সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

ঈদের আগে বেতন-ভাতা নিয়ে অস্থিরতার শঙ্কা

আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২৫, ০৭:১৫ এএম

বরাবরের মতো এবারও রোজার ঈদের আগে বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে অস্থিরতার শঙ্কায় চট্টগ্রামের গার্মেন্টস সেক্টর। ক্রয়াদেশ কমে যাওয়ায় আর্থিক সংকটে থাকা কারখানাগুলোতে এ ধরনের ঝুঁকির আশঙ্কা করছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ও শিল্পাঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত শিল্প পুলিশ। সংস্থা দুটি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যেসব গার্মেন্টস কারখানায় অতীতে বিভিন্ন সময় বেতন ভাতা নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষের রেকর্ড রয়েছে এবং যেসব কারখানা ক্রয়াদেশ হ্রাস পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সে সব কারখানাকে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধকে কেন্দ্র করে সেসব কারখানাকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে।

বিজিএমইএ ও পুলিশ ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠার আশঙ্কায় গার্মেন্টস সেক্টর নিয়ে ইতিমধ্যে মনিটরিং শুরু করেছে। অধিকাংশ কারখানায় বেতনভাতা নিয়ে অসন্তোষ না থাকলেও সাব-কন্ট্রাক্টের কারখানাগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন সংস্থা দুটির কর্মকর্তারা।

এদিকে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক ক্রাইসিস কমিটির সভাতেও যেকোনো ধরনের অসন্তোষের বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য শিল্প পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে সাড়ে ৪০০ পোশাক কারখানার মধ্যে বর্তমানে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত প্রায় সাড়ে ৩০০ কারখানা চালু রয়েছে। অন্যদিকে বিকেএমইএর ১২০টি সদস্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চালু রয়েছে শ’খানেক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এখনো ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পরিশোধ করতে পারেনি। চলতি মাসেই ফেব্রুয়ারি মাসের বেতনের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শ্রমিকদের ঈদের বোনাসও পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়া মার্চ মাসের আংশিক বেতন দেওয়ার নির্দেশনাও আসতে পারে সরকারের পক্ষ থেকে। সে ধরনের নির্দেশনা এলে আর্থিক চাপ আরও বাড়ত কারখানা মালিকদের ওপর।

জানা যায়, ঈদকে সামনে রেখে গার্মেন্টস সেক্টরে অসন্তোষ এড়াতে এবার রমজানের আগে থেকেই কাজ করছে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও শিল্প পুলিশ। বিজিএমইএর ক্রাইসিস সেল সার্বক্ষণিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ কারখানাগুলো মনিটরিং করছে এবং কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে।

বিজিএমইএর প্রশাসক কমিটির সদস্য ও ক্লিফটন গ্রুপের পরিচালক এমডিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে ভালো অবস্থায় নেই। একই মাসের মধ্যে ফেব্রুয়ারির বেতন, ঈদের বোনাস ও মার্চের আংশিক বেতন পরিশোধ তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়তে পারে। কিন্তু ঈদে শ্রমিকরাও চাইবে তাদের বেতন-বোনাস নিয়ে পরিবার পরিজনের সঙ্গে ভালোভাবে ঈদ করতে। সবকিছু মাথায় রেখেই আমরা সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে সার্বিক বিষয় মনিটরিং করে যাচ্ছি। সরকারও এ বিষয়ে খুব তৎপর। আশা করছি বড় ধরনের কোনো সমস্যা হবে না।

বিকেএমইএর সিনিয়র যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) মো. আলতাফ উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রেখে বেতন-বোনাস পরিশোধের বিষয়টি তদারকি করছি। এ ছাড়া যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে শিল্প পুলিশ ও শ্রম অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঈদকে সামনে রেখে চট্টগ্রামে ইপিজেড এবং ইপিজেডের বাইরে মোট ৪২টি কারখানাকে আমরা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছি। শিল্প এলাকাগুলোকে পৃথক জোনে ভাগ করে মনিটরিং ও মোটিভেশনের কাজ চলছে। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষকেও বারবার তাগাদা দিয়ে আসছি। বিজিএমইএর পক্ষ থেকেও বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে। মালিকপক্ষও যথাসময়ে বেতন-বোনাস পরিশোধের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছে। এরপরও যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত