
করোনায় ভয়াবহতা বাড়ছে। ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ও মৃত্যু ঘটছে। এটা শুধু বাংলাদেশে নয় ইউরোপ, ব্রাজিল, ভারতেও বেড়েছে মৃত্যু। ভারতে ও ব্রাজিলে মৃত্যু গত বছরের রেকর্ড অতিক্রম করছে। বাংলাদেশে করোনার তিনটি ভ্যারিয়েন্টের কথা বলা হচ্ছে। যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিলিয়ান ভ্যারিয়েন্ট। তবে শনাক্তের ৮১ শতাংশই হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট। এর সংক্রমণে দ্রুত রোগীর ফুসফুস আক্রান্ত হয়, প্রচুর অক্সিজেন প্রয়োজন হয়, হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফিরতে সময় লাগছে বেশি। ফলে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এক দিনে এত মৃত্যু বাংলাদেশেও গত বছর ঘটেনি। গত বছরের তুলনায় সংক্রমণ, শনাক্ত ও মৃত্যু তিনটাই বেশি করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে। এ পর্যন্ত ১০ হাজারের মতো মৃত্যুবরণ করলেও অনেকেই বলছেন মৃত্যুর সংখ্যা হয়তো আরও বেশি। নিঃসন্দেহে পরিস্থিতি গত বছরের তুলনায় ভীতিকর। কিন্তু মৃত্যু, শনাক্ত বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারি লকডাউন ঘোষণা কেন যেন কোনো প্রভাব ফেলছে না।
ঢাকা মহানগর হাসপাতালগুলোয় ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই অবস্থা। এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে রোগী নিয়ে ছুটছেন স্বজনরা। তাদের উদ্বেগ, আশঙ্কা, অসহায়ত্ব যে কেমন তা ভুক্তভোগীরা ছাড়া আর কেউ বুঝবেন না। শ্বাসকষ্ট হলে সবচেয়ে আগে প্রয়োজন অক্সিজেন। আর তা নিরবচ্ছিন্নভাবে সরবরাহ করতে গেলে প্রয়োজন হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা। সেটা পাওয়া যাবে কোথায় বা কোন হাসপাতালে? হাসপাতালের বেড খালি পাওয়া যাবে তো? আর গুরুতর আক্রান্ত রোগীর জন্য আইসিইউ খালি পাওয়া যাবে কি? প্রায় দুই কোটি জনসংখ্যার ঢাকা শহরে সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ ১০৪টি আর বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় ৩৭৬টি। আইসিইউতে প্রতিদিন সর্বনিম্ন খরচ ৩০ হাজার টাকা আর কোনো কোনো হাসপাতালে তা দুই লাখ টাকার বেশি। টাকা যায় যাক! প্রিয়জন বাঁচুক এই ভাবনায় অনেকে আইসিইউর আশায় হাসপাতালে ভিড় করছেন। ফলে ভর্তির অপেক্ষায় থাকা সংকটাপন্ন রোগীর স্বজনরা প্রতি মুহূর্তে কামনা করতে থাকে যারা ভর্তি হয়ে আছে তাদের মৃত্যু। কারণ মৃত্যু ছাড়া আইসিইউ বেড খালি হওয়ার উপায় নেই। করোনা মহামারী মানুষকে কতটা অসহায় আর অমানবিক করে ফেলছে! মুখে না বললেও মনে মনে ভাবতে থাকে, একটা বেড দরকার। নিজের স্বজন ছাড়া বাকিরা মরে যাক!
২০২০ সালের মার্চের ৮ তারিখে প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার পর এক বছর এক মাস পার হয়েছে। করোনা স্বাস্থ্যব্যবস্থার বেহাল দশা আর স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বেফাঁস কথা জনগণের সামনে উন্মোচন করেছিল। এরপর করোনাকালে বাজেট প্রণীত হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ জনগণের প্রত্যাশা কতটা পূরণ হয়েছে সে বাজেটে সেটা ভিন্ন আলোচনা, তা করলে হয়তো দায়িত্বপ্রাপ্তরা বিরক্ত হবেন। কিন্তু স্বাস্থ্য খাতে বিশেষত করোনা মোকাবিলায় সীমিত বাজেটের উদ্যোগগুলো কেমন নেওয়া দরকার তা নিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অন্তত বাস্তবায়িত হবে সে প্রত্যাশা নিশ্চয়ই অমূলক ছিল না। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে সবাই বলেছেন, মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউটা প্রথমটার চেয়ে মারাত্মক হয়ে থাকে। কে বা শোনে কার কথা! প্রথমবার ছিল দম্ভ। আমরা করোনার চেয়ে শক্তিশালী। আর দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রাক্কালে দেখা গেল আত্মতৃপ্তির ঢেকুর। আমরা করোনা জয় করতে পেরেছি, বাকি সবকিছুই জয় করতে পারব। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রথম ধাক্কাতেই আতঙ্কের শিহরণ জেগেছে মানুষের মনে। তাই কোনো আশ্বাসে মানুষ আর বিশ্বাস করতে পারছে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গত বছর জানিয়েছিল, দেশে সরকারি হাসপাতাল ৬৫৪টি, এখানে শয্যাসংখ্যা ৫১৩১৬টি। বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ৫০৫৫টি, যেখানে শয্যাসংখ্যা ৯০৫৭৮টি। সব মিলিয়ে প্রতি ১১৫৯ জন মানুষের জন্য ১টি শয্যা। শতকরা একজনের জন্য হাসপাতাল শয্যা প্রয়োজন হলেও হাসপাতাল শয্যা ১০ গুণ বাড়াতে হবে। আইসিইউর সংখ্যা বলা হয়েছিল ১১৬৯টি। এর মধ্যে সরকারি পর্যায়ে ৪৩২ এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৭৩৭। গত এক বছরে এসবের কতটুকু বৃদ্ধি হয়েছে তা জানার খুব ইচ্ছা হয়। যে তথ্য আতঙ্কের সঙ্গে ক্ষোভ জাগায় তা হলো, ৩৫০টি আইসিইউ কিনে আনা হয়েছে, সেগুলো নাকি প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের অভাবে এখনো স্থাপন করা হয় নাই। কথায় কথায় উন্নয়নের বিবরণ শুনে এখন কী অব্যবস্থাপনার উন্নয়নের চিত্র দেখতে হবে?
প্রথম ঢেউ বা ধাক্কার শিক্ষাটা কী ছিল? তা কি কর্তা ব্যক্তিদের মনে আছে? প্রথম ধাক্কায় যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের ৭৫ শতাংশ ছিলেন পুরুষ। বাকিরা ছিলেন নারী। বয়স বিবেচনায় ৬০ বছরের বেশি বয়সী ৫৬ শতাংশ, ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সী ২৫ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ১১ শতাংশ মৃত্যুবরণ করেছেন সে কথা পরিসংখ্যান বলছে। মৃত্যুর সংখ্যার শীর্ষে ছিল ঢাকা, প্রায় ৫৭ শতাংশ। করোনার উচ্চঝুঁকিতে ছিল ৩১টি জেলা। গত এক বছরে করোনায় কাজ হারিয়েছে, আয় কমেছে সাধারণ মানুষের। কাজ জোগাড় করা এবং বেঁচে থাকা দুটোই কঠিন হয়ে পড়েছে শ্রমজীবীদের পক্ষে। বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা এবং বিবিএস পর্যন্ত জরিপ করে দেখিয়েছে, কীভাবে মানুষের জীবনে কষ্ট বেড়েছে করোনার আঘাতে। প্রায় ১ কোটি ৫৬ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছিল এবং ৯৫ শতাংশ শ্রমজীবী মানুষের অন্তত ২০ শতাংশ আয় কমে গিয়েছিল। কিন্তু এসব তো তথ্য। তথ্যের কি শক্তি থাকে, যদি তা কেউ বিবেচনায় না নেয়? বিশেষ করে, যারা ক্ষমতায় আছেন তারা। যে যাই বলুক না কেন, ক্ষমতায় যারা থাকেন কিছু করার ক্ষমতা তো তাদেরই থাকে। কারণ ট্যাক্সের টাকা বা রাজস্ব আয় সব তো তাদের হাতে, প্রশাসন তাদের নিয়ন্ত্রণে। সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ যত পরামর্শই দিন না কেন বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা তো ক্ষমতাসীনদের হাতেই।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সম্প্রতি রাজধানীর মহাখালীতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মার্কেট হাসপাতালের নতুন ২০০টি করোনা আইসিইউ বেড ও ১০০০টি আইসোলেশন বেডের প্রস্তুতকরণ ও কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন শেষে বলেছেন, ‘এ মুহূর্তে সরকারের লকডাউন ব্যবস্থা জরুরি ছিল, তাই সরকার দিয়েছে। যখন লকডাউন তুলে নেওয়ার প্রয়োজন হবে, সরকার সেই সিদ্ধান্ত নেবে। এখন এসব সরকারি নির্দেশনা মেনে না চললে ভবিষ্যতে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু উভয়ই নিয়ন্ত্রণহীন হতে পারে।’ এই কথার সঙ্গে দ্বিমত করার কি কিছু আছে? কিন্তু যখন সিদ্ধান্তগুলো পালটে যায়, তখন হতবাক হয়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছু করার আছে কি? ঢাকাসহ আটটি মেট্রোপলিটন শহরে গণপরিবহন চলবে, মার্কেট খোলা থাকবে বলে জানানো হয়েছে। এ যেন এক বেদনা জাগানো রসিকতা! কঠোর সিদ্ধান্ত আর সীমিত বাস্তবায়নের ট্র্যাজিক নাটকের মঞ্চায়ন চলছে।
করোনার ইনকুবেশন পিরিয়ড ধরা হয় ১৪ দিন, সে কারণেই ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন কথা বলা হয়। তাহলে সাত দিনের লকডাউন দেওয়া হলো কোন বিবেচনায়? এখানেই সিদ্ধান্তহীনতার শেষ নয়, একবার বলা হচ্ছে লকডাউন কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে আবার দুদিন পরেই নগরে গণপরিবহন চলার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। অফিস-আদালত চলবে, কারখানা চলবে, ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা চলবে, বইমেলা চলবে, মার্কেট খুলবে। ঢাকাকে যদি করোনার সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত এলাকা ধরা হয় তাহলে সাধারণ ছুটি বা লকডাউনের সঙ্গে সঙ্গে যে মানুষ ছুটল গ্রামের দিকে তারা কি সংক্রমণের বিস্তার ঘটিয়ে দিতে সহায়তা করল না? এর ফলে কেন্দ্র থেকে প্রান্তে করোনা ছড়ানোর আশঙ্কা কি উড়িয়ে দেওয়া যাবে? জনগণ করোনাকে ভয় পাচ্ছে না, লকডাউন মানছে না, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করছে, দোকানপাট খুলতে চাইছে, এসব কথা বলে তাদের দায়ী করা যাবে, কিন্তু তাদের ওপর দায় চাপিয়ে করোনা সংক্রমণ ঠেকানো যাবে কি? করোনার হাত থেকে সুরক্ষার একমাত্র উপায় বলে কিছু এখনো সুনির্দিষ্ট করা যায়নি কিন্তু প্রধান উপায় বলে মানুষের সংস্পর্শ এড়ানোর কথা সব চিকিৎসা বিজ্ঞানী বলছেন। এ ক্ষেত্রে সবার সমন্বিত সুরক্ষাই ব্যক্তিকে সুরক্ষিত করতে পারে। তাই জীবিকার চাপে যেন শ্রমজীবী মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিতে না হয় সে ব্যাপারটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। করোনার চেয়ে পেটের ক্ষুধা আর মুনাফার লালসা দুটোরই ক্ষমতা বেশি। গরিব মানুষ লকডাউন মানবে না ক্ষুধার জ্বালায়। মালিকরা কারখানা চালু রাখবেন, ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে থাকবেন আর গরিবকে ধমক দিয়ে ঘরে থাকতে বললে কোনোভাবেই সাধারণ মানুষকে ঘরে রাখা যাবে না।
লেখক রাজনৈতিক সংগঠক ও কলামনিস্ট
দীর্ঘ ৮ বছর বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থেকেও নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের কৈজুরি উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখার সহকারী শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। দেশ রূপান্তরে রবিবার প্রকাশিত এমন সংবাদকে উদ্বেগজনক বললেও কম বলা হয়। শিক্ষকতার মতো মহান পেশার সঙ্গে জড়িত এমন ঘটনা নৈতিক স্খলনের পাশাপাশি সমাজে ক্ষমতাবানদের অনিয়ম ও দম্ভের বাস্তব চিত্রকেই নির্দেশ করছে। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, অভিযুক্ত শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পরিষদের সভাপতি, কৈজুরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও শাহজাদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামের ছোট ভাই। আর এ সুবাদেই জাহাঙ্গীর হোসেন স্কুলে উপস্থিত না থেকেও নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলে আসছেন।
সংবাদ সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন রাজধানী ঢাকার মিরপুর-১ নম্বরের শাহআলীবাগ কলওয়ালাপাড়ায় গার্মেন্টস সুতার রঙের কারখানার ব্যবসা করেন। কাগজে-কলমে বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় হাজিরা ঠিক থাকলেও তিনি গত আট বছরে কোনোদিনই স্কুলে উপস্থিত ছিলেন না। ক্লাস রুটিনেও তার নাম নেই। এমন পরিস্থিতিতে এলাকাবাসী জাহাঙ্গীর হোসেনের ‘অনিয়ম-দুর্নীতির’ বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও দুদকসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. শামসুজ্জোহা, উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুদ হোসেন ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শাহাদাৎ হোসেন কৈজুরি উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজে গিয়ে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত শুরু করেন।
শিক্ষকদের কর্মস্থলে অনুপস্থিতি নিয়ে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে শিক্ষামন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার কথা বলেছেন। কিন্তু এ পর্যন্ত কয়জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে কিছু জানা যায় না। শিক্ষকদের কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার প্রথম দায় শিক্ষকের, যিনি শ্রেণিকক্ষে অনুপস্থিত থেকে পেশাগত ওয়াদার ব্যত্যয় ঘটিয়ে চলেছেন। এরপরে দ্বিতীয় দায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের। তারপরে সরকার তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। তারা শিক্ষা প্রশাসনকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির আওতায় আনতে পারেননি। ঊর্ধ্বতনরা যদি নিয়মনীতি মেনে চলেন, অধস্তনদের সেটি মানতে বাধ্য করতে পারেন। আর সেখানে ঘাপলা থাকলে তার জের গিয়ে পড়বে তৃণমূল পর্যন্ত। সিরাজগঞ্জের কৈজুরি উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজে যেটি ঘটেছে, সেটি তারই পুনরাবৃত্তি। কৈজুরি উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ তার আপন বড় ভাই আব্দুল খালেক আর সভাপতি সেজ ভাই সাইফুল ইসলাম। এছাড়া তার মেজ ভাই আব্দুল মালেক একই প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক। ফলে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি তাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ঢাকায় অবস্থান করে তার ব্যবসা পরিচালনা করেন বলে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে।
শিক্ষকের অনুপস্থিতির কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি দেশের আর্থিক লোকসানও হচ্ছে। এইভাবে দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলন রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের নামান্তর। একইসঙ্গে সমাজে শিক্ষকদের প্রতি যে স্বাভাবিক নৈতিক শ্রদ্ধা ও ভক্তি প্রদর্শন করা হয় সে ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা আঘাত করবে বলেই মনে হয়। কৈজুরি এলাকার লোকজন ও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী অভিভাবকদের অভিযোগের ভিত্তিতে এখানকার অনিয়মের খবর প্রকাশ পায় । যেসব এলাকায় এমন অভিযোগ প্রকাশ না করে গোপন করা হয়, সেসব প্রতিষ্ঠানের অবস্থা এর চেয়ে খুব ভালো তা বলা যাবে না।
শিক্ষকদের কর্মস্থলে উপস্থিত থাকা নিশ্চিত করতে হলে তাদের বেতনভাতা উত্তোলনে কঠোরভাবে আইন ও বিধিমালা মেনে চলতে হবে; কোনো ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে অধিদপ্তরের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কঠোর মনিটরিং ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি অভিযুক্ত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার করলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, আগাম বন্যা ও সিডর, আইলা, আম্পান, বুলবুলের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখন বাংলাদেশের মানুষের নিত্যসঙ্গী। বিশেষ করে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি খাত। শত প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে এ দেশের কৃষক জমিতে ফসল ফলায়। স্বপ্ন দেখে বেঁচে থাকার। অথচ মুহূর্তেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে সবকিছু সর্বস্বান্ত হয়ে যায়। গত ৪ এপ্রিল রাতে ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে গরম ‘লু’ হাওয়ায় গোপালগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলায় হাজার হাজার হেক্টর জমির বোরো ধানের শীষ নষ্ট হয়ে সাদা হয়ে গেছে। গোপালগঞ্জ কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর গোপালগঞ্জে ৭৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর চাষ হয়েছে। এসব জমিতে এখন ফ্লাওয়ারিং স্টেজ চলছে। অর্থাৎ ধানের শীষে দুধ এসেছে। মাত্র আধা ঘণ্টার ‘লু’ হাওয়ায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়া ও কাশিয়ানী উপজেলার শত শত হেক্টর জমির বোরো ধানের শীষ সাদা হয়ে গেছে। একই সময়ে কিশোরগঞ্জ জেলায়ও ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে গরম হাওয়ায় হাওরের ধানের শীষও সাদা হয়েছে। অর্থাৎ এসব শীষে কোনো চাল নেই। সব পুড়ে গেছে। ধান তো পুড়েনি, পুড়েছে কৃষকের কপাল।
মূলত জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সময়ে-অসময়ে নানা রূপে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে। যে আঘাতে খান খান হয়ে যায় কৃষকের স্বপ্ন। অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়ে ভিটেমাটি ছেড়ে নগর-মহানগরে বস্তিবাসী হয়ে যান। এভাবেই গোটা দুনিয়ার উন্নয়নশীল দেশের লাখ লাখ মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছেন। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আইলার আঘাতে ল-ভ- হয়ে যাওয়া নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ খুলনার বস্তিতে আশ্রয় নিয়ে পেশা পরিবর্তন করে কোনো রকমে বেঁচে আছেন। শুধু খুলনায় নয়, জলবায়ু উদ্বাস্তুরা এখন গোটা দেশের নগর-মহানগরে বস্তিবাসী হয়েই মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
বাস্তবেই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কৃষিনির্ভর অর্থনীতির দেশ হিসেবে আমাদের ক্ষতির পরিমাণ প্রতিনিয়তই বাড়ছে। মূলত বৈশ্বিক উষ্ণতার দরুণ প্রকৃতি রুক্ষ হয়ে উঠছে। ফলে খরা, অতিবৃষ্টি, আগাম বন্যা, ঝড়ের প্রকোপের কারণে কৃষি চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে উফশী ধানের ফলন কমে যাচ্ছে এবং গমের ক্ষেতে পোকার আক্রমণও বাড়ছে। এমনকি অতিরিক্ত তাপ ও আর্দ্রতার কারণে গাছের ছত্রাক রোগ বেড়ে যাচ্ছে। আবার বোরো মৌসুমে রাতে যদি ঠান্ডা ও কুয়াশা পড়ে ধানের পাতায় পানি জমে এবং দিনে গরম পড়ে, তাহলে ব্লাইট রোগের আক্রমণ বেড়ে যায়। যদিও বিগত ২৫ বছরের আবহাওয়ার উপাত্ত থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের গড় উষ্ণতা তেমন বাড়েনি। তবে আশঙ্কা করা হয়, আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ গড় তাপমাত্রা ১.০ ডিগ্রি, ২০৫০ সাল নাগাদ ১.৪ ডিগ্রি ও ২১০০ সালে ২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যেতে পারে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তাপমাত্রা কম-বেশি হওয়ায় ফলনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। যেমন কৃষিতে খরা একটি বহুল প্রচলিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি বছরই ৩০ থেকে ৪০ লাখ হেক্টর জমি বিভিন্ন মাত্রায় আক্রান্ত হয়। ফলে গাছের বৃদ্ধিতে বাধার সৃষ্টি হয় এবং বৃষ্টিপাতের অভাবে মাটিতে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হয়, যা গাছের বেড়ে ওঠার পথে বড় অন্তরায় সৃষ্টি করে। অর্থাৎ আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে কৃষকদের নানা প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে চাষাবাদ করতে হয়। শুধু তাই নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের দরুন পানি স্তরে পানির শূন্যতা, লবণাক্ততাও বেড়ে যাচ্ছে।
বিশেষ করে, লোনা পানির অনুপ্রবেশ বাংলাদেশের জন্য একটি মারাত্মক সমস্যা। ১৯৭৩ সালে ১৫ লাখ হেক্টর জমি মৃদু লবণাক্ততায় আক্রান্ত হলেও ১৯৯৭ সালে এসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২৫ লাখ হেক্টরে। বর্তমানে এর পরিমাণ ৩০ লাখ হেক্টরেরও বেশি। উজান থেকে স্বাভাবিক পানির প্রবাহে বাধা, কম বৃষ্টিপাতের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ত জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা ভবিষ্যতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও পরিমিত বৃষ্টির অভাবে সমস্যা প্রকট হতে পারে। লবণাক্ততা কৃষি চাষাবাদের জন্য অনুকূল নয়। কারণ লবণাক্ত পানিতে কৃষি চাষাবাদ হয় না। যদিও বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞানীদের অভাবনীয় সফলতায় লবণাক্ত সহনীয় খাদ্যশস্যের জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। কিন্তু মিঠা পানির চাষাবাদ আর লবণাক্ত পানির চাষাবাদের মধ্যে যথেষ্ট ফারাক রয়েছে। শুধু লবণাক্ততাই নয়, জলবায়ু পরিবর্তন ও ভূ-উপরিস্থ পানির বদলে ভূ-গর্ভস্থ পানি অতিমাত্রায় ব্যবহার করায় ইতিমধ্যেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঝিনাইদহ জেলার ছয় উপজেলায় ভূ-গর্ভস্থ পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। সেখানকার বসবাসরত মানুষ এখন বেঁচে থাকার নিয়ামক বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকটে পড়েছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় লক্ষাধিক নলকূপ অকেজো হয়েছে। আবার দুর্ভোগেও পড়েছেন চাষিরা। পানির অভাবে জমিতে সেচ দিতে পারছেন না। অনেকেই ২০-২৫ ফুট পর্যন্ত মাটি খুঁড়ে গর্ত করে নিচে সাবমারসিবল পাম্প বসিয়ে কোনো রকমে সেচ দিচ্ছেন এবং খাবার পানি সংগ্রহ করছেন।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত নিয়ে অতিসম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন উপমহাদেশের দেশগুলোকে সবচেয়ে বেশি নাজুক অবস্থায় ফেলেছে। যদিও জলবায়ু পরিবর্তনে আমাদের কোনো ভূমিকা নেই, তারপরও আমরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তের সম্মুখীন। অভিযোজনের মাধ্যমে আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারলেও এই জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান ধারা বন্ধ করা না গেলে অভিযোজন প্রক্রিয়ায় দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা দেওয়া কঠিন হবে। তিনি বলেন, আমরা এমন একটি অঞ্চলে বসবাস করি, যা প্রাকৃতিক ভাবে দুর্যোগপূর্ণ। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত দেশগুলো যেমন ভূমিকম্প, ফ্লাউডবার্স, বরফ ধস, ভূমি ধস, ফ্লাশ বা হরকাবানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ, তেমনি বাংলাদেশের মতো সাগর উপকূলীয় অঞ্চলগুলো বারবার বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প, অতিবৃষ্টি বা খরার মতো দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছে।
বাস্তবতা হচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার এক বিশাল সংখ্যক মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। বিপুল সংখ্যক মানুষ এখনো অর্ধাহারে, অনাহারে প্রতি রাতে ঘুমাতে যায়। আমাদের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ যারা জীবন ধারণের ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা থেকে আজও বঞ্চিত। এ সংকট দিন দিন আরও প্রকট হচ্ছে। গত ১১ মার্চ নিরাপত্তা পরিষদের খাদ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক এক বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস বলেছেন, কভিড-১৯ মহামারী ও জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি বৃদ্ধি এবং ক্ষুধার কারণে বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ না নিলে লাখ লাখ মানুষ ক্ষুধা ও মৃত্যুর মুখে পড়বে। তিনি শঙ্কার কথা জানিয়ে বলেন, তিন ডজনের বেশি দেশের ৩০ মিলিয়ন লোক দুর্ভিক্ষ ঘোষণা থেকে ‘মাত্র এক পা দূরে রয়েছে।’
আসলে ওই বৈঠকে যেসব উন্নত দেশের প্রতিনিধিরা বলেছেন, মূলত বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য তারাই দায়ী। এমনকি উষ্ণায়ন কমানোর ক্ষেত্রে তাদের কোনো আন্তরিকতাই নেই। আর এর বিরূপ প্রভাবে আমাদের কৃষি ও অর্থনীতি দিন দিন মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে। এ অবস্থা থেকে আমাদের দেশের মানুষকে বাঁচাতে হলে নিজ উদ্যোগেই জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় নিজেদের তহবিল গঠন করেই পরিকল্পনা মাফিক কাজ করতে হবে, যা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প পথ আমাদের সামনে খোলা নেই।
লেখক : কৃষিবিষয়ক লেখক
আজ থেকে দু’বছর আগের কথা। দুলাভাইয়ের অনুপ্রেরণায় ১৩ শতক জমিতে ব্রয়লার মুরগির খামার গড়ে তুলেন চকপাঁচপাড়া গ্রামের একাদুল হক। চকপাঁচপাড়া ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার একটি বর্ধিষ্ণু গ্রাম। একাদুল হক এসএসসি পরীক্ষায় পাস করার পর আর পড়াশোনা করেনি। বাড়ির পাশে পতিত জমিতে সবজি ও ব্রয়লার মুরগি চাষে মনোনিবেশ করে। মাত্র ৮০ হাজার টাকা দিয়ে পুরাতন টিনের একটি ঘর কিনে তার মেঝে পাকা করে, একদিন বয়সের এক হাজার বাচ্চা, খাবার ও ভ্যাকসিন কিনে একাদুলের যাত্রা ব্রয়লার মুরগি পালনে। একাদুল গত এপ্রিল মাসে তার তের শতকের ক্ষুদ্র খামারে উৎপাদিত এক হাজার মুরগি বিক্রি করে ৪০ হাজার টাকা লাভ করে। শুধু একাদুল কেন? ওই গ্রামের মুজিবুর রহমান, বাহার উদ্দিন, আব্দুল জব্বার ও সানাউল্লাহসহ অনেক যুবক মুরগি পালন করে প্রতি মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় করছে। এই টাকায় কারও সংসার চলছে। ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগাড় হচ্ছে। এনজিওর ঋণের সাপ্তাহিক কিস্তি পরিশোধ হচ্ছে। বৃদ্ধ বাবা-মায়ের চিকিৎসার ওষুধ কেনা হচ্ছে। এই আয় থেকে সন্তানের প্রাইভেট পড়ার খরচও জোগাড় করছেন অনেক অভিভাবক।
গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে প্রাণিসম্পদ খুবই সম্ভাবনাময় খাত হলেও নিকট অতীতে খাতটির বিকাশে কখনই তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এক দশক আগেও উন্নয়ন কর্মকা-ের জন্য প্রাণিসম্পদ খাতে সামান্য বরাদ্দের বিষয় ছিল অকল্পনীয়। আজ থেকে কয়েক বছর আগেও কোরবানির গরুর চাহিদার জন্য নির্ভর করতে হতো পাশর্^বর্তী দেশের ওপর। ২০১৪ সালে ভারতের গরু রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে দুই বছরের মধ্যেই ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। এখন দেশে উৎপাদিত পশুতেই কোরবানির চাহিদা পূরণ হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে উৎপাদিত পশু দিয়ে কোরবানির চাহিদা পূরণ প্রাণিসম্পদ খাতের একটি বিশাল অর্জন ও সফলতার স্বাক্ষর। তবে এ খাতের উন্নয়নের আরও অনেক সুযোগ রয়েছে। যেমন দুধের চাহিদা পূরণে যদি সম্পূর্ণভাবে দেশীয় খামারের ওপর নির্ভর করা হয়, তাহলে দুধ ও দুগ্ধপণ্য আমদানি বাবদ ব্যয় হওয়া বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। পরিকল্পিতভাবে দুগ্ধ শিল্পের উন্নয়ন ঘটানোর মাধ্যমে সেটা করা সম্ভব। এতে শুধু বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে তা নয়, তরুণ-তরুণীদের একটি বড় অংশের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে।
হালাল মাংসের কয়েক হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক বাজারে আমাদের প্রবেশাধিকার খুবই সীমিত। ছোট, বড়, মাঝারি উদ্যোক্তা তৈরি করে প্রাণীর জাত প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে ভ্যালু চেইন উন্নয়ন করা সম্ভব হলে খুবই সহজে রপ্তানি বাজার তৈরি করা যেতে পারে। এতে হালাল মাংস রপ্তানির মাধ্যমে দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে বৈচিত্র্য আনা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন দেশের প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞরা।
১৯৭১ সালে দেশে জনপ্রতি দুধের প্রাপ্যতা ছিল ৩০ মিলি। গত ১০ বছরে সরকার কর্র্তৃক গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের ফলে বর্তমানে জনপ্রতি দৈনিক ২৫০ মিলি চাহিদার বিপরীতে দুধের গড় প্রাপ্যতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৭৬ মিলি। দেশে বার্ষিক দুধের চাহিদা ১৫.২০ মিলিয়ন মেট্রিক টন। উৎপাদন ১০.৬৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন। ঘাটতি ৪৫.২ মিলিয়ন মেট্রিক টন। দেশে চাহিদার তুলনায় দুধের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। রোজার সময় এই ঘাটতি আরও প্রকট আকার ধারণ করে। ফলে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ হাজার ৮২১ কোটি টাকার দুধ আমদানি করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। আর গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে সেই দুধ আমদানি বাবদ ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা। শিক্ষিত কয়েক লাখ তরুণ দুগ্ধ শিল্পে নিয়োজিত হওয়ার কারণে দেশে চাহিদা ও জোগানের ঘাটতি দিন দিন কমে আসছে। তারপরও দেশের দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের আমদানি হয় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার। তবে উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে জাত উন্নয়ন, কৃত্রিম প্রজনন মানসম্পন্ন ব্রিড তৈরিতে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। উন্নত জাতের অভাবে দেশি গাভির দুধ উৎপাদন সক্ষমতায় বিশে^র অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
করোনাকালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন প্রাণিসম্পদ খাতের ক্ষুদ্র খামারিরা। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ক্ষুদ্র খামারিদের নিবন্ধন করে ভর্তুকির আওতায় আনতে হবে। তরুণ উদ্যোক্তাদের এ খাতে নিয়োজিত করতে পারলে খাতটির সব ধরনের উৎপাদনে দক্ষতার ছোঁয়া লাগবে। এরই মধ্যে গুঁড়োদুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের আমদানি নির্ভরতা বেড়েছে। তাই আমিষের চাহিদা পূরণ ও দেশের মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তায় প্রাণিসম্পদ খাতকে ঢেলে সাজাতে বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারের আরও বড় পরিকল্পনা নিতে হবে। প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনতে পোল্ট্রি ও দুগ্ধ খামার তৈরি, গরু মোটাতাজাকরণের মাধ্যমে খামারের সংখ্যা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। উৎপাদন ছাড়াও বিপণন ব্যবস্থায় নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করা যেতে পারে। গ্রামের ছোট পরিসরে প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রাথমিক কারখানা গড়ে তোলা দরকার। কাঁচা ও ঘাস জাতীয় খাদ্যের চাহিদা পূরণে পতিত জমিকে কাজে লাগাতে কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে প্রাণিসম্পদ খাত।
আজ থেকে ৪০ বছর আগে অর্থাৎ আশির দশকেও বাংলাদেশে মাথাপিছু দৈনিক দুধের প্রাপ্যতা ছিল ৩০ মিলির কম। অধিকাংশ মধ্যবিত্ত পরিবারে সপ্তাহে একদিন রান্না হতো মাংস, তাও যৎসামান্য। ডিম খাওয়া হতো ভাগভাগি করে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বাড়লেও জনপ্রতি দৈনিক দুধের প্রাপ্যতা বেড়ে হয়েছে ১৭৬ মিলি। এ ছাড়া সব শ্রেণি ও পেশার মানুষের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যুক্ত হয়েছে ডিম ও মাংস। পুষ্টি চাহিদা পূরণের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মানুষের গড় আয়ু ও কর্মক্ষমতা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি ২৪ লাখ ৬৫ হাজার গবাদিপশু ছিল এবং হাঁস-মুরগি ছিল ২ কোটি ১০ লাখ। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে পাকসেনা ও তার দোসররা প্রায় ২৫ শতাংশ হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশু জবাই করে খেয়ে ফেলে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে দেখা দেয় খাদ্য ও পুষ্টি সংকট। সেই বাংলাদেশে আজ চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদন হচ্ছে মাংস ও ডিম। ২০২০ সালে বাংলাদেশে গবাদি পশুর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৬০ হাজার ও হাঁস-মুরগি ৩৫ কোটি ৬৩ লাখ ২০ হাজার। জাত উন্নয়নের ফলে গরু-মহিষের দুধ উৎপাদন বেড়েছে ৬ থেকে ১৫ গুণ পর্যন্ত।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে জনসংখ্যার প্রায় ২০ ভাগ প্রত্যক্ষ ও ৫০ ভাগ পরোক্ষভাবে প্রাণিসম্পদ খাতের ওপর নির্ভরশীল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপিতে স্থিরমূল্যে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ১ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। এছাড়া সস্তায় সব শ্রেণির মানুষের জন্য প্রাণিজ আমিষের জোগান দিচ্ছে পোলট্রি শিল্প। বর্তমানে পোলট্র্রি খাতে সরাসরি কর্মসংস্থান হচ্ছে ২৫ লাখ মানুষের। এই শিল্পের ওপর ভর করে সারা দেশে গড়ে উঠেছে অসংখ্য চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ও ফাস্টফুডের দোকান। পোল্ট্রি শিল্পে উৎপাদিত মাংসের বড় একটি অংশই বিক্রি হচ্ছে এসব খাবারের দোকানে। আর এ খাতেও কর্মসংস্থান হচ্ছে বিপুল সংখ্যক মানুষের। এর বাইরে বর্তমানে গড়ে উঠেছে অসংখ্য কোয়েল, কবুতর ও টার্কি খামার। প্রাণিজ আমিষ সরবরাহে এসবের অবদানও কম নয়।
১৯৭১-৭২ অর্থবছরে দেশে দুধ উৎপাদন হয় ১০ লাখ মেট্রিক টন, মাংস উৎপাদন হয় ৫ লাখ মেট্রিক টন ও ডিম উৎপাদন হয় ১৫০ কোটি। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে দুধের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৬ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন, মাংসের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ৭৬ লাখ ৭৪ হাজার মেট্রিক টন এবং ডিমের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭৩৬ কোটি। বছরে জনপ্রতি ১০৪টি হিসাবে বর্তমানে দেশে ডিমের চাহিদা ১ হাজার ৭৩২ কোটি এবং দৈনিক জনপ্রতি ১২০ গ্রাম হিসেবে বছরে মাংসের চাহিদা ৭২ লাখ ৯৭ হাজার টন। সে বিবেচনায় বাংলাদেশ ডিম ও মাংস উৎপাদনে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, উদ্বৃত্ত একটি দেশ। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে মাংস উৎপাদনে এবং ২০১৯ সালে ডিম উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে করোনা সংক্রমণরোধে প্রাণিজ আমিষের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই লকডাউনের কারণে প্রাণিজ আমিষ বিশেষ করে দুধ, ডিম ও মাংসের উৎপাদন, সরবরাহ ও বিপণন যাতে ব্যাহত না হয় সেদিকেও সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে।
লেখক সাবেক মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন
১৮৮৫ সালের ১২ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন বাঙালি প্রতœতত্ত্ববিদ এবং সাহিত্যিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। তার বাবা মতিলাল ও মা কালিমতী। তিনি ১৯০৭ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইতিহাসে সম্মানসহ স্নাতক এবং ১৯১০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯১১ সালে তিনি ভারতের প্রতœতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগে সহকারী তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯১৭ সালে প্রতœতাত্ত্বিক তত্ত্বাবধায়ক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯২৬ সালে তিনি স্বেচ্ছায় অবসরগ্রহণ করেন। ১৯২৮ সালে তিনি বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতির মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী অধ্যাপক পদে যোগ দেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি ভারতীয় সভ্যতার সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিক ছিলেন। উৎকীর্ণ লিপিতত্ত্ব ও প্রাচীন হস্তলিপি বিদ্যা, মুদ্রাতত্ত্ব, স্থাপত্য ও ভাস্কর্যবিদ্যা ইত্যাদি বিষয়ে তার একাধিক গ্রন্থ রয়েছে। ভারতীয় শিল্পকলার চর্চায় তার উল্লেখযোগ্য কীর্তি তার মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয় ‘ইস্টার্ন ইন্ডিয়ান মেডিয়েভাল স্কুল অব স্কাল্পচার’ নামক গ্রন্থটি। প্রায় ৪০০ শোভাবর্ধক চিত্র সংবলিত এ গ্রন্থে তিনি পূর্ব ভারতীয় কলার নির্মাণ কৌশল, উৎপত্তি ও বিকাশ, বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণদের দেব-দেবীদের মূর্তিতত্ত্ব, জৈন প্রতিমা ও পূর্ব ভারতের মধ্যযুগীয় স্থাপত্য সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি উৎকীর্ণ মূর্তিতে উল্লিখিত তারিখ ও তারিখবিহীন মূর্তির অভিলেখের ওপর ভিত্তি করে কালানুক্রমে পাল-সেন যুগের ভাস্কর্যকে বিন্যস্ত করেন। ঔপন্যাসিক হিসেবেও তার পরিচিতি রয়েছে। তার কয়েকটি উপন্যাস ভারতের নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯৩০ সালের ২৩ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আইন মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি বলছে, আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে। সরকারের এমন নেতিবাচক সিদ্ধান্তের পর এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি দেয়নি দলটি। তবে এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে যোগ হতে পারে বলে জানা গেছে।
৫৩ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও দলীয় নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। বিদেশে নেওয়া ছাড়া তার উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে তার ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। এতে মতামত দিতে আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় আইন মন্ত্রণালয় এতে মতামত দেয়। এ বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেছেন, তার সাময়িক মুক্তির আদেশটা বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) কারাগারে নেওয়া হলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া বাসায় চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন না এমন দুটো শর্ত সাপেক্ষে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে দন্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। দরখাস্তটা নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে আটবার দন্ড স্থগিত করা হয়েছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো সুযোগ আইনে থাকে না। আমরা ৪০১ ধারার উপধারা ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ ব্যাখ্যা করে মতামত পাঠিয়েছি। আমাদের মতামত হলো, ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে, সেটা অতীত এবং মীমাংসিত। এটা আর খোলার কোনো উপায় নেই।’
এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) সাজা স্থগিত রেখে যে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সেটা বাতিল করে তারপর পুনরায় বিবেচনা করার সুযোগ থাকলে সেটা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই উপমহাদেশে ৪০১ ধারার ক্ষমতা যখন প্রয়োগ করে, তখন এটি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না বলে সিদ্ধান্তের নজির আছে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন যে আদেশটা আছে, সেটা যদি বাতিল করা হয়, বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) যদি আবার কারাগারে নেওয়া হয়, তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু এ অবস্থায় আদালতে যেতে পারবেন না।’ খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের বিষয়টি বাতিল করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা অমানবিক হবে, বাতিল করব না।’
আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এক বার্তায় বলেন, ‘আজকের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, দেশে আইনের শাসন নেই। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক ভয়ংকর তামাশা করা হচ্ছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, নির্বাহী বিভাগ চাইলেই কাউকে মুক্তি দিতে পারে।’
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় বিএনপি কী এখন ভাবছে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে।’
আর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর নীলনকশার অংশ। মানবতাবিরোধী ও সরকারের বর্বর ইচ্ছা পূরণের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।’
দলটির নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা না করে, রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করতে না পারলে বিএনপিপ্রধানের মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমেই এই ইস্যুর সুরাহা করতে চায় দলটি।
কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। কিন্তু দেশে চিকিৎসা গ্রহণের শর্তারোপ করা হলে তা যে চিকিৎসার বিবেচনায় না করে রাজনীতির বিবেচনায় করা হবে, সেটা বোঝার মতো বুদ্ধি সাধারণ মানুষের আছে।’
অসুস্থতার কারণে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের মার্চে করোনার সময় টানা দুই বছর কারাভোগের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরেছিলেন খালেদা জিয়া। পরে এ পর্যন্ত তার মুক্তির মেয়াদ আটবার বাড়িয়েছে সরকার।
এরই মধ্যে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ দিতে পরিবারের পক্ষে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এ বিষয়ে আইনি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি পাঠায়।
বিএনপিপ্রধানকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি সরকার ইতিবাচকভাবে দেখতে পারে’। কিন্তু সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘বিদেশে যাওয়ার আবেদন করতে হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত গিয়ে করতে হবে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের পর সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় এবারও ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না। গত শনিবার এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ শঙ্কাই প্রকাশ করেছিলেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা আছে, যেকোনো মূল্যে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকার মরিয়া। সে কারণে হয়তো খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি ঝুঁলিয়ে রাখতে চাইছে এমনটাই মনে করছে সরকারবিরোধীরা। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দিলেই সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলেও বিরোধী নেতাদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। তবে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথাই নেতাদের বলে রেখেছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির হাইকমান্ড মনে করছেন, এ অবস্থায় চলমান এক দফার আন্দোলনে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিষয়টি থাকলেও সেটাকে আরও জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে; যাতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নেয়।
জানা গেছে, এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে দলটি। আজ সোমবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক রয়েছে। সূত্র বলছে, জোটগত ছাড়াও দলীয়ভাবেও কর্মসূচি আসতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক চিকিৎসক জানান, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তার কেবিনে এক্স-রে মেশিন নেওয়া হয়েছিল গতকাল ভোরে। শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে না এলে সিসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ ছিল। দুপুরে তার ইসিজি ও ইকো ডায়াগ্রাম করানো হয়েছে। ফুসফুসের পানি অপসারণের জন্য তার ডান পাশে যে ক্যাথেটার লাগানো ছিল, সেটা আপাতত খুলে ফেলা হয়েছে।
লিভার জটিলতা ছাড়াও ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ফুসফুস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। গত ৯ আগস্ট ফিরোজায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দলীয় মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) সেটআপে কেবিনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে।
জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘ওনার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সে জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানো দরকার।’
সদ্যোজাত থেকে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে অনেক সময়েই নানা কারণে কানের ব্যথা দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে দিন কয়েকের মধ্যেই তা সেরেও যায়। কিছু ক্ষেত্রে সেই ব্যথা ঘুরেফিরে আসে ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।
দীর্ঘস্থায়ী কানে ব্যথা কখনোই অবহেলা করা উচিত না। যদি কানে ব্যথা বাড়তে থাকে, সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। মূলত কানের সংক্রমণ থেকে দীর্ঘস্থায়ী এই ব্যথা হতে পারে।
অনেকেরই ধারণা থাকে যে, বাচ্চাদের কানে পানি ঢুকে বা সদ্যোজাতদের দুধ খাওয়ানোর সময়ে তা কানে ঢুকে সংক্রমণ হয়। এ ছাড়া কানে ময়লা জমেও কানে ব্যথা হয় বলে সাধারণ ধারণা রয়েছে। কিন্তু শিশু বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই ধারণাগুলো ঠিক নয়। স্বাভাবিক অক্ষত কানের পর্দা ভেদ করে পানি, দুধ কানের একদম ভেতরে ঢুকতে পারে না।
শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে কান, গলা ও নাক এগুলো একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। ফলে গলায় সংক্রমণ হলে তা সহজেই কানে চলে আসে। বাচ্চার ঠান্ডা লেগে জ্বর, সর্দি-কাশি বা গলায় সংক্রমণ হলে তা কানেও ছড়িয়ে পড়ে। কানের সঙ্গে ফ্যারিঙ্কসের যোগসূত্র তৈরি হয় ইউস্টেশিয়ান টিউবের মাধ্যমে। ফলে যখন সন্তান বা বড়দের ফ্যারিঞ্জাইটিস, ল্যারিঞ্জাইটিস বা টনসিলাইটিস হচ্ছে, তখন সেই সংক্রমণ কানের মধ্যে চলে যেতে পারে।
এ ছাড়া শিশুদের সর্দি থেকেও কানে ব্যথা হয়। বিশেষ করে নবজাতকদের মধ্যে এই উপসর্গ দেখা যায়। বাচ্চারা যেহেতু নিজে থেকে কফ বার করতে পারে না। তাদের ঠান্ডা লেগে গলায় কফ জমে এবং কানেও তরল জমতে পারে। ফলে কানে ব্যথা হয় ও বাচ্চা কাঁদতে থাকে।
শিশুদের কানে ব্যথা হলেই অনেকে কানের ড্রপ দিতে শুরু করেন। কিন্তু এসব করতে বারণ করেন শিশু বিশেষজ্ঞরা। বরং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল খাওয়ানো যেতে পারে।
শিশু এবং ছোট বাচ্চাদের কানের ব্যথা বা সংক্রমণ সম্পর্কে বোঝানোর ক্ষমতা থাকে না। তাই কিছু লক্ষণ দেখেই তাদের কানে সংক্রমণ নিশ্চিত করা যায়।
১. সংক্রমণের কারণে কানে ব্যথা এবং অস্বস্তি হয়। ব্যথা কমাতে শিশুরা তাদের কান ধরে টানতে থাকে।
২. সংক্রমণে আক্রান্ত শিশু শুয়ে থাকলে এটি মধ্যকর্ণে চাপের পরিবর্তন ঘটায়। যা ব্যথা এবং অস্বস্তির সৃষ্টি করে ফলে শিশুদের জন্য ঘুমানো বা শুয়ে থাকা কঠিন হয়ে যায়।
৩. কানের সংক্রমণের একটি নিশ্চিত লক্ষণ হল শিশুর কান থেকে তরল বা পুঁজ বের হওয়া।
৪. সংক্রমণের কারণে কানের ব্যথা হয় যার ফলে শিশু অতিরিক্ত কান্না করে বা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি খিটখিটে মেজাজ হতে পারে।
৫. সংক্রমণের কারণে কানে তরল জমা হয়ে সাময়িকভাবে শ্রবণশক্তি হারাতে পারে।
৬. জ্বর থাকতে পারে।
৭. ডায়রিয়া, বমি, ক্ষুধা কমে যাওয়া।
১. ঘরে বা রাস্তাঘাটে ধুলো নাক-মুখ দিয়ে ঢুকলে অনেক সময়ে আল্যার্জি ও প্রদাহ হয়। ফলে ইউস্টেশিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে যায়। তখন কানে ব্যথা হতে পারে।
২. বিমানে ওঠার সময়ে যেমন ইউস্টেশিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অনেকেরই কানে সমস্যা দেখা যায়। বাচ্চারা সেটা বোঝাতে বা বলতে না পেরে কেঁদে ওঠে। তখন বড় হোক বা বাচ্চা, ঢোঁক গিলতে হবে। তা হলেই আবার ইউস্টেশিয়ান টিউবের মুখটা খুলে যাবে। সন্তান খুব ছোট হলে পানি বা লজেন্স খাওয়ানো যায়। সেটা খাওয়ার সময়ে সে ঢোঁক গিললে সমস্যা মিটে যাবে।
৩. ইউস্টেশিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে গেলে বা কান বন্ধ হয়ে গেলে, তা ঠিক করার জন্য এক ধরনের ব্যায়াম ভালসালভা ম্যানুভার করা যেতে পারে। এর জন্য নাক দিয়ে অনেকটা শ্বাস গ্রহণ করে তারপরে নাক ও মুখ বন্ধ করে, বেলুন ফোলানোর মতো করে মুখ ফুলিয়ে সেই বাতাস বের করার চেষ্টা করতে হবে। এতে নাক ও মুখ বন্ধ থাকায় ভিতরের বাতাস কানের পথে বেরোনোর চেষ্টা করবে। ফলে বন্ধ কান খুলে যাবে।
৪. এ ছাড়া রাইনাইটিস বা নাকের ভিতরের শ্লেষ্মাঝিল্লির জ্বালাপোড়া ও প্রদাহ থেকেও কানে ব্যথা হতে পারে। তখন ন্যাজ়াল ড্রপ দেন বিশেষজ্ঞরা।
গলার সংক্রমণ যেমন কানে ছড়াতে পারে ঠিক তেমনি কানের সংক্রমণ মস্তিষ্কে ছড়িয়ে যেতে পারে। ট্রান্সভারস বা সিগময়েড সাইনাস কান ও মস্তিষ্কের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে।
দীর্ঘদিন কানের ইনফেকশন অবহেলা করলে, এই সংক্রমণ সিগময়েড সাইনাস দিয়ে ব্রেনে চলে যেতে পারে। তখন রোগের জটিলতা বেড়ে যায়। যেমন, গলায় যদি স্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটিরিয়ার দ্বারা সংক্রমণ হয়, তা ব্রেনের মধ্যে চলে গেলে সেখানে মস্তিষ্কে পুঁজ তৈরি করে। এতে বাচ্চার খিঁচুনি হতে পারে, হাত-পায়ের দুর্বলতা দেখা যায়, চোখে কম দেখতে পারে সেই সময়।
তাই কানে সংক্রমণ বা ব্যথা হলেই অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
হতাশায় শেষ খালেদার অপেক্ষা
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
সাড়ে ৩ বছরে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স
দেশের বিদেশি মুদ্রা আয়ের অন্যতম হাতিয়ার প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের ধস নেমেছে। সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশে অবস্থানকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধপথে ও ব্যাংকের মাধ্যমে মাত্র ১৩৪ কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। গত সাড়ে তিন বছরে এটি সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স। ৪১ মাস আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এর চেয়ে কম ১০৯ কোটি ডলার সমপরিমাণের রেমিট্যান্স এসেছিল। রেমিট্যান্স-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দামের ব্যবধান বেশি হলে হুন্ডিতে লেনদেন বেড়ে যায়। আর যখন হুন্ডির চাহিদা বাড়ে তখন রেমিট্যান্স কমে যায়। গত মাসে ব্যাংকের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দাম ৬ থেকে ৭ টাকা বেশি ছিল। তাই বেশি লাভের আশায় বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন প্রবাসীরা।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজার ছাড়াল
এ বছর অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে ডেঙ্গু। গতকাল রবিবার ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজারের কোটা ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) সারা দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬ জনে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৮৮২ জন।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
অকাজের ৩৭০০ কোটির সেতু
সেতু হয়। কিন্তু সড়ক হয় না। সেতু করার জন্য নানান প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু সেসব সেতু করেই দায়সারা বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়। ভোগান্তি সাধারণ মানুষের। আবার যতগুলো সেতু করার কথা ততগুলো না করেও প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করার প্রতিবেদনও দেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সারা দেশের গ্রামের রাস্তাগুলোতে সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পে। প্রকল্পের এসব অনিয়ম উঠে এসেছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবি আ.লীগ নেতার
আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার। গত শনিবার রাতে তার ফেসবুকে এ দাবি জানিয়ে স্ট্যাটাস দেন তিনি।
মুহূর্তেই স্ট্যাটাসটি ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিএনপির অসংখ্য নেতা, কর্মী-সমর্থক তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রশংসা করেন। অন্যদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নিন্দা জানিয়ে দলীয় সব পদ থেকে তার বহিষ্কারের দাবি জানান।
আবদুল মোতালেব হাওলাদার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘রাজনৈতিক কারণে আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়া হউক।’
স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন অধরাই
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
ফুটপাত থেকে মদের বার সবখানে চাঁদাবাজি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের কমিটি পার করেছে পাঁচ বছরের বেশি সময়। মেয়াদোত্তীর্ণ এ কমিটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। কিছু নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে। সর্বশেষ মদের বার ভাঙচুর ও লুট করে আবারও আলোচনায় এ কমিটির নেতাকর্মীরা।
নতুন কমিটি না হওয়ায় নেতারা বেপরোয়া আচরণের পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছেন বলে মনে করেন সাধারণ কর্মীরা। তারা বলেন, সংগঠনের কর্মকাণ্ডও স্থবির হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান তারা।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মো. রিপন মিয়াকে সভাপতি ও মাহমুদুল হক জুয়েল মোড়লকে সাধারণ সম্পাদক করে তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের জন্য আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে গত বছর ১২ জুন ৩২১ জনের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য।
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ অনুযায়ী, দেশে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ১১৯। এ তালিকায় রয়েছে যারা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, মাজার, ফুটপাত, সিঁড়ি, ওভারব্রিজের নিচে, লঞ্চ টার্মিনাল, ফেরিঘাট, মার্কেটের বারান্দায় দিন কাটান। আর বস্তিতে বসবাস করছে ১৮ লাখ ৪৮৬ জন। তারা মূলত শহর ও উপশহর এলাকায় টিনের ঘর, সেমিপাকা ঘর বা ঘিঞ্জি পাকা ঘরে বাস করে। তবে বস্তিবাসী কারা সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৬ সালে সরকার আবাসন নীতিমালা করেছে। আবাসন উন্নয়ন তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। আবাসন সংকট নিরসন করতে হলে সরকারকে আবাসন তহবিল করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বস্তিবাসী, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত কারা তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। না হলে বোঝা যাবে না কত মানুষ বস্তিতে থাকে।’
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে আবাসন সংকট কাটছে না। স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে আবাসন।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে ৯ লাখ গৃহহীন মানুষকে চিহ্নিত করে। ইতিমধ্যে আট লাখ মানুষের গৃহের ব্যবস্থা করেছে; প্রায় ৪০ লাখ মানুষের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বাকিদের জন্যও শেখ হাসিনা ব্যবস্থা করবেন। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যও আবাসনের ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা তার সৈনিক হিসেবে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
জানা যায়, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার সবার জন্য আবাসন। অঙ্গীকার পূরণে সরকার নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সারা দেশে ৩০টি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, নোয়াখালী, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, শরীয়তপুর, নড়াইল, খুলনা, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব প্রকল্পে ৬ হাজার ৪৩২টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২৭টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পে ৫ হাজার ৯৩০টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হবে। শেরপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, হবিগঞ্জ, সিলেট, ঝিনাইদহ, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে ১৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৩৫টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় রাজউক পূর্বাচল, ঝিলমিল, উত্তরা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় আবাসন প্রকল্পে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ফ্ল্যাটগুলো উচ্চমূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। পূর্বাচল, ঝিলমিল ও উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনেও বিভিন্ন সংস্থা আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন শহরে বসবাসরত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সম্পদশালী ব্যক্তিরা। যাদের অনেক ফ্ল্যাট আছে তারা আরও ফ্ল্যাট কিনছেন। কিন্তু বাস্তুহারা, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত সরকারি এসব আবাসনের সুবিধা পাচ্ছেন না। অল্প দামে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার আবাসন প্রকল্প তৈরি করে যাদের নামে বরাদ্দ দিচ্ছে তারা রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত।
জাতিসংঘ ১৯৮৫ সালে বিশ্ব বসতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশে^ অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার এ দিবসটি পালিত হয়।
বিশ্বজুড়ে বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউ এয়ারের তথ্য অনুযায়ী আজ সোমবার (০২ অক্টোবর) ঢাকার বাতাসের মান ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’। এদিন সকাল ১০টার দিকে ১২৯ স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে ঢাকা।
এসময় ১৮৩ স্কোর নিয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকার প্রথম স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর। ১৬২ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা। ১৬০ স্কোর নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি। ১৫৬ স্কোর নিয়ে চতুর্থ ভারতের আরেক শহর করাচি। ১৫৩ স্কোর নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে ইতালির মিলানো।
এ ছাড়া একইসময়ে একিউআই স্কোর ১১৭ স্কোর নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে চীনের উহান। ১১৩ স্কোর নিয়ে অষ্টম স্থানে রয়েছে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর। ১১২ স্কোর নিয়ে নবম স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। ১০৯ স্কোর নিয়ে দশম স্থানে রয়েছে সৌদি আরবের রিয়াদ।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার দূষিত বাতাসের শহরের এ তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই স্কোর একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে কি না, তা জানায়।
একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। একইভাবে একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং স্কোর ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকলে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।