রূপপুরের ঋণের কিস্তি বন্ধ
আরিফুজ্জামান তুহিন | ৩০ জুন, ২০২২ ০০:০০
রাশিয়ার কাছ থেকে নেওয়া তিনটি ঋণের কিস্তি দিতে পারছে না বাংলাদেশ। ওই তিন কিস্তির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১১ কোটি ডলার। এর মধ্যে দুটি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের আর অন্যটি অস্ত্র কেনার ঋণের কিস্তি। গত এপ্রিল থেকে এসব কিস্তি দেওয়া বন্ধ আছে।
ইউক্রেনে রুশ হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দেশগুলো গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা ‘দ্য সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন (সুইফট) থেকে বাদ দেয় রাশিয়াকে। এরপর থেকে বাংলাদেশের ঋণের কিস্তি পরিশোধ বন্ধ হয়ে যায়।
অবশ্য কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশকে বিলম্ব মাশুল দিতে হবে না বলেও রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১২০০ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিটে ২৪০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে রাশিয়ার রোসাটম। এটির নির্মাণ ব্যয় প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা, যার ৯০ শতাংশই ঋণ সহায়তা হিসেবে দিচ্ছে রাশিয়া।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সুইফট সুবিধা বন্ধ থাকায় বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশ দুটি বিষয় ভাবছে। এক. চীনকে তৃতীয়পক্ষ হিসেবে ব্যবহার করে কিস্তি পরিশোধ করা। দুই. কারেন্সি সোয়াপ বা দুই দেশের মধ্যে মুদ্রা বিনিময় করা। মুদ্রা বিনিময় হলে রাশিয়াকে বাংলাদেশ টাকায় কিস্তি পরিশোধের সুযোগ পাবে। সুইফটের মতো রাশিয়ার নিজস্ব অর্থ লেনদেনের একটা মাধ্যম রয়েছে, সেই মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করবে বাংলাদেশ।
সুইফট থেকে বাদ পড়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রাশিয়ার ভেনশেকনম ব্যাংক বা ভিইবি রয়েছে। ভিইবি বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে অর্থায়নে রাশিয়া প্রান্তের এজেন্ট। তাদের মাধ্যমেই বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংক এ প্রকল্পের অর্থ লেনদেন করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভিইবি ব্যাংকের তরফ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে এই মুহূর্তে ডলারে অর্থ পরিশোধ করা থেকে বিরত থাকতে বলেছে। ভিইবি ব্যাংকের সঙ্গে আপাতত লেনদেন না করতে বলা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাশিয়ার ঋণ পরিশোধে সুইফটের বিকল্প হিসেবে কারেন্সি সোয়াপের কোনো বিষয় নিয়ে এখনো বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো কাজ শুরু করেনি। কোনো মন্ত্রণালয় থেকেও এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে কোনো পরামর্শও চাওয়া হয়নি।’
তিনটি কিস্তি বন্ধ : রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে রাশিয়ার কাছ থেকে দুটি ভিন্ন ভিন্ন ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৫০ কোটি ডলার ঋণ নেওয়া হয়েছিল প্রকল্পের ভূমি উন্নয়নসহ প্রাথমিক খরচের জন্য। এর কিস্তি শুরু হয়েছে ২০১৭ সাল থেকে। মূল প্রকল্পের জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন বা ১ হাজার ১৩৮ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। এ ঋণের কিস্তি শুরু হবে ২০২৭ সাল থেকে। তবে এখনই সরকার এ ঋণের সুদের টাকা দুটি কিস্তিতে দিয়ে যাচ্ছে, পরে এই অর্থ সমন্বয় করা হবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্প শুরুর সময় যে ৫০ কোটি ডলার ঋণ নেওয়া হয়েছিল তার কিস্তি দিতে হয় প্রতি বছরে মার্চ ও সেপ্টেম্বর মাসে। এর প্রতিটির কিস্তি ৪ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। চলতি বছরে এই ঋণটি শোধ হওয়ার কথা ছিল। ৫০ কোটি ডলারের এ ঋণের প্রায় ৪ কোটি ৯১ লাখ ডলার হলো মূল অর্থের কিস্তি ও প্রায় ৮৫ লাখ ডলার হলো আসল অর্থের সুদ।
রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ঋণের টাকা দেওয়ার ১০ বছর পর থেকে ৩০ বছরের মধ্যে তা পরিশোধ করতে হবে। ১ হাজার ১৩৮ কোটি ডলারের মূল ঋণের সুদ ও আসলের কিস্তি শুরু হবে ২০২৭ সাল থেকে। ওই বছরের ১৫ মার্চ থেকে ঋণের কিস্তিে দওয়া শুরু করতে হবে। প্রতি বছরের ১৫ মার্চ ও ১৫ সেপ্টেম্বর সমপরিমাণ কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করার কথা। তবে সরকার আর্থিক চাপ যাতে বড় না হয় সে কারণে এখনই এ ঋণের সুদ দেওয়া শুরু করেছে। পরে এ অর্থ সমন্বয় হবে। বছরে দুটি কিস্তিতে সুদ দেওয়া হয় প্রায় ৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। অন্য ঋণ হলো রাশিয়া থেকে কেনা অস্ত্রের সুদসহ কিস্তি। এর পরিমাণ বছরে দুবারে প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ ডলারের মতো।
রূপপুর কি অর্থনীতিতে বড় চাপ হবে? : শ্রীলঙ্কার আর্থিক দুরবস্থার পর অনেকে বলা শুরু করেছেন রাশিয়ার কাছ থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি দিতে গিয়ে বিপাকে পড়বে দেশের অর্থনীতি। এই বিপুল পরিমাণ ঋণ বাংলাদেশ পরিশোধ করতে পারবে না। রাশিয়ার সঙ্গে করা চুক্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের লেনদেনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ১ হাজার ১৩৮ কোটি ডলারের মূল ঋণের আসলসহ কিস্তি শুরু হবে ২০২৭ সাল থেকে। বছরে একবারে এই অর্থ দিতে হবে না, এই অর্থ দিতে হবে বছরে দুই কিস্তি করে। এ হিসাবে ১১.৩৮ বিলিয়ন ডলার ২০ বছরে ৪০টি কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। প্রতিটি কিস্তির পরিমাণ প্রায় ২৮৫ মিলিয়ন ডলার। আর গড়ে সুদ ও লাইবর (যুক্তরাজ্যের আন্তঃব্যাংক লেনদেনের সুদের হার) হবে ৩৮ থেকে ৪০ মিলিয়ন ডলার। সুদ ও আসলে প্রতিটি কিস্তি দাঁড়াবে ৩২৪ মিলিয়ন ডলার।
রাশিয়ার সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে, এ ঋণের সুদের হার ১.৭৫ শতাংশ এবং এর সঙ্গে কিস্তি পরিশোধের সময়কালের লাইবর যুক্ত হবে।
অন্যদিকে ২৪০০ মেগাওয়াট একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ৯৫ ভাগ সক্ষমতা ব্যবহার করে এক বছরে প্রায় ২ কোটি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। দেশে বর্তমানে আমদানি করা কয়লা দিয়ে গড়ে সাড়ে ৭ থেকে ৮ টাকা খরচে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। আর ডিজেল থেকে ২৫ টাকার বেশি ও ফার্নেস তেল থেকে উৎপাদনের ক্ষেত্রে ১৪ টাকার বেশি খরচ হচ্ছে প্রতি ইউনিটে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে এখনো প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের খরচ ঠিক হয়নি। যদি ৬ টাকা প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের খরচ ধরা হয় তাহলে বছরে ১ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থের বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে রূপপুর। দেশে এখনো বেসরকারি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সরকার বন্ধ করতে পারছে না। কারণ হাতে পর্যাপ্ত বিকল্প নেই। এসব কেন্দ্রের বিদ্যুতের উৎপাদন ও ব্যয় অনেক। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে সরকার এসব বেসরকারি তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেবে বলে একাধিকবার বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে।
শেয়ার করুন
আরিফুজ্জামান তুহিন | ৩০ জুন, ২০২২ ০০:০০

রাশিয়ার কাছ থেকে নেওয়া তিনটি ঋণের কিস্তি দিতে পারছে না বাংলাদেশ। ওই তিন কিস্তির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১১ কোটি ডলার। এর মধ্যে দুটি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের আর অন্যটি অস্ত্র কেনার ঋণের কিস্তি। গত এপ্রিল থেকে এসব কিস্তি দেওয়া বন্ধ আছে।
ইউক্রেনে রুশ হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দেশগুলো গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা ‘দ্য সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন (সুইফট) থেকে বাদ দেয় রাশিয়াকে। এরপর থেকে বাংলাদেশের ঋণের কিস্তি পরিশোধ বন্ধ হয়ে যায়।
অবশ্য কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশকে বিলম্ব মাশুল দিতে হবে না বলেও রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১২০০ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিটে ২৪০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে রাশিয়ার রোসাটম। এটির নির্মাণ ব্যয় প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা, যার ৯০ শতাংশই ঋণ সহায়তা হিসেবে দিচ্ছে রাশিয়া।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সুইফট সুবিধা বন্ধ থাকায় বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশ দুটি বিষয় ভাবছে। এক. চীনকে তৃতীয়পক্ষ হিসেবে ব্যবহার করে কিস্তি পরিশোধ করা। দুই. কারেন্সি সোয়াপ বা দুই দেশের মধ্যে মুদ্রা বিনিময় করা। মুদ্রা বিনিময় হলে রাশিয়াকে বাংলাদেশ টাকায় কিস্তি পরিশোধের সুযোগ পাবে। সুইফটের মতো রাশিয়ার নিজস্ব অর্থ লেনদেনের একটা মাধ্যম রয়েছে, সেই মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করবে বাংলাদেশ।
সুইফট থেকে বাদ পড়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রাশিয়ার ভেনশেকনম ব্যাংক বা ভিইবি রয়েছে। ভিইবি বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে অর্থায়নে রাশিয়া প্রান্তের এজেন্ট। তাদের মাধ্যমেই বাংলাদেশের সোনালী ব্যাংক এ প্রকল্পের অর্থ লেনদেন করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভিইবি ব্যাংকের তরফ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে এই মুহূর্তে ডলারে অর্থ পরিশোধ করা থেকে বিরত থাকতে বলেছে। ভিইবি ব্যাংকের সঙ্গে আপাতত লেনদেন না করতে বলা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাশিয়ার ঋণ পরিশোধে সুইফটের বিকল্প হিসেবে কারেন্সি সোয়াপের কোনো বিষয় নিয়ে এখনো বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো কাজ শুরু করেনি। কোনো মন্ত্রণালয় থেকেও এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে কোনো পরামর্শও চাওয়া হয়নি।’
তিনটি কিস্তি বন্ধ : রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে রাশিয়ার কাছ থেকে দুটি ভিন্ন ভিন্ন ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৫০ কোটি ডলার ঋণ নেওয়া হয়েছিল প্রকল্পের ভূমি উন্নয়নসহ প্রাথমিক খরচের জন্য। এর কিস্তি শুরু হয়েছে ২০১৭ সাল থেকে। মূল প্রকল্পের জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন বা ১ হাজার ১৩৮ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। এ ঋণের কিস্তি শুরু হবে ২০২৭ সাল থেকে। তবে এখনই সরকার এ ঋণের সুদের টাকা দুটি কিস্তিতে দিয়ে যাচ্ছে, পরে এই অর্থ সমন্বয় করা হবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্প শুরুর সময় যে ৫০ কোটি ডলার ঋণ নেওয়া হয়েছিল তার কিস্তি দিতে হয় প্রতি বছরে মার্চ ও সেপ্টেম্বর মাসে। এর প্রতিটির কিস্তি ৪ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। চলতি বছরে এই ঋণটি শোধ হওয়ার কথা ছিল। ৫০ কোটি ডলারের এ ঋণের প্রায় ৪ কোটি ৯১ লাখ ডলার হলো মূল অর্থের কিস্তি ও প্রায় ৮৫ লাখ ডলার হলো আসল অর্থের সুদ।
রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ঋণের টাকা দেওয়ার ১০ বছর পর থেকে ৩০ বছরের মধ্যে তা পরিশোধ করতে হবে। ১ হাজার ১৩৮ কোটি ডলারের মূল ঋণের সুদ ও আসলের কিস্তি শুরু হবে ২০২৭ সাল থেকে। ওই বছরের ১৫ মার্চ থেকে ঋণের কিস্তিে দওয়া শুরু করতে হবে। প্রতি বছরের ১৫ মার্চ ও ১৫ সেপ্টেম্বর সমপরিমাণ কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করার কথা। তবে সরকার আর্থিক চাপ যাতে বড় না হয় সে কারণে এখনই এ ঋণের সুদ দেওয়া শুরু করেছে। পরে এ অর্থ সমন্বয় হবে। বছরে দুটি কিস্তিতে সুদ দেওয়া হয় প্রায় ৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। অন্য ঋণ হলো রাশিয়া থেকে কেনা অস্ত্রের সুদসহ কিস্তি। এর পরিমাণ বছরে দুবারে প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ ডলারের মতো।
রূপপুর কি অর্থনীতিতে বড় চাপ হবে? : শ্রীলঙ্কার আর্থিক দুরবস্থার পর অনেকে বলা শুরু করেছেন রাশিয়ার কাছ থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি দিতে গিয়ে বিপাকে পড়বে দেশের অর্থনীতি। এই বিপুল পরিমাণ ঋণ বাংলাদেশ পরিশোধ করতে পারবে না। রাশিয়ার সঙ্গে করা চুক্তি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের লেনদেনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ১ হাজার ১৩৮ কোটি ডলারের মূল ঋণের আসলসহ কিস্তি শুরু হবে ২০২৭ সাল থেকে। বছরে একবারে এই অর্থ দিতে হবে না, এই অর্থ দিতে হবে বছরে দুই কিস্তি করে। এ হিসাবে ১১.৩৮ বিলিয়ন ডলার ২০ বছরে ৪০টি কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। প্রতিটি কিস্তির পরিমাণ প্রায় ২৮৫ মিলিয়ন ডলার। আর গড়ে সুদ ও লাইবর (যুক্তরাজ্যের আন্তঃব্যাংক লেনদেনের সুদের হার) হবে ৩৮ থেকে ৪০ মিলিয়ন ডলার। সুদ ও আসলে প্রতিটি কিস্তি দাঁড়াবে ৩২৪ মিলিয়ন ডলার।
রাশিয়ার সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে, এ ঋণের সুদের হার ১.৭৫ শতাংশ এবং এর সঙ্গে কিস্তি পরিশোধের সময়কালের লাইবর যুক্ত হবে।
অন্যদিকে ২৪০০ মেগাওয়াট একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ৯৫ ভাগ সক্ষমতা ব্যবহার করে এক বছরে প্রায় ২ কোটি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। দেশে বর্তমানে আমদানি করা কয়লা দিয়ে গড়ে সাড়ে ৭ থেকে ৮ টাকা খরচে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। আর ডিজেল থেকে ২৫ টাকার বেশি ও ফার্নেস তেল থেকে উৎপাদনের ক্ষেত্রে ১৪ টাকার বেশি খরচ হচ্ছে প্রতি ইউনিটে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে এখনো প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের খরচ ঠিক হয়নি। যদি ৬ টাকা প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের খরচ ধরা হয় তাহলে বছরে ১ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থের বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে রূপপুর। দেশে এখনো বেসরকারি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সরকার বন্ধ করতে পারছে না। কারণ হাতে পর্যাপ্ত বিকল্প নেই। এসব কেন্দ্রের বিদ্যুতের উৎপাদন ও ব্যয় অনেক। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে সরকার এসব বেসরকারি তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেবে বলে একাধিকবার বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে।