
বাজেটের একটা দর্শন থাকে। রাষ্ট্র আয় করবে কোথা থেকে আর ব্যয় করবে কার জন্য তা নির্ধারিত হয় একটি দর্শন দ্বারা। কিন্তু আমাদের দেশে প্রতি বছর বাজেটের নানা ধরনের নামকরণ করা হয়ে থাকে। যেমন বাজেট ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট সম্পর্কে বলা হয়েছে, স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে এই প্রতিপাদ্যে সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণকেই বলা হচ্ছে এবারের বাজেটের মূল দর্শন। বলা হয়েছে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে যার স্তম্ভ হবে চারটি। স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সোসাইটি ও স্মার্ট ইকোনমি। বলা হয়েছে স্মার্ট বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় হবে কমপক্ষে ১২ হাজার ডলার, দারিদ্রসীমার নিচে থাকবে ৩ শতাংশ মানুষ, চরম দারিদ্র্য নেমে আসবে শূন্যের কোঠায়, মূল্যস্ফীতি সীমিত থাকবে ৪-৫ শতাংশের মধ্যে, বাজেট ঘাটতি থাকবে জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে, রাজস্ব জিডিপি অনুপাত হবে ২০ শতাংশের ওপরে, বিনিয়োগ হবে জিডিপির ৪০ শতাংশ।
দেশের ইতিহাসের ৫২তম এবং আওয়ামী লীগ সরকারের ২৪তম বার্ষিক আয়-ব্যয় বিবরণী বা বাজেট উপস্থাপিত হয়েছে জাতীয় সংসদে। একটা বিষয় পরিষ্কার যে স্বাধীনতার পর দেশের বয়স যত বাড়ছে, বাজেটের আকার তত বড় হচ্ছে। এবারের বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। যা জিডিপির ১৫ শতাংশ। এই পরিমাণ টাকা আসবে কোথা থেকে? বাজেটে ৫ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আয় আসবে বলে সরকার ধরে নিচ্ছে। এ আয়ের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে ঘাটতি থাকছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা যা জিডিপির ৫.২ শতাংশ। কিন্তু ঘাটতি বাজেট হলেও সরকারকে খরচ তো করতেই হবে। তাই উপায় হিসেবে বলা হয়েছে, ঘাটতি পূরণ (অর্থসংস্থান) করা হবে দুইভাবে বৈদেশিক ঋণ ও অভ্যন্তরীণ ঋণ নিয়ে। বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে নিট ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। আর অভ্যন্তরীণ ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, আর সঞ্চয়পত্র বিক্রিসহ ব্যাংকবহির্ভূত ঋণ নেওয়া হবে ২৩ হাজার কোটি টাকা।
ঘাটতি পূরণে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ তো প্রতি বছরই করতে হয়। কিন্তু এই ঋণ কতটুকু নেওয়ার পরিকল্পনা এবং কত নেওয়া হয় তার মধ্যে বেশ বড় ফারাক থেকে যায়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা। গত এপ্রিলে এসে দেখা গেল প্রয়োজন আরও বেশি। ফলে ব্যাংকঋণের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা যা বর্তমান অর্থবছরের ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার তুলনায় ২৬ হাজার কোটি বা ২৪ শতাংশ বেশি। এর ফলে ঘাটতি পূরণ হয়তো হবে কিন্তু মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা বাড়িয়ে দেবে।
যে বছরটা পেরিয়ে এলাম আমরা অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। নানা কারণে সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটের আকারকে ভিত্তি ধরলে আগামী বাজেটের আকার বাড়ছে ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। কিন্তু আয় বৃদ্ধির যে কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে তা সাধারণ মানুষের জীবনে কী প্রভাব ফেলবে সেই আলোচনাটা খুবই জরুরি। আয় বৃদ্ধির প্রধান উৎস এনবিআর। অথচ চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৩৪ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা শুল্ক-কর আদায়ের লক্ষ্য ধরা হলেও গত জুলাই-এপ্রিল সময়ে সব মিলিয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার ২৮২ কোটি টাকা আদায় করা হয়েছে। ফলে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল করা, আয়বৈষম্য রোধ করা এবং রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি করা এগুলো এবারের বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য কী সব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, বাজেটে সেটাই দেখার বিষয়।
দেশের অর্থনীতি এখন নানামুখী চাপে বিপর্যস্ত। ডলারের সংকট এখনো প্রকট। পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খুলতে গেলে কোনো কোনো ব্যাংক ফিরিয়ে দিচ্ছে। আবার রপ্তানি আয় তুলতে গেলেও ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতি দেশে সাম্প্রতিক অতীতের বছরগুলোতে দেখা যায়নি। সাধারণ মানুষ দেখেছে বছর জুড়ে চাল, ডাল, লবণ, ভোজ্য তেল, চিনিসহ প্রায় প্রতিটি জিনিসেরই দাম বেড়েই চলেছে। সরকার মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল ৫.৬ শতাংশ কিন্তু গত এপ্রিলে তা ছিল ৯.২৪ শতাংশ। অথচ মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৭.২৩ শতাংশ। গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল ও সারের দাম বাড়ানো হয়েছে। কমেছে টাকার মান। প্রায় ৩০ টাকা কমেছে ডলারপ্রতি। প্রণোদনা দিয়েও প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) বাড়ানো যায়নি, রপ্তানি আয়ের প্রবণতাও ছিল নিম্নমুখী। ডলার সংকটে বিলাসপণ্যের আমদানি সংকোচনের উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে দেখা যাচ্ছে গত জুন থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি কমেছে ৫৬ শতাংশ, আর মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি কমেছে ৩১ শতাংশ। বেসরকারি বিনিয়োগ তেমন বাড়েনি যেমন, তেমনি দাম বাড়ানো হলেও শিল্প খাতে জ্বালানি সংকটের সুরাহা হয়নি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নানা ধরনের শর্ত পূরণের চাপ। আইএমএফ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার চেয়ে সরকার প্রথম কিস্তি পেয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তি পেতে সময় লাগবে আগামী ডিসেম্বর। সে ক্ষেত্রে কিছু শর্ত পূরণ করতে পারলেই পাওয়া যাবে পরবর্তী কিস্তি। রিজার্ভ সংরক্ষণসহ বড় কিছু শর্ত পূরণ না হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
এখন দেখা যাক গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো কেমন গুরুত্ব পেল এবারের বাজেটে? স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ প্রস্তাব ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা যা গত বাজেটে ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। সেই ৫ শতাংশের ঘরেই থেকে গেল স্বাস্থ্য বাজেট। করোনার আঘাত, চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি, চিকিৎসা ব্যয়ের ৭২ শতাংশ জনগণের নিজেদের পকেট থেকে ব্যয় করার তথ্য জানা থাকার পরও স্বাস্থ্য খাতে কিন্তু বরাদ্দ বাড়ল না উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। যে কোনো রাষ্ট্রের জন্য শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত। বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে যা গত বাজেটে ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা খাতে ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে যা গত অর্থবছরে ছিল ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে, যা গত বছরে ছিল ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দাঁড়াল ১১.৫৮ শতাংশ। যা ছাত্রসমাজের দীর্ঘদিনের আকাক্সক্ষা আর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হলো কি? যে কৃষি দেশের অর্থনীতি এবং কর্মসংস্থানের প্রধান খাত সেই খাতে বরাদ্দের পরিমাণটাও দেখা যাক। কৃষি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৫ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা যা গত বছরে ৩৩ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। মোট বাজেটের ৪.৬৪ শতাংশ। খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে এত উদ্বেগ সত্ত্বেও কৃষি খাতে বরাদ্দ কি প্রয়োজন পূরণের মতো হয়েছে, সে প্রশ্ন করাই যায়।
প্রতি বছর শ্রম বাজারে আগত ২০ লাখ কর্মপ্রত্যাশীদের কর্মসংস্থানের বিষয়ে উদ্বেগ যত আছে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী দক্ষতার ঘাটতি যত উদ্বেগ তৈরি করেছে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাজেটের বরাদ্দ তেমন দৃশ্যমান নয়। ২০৩০ সালের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দক্ষতা ও কর্মসংস্থানের যে সুযোগ তৈরির কথা বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ হয়েছে তা খুব বেশি আশা জাগায় না। ১৭৬টি দেশে ১ কোটি ৪৯ লাখের অধিক কর্মী কর্মরত। কিন্তু এদের মধ্যে অধিকাংশই আধা দক্ষ, অদক্ষ; ফলে দক্ষতা গড়ে তোলার বিকল্প নেই। বাজেটে দেশে এবং বিদেশে কর্মপ্রত্যাশীদের মানসম্পন্ন শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের কথা বলা হলেও বরাদ্দের ক্ষেত্রে তার ছাপ লক্ষ করা গেল না। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দেশের সমস্ত মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার ঘটনা লক্ষ করা গেলেও বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রতিফলন সংগতিপূর্ণ নয়। ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকার বরাদ্দ প্রস্তাব গত বছরের সঙ্গে তুলনা করে দেখা যাক। গত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। বাজেট যত বড়, বরাদ্দ তত গুরুত্ব পায়নি।
বাজেটে আয় বৃদ্ধির যে সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, ব্যয় বরাদ্দের যে সব ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হয়েছে, জনগণের ওপর ভ্যাট ট্যাক্সের পরিমাণ বৃদ্ধির যে সমস্ত পরিকল্পনা উল্লেখ করা হয়েছে তাতে এটা স্পষ্ট যে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরতে কী উদ্যোগ নেওয়া হবে তা উল্লেখ করা হয়নি। জনজীবনকে সহনীয় রাখার জন্য জনগণের টাকায় জনগণের জন্য ভর্তুকির ব্যবস্থা কেমন থাকবে, বৈষম্য কমানোর পদক্ষেপ কী হবে, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি আর আয় বৈষম্য বৃদ্ধি যে সমানতালেই চলছে তা কমানোর কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান হবে কি না, বাজেটের পরে সেটাই হবে জনগণের প্রত্যাশা।
লেখক: রাজনৈতিক সংগঠক ও কলামিস্ট
‘উন্নয়নের দেড় দশক : স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ এই শিরোনামের সেøাগানে উৎকলিত উচ্চ মূল্যস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বৈশ্বিক সংকট, ডলার সংকট, ব্যবসা-বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে মন্দা, জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ নানামুখী চাপ সঙ্গে করে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত হয়েছে। জুনের ১ তারিখে এটি পেশ করা হলেও, বড়জোর তিন সপ্তাহ সময় মিলবে মোট ৪০ ঘণ্টা সংসদের ফ্লোরে, এ বাজেটের ওপর গতানুগতিক ও অনির্বচনীয় আলোচনার। তারপর কণ্ঠভোটে অর্থবিল পাস হবে ২৫ জুন এবং বাজেট ২৬ জুন। অনুধাবনীয় যে, শতবর্ষী ঔপনিবেশিক আয়কর আইন একবাক্যে নতুন আইন উপহার হিসেবে পাওয়ার আভাস মিলছে। আশা করা যায়, অতি গুরুত্বপূর্ণ আয়কর আইন যথাযথ জনমত যাচাই-বাছাইয়ের এবং আইন প্রণেতারা অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এটি গৃহীত হবে। আশঙ্কা থাকবে না এটি যেন ২০১২ সালের নতুন ভ্যাট আইনের মতো জন্মিয়াই মৃত্যুর অথবা আজীবন খোঁটা খাওয়ার ভাগ্য বরণ করবে না। জাতীয় নির্বাচনের বছরে অর্থনৈতিক কার্যক্রম চাঙ্গা করতে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমের বিশাল বর্ণনা রয়েছে বাজেট বক্তৃতায়, যদিও পুরো বক্তৃতাটি পাঠের পরিবর্তে ভিন্ন আঙ্গিকে তুলে ধরা হয়েছে। আত্মতৃপ্তির বিশাল বাজেট বক্তৃতাটি মিডিয়ায় হুবহু প্রকাশও করা সম্ভব নয় বিধায় গণ কর্ণকুহরে পৌঁছানো, কিংবা পাঠের সুযোগ ঘটেনি আমজনতার, যাদের জন্য এটি পেশ করা হয়েছে সংসদে। মিডিয়ার বদৌলতে বাজেটের ছিটেফোঁটা জানতে পারছে যারা, তারা সেই বিশাল নাগরিক সম্প্রদায়ের অতি খ-িত অংশ।
নয়া বাজেটের মোট আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। ডলার সংকট কাটাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রকল্প চলমান রয়েছে। এর বিপরীতে দেওয়া শর্ত পরিপালন করতে গিয়ে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বাড়াতে হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে জনজীবনে। ব্যাংক, আর্থিক ও রাজস্ব খাতে ব্যাপক সংস্কার আনতে হচ্ছে; প্রতি বছর ০.৫ শতাংশ হারে করদাতা বাড়াতে হবে। স্পষ্ট যে, বাজেটের অর্থের জোগান পেতে সরকার আগের চেয়ে বেশি ব্যাংকমুখী হবে। আগামী অর্থবছরে ব্যাংক থেকে সরকার চলতি অর্থবছরের চেয়ে ২৬ হাজার কোটি টাকা বেশি ঋণ নেবে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নেবে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরে যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। সে হিসাবে আগামী অর্থবছরে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ চলতি বছরের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেশি বাড়বে। এটা সবার জানা যে, ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার বেশি ঋণ নিলে তার প্রভাব পড়ে মূল্যস্ফীতিতে। কারণ, ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ টাকা ছাপিয়ে মেটাতে হয়। টাকা ছাপালে তখন বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে যায় এবং মূল্যস্ফীতি বাড়ে। এর ফলে বেসরকারি খাতের ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয় কর্মসংস্থান ব্যবস্থা। প্রতিবারই অর্থবছরের শেষ দিকে সরকারের ব্যাংকঋণ নেওয়া বাড়ে। বিশেষ করে জুন মাসে। চলতি অর্থবছরেও এর ব্যতিক্রম হবে না বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি। আগের অর্থবছরে ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার ঋণ নিয়েছিল ১৩ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। একই সময়ে চলতি অর্থবছরে তা বেড়ে হয় ৩৯ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এদিকে চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি প্রায় নেতিবাচক। অথচ চলতি অর্থবছরে ধরা হয়েছিল, এ খাত থেকে নিট ৩৫ হাজার কোটি টাকা আসবে। চলতি বছরের সংশোধিত বাজেটে তারপরও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির নেতিবাচক চিত্রের কারণে জুন শেষে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
দেশে মূল্যস্ফীতির হার গত এপ্রিলে ছিল ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। অর্থবছর শুরুর দুই মাসের মাথায় গত আগস্টে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে উঠেছিল। যা হোক মূল্যস্ফীতি যেখানে গিয়ে ঠেকুক না কেন, অর্থের প্রয়োজন মেটাতে ব্যাংকঋণের কোনো বিকল্প আগেও ছিল না, চলতি অর্থবছরেও নেই, আগামী অর্থবছরেও থাকবে না।
শুধু তাই নয়, আর মাত্র ছয় মাস পরই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বহুমুখী চাপের মুখে এ নির্বাচন সামনে রেখে জনগণকে সামান্য হলেও স্বস্তি দিতে চাওয়ার জন্য সামাজিক নিরাপত্তাসহ বহু রকম নির্বাচনী কর্মসূচি আছে এ বাজেটে। এ বছর যেখানে বিদ্যমান (ডিসেম্বর পর্যন্ত) এবং নবনির্বাচিত (জানুয়ারি-জুন) সরকার বাজেট বাস্তবায়নে থাকবে, এতসব প্রতিশ্রুত কর্মসূচি বাস্তবায়নের হালহকিকত কী দাঁড়াবে তা আমজনতার বোধগম্যের মধ্যে আসছে না।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার। এর মধ্যে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার। বিশাল আকারের রাজস্ব আদায় করতে গিয়ে বাড়াতে হবে করের আওতা। করযোগ্য মানুষকে করের আওতায় আনার সুষ্ঠু পরিকল্পনার পরিবর্তে নিম্নআয়ের মানুষকেও করের আওতায় আনার পরিকল্পনার সিদ্ধান্তটি হবে অযৌক্তিক।
আগামী অর্থবছরে সরকার দেশের উন্নয়নে ব্যয় করবে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয় হবে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বহির্ভূত প্রকল্পে ব্যয় করবে ৭ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে ব্যয় হবে ২ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা। বিভিন্ন স্কিমে ব্যয় করবে ৩ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। আগামী বাজেটের রূপরেখায় সরকারের পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮১ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১৩ শতাংশ বা ৬০ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকার বেশি। পরিচালন ব্যয়ের হিসাবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ বাড়ছে ৩৫ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা; যা চলতি অর্থবছরের বাজেটে সংশোধিত জিডিপির চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপির পরিমাণ রয়েছে ৪৪ লাখ ৩৯ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। বৈশ্বিক সংকটেও এ উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের আশা করছে সরকার। যদিও বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ উন্নয়ন সহযোগীরা বলছে, বৈশ্বিকভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার আগের তুলনায় হ্রাস পাবে। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ ধরে রাখার চেষ্টা : টানা প্রায় দেড় বছর ধরে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে ফেলেছে, যা এখন প্রায় ২ অঙ্কের ঘর ছুঁইছুঁই। মূল্যস্ফীতির এ চাপকে ৬ শতাংশে ধরে রাখার পরিকল্পনা উচ্চারিত হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। বাস্তব পরিস্থিতিতে তা কতখানি টেকসই হবে বলার সময়ই এখনো হয়নি।
মিডিয়ায় প্রশ্নটা বরাবরের ন্যায় আরও স্পষ্ট হতে হচ্ছে যে, সংবিধানের প্রস্তাবনায় উল্লিখিত ‘আমরা বাংলাদেশের জনগণ’ সেই আপামর জনগণ অর্থাৎ আমজনতার আশা-অকাক্সক্ষা চাওয়া-পাওয়া দাবি-দাওয়া বাজেটে প্রতিফলিত হয়েছে কিনা। এ প্রশ্ন ওঠাও স্বাভাবিক যে, জাতীয় বাজেটের মধ্যে করোনা মোকাবিলার মতো, করোনায় বিধ্বস্ত ও কিয়েভ-ক্রেমলিন যুদ্ধের দ্বারা আহত অর্থনীতি গণস্বাস্থ্য জন-শিক্ষা পুনরুদ্ধারের মতো জরুরি বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েও পায়নি বলে প্রতীয়মান হচ্ছে কিনা। প্রশ্ন এ কারণেও উঠতে পারে যে, জাতীয় বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ প্রকৃত প্রস্তাবে প্রয়োজনীয় খাতে (এ মুহূর্তে যেমন জীবন ও জীবিকা) যথাযথ (দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সহনীয়করণ, ব্যয় সাশ্রয়ী, অর্থায়ন আয় বৃদ্ধি ও কৃচ্ছ্র সাধন অর্থে ব্যয় সংকোচন, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ, সরকারি-বেসরকারি খাত দল মত নির্বিশেষে ঐকবদ্ধভাবে সংকট মোকাবিলায়) ব্যবহৃত হবে কিনা, নতুন বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য সবাই পরামর্শ দিয়েছেন, দাবি তোলেন কিন্তু সেই বরাদ্দের বিপরীতে অর্থায়ন ও লক্ষভেদি বাস্তবায়নের পরিস্থিতি, সেই ব্যয়ের তাৎক্ষণিক, স্বল্প-মধ্য দীর্ঘমেয়াদি ইমপ্যাক্ট ও অভিঘাত সম্পর্কে অবহিত হওয়ার অবকাশ বরাবরই হালে পানি পায় না। সাধারণ সময় সেই অবকাশ কমবেশি দেরিতে মিললেও করোনা অভিঘাত ও বৈশি^ক প্রভাব মোকাবিলার মতো জরুরি সময়ে বরাদ্দ ব্যবহার এবং কর্মপরিকল্পনা প্রয়োগও জরুরি এ কারণে যে, ‘রোগী মারা যাওয়ার পর চিকিৎসকের উপস্থিতির’ মতো পরিস্থিতির যেন উদ্ভব না হয়। এটি এ জন্যও বিবেচিত যে, সবাই নতুন বাজেট আসার বা আনার সময় আলোচনা-পর্যালোচনা এমন কি মৃদুমন্দ সমালোচনা করেন, কিন্তু বাজেট পাস হওয়ার পর সারা বছর সেই বাজেট বাস্তবায়ন পরিস্থিতি নিয়ে, তাৎক্ষণিক করণীয় নিয়ে কোনো কথা তো হয়ই না, বরং বিনা বাক্যব্যয়ে সম্পূরক বাজেটে সারা বছরের অপব্যয়, অপচয়, অতিরিক্ত ব্যয়, আয়ে অপারগতা, ব্যয়ে বাড়াবাড়ি, তছরুপ-দুর্নীতি সবই গৃহীত হয়ে যায়। নির্বাচনের বছরের বাজেট গুণধারী হওয়ার চাইতে দৃশ্যধারী হওয়ার অবকাশ ছিল কি?
জীবন ও জীবিকার জন্য বাজেটকে জাতীয় বাজেট থেকে আলাদা অলিন্দে নয়, একীভূত হিসেবে দেখাই জরুরি। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা, কৃষি খাতে অগ্রাধিকার ঘোষণা এবং কিঞ্চিৎ বরাদ্দ বাড়ালেই বাজেট জনগণের বাজেট বা ইতিবাচক হয় না, স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ বাড়ালেই মহামারী মোকাবিলা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অটোমেটিক্যালি বাড়ে না, বিদেশি ঋণের টাকায় টিকা কেনা এবং ফ্রি বিতরণসহ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের সক্ষমতা ও সুশাসন নিয়ে প্রশ্ন বহাল থাকে, দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনা-অপারগতায় আকীর্ণ থাকে এবং তা নিরসন নিয়ন্ত্রণে তথা জবাবদিহিকরণে ‘কথায় নয় কাজে’ অগ্রগতি না থাকে। বাজেটে বরাদ্দ বড় কথা নয়, অর্থনীতিতে সেই বরাদ্দের দ্বারা কতটা সম্পদ ও সেবা সৃষ্টি হলো, প্রভাব ফেলতে পারল সেটিই বড় কথা। বাজেট বাস্তবায়ন সক্ষমতা অক্ষমতা প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকার পরিস্থিতি যথাসময়ে দেখভালের ব্যবস্থা না থাকলে সে বাজেট শাক দিয়ে মাছ ঢাকার কৌশল হিসেবে পরিণতি লাভ করে। এ নিরীখেই কঠিন সময়ে কঠিন বাজেট মিলেছে।
লেখক: কলাম লেখক উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক
পলিথিন বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, বিভিন্ন ধরনের পলিথিনজাত মিনিপ্যাকের উৎপাদন, ব্যবহার ও এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সবগুলোই সমস্যা। পলিথিন উৎপাদন ও এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে বাতাসে যেমন কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়, অন্যদিকে এর ব্যবহার প্রাণিকুল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। প্লাস্টিকের কণা এখন মানুষের রক্তে, মায়ের দুধে, সামুদ্রিক মাছে। শুধু ব্যবহার সম্পর্কিত সমস্যা না, পলিথিনের মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও বেশি সমস্যাসংকুল। কারণ এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, কৃষির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, শহরের নর্দমা বন্ধ করে দিচ্ছে তা আবার রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে এবং সবশেষে শহরকে বসবাসের অনুপযোগী করে দিচ্ছে।
এতসব সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না করা বা বন্ধ করতে না পারার সংকট কোথায় সেটা বুঝতে আমাদের সমস্যা হয়। পলিথিন বন্ধে আইন আছে, নানা ধরনের প্যাকেজিংয়ে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাও অনেক দিন হলো। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু তা সহসাই হচ্ছে না। ‘সোনালি ব্যাগ’ নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পেটানো হয়েছে কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই সোনালি স্বপ্ন কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে আসছে এতদিনে।
পলিথিনের ব্যবহার শহরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি যার অনেকটাই অভ্যাসগত কারণে। শহরের মানুষের পলিথিনের ওপর অভ্যস্ততা যেমন বেশি, তেমনি তারা ভুক্তভোগীও বেশি। রাস্তাঘাট, ড্রেন নোংরা হয়ে তো থাকেই, বাড়তি পাওনা দুর্গন্ধ, তৈরি হয় জলজট ও ডেঙ্গুর মতো রোগবালাই। বাসাবাড়িতে পলিথিনের ব্যবহার তো আছেই, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য, বেকারিজাত পণ্যের পলিথিনের ব্যবহার ও পলিথিনের মোড়ক যত্রতত্র নিক্ষেপই এই অবস্থার জন্য দায়ী। শুধু ঢাকা নয় অন্যান্য ছোট-বড় সব শহরে প্রায় একই অবস্থা। আর এগুলোই হচ্ছে পলিথিন নির্ভর অর্থনীতির অনুষঙ্গ কিন্তু এর অনর্থনীতি হচ্ছে পলিথিনের কারণে পরিবেশদূষণ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণভাবে পলিথিন ব্যবহারের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্যমান নির্ধারণ করা হয় না। তবে দূষণের মাত্রা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে পলিথিনের অর্থনীতির থেকে এর ক্ষয়ক্ষতির অর্থনীতি যে অনেক বড় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আসছে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম অনুঘটক হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। অর্থমন্ত্রী তার এবারের বাজেট (২০২৩-২৪) বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেছেন, পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ এর উল্লেখ করেছেন কিন্তু পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে দৃশ্যমান কোনো রূপকল্প এবারের বাজেটে উল্লেখ করতে সমর্থ হননি। এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’। গত বছরের এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘একটাই পৃথিবী’। পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার আমাদের এই একমাত্র পৃথিবীকে দূষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আইন হয়েছে ২০০২-এ এবং আজ ২০২৩ সাল, এই দীর্ঘ ২১ বছরেও এই আইনের বাস্তবায়ন করা যায়নি। যদিও এবারের বাজেট বক্তৃতায় প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার এর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ধরেই নেওয়া যায় শুল্ক বৃদ্ধির এই হার কোনোভাবে পলিথিন নিরুৎসাহিত করার জায়গা থেকে না বরঞ্চ কিছুটা বাড়তি কর আদায়ের চিন্তা থেকে।
পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সস্তা পলিথিনের ব্যবহার টেকসই ভোগের ধারণার জন্যও কোনোভাবে সহায়ক না। বরঞ্চ এটা এমন এক ধরনের মনস্তত্ত্ব তৈরি করে যা শুধু পরিবেশকেই ধ্বংস করে। যদিও বিশ্বব্যাপী টেকসই ভোগের ধারণার ওপর ভিত্তি করে এখন ‘সার্কুলার অর্থনীতির’ ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সার্কুলার অর্থনীতি শুধু অপচয় কমায় না, প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা, দূষণরোধ, বর্জ্য থেকে তৈরি পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। তাই পরিবেশগত ঝুঁকি, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা এবং এ সংশ্লিষ্ট অভীষ্ট ২০৩০ সমূহ অর্জনে সার্কুলার অর্থনীতি অন্যতম হাতিয়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরে রাস্তায় কোনো পেট বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায় না। এর কারণ হচ্ছে এখন পেট বোতলের প্রায় শতভাগ রিসাইকেল করা হয় এবং পেট বোতল সংগ্রহের জন্য অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে হলেও একটি সংগ্রহ-লাইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু পলিথিনের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। তবে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার সার্কুলার ইকোনমির ধারণার সঙ্গেও একেবারে মানানসই না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রযুক্তিগতভাবে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন রিসাইকেল করা অসম্ভব না হলেও এটি একটি জটিল এবং অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল যে কারণে পেট বোতলের মতো রাস্তা থেকে পলিথিন সংগ্রহ করতে কাউকে দেখা যায় না উলটো রাস্তাঘাটে এখানে সেখানে পলিথিন পড়ে থাকে।
পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অনর্থনীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখন প্রথম দরকার এর ব্যবহার বন্ধ করা, এর ব্যবহারকে অনেক বেশি দামি করে ফেলতে হবে আর এর প্রতিফলন থাকতে হবে বাজেটে। দ্বিতীয়ত, সার্কুলার অর্থনৈতিক চর্চার উৎসাহিত করার জন্য পরিকল্পনা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগের মতো উদ্যোগগুলোকে সরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ ও বেসরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। সরকার প্রতি বছর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবেশ দিবস পালন করে কিন্তু দিবস পালন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই হবে না এর উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে তার ওপরও নজর দিতে হবে। তা নাহলে পলিথিনের অর্থনীতির নামে শুধু অনর্থনীতিকে বাড়িয়ে তোলা হবে, আর সেটা হবে টেকসই অর্থনীতি তৈরির সম্ভাবনার অপমৃত্যু।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
ইংরেজ কবি ও কথাসাহিত্যিক টমাস হার্ডি ১৮৪০ সালের ২ জুন পূর্ব ডচেস্টারশায়ারের হায়ার বকহ্যাম্পটন নামে একটি পল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন। রোমান্টিসিজম ঘরানার এই কবি ও ঔপন্যাসিক উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ ও চার্লস ডিকেন্সের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। ডিকেন্সের মতো তার লেখাও সেকালের ভিক্টোরীয় সমাজে সমালোচিত হয়েছিল। যদিও হার্ডি তার লেখায় তৎকালীন ক্ষয়িষ্ণু গ্রাম্য সমাজের দিকে বেশি আলোকপাত করেছিলেন। টমাস হার্ডি প্রথম দিকে নিজেকে একজন কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। পরে ঔপন্যাসিক হিসেবেও তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। তার পিতা টমাস ছিলেন একজন পাথরখোদাই শিল্পী। তার মা জেমিমা হার্ডি একজন বিদূষী নারী ছিলেন এবং হার্ডির বয়স আট বছর হওয়া পর্যন্ত তিনি তাকে বাড়িতে শিক্ষা দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় মাত্র ষোলো বছর বয়সে তাকে পড়ালেখা ছেড়ে দিতে হয়। এরপর তিনি জেমস হিকস নামের স্থানীয় এক স্থপতির কাছে শিক্ষানবিসির কাজ শুরু করেন। ১৯৬২ সালে হার্ডি লন্ডনের কিংস কলেজে ভর্তি হন। পরে তিনি স্থপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। ১৮৭৪ সালে এমা লাভিনিয়া গিফোর্ডকে বিয়ে করেন তিনি। তার লেখালেখির শুরুটা খুব অল্প বয়সে হলেও ১৮৭০ সালের পূর্বে তার কোনো লেখা প্রকাশিত হয়নি। ফার ফ্রম দ্য মডিং ক্রাউড (১৮৭৪), দ্য মেয়র অব কাস্টারব্রিজ (১৯৮৬), জুড দ্য অবসকিউর (১৮৯৫) ও টেস অব দ্য ড’আরবারভিলস (১৮৯১) তার জনপ্রিয় উপন্যাস। টমাস হার্ডি ১৯২৮ সালের ১১ জানুয়ারি ৮৭ বছর বয়সে মারা যান। তার মরদেহ দাহ করা হয়। তার দেহাবশেষ ওয়েস্ট মিনস্টার অ্যাবির পোয়েটস কর্নারে রাখা হয়েছে।
প্রতি বছরের মতো, জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য বাজেট পেশ করা হলো গতকাল। প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদিত হবে ২৬ জুন। নতুন অর্থবছর শুরু হবে ১ জুলাই।
এবারের অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। যেখানে অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ। এবারের বাজেট বক্তব্যের শিরোনামটা সুন্দর ‘উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘এবারের বাজেট গরিববান্ধব। বাজেটে কোনো ধরনের চাপ নেই। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ধরে রাখতে বাজেটে ধারাবাহিকতা থাকছে। এ ছাড়া সামাজিক বেষ্টনীর বলয় বিপুল আকারে বাড়ানো হবে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘সরকার দেশের মানুষকে ঠকাবে না। সরকার কাউকে গরিব করে কিছু অর্জন করতে চায় না। সবাইকে নিয়ে সবার জন্য আমরা বাজেটটি করেছি।’
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে জাল বিছিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে আটকে ফেলা হয়েছে। রাজস্ব আদায়ে চাপ বাড়ানোর ফলে জীবনযাত্রার অনেক খাতেই খরচ বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি কমাতেও বাজেটে রাখা হয়নি কিছু। আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারের অস্থিরতা কবে কমবে তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।
ফলে মাস-ছয়েক থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চাল, ডাল, আটা, ময়দা, ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবারের দাম আপাতত কমছে না। চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষাসহ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ও কমবে না। তাহলে সাধারণ মানুষের এমন কী উপকারে আসবে এই বাজেট? কীভাবেই-বা ‘গরিববান্ধব’ বাজেট হলো এটি! এ বিষয়ে সহজ-সরলভাবে সাধারণের বোধগম্য ভাষায়, বাজেটের পজিটিভ দিকগুলো তুলে ধরা দরকার। অবশ্য যদি বোঝানোর মতন কিছু থাকে! কিন্তু এ মুহূর্তে যে প্রশ্নটি মুখ্য, সাধারণ মানুষের জন্য কী এমন ছাড় দেওয়া হলো প্রস্তাবিত বাজেটে?
বাজেট পেশের আগ থেকেই বাজারে বিভিন্ন পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। এবারও তাই হয়েছে। অথচ প্রস্তাবিত বাজেটে থাকার কথা ছিল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য হ্রাসের বিষয় ছাড়াও নিউজপ্রিন্ট আমদানিসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ককর প্রত্যাহার করার কথা। কিন্তু তা হয়নি। তাহলে এই বাজেট কীভাবে গরিববান্ধব হলো!
এখনো সাধারণ চিন্তার মানুষ পরিষ্কার না, উত্থাপিত এই বাজেটের মাধ্যমে কীভাবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে? সত্যিকার অর্থে, দেশের মানুষকে ভালোবাসতে হলে, তাদের মৌলিক অধিকারের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সাধারণ মানুষের যন্ত্রণা এবং সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করা একটি গণতান্ত্রিক ও দেশপ্রেমিক সরকারের প্রধান দায়িত্ব।
দেশের সিংহভাগ মানুষ বাজেটের মারপ্যাঁচ বোঝে না। তারা দেখতে চায়, স্বাভাবিক জীবনযাপনে কোনো সমস্যা তৈরি হচ্ছে কি? দ্রব্যমূল্যের কঠিন যন্ত্রণা থেকে সে মুক্তি পাচ্ছে কি? মোদ্দা কথা, জীবনযাপনে কোনো ধরনের বাড়তি চাপের মুখোমুখি হচ্ছে কি? যদি তা না হয়, মনে রাখতে হবে এই চাওয়া খুবই সামান্য।
উত্থাপিত বাজেটের মাধ্যমে কি স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি এবং স্মার্ট ইকোনমি-সম্পন্ন একটি দেশ গড়ে তোলা সম্ভব? আমাদের প্রত্যাশা থাকবে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে প্রথম চূড়ান্ত বাজেট যেন হয় জনবান্ধব।
সমস্ত অর্থনৈতিক কর্মকা-ের মধ্যে কিন্তু সাধারণ মানুষের চাওয়াকেই প্রাধান্য দিতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।
অপেক্ষা আর মাত্র ৩ দিনের। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই।
শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে। কিং খানের ‘জাওয়ান’ কাঁপাচ্ছে পর্দা, কাটতি বাড়ছে বক্স অফিসে; বিশ্বকাপে আইসিসির পকেট ভরবে তো?
প্রস্তুতি বলছে, ভরবে। উইকেটে হবে রান উৎসব, লড়াই হবে ধুন্ধুমার। তাতেই ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ হবে এক ব্লকবাস্টার মেগা হিট।
মাস তিনেক আগে, বিশ্বকাপের মূলপর্বের ম্যাচগুলো যে ১০ ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে সেই ভেন্যুগুলোর কিউরেটরদের সঙ্গে বসেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান কিউরেটর। সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপের একটাই মন্ত্র, রান চাই।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে, ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ৩ ওয়ানডের সিরিজ খেলেছে সেই ম্যাচগুলো যদিও বিশ্বকাপের ভেন্যুতে হয়নি তবে সেই সব ম্যাচেও রানের বন্যা বয়েছে।
প্রথম দুটো ওয়ানডেতে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার করা ২৭৬ রান অনায়াসে তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে ভারত। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ঠেঙিয়ে তুলেছেন ৩৯৯ রান। তিন নম্বর ম্যাচে আবার অস্ট্রেলিয়া করেছে ৩৫২ রান, যা তাড়া করে ভারতও গিয়েছিল ২৮৬ অবধি।
উদ্বোধনী ম্যাচ হবে গুজরাতের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এখানে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। ম্যাচে শুভমান গিল করেন সেঞ্চুরি, ভারত করে ৪ উইকেটে ২৩৪ রান আর জবাবে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ৬৬ রানে।
বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটের ধরন বুঝে ব্যাট করতে পারলে ৫০ ওভারে এখানে রানবন্যা হবে। বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। দুই দল এখানে মুখোমুখি হয়েছে বহুবার, পোশাকের রঙ কখনো রঙিন কিংবা কখনো সাদা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ কমেনি। এই মাঠে অস্ট্রেলিয়া ২৬৯ রান করে ভারতকে ২১ রানে হারিয়েছে সবশেষ ম্যাচে।
আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ঘরের মাঠে সবশেষ মৌসুমে ধোনির ‘ইয়েলো আর্মি’ ৮ ম্যাচ খেলে ২০০ রানের ওপরে করেছে দুইবার, একবার জিতেছে অন্যবার হেরেছে। তবে দুই ইনিংসেই ২০০’র বেশি রান হয়েছে দুটো ম্যাচেই। অর্থাৎ চাইলে চেন্নাইকেও ব্যাটিং স্বর্গে পরিণত করা সম্ভব।
বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর টানা তিন ওয়ানডে জিতে সিরিজ তো নিশ্চিত করেছেই, টানা তিন ম্যাচে ৩০০’র ওপর রান করেছে। চতুর্থ ওয়ানডেতে তো ৪০০ পার করেছে প্রোটিয়ারা। ব্যাটিং উইকেটে তারাও যে কোনো প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। হেনরিক ক্লাসেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৮৩ বলে খেলেছেন ১৭৪ রানের ইনিংস। বিধ্বংসী রূপে ফিরছেন ডেভিড মিলারও।
প্রোটিয়ারা প্রথম ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে। সেখানে অবশ্য সবশেষ হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ম্যাচেও খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে তারা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৯৯ রানে। দিল্লির মাঠটা হয়তো খানিকটা স্পিনারদের দিকেই ঝুঁকবে, তবে অন্য মাঠগুলোতে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবে মেতে উঠতে দেখার সম্ভাবনা জোরালো। তাই অনেক সাবেক ক্রিকেটারই প্রোটিয়াদের দেখছেন শেষ চারে।
বিশ্বকাপের আগে ক্লাসেন ছাড়াও ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস খেলেছেন ১৮২ রানের ইনিংস, দারুণ ছন্দে ইংল্যান্ডের ডাভিড মালানও। তবে সেরা ছন্দে নিঃসন্দেহে শুভমান গিল। সবশেষ ৫ ইনিংসে দুটো শতরান আর একটা হাফসেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেলও আছেন দারুণ ছন্দে। দুটো হাফসেঞ্চুরি আর একটা সেঞ্চুরি সবশেষ ৫ ইনিংসে। হায়দ্রাবাদে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের ৩৪৫ রান কিউইরা তাড়া করেছে ৩৮ বল হাতে রেখে।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন, এই বারের বিশ্বকাপে রানবন্যায় বোলারদের জন্য কাজটা হবে কঠিন। দেশ রূপান্তরকে আশরাফুল বলেন, ‘আমাদের পেসাররা গত এক দেড় বছর ধরে খুবই ভালো করছে। তবে যেহেতু ভারতের মাটিতে খেলা, আমরা দেখেছি যে সাড়ে ৩০০’র বেশি রান হচ্ছে প্রতিটা ম্যাচে। কেউ যদি ভালো না করে, তাকে মনে রাখতে হবে যে টুর্নামেন্টে পরের ম্যাচে ফিরে আসতে হবে। একজনের দিন খারাপ যেতেই পারে, কোনো ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান উঠেই যেতে পারে। ৯টা ম্যাচের ভেতর ৪-৫টা ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান হতে পারে। তাই বোলারদের ফিরে আসার মানসিকতা থাকতে হবে।’
বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমও বলেছেন যে দেড় মাসের আসরে প্রস্তুত থাকতে হবে যে কোনো কিছুর জন্যই, ‘দেড় মাসের আসর, ৯টা ম্যাচ এই সময়ে খেলতে হবে বা তারও বেশি। অনেক উত্থান-পতন হবে। যে কোনো কিছুর জন্যই তৈরি থাকতে হবে।’
রান উৎসবের বিশ্বকাপ যে হতে যাচ্ছে, তার সব রসদই মজুদ। মাঠগুলোকে করা হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গ, বিশ্বকাপে আসার আগে সেরা সেরা ব্যাটসম্যানরাও আছেন ছন্দে। শুধু প্রশ্ন এটাই, রান উৎসবের এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে রান করবেন কে? সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাটিংয়ের ছবিটা যে মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়।
সুরের মূর্চ্ছনায় মোহাচ্ছন্ন শ্রোতারা হারিয়ে যাবেন। তারপর নৃত্যের তালে মেতে উঠবে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি ক্রিকেট স্টেডিয়াম। আগামী বুধবার (৪ অক্টোবর) বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। আয়োজনকে বর্ণাঢ্য করে তুলতে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
এবারের বিশ্বকাপ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কী থাকছে, এ নিয়ে আয়োজক ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) এখনো চুপ। দর্শকদের চমকে দিতে এমন গোপনীয়তার চেষ্টা অবশ্য প্রায় সব আয়োজকেরাই করে থাকেন।
তবে ভারতীয় গণমাধ্যম পিটিসি পাঞ্জাবের সূত্রে এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইনসাইডস্পোর্ট।
খবরে বলা হয়, বিশ্বকাপের উদ্বোধনী বিভিন্ন পরিবেশনায় থাকবেন বেশ কয়েকজন বলিউড অভিনেতা–অভিনেত্রী ও গায়ক–গায়িকা। এর মধ্যে গান পরিবেশনে থাকবেন কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী আশা ভোসলে, গায়ক ও সংগীত পরিচালক শঙ্কর মহাদেভান, কণ্ঠশিল্পী শ্রেয়া ঘোষাল ও অরিজিত সিং।
নাচের পরিবেশনায় দেখা যাবে রণবীর সিং ও তামান্না ভাটিয়াকে। রণবীর বিশ্বকাপের অফিশিয়াল থিম সংয়েও অংশ নিয়েছিলেন।
নাচ–গানের পাশাপাশি বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হবে ভারতের ইতিহাস–ঐতিহ্য ও ক্রিকেট উন্মাদনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খেলোয়াড়দের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ১০ দলের অধিনায়ক। এ ছাড়া আয়োজক বিসিসিআই ও আইসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তো থাকবেনই।
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ অনুযায়ী, দেশে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ১১৯। এ তালিকায় রয়েছে যারা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, মাজার, ফুটপাত, সিঁড়ি, ওভারব্রিজের নিচে, লঞ্চ টার্মিনাল, ফেরিঘাট, মার্কেটের বারান্দায় দিন কাটান। আর বস্তিতে বসবাস করছে ১৮ লাখ ৪৮৬ জন। তারা মূলত শহর ও উপশহর এলাকায় টিনের ঘর, সেমিপাকা ঘর বা ঘিঞ্জি পাকা ঘরে বাস করে। তবে বস্তিবাসী কারা সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৬ সালে সরকার আবাসন নীতিমালা করেছে। আবাসন উন্নয়ন তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। আবাসন সংকট নিরসন করতে হলে সরকারকে আবাসন তহবিল করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বস্তিবাসী, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত কারা তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। না হলে বোঝা যাবে না কত মানুষ বস্তিতে থাকে।’
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে আবাসন সংকট কাটছে না। স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে আবাসন।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে ৯ লাখ গৃহহীন মানুষকে চিহ্নিত করে। ইতিমধ্যে আট লাখ মানুষের গৃহের ব্যবস্থা করেছে; প্রায় ৪০ লাখ মানুষের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বাকিদের জন্যও শেখ হাসিনা ব্যবস্থা করবেন। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যও আবাসনের ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা তার সৈনিক হিসেবে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
জানা যায়, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার সবার জন্য আবাসন। অঙ্গীকার পূরণে সরকার নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সারা দেশে ৩০টি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, নোয়াখালী, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, শরীয়তপুর, নড়াইল, খুলনা, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব প্রকল্পে ৬ হাজার ৪৩২টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২৭টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পে ৫ হাজার ৯৩০টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হবে। শেরপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, হবিগঞ্জ, সিলেট, ঝিনাইদহ, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে ১৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৩৫টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় রাজউক পূর্বাচল, ঝিলমিল, উত্তরা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় আবাসন প্রকল্পে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ফ্ল্যাটগুলো উচ্চমূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। পূর্বাচল, ঝিলমিল ও উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনেও বিভিন্ন সংস্থা আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন শহরে বসবাসরত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সম্পদশালী ব্যক্তিরা। যাদের অনেক ফ্ল্যাট আছে তারা আরও ফ্ল্যাট কিনছেন। কিন্তু বাস্তুহারা, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত সরকারি এসব আবাসনের সুবিধা পাচ্ছেন না। অল্প দামে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার আবাসন প্রকল্প তৈরি করে যাদের নামে বরাদ্দ দিচ্ছে তারা রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত।
জাতিসংঘ ১৯৮৫ সালে বিশ্ব বসতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশে^ অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার এ দিবসটি পালিত হয়।
শিশুরাই আগামী দিনের কান্ডারি। তাদের হাতেই অর্পিত হবে আগামী দিনের নেতৃত্ব। দেশের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে শিশুদের সুন্দর, স্বাভাবিক ও ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশে বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে হবে। শিশুদের সুস্থ, সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার গুরুত্ব অনুভব করে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। এর ফলে শিশুদের জন্য ‘হ্যাঁ’ বলুন, সবার আগে শিশু ইত্যাদি স্লোগান যেমন সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি শিশু অধিকার নিয়ে কাজও হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে বাংলাদেশের সফলতা দৃশ্যমান। বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ছেলের ক্ষেত্রে ২১ এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ বছর নির্ধারণ করেই সরকার দায়িত্ব শেষ করেনি, বরং তা পালিত হচ্ছে কি না তাও নজরদারিতে রেখেছে। ফলে, বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের ঘটনা এখন নেই বললেই চলে। বরং, পত্রপত্রিকায় বাল্যবিয়ে প্রতিহত করতে পাত্র/পাত্রীর সহপাঠী, শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তার (ইউএনও, সমাজসেবা অফিসার) ভূমিকার কথা প্রকাশিত হয়। কিন্তু এর উল্টোচিত্রও রয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে আজ বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশু দিবস। প্রতিবছর ২০ নভেম্বর জাতিসংঘ বিশ্ব শিশু দিবস পালন করে। তবে অন্যদিনেও এই দিবসটি পালনের নজির রয়েছে। যেমন ভারতে প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর জন্মদিন ১৪ নভেম্বর শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়। আমাদের দেশেও ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকার অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার বিশ্ব শিশু দিবস এবং এরপরের এক সপ্তাহ শিশু অধিকার সপ্তাহ হিসেবে পালন করে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এই কর্মসূচিগুলোর সুফল ইতিমধ্যেই পরিলক্ষিত হয়েছে।
নাগরিকের পাঁচটি মৌলিক অধিকার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা; যা শিশুদের জন্যও প্রযোজ্য তার শতভাগ বাস্তবায়ন দেখা যায় না। রাতে ফুটপাতে শুয়ে থাকা পথশিশু, দিনের বেলা পার্ক-রাস্তার ফুল বিক্রেতা শিশু, লেগুনার হেলপার, খাবার হোটেল, চায়ের দোকানে ফুট-ফরমাশ খেটে দুবেলা আহার জোগানো শিশুরা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত নয়। শুধু যে নিম্নবিত্ত বা দরিদ্র শিশুরাই আমাদের অবিমৃশ্যকারিতার শিকার তা নয়। ঝুঁকিতে পড়েছে মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুদের বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়াও।
শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে লাগাতার পরীক্ষা-নিরীক্ষা, কোচিং ক্লাসের চাপ, জিপিএ ৫ পাওয়ার জন্য অভিভাবকের চাপ সব মিলিয়ে শিশু-কিশোররা অতিক্রম করছে এক ক্রান্তিকাল। পরীক্ষায় ভালো ফলের জন্য বাবা-মা ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ তাদের ওপর যে মানসিক চাপ সৃষ্টি করে তার ফলাফল দেখা যায় প্রতি বছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর। সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয় কাক্সিক্ষত ফল না পাওয়ায় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা।
পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষের মৌলিক অধিকার পাঁচটি হলেও একজন শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য দাবি করে আরও বেশি। তার স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন খেলাধুলার সুব্যবস্থা। রাজধানীসহ সারা দেশে আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে খেলার মাঠ। আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুসারে যেকোনো এলাকায় প্রতি পাঁচ হাজার মানুষের জন্য একটি করে খেলার মাঠ প্রয়োজন। যে মাঠের আকার হতে হবে এক একরের। ঢাকার শহরের জনসংখ্যা যদি আড়াই কোটি ধরা হয় তাহলে এই বিশাল জনসংখ্যার জন্য মাঠের প্রয়োজন হবে পাঁচ হাজার। কিন্তু ২০০০ সালের এক জরিপ অনুসারে এই মাঠের সংখ্যা মাত্র ১৫০টি। গত ২৩ বছরে এই সংখ্যা আরও হ্রাস পেয়েছে বলাই বাহুল্য।
মাঠহীন এই শহরে শিশুদের জন্য তৈরি হয়েছে আরেকটি ফাঁদ ফাস্ট ফুড দোকানের প্লে-জোন। প্লে-জোন নির্মাণ করে শিশুদের মনোযোগ আকর্ষণ করছেন ফাস্ট ফুড ব্যবসায়ীরা। ফাস্ট ফুড শিশু স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। ফাস্ট ফুড শিশুদের বার্গার, স্যান্ডউইচ, পেস্ট্রি, কেক, সফট ড্রিংকসের কুফল সম্পর্কে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা নানাভাবে আমাদের সতর্ক করেছেন। ফাস্ট ফুড ও সফট ড্রিংকস গ্রহণের ফলে অতি স্থূলতা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, অ্যালার্জির সমস্যা, ক্যানসার, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি নানা ধরনের শারীরিক অসুস্থতা সৃষ্টি হতে পারে।
স্বাভাবিকভাবেই খেলার মাঠহীন এই খাবারের দোকানগুলো শিশুদের ভীষণ প্রিয়। আর এই সুযোগটিই নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। প্লে-জোন সংযুক্ত এই বিশেষ দোকানের খাবারের মূল্য অন্য সাধারণ দোকানের থেকে অনেক বেশি। কিন্তু সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে এই বাড়তি অর্থ পরিশোধ করতে হয় অভিভাবকদের। খেলার মাঠের সংকট সৃষ্টি করেছে ইনডোর প্লে-শপ। এই ইনডোর প্লে-শপে খেলার জন্য ঘণ্টা অনুসারে অর্থব্যয় করতে হয় অভিভাবকদের। দোকান অনুসারে এই অর্থ ঘণ্টাপ্রতি ৩৫০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
চিকিৎসা, শিক্ষা থেকে শুরু করে এখন খেলাধুলার মতো মৌলিক অধিকারও যখন অর্থের বিনিময়ে কিনতে হয়, তখন বলা যায় না আমাদের শিশুরা নিরাপদ আছে, বলতে হয় তাদের শৈশব নানা চাপে সংকুচিত হয়ে আছে। একটি নিরাপদ, বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার অঙ্গীকার শুধু নথিতে পড়ে রবে না, বাস্তবায়িতও হবে বিশ্ব শিশু দিবসে এটিই আমাদের প্রত্যাশা।
বগুড়ার প্রায় ৪০০ বাড়ির দেয়ালে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা দাবি করে কম্পিউটার প্রিন্ট করা কাগজ সাঁটিয়েছেন অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা। গত শনিবার রাতে কোনো একসময় জেলা কাহালুর উপজেলার মুরইল ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের বিষ্ণুপুর মাঝগাড়িপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, হিন্দুপাড়া ও মোল্লাপাড়ায় বাড়ির দেয়ালে কাগজগুলো লাগানো হয়েছে। এতে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে গতকাল রবিবার সকালে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিষ্ণুপুর গ্রামের চারপাড়ায় বিভিন্ন বাড়ির দেয়ালে কম্পিউটারে প্রিন্ট করা কাগজ সাঁটানো হয়েছে। ওই কাগজগুলোতে ২০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দাবি করা হয়েছে। দেয়ালে সাঁটানো কাগজগুলোতে লেখা রয়েছে ‘আসসালামু আলাইকুম, ২০০০ টাকা ৬ তারিখে দিতে হবে। না হইলে ৭ তারিখ থেকে আপনাদের ছেলে-মেয়ে হারায় গেলে আমার কোনো কিছু করার থাকবে না। আমি বা আমরা কে সেটা না খুঁজে, আমি যা বলছি সেটা করার চেষ্টা করেন তাহলে কিছু হবে না। অল্প কিছু টাকার জন্য বাচ্চাদের বিপদে ফেলায়েন না। যদি ছেলে-মেয়ের মঙ্গল চান তাহলে লোয়া-পুকুর সোলার লাইটের সঙ্গে যে বক্স থাকবে। নিজের টাকার সাথে একটা কাগজে নিজের নাম লিখে ওই বক্স-এ ফেলান আর নিজের বাচ্চাকে সুরক্ষিত করুন ধন্যবাদ। [বিঃ দ্রঃ আমার এই কাগজ আপনি পড়ছেন তাহলে মনে করেন আপনার ছেলে/মেয়েকে তুলে আনতেও পারবো। দয়া করে টাকাটা দিয়েন আমরা ছেলেগুলা ভালো না। ভালো থাকবেন ৬ তারিখ পর্যন্ত আল্লাহ হাফিজ।’
গতকাল রবিবার সকালে এসব পাড়ার মানুষ তাদের বাড়ির দেয়ালে সাঁটানো কাগজ দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এলাকার মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের খবর দিলে তারা বিষয়টি পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে দেখেন। এসব পাড়ার লোকজন জানান, সকালে উঠে দেখেন দরজার পাশে এসব কাগজ লাগানো হয়েছে। প্রতিটি কাগজে পারিবারিক অবস্থান বুঝে নানা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়েছে। দিনমজুরের কাছে সর্বনিম্ন ২০০ টাকা ও বিত্তবানদের কাছে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মুরইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল জলিল ও স্থানীয় মেম্বার জাহিদুর রহমান বলেন, ‘স্থানীয় লোকজন খবর দিলে বিষ্ণুপুর গ্রামে এসে বিষয়টির সত্যতা পাই। এলাকায় আতঙ্ক ছড়াতে এ ধরনের কাজ করেছে একটি চক্র। ধারণা করা হচ্ছে, স্থানীয়রা এ কাজের সঙ্গে জড়িত। নইলে এক রাতে ৩০০ থেকে ৪০০ বাড়িতে এই কাগজ সাঁটানো সহজ নয়। প্রতিটি বাড়িতে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়েছে। তার মানে এলাকার বা আশপাশের কোনো চক্র এ ঘটনা ঘটিয়েছে।’
এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বগুড়ার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নাজরান রউফ, কাহালু থানার ওসি মাহমুদ হাসানসহ পুলিশ সদস্যরা।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নাজরান রউফ বলেন, গভীর রাতে কে বা কারা এমন লিফলেট বাড়ির সামনে সাঁটিয়ে দিয়েছে। ফলে এলাকার লোকজন ভয় পাচ্ছে। ভয়ের কোনো কারণ নেই। আমরা ঘরে ঘরে গিয়ে কথা বলেছি। এলাকায় যে বা যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে অতিদ্রুত তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। আমাদের বেশ কয়েকটি টিম এ বিষয়ে কাজ করছে। বিভিন্ন বিষয় সামনে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।