শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ৮ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

সরবরাহ বাড়ায় কিছুটা কমেছে সবজির দাম

আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১:৩২ এএম

গত এক বছর দেশে মূল্যস্ফীতি ছিল দুই অঙ্কের ঘরে। এর মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন দেশের বাজারে পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছিল। রাজধানীর বাজারে পণ্যের ঘাটতি দেখা দেয়, বেড়ে যায় দাম। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকায় রাজধানীর বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়ছে, কমছে দাম। বাজারে স্বস্তি ফিরছে বলে জানান ভোক্তারা।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালী কাঁচাবাজার, বাড্ডা, গুলশান, কালাচাঁদপুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় সবজিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের সরবরাহ বেড়েছে। বেগুন, টমেটো ও করলা ছাড়া বেশিরভাগ সবজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে কিনতে পারছেন ভোক্তারা। কিছুদিন আগে একই সবজি ১০০ টাকার নিচে পাওয়া যায়নি।

বাজারে প্রতি কেজি ভালোমানের বেগুন ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা কিছুদিন আগে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৬০০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে, এখন দাম কমে ২০০ থেকে ২২০ টাকা হয়েছে। প্রতি কেজি করলা ১৫০ টাকায় উঠেছিল, গতকাল বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। এখন প্রতি কেজি পটল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ও ঢেঁরস ৬০ টাকা, পেঁপে কেজিতে ৫০ টাকা, চাল-কুমড়া প্রতিপিস ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া কেজি ৪০ টাকা, আলুর কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, কচুমুখী ৭০ থেকে ৮০ টাকা, টমেটো ২০০ থেকে ২২০ টাকা, লাউ প্রতিপিস সাইজভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর মহাখালী বাজারের সবজিবিক্রেতা আসিফ মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাজারে এখন পর্যাপ্ত সবজির সরবরাহ রয়েছে। টমেটো ছাড়া সব ধরনের সবজির দাম কমেছে। টমেটো ভারত থেকেই বাড়তি দামে আমদানি করতে হচ্ছে।’

একই বাজারে কথা হয় গৃহিণী কুলসুম আক্তারের সঙ্গে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চড়া দামের কারণে কিছুদিন আগে স্বল্প আয়ের মানুষ সবজি কিনতে পারেনি। এখন সবজির দাম অনেকটাই কমেছে। সাধারণ মানুষ বাজারে এসে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছে। তবে সবজির মতো অন্যান্য পণ্যের দামও কমা উচিত।’

এখনো কমেনি আলু-পেঁয়াজের দাম। আগের মতো চড়া দামেই ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে, প্রতি কেজি ৭০ থেকে ১২০ টাকায়। আলু ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। পেঁয়াজ ১২০ টাকা।

তবে আড়তদাররা বলছেন, পাইকারিতে পেঁয়াজ ও আলুর দাম কমেছে। খোলাবাজারে এর প্রভাব দেখা যায়নি। পাইকারদের ভাষ্য, গত সপ্তাহে পাইকারিতে পাবনার পেঁয়াজ কেজিতে ১১৫ থেকে ১১৬ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এখন পাবনার পেঁয়াজ ১১০ টাকা। ফরিদপুরের পেঁয়াজ ১০৫ থেকে ১০৬ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১১০ টাকা। পেঁয়াজের সরবরাহ ঠিক থাকলে সামনে দাম আরও কমতে পারে।

মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে সরবরাহ বাড়ায় কমেছে মুরগির দাম। প্রতি কেজি ২০ টাকা পর্যন্ত কমে ব্রয়লার মুরগি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় ও সোনালি মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের ব্যবসায়ী জসিম উদ্দীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরবরাহ ঘাটতির কারণে কিছুটা দাম বেড়েছিল, এখন সরবরাহ বাড়ায় মুরগি দাম কমে এসেছে।

বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের ডিম ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়, দেশি রসুন প্রতি কেজি ২২০, আমদানিকৃত রসুন ২০০ টাকায়, ছোট দানার মসুর ডাল ১৪০ এবং বড় দানার মসুর ডাল ১১০ থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শান্তিনগর মাছবাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রভাবে বাজারে মাছের সরবরাহ প্রায় বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় সরবরাহ বাড়ায় মাছের দামও কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু আগের মতোই চড়া দামে মাছ কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।

বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাজারে সরবরাহ বাড়লেও কমেনি মাছের দাম। আমাদের মতো অল্প আয়ের মানুষ ১ হাজার টাকা নিয়ে বাজারে এলেও চাহিদার তুলনায় কম বাজার করে বাসায় ফিরছে। এমন পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকার ইচ্ছাটা মলিন হয়ে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রতি কেজি রুই মাছ ২৬০ ও দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের রুই ৪০০ টাকা। গ্রাসকার্প কিনেছি ২৫০ টাকা কেজিতে, মাঝারি মানের কই কিনেছি ১৮০ টাকায়। এক কেজি ওজনের মৃগেল ২৫০ টাকা। তবে সবচেয়ে বেশি দাম কমেছে তেলাপিয়ার। গত সোমবার যে মাছ বিক্রি হয়েছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে। আজ (গতকাল) বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২৩০ টাকায়।’

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত