কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং বনবিট এখন কাঠ চোরাকারবারি চক্রের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। অসাধু বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন চুনতি রেঞ্জের হারবাং বনবিট এলাকায় রাত নামলেই নিধন করা হচ্ছে সংরক্ষিত বনায়নের গাছপালা। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আঁতাত করে বনের রকমারি গাছ নিধনে নেমেছে কিছু চোরাকারবারি চক্র। একইসঙ্গে বনবিট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ম্যানেজ করেই হারবাং বনবিটের অধীন বিভিন্ন এলাকার বনভূমি ধ্বংস করে গড়ে উঠছে স্থায়ী বসতবাড়ি। সেই সঙ্গে কাটা হচ্ছে পাহাড়, লুট হচ্ছে বনভূমির জায়গা থেকে বালু।
অভিযোগ উঠেছে বন, পাহাড় ও বালুখেকোদের কাছ থেকে অতিরিক্ত উৎকোচ আদায় করে নীরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।
সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, বনবিভাগ এবং স্থানীয় দালাল ও কাঠ চোর সিন্ডিকেটের ত্রিপক্ষীয় যোগসাজশে ব্যাপক কাঠ পাচার হয় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের হারবাং বনবিট কর্মকর্তার সামনে দিয়ে। প্রতিদিনই ভ্যানগাড়ি, পিকআপ, ট্রাক ভর্তি করে হাজার হাজার টাকার মূল্যবান সেগুন কাঠ কোনো ধরনের বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মাঝেমধ্যে তাদের নির্ধারিত উৎকোচ না দিলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাঠবাহী গাড়ি রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। পরে বিট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চাহিদা মাফিক টাকা দিয়ে স্টেশন অতিক্রম করতে হয়। এভাবে প্রতিদিন ১৫-২০ হাজার টাকা আদায় করা হয়। ট্রাকভেদে ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয় বলে জানা গেছে। এতে করে পাচারকারীরা অবাধে কাঠ পাচার করতে পারায় হারবাংয়ের বিশাল বনভূমি দিন দিন বিরান ভূমিতে পরিণত হচ্ছে।
কয়েকজন কাঠ ব্যবসায়ী জানান, ট্রান্সপোর্ট পারমিশন বা টিপি থাকার পরও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের হারবাং বনবিট এলাকা দিয়ে গাছ নিয়ে আসতে হলে হারবাং বনবিট কর্মকর্তার নিয়োগকৃত এক ক্যাশিয়ারকে নির্ধারিত হারে চাঁদা দিতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কাঠ ব্যবসায়ী বলেন, বনবিভাগ ও তাদের দালালদের চাঁদা দেওয়ার বিষয়টি অনেক পুরনো ব্যাপার। যারা বৈধভাবে গাছ নিয়ে আসছে তাদেরও টাকা দিতে হচ্ছে। আবার যারা অবৈধভাবে নিয়ে আসছেন তাদের কাছ থেকেও গাড়িভেদে ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো সময় পরিমাণমতো চাঁদা না পেলে গাড়িগুলো আটকে রাখা হয়।
একজন ট্রাকচালক জানান, কাঠবাহী গাড়ি হারবাং বনবিট এলাকা অতিক্রম করার সময় ওই স্টেশনে কাঠের ক্যাটাগরি অনুযায়ী সর্বনিম্ন ৪ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। না দিলে হারবাং বনবিটের নিয়োগকৃত ক্যাশিয়ার ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের হামলার শিকার হতে হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হারবাং বনবিটের অধীন এলাকায় বনভূমিতে ইতিমধ্যে ৮টি বাড়ির কাজ চলমান থাকলেও চারটির কাজ সবেমাত্র শুরু হয়েছে। বাকি চারটির কাজ শেষ দিকে। এসব বাড়ি নির্মাণের সুযোগ করে দিয়ে জায়গা ভেদে কারও কাছে ২০ হাজার আবার কারও কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে আদায় করেছে বনকর্মীরা।
এসব অভিযোগ অসত্য বলে দাবি করেছেন হারবাং বনবিট কর্মকর্তা আবু সাঈদ। তিনি মেবাইল ফোনে বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগই ভিত্তিহীন। আমি এ ধরনের অনিয়ম-অসঙ্গতির সঙ্গে জড়িত নেই।’
জানতে চাইলে চুনতি রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বনবিট কর্মকর্তার এসব ব্যাপারে আমিও শুনেছি। তাকে কয়েকবার সাবধান করা হয়েছে। এরপরও যদি তিনি এমন অনৈতিক কাজে জড়িত থাকেন তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘হারবাং বনবিটের এসব অভিযোগ সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে রেঞ্জ কর্মকর্তাকে জানানো হবে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই বনবিট কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’