চীন ও বাংলাদেশের মধ্যকার চিকিৎসা সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার প্রথম দফায় চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে রোগীসহ ৩১ সদস্যের প্রতিনিধিদল ঢাকা ছেড়েছে। এই দলে ১৪ জন রোগী, ছয়জন রোগীর পরিবারের সদস্য, পাঁচজন চিকিৎসক, পাঁচজন ট্রাভেল এজেন্সির প্রতিনিধি ও একজন সাংবাদিক রয়েছেন।
এ উপলক্ষে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চীনা দূতাবাস আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, চীনের ইউনান প্রদেশের তিনটি শীর্ষপর্যায়ের হাসপাতালকে বিশেষভাবে বাংলাদেশি রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য মনোনীত করা হয়েছে। সেখানেই রোগীরা চিকিৎসা নেবে। রোগীরা যেন সহজে ভিসা পায়, সেই উদ্যোগও নিয়েছে চীন সরকার।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন বলেন, ‘চলতি বছর বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে। ফলে দুদেশের জনগণের মধ্যে আমরা সম্পর্ক আরও বাড়াতে আগ্রহী। কুনমিংয়ে চিকিৎসাসেবা নেওয়ার মধ্য দিয়ে দুদেশের সম্পর্ক আরও বাড়বে বলে আমরা আশা করছি। চীনে বাংলাদেশের রোগীরা চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে, এটা একটা ভালো উদ্যোগ। বাংলাদেশি রোগীরা এর মধ্য দিয়ে খুব সহজেই চিকিৎসাসেবা নিতে পারবে।’
এ সময় বাংলাদেশে দায়িত্বরত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘বাংলাদেশের রোগীদের প্রথম ব্যাচকে চীনে পাঠাতে পেরে আমরা আনন্দিত। আমরা জানি, বাংলাদেশের রোগীরা চিকিৎসার জন্য নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। সে কারণে অন্তর্বর্তী সরকারের অনুরোধে সাড়া দিয়ে আমরা এ উদ্যোগ নিয়েছি। এ উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশিরা চীনে খুব সহজেই উন্নতমানের চিকিৎসা নিতে পারবে।
ভ্রমণের খরচ সম্পর্কে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশি রোগীদের জন্য চীনে ভ্রমণের উড়োজাহাজ ভাড়া কমানোর চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া নিয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা বা নীতি নেই। আবেদনকারীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা অনুসরণ করে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।
প্রতিনিধিদলের সদস্য ডা. রাশেদুল হাসান চীনে উন্নত চিকিৎসার সুযোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘চীন গুরুতর রোগ, যেমন ট্রান্সপ্ল্যান্ট এবং ক্যানসারের মতো চিকিৎসার ক্ষেত্রে অত্যন্ত উন্নত চিকিৎসা প্রদান করে। তবে অনেক বাংলাদেশি এই সুযোগগুলোর বিষয়ে অবগত নন। আমরা চিকিৎসকরা চীনে উন্নত প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ পাব, যা বাংলাদেশে প্রয়োগ করা যাবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, চীনে চিকিৎসা খরচ ভারতের চেন্নাই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু বা থাইল্যান্ডের মতো। কিছু ক্ষেত্রে চীনে চিকিৎসা আরও সস্তা। এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ঘোষণা দিয়েছিলেন, চীনের ইউনান প্রদেশের তিনটি শীর্ষস্থানীয় হাসপাতাল বাংলাদেশি রোগীদের গ্রহণ করার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো চিকিৎসাসেবার প্রক্রিয়া সহজ করতে ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা এবং দোভাষীর দল গঠনের জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ফেব্রুয়ারি মাসে চীন সফরকালে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য সে দেশের নীতিনির্ধারকদের অনুরোধ জানান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চীনে বাংলাদেশি রোগীরা চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছে।