সরকারের মালিকানাধীন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোকে সরকারের শেয়ার কমিয়ে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণসহ দেশের পুঁজিবাজার পরিস্থিতি উন্নয়নে সংশ্লিষ্টদের পাঁচ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল রবিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এসব নির্দেশনা দেন বলে জানান তার উপ প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
অন্য নির্দেশনাগুলো হলো বেসরকারি খাতের দেশীয় বড় কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকার্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করতে প্রণোদনাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ; স্বার্থান্বেষী মহলের কারসাজি রুখতে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এসে তিন মাসের মধ্যে পুঁজিবাজার সংস্কার করা; পুঁজিবাজারে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ; এবং বড় ধরনের ঋণ প্রয়োজন এমন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা কমিয়ে পুঁজিবাজার থেক বন্ড ও ইক্যুইটির মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহে আগ্রহী করে তোলার ব্যবস্থা গ্রহণ।
লুটপাটের মাধ্যমে শেয়ারবাজারকে বেসামাল করে দেওয়ার পেছনে গত কয়েক দশক ধরে যারা জড়িত তাদের বিচারের আওতায় না আনতে পারলে মানুষের আস্থা ফিরবে না জানিয়ে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘শেয়ারবাজারকে যে অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা অকল্পনীয়। আমাদের অবশ্যই এই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘শেয়ারবাজারের প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে এমন অবস্থায় ফেরাতে হবে যেন মানুষ আস্থা ফিরে পায়, এটা যেন লুটেরাদের আড্ডাখানায় পরিণত না হয়।’
এলডিসি থেকে উত্তরণে দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপের আহ্বান : সময়মতো বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নিয়ে যেতে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল রবিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন কমিটির উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে তিনি এই আহ্বান জানান। বৈঠকে এলডিসি উত্তরণের জন্য নির্ধারিত প্রধান লক্ষ্যগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়।
এলডিসি উত্তরণ কার্যক্রমের সমন্বয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা পুরোটাই সমন্বয়ের ব্যাপার। আমরা ইতিমধ্যে বিনিয়োগকারী, অর্থদাতা এবং উন্নয়ন সহযোগীদের সমর্থন পেয়েছি। এখন আমাদের বিদ্যমান উদ্যোগগুলোকে ভিত্তি করে একত্রে দ্রুত ও সুনির্দিষ্টভাবে অগ্রসর হতে হবে।’
প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতির ওপর গুরুত্বারোপ করে অধ্যাপক ইউনূস সব অংশীজনকে একত্রে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন একটি দল দরকার, যারা অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর মতো কাজ করবে। যখন সাইরেন বাজবে, তারা দ্রুত, দক্ষভাবে এবং বিলম্ব না করে প্রতিক্রিয়া জানাবে এবং সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত থাকবেন।’
সরকার প্রধান আরও আশ্বাস দেন যে, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের (সিএও) এই প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।
ড. ইউনূস বলেন, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উত্তরণ-সম্পর্কিত সব উদ্যোগের বাস্তবায়ন ব্যক্তিগতভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
বৈঠকে এলডিসি উত্তরণ কমিটি পাঁচটি অগ্রাধিকারমূলক পদক্ষেপ চিহ্নিত করে, যেগুলো জরুরি ভিত্তিতে সম্পন্ন করতে হবে।
এই পদক্ষেপগুলো হলো : সব সংশ্লিষ্ট সংস্থার অংশগ্রহণে ‘ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো’ এর পূর্ণ কার্যকরকরণ, যাতে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার কার্যক্রম একত্রিত হয়; একটি সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে ‘জাতীয় শুল্ক নীতি ২০২৩’-এর বাস্তবায়ন; অবকাঠামো প্রকল্পসহ ‘জাতীয় লজিস্টিকস নীতি ২০২৪’-এর মূল কার্যক্রম বাস্তবায়ন, যা অর্থনীতির গতি বাড়াবে; সাভার ট্যানারি পল্লীতে ইটিপি প্ল্যান্ট (এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) স্থাপন ও কার্যকর পরিচালনা, যা পরিবেশ সুরক্ষায় ভূমিকা রাখবে এবং মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় সক্রিয় ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই) পার্কের কার্যক্রম পূরোদমে শুরু করা, যা দেশের ওষুধশিল্পের সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এই পদক্ষেপগুলো কেবল রুটিন কাজ নয়, এগুলো বাংলাদেশের উত্তরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা একটি শক্তিশালী ও ন্যায্য অর্থনীতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীসহ এলডিসি উত্তরণ কমিটির সদস্য ও উপদেষ্টারা উপস্থিত ছিলেন।