মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

ওষুধ বিক্রেতা থেকে শতকোটির মালিক

আপডেট : ১১ মার্চ ২০২৫, ০৬:৪৭ এএম

এম এ এইচ মাহবুব আলম এক সময় গ্রামের একটি ফার্মেসিতে ওষুধ বিক্রি করতেন। এখন তিনি বাড়ি-গাড়িসহ শত কোটি টাকার মালিক। একই গ্রামের বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে সাবেক গণপূর্ত ও গৃহায়ন মন্ত্রী র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর আশকারায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে বাগিয়ে নিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রায় ১৪টি সব বড় পদ-পদবি।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরও তার নাম তেমন শোনা যায়নি। আলোচনায় আসেন ২০১১ সালে। ওই বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে অ্যাডভোকেট লুৎফুল হাই সাচ্চুর আকস্মিক মৃত্যুতে উপনির্বাচনে জয় পান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সচিব র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। আর সে সময়ই যেন ‘আলাদিনের চেরাগ’ হাতে পান মাহবুব। ওষুধ বিক্রেতা থেকে মাহবুব আলম হয়ে যান শত কোটি টাকার মালিক। গ্রামে রয়েছে চারতলা ডুপ্লেক্স বাড়ি। আছে জেলা শহরের হালদার পাড়ায় দুটি ফ্ল্যাট। এ ছাড়া ঢাকা ও কুমিল্লায়ও বাড়ি আছে তার।

গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর স্থানীয় লোকজন ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী মাহবুব আলমের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। তাদের ভাষ্য, জেলা কমিটিগুলোতে মাহবুব আলমের দৌরাত্ম্যে কোণঠাসা ছিলেন তারা। মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী হওয়ার কারণে ভয়ে কিছু বলতেও পারেননি।জেলা সৈনিক লীগের আহ্বায়ক ও সাবেক যুবলীগ নেতা জেপি জুম্মান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, মাহবুবের মতো বাটপারদের রবিউল ভাই (মন্ত্রী) শত শত কোটি টাকার মালিক বানিয়েছেন।

আরেক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, মূসা আনসারি গ্রেপ্তার (কট) বাকি রইল নাপা (ওষুধ) বিক্রেতা মাহবুব আলম। তারা মোকতাদির চৌধুরীর (মন্ত্রী) নাম বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তাতে মন্ত্রীর সায় ছিল।

সাবেক জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও আওয়ামী আইনজীবী প্যানেলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদুল কবীর তপন বলেন, সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী তার অনুসারীদের ছাড়া অন্যদের ভিড়তে দিতেন না। আর তার ব্যক্তিগত সহকারী মাহবুব আলমকে দিয়ে জেলার পদ-পদবিসহ সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করতেন। বাকিদের রাজনীতিতে ‘একঘরে’ করে রাখতেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মাহবুব আলম জেলার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। তার পরামর্শ ছাড়া সদর-বিজয়নগর টিআর, কাবিখা, কাবিটাসহ কোনো উন্নয়নমূলক কাজ হতো না। দুই উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয়ের সব কিছুই তার ইশারায় চলত। জেলা শহর, সদর ও বিজয়নগর উপজেলায় কোনো শিক্ষা বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ কেউ নিলে, কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই তাকে অংশীদার হিসেবে রাখা ছিল অনেকটা বাধ্যতামূলক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সদর উপজেলার তিনজন ব্যক্তি বলেন, মাহবুব আলম আত্মগোপনে থাকলেও তার ঠিকাদারি ব্যবসা পুরোদমে চলছে। তার ভাইয়েরা উপজেলা ও ইউনিয়ন বিএনপিতে পদ বাগানোর চেষ্টা করছেন।

মাহবুব আলম একাধারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা শিক্ষা কমিটির সদস্য, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক গণপূর্ত মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী। এ ছাড়া তিনি কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক লিমিটেড ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চেয়ারম্যানসহ নানা প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের বিভিন্ন পদে আছেন।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত