রমজান শুরু হতে এখনো প্রায় তিন সপ্তাহ বাকি। এরপর আরও এক মাস পর ঈদ, ঈদুর ফিতর। কিন্তু এরই মধ্যে ঈদ পোশাক তৈরিতে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস পল্লীর শ্রমিকরা। কারখানাগুলোতে নাওয়া-খাওয়া ভুলে রাতদিন নানা ধরনের পোশাক তৈরি করছেন লাখ লাখ শ্রমিক। তৈরি হচ্ছে জিন্স প্যান্ট, গ্যাবার্ডিন প্যান্ট, পাঞ্জাবি, শার্ট, গেঞ্জি, ফতুয়া, থ্রি-পিস, বোরকাসহ বাচ্চাদের নানা ধরনের পোশাক।
ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, ওই এলাকার প্রায় পাঁচ হাজার শোরুম-দোকান ও কারখানা থেকে সারা দেশের ঈদ বাজারের ৭০ শতাংশ পোশাক সরবরাহ করা হয়। বাণিজ্য হয় দেশ থেকে ২ হাজার কোটি টাকার। কিন্তু গত বছর নির্বাচনের কারণে বেচাকেনা মন্দা ছিল। তবে এবার তা কাটিয়ে পারবেন বালে আশা করছেন তারা।
কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, কেরানীগঞ্জের পোশাকপল্লীতে সুঁই থেকে শুরু করে প্যাকেট করার পলি- সবই পাওয়া যায় হাতের নাগালে। তাই পোশাক তৈরির খরচও কম হয়। সেই সঙ্গে চীন ও থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা পোশাক ও এখানে বিক্রি করা হয়। ফলে এখানে তৈরি পোশাকের বাজার দিন দিন বড় হচ্ছে।
অবশ্য জিন্স ও গ্যাবার্ডিন প্যান্টের জন্যই সারা দেশে সুপরিচিত এ গার্মেন্টসপল্লী। এখানে ২০০ টাকা থেকে শুরু করেছে ২০০০টাকায় বিক্রি হয় প্রতিটি প্যান্ট। এর মধ্যে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকার তৈরি জিন্স প্যান্টের চাহিদা বেশি।
এখানকার পাইকারি ক্রেতারাও বলছেন, পোশাকের মান ভালো ও দাম কম থাকায় এখানকার পোশাকের চাহিদা বেশি। তাই শবেবরাতের সময় থেকেই এখানে পোশাকের বায়না দেওয়া শুরু করেন তারা।
পোশাক পল্লীর বিভিন্ন কারখানায় ঘুরে দেখা যায়, নাওয়া-খাওয়া ভুলে পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগর ও শ্রমিকরা। কারখানাগুলোতে একই সঙ্গে চলছে কাপড় কাটা, সেলাই করা ও পোশাক তৈরির পর তা প্যাকেজিং করা।
শ্রাবণী আক্তার আশা নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘আমি গত আট বছর কালীগঞ্জের বিভিন্ন কারখানায় কাজ করেছি।
আগে আমাদের ভালোই আয় রোজকার হতো। গত বছর ভোটের কারণে মহাজনরা ঠিক মতো বেচাকেনা করতে পারেননি। আমাদের কাজ কমে গিয়েছিল। তবে এ বছর কাজ বেশি। আমরা ডিউটির পরেও ওভারটাইম করছি। আশা করছি বেচাকেনা ভালো হবে।
ওয়ান ম্যান শার্ট কারখানার মালিক আমির হোসেন বলেন, গত বছর নির্বাচন থাকায় আমরা কম উৎপাদন করেছিলাম।
তারপরও আমাদের লোকসান হয়েছিল। তবে এ বছর ঈদ সামনে রেখে আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছি। তিনি বলেন, এখানে পাইকারি বাজারটা শবেবরাত থেকেই শুরু হয়। ইতিমধ্যেই আমাদের বেচাবিক্রি কিছুটা শুরু হয়ে গেছে
নিউ ফ্যাশন কারখানার মালিক মো. ইয়াসিন বলেন, এখানকার প্যান্টের কদর সবচেয়ে বেশি। তবেকয়েক বছর ধরে পাঞ্জাবির কদরও বেড়েছে। মনে হচ্ছে এ বছর ব্যবসা ভালো হবে। গত বছর আমি ৮ হাজার পাঞ্জাবি বিক্রি করেছি। এ বছর ১২-১৪ হাজার পাঞ্জাবি বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।
কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ পাভেল মোল্লা বলেন, ‘দেশের তৈরি পোশাকের ৭০ ভাগের চাহিদা আমরা কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস পল্লী থেকে মিটিয়ে থাকি। রমজানের ব্যবসাটাই মূলত এখানের মূল সিজন। গত বছর এখানকার ব্যবসায়ীরা ভালো ব্যবসা করতে পারেননি। তবে এবার ভালো ব্যবসা করবে, এমন প্রত্যাশাতেই সবাই সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছে। আশা করি ব্যবসা ভালো হবে।’