
প্রিন্সিপাল ইবরাহিম খাঁর ‘জহুর ধোপা’ গল্পটির কথা বড্ড মনে পড়ে। অতি নিম্ন আয়ের পেশাজীবী জহুর ধোপা হবু খান সাহেবের কাপড় খানসামাকে ভুল ডেলিভারি দেওয়ার জন্য খানসামা তাকে বেদম মারধর করে। খানসাহেব এ জন্য আইনের আশ্রয় নিতে জহুর ধোপাকে উপদেশ দেন। জবাবে জহুর বলেছিল, ‘না হুজুর। আমি খানসামাকে সঙ্গে সঙ্গে মাফ করে দিয়েছি। তার বিরুদ্ধে কোনো নালিশ নাই। আমাদের পীর হুজুর বলেছেন, বাবারা ছোটখাটো ফ্যাকড়া ফ্যাসাদে না জড়িয়ে তা মন থেকে মুছে ফেলা উচিত। কেননা শেষ বিচারের দিন তুমি যদি খোদার কাছে এসব ছোটখাটো ফরিয়াদের ফিরিস্তি পাড়তে থাক তাহলে মাবুদের কাছে আসল ফরিয়াদ জানানোর সময় পাবে না।’
অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতা অর্জন ব্যতিরেকে স্বাধীনতা যে নির্মল নয়, তা সব দেশ ও জাতি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। ইতিমধ্যে এ কথা বহুল উচ্চারিত যে, একুশ শতকে অর্থনৈতিক উন্নয়নই হবে তাবত রাষ্ট্র ও জাতির শ্রেষ্ঠত্বের এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার অন্যতম নিয়ামক। ভূরাজনীতির ভায়রা ভাইদের ধ্যান জ্ঞান এখন কীভাবে অর্থনৈতিক স্বার্থ ও শক্তি অর্জন বা উদ্ধার করা যায়।
তাই অর্থনৈতিক মুক্তিকে গণতন্ত্রায়নের অন্যতম উপলক্ষ ও উপায় হিসেবে বিবেচনার দাবি সোচ্চার হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে, যেখানে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে এখনো নিরলস প্রচেষ্টা ও আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। সেই আন্দোলনে ছোটখাটো প্রসঙ্গ-অপ্রসঙ্গ এনে সেখানে আত্মশক্তি ক্ষয় করাটা বোকামি। আপনা মাঝে শক্তি ধরেই দুর্জনেরে হানো, নিজেকে অসহায় না জেনো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জাপানি জাতির আত্ম শক্তিসাধনার স্বরূপ সন্ধানে গিয়ে দেখেছেন জাপানিরা বাজে চেঁচামেচিতে নিজেদের বল ক্ষয় করে না, ফলে প্রয়োজনের সময় টানাটানি পড়ে না।
বিশ্ব সংস্কৃতি ও সভ্যতার উন্মেষ ও বিকাশ ঘটেছিল এশিয়ায়। সামরিক শক্তিমত্তার পাশাপাশি দর্শন ও বিজ্ঞানচর্চার অবদান সেখানে ছিল। পরবর্তী সময় ইউরোপে প্রসার ঘটে এশীয় সমৃদ্ধি ও জ্ঞানবিজ্ঞান অধ্যয়ন অনুধাবনের। একে অবলম্বন করেই ইউরোপে শিল্প বিপ্লব সংঘটিত হয় এবং বিশ্ব নেতৃত্ব তাদের হাতে চলে যায়। এরপর ইউরোপীয় শিল্প বিপ্লবের ঢেউ আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে আমেরিকার উপকূলে আছড়িয়ে পড়ে। বিগত শতাব্দীতেই আমেরিকা শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে প্রযুক্তির উৎকর্ষকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক শক্তিতে উন্নীত হয়। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিই যুক্তরাষ্ট্রকে সামরিক তথা বিশ্ব রাজনৈতিক পরাশক্তির পরিচিতিতে পৌঁছে দেয়। স্নায়ুযুদ্ধের অবসান-উত্তর পরিবেশে এখন তার শক্তিশালী অবস্থান মূলত অর্থনৈতিক শক্তিমত্তার স্থায়িত্ব ও স্থিতিশীলতার ওপরই নির্ভর করছে। জাপানসহ পূর্ব এশীয় দেশগুলোতে বিগত চার দশকে অর্জিত অর্থনৈতিক সাফল্যও ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, একুশ শতকে এশিয়া আবার ফিরে পেতে পারে তার গৌরব। ইনফরমেশন টেকনোলজির উৎকর্ষই হবে অর্থনৈতিক সাফল্যের সোপান, যা নিয়ন্ত্রণ করবে বিশ্ব রাজনীতিকে।
এ কথা অস্বীকার করা যায় না যে, অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতা জীবনযাত্রার মানকে, মূল্যবোধকে এমন একটি প্রত্যয় প্রদান করে, যা অন্যান্য সব অনুষঙ্গ অনুশাসনে বা সুনীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হয়। ব্যক্তি বা পরিবারের ক্ষেত্রে যে কথা, সে কথা রাষ্ট্র বা দেশের ক্ষেত্রেও। সাম্প্রতিককালে বিশে^ যতগুলো জাতীয় স্বাধীনতা বা মুক্তি সংগ্রাম সংঘটিত হয়েছে সেগুলোর মূল প্রেরণায় ছিল অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার আকাক্সক্ষা, গোষ্ঠী বা ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারিতা তথা স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের বলয় থেকে রাষ্ট্রীয় সৌভাগ্য ও সুযোগকে সবার আয়ত্তে বা অধিকারে আনা। অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের নিশ্চয়তা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য সুবিধা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ, উন্নত অবকাঠামো এবং মানবাধিকারসহ সামাজিক নিরাপত্তা বিধানের বিষয়গুলোকে রাষ্ট্রের কাছ থেকে শুধু দাবিই করা হচ্ছে না বরং এসবের ক্ষেত্রে পরিস্থিতির সূচকই এখন সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের প্রতি জনসমর্থন ও গণতান্ত্রিক পরিবেশের পরিচায়ক।
মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রসার এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থাকে অধিকতর উদারীকরণের লক্ষ্যে দেশে দেশে অর্থনৈতিক সংস্কারের যে কর্মসূচি গৃহীত হচ্ছে তার অভীষ্টই হচ্ছে রাষ্ট্রীয় তথা বৈশ্বিক সম্পদ ও সুযোগে সবার অবারিত অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা। স্বচ্ছতা ও সুশাসনের তাগিদ এসব সংস্কার ব্যবস্থাপত্রে প্রকৃতপক্ষে আমজনতার ক্ষমতায়নের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নিবেদিত। একটি কল্যাণ অর্থনীতিতে সব পক্ষকে স্ব স্ব অবস্থানে থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন এবং সব প্রয়াস প্রচেষ্টায় সমন্বয়ের মাধ্যমে সার্বিক উদ্দেশ্য অর্জনের অভিপ্রায়ে অয়োময় প্রত্যয়দীপ্ত হওয়ার পরিবেশ সৃষ্টির আবশ্যকতা অনস্বীকার্য। একজন কর্মচারী বা রাজনৈতিক সমর্থকের পারিতোষিক বা উপার্জন তার সম্পাদিত কাজের পরিমাণ বা পারদর্শিতা অনুযায়ী না হয়ে কিংবা কাজের সফলতা ব্যর্থতার দায়দায়িত্ব বিবেচনায় না এনে যদি দিতে হয়, অর্থাৎ কাজ না করেও সে যদি বেতন পেতে পারে, রাষ্ট্রীয় স্বার্থ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে সে যদি সম্পদশালী হয়, ক্ষমতার বলয় তৈরি করে তাহলে গণতন্ত্র বলি বা সক্ষমতা অর্জনের প্রত্যাশা আর দায়িত্ববোধের বিকাশভাবনা মাঠে মারা যাবেই। এ ধরনের ব্যর্থতার বজরা ভারী হতে থাকলেই যেকোনো উৎপাদন ব্যবস্থা কিংবা উন্নয়ন প্রয়াস ভর্তুকির পরাশ্রয়ে যেতে বাধ্য।
দারিদ্র্যপীড়িত জনবহুল কোনো দেশে পাবলিক সেক্টর বেকার ও অকর্মন্যদের জন্য যদি অভয়ারণ্য কিংবা কল্যাণ রাষ্ট্রের প্রতিভু হিসেবে কাজ করে তাহলে সেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। যদি বিপুল জনগোষ্ঠীকে জনশক্তিতে পরিণত করা না যায়, উপযুক্ত কর্মক্ষমতা অর্জন ও প্রয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করে, তাহলে উন্নয়ন কর্মসূচিতে বড় বড় বিনিয়োগও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে।
চাকরিকে সোনার হরিণ বানানোর কারণে সে চাকরি পাওয়া এবং রাখার জন্য অস্বাভাবিক দেনদরবার চলাই স্বাভাবিক। দায়দায়িত্বহীন চাকরি পাওয়ার সুযোগের অপেক্ষায় থাকার ফলে নিজ উদ্যোগে স্বনির্ভর হওয়ার আগ্রহতেও অনীহা চলে আসে। মানবসম্পদ অপচয়ের এর চেয়ে বড় নজির আর হতে পারে না। দরিদ্রতম পরিবেশে যেখানে শ্রেণিনির্বিশেষে সবার কঠোর পরিশ্রম, কৃচ্ছ সাধন ও আত্মত্যাগ আবশ্যক, সেখানে সহজে ও বিনা ক্লেশে কীভাবে অর্থ উপার্জন সম্ভব, সেদিকেই ঝোঁক বেশি হওয়াটা সুস্থতার লক্ষণ নয়।
ট্রেড ইউনিয়ন নির্বাচনে প্রার্থীর পরিচিতিকরণে যে অঢেল অর্থ ব্যয় চলে তা যেন এমন এক বিনিয়োগ, যা অবৈধভাবে অধিক উসুলের সুযোগ আছে বলেই। শোষক আর পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থায় বঞ্চিত নিপীড়িত শ্রমিক শ্রেণির স্বার্থ উদ্ধারে নিবেদিত চিত্ত হওয়ার বদলে ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃত্ব নিজেরাই যখন উৎপাদনবিমুখ আর আত্মস্বার্থ উদ্ধারে ব্যতিব্যস্ত হয়ে শোষণের প্রতিভু বনে যায় তখন দেখা যায়, যাদের তারা প্রতিনিধিত্ব করছে তাদেরই তারা প্রথম ও প্রধান প্রতিপক্ষ। প্রচ- স্ববিরোধী এই পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে উৎপাদন, উন্নয়ন তথা শ্রমিক উন্নয়ন সবই বালখিল্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
সমাজে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিকাশভাবনা ব্যক্তিবন্দনা, চর্চা, স্বার্থ ও শর্তের বেড়াজালে আটকে গেলে তা বুমেরাং হয়ে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। অর্থনীতিতে সরবরাহ চাহিদায় বণ্টন বৈষম্য যেমন সুষম সম্পদ সৃষ্টির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, যেভাবে সমন্বিত উৎপাদন অভিপ্সায় বিভ্রান্তি বিসংবাদ উপস্থিত করে। ওভারটেক করার প্রবণতা যেমন যাত্রাপথে বিশৃঙ্খলা উপহার দেয়, তেমনি পরমতসহিষ্ণুতার অভাব সুশীল ও সুষম আচরণকে নির্বাসনে পাঠাতে পারে। গণতন্ত্রের জন্য যা কোনো অবস্থাতেই পুষ্টিকর পরিস্থিতি নয়। দশটি কাজের সাতটি ভালো তিনটি মন্দ হতে পারে। ভালোকে ভালো বলে স্বীকৃতি, মন্দকে মন্দ বলে তিরস্কারের নীতিগত অবস্থানে যে কোনো আপস আত্মঘাতের নামান্তর। মন্দকে লুকিয়ে শুধু ভালোর বন্দনা এবং ভালোকে ছাপিয়ে একতরফাভাবে মন্দকে সামনে আনা সুস্থতার লক্ষণ নয় কোনো পরিবেশেই। তিরস্কার পুরষ্কারে পক্ষপাতিত্ব কিংবা অন্ধত্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নেও যেমন, সমাজ সুসংগঠনের বেলাতেও সমান দুঃসংবাদবাহী।
‘সবার উপর মানুষ সত্য তার উপরে নাই।’ গণতন্ত্রে মানুষই বড় কথা। অর্থনৈতিক উন্নয়ন এই মানুষের কল্যাণভাবনাতেই নিবেদিত। এই মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধের দ্বারা, আবার সব মানুষের দ্বারা কর্তব্যকর্ম সূচারুরূপে সম্পাদনের মাধ্যমে সমাজ সমৃদ্ধি লাভ করে। আবার এই মানুষের দায়িত্বহীনতার কারণে সমাজের সমূহ ক্ষতিসাধিত হয়। সবার সহযোগিতা ও সমন্বিত উদ্যোগে সমাজ নিরাপদ বসবাসযোগ্য হয়ে ওঠে। সমাজবিজ্ঞানীরা তাই মানুষের সার্বিক উন্নয়নকে দেশ জাতি রাষ্ট্রের সব উন্নয়নের পূর্বশর্ত সাব্যস্ত করে থাকেন। আগে সমাজ না আগে মানুষ এ বিতর্ক সর্বজনীন। মানুষ ছাড়া সমাজের প্রত্যাশা বাতুলতামাত্র।
রাষ্ট্রে সব নাগরিকের সমান অধিকার এবং দায়িত্ব নির্ধারিত আছে। কিন্তু দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা অধিকার আদায়ের সম্ভাবনা ও সুযোগকে নাকচ করে দেয়। পণ্য ও সেবা সৃষ্টি না হলে চাহিদা অনুযায়ী ভোগের জন্য সম্পদ সরবরাহে ঘাটতি পড়ে। মূল্যস্ফীতি ঘটে, সম্পদ প্রাপ্তিতে প্রতিযোগিতা বাড়ে। পণ্য ও সেবা সৃষ্টি করে যে মানুষ সেই মানুষই ভোক্তার চাহিদা সৃষ্টি করে। উৎপাদনে আত্মনিয়োগের খবর নেই চাহিদার ক্ষেত্রে ষোলোআনা- টানাপড়েন তো সৃষ্টি হবেই। অবস্থা ও সাধ্য অনুযায়ী উৎপাদনে একেকজনের দায়িত্ব ও চাহিদার সীমারেখা বেঁধে দেওয়া আছে, কিন্তু এ সীমা অতিক্রম করলে বাজারের ভারসাম্য নষ্ট হবেই। সমাজে নেতিবাচক মনোভাবের উপস্থিতি, অস্থিরতা ও উন্নয়ন অপারগতার যত কারণ এ যাবৎ চিহ্নিত বা শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে এই সম্পদের অবৈধ অর্জনরোধে অপারগতা, ন্যায্য অধিকার বঞ্চিতকরণে প্রগলভতা এবং আত্মত্যাগ স্বীকারে অস্বীকৃতি মুখ্য। গণতন্ত্রের বিকাশ ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য যা শুভ ও কল্যাণকর নয়।
লেখক: উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক
একজন মুমিনের দায়িত্ব কী? জবাব, সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনুগত্য। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার সব উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে, শুধু যে অস্বীকার করেছে, সে ছাড়া। সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! কে অস্বীকার করবে? হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, যে আমার আনুগত্য করল; সে জান্নাতে যাবে আর যে আমার অবাধ্য হলো সে অস্বীকার করল।’ সহিহ বোখারি
সর্বশেষ নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) আমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে অনুসরণীয় আদর্শ। মহান আল্লাহ তার কাছে হজরত জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে পবিত্র কোরআন পাঠিয়েছেন। কোরআন মজিদের আলোকে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের দিকনিদের্শনার আদর্শ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর গোটা জীবন। তিনি আদর্শ শুধু প্রচারই করেননি, বাস্তবায়ন করেও দেখিয়েছেন।
সময়ের পরিবর্তনে মানুষের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু জীবন-জীবিকার এবং মৌলিক জীবনধারণ প্রক্রিয়ার এমন কিছু দিক আছে, যা কোনোকালেই পরিবর্তন হবে না। যেমন মানুষের নানাবিধ কর্ম ও অন্যান্য জীবনধারণমূলক প্রাত্যহিক কার্যাদি। এসবেও অনুসরণ করতে নবীর আদর্শের, নবীর শিক্ষার।
বর্তমানে দেশের বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প থেকে শুরু করে নানা সেক্টরে নন-টেকনিক্যাল ও অযোগ্য লোককে দায়িত্ব দেওয়ার অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। আর অযোগ্যদের দায়িত্ব পাওয়ার কারণ হিসেবে স্বজনপ্রীতি ও দলীয় প্রভাবকে দায়ী করা হয়। অযোগ্যদের দায়িত্ব দেওয়ার ফলে যোগ্যতার মূল্যায়ন হয় না, সেই সঙ্গে কাজটিও যথাযথভাবে আর হয়ে উঠে না।
একটি পরিবার, সমাজ, সংগঠন ও দেশের জনশক্তিদের যোগ্যতা বুঝে সঠিক কাজে লাগানোর ওপর উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অনেকাংশে নির্ভরশীল এ কথা নিয়ে বিতর্ক নেই। এ কর্মবণ্টনে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনুসৃত পদ্ধতিই সর্বশ্রেষ্ঠ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর কর্মবণ্টন পদ্ধতি আলোচনা করলে দেখা যায়, যোগ্যতা ও সামর্থ্যরে ভিত্তিতেই তিনি তা নির্ধারণ করেছিলেন। তার জীবনের নানা দিক পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ব্যক্তিগত থেকে শুরু করে সাংগঠনিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের ক্ষেত্রে সফলতার অন্যতম চাবিকাঠি ছিল সুষ্ঠু কর্মবণ্টন। এটাই ইসলামের অনুসৃত পথ। যেখানে স্বজনপ্রীতি কিংবা মুখ চিনে, গোত্র ও সম্পর্ক ইত্যাদি দেখে দায়িত্ব দেওয়ার কোনো নজির নেই। কারণ এগুলো সমাজ ও জাতির জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনে।
স্বজনপ্রীতি মানে নিজের মানুষের প্রতি অন্ধ ভালোবাসা, নিজের দলের লোককে অগ্রাধিকার দেওয়া। গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবি ও দায়িত্ব নিজের আত্মীয় এবং আদর্শের মানুষকে দেওয়া। বর্তমানে এটা অনেকটা রীতিতে পরিণত হয়েছে। যদিও স্বজনদের প্রতি ভালোবাসা ইসলামের অন্যতম একটি অগ্রাধিকার প্রাপ্ত বিষয়। কিন্তু আলোচ্য দলপ্রীতি ও স্বজনতোষণ অত্যন্ত ন্যক্কারজনক কাজ। এটা এমন একটা দুরারোগ্য ব্যধি, যার কারণে সমাজ থেকে ইনসাফ নির্বাসিত হয়ে যায়। ইসলাম এটাকে প্রতিরোধ করার শিক্ষা দিয়ে কোরআন মজিদে ঘোষণা করেছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ন্যায়বিচারে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহর সাক্ষীস্বরূপ; যদিও তা তোমাদের নিজেদের বা পিতা-মাতা এবং আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে হয়; সে বিত্তবান হোক বা বিত্তহীন হোক আল্লাহ উভয়েরই ঘনিষ্ঠতর। কাজেই তোমরা ন্যায়বিচার করতে প্রবৃত্তির অনুগামী হইয়ো না। যদি তোমরা পেঁচালো কথা বল বা পাশ কাটিয়ে যাও তবে তোমরা যা করো আল্লাহ তো তার সম্যক খবর রাখেন।’ সুরা নিসা : ১৩৫
কোরআন মজিদের এই আদেশ মামুলি কোনো বিষয় নয়। স্বজনপ্রীতি প্রতিরোধে এটি একটি মহানিয়ামক। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত জুবায়ের ইবনে মুতইম (রা.) সূত্রে বর্ণিত। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি স্বজনপ্রীতির প্রতি লোকদের ডাকে, নিজেও স্বজনপ্রীতি করতে গিয়ে যুদ্ধ করে এবং স্বজনপ্রীতির সমর্থনে মারা যায়, সে ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়।’ সুনানে আবু দাউদ : ৫১২১
উল্লিখিত আয়াত ও হাদিস থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, কোনো মুসলমান স্বজনপ্রীতি করতে পারে না। নিজের দলীয় লোকজন, পরিচিতজন বা আপনজনকে যোগ্যদের ওপর প্রাধান্য দিতে পারে না। ইসলামের শিক্ষা হলো, যেকোনো কাজ সঠিকভাবে সম্পাদনের জন্য যোগ্য ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়া। কারণ, অযোগ্য লোকের হাত ধরে কাজটি সূচারুরূপে সম্পাদিত হওয়া তো দূরের কথা, বরং তা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যেতে পারে। দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমানে নানাবিধ স্বার্থের কারণে এই নীতিকে পদদলিত করা হচ্ছে। আত্মীয়তার টান, আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার লোভ বা দলীয় স্বার্থে অযোগ্যদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। হাদিসে আছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘অযোগ্য ব্যক্তির হাতে যখন দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে, তখনই কেয়ামতের জন্য অপেক্ষা করো।’ সহিহ বোখারি : ৬৪৯৬
মানুষের অভ্যাস হলো, নিজের লোকজন কোনো বড় অন্যায় করলেও তা চোখে পড়ে না। ধরা পড়লেও তেমন অপরাধ মনে হয় না। তাই এর বিচারও হয় না। কিন্তু অন্য কেউ ছোটখাটো অন্যায় করলেও তা অনেক বড় মনে হয়। তার বিচার করার জন্য উঠে পড়ে লেগে যায়। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘বস্তুর প্রতি ভালোবাসা তোমাকে বিবেচনাহীন করে দিতে পারে।’ অর্থাৎ যে যাকে ভালোবাসে, সে তার দোষ দেখতে পায় না। সুনানে আবু দাউদ : ৫১৩০
নবী করিম কখনো কোনো অযোগ্যকে কোনো পদে বসাননি। হজরত আবু জর (রা.) একবার নবী করিম (সা.)-এর কাছে প্রাদেশিক গভর্নর হওয়ার আবেদন জানান। নবী করিম (সা.) হাত দিয়ে তার বুকে মৃদু থাপ্পড় দিয়ে বললেন, ‘আবু জর! তুমি দুর্বল, আর এটি মানুষের আমানত। কেয়ামতের দিন এটি (দায়িত্বভার) মানুষের লজ্জা ও লাঞ্ছনার কারণ হবে। হ্যাঁ, দায়িত্বটা যে ভালোভাবে গ্রহণ করবে এবং অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে আদায় করবে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন।’ সহিহ মুসলিম
ইমাম নববি (রহ.) বলেন, ‘পদের আকাক্সক্ষা থেকে বেঁচে থাকার জন্য এটি অনেক বড় মূলনীতি। বিশেষত দায়িত্ব আদায়ে যাদের দুর্বলতা আছে, তাদের জন্য এখানে রয়েছে অনেক শিক্ষা।’ এ জন্য দায়িত্বশীল মহলের এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। দায়িত্ব প্রদান আমানতের বিষয়। এ বিষয়ে অবহেলা করলে খেয়ানতের অপরাধে অভিযুক্ত হতে হবে। এ ছাড়া এ নীতি পালন না করার ক্ষতি বহন করতে হবে সবাইকে।
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক
বর্তমানে ‘নারীর ক্ষমতায়ন’, ‘নারীর উন্নয়ন’ এ প্রপঞ্চগুলো নানা পরিসরে বেশ আলোচিত। ঘরের বাইরের কাজে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ তারই প্রতিফলন। কিন্তু কাঠামোগত সামাজিক, সাংস্কৃতিক বৈষম্য এসব উদ্যোগের ইতিবাচক প্রভাবের পথে প্রধান অন্তরায়। আমরা জানি, বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতায় একজন নারীকে তার সন্তান এবং পরিবারের প্রতি পুরুষের তুলনায় বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হয়। এসব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে একজন নারী যখন কাজের জন্য বাইরে বের হন তখন তার ‘যাত্রাপথ’ কতটুকু মসৃণ থাকে?
কেবল রাজধানী ঢাকার দিকে দৃষ্টি দিলেই দেখা যায় গণপরিবহন সংকট, গণপরিবহনে নারীকে যৌন নিপীড়নসহ নানা ধরনের নিরাপত্তাজনিত ‘পথের কাঁটা’ সবসময় তীব্রভাবে উপস্থিত। গণপরিবহনের এসব ভোগান্তি নারীদের কর্ম, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ‘নারীর জন্য যৌন হয়রানি ও দুর্ঘটনামুক্ত সড়ক’ শীর্ষক ব্র্যাকের এক গবেষণায় দেখা যায়, দেশে গণপরিবহনে যাতায়াতকালে হয়রানির শিকার হওয়া ৯৪ শতাংশ নারীর ৮১ শতাংশই কোনো প্রতিবাদ করেন না। এই বিষয়গুলো নারীকে গণপরিবহন ব্যবহারে অনুৎসাহিত করে তোলে।
গত ২৫ জুলাই ২০২৩ তারিখে দেশের অন্যতম একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ‘শ্রমশক্তিতে শহরের নারীদের অংশগ্রহণ কেন কমছে’ শীর্ষক একটি উপসম্পাদকীয়তে উঠে এসেছে গণপরিবহনের এসব সংকট শহরের নারীদের ঘরের বাইরের কাজ থেকে পিছু হটতে বাধ্য করছে। এক্ষেত্রে মিরপুর থেকে মহাখালীগামী এক চাকরিজীবী নারীর বক্তব্য উল্লেখ করা যায় ‘রোজ সকালেই বাসার মধ্যে হুলুস্থুল হয়। কোনো রকমে নাস্তা গুছিয়ে নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হই। আরাম করে বসে নাস্তা করতে গেলেই অফিসের বাসটা মিস হবে। রোজ সকালে এই এক ভয়! অফিসের বাস মিস করলেই লোকাল বাসের পেছনে দৌড়াতে হবে। বাসে মহিলা তো তুলতে চায়ই না, আবার মহিলারা স্টপেজে দাঁড়ালে সেখানে বাস থামাতেও চায় না। অফিসের বাস না পেলে চাকরিটা নিয়েও আরেকবার ভাবতে হতো।’
ঢাকার মতো শহরে গণপরিবহনের তীব্র অপ্রতুলতা ভোগায় নারী-পুরুষ সবাইকেই, আর অফিসে যাওয়া-আসার সময় তা চরমে ওঠে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের জন্য বাসে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাদুড় ঝোলা হয়ে যাতায়াত করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। বাসের বিশ টাকার ভাড়ার পথ সিএনজি বা রাইড শেয়ার বাইকে ২০০-২৫০ টাকা। দৈনিক যাতায়াতের এই ব্যয়ভার বহন করা তাদের জন্য কল্পনার অতীত। তবে কর্মস্থলে যাতায়াতের পথটা পুরুষের তুলনায় নারীর জন্য আরও কণ্টকময় হয় যখন বাসগুলো নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দকৃত ৯টি আসন ভরে গেলে বাসে আর কোনো নারী তুলবে না বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে। (এমন উদাহরণও কম নেই যেখানে ওই সব সংরক্ষিত আসনও সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের দখল করে রাখতে দেখা যায়। প্রতিবাদ ও সিট ছাড়তে বললে উল্টো প্রতিরোধ আসে। সংরক্ষিত এসব আসন নিয়ে বাহাস, বচসার ঘটনার কথাও সবার জানা)।
অন্যদিকে, গণপরিবহনের চরিত্র এমন দাঁড়িয়েছে যে, ধরেই নেওয়া হয় নারীরা দ্রুত ওঠানামা করতে পারবে না, দাঁড়িয়ে যেতে পারবে না এমনকি, পুরুষের তুলনায় তার জায়গা বেশি লাগবে। অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে যায় যখন কোনো নারী নিজের সঙ্গে সন্তান বহন করেন। সঙ্গে বাচ্চা দেখলে তাকে বাসে উঠতে দেওয়া যাবে না এমন একটা মনোভাব অধিকাংশ বাস সুপারভাইজারের মধ্যে কাজ করে। যেখানে অফিসের সময়ে প্রত্যেকটি বাসে গড়ে ৩০ এর বেশি পুরুষ যাতায়াত করে, সেখানে নারীদের ওই ৯টি আসনে সীমাবদ্ধ করে দিয়ে তার যাত্রাটা আরও দুর্বিষহ করে তোলা হয়। তার ওপরে বাসে নারীদের জন্য বরাদ্দকৃত ৯টি আসনও থাকে চালকের পেছনে, ইঞ্জিনের ওপরে; যেখানে সবসময় প্রচ- তাপ থাকে যা মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নাহিদা (ছদ্মনাম) বলেন, প্রতিদিন সকাল এবং বিকেলে বাসে ওঠার কথা ভাবলে প্রচ- মানসিক চাপ কাজ করে। প্রায় প্রতিদিন অফিসের তাড়াহুড়া মাথায় নিয়ে যখন বাসের জন্য দাঁড়াই, আমার সামনে দিয়ে দুই-তিনটা বাস চলে যায় অথচ আমাকে উঠতে দেওয়া হয় না। তাদের এক কথা ‘মহিলা নেওয়া যাবে না, সিট নাই’।
অথচ একই জায়গা থেকে পুরুষদের ঠিকই তোলা হয়। জোর করে উঠতে গেলে বাসে থাকা পুরুষ এবং বাসের স্টাফরা এমনভাবে প্রত্যাখ্যান করেন যে খুব অপমানিত লাগে। কিন্তু অফিসে তো শুধু পুরুষরা যায় না, দেরি তো আমাদেরও হয়, তাই না? এজন্য প্রতিদিনই সময়ের আগে বাসা থেকে বের হয়ে আসি। প্রতিদিন এই বাসে ওঠাটা একটা যুদ্ধের মতো লাগে, খুবই ডিমোরালাইজড হয়ে যাই মাঝে মাঝে।
এই অভিজ্ঞতা শুধু নাহিদার নয়, চাকরিজীবী অসংখ্য নারীর নিত্যদিনের অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতা যে কত অস্বস্তিকর, তা ভুক্তভোগী নারীর চেয়ে ভালো আর কে জানে? নিজেদের একটা অভিজ্ঞতা বলি একদিন সকালে মিরপুর থেকে বাড্ডাগামী বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে বাস স্টপেজে আসতেই যেই উঠতে যাব তখন হেলপার একরকম হাত দিয়ে দরজা আটকে বলল ‘পরের বাসে আসেন, উইঠেন না। মহিলা সিট নাই’। হেলপারকে জিজ্ঞেস করলাম ‘মহিলা তুলবেন না কেন? মহিলারা স্কুল-কলেজে, অফিসে যাবে না?’ হেলপারের স্পষ্ট জবাব ‘এক মহিলার জায়গায় ৪ জন পুরুষ নিতে পারুম। তাইলে মহিলা নেওয়া আমার ক্ষতি না?’
এই লাভক্ষতির হিসাবের চক্করে গণপরিবহন খাত যে একটি সেবামূলক খাত সেটা বাংলাদেশের সবাই ভুলতে বসেছে। এখন তা পরিণত হয়েছে গণভোগান্তি হিসেবে, বিশেষ করে নারীদের জন্য। প্রতিদিন সকালে বিভিন্ন বাস স্টপেজে দাঁড়ালেই এসব ভয়াবহ চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। এটি গণপরিসর থেকে নারীদের দূরে ঠেলে দেওয়ার যে প্রক্রিয়া, তারই একটি অংশ।
যদিও ঢাকা শহরের গণপরিবহনের সমস্যা শুধু নারীকে নয় সব লিঙ্গের মানুষকেই যথেষ্ট ভোগায়। যেহেতু পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল শহরের একটি হচ্ছে ঢাকা, তাই এখানে গণপরিবহন বাড়ানো এই সমস্যা সমাধানের পথে অন্যতম উদ্যোগ হতে পারে। এছাড়া বর্তমানে বিদ্যমান বৈষম্য কমাতে সরকারি উদ্যোগে নারীদের জন্য সব রুটে নারীবান্ধব গণপরিবহন চালু করা যেতে পারে, যার উদ্যোগ আগে নেওয়া হলেও কার্যত তা অকার্যকর হয়ে আছে। সরকারি উদ্যোগে নারীদের জন্য পৃথক ডাবল ডেকার বাসের আয়োজন আছে বলা হলেও প্রকৃত অর্থে তা প্রায় দৃশ্যমান নয় বলেই ভুক্তভোগীরা জানান।
ঢাকা সিটি করপোরেশন তথ্য ও বিআরটিএ হিসাব অনুযায়ী, মোট ১ হাজার ৫২৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ঢাকায় ২ হাজার ৫৫০ বর্গকিলোমিটার সড়কে ১৬৮টি রুটে চলাচলকারী বাসের সংখ্যা ৫ হাজার ৪০৭টি। এর মধ্যে মিনিবাস ৩ হাজার ১২৬টি। গত কয়েক বছরে সরকারি উদ্যোগে নারীদের জন্য কিছু বাস নামানো হলেও বেসরকারি উদ্যোগে তেমন কোনো বাস সার্ভিস শুরু হয়নি। বেসরকারিভাবেও নারীদের জন্য পরিবহন নামালে আশাব্যঞ্জক ফল পাওয়া যেতে পারে। এ ধরনের কাঠামোগত উদ্যোগের পাশাপাশি
সাংস্কৃতিকভাবে নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক মনোভাবের পরিবর্তনও জরুরি। আগেও এই বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা হলেও কার্যকরী কোনো উদ্যোগ না থাকায় এবং ঢাকার নিয়ত বর্ধমান জনসংখ্যার দরুন সংকটটি বেড়েই চলেছে। সুতরাং এ বিষয়ে বারবার আওয়াজ তোলার প্রয়োজনীয়তাও থেকেই যায়।
লেখক: লেখকদ্বয় ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এর গবেষক
কবি, লেখক ও সম্পাদক সজনীকান্ত দাসের জন্ম ১৯০০ সালের ২৫ আগস্ট অবিভক্ত বাংলার বর্ধমান জেলার বেতালবন গ্রামে। তিনি বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগের বাংলা সাহিত্য আন্দোলনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব। ‘শনিবারের চিঠি’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে তীব্র অথচ হাস্যরসাত্মক সমালোচনার মাধ্যমে তিনি সমকালীন সাহিত্য কর্মকাণ্ডে বিশেষ প্রাণসঞ্চার করছিলেন। ১৯৪৬ সালে প্রকাশিত সজনীকান্ত বিরচিত ‘বাঙ্গালা গদ্যের প্রথম যুগ’ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অন্যতম প্রধান সংযোজন। বাংলা ভাষার অন্যতম বিখ্যাত সাহিত্য-সাময়িকী ‘শনিবারের চিঠি’ ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রকাশ শুরু হয়। প্রথমে এটি ছিল একটি সাপ্তাহিক কাগজ, যোগানন্দ দাসের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। তবে আদ্যোপান্ত শনিবারের চিঠির প্রাণপুরুষ ছিলেন কবি-লেখক সজনীকান্ত দাস। বাংলা ১৩৩৪ সালের ভাদ্র সংখ্যা থেকে সজনীকান্ত দাস সম্পাদকের দায়িত্ব পালন শুরু করেন। শনিবারের চিঠিতে যারা লিখেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম মোহিতলাল মজুমদার এবং নিরোদ সি চৌধুরী। তাদের ভাষা ছিল ব্যঙ্গাত্মক এবং সমালোচনার লক্ষ্য ছিল পিত্ত জ্বালিয়ে দেওয়া। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের পথিকৃৎ কল্লোল, প্রগতি, কালি-কলম, পরিচয়, পূর্বাশা, কবিতা, চতুরঙ্গ প্রভৃতি পত্রিকার সঙ্গে ‘শনিবারের চিঠি’র নাম অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছে। রবীন্দ্রনাথ-প্রমথ চৌধুরী-শরৎচন্দ্র থেকে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ লেখকদের সংখ্যায় সংখ্যায় তুলোধোনা করে পত্রিকাটি সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে গিয়েছিল। সম্পাদক হিসেবে সজনীকান্ত দাস শনিবারের চিঠি ছাড়াও বঙ্গশ্রী, শারদীয়া, আনন্দবাজার পত্রিকা, অলকা প্রভৃতি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। এ ছাড়াও চিত্রলেখা, বিজলী, যুগবাণী, নূতন পত্রিকা, যুগান্তর প্রভৃতি পত্রিকার প্রকাশনায় তার বিশেষ ভূমিকা ছিল। সজনীকান্তের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ষাটের অধিক। সজনীকান্তের কবিতাগ্রন্থ এগারোটি। এগুলো হলো : পথ চলতে ঘাসের ফুল, বঙ্গরণভূমে, মনোদর্পণ, অঙ্গুষ্ঠ, রাজহংস, আলো-আঁধারি, কেডস ও স্যান্ডাল, পঁচিশে বৈশাখ, মানস সরোবর, ভাব ও ছন্দ এবং পান্থপাদপ। ১৯৬২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
পাহাড়, সমুদ্র আর নদীঘেরা বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম। ২০০০ সালের স্যাটেলাইট ম্যাপে দেখা যায় চট্টগ্রাম মহানগরীর কৈবল্যধাম বিশ্ব কলোনির উত্তরে নন্দন হাউজিংয়ের পুরো এলাকাটি পাহাড়ি আর সবুজ বনানীতে ছাওয়া ছিল। কিন্তু এখন সেখানে উঁচু-নিচু অসংখ্য ভবন। নৈসর্গিক এ নগরীর পরিবেশ-প্রতিবেশের সুরক্ষার পাশাপাশি আধুনিকায়নের জন্য ৬৪ বছর আগে ১৯৫৯ সালে গঠন করা হয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষ (সিডিএ)। দুঃখের বিষয় স্যাটেলাইট ম্যাপে দেখা সবুজ বনানী ধ্বংস করে এলাকাটিতে গড়ে ওঠা সব ভবন এই সিডিএর অনুমোদন নিয়েই গড়ে উঠেছে। মহানগরীর ভেতরে ও আশপাশের পাহাড়-জঙ্গল এলাকায় এখন যত আবাসিক বা বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে উঠেছে, সবগুলোর ক্ষেত্রেই একই ঘটনা। কর্র্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়েই পাহাড়-জঙ্গল সাবাড় করে বানানো হচ্ছে কংক্রিটের ভবন। ভরাট হচ্ছে নদী-জলাশয়। কদিন আগেই সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় হাবুডুবু খেয়েছে এই নগরী।
নিয়ম অনুসারে সিডিএ প্রতি ২০ বছর পরপর একটি করে মাস্টারপ্ল্যান করে সে অনুযায়ী বন্দরনগরীর উন্নয়ন সাধন করবে। বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরে ‘আইনি মোড়কে সর্বনাশা সিডিএ’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নগরবাসীর অর্থ দিয়েই করা হয় সিডিএর মাস্টারপ্ল্যান। ২০২০-৪১ মেয়াদের জন্য মাস্টারপ্ল্যান করতে খরচ ধরা হয়েছে ৩৩ কোটি টাকা। এত টাকা খরচ করে তৈরি হয় মাস্টারপ্ল্যান, তবু কেন এত দুর্দশা-ভোগান্তি চট্টগ্রামবাসীর? অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে নগরীর এই পরিবেশ বিধ্বংসী পরিস্থিতির নেপথ্যের খলনায়কের মুখোশ। রক্ষক সংস্থা সিডিএই করেছে এ সর্বনাশ। আইনের মধ্যে থেকেই প্রচলিত আইন ব্যবহার করে, আইনের সংশোধনীর সুযোগ নিয়ে, আইনের ফাঁকফোকর খুঁজে বের করে, কখনো-বা নিজস্ব ক্ষমতাবলে বিশেষ সিদ্ধান্ত নিয়েই উন্নয়নের অজুহাতে প্রকৃতি ধ্বংসের অনুমোদন দিয়ে গেছে সিডিএ। সিডিএ নিজেও সড়ক নির্মাণের নামে বিধি লঙ্ঘন করে সারি সারি পাহাড়-বনানী, জলাশয় সাবাড় করেছে বা চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে সাহায্য করেছে। শুধু চট্টগ্রাম মহানগরীতে গত ৪০ বছরে হারিয়ে গেছে ১২০টি পাহাড়। গত ১৫ বছরে হারিয়ে গেছে তিন হাজার পুকুর ও জলাশয়।
বিগত দিনের কোনো মাস্টারপ্ল্যানই বাস্তবায়ন না হওয়ায় এমন বেহাল দশা বলছেন নগর পরিকল্পনাবিদ। দুর্ভাগ্য হচ্ছে মাস্টারপ্ল্যান কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে তা কখনো অডিট হয় না। সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণও দায়ী। অনুসন্ধানে মনে হয়েছে, সিডিএ হলো সেই হাতুড়ে ডাক্তারের মতো, যে কিনা ভুল চিকিৎসা দিতে দিতে রোগীর ক্যানসার বানিয়ে ফেলে এখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে জ্বর মাপার কাজে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংস্থা, সিটি করপোরেশন, রেলওয়ে, বন্দর কর্র্তৃপক্ষ, ওয়াসা নিজস্ব মাস্টারপ্ল্যানগুলো সিডিএর মাস্টারপ্ল্যানে যুক্ত করতে হবে। বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে হবে। কেবল সিডিএ নয়, সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, ওয়াসা, গণপূর্ত অধিদপ্তর, গৃহায়ন কর্র্তৃপক্ষ, রেলওয়ে, পুলিশ এবং বিভিন্ন শিল্প গ্রুপও পাহাড়, জলাশয়, পরিবেশ বিনাশ করেছে। পরিবেশ ভবনটিই গড়ে উঠেছে পাহাড় ধ্বংস করে। এছাড়া, স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সহায়তায়ই পাহাড়-জলাশয় পরিবেশের বিনাশ হচ্ছে। এজন্য দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে এবং পরিবেশ রক্ষায় রাজনীতিকদের সদিচ্ছা দেখাতে হবে।
মাস্টারপ্ল্যান করলেই হবে না, তার বাস্তবায়ন করতে হবে। কোথাও পরিকল্পনায় ছিল এক ধরনের ভূমি ব্যবহার, বাস্তবে হচ্ছে অন্য ধরনের। পরিকল্পনা নিশ্চিত করতে ‘প্ল্যানিং বডি’ (পরিকল্পনা সংস্থা) থাকতে হবে। মাস্টারপ্ল্যানের গাইডলাইনের আলোকে প্রকল্প গ্রহণ ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য দক্ষ জনবলও প্রয়োজন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, সে ধরনের জনবল কাঠামো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নেই। অনেক কষ্ট করে এবং অর্থ খরচ করে একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন হতে যাচ্ছে। এই প্ল্যানটি যাতে বাস্তবায়ন হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আইন মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি বলছে, আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে। সরকারের এমন নেতিবাচক সিদ্ধান্তের পর এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি দেয়নি দলটি। তবে এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে যোগ হতে পারে বলে জানা গেছে।
৫৩ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও দলীয় নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। বিদেশে নেওয়া ছাড়া তার উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে তার ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। এতে মতামত দিতে আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় আইন মন্ত্রণালয় এতে মতামত দেয়। এ বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেছেন, তার সাময়িক মুক্তির আদেশটা বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) কারাগারে নেওয়া হলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া বাসায় চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন না এমন দুটো শর্ত সাপেক্ষে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে দন্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। দরখাস্তটা নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে আটবার দন্ড স্থগিত করা হয়েছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো সুযোগ আইনে থাকে না। আমরা ৪০১ ধারার উপধারা ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ ব্যাখ্যা করে মতামত পাঠিয়েছি। আমাদের মতামত হলো, ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে, সেটা অতীত এবং মীমাংসিত। এটা আর খোলার কোনো উপায় নেই।’
এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) সাজা স্থগিত রেখে যে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সেটা বাতিল করে তারপর পুনরায় বিবেচনা করার সুযোগ থাকলে সেটা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই উপমহাদেশে ৪০১ ধারার ক্ষমতা যখন প্রয়োগ করে, তখন এটি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না বলে সিদ্ধান্তের নজির আছে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন যে আদেশটা আছে, সেটা যদি বাতিল করা হয়, বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) যদি আবার কারাগারে নেওয়া হয়, তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু এ অবস্থায় আদালতে যেতে পারবেন না।’ খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের বিষয়টি বাতিল করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা অমানবিক হবে, বাতিল করব না।’
আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এক বার্তায় বলেন, ‘আজকের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, দেশে আইনের শাসন নেই। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক ভয়ংকর তামাশা করা হচ্ছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, নির্বাহী বিভাগ চাইলেই কাউকে মুক্তি দিতে পারে।’
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় বিএনপি কী এখন ভাবছে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে।’
আর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর নীলনকশার অংশ। মানবতাবিরোধী ও সরকারের বর্বর ইচ্ছা পূরণের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।’
দলটির নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা না করে, রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করতে না পারলে বিএনপিপ্রধানের মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমেই এই ইস্যুর সুরাহা করতে চায় দলটি।
কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। কিন্তু দেশে চিকিৎসা গ্রহণের শর্তারোপ করা হলে তা যে চিকিৎসার বিবেচনায় না করে রাজনীতির বিবেচনায় করা হবে, সেটা বোঝার মতো বুদ্ধি সাধারণ মানুষের আছে।’
অসুস্থতার কারণে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের মার্চে করোনার সময় টানা দুই বছর কারাভোগের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরেছিলেন খালেদা জিয়া। পরে এ পর্যন্ত তার মুক্তির মেয়াদ আটবার বাড়িয়েছে সরকার।
এরই মধ্যে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ দিতে পরিবারের পক্ষে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এ বিষয়ে আইনি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি পাঠায়।
বিএনপিপ্রধানকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি সরকার ইতিবাচকভাবে দেখতে পারে’। কিন্তু সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘বিদেশে যাওয়ার আবেদন করতে হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত গিয়ে করতে হবে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের পর সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় এবারও ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না। গত শনিবার এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ শঙ্কাই প্রকাশ করেছিলেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা আছে, যেকোনো মূল্যে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকার মরিয়া। সে কারণে হয়তো খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি ঝুঁলিয়ে রাখতে চাইছে এমনটাই মনে করছে সরকারবিরোধীরা। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দিলেই সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলেও বিরোধী নেতাদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। তবে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথাই নেতাদের বলে রেখেছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির হাইকমান্ড মনে করছেন, এ অবস্থায় চলমান এক দফার আন্দোলনে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিষয়টি থাকলেও সেটাকে আরও জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে; যাতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নেয়।
জানা গেছে, এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে দলটি। আজ সোমবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক রয়েছে। সূত্র বলছে, জোটগত ছাড়াও দলীয়ভাবেও কর্মসূচি আসতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক চিকিৎসক জানান, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তার কেবিনে এক্স-রে মেশিন নেওয়া হয়েছিল গতকাল ভোরে। শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে না এলে সিসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ ছিল। দুপুরে তার ইসিজি ও ইকো ডায়াগ্রাম করানো হয়েছে। ফুসফুসের পানি অপসারণের জন্য তার ডান পাশে যে ক্যাথেটার লাগানো ছিল, সেটা আপাতত খুলে ফেলা হয়েছে।
লিভার জটিলতা ছাড়াও ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ফুসফুস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। গত ৯ আগস্ট ফিরোজায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দলীয় মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) সেটআপে কেবিনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে।
জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘ওনার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সে জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানো দরকার।’
হতাশায় শেষ খালেদার অপেক্ষা
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
সাড়ে ৩ বছরে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স
দেশের বিদেশি মুদ্রা আয়ের অন্যতম হাতিয়ার প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের ধস নেমেছে। সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশে অবস্থানকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধপথে ও ব্যাংকের মাধ্যমে মাত্র ১৩৪ কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। গত সাড়ে তিন বছরে এটি সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স। ৪১ মাস আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এর চেয়ে কম ১০৯ কোটি ডলার সমপরিমাণের রেমিট্যান্স এসেছিল। রেমিট্যান্স-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দামের ব্যবধান বেশি হলে হুন্ডিতে লেনদেন বেড়ে যায়। আর যখন হুন্ডির চাহিদা বাড়ে তখন রেমিট্যান্স কমে যায়। গত মাসে ব্যাংকের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দাম ৬ থেকে ৭ টাকা বেশি ছিল। তাই বেশি লাভের আশায় বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন প্রবাসীরা।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজার ছাড়াল
এ বছর অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে ডেঙ্গু। গতকাল রবিবার ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজারের কোটা ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) সারা দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬ জনে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৮৮২ জন।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
অকাজের ৩৭০০ কোটির সেতু
সেতু হয়। কিন্তু সড়ক হয় না। সেতু করার জন্য নানান প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু সেসব সেতু করেই দায়সারা বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়। ভোগান্তি সাধারণ মানুষের। আবার যতগুলো সেতু করার কথা ততগুলো না করেও প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করার প্রতিবেদনও দেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সারা দেশের গ্রামের রাস্তাগুলোতে সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পে। প্রকল্পের এসব অনিয়ম উঠে এসেছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবি আ.লীগ নেতার
আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার। গত শনিবার রাতে তার ফেসবুকে এ দাবি জানিয়ে স্ট্যাটাস দেন তিনি।
মুহূর্তেই স্ট্যাটাসটি ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিএনপির অসংখ্য নেতা, কর্মী-সমর্থক তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রশংসা করেন। অন্যদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নিন্দা জানিয়ে দলীয় সব পদ থেকে তার বহিষ্কারের দাবি জানান।
আবদুল মোতালেব হাওলাদার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘রাজনৈতিক কারণে আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়া হউক।’
স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন অধরাই
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
ফুটপাত থেকে মদের বার সবখানে চাঁদাবাজি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের কমিটি পার করেছে পাঁচ বছরের বেশি সময়। মেয়াদোত্তীর্ণ এ কমিটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। কিছু নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে। সর্বশেষ মদের বার ভাঙচুর ও লুট করে আবারও আলোচনায় এ কমিটির নেতাকর্মীরা।
নতুন কমিটি না হওয়ায় নেতারা বেপরোয়া আচরণের পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছেন বলে মনে করেন সাধারণ কর্মীরা। তারা বলেন, সংগঠনের কর্মকাণ্ডও স্থবির হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান তারা।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মো. রিপন মিয়াকে সভাপতি ও মাহমুদুল হক জুয়েল মোড়লকে সাধারণ সম্পাদক করে তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের জন্য আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে গত বছর ১২ জুন ৩২১ জনের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য।
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ অনুযায়ী, দেশে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ১১৯। এ তালিকায় রয়েছে যারা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, মাজার, ফুটপাত, সিঁড়ি, ওভারব্রিজের নিচে, লঞ্চ টার্মিনাল, ফেরিঘাট, মার্কেটের বারান্দায় দিন কাটান। আর বস্তিতে বসবাস করছে ১৮ লাখ ৪৮৬ জন। তারা মূলত শহর ও উপশহর এলাকায় টিনের ঘর, সেমিপাকা ঘর বা ঘিঞ্জি পাকা ঘরে বাস করে। তবে বস্তিবাসী কারা সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৬ সালে সরকার আবাসন নীতিমালা করেছে। আবাসন উন্নয়ন তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। আবাসন সংকট নিরসন করতে হলে সরকারকে আবাসন তহবিল করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বস্তিবাসী, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত কারা তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। না হলে বোঝা যাবে না কত মানুষ বস্তিতে থাকে।’
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে আবাসন সংকট কাটছে না। স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে আবাসন।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে ৯ লাখ গৃহহীন মানুষকে চিহ্নিত করে। ইতিমধ্যে আট লাখ মানুষের গৃহের ব্যবস্থা করেছে; প্রায় ৪০ লাখ মানুষের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বাকিদের জন্যও শেখ হাসিনা ব্যবস্থা করবেন। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যও আবাসনের ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা তার সৈনিক হিসেবে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
জানা যায়, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার সবার জন্য আবাসন। অঙ্গীকার পূরণে সরকার নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সারা দেশে ৩০টি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, নোয়াখালী, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, শরীয়তপুর, নড়াইল, খুলনা, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব প্রকল্পে ৬ হাজার ৪৩২টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২৭টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পে ৫ হাজার ৯৩০টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হবে। শেরপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, হবিগঞ্জ, সিলেট, ঝিনাইদহ, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে ১৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৩৫টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় রাজউক পূর্বাচল, ঝিলমিল, উত্তরা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় আবাসন প্রকল্পে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ফ্ল্যাটগুলো উচ্চমূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। পূর্বাচল, ঝিলমিল ও উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনেও বিভিন্ন সংস্থা আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন শহরে বসবাসরত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সম্পদশালী ব্যক্তিরা। যাদের অনেক ফ্ল্যাট আছে তারা আরও ফ্ল্যাট কিনছেন। কিন্তু বাস্তুহারা, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত সরকারি এসব আবাসনের সুবিধা পাচ্ছেন না। অল্প দামে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার আবাসন প্রকল্প তৈরি করে যাদের নামে বরাদ্দ দিচ্ছে তারা রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত।
জাতিসংঘ ১৯৮৫ সালে বিশ্ব বসতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশে^ অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার এ দিবসটি পালিত হয়।
বিশ্বজুড়ে বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউ এয়ারের তথ্য অনুযায়ী আজ সোমবার (০২ অক্টোবর) ঢাকার বাতাসের মান ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’। এদিন সকাল ১০টার দিকে ১২৯ স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে ঢাকা।
এসময় ১৮৩ স্কোর নিয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকার প্রথম স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর। ১৬২ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা। ১৬০ স্কোর নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি। ১৫৬ স্কোর নিয়ে চতুর্থ ভারতের আরেক শহর করাচি। ১৫৩ স্কোর নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে ইতালির মিলানো।
এ ছাড়া একইসময়ে একিউআই স্কোর ১১৭ স্কোর নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে চীনের উহান। ১১৩ স্কোর নিয়ে অষ্টম স্থানে রয়েছে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর। ১১২ স্কোর নিয়ে নবম স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। ১০৯ স্কোর নিয়ে দশম স্থানে রয়েছে সৌদি আরবের রিয়াদ।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার দূষিত বাতাসের শহরের এ তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই স্কোর একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে কি না, তা জানায়।
একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। একইভাবে একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং স্কোর ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকলে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়।
অপেক্ষা আর মাত্র ৩ দিনের। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই।
শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে। কিং খানের ‘জাওয়ান’ কাঁপাচ্ছে পর্দা, কাটতি বাড়ছে বক্স অফিসে; বিশ্বকাপে আইসিসির পকেট ভরবে তো?
প্রস্তুতি বলছে, ভরবে। উইকেটে হবে রান উৎসব, লড়াই হবে ধুন্ধুমার। তাতেই ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ হবে এক ব্লকবাস্টার মেগা হিট।
মাস তিনেক আগে, বিশ্বকাপের মূলপর্বের ম্যাচগুলো যে ১০ ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে সেই ভেন্যুগুলোর কিউরেটরদের সঙ্গে বসেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান কিউরেটর। সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপের একটাই মন্ত্র, রান চাই।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে, ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ৩ ওয়ানডের সিরিজ খেলেছে সেই ম্যাচগুলো যদিও বিশ্বকাপের ভেন্যুতে হয়নি তবে সেই সব ম্যাচেও রানের বন্যা বয়েছে।
প্রথম দুটো ওয়ানডেতে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার করা ২৭৬ রান অনায়াসে তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে ভারত। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ঠেঙিয়ে তুলেছেন ৩৯৯ রান। তিন নম্বর ম্যাচে আবার অস্ট্রেলিয়া করেছে ৩৫২ রান, যা তাড়া করে ভারতও গিয়েছিল ২৮৬ অবধি।
উদ্বোধনী ম্যাচ হবে গুজরাতের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এখানে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। ম্যাচে শুভমান গিল করেন সেঞ্চুরি, ভারত করে ৪ উইকেটে ২৩৪ রান আর জবাবে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ৬৬ রানে।
বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটের ধরন বুঝে ব্যাট করতে পারলে ৫০ ওভারে এখানে রানবন্যা হবে। বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। দুই দল এখানে মুখোমুখি হয়েছে বহুবার, পোশাকের রঙ কখনো রঙিন কিংবা কখনো সাদা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ কমেনি। এই মাঠে অস্ট্রেলিয়া ২৬৯ রান করে ভারতকে ২১ রানে হারিয়েছে সবশেষ ম্যাচে।
আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ঘরের মাঠে সবশেষ মৌসুমে ধোনির ‘ইয়েলো আর্মি’ ৮ ম্যাচ খেলে ২০০ রানের ওপরে করেছে দুইবার, একবার জিতেছে অন্যবার হেরেছে। তবে দুই ইনিংসেই ২০০’র বেশি রান হয়েছে দুটো ম্যাচেই। অর্থাৎ চাইলে চেন্নাইকেও ব্যাটিং স্বর্গে পরিণত করা সম্ভব।
বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর টানা তিন ওয়ানডে জিতে সিরিজ তো নিশ্চিত করেছেই, টানা তিন ম্যাচে ৩০০’র ওপর রান করেছে। চতুর্থ ওয়ানডেতে তো ৪০০ পার করেছে প্রোটিয়ারা। ব্যাটিং উইকেটে তারাও যে কোনো প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। হেনরিক ক্লাসেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৮৩ বলে খেলেছেন ১৭৪ রানের ইনিংস। বিধ্বংসী রূপে ফিরছেন ডেভিড মিলারও।
প্রোটিয়ারা প্রথম ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে। সেখানে অবশ্য সবশেষ হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ম্যাচেও খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে তারা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৯৯ রানে। দিল্লির মাঠটা হয়তো খানিকটা স্পিনারদের দিকেই ঝুঁকবে, তবে অন্য মাঠগুলোতে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবে মেতে উঠতে দেখার সম্ভাবনা জোরালো। তাই অনেক সাবেক ক্রিকেটারই প্রোটিয়াদের দেখছেন শেষ চারে।
বিশ্বকাপের আগে ক্লাসেন ছাড়াও ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস খেলেছেন ১৮২ রানের ইনিংস, দারুণ ছন্দে ইংল্যান্ডের ডাভিড মালানও। তবে সেরা ছন্দে নিঃসন্দেহে শুভমান গিল। সবশেষ ৫ ইনিংসে দুটো শতরান আর একটা হাফসেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেলও আছেন দারুণ ছন্দে। দুটো হাফসেঞ্চুরি আর একটা সেঞ্চুরি সবশেষ ৫ ইনিংসে। হায়দ্রাবাদে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের ৩৪৫ রান কিউইরা তাড়া করেছে ৩৮ বল হাতে রেখে।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন, এই বারের বিশ্বকাপে রানবন্যায় বোলারদের জন্য কাজটা হবে কঠিন। দেশ রূপান্তরকে আশরাফুল বলেন, ‘আমাদের পেসাররা গত এক দেড় বছর ধরে খুবই ভালো করছে। তবে যেহেতু ভারতের মাটিতে খেলা, আমরা দেখেছি যে সাড়ে ৩০০’র বেশি রান হচ্ছে প্রতিটা ম্যাচে। কেউ যদি ভালো না করে, তাকে মনে রাখতে হবে যে টুর্নামেন্টে পরের ম্যাচে ফিরে আসতে হবে। একজনের দিন খারাপ যেতেই পারে, কোনো ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান উঠেই যেতে পারে। ৯টা ম্যাচের ভেতর ৪-৫টা ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান হতে পারে। তাই বোলারদের ফিরে আসার মানসিকতা থাকতে হবে।’
বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমও বলেছেন যে দেড় মাসের আসরে প্রস্তুত থাকতে হবে যে কোনো কিছুর জন্যই, ‘দেড় মাসের আসর, ৯টা ম্যাচ এই সময়ে খেলতে হবে বা তারও বেশি। অনেক উত্থান-পতন হবে। যে কোনো কিছুর জন্যই তৈরি থাকতে হবে।’
রান উৎসবের বিশ্বকাপ যে হতে যাচ্ছে, তার সব রসদই মজুদ। মাঠগুলোকে করা হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গ, বিশ্বকাপে আসার আগে সেরা সেরা ব্যাটসম্যানরাও আছেন ছন্দে। শুধু প্রশ্ন এটাই, রান উৎসবের এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে রান করবেন কে? সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাটিংয়ের ছবিটা যে মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।