রোববার, ১৮ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

ওয়াসার মেগা প্রকল্পে নেই সফলতা

আপডেট : ১০ মে ২০২৫, ০৭:৩৭ এএম

আট সদস্যের পরিবার নিয়ে খুলনা মহানগরীর নিউ মার্কেট এলাকায় (কেডিএ অ্যাপ্রোচ সড়ক) বসবাস করেন অ্যালেক্স বিশ্বাস। পুরো পরিবারটি ওয়াসার পাইপলাইনে সরবরাহকৃত পানির ওপর নির্ভরশীল। অথচ দীর্ঘদিন ধরে তারা ওয়াসার পাইপলাইনে ঠিকমতো পানি পাচ্ছে না। প্রতিদিন সামান্য যা পানি পাচ্ছেন, তা দিয়ে কোনোভাবেই মিটছে না গোসল ও গৃহস্থালির কাজ। ফলে এ গরমে অতিষ্ঠ পুরো পরিবার।

শুধুই অ্যালেক্স বিশ্বাসের পরিবারই নয়; খুলনা মহানগরীতে ওয়াসার পাইপলাইনে পানির সংযোগ নিয়ে বিপাকে অসংখ্য গ্রাহক। অভিযোগ উঠেছে, ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক ভুল নকশায় ত্রুটিপূর্ণ বাস্তবায়ন হওয়ায় হাউজ কানেকশনে পানি কম সরবরাহ হচ্ছে। এ ছাড়া গ্রাহক পর্যায়ে স্থাপনকৃত ওয়াটার মিটারগুলো ঘোলা হয়ে যাচ্ছে। ফলে গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি চলছে ভোগান্তি ও ক্ষোভ। পানির জন্য অনেকে ভূগর্ভ পাম্প বসাচ্ছে।

ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা ওয়াসার মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১১ সালে। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে ওই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। এরপর প্রকল্পের আওতায় বাগেরহাটের মোল্লাহাটের মধুমতী নদী থেকে পানি আনা হচ্ছে রূপসার সামন্তসেনা এলাকার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে। এখান থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি নেওয়া হচ্ছে নগরীর ৭টি রিজার্ভার ও ১০টি ওভারহেড ট্যাংকে। সেখান থেকে শহরের ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক স্থাপনের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

তবে ভুক্তভোগীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াসা প্রকৌশলীদের পর্যালোচনা ও অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, প্রকল্পের আওতায় পানির ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক সিস্টেম ভুল ডিজাইনে ত্রুটিপূর্ণ বাস্তবায়ন হওয়ায় শহরের অনেক এলাকায় ঠিকমতো পানি সরবরাহ হচ্ছে না। ত্রুটির মধ্যে অন্যতম ৯০০ মিলিমিটার মূল পাইপলাইনের সঙ্গে মাত্র ৩৫০ মিটার সাইড পাইপের সংযোগ দেওয়া। ফলে মহানগরীর ১৭ থেকে ১৯ নম্বর ওয়ার্ড ও ২৬ থেকে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রাহকরা চাহিদার তুলনায় খুব কম পানি পাচ্ছে। বেশি অসুবিধায় পড়েছে লবণচরা রিজার্ভারের গ্রাহকরা।

কেডিএ অ্যাপ্রোচ সড়কের আলোর গলির বাসিন্দা রোমিও সরকার ও টুটুপাড়ার কয়েকজন বাসিন্দা দেশ রূপান্তরকে জানান, পানিই আসে না। টিপ টিপ করে অল্প অল্প পানি আসে। সারা দিন যা পানি আসে তা দিয়ে বালতিখানেক পানি সংগ্রহ হয়। ফলে গরমে দুর্ভোগের শেষ নেই। বাধ্য হয়ে অনেক গ্রাহক সাব-মার্সিবল পাম্প বসিয়ে নিচ্ছে।

এদিকে প্রকল্পের ৬৭টি ডিএমএ (ডিস্ট্রিক মিটার এরিয়া) সিস্টেমে ইলেকট্রিক ম্যাগনেটিক ফ্লো মিটার স্থাপন করা হয়েছে। যার বেশিরভাগ অকেজো হয়ে পড়েছে। ফলে ফ্লো-মিটারে ডেটা পাওয়া যায় না। সরেজমিন খালিশপুরের আলমনগর ৭-৫ ডিএমএতে গিয়ে ফ্লো মিটার যে অকেজো তার সত্যতা পাওয়া যায়। এ কারণে ডিএমএতে পানির হিসাব পাচ্ছে না কর্মকর্তারা। স্থাপিত লাইনে নন রেভিনিউ ওয়াটার দেখানো হচ্ছে শতকরা ২০ ভাগ। অথচ তা ১০ ভাগের কম থাকার কথা।

অন্যদিকে, বাড়ি-বাড়িতে ৪৫ হাজার সংযোগ দেওয়া হয়। সেজন্য ক্রয় করা হয় ৪৫ হাজার ওয়াটার মিটার। মাত্র পাঁচ বছরে বহু মিটার ঘোলা হয়ে গেছে।

এ ছাড়া ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের পানির লাইনের সঙ্গে সরাসরি ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্কের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে কোথাও লিকেজ হলে মেরামতের জন্য আশপাশের বাল্ব বন্ধ করেও পানি বন্ধ করা যাচ্ছে না। ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টই বন্ধ করতে হয়। ফলে ওই সময় শহরে পানি সরবরাহ ব্যাহত হয়।

এ প্রসঙ্গে খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, মধুমতীতে পানি কমেছে, বেড়েছে লবণাক্ততা। ফলে মধুমতী থেকে পানির প্রবাহ তৈরি করে খুলনা শহরে সঠিক সরবরাহ নিশ্চিত করা অপরিকল্পিত ও অবাস্তব কাজ হয়েছে।

ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্কের নকশা ও স্থাপন সঙ্গে জড়িত ও তদারককারী ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।

তবে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্বে) মো. হুসাইন শওকত বলেন, প্রতিটি জোনে গড়ে ২০ থেকে ২৫টি করে ঘোলা মিটার পাওয়া গেছে। সেগুলো ওয়াসা বিনা খরচে পরিবর্তন করছে। তিনি বলেন, নকশা অনুযায়ী ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হয়েছে। তখন নকশায় যা ছিল সেটিই করা হয়েছে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত