গাজায় নতুন করে হামলা চালানো ও দেশটির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের প্রধান রোনেন বারকে অপসারণের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। শনিবার ইসরায়েলের বাণিজ্যিক রাজধানী তেল আবিবে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। তাদের অভিযোগ, গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেস্তে দিয়ে নেতানিয়াহু সরকার হামাসের হাতে বন্দি অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তির ব্যাপারে অবহেলা দেখিয়েছেন। সেই সঙ্গে রোনেন বারকে সরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে বিরোধী রাজনীতিবিদদের রোষানলে পড়েছেন তিনি। এ নিয়ে টানা চতুর্থ দিনের মতো ইসরায়েলে নেতানিয়াহুবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল।
শিন বেতের প্রধানকে বরখাস্তের কারণ হিসেবে নেতানিয়াহু বলেন, রোনেনের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন এবং তাকে বহিষ্কার সংক্রান্ত লিখিত আদেশে ইতিমধ্যে স্বাক্ষরও করেছেন, যা আগামী ১০ এপ্রিল কার্যকর হবে। যদিও গত শুক্রবার ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট রোনেন বারকে অপসারণের সিদ্ধান্ত সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। আদালতের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই রায়ের মাধ্যমে বারকে অপসারণের বিরুদ্ধে দায়ের করা আবেদনগুলো বিবেচনা করার সুযোগ পাবেন বিচারকরা। আগামী ৮ এপ্রিলের মধ্যে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রোনেন বার ২০২১ সাল থেকে শিন বেতের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নেতানিয়াহুর এ পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা শুরু করেন বিরোধী রাজনীতিকরা। তাদের অভিযোগ, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক এবং ক্ষমতা নিজের হাতে কুক্ষিগত করার জন্য তিনি ইসরায়েলের সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা শুরু করেছেন। তবে বিরোধীদের এসব অভিযোগ পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছেন নেতানিয়াহু।
এদিকে, যুদ্ধবিরতির মধ্যেই গাজা উপত্যকায় ফের সামরিক অভিযান শুরুর জেরে ব্যাপকভাবে উদ্বেগ বোধ করেছেন গাজায় আটকে থাকা অবশিষ্ট জিম্মিদের স্বজনরা। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর অতর্কিত হামলা চালিয়ে যে ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে গিয়েছিল হামাস যোদ্ধারা, হিসাব অনুযায়ী তাদের মধ্যে এখনো ৫৪ জন আটকে আছেন গাজায়। ধারণা করা হচ্ছে, এদের মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ জন জীবিত আছেন। রোনেন বারের অপসারণ বাতিলের দাবিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন আটকে থাকা এই জিম্মিদের স্বজনরাও। শনিবার তেল আবিবের হাবিমা স্কোয়ারে হাজার হাজার ইসরায়েলি সমবেত হয়েছিলেন রাষ্ট্রের পতাকা হাতে। তাদের অনেকেই গাজার অবশিষ্ট জিম্মিদের ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ডও নিয়ে এসেছিলেন।
৬৩ বছর বয়সী বিক্ষোভকারী মোশে হাহারোনি রয়টার্সকে বলেন, ইসরায়েলের সবচেয়ে বিপজ্জনক শত্রুর নাম বেনজামিন নেতানিয়াহু। প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি ক্ষমতায় আছেন এবং এই ২০ বছরে একবারও দেশের কথা, দেশের নাগরিকদের কথা তিনি চিন্তা করেননি। এরেজ বেরমান নামের আরেক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গত দেড় বছর ধরে গাজায় ভয়াবহ সামরিক অভিযান চালাচ্ছে এবং এখনো হামাস গাজায় ক্ষমতাসীন আছে। এ গোষ্ঠীটির লাখ লাখ যোদ্ধা এখনো টিকে আছে। নির্মম সত্য হলো- যে লক্ষ্য নিয়ে ইসরায়েলের সরকার সামরিক অভিযান শুরু করেছিল, তা শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে নেতানিয়াহুর উচিত এই ব্যর্থতা স্বীকার করা এবং জিম্মিদের মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
অন্যদিকে, গাজার পাশাপাশি লেবাননেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। লেবানন থেকে ইসরায়েলে রকেট হামলার পর দক্ষিণ লেবাননেও বিমান হামলা করেছে তেল আবিব। ইসরায়েলের হামলায় দক্ষিণ লেবাননে অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে চার মাস আগে লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছে, সেটাও ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাওয়াফ সালাম হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, দক্ষিণ সীমান্তে ইসরায়েলের নতুন সামরিক অভিযান লেবানন ও লেবাননের জনগণের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, লেবাননের সীমান্ত থেকে প্রায় ৬ কিমি উত্তরে একটি এলাকা থেকে তিনটি রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছিল, যা তারা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়। এক বিবৃতিতে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলে চালানো সাম্প্রতিক রকেট হামলার সঙ্গে জড়িত নয়। গোষ্ঠীটি বলেছে, ইসরায়েল অযৌক্তিক অজুহাত সৃষ্টি করে নতুন করে হামলা চালানোর সুযোগ নিচ্ছে। পাশাপাশি ২০২৩ সালের নভেম্বরে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি হিজবুল্লাহ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে। লেবাননের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মিশেল মেনাসা বলেছেন, লেবাননের সেনাবাহিনী রকেট হামলার পরিস্থিতি তদন্ত শুরু করেছে। তিনি যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যস্থতাকারী রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যে, তারা যেন ইসরায়েলকে এর অব্যাহত লঙ্ঘন ও ভিত্তিহীন অজুহাতে হামলা থেকে বিরত রাখে।