সবাই জান্নাতে যেতে প্রত্যাশী। শুধু প্রত্যাশা থাকলেই জান্নাতে যাওয়া যাবে না; বরং মহান আল্লাহর দেওয়া বিধান অনুযায়ী যথাযথভাবে আমল করতে হবে। হাদিসে বিশেষভাবে কিছু আমলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলো করলে জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভ করে জান্নাতে যাওয়া সম্ভব। জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভ করা যায় এমন কয়েকটি আমল উল্লেখ করা হলো।
ইমান আনা ও সৎকাজ করা : ইমান আনা ও সৎকাজ করা ছাড়া প্রকৃত মুসলিম হওয়া যায় না। ইমান ও সৎকাজ একটি অপরটির পরিপূরক। ইমান ছাড়া সৎকাজ যেমন মূল্যহীন, সৎকাজ ছাড়া ইমানও তেমনি প্রাণহীন। আর যারা এই দুটি কাজ করতে পারে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতসহ অসংখ্য পুরস্কার। এর মধ্যে অন্যতম পুরস্কার হচ্ছে গুনাহ মাফ হওয়া। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা ইমান আনে ও সৎকাজ করে, অবশ্যই আমি তাদের পাপসমূহ মার্জনা করে দেব এবং অবশ্যই তাদের উত্তম আমলের প্রতিদান দেব, যা তারা করত।’ (সুরা আনকাবুত ৭)
জামাতে নামাজ আদায় : নামাজকে বলা হয়েছে জান্নাতের চাবিকাঠি। নামাজ ছাড়া জান্নাতে যাওয়া সম্ভব নয়। আর জামাতের সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। জামাতে নামাজ আদায় করা মহান আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয়। মহান আল্লাহ স্বীয় অনুগ্রহ ও মেহেরবানীতে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়ের মধ্যে বান্দার জন্য প্রভূত সওয়াব ও কল্যাণ রেখেছেন। নিয়মিতভাবে প্রথম তাকবিরের সঙ্গে জামাতে নামাজ আদায় করে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশে একাধারে ৪০ দিন প্রথম তাকবিরের সঙ্গে জামাতে নামাজ আদায় করবে আল্লাহ তাকে দুটি মুক্তির ছাড়পত্র দেবেন। একটি জাহান্নাম থেকে মুক্তি, অপরটি মুনাফিকি থেকে মুক্তি। (তিরমিজি ২৪১)
উত্তম চরিত্র : চরিত্র মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। মানুষের আচার-আচরণ, চিন্তা-চেতনা ও দৈনন্দিন কাজকর্মের মধ্য দিয়ে যে উত্তম স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয় তাই উত্তম চরিত্র। উত্তম চরিত্র হলো পরকালে মুক্তির উপায়। ইসলামে অপরিহার্য ফরজ তথা নামাজ, রোজা, জাকাত ও হজ পালন করা সত্ত্বেও পরকালে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের জন্য উত্তম চরিত্রের কোনো বিকল্প নেই। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, জান্নাতে সবচেয়ে বেশি মানুষ প্রবেশ করাবে কোন জিনিস? রাসুল (সা.) বললেন, দুটি জিনিস। তা হলো আল্লাহর ভয় এবং উত্তম চরিত্র। (তিরমিজি)
সত্যবাদিতা : সত্যবাদিতা মানুষের একটি মহৎ গুণ। প্রকৃত ঘটনা যথাযথ প্রকাশ করাকে সত্যবাদিতা বলে। যে ব্যক্তির মধ্যে এ মহৎ গুণ আছে তাকে সত্যবাদী বলে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের অবশ্যই সত্যবাদী হওয়া উচিত। কেননা সত্যবাদিতা মানুষকে পুণ্যের পথে পরিচালিত করে, আর পুণ্য জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। কোনো মানুষ যখন সর্বদা সত্য কথা বলে এবং সত্য বলতে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তখন সে আল্লাহর কাছে সত্যবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকে। (সহিহ বুখারি) সত্যবাদিতার কারণে একজন মুমিন দুনিয়া ও আখেরাতে অশেষ কল্যাণ লাভ করে। কেয়ামতের দিন মুমিনের সত্যবাদিতা তাকে বিশেষ সহায়তা দান করবে। তাকে এর প্রতিদান হিসেবে জান্নাত দান করা হবে।
ইসতেগফার করা : ইসতেগফার আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ ক্ষমা প্রার্থনা করা। গুনাহের কথা স্মরণ করে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করাকে ইসতেগফার বলা হয়। আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘কেউ যদি কোনো মন্দ কাজ করে বা নিজের প্রতি জুলুম করে, এরপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালুরূপে পাবে।’ (সুরা নিসা ১১০)
রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ৭০ বারেরও বেশি ইসতেগফার করে থাকি। (সহিহ বুখারি) তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন স্বীয় আমলনামা দেখে খুশি হতে চায় সে যেন বেশি বেশি ইস্তিগফার করে। (বায়হাকি) আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে বেশি বেশি ইসতেগফার করার তওফিক দান করুন।
আজান দেওয়া : আজান দেওয়ার মাধ্যমেও জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভ করা সম্ভব। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ১২ বছর আজান দেয়, তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। তার প্রত্যেক আজানের জন্য ৬০টি নেকি এবং প্রত্যেক ইকামতের জন্য ৩০টি নেকি অতিরিক্ত লেখা হয়। (আত তারগিব ওয়াত তারহিব)
সুন্নত নামাজ : ফরজ নামাজের পাশাপাশি নফল ও সুন্নত নামাজেরও যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের আগে ও পরে ১২ রাকাত সুন্নত নামাজ রয়েছে, যার গুরুত্ব অপরিসীম। শরিয়তের পরিভাষায় সুন্নত বলা হয় ওই আদেশমূলক বিধানকে, যা ফরজ-ওয়াজিবের মতো অপরিহার্য না হলেও রাসুল (সা.)-এর নিয়মিত আমল থেকে তা প্রমাণিত।
উম্মে হাবিবা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি দিনে ও রাতে ১২ রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করবে তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করা হবে। এ সুন্নত নামাজগুলো হলো, ফজরের আগে দুই রাকাত, জোহরের (ফরজ নামাজের) আগে চার রাকাত ও পরে দুই রাকাত, মাগরিবের পরে দুই রাকাত এবং এশার পর দুই রাকাত। (তিরমিজি) আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিয়মিতভাবে দিনে ও রাতে ১২ রাকাত সুন্নত নামাজ পড়বে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (ইবনে মাজাহ)