ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে। তেহরানকে এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য কয়েক দফায় হুমকি-ধমকিও দিয়েছেন ট্রাম্প। এমনকি সামরিক বলপ্রয়োগের সম্ভাবনাও জিইয়ে রেখেছেন। সম্প্রতি ওমানের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে এখন পর্যন্ত তিন দফা পরোক্ষ আলোচনা হয়েছে। ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখা এবং এর বিনিময়ে ওয়াশিংটনের আরোপিত আর্থিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের উদ্দেশ্যে এই আলোচনা চলমান আছে। এরমধ্যেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানের পরমাণু কর্মসূচি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। রবিবার জিউইশ নিউজ সিন্ডিকেট আয়োজিত এক সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
জেরুজালেমে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, ইরানকে পরমাণু অবকাঠামো গুটিয়ে আনতে হবে। এর অর্থ হলো- তাদের আর ইউরেনিয়াম পরিশোধন করার সক্ষমতা থাকবে না। ট্রাম্পের সঙ্গে সাম্প্রতিক আলাপের প্রতি ইঙ্গিত করে নেতানিয়াহু বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আমি সবসময়ই স্পষ্ট বলে আসছি- যেকোনো উপায়েই হোক না কেন, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের সব পথ বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি ইরানের সঙ্গে কোনো চুক্তির ক্ষেত্রে তেহরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের বিষয়টিও আমলে নেওয়ার আহ্বান জানান এই নেতা। নেতানিয়াহুর দাবি, একমাত্র গ্রহণযোগ্য চুক্তি হবে তখনই যখন ইরান তার সামগ্রিক পারমাণবিক অবকাঠামো বাতিল করতে সম্মত হবে। এখানে তিনি লিবিয়াকে উদাহরণ হিসেবে টেনেছেন। ২০২৩ সালে পশ্চিমাদের সঙ্গে লিবিয়ার চুক্তি অনুযায়ী তারা পারমাণবিক, রাসায়নিক, জৈবিক এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বাতিল করতে রাজি হয়। এ সময় আত্মবিশ্বাস নিয়ে নেতানিয়াহু ঘোষণা দেন, ইরানের হাতে কোনো ধরনের পরমাণু অস্ত্র থাকবে না।
পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরেই সন্দেহ করে আসছে, ইরান পরমাণু অস্ত্র নির্মাণের সক্ষমতা অর্জনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তবে এই দাবি বরাবরই নাকচ করে এসেছে তেহরান। তারা জানিয়েছে, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি একটি পুরোদস্তুর শান্তিপূর্ণ উদ্যোগ। ১৯৭৯ সালের ইসলামিক বিপ্লবের পর থেকেই ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বৈরিতার শুরু। যদিও ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে ইরানের সঙ্গে বিশ্বের ক্ষমতাবান রাষ্ট্রগুলোর একটি চুক্তি হয়। পরমাণু কর্মসূচি সীমিত রাখার শর্তে ইরানের বিরুদ্ধে আরোপিত আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছিল। তবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প তিন বছর পর এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়ায় এটি বাতিল হয়ে যায়। আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের চতুর্থ দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এর আগে দুই পক্ষের চিন্তাধারার ব্যবধান দূর করার জন্য কাজ করার কথা জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি।