন্ম তারিখ ১৯৯৬ ভুল হয়ে ১৯৮৬ এসেছে।
আল-আমিনের ভাই ওমানপ্রবাসী মোহাম্মদ ইয়ামিন মিয়া বলেন, ‘পাসপোর্টের এ ভুলের কারণে আমরা সিদ্ধান্তহীনতায় আছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পাসপোর্ট অফিস গিয়ে এ সমস্যা নিয়ে কথা বলারই সুযোগ নেই। একমাত্র দালালের মাধ্যমে কাজ করা যায়। জন্মতারিখ সংশোধন নিয়ে আমরা দালালদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলছেন, জন্মতারিখ সংশোধন করতে ৫০ হাজার টাকা লাগবে।’
রাজধানীর আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দালালচক্রের এমন কার্যক্রমের তথ্য পাওয়া যায়। গত মাসে সরেজমিনে পাসপোর্ট অফিসের সামনে গিয়ে এমন অসংখ্য অসাধু ব্যক্তির দেখা মেলে। তাদের একজন নুরুজ্জামান জানান, পাসপোর্টের সব সমস্যার সমাধান তার মাধ্যমে করা যায়। তার বিভিন্ন মাধ্যম টাকার বিনিময়ে এসব কাজ করে দেয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আল-আমিনের মতো ভুল হওয়া জন্মতারিখ সংশোধন করা যাবে কি না, জানতে চাইলে নুরুজ্জামান বলেন, ‘এ ভুল সংশোধন করতে ৪০ হাজার টাকা লাগবে।’
এসব বিষয়ে জানতে গত ১১ আগস্ট (শুক্রবার) ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. নূরুল আনোয়ারকে ফোন ও মেসেজ করে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
জামিল আহমেদের বাবার নাম মিজানুর রহমান। কিন্তু সার্টিফিকেটে (সনদ) লেখা হয়েছে নিজাবুর রহমান। এই ভুল সংশোধনের জন্য তিনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ঘোরাঘুরি করছেন দুই মাস ধরে। কিন্তু সমাধান হয়নি।
সুনামগঞ্জের বাসিন্দা জামিল লক্ষ্মীপুর তাওয়াক্কোলিয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে পাস করেছেন। বর্তমানে একটি কলেজে স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। তার সার্টিফিকেটে বাবার নামে ভুল থাকায় তা দিয়ে কোনো কাজই করতে পারছেন না।
জামিল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি তো এই ভুল করিনি। ভুল করেছে কর্তৃপক্ষ। অনাইলনে সার্টিফিকেট সংশোধনের জন্য আবেদন করেছি অনেক আগেই। কিন্তু এখনো সংশোধন হয়নি। দুই মাসের বেশি সময় ধরে বোর্ডে ঘোরাঘুরি করছি।’ তিনি জানালেন, ভবিষ্যতে দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে। সার্টিফিকেটে বাবার নামে ভুল থাকায় পাসপোর্ট করতে পারছেন না। এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন এই শিক্ষার্থী।
শুধু জামিল একা নন, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের ভুলের জন্য এ রকম অনেক শিক্ষার্থী ভোগান্তিতে পড়েছেন। মাসের পর মাস বোর্ডে এসেও সমস্যার সমাধান পাচ্ছেন না এসব শিক্ষার্থী।
বকশীবাজারে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে সরেজমিনে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সার্টিফিকেট সংশোধনের জন্য শিক্ষার্থীরা আসছেন। অনলাইনে আবেদন করা গেলেও মাসের পর মাস সমাধান না পেয়ে সবাই বোর্ডে ভিড় জমাচ্ছেন। বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বেশিরভাগকেই ঠিকমতো না পাওয়ায় ভুল আর সংশোধন হচ্ছে না।
সার্টিফিকেটে নিজ নামে ভুল থাকায় চাকরিতে আবেদন করতে পারছেন না সাইফুল ইসলাম নামের এক তরুণ। তিনি বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে আমাকে। তাদের (মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড) জন্য চাকরিতে আবেদন করতে পারছি না। নামে বড় রকম ভুল থাকায় এই সার্টিফিকেট দিয়ে কোনো কাজ হচ্ছে না। তিন মাসের বেশি সময় হয়ে যাচ্ছে এখনো সমাধানের কোনো খবর নেই। আর কবে নাগাদ এই সমস্যার সমাধান হবে, সেটিও বোর্ডের কেউ বলতে পারছে না।’
দশবারের বেশি বোর্ডে আসা-যাওয়া করছেন ডেমরার আবদুল মতিন। এই শিক্ষার্থী বলছিলেন, সরকার সবকিছুই এখন ডিজিটাল করেছে। কিন্তু ছোট একটা সমস্যা সমাধান করতে মাসের পর মাস লেগে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমার সার্টিফিকেটে বাবার নাম সংশোধনের জন্য চার মাস আগেই অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করেছিলাম। কর্মকর্তাদের নানা অজুহাতে বিভিন্ন কর্মকর্তার রুমে রুমে ঘুরলেও কেউ সমাধান দিতে পারছেন না।’ তার দাবি, বোর্ডের কর্মকর্তারা দায়সারাভাবে কাজ করেন। যার ফলে ছোট সমস্যাও সমাধান করতে অনেক সময় লেগে যায়। তাই সরকারের উচিত শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটারিং করা।
ফৌজদারি মামলার বিচারে ভোগান্তি ও হয়রানি জানা কথা। শুরুটা হয় মামলার প্রাথমিক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ নথি তোলার মধ্য দিয়ে। মামলার এজাহার, প্রাথমিক তথ্যবিবরণী, জামিন কিংবা জামিন নামঞ্জুরের আদেশ, অভিযোগপত্র, রায়সহ বিভিন্ন সময়ের আদেশের অনুলিপির প্রয়োজন হয় বিচারপ্রত্যাশী ও আইনজীবীদের। কিন্তু বিচারের আগে কিংবা বিচার চলাকালে নথি পেতেও ভোগান্তির শেষ নেই।
ছয় মাসের বেশি সময় আগে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, এখন অধস্তন আদালত থেকে কোনো মামলার নথির ফটোকপি দেওয়া বন্ধ রয়েছে। মামলার প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট আদালতের নকল শাখা থেকে সার্টিফায়েড কপি (সই মহুরি নকল) তুলতে হয়। কিন্তু অধস্তন আদালতে কিছু অসাধু কর্মচারী বিচারপ্রত্যাশীর ভোগান্তি বাড়াচ্ছেন। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনায় মামলার ফটোকপি দেওয়া বন্ধ থাকলেও নিয়মের বাইরে বিকল্প উপায়ে অনেকে আদালতের কর্মচারীদের দিয়ে তা সংগ্রহ করেন।
ঢাকার আদালতে মামলা পরিচালনাকারী বেশ কয়েকজন আইনজবীবী দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো মামলার নথি পেতে নীল রঙের একটি আবেদনপত্র ৬০ টাকা দিয়ে কিনে তা পূরণ করে ২৫ টাকা কোর্ট ফি (স্ট্যাম্প) দিয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের নকল শাখায় জমা দিতে হয়। সেখান থেকে আবেদন যায় আদালতে। তবে, সে জন্য নিয়মের বাইরে আদালতের কর্মচারীদের দিতে হয় মামলার গুরুত্ব অনুযায়ী কমপক্ষে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা। আদালতের অনুমোদনের পর নকল শাখার নকলনবিশদের কাউকে ধরতে হয় নথির জন্য। এ জন্য নিয়মের বাইরে টাকা দিতে হয় তাদের। এই প্রক্রিয়ায় কয়েক দিন পার হয়।
আইনজীবীরা বলেন, সার্টিফায়েড কপির (বাদামি রঙের কাগজে ছাপা লেখা) জন্য নির্ধারিত কোনো মূল্যের বিষয়ে তারা অবগত নন। এক পাতা নথির অনুলিপির জন্য ২০০ থেকে শুরু করে কয়েক শ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়। আর নথির পাতার সংখ্যা বাড়লে প্রতি পাতা নেওয়া হয় ৪০ থেকে ৫০ টাকা। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। সার্টিফায়েড কপির এক পাতার জন্য ৫০০ টাকা নেওয়ার ঘটনা অহরহ। পাতা যত বাড়ে, টাকার অঙ্কও তত বাড়ে। এমন পরিস্থিতিতে দরিদ্র ও অসহায় বিচারপ্রত্যাশীরা বিপাকে পড়েন।
২০২১ সালে ঢাকার এক পারিবারিক আদালতে ভরণপোষণসংক্রান্ত একটি মামলায় বাদীর অনুপস্থিতিতে মামলা খারিজের আদেশ হয় গত ৮ জুন। আদেশের অনুলিপি (সার্টিফায়েড কপি) পেতে আইনজীবী আবেদন করেন ১৩ জুন। এক মাসের বেশি সময় পর অনুলিপি হাতে পান গত ১৯ জুলাই। দুই পাতার আদেশের অনুলিপির জন্য বিচারপ্রত্যাশীকে প্রতি পাতায় গুনতে হয়েছে ১ হাজার টাকা। এ মামলায় বাদীকে আইনি সহায়তা দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী (ঢাকা বারের সদস্য) খাদেমুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কোনো মামলার নথি পেতে তদবির (একধরনের তাগিদ) না করলে আবেদনসংশ্লিষ্ট আদালতগুলোতে পড়ে থাকে। মাস পার হলেও রেকর্ডরুমে নথি যায় না। বাধ্য হয়ে অনেকেই বাড়তি টাকা দেন।’
ঢাকা বারের আইনজীবী আজাদ রহমান বলেন, ‘এক পাতা নথির জন্য কমপক্ষে ২০০ টাকা দিতে হয়। কেন কী কারণে এত বেশি টাকা দিয়ে নথি নিতে হবে, এর কোনো কারণ কেউ বলেন না।’
অন্যদিকে দরিদ্র বিচারপ্রত্যাশীদের অনেকেই নিয়মের বাইরে টাকা দিতে না পারায় আদেশের অনুলিপি না পাওয়ার ঘটনাও অহরহ। গত বছরের ৩০ আগস্ট ২৫০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধারের একটি মামলায় কেরানীগঞ্জের দক্ষিণ ধর্মগুরু গ্রাম থেকে মহিদুল (৪৩) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় গত ১৯ মার্চ খালাস পান তিনি। কিন্তু অটোরিকশাচালক এই ব্যক্তি অর্থের অভাবে এখনো আদেশের অনুলিপি নিতে আসেননি। নাম না প্রকাশের শর্তে মহিদুলের আইনজীবী বলেন, ভবিষ্যতে হয়রানি থেকে রক্ষায় যেকোনো আদেশের অনুলিপি তুলে রাখতে হয়। কিন্তু তার অনুলিপি তুলতে কয়েক হাজার টাকা খরচের আশঙ্কায় তিনি আর আদলতমুখো হচ্ছেন না।
ঢাকা মহানগর দায়রা আদালতের প্রধান কৌঁসুলি আব্দুল্লাহ আবু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ন্যায়বিচার নিশ্চিত ও নথি টেম্পারিং রোধ করতেই মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। এখন কেউ যদি এ সিদ্ধান্তের বরখেলাপ করে বিচারপ্রত্যাশীর কাছে টাকা নেয়, তাহলে অবশ্যই এ বিষয়টি আদালতের দৃষ্টিগোচর করা হবে।’
মো. মাইনুদ্দীন কেরানীগঞ্জ এলাকার একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ের কাজে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তাকে মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে হয়। কেরানীগঞ্জে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) ইকুরিয়া কার্যালয়ে তিন বছর ধরে ঘুরেও পাচ্ছেন না ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্ট কার্ড।
মাইনুদ্দীন জানালেন, এই তিন বছরে কতবার যে তিনি ইকুরিয়া কার্যালয়ে যাওয়া-আসা করেছেন গুনে বলা যাবে না। যখনই আসেন, তখন নতুন তারিখ দেওয়া হয়। সব রকম পরীক্ষা ও টাকা দেওয়ার পরেও ড্রাইভিং লাইসেন্সের সেই কাক্সিক্ষত স্মার্ট কার্ড পাচ্ছেন না।
তিনি বলেন, লাইসেন্স না থাকায় রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ অনেক সমস্যা করে। অনুমতির যে কাগজ দেওয়া হয়েছে, সেটাও পুরনো হয়ে গেছে, নষ্ট হওয়ার পথে। ঠিক একই সমস্যা নিয়ে এই সার্কেল অফিসে এসেছিলেন যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা মো. রাকিব। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় চলার সময় নানা রকম হয়রানির শিকার হতে হয় ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য। আর যে কাগজ দেওয়া হয়েছে, সেটা অনেক দিন ভাঁজে থাকায় নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা এখন। সরকার কত কিছু ডিজিটাল সেবা করল। কিন্তু আমরা এখনো সেভাবে তার সুফল পাচ্ছি না।’
শুধু ইকুরিয়া কার্যালয় নয়, দেশে বিআরটিএর বেশিরভাগ সার্কেল অফিসে সেবা নিতে এসে নানান হয়রানির শিকার হতে হয় সেবাপ্রার্থীদের। জানা যায়, প্রায় ৩০ হাজার আবেদনকারীর প্রয়োজনীয় তথ্য বিআরটিএর কাছে নেই। আবার অনেক সময় সার্ভার সমস্যায় নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়। কর্তৃপক্ষের গাফলতির কারণেও দুর্ভোগ বাড়ে সেবাগ্রহীতাদের।
বিআরটিএর ঢাকা মেট্রো ৩ সার্কেল উত্তরা কার্যালয়ে গাড়ির মালিকানার সমস্যা নিয়ে তিন বছর ধরে ঘোরাঘুরি করেও সমাধান পাচ্ছেন না উওরার বাসিন্দা মো. শিহাব উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘পুরনো একটি মোটরসাইকেল নিয়েছিলাম এক বন্ধুর কাছ থেকে। কিন্তু নানা জটিলতার জন্য নাকি এখনো মালিকানা সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। তারা (কর্তৃপক্ষ) বলছেন, অনেকগুলো ফাইল জমা আছে। যার জন্য কাজ শেষ হতে সময় লাগছে। কিন্তু কবে এই সমাধান হবে, সেটা কেউ বলতে পারছেন না।’
এই সার্কেলে আরেক ভুক্তভোগী মো. জামান বলেন, ‘চার বছর আগে ড্রাইভিং লাইসেন্স করা হয়েছিল। কিন্তু স্মার্ট কার্ড এখনো পাওয়া হয়নি। কর্তৃপক্ষের জন্য আমাদের এই ভোগান্তি হচ্ছে।’ এগুলো দেখার কেউ নেই বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিআরটিএর অনেক কাজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তারা করে থাকে। তাদের এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির জন্য অনেকে ঠিকমতো ড্রাইভিং লাইসেন্স পাচ্ছেন না। আর বিআরটিএর সার্ভারেও অনেক সময় সমস্যা দেখা যায়। শুধু ড্রাইভিং লাইসেন্স নয়, মালিকানা বদল করার ক্ষেত্রেও নানা রকম ভোগান্তি পোহাতে হয় সেবাগ্রহীতাদের।
তিনি আরও বলেন, বিআরটিএর ইমার্জেন্সি ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য অনেকের লাখ লাখ টাকা ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। অনেকের ভিসা পেয়েও এই ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বিদেশে যেতে পারছেন না। তাই বিআরটিএর মতো সেবাদান প্রতিষ্ঠানের আরও বেশি সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। তা না হলে বছরের পর বছর ভোগান্তিতে পড়তে হবে সেবাগ্রহীতাদের।
বিআরটিএর পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই রাব্বানী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্সের যে সমস্যাগুলো আছে, সেটি সমস্যা সমাধানে কাজ করা হচ্ছে। আর মালিকানায় অনেক ক্ষেত্রে যার নামে প্রথম মোটরসাইকেলের মালিকানা থাকে সেই ব্যক্তিকে পাওয়া যায় না। আবার অনেক ক্ষেত্রে স্বাক্ষর সমস্যার জটিলতায় দেরি হয় মালিকানা বদলানোর ক্ষেত্রে। যার জন্য অনেক সময় লেগে যায়। তবে সবার সব ধরনের সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করেন তারা।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।
প্রাচীন সময় থেকে মানুষের খাদ্যতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে চীজ বা পনির। গরুর দুধের তৈরি পনিরে শরীরকে সুস্থ রাখার প্রয়োজনীয় সব উপাদান পাওয়া যায়।
বর্তমানে সময়ের সাথে সাথে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পনিরের ব্যবহার। আর তাই বিস্কিট থেকে শুরু করে পাউরুটি, পাস্তা, পিৎজা অনেক কিছুতেই পনির ব্যবহার হয়।
পনিরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের মতে, ১০০ গ্রাম পনিরের মধ্যে রয়েছে:
শক্তি - ৩৬২ কিলোক্যালরি
প্রোটিন – ৫.১৭ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট - ৫০ গ্রাম
ক্যালসিয়াম - ৬৯ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম - ১৮১ মিলিগ্রাম
স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড – ৩.৪৫ গ্রাম
কোলেস্টেরল - ৩৪ মিলিগ্রাম
এটি প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস। পনিরের বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে।
পনির ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এবং প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এটি বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অনেক উপকারি। পনিরে থাকা ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পনির খেলে অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করা যায়।
পনির ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা শক্তিশালী ও মজবুত দাঁত তৈরিতে অবদান রাখে। পনিরে থাকা কেসিন ফসফোপেপটাইড উপাদান দাঁতের গহ্বর কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া চিউইং চিজ মুখের পিএইচ মাত্রা বাড়াতে পারে এবং সামগ্রিক মৌখিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
পনিরে অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড যেমন কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উৎস। কোরিয়া ইউনিভার্সিটি এবং ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে এই ফ্যাটি অ্যাসিডে ক্যান্সার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ ছাড়া এই ফ্যাটি অ্যাসিড এথেরোস্ক্লেরোসিস এর বিকাশ রোধ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে।
পনিরে কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড এবং স্ফিংগোলিপিড রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে স্ফিংগোলিপিড মানুষের কোলন ক্যান্সারকে বাধা দিতে পারে।
এ ছাড়া পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে খাদ্যতালিকাগত ক্যালসিয়াম কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ উপকারি।
পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই উপকারি। এটি প্রসবের সময় সংকোচনকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া উকের দুধ পান করানোর সময় ক্যালসিয়াম পুষ্টির ঘাটতিও পূরণ করে পনির। এটি গর্ভবতী মহিলাদের ভ্রূণের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে।
কিছু ধরণের পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কার্যকারিতা বাড়াতে পরিচিত। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে পনির শরীরের প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটি অসুস্থতা এবং রোগ কমাতে পারে।
প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সুরক্ষিত পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। এটি বয়স্কদেরমধ্যে ইমিউনোসেনেসেন্স (প্রতিরোধ ব্যবস্থার ধীরে ধীরে দুর্বল হওয়া) প্রতিরোধ করতে পারে।
পনির সেলেনিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা থাইরয়েড ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সেলেনিয়ামের থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করে ভাইরাসের বিকাশকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে।
চেডার পনির হল এক ধরনের হার্ড পনির। এটি খাদ্যতালিকায় যোগ করলে তা থাইরয়েড রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
পনিরের আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলির মধ্যে একটি হল মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করা। বিশেষ করে ক্যামেমবার্ট জাতের পনির এই ধরনের কাজ করে থাকে। ক্যামেমবার্ট পনির প্রদাহজনক সাইটোকাইনের মাত্রা কমাতে পারে। এটি আলঝাইমার রোগের ঝুঁকি কমায় এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।
পনির ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। এতে থাকা ভিটামিন বি কোষের বিপাক এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে এটি উজ্জ্বল ত্বকের পাশাপাশি ত্বকের দাগ কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
যাদের গরুর দুধে অ্যালার্জি আছে তাদের পনির এড়ানো উচিত। এটি অ্যালার্জি, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথার কারণ ও হতে পারে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (অতিরিক্ত পনির খাওয়া) কার্ডিওভাসকুলার রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
পনিরের স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ও রয়েছে। যেমন,
কিছু লোকের দুধের প্রোটিন যেমন কেসিনে অ্যালার্জি থাকে। এটি সারা শরীর জুড়ে একটি প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং ত্বকে ফুসকুড়ি, সাইনাস কনজেশন এবং ব্রণ জ্বলতে পারে।
অনেকের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা থাকে। সেক্ষেত্রে তাদের পনির না খাওয়াই শ্রেয়। কারণ ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা গ্যাস, পেট ফোলাভাব এবং ডায়রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। অনেক সময় এর কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে।
প্রচুর পরিমাণে পনির খাওয়ার ফলে মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথা হতে পারে। পুরনো পনিরে থাকা টাইরামিন উপাদান কিছু ব্যক্তির মধ্যে মাইগ্রেনকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
যারা মোনোমাইন অক্সিডেস ইনহিবিটরস (MOIs) গ্রহণ করছেন তাদের পনির খাওয়া এড়ানো উচিত। এই ওষুধগুলি হতাশার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এসব ওষুধ পুরনো বা বয়স্ক পনিরে থাকা উপাদান টাইরামিনের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হবে ২ নভেম্বর। পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন তা নিয়ে এখন চলছে আলোচনা, কানাঘুষা; শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপ।
বর্তমান উপাচার্যই আবার দায়িত্ব পাবেন নাকি নতুন কাউকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে এ আলোচনাই চলছে এখন। আলোচিত হচ্ছে কয়েকজন শিক্ষকের নামও। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন কানাঘুষারও অবসান হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ পদে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের মধ্য থেকেই কাউকে বাছাই করার বিষয়টি একপ্রকার নিশ্চিত। বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের এ বিষয়ে আগ্রহ নেই। গুণী কোনো শিক্ষক উপাচার্যবিষয়ক আলোচনার মধ্যে নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা হবে কি না, এ বিষয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের ১১(১) ধারা অনুযায়ী, উপাচার্য নিয়োগে তিন সদস্যবিশিষ্ট প্যানেল নির্বাচনের দায়িত্ব সিনেটের। সিনেট নির্বাচিত তিনজনের মধ্য থেকে একজনকে উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এবং রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। রাষ্ট্রপতি তাকে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেন।
রীতি অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের জন্য সিনেটের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করা হয়। কিন্তু এবার সিনেট অধিবেশন হওয়া নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। উপাচার্য অধিবেশন ডাকবেন কি ডাকবেন না; ওপর মহলের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কেউ কিছু জানেন না। উপাচার্য নিজেও বিষয়টি খোলাসা করছেন না।
অধ্যাদেশের ১১(২) ধারা অনুযায়ী, কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যেমন অসুস্থতা, ছুটি, অপসারণ বা অন্য কোনো কারণে উপাচার্যের পদ শূন্য হলে একজনকে অস্থায়ী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা বলছেন, অধ্যাদেশের নিয়ম অনুসরণ করে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করা হোক। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে এবং আগামী নির্বাচনেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। নতুন উপাচার্যের গ্রহণযোগ্যতাও বাড়বে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, ‘ভিসি প্যানেল নিয়ে আলোচনা নেই। উপাচার্যও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে আমাদের জানা নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট সদস্য ও শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল সবচেয়ে বেশি আলোচিত। তাদের মধ্য থেকেই কারোর পরবর্তী উপাচার্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম এ বিষয়ক আলোচনায় রয়েছেন।
অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পান। পরে প্যানেল নির্বাচনের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর উপাচার্য পদে পুনর্নিয়োগ পান তিনি। সাত বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সামলাচ্ছেন তিনি। দুই মেয়াদের বেশি উপাচার্য থাকার নজির নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই তার দায়িত্ব পালনের শেষ দেখছেন অনেকে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষকদের মধ্যেও তাকে নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে পুনরায় নিয়োগ পেতে পারেন তিনি।
ইমেরিটাস অধ্যাপক বা অন্য কোনো গুণী শিক্ষক নেই উপাচার্য নিয়োগের আলোচনায়। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গুণী শিক্ষকদের সামনে আনার যে ধরনের কাঠামো থাকা উচিত তা নেই। যারা তোশামোদ করতে পারে, অন্ধ আনুগত্য প্রকাশ করতে পারে, তাদেরই প্রশাসনের শীর্ষ পদে নিয়ে আসা হয়। সত্যিকারের গুণী শিক্ষক এবং অনেক ভালো গবেষক আছেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারা কখনো প্রশাসনের দায়িত্বে আসতে পারেন না। তারা ব্যক্তিত্বের জলাঞ্জলি দিতেও রাজি নন।’
অতীতে উপাচার্যদের মধ্যে অ্যাকাডেমিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে একটা ভারসাম্য ছিল। এখন তা নেই। এখন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও আনুগত্যের ভিত্তিতে প্রশাসনিক পদগুলো দেওয়া হয়।
পরবর্তী উপাচার্য কে হচ্ছেন বা ভিসি প্যানেল নিয়ে আগ্রহ নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের। বিএনপিঘোষিত এক দফাতেই তারা মগ্ন। যদিও সিনেটে তিনজন প্রতিনিধি থাকায় সুযোগ তাদেরও রয়েছে। সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার পরিবর্তন না হলে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিষয়ে ভাবছি না। এ বিষয়ে আমাদের ফোকাস নেই। আমাদের ফোকাস হচ্ছে এ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। জাতীয় রাজনীতিতে পরিবর্তন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও পরিবর্তন আসবে।’
শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও সাংগঠনিকভাবে আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার। দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমরা নীল দল এখনো এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করিনি। যথাসময়ে দলের সভায় এ নিয়ে কথা হবে। মনোনয়ন কে পাবেন, তার আলোচনাও সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে। বর্তমান প্রশাসনের শীর্ষ তিনজন বিশেষভাবে আলোচনায় থাকবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই দায়িত্ব দেবেন। আমরা উনাদের সমর্থন করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ীই সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।’
বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইনের গতি অনুযায়ীই সব চলবে। এ বিষয়ে যাদের ভাবা প্রয়োজন তারা অবশ্যই ভাববেন।’ সিনেটের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশেষ অধিবেশন ডাকার প্রয়োজন হলে আমরা ডাকি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।