‘শতচেষ্টার পরও’ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গ্রেপ্তার বিএনপির এমপিপ্রার্থীসহ কারাবন্দি নেতাদের জামিনে মুক্তি মিলছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের স্বজন ও আইনজীবীরা গতকাল রবিবার দেশ রূপান্তরের সঙ্গে আলাপকালে এ অভিযোগ করেন। তারা বলছেন, কারাবন্দি নেতাদের জামিনের আবেদন করা হলে দীর্ঘ বিরতি দিয়ে তারিখ দেওয়া হচ্ছে। সরকারের অনিচ্ছার কারণেই এমনটি হচ্ছে। তাদের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে কারাবন্দি নেতাদের বছরের পর বছর কারাগারেই কাটাতে হবে। কারণ প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই অনেক মামলা আছে।
গত বছর ১১ জুন রাত ১টার দিকে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু তার উত্তরার বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন। এরপর আদালতে তোলা হলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তার ভাই কৃষিবিদ শামসুল আলম
তোফা অভিযোগ করেন, তার ভাইকে গ্রেপ্তার করে মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে। গ্রেপ্তারের পর থেকে তাকে এ কারাগার থেকে ও কারাগারে নেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ ১৫ ডিসেম্বর টুকুকে মুন্সীগঞ্জ কারাগারে নেওয়া হয়। সেখানে একটি কক্ষে তাকে একা রাখা হয়েছে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় গুলশান থেকে গ্রেপ্তার হন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। এরপর তাকেও আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। সোহেলের সর্বশেষ অবস্থা জানতে তার স্ত্রী বেগম কামরুন্নাহারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, সোহেলকে গ্রেপ্তারের পর এ পর্যন্ত কেরানীগঞ্জ, কাশিমপুর, ময়মনসিংহ ও নরসিংদী কারাগারে নেওয়া হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে তাকে ময়মনসিংহ কারাগারে নেওয়া হয়। সেখানে তার ওপর মানসিক নির্যাতন করা হয়। সারাদিন তাকে কক্ষেই রাখা হতো। সন্ধ্যার পর অন্য আসামিদের কক্ষে নেওয়ার পর মাত্র ৩০ মিনিটের জন্য তাকে বাইরে বের করা হতো। এরপর আবার কক্ষে নেওয়া হতো। বর্তমানে তিনি নরসিংদী কারাগারে আছেন। সোহেলপতœী অভিযোগ করে বলেন, তার জামিনের জন্য আবেদন করা হলে আদালত গ্রহণ করে না। হাইকোর্টে রিট করা হলে তা খারিজ করে দেওয়া হয়। সপ্তাহে এক দিন মাত্র পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয়। কারা কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলে তারা জবাব দেন ওপরের নির্দেশ আছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন গত ২৯ নভেম্বর আগাম জামিন নিতে গেলে আদালত তার আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠায়। খোকনের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে তার স্ত্রী বিএনপিনেত্রী শিরিন সুলতানা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এক মামলার জামিন করালে আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। এভাবে একটার পর একটা মামলায় খোকনকে আটকে রাখা হয়েছে।
দলের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন সংসদ নির্বাচনের আগে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার হন; সেই থেকে কারাগারে তিনি। তার স্ত্রী শম্পা হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, মিলনকে নির্বাচনী প্রচার চালানোর সময় আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর থেকে তিনি কেরানীগঞ্জ কারাগারে আছেন। তিনি বলেন, মামলার কোনো অভাব নাই। একটা মামলায় জামিন হলে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মামলায় জামিন নিতেও সময় লাগছে বেশি। কারণ আদালত মামলার শুনানির জন্য দীর্ঘ বিরতি দিয়ে তারিখ দেন। এভাবে চলতে থাকলে বছরের পর বছর কেটে যাবে জামিন নিতে। ততদিন কারাগারে থাকতে হবে।
কারাবন্দি নেতাদের জামিনের জন্য আইনজীবীরা কী ব্যবস্থা নিয়েছেন জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য জয়নুল আবদিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নেতাদের জামিনের চেষ্টা করেই যাচ্ছেন। তার অভিযোগ, সরকারের অনিচ্ছার কারণে কারাবন্দি নেতাদের জামিন হচ্ছে না। জামিন আবেদন করা হলে দীর্ঘ বিরতি দিয়ে তারিখ দেওয়া হয়। এভাবে চলতে পারে না।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী ছিলেনÑ এমন নেতাদের পাশাপাশি অন্য কারাবন্দি নেতাদের মুক্তি বিলম্বিত হচ্ছে। একটা মামলায় জামিন হলে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে গণভবনের সংলাপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াদা করেছিলেন নেতাদের জামিনের বিষয়টি তিনি দেখবেন। এরপর বিএনপির পক্ষ থেকে তার কাছে তালিকা দেওয়া হলেও নেতাদের জামিন মিলছে না। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ‘গায়েবি মামলায়’ গ্রেপ্তার না করার আশ্বস দেওয়া হলেও তার প্রতিফলন নেই। এতে প্রমাণ হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী যা বলেন, তা করেন না। আবার যা করেন, তা বলেন না।