বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

১৭ কোটির ব্রিজের নিচে ৬ কোটির স্লুইসগেট

আপডেট : ২৩ জুন ২০২৫, ০৭:৪৬ এএম

তেইশ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা শিপইয়ার্ড সড়কের লবণচরা পুরাতনস্লুইসগেট ভেঙে ঠিক সেখানেই বাস্তবায়ন হচ্ছে পৃথক প্রকল্প। খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৮ মিটার দৈর্ঘের গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করছে। নির্মাণাধীন ওই ব্রিজের নিচেই ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে স্লুইসগেট নির্মাণ করছে খুলনা সিটি করপোরেশন। দুই দপ্তরের সমন্বয়হীনতার কারণেই এক জায়গাতেই দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এতে অপচয় হচ্ছে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ।

অন্যদিকে, দুই বছর মেয়াদি শিপইয়ার্ড রোড প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০১৫ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দফায় দফায় সময় বেড়েছে ১২ বছর। আর ৯৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫৪ কোটি টাকায়। তবুও শেষ হয়নি কাজ। কাজের এ দীর্ঘসূত্রতায় বেহাল সড়কে ভুক্তভোগীদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি।

কেডিএ সূত্রে জানা গেছে, খুলনার শিপইয়ার্ড রোড প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০১৩ সালের জুলাইয়ে একনেকের অনুমোদন পায়। ৯৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে দুই বছর মেয়াদি প্রকল্পটি ২০১৫ সালের জুনে সম্পন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজই শুরু করতে পারেনি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা কেডিএ। ফলে প্রথম দফায় এক বছর এবং দ্বিতীয় দফায় দুই বছর সময় বাড়িয়ে ২০১৮ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। সেই লক্ষ্যও পূরণ না হওয়ায় পরে নতুন করে তৃতীয় দফায় একবছর, চতুর্থবার প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে তিনবছর, পঞ্চম দফায় দুইবছর, ষষ্ঠ ধাপে ছয় মাস, সপ্তম দফায় ছয় মাস মেয়াদ বাড়ানো হয়। এ মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি জুনে। তবে সপ্তম মেয়াদে কাজের ভৌত অগ্রগতি শতকরা ৬৫ ভাগ। তাই বাকি কাজ সম্পন্নে অষ্টম ধাপে ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ দুই বছরের প্রকল্পের মেয়াদ গিয়ে ঠেকেছে ১২ বছরে বা একযুগে।

তবে মেয়াদের পাশাপাশি প্রকল্পটির ব্যয়ও বেড়েছে দফায় দফায়। প্রথমবার ২৮ কোটি টাকা বাড়ানো হলেও দ্বিতীয়বারে এক লাফে ১৩২ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়। এতে ৯৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়ায় ২৫৯ কোটি টাকায়। পরে অবশ্য ব্যয় কিছুটা কমালে তা এসে দাঁড়ায় ২৫৪ কোটি টাকায়। এরমধ্যে জমি অধিগ্রহণ ব্যয় একশত ১১ কোটি টাকা। আর অবকাঠামো নির্মাণে বাকি ১৪৩ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, ১৪৩ কোটি টাকার অবকাঠামো কাজের মধ্যে ৬৫ ভাগ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এ বাবদ তারা ৫৭ ভাগ টাকা তুলেছেন। বাকি ৩৫ ভাগ কাজের আওতায় সড়কে বেইজ টাইপ-১ (পাথরের স্তর), এসফল্ট (কার্পেটিং), ব্রিজ, ডিভাইডার ও স্ট্রিট লাইট স্থাপন করা হবে। এখন ব্রিজ ও ডিভাইডার নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির আওতায় লবণচরা পুরাতন স্লুইসগেট ভেঙে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪৮ মিটার দৈর্ঘের গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে যার ৬০ ভাগ শেষ হয়েছে। তবে নির্মাণাধীন এই ব্রিজের ঠিক গা ঘেঁষে নিচে ৫ কোটি ৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে স্লুইসগেট নির্মাণ করছে সিটি করপোরেশন। যার প্রায় ৯৫ ভাগ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে খুলনার নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার দেশ রূপান্তরকে জানান, পুরাতন স্লুইসগেটের স্থলে ব্রিজ অথবা স্লুইসগেট যে কোনো একটির প্রয়োজন। তবে জলাবদ্ধতা নিষ্কাশনের স্বার্থে নতুন স্লুইসগেট নির্মাণ অগ্রাধিকার পাবে। কিন্তু দুটি সংস্থার সমন্বয়হীনতায় দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নে বিপুল অঙ্কের অর্থের অপচয় হচ্ছে।

জনশ্রুতি আছে, যত প্রকল্প তত কমিশন। সঙ্গত কারণে দপ্তরগুলোর প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে অসৎ উদ্দেশ্য কাজ করে। এটিও তেমন একটি নজির দেখা গেল। একই জায়গায় অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নেওয়ার কারণে জনগণ ও রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় হচ্ছে। বাস্তবায়নেও দীর্ঘসূত্রতা দেখা দিয়েছে। ফলে মানুষ সঠিক সুফলটা পাচ্ছে না। আমাদের স্বল্প সম্পদের দেশ। স্বল্প সম্পদ উত্তম ব্যবহারের জন্য দপ্তরগুলোর সমন্বয় দরকার। সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মানুষ সঠিক সময়ে সঠিক সুফল পাবে, জনভোগান্তি কমবে এবং অর্থেরও অপচয় রোধ হবে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আতাউর রহমান খান লিমিটেড অ্যান্ড মাহাবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড-এর প্রকল্প ম্যানেজার মো. আশরাফ আলী বলেন, একনেকে ২০১৩ সালে অনুমোদন হলেও ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৯ মাস মেয়াদ  দিয়ে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ওয়াসা পাইপলাইন স্থাপনসহ নানাবিধ কারণে ধীরগতি দেখা দেয়। তবে সবশেষ বর্ধিত ডিসেম্বর মেয়াদে আশা করা যায় কাজ শেষ হবে। ব্রিজ নির্মাণ সম্পর্কে প্রকল্প ম্যানেজার বলেন, করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও কর্মকর্তারা ব্রিজ নির্মাণের জন্যই প্রস্তাব দিয়েছিলেন।  সে কারণেই প্রকল্পে ব্রিজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

তবে এ প্রসঙ্গে করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ মাসুদ করিম বলেন, লবণচরা সøুইসগেটটি ভাঙাচোরা অবস্থা। করপোরেশনের সবসময়ই মেরামত করে। জলাবদ্ধতা নিরসনে  সেখানে নতুন করে নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। সেকারণে ২০১৮ সালে করপোরেশন সøুইসগেট নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণ করে। এখন সেটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। কিন্তু কেডিএর ব্রিজ নির্মাণ করতে হলে করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তারা সেটি করেনি।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত