কক্সবাজারের টেকনাফে মাদক কারবারিদের সঙ্গে কোস্টগার্ডের গোলাগুলিতে নিহত একজনের মরদেহ গুম করার অভিযোগ উঠেছে।
নিহতের পরিবারের দাবি, নিহত ব্যক্তির মরদেহ কোস্টগার্ডের সদস্যদের নিয়ে যেতে দেখেছেন তারা। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার (২০ মে) দুপুরে টেকনাফে মানববন্ধন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিসহ সাধারণ জনতা।
সোমবার ভোর সাড়ে চারটার দিকে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের তুলাতুলী ও মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন এলাকায় মাদক কারবারিদের সঙ্গে কোস্টগার্ড অভিযানে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন।
সোমবার বাংলাদেশ কোস্টগার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, গোলাগুলির ঘটনায় একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৩০ হাজার ইয়াবা, একটি বিদেশি পিস্তল, ৪ রাউন্ড তাজাগুলিসহ তিনজন মাদক পাচারকারিকে আটক করা হয়।
আটককৃতরা হলেন- উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দার মো. ইলিয়াস (৩০), নুর মোহাম্মদ (৬১) ও গুলিবিদ্ধ আব্দুল শক্কুর (৪০)। এতে গুলিবিদ্ধ শুক্কুরকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ বলেন, সাগরপথে মিয়ানমার থেকে মাদকের একটি বড় চালান উপকূলীয় এলাকা দিয়ে প্রবেশ করবে টেকনাফে। এমন সংবাদে সোমবার ভোরে শাহপরীর দ্বীপ কোস্টগার্ডের একটি বিশেষ দল টেকনাফ সদর ইউনিয়নের তুলাতলী নৌঘাট সংলগ্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। সাগরে ৫৮দিনের মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা চলছে। এরমধ্যে একটি নৌকাকে দেখতে পায় কোস্টগার্ড সদস্যরা। ওই ইঞ্জিন চালিত কাঠের বোটকে সন্দেহজনক মনে হলে থামার সংকেত দিলে পাচারকারীরা কোস্টগার্ডের উপস্থিতি টের পেয়ে বোটেরগতি বাড়িয়ে গুলি ছুঁড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এসময় কোস্টগার্ড সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায় এবং একজন পাচারকারী গুলিবিদ্ধ হয়। কোস্টগার্ড সদস্যরা ঘণ্টাব্যাপী বোটটিকে ধাওয়া করে জব্দ করতে সক্ষম হয়। এ সময় ৪ জন মাদকপাচারকারী সাগরে লাফ দিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় তাদেরকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
এই ঘটনায় কোন নিহতের তথ্য জানানো হয়নি। কিন্তু টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নতুন পল্লান পাড়ার আবদুল জলিলের ছেলে মোহাম্মদ তাহের (৪০) নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন তাহেরের বড় ভাই মোহাম্মদ কাসিম।
তিনি জানান, ট্রলারটি মালিক এবং মাঝি তারই ভাই তাহের। ঘটনার দিন তাহেরের নেতৃত্বে সাগরে মাছ ধরতে যায়। রাত ২ টার দিকে ট্রলারের একজন কোস্টগার্ড সদস্যরা ট্রলারটি ধাওয়া করে আটকের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান কাসিম সহ আরো কয়েকজন। ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখতে পায় ওখানে গোলাগুলি হচ্ছে। এক পর্যায়ে গোলাগুলি থেমে যায়। ভোর ৪ টার দিকে মরদেহ বহনের একটি ব্যাগে তাহেরের মরদেহ গাড়ি নিয়ে শাহপরীর দ্বীপের দিকে নিয়ে যেতে দেখেন কাসিম।
কাসিম অভিযোগ করে বলেন, আমার ভাই ট্রলারটি মাঝি। ঘটনাস্থলে গুলিতে নিহত হয়েছেন। কোস্টগার্ড সদস্যরা মরদেহটি নিয়ে গুম করে রেখেছেন। বিভিন্নভাবে কোস্টগার্ড ও পুলিশের সাথে যোগাযোগ করা হলেও মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত মরদেহটি ফেরত দেয়নি তারা। আমি সহ প্রত্যক্ষদর্শী সকলেই মরদেহ নিয়ে যেতে দেখেছি। ঘটনায় গুলিবিদ্ধ সহ আটক ৩ জনও বিষয়টি জানেন।
তিনি আরো বলেন, আটক ইলিয়াস আমাদের আপন ভাই। ইতিমধ্যে আমি তার সাথেও কথা বলেছি। তাহের ঘটনাস্থলে মারা যাওয়ার পর কাস্টগার্ড সদস্যরা নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন।
তিনি ভাইয়ের মরদেহ গুম করে না রেখে ফেরতের দাবি জানান।
এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদে কোস্টগার্ডের বহির্ভূত হত্যার বিচার এবং দ্রুত মরদেহ স্বজনদের ফেরত দেয়ার দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রায় দেড় ঘণ্টা ব্যাপী বাস স্টেশন এলাকার সড়ক বন্ধ করে দিয়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হওয়ায় উভয় পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়েন।
এ সময় বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রতিনিধি মোরশেদ আলম, ইয়াসিন আরাফাত, জুবায়ের আজিজ, সাইফুল ইকবাল , মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, আতাউল্লাহ কাদেরী, নিহতের পরিবারের গুলবাহার বেগম, বড় ভাই মোঃ কাসিম ও মেয়ে আছিয়া বেগম।
বক্তারা বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিহতের লাশ ফেরত চেয়েছেন । পাশাপাশি বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছেন এবং অন্যতায় টেকনাফ অচল করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মঙ্গলবার বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটের দিকে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ জানান, এ ঘটনায় কোন নিহতের ঘটনা হয়নি। বিষয়টি আরও যাচাই বাছাই করছে কোস্টগার্ড। বিষয়টি নিয়ে কোস্টগার্ডের বিব্রত।