গাজীপুরের শ্রীপুরে ফের শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার সকালে তিন দফা দাবিতে শ্রীপুর পৌরসভার কড়ইতলা এলাকার নিট হরাইজন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করেন। পরে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে মহাসড়কের চার লেনেই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে থানা পুলিশ, শিল্প পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি দল শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে। প্রায় চার ঘণ্টা পর সড়ক ছেড়ে দেন শ্রমিকরা।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শ্রমিকরা জানান, বিনা নোটিসে যখন-তখন শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করা, পূর্ব নোটিস ছাড়াই কারখানা বন্ধ ঘোষণা না করা এবং নিয়মিত বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে তারা আন্দোলনে নেমেছেন। কারখানাটির এক শ্রমিক বলেন, কোনো পূর্ব নোটিস ছাড়াই কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্র্তৃপক্ষ। এর মধ্যে প্রায় অর্ধশত শ্রমিককে বিনা কারণে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ প্রত্যেক মাসেই শ্রমিকদের পাওনা বেতন-ভাতা নিয়মমাফিক দেয় না। তাদের খুশিমতো সময়ে দেয়। সেটা মাসের মাঝামাঝিও হয় আবার মাসের শেষেও হয়। তারা ইচ্ছেমতো বেতন-ভাতা পরিশোধ করে। কিছু বললে প্রতিবাদ করলেই ছাঁটাই করে দেয়।
শ্রমিকদের দাবি, কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হলে শ্রমিকদের সরকার ও বিজিএমইএ নির্ধারিত পাওনা পরিশোধ করতে হবে।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয়রা বলেন, সকালে শ্রমিকরা যথারীতি নিয়মমাফিক কাজে যোগ দিতে কারখানায় আসেন। পরে তারা কারখানার প্রধান ফটকে বন্ধের নোটিস ঝুলতে দেখেন। এরপর সব শ্রমিক কারখানার সামনে এসে জড়ো হয়ে কারখানা বন্ধের প্রতিবাদ জানান। এর আগের দিনও তারা আধাবেলা কাজ করেছেন। আজ (বুধবার) কারখানা বন্ধের নোটিস পেলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা এ বিষয়ে বলেন, সকালে কারখানার সামনে এসে দেখি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে নোটিস টানিয়ে রেখেছে। গত কয়েক দিনে অন্তত অর্ধশত শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে বিনা কারণে। মঙ্গলবার তারই প্রতিবাদে আমরা আধাবেলা কাজ করেছি। আজ (বুধবার) সকালে এসে দেখি কারখানা বন্ধ। এরপর সব শ্রমিক জড়ো হয়ে মহাসড়কে অবস্থান নেন। তবে শ্রমিকরা কোনো ভাঙচুর বা হট্টগোল করেনি।
আছিয়া আক্তার নামের এক শ্রমিক বলেন, সকালে কারখানায় কাজ করতে এসে দেখি ফ্যাক্টরির মেইন গেট বন্ধ। কারখানার ফটকের সামনে সাদা কাগজে লেখা অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ। আরেক শ্রমিক আলিফ মাসুদ জানান, মঙ্গলবার কারখানা কর্র্তৃপক্ষ হঠাৎ করে ২৯ জন শ্রমিককে শোকজ করে। এ ছাড়া নিয়মিতই শ্রমিক ছাঁটাইও চলছে। বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিবাদ করলেই হুটহাট চাকরিচ্যুত করে কর্র্তৃপক্ষ।
মাওনা হাইওয়ে থানার ওসি আইয়ুব আলী বলেন, মহাসড়কের আনসাররোড় এলাকায় শ্রমিকরা অবরোধ করেছিলেন। খবর পেয়ে থানা পুলিশ, শিল্প পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল এসে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা কারখানা কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে শ্রমিকদের সব দাবি পূরণের আশ্বাস দেন। সে আশ্বাসেই শ্রমিকরা মহাসড়ক ছেড়ে দেন। তবে বেশ কিছুক্ষণ এ মহাসড়কে যানজট লেগেছিল।
নিট হরাইজন কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা (এইচ আর অ্যাডমিন) জসিম উদ্দিন বলেন, শ্রম আইন ধারা ১৩ (১) অনুযায়ী কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিস ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে । অল্প সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের সব পাওনা পরিশোধ করা হবে।
শ্রীপুর মডেল থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীও আসে ঘটনাস্থলে। এখন পরিস্থিত স্বাভাবিক আছে।