
বৈধ অস্ত্রের অনৈতিক ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় প্রশাসনে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈধ অস্ত্র মালিকরা শর্ত মানছেন না। তাদের মধ্যে কেউ প্রকাশ্যে অস্ত্র ব্যবহার করে জনমনে ভীতি সৃষ্টি করছে। যেখানে সেখানে তারা অস্ত্র ব্যবহার করছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উঠছে বেশি। ইতিমধ্যে ৫ হাজার অস্ত্র ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠায় তাদের বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। পাশাপাশি সব লাইসেন্সধারীর অস্ত্রগুলো কী কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে তাও তদন্তের আওতায় আনা হচ্ছে। অনেকের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও নবায়ন করছেন না। তা ছাড়া ডেটাবেজ তৈরির করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অস্ত্রগুলোর বিষয়ে তদন্ত করতে সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি), জেলার পুলিশ সুপার ও ইউনিট প্রধানদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
অভিযোগ আছে, বৈধ অস্ত্র দিয়ে চাঁদাবাজি, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ভয়ভীতি দেখানো, আধিপত্য বিস্তার, পূর্বশত্রুতা, জমিজমার বিরোধ ও অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করেন অনেকে। কোমরে অস্ত্র গুঁজে চলাফেরা করেন কেউ কেউ। বৈধ অস্ত্রের পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারও বেড়ে গেছে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, যারা বৈধ অস্ত্র ব্যবহার করছেন তারা পুরো শর্ত মেনে চলতে হবে। যারা শর্ত মানবেন না তাদের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। আমরা তথ্য পাচ্ছি অনেকে বৈধ অস্ত্র অনৈতিক কাজে ব্যবহার করছেন। এসব তথ্য আমরা তদন্ত করছি। পাশাপাশি অবৈধ অস্ত্রধারীদের ধরতেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারীরা কঠোর নিয়ম মেনে চলতে হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবহারকারীরা আইন মানেন না। তারা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অপকর্ম করছেন। রাজনৈতিক নেতারা অপপ্রয়োগ করছেন বেশি। তারা কথায় কথায় অস্ত্র প্রকাশ্যে দেখিয়ে ভীতি সৃষ্টি করছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনৈতিক কাজে ব্যবহার হচ্ছে বলে আমরা তথ্য পাচ্ছি। ইতিমধ্যে যাদের অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে তাদের বিষয়ে তদন্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গত ছয় বছরে অন্তত পাঁচ হাজার লাইসেন্সধারীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। তাদের বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। বেশিরভাগ অভিযোগেরই সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে। এসব অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। ইতিমধ্যে সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, এই পর্যন্ত সারা দেশে ৪৫ হাজার ২০৮টি অস্ত্রের লাইসেন্সের তথ্য সংরক্ষণ করেছে পুলিশের একটি বিশেষ ইউনিট। তার মধ্যে ৪১ হাজার ৫১২টি অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে ব্যক্তির নামে। বাকি ৩ হাজার ৬৯৬টি অস্ত্র রয়েছে আর্থিকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে। যেসব অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে সেগুলো হচ্ছে একনলা ও দোনলা বন্দুক, শটগান, পিস্তল, উজিগান, রিভলবার ও রাইফেল। এসব অস্ত্রের লাইসেন্স নেওয়ার তালিকায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর নামও রয়েছে। এমনকি একজনের নামে একাধিক অস্ত্রের লাইসেন্স থাকার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। আর সেজন্য বৈধ ও অবৈধ অস্ত্রের ডেটাবেজ তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। ইতিমধ্যে পুুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ কাজ শুরু করেছে। আগামী সংসদ নির্বাচনের আগেই এ কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ১৮৭৮ সালের আর্মস অ্যাক্ট এবং ১৯২৪ সালের আর্মস রুলসের আওতায় যেকোনো সামরিক বা বেসামরিক নাগরিককে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়। তবে লাইসেন্স পাওয়ার শর্ত আছে। সেগুলো পূরণ হলেই একজন নাগরিক লাইলেন্স পেতে আবেদন করতে পারেন। বাংলাদেশের নাগরিক ছাড়া কেউ আবেদন করতে পারেন না। কোনো বিদেশি নাগরিক আবেদন করলে সরাসরি তা বাতিল হয়ে যায়। জীবনের ঝুঁকি থাকলে কেউ আবেদন করতে পারেন। শর্ট ব্যারেল আগ্নেয়াস্ত্রের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর বয়স অন্তত ৩০ বছর, লং ব্যারেল আগ্নেয়াস্ত্রের ক্ষেত্রে ২৫ থেকে ৬০ বছর হতে হয়। আবেদনকারীকে অবশ্যই আয়কর দাতা হতে হয়। বছরে ন্যূনতম আড়াই লাখ টাকা আয়কর দিতে হয় তাদের। আবেদনের পর পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তদন্ত করে। তদন্ত শেষ হলে আবেদনকারীর পক্ষে প্রতিবেদন গেলে যাচাই করে লাইসেন্সের জন্য অনাপত্তিপত্র দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অনুমতি পেলে আবেদনকারী অস্ত্র আমদানি করে আনতে পারেন অথবা দেশীয় বৈধ কোনো ডিলারের কাছ থেকে অস্ত্র কিনতে পারবেন। তবে কোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুটি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন। লাইসেন্স পেতে একজন নাগরিককে স্থায়ী ঠিকানা যে জেলায়, সেখানকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের লাইসেন্স ও আগ্নেয়াস্ত্র বিভাগ থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হয়। জেলা প্রশাসক বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমোদনের পর আবেদনটি পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয় অনাপত্তিপত্র দিলে জেলা প্রশাসক ওই আবেদনকারীর বরাবরে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যু করেন। এক্ষেত্রে আবেদনপত্রের সঙ্গে বৈধ নাগরিকত্বের সনদপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, আয়কর সার্টিফিকেটের ফটোকপি, ছয় কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং লাইসেন্স ফি জমা দিতে হয়।
আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা ২০১৬ অনুযায়ী, কেবল আত্মরক্ষার স্বার্থে ব্যক্তিগতভাবে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে কোনো নাগরিক। তবে এই নীতিমালায় ব্যক্তিগত পর্যায়ে লাইসেন্স দেওয়া সাধারণভাবে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। অস্ত্র পাওয়ার পর কখন পরীক্ষামূলক ফায়ার বা ফাঁকা গুলি চালাতে পারবেন, সেই সংক্রান্ত কিছু নির্দেশনাও মানতে হয়। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কেউ এসব করতে পারবে না। লাইসেন্স নবায়ন করতে হলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবার আবেদন করতে হয়। কোনো ক্ষেত্রে যদি আগ্নেয়াস্ত্র মালিকের দেহরক্ষী ব্যবহার করেন, তাহলে তার নামেও লাইসেন্স থাকতে হবে। অস্ত্র হারিয়ে গেলে বা লুট হয়ে গেলে থানায় জিডি করতে হয়। আবার লাইসেন্সধারী দেশের বাইরে গেলে তাকে থানা পুলিশকে অবহিত করে যেতে হয়।
এ বিষয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এমনও দেখা যাচ্ছে যার অস্ত্রের লাইসেন্স দরকার নেই তিনিও আবেদন করে বসছেন। আবেদন করেই তারা রাজনৈতিক তদবির শুরু করেন। তারা মন্ত্রী-এমপি ও পুলিশের বড় কর্তাদের কাছে বেশি তদবির করেন। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক নেতারাই বেশি তদবির করেন। অনেকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে একটি বিকাশের দোকান থেকে ৭৫ হাজার টাকা বিকাশ করে টাকা না দিয়ে আরিফ নামে এক ব্যক্তি চলে যেতে চাইলে ব্যবসায়ীরা তাকে আটক করেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি আবদুল ওয়াহিদ ওরফে মিন্টু ও তার লোকজন আরিফকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে ব্যবসায়ীরা বাধা দেন। এ সময় মিন্টু তার লাইসেন্সকৃত পিস্তল দিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি করেন। এতে দুজন আহত হন। ২০১৬ সালে অস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছিলেন মিন্টু। ২০২১ সালে মেয়াদ শেষ হলেও লাইসেন্স নবায়ন করেননি তিনি। পুলিশ অস্ত্রটি জব্দ এবং মিন্টুকে গ্রেপ্তার করে। লাইসেন্স বাতিল করতে পুলিশ সুপারিশ করেছে। গত বছর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যুবলীগের আহ্বায়ক ও শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজালাল মজুমদারের ওপর কথিত যুবলীগ নেতা মনিরুজ্জামান জুয়েলের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। হামলায় চেয়ারম্যানের গাড়িচালক আমজাদ হোসেন আহত হন। ওই ঘটনার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ওই ঘটনায় জুয়েলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জুয়েলের পিস্তলটির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। চলতি মাসে ঢাকার মোহাম্মদপুরে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে জমি দখলের চেষ্টা করেন তিন ভাই। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। তাদের অস্ত্রগুলোও লাইসেন্স করা ছিল বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। ইতিমধ্যে লাইসেন্স বাতিল করতে পুলিশ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে। এসব ঘটনার মতো সারা দেশে প্রায়ই বৈধ অস্ত্রের অনৈতিক কর্মকা-ের খবর পাওয়া যায়।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নানা কারণে অন্তত পাঁচ হাজার লাইসেন্সধারীর তদন্ত শেষের দিকে। প্রতিবেদন হাতে এলে সেগুলোর লাইসেন্স বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু হবে। তা ছাড়া অস্ত্রের ডেটা তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। কেউ অস্ত্র কিনলে সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্রের কোডসহ থানা পুলিশকে জানাতে অস্ত্রের দোকানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারা আরও বলেন, রাজনৈতিক ক্যাডার ও অপরাধীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে ছোট অস্ত্র। তাদের আগের তালিকায় রয়েছে উগনি কোম্পানির পিস্তল, মাউজার পিস্তল, ইতালির প্রেটো বেরোটা পিস্তল, জার্মানির রুবি পিস্তল রয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি, জাপান, ব্রাজিল, বুলগেরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তান, চীন, ইসরায়েল, জার্মানি ও রাশিয়ার তৈরি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারত থেকে আসছে। মিয়ানমার থেকেও বঙ্গোপসাগর হয়ে আসছে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে বলে জানান ওই দুই কর্মকর্তা।
তারা বলেন, আমরা প্রায়ই তথ্য পাচ্ছি কেউ কেউ বৈধ অস্ত্র ভাড়া পর্যন্ত দিচ্ছেন। তাদের তালিকাও আমরা করছি। যারা বৈধ ও অবৈধ অস্ত্র দিয়ে অপকর্ম করছে তাদের ধরতে শিগগির বড় ধরনের অভিযান চালানো হবে। মন্ত্রণালয় সেই বিষয়ে আমাদের বেশকিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছে। আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করছি।
অবশেষে মা নাকানো এরিকো-ই সন্তানদের জিম্মা পেলেন। এগারো ও দশ বছর বয়সী দুই শিশুর জিম্মা পাওয়ার জন্য বাবা ইমরান শরীফের মামলা খারিজ করে দিয়েছে আদালত। গতকাল রবিবার ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান মামলা খারিজের রায় দেন। দুই শিশু এখন তাদের মা নাকানো এরিকোর জিম্মায় থাকবে।
বছর খানেক আগে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এক রায়ে ইমরান শরীফের মামলাটি পারিবারিক আদালতে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়। গত ২২ জানুয়ারি উভয়পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে যুক্তিতর্কের শুনানি শেষ হয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে দুই শিশুর অভিভাবকত্ব নিয়ে উচ্চ ও অধস্তন আদালতে নাকানো এরিকো ও ইমরান শরীফের আইনি লড়াই, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, সমঝোতার চেষ্টার বিষয়টি দেশজুড়ে আলোচিত হয়। সন্তানদের নিজ হেফাজতে নিতে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ইমরান শরীফ পারিবারিক আদালতে মামলাটি করেছিলেন।
আদালতে নাকানো এরিকোর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। ইমরান শরীফের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট নাসিমা আক্তার। শিশির মনির দেশ রূপান্তরকে বলেন, মামলা যেহেতু খারিজ হয়েছে দুই সন্তানকে নিয়ে নাকানো এরিকোর জাপানে যেতে আর আইনি বাধা নেই। তবে, বাবা (ইমরান শরীফ) ও মা (নাকানো এরিকো) দুজনই যেহেতু অভিভাবক তাই যেকোনো সময় বাংলাদেশে বা বিদেশে বাবা তার সন্তানদের সান্নিধ্য পাবেন। এ নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে, ইমরান শরীফের আইনজীবী নাসিমা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাওয়ার পর আপিল করবেন তারা।
আইনজীবী-সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে নাকানো এরিকো বিয়ে করেন বাংলাদেশি নাগরিক প্রকৌশলী ইমরান শরীফকে। পরে দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি দুজনের বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়। এরপর ইমরান শরীফ দুই মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। বাংলাদেশে এসে ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট দুই শিশুকন্যার অভিভাবকত্ব পেতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন নাকানো এরিকো। হাইকোর্ট ওই বছরের ২১ নভেম্বর এক রায়ে ইমরান শরীফের জিম্মায় দুই শিশু থাকবে বলে জানায়। তবে, শিশুদের মা বছরের নির্দিষ্ট সময়ে সন্তানদের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে পারবেন এবং তার এই আসা-যাওয়ার ও অবস্থানের খরচ ইমরান শরীফ বহন করবেন বলে রায়ে বলা হয়।
হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন নাকানো এরিকো। ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ এক আদেশে দুই শিশুকে তাদের মা নাকানো এরিকোর জিম্মায় আপাতত (২০২২ সালের ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত) রাখার আদেশ দেয়। এই সময়ে ইমরান শরীফ দিনের নির্দিষ্ট সময়ে সন্তানদের সান্নিধ্য পাবেন বলেও আদেশে বলা হয়। পরে বাবার সন্তান-সান্নিধ্য বিষয়ক ওই আদেশ কয়েক দফায় বাড়ানো হয়। গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ এক আদেশে হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দুই শিশু আপাতত মায়ের কাছে থাকবে আদেশ দিয়ে মামলাটি পারিবারিক আদালতে নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশ দেয়। এর ধারাবাহিকতাতেই এ রায় হলো।
আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না। পিছু হটে না। আওয়ামী লীগ জনগণকে নিয়ে কাজ করে। আজ যারা বলে, পালানোর সুযোগ পাবে না আওয়ামী লীগ। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, আওয়ামী লীগ পালায় না। পালায় আপনাদের নেতারাই। এই সংগঠন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হাতে গড়া সংগঠন। এই সংগঠন যখনই ক্ষমতায় এসেছে, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। আওয়ামী লীগ জনগণকে দিতে আসে। আ. লীগ ক্ষমতায় থাকলে জনগণ পায়।
রবিবার বিকেলে রাজশাহীর মাদ্রাসামাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আধাঘণ্টার বক্তব্যের বেশিরভাগ অংশজুড়েই প্রধানমন্ত্রী তার সরকারে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-ের তথ্য তুলে ধরেন। জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার আগে তিনি রাজশাহীর ২৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন এবং ৬টি উন্নয়ন কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য রাজশাহীর মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আগামী নির্বাচনে আবারও নৌকায় ভোট চাইলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচন আসবে এই বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের সামনেই। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন কি না ওয়াদা চাই। এ সময় উপস্থিত নেতাকর্মীরা হাত তুলে সমর্থন জানান এবং নৌকার পক্ষে সেøাগান দিতে থাকেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট যারা হয়েছে তাদের জিজ্ঞেস করি পালায় কে? আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না। পিছু হটে না। এমনকি ঐ জিয়াউর রহমান তো বাধা দিয়েছিল আমাকে দেশে আসতে দেবে না। আমি দেশে ফিরেছিলাম। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিদেশে গিয়েছিলাম। আমার ছেলের বউ অসুস্থ ছিল তাকে দেখতে। আমাকে দেশে ফিরতে দেবে না। আমি জোর করে দেশে ফিরে এসেছিলাম। আমি দেশে ফিরে এসেছি শুধুমাত্র বাংলার মানুষের কথা চিন্তা করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নাকি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবে। কাকে নিয়ে? দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমানকে নিয়ে। যে নাকি ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে স্ট্যাম্প কাগজে মুচলেকা দিয়েছিল আর কোনোদিন রাজনীতি করবে না বলে দেশ থেকে ভেগেছিল, পালিয়ে গিয়েছিল।
আজ বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। ৪০ ভাগ দারিদ্র্যসীমা আমরা ২০ ভাগে নামিয়েছি। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, সমস্ত ভাতা দিয়ে যাচ্ছি। মা-বোনদের মাতৃত্বকালীন ভাতা আমরা দিই। আমাদের দেশের একটা মানুষও গৃহহীন থাকবে না। ভূমিহীন থাকবে না। প্রত্যেকটা মানুষকে বিনা পয়সায় দুই কাঠা করে জমি দিয়ে ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। যারা বাকি আছে তাদেরও করে দেব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দেশের কোনো মানুষ গৃহহীন, ভূমিহীন থাকবে না। এটাই আামাদের লক্ষ্য। কোনো মানুষ না খেয়ে কষ্ট পাবে না।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এই রাজশাহী সব সময় অবহেলিত ছিল। আপনারা বিগত মেয়র ইলেকশনে আমাদের ভোট দিয়েছেন বিভিন্ন এলাকায় আমাদের নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছেন। আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এই রাজশাহীতে আমরা কিছুক্ষণ আগেই কতগুলো প্রকল্প উদ্বোধন করলাম। ২০০৯ থেকে এই ১৪ বছরে শুধুমাত্র এই রাজশাহী জেলা ও মহানগরে ১০ হাজার ৬৬০ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন করে দিয়েছি। শুধু রাজশাহী মহানগরে ৪ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন করেছি। কিছুক্ষণ আগে ১ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকার ২৬টি প্রকল্প উদ্বোধন করলাম। ৩৭৫ কোটি টাকার ৬টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম। এই প্রকল্পগুলো আমি আপনাদের জন্য উপহার হিসেবে দিয়ে গেলাম। তিনি বলেন, আমরা জনগণের কল্যাণে কাজ করি। আজ খাদ্যে নিশ্চয়তা পাচ্ছে, আজ পরনের কাপড় পাচ্ছে। রোগের চিকিৎসা পাচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছি। বাড়ির কাছে। মা-বোন হেঁটে গিয়ে চিকিৎসা পেতে পারে সেই ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে। বিনা পয়সায় ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই আজ দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে।
আওয়ামী লীগ জনগণকে দিতে আসে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে জনগণ পায়Ñ এটা হলো বাস্তব কথা। আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাক। দেশকে আমরা উন্নত করতে চাই। আমরা মানুষের জন্য কাজ করি আর বিএনপি কী করে? মানুষ খুন করা, অগ্নিসন্ত্রাস। ৩ হাজার ৮শ বাস, ২৯টা ট্রেন, লঞ্চ, প্রায় ৭০টা সরকারি অফিস, ৬টা ভূমি অফিস তারা আন্দোলনের নামে পুড়িয়েছে। আপনারা বিবেচনা করেন যে, কোন মানুষ জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারতে পারে? এই বিএনপি-জামায়াত কীভাবে জীবন্ত মানুষগুলোকে পুড়িয়ে মেরেছে।
সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাভাইয়ের সৃষ্টি করে প্রকাশ্য দিবালোকে এই রাজশাহীতে ট্রাকে অস্ত্র হাতে নিয়ে তারা মিছিল করে। আর পুলিশ দেয় তাদের পাহারা। অবৈধ অস্ত্র নিয়ে মিছিল করে পুলিশ তাদের পাহারা দেয়। এই তো খালেদা জিয়ার কারবার ছিল ২০০১ থেকে ২০০৬। এবং তাদের দুর্নীতি, তাদের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, লুটপাটের ফলে বাংলাদেশে ইমার্জেন্সি ডিক্লেয়ার হয়। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের জন্য এটা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করি। কোনো ছেলে বেকার থাকবে না সেটাই আমদের লক্ষ্য। আজ আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। এর আগে যমুনা সেতু নির্মাণ করে দিয়েছিলাম। সমস্ত বাংলাদেশ যোগাযোগ নেটওয়ার্কে এসে গেছে। প্রত্যেকটা এয়ারপোর্ট বন্ধ ছিল সেগুলো আমরা চালু করে দিয়েছি। আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাক, দেশের উন্নতি হোক।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ যেন করতে পারি সেই জন্য আপনারা নৌকায় ভোট দিন।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামারের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, খাদ্যমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, কাজী জাফরউল্লাহ, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক প্রমুখ।
পুলিশি সেবাকে গণমানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে : বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরে তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্ব দিতে আপনাদের প্রস্তুত হতে হবে ‘স্মার্ট পুলিশ’ হিসেবে। দায়িত্ব পালনকালে আপনাদের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। নারী, শিশু ও প্রবীণদের প্রতি সংবেদনশীল আচরণ করতে হবে। সর্বোপরি, আপনাদের প্রতিটি কাজে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার সর্বোচ্চ প্রতিফলন ঘটাতে হবে। গতকাল রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাকাডেমিতে ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সকালে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাকাডেমিতে এসে প্রধানমন্ত্রী সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। পরে তিনি নবীন পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক সময়ে নাগরিক সেবার ধারণাকে প্রাধান্য দিয়ে পুলিশি সেবাকে গণমানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে। মানুষ তার চরমতম বিপদের সময় পুলিশের কাছে সাহায্যের জন্য আসে, তাই পেশাদারিত্ব ও সহমর্মিতার সঙ্গে আইনি সেবা দিয়ে গণমানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে জনগণের সেবা করা পুলিশ বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের পবিত্র দায়িত্ব।
প্রধনমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার ২০৪১ সালে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার চারটি ভিত্তি সফলভাবে বাস্তবায়নে কাজ করছে। এগুলো হচ্ছে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি। এসবের জন্য প্রয়োজন স্মার্ট পুলিশ।
কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে ১২ জন মহিলা অফিসারসহ ৯৭ জন শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার অংশগ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্যারেড পরিদর্শন শেষে বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। এক বছর মেয়াদি এই প্রশিক্ষণে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী বেস্ট অ্যাকাডেমিক শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর কবির, অশ্বারোহণে শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান, বেস্ট ইন ফিল্ড শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার শুভ্র দেব, বেস্ট শুটার শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার রাসেল রানা এবং বেস্ট প্রবেশনার শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার সাকিবুল আলম ভূঁইয়াকে ট্রফি প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজধানীর মিরপুর শ্যুটিং স্পটে আগুনে দগ্ধ হয়েছেন ছোট পর্দার অভিনেত্রী শারমিন আঁখি (২৭)। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। শ্বাসনালিসহ তার শরীরের ৩৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।
গত শনিবার দুপুর ২টার দিকে দগ্ধ হওয়ার পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, শ্বাসনালিসহ তার শরীরের ৩৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তার চিকিৎসা করছি।
স্বজনরা জানান, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার মো. শাহবুদ্দিনের মেয়ে শারমিন। ৩-৪ বছর আগে তার বিয়ে হয়েছে। তার স্বামীর বাড়ি চট্টগ্রাম আকবরশাহ। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অভিনয় করছেন শারমিন আঁখি। চট্টগ্রামে বেড়ে ওঠা আঁখির মঞ্চে যাত্রা শুরু ‘অরিন্দম নাট্য সম্প্রদায়ে’র মধ্য দিয়ে। এই দলের নিয়মিত প্রযোজনা তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কবি’ নাটকের মূল চরিত্র ‘বসন’ করেই আলোচনায় আসেন তিনি। পরে বেশকিছু টিভি নাটকে কাজ করেন।
পল্লবী থানার ওসি পারভেজ ইসলাম জানান, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, বাথরুমে সিগারেট ধরানোর সঙ্গে সঙ্গে সেখানে একটি বিস্ফোরণ হয়েছে। এতে শারমিন নামে ওই তরুণী দগ্ধ হয়েছে। বিষয়টি আরও তদন্ত করে দেখছি।
হাসপাতালে শারমিনের স্বামী নির্মাতা রাহাত কবির জানান, তারা পল্লবী স্যান্ড হাউজিংয়ে থাকেন। শনিবার সকালে তিনি নিজেই শারমিনকে মিরপুর-১১, কালশি রোড এ্যাপেক্স শোরুমের পাশের একটি শ্যুটিং স্পটে নামিয়ে দিয়ে কাজে চলে যান। এরপর দুপুরে তিনি খবর পান, সেখানেই দগ্ধ হয়েছেন শারমিন। পরে তিনি তাকে সেখান থেকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে সন্ধ্যায় তাকে বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। তার দুই হাত-পা, মুখম-ল ও মাথার একপাশ দগ্ধ হয়েছে।
শারমিনের বরাত দিয়ে তিনি জানান, দুপুরে শারমিন মেকআপ রুমে ঢোকেন। মেকআপ রুমের ভেতরেই টয়লেট। সেখানে হেয়ার স্ট্রেট দিয়ে চুল ঠিক করার পর প্লাগ খুলতেই স্পার্ক হয়। এরপরই বিস্ফোরণ হয়। তার ধারণা, ঘটনার আগে মেকআপ রুমে কেউ বডি স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন, যা সেখানকার বাতাসে ছিল। এর কারণেও বিস্ফোরণের সূত্রপাত হতে পারে। এছাড়া শ্যুটিং হাউজটি সম্পূর্ণ নতুন এবং সবেমাত্র রঙ করা। সেখানে রঙের প্রচুর গন্ধও ছিল।
মেকআপ রুমে তিনি ধূমপান করছিলেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে রাহাত জানান, তার জানামতে শারমিন ধূমপান করে না।
২০২২ সালে ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় বাধা ছিল দুর্নীতি। অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, ঋণপ্রাপ্তির অপর্যাপ্ততা এবং অদক্ষ প্রশাসনও বড় একটা বাধা। এসব সমস্যার সঙ্গে সাম্প্রতিক উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট ও অস্থায়ী নীতি ব্যবসার পরিবেশকে আরও জটিল করে তুলেছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ ২০২২ শীর্ষক উদ্যোক্তা-জরিপে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। জরিপ বলছে, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ব্যবসার পরিবেশের অবনতি হয়েছে।
গতকাল রবিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে জরিপের তথ্য তুলে ধরেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন সে-সময় উপস্থিত ছিলেন। আইএমএফের ঋণের বিষয়ে সিপিডি বলেছে, দেশের প্রয়োজনকে বিসর্জন দিয়ে চাপ ঘাড়ে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। ভবিষ্যতের কথাও ভাবতে হবে। ২০২৪ থেকে এই ঋণের দায় বহন করতে হবে।
পুঁজিবাজার সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে প্রবন্ধ উপস্থাপক ড. মোয়াজ্জেম বলেন, পুঁজিবাজারের দুর্বলতা ‘ওপেন সিক্রেট’ বিষয়। আর্থিক খাতের চারটি অঙ্গই বিপর্যয়ের মুখে রয়েছে। ‘পুঁজিবাজার’ এখন ব্যর্থ প্রতিষ্ঠান। তিনি বলেন, দুর্নীতির পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের সামনে মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতির মতো যেসব নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ যুক্ত হচ্ছে সেগুলো তাদের ভাবাচ্ছে। এগুলোতে নজর দেওয়া দরকার।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের কৃষি, উৎপাদন ও সেবা খাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৭৪ জন পদস্থ কর্মকর্তা গত বছরের এপ্রিল থেকে জুলাই সময়ে এ জরিপে অংশ নেন। সেই হিসেবে এটি জাতীয় পর্যায়ে প্রতিনিধিত্বমূলক জরিপ নয়।
জরিপে অংশ নেওয়া ৪৪ দশমিক ১ শতাংশ বলেছেন, বিভিন্ন মাধ্যমে মুদ্রাপাচারের ঘটনা বেড়েছে। টাকা পাচারের কারণে ব্যবসা কঠিন হয়ে পড়েছে। মুদ্রাপাচার রোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ যথেষ্ট নয় বলেও জানিয়েছেন তারা।
প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ (৬৪ দশমিক ৬ শতাংশ) কর্মকর্তা দুর্নীতিকে ব্যবসায় বড় বাধা উল্লেখ করেন। কোন কোন জায়গায় দুর্নীতি হচ্ছে সেটিও জরিপে উঠে এসেছে। ৬৪ শতাংশ কর্মকর্তা কর প্রদানে, ৫৪ শতাংশ ব্যবসায়িক লাইসেন্স নিতে, ৪৯ শতাংশ গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ নিতে এবং ৭৫ শতাংশ কর্মকর্তা আমদানি-রপ্তানিতে দুর্নীতির কথা বলেছেন।
৪৪ দশমিক ৬ শতাংশ কর্মকর্তা দুর্নীতির পাশাপাশি ব্যবসার জন্য দুর্বল অবকাঠামো, ৪৩ দশমিক ১ শতাংশ ব্যাংকঋণের অপর্যাপ্ততা ও অদক্ষ প্রশাসন, ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিরতা, ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ নীতির ধারাবাহিকতার অভাব, ২৬ দশমিক ২ শতাংশ জটিল করব্যবস্থা ও উচ্চ করহার, ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ দুর্বল নীতিবোধ ও সরকারে স্থিতির অভাব, ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ অপরাধ ও উদ্ভাবনে অপর্যাপ্ত সক্ষমতা এবং ১০ দশমিক ৮ শতাংশ কর্মকর্তা শ্রম-সংক্রান্ত নিয়মনীতির সীমাবদ্ধতাকে সমস্যা বলেছেন।
ড. মোয়াজ্জেম বলেন, বড় কোম্পানিগুলোর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণের কারণে এসএমই (ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা) ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমদানি থেকে শুরু করে উৎপাদন, খুচরা বিক্রিতেও বড় কোম্পানিগুলো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে নীতিকাঠামো প্রযুক্ত হয় না। বড়, মধ্যম ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা আলাদা নীতিকাঠামো প্রয়োজন। নাহলে এসএমই টিকতে পারবে না।
অনুষ্ঠানে ফাহমিদা খাতুন বলেন, দুর্নীতির কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। সেবার মূল্যও বাড়ছে। এই ঘানি সাধারণ মানুষকেই টানতে হয়। নানা স্তরে দুর্নীতি ব্যবসার পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
সিপিডি বলেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশে অগ্রগতি দেখা যায়নি। হয় তা স্থবির ছিল নতুবা আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে। সবচেয়ে সমস্যাযুক্ত কারণ হিসেবে ‘দুর্নীতি’ এখনো রয়ে গেছে। অন্যান্য কাঠামোগত সমস্যা ও নতুন সমস্যার ফলে দুর্নীতির তীব্রতা বেড়েছে।
ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে জরিপ প্রতিবেদনে। দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নির্ধারণ করে নীতি, কৌশল ও পরিকল্পনা প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বড় সংস্কার আনতে হবে; স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দক্ষতার মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; নাগরিক ও ব্যবসায়িক সেবা নিশ্চিত করতে হবে; ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে; আর্থিক খাতে সংস্কার আনতে হবে এবং নির্বাচনী ইশতেহারে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করতে হবে।
অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দুর্নীতির পাশাপাশি নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ ব্যবসাকে আরও সমস্যায় ফেলছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য সমস্যা তৈরি করছে বৈদেশিক মুদ্রার উত্থান-পতন, আমলাতন্ত্র ও মূল্যস্ফীতি। আর বড় ব্যবসায়ীদের জন্য এসবের পাশাপাশি অবকাঠামোর অপ্রতুলতা সমস্যা তৈরি করছে।
তিনি বলেন, জীবনযাত্রার মানের অবনতির কারণে আইনশৃঙ্খলায় ব্যত্যয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপেশাদার আচরণ এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। নির্বাচনের বছর সামাজিক ও রাজনৈতিক অশান্তি আরও বাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
জরিপে বলা হয়, ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। সংঘটিত অপরাধের সংখ্যা বাড়ছে। এক ধরনের মাফিয়াতন্ত্র গড়ে উঠেছে। এসব এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরও জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে।
বলা হয়েছে, উন্নয়ন ব্যবসায়ীদের কাজও সহজ নয়। ব্যবসায় ‘প্রতিযোগিতা কমিশন’-এর ভূমিকা নগণ্য। ডমিন্যান্ট মার্কেট প্লেয়ার গড়ে উঠছে দেশে। জাতীয় পর্যায়ে সরবরাহ নিশ্চিত করতে এসএমই’র ব্যবসাকে আরও সহজ করতে হবে।
পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তে নো ম্যানস ল্যান্ড বা শূন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গাদের সর্বশেষ দলটিকে দেশে প্রবেশের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। গত শনিবার থেকে তাদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে এখনো তাদের কাউকেই প্রবেশ করানো হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নির্যাতন ও নিপীড়নের ভয়ে দেশটি থেকে বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে আসা পাঁচ হাজারের মতো রোহিঙ্গা বান্দরবানের তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় গত পাঁচ বছর ধরে অবস্থান করছে। ২০১৭ সালের আগস্টের পর থেকে প্রাণভয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে রোহিঙ্গারা সেখানে আশ্রয় নেওয়া শুরু করে।
সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, নতুন করে রোহিঙ্গা প্রবেশের ক্ষেত্রে সরকার ২০১৭ সালের আগস্টের পর থেকেই কড়াকড়ি অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া জোরালো করা হয়েছে। তাছাড়া শূন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গারাও সুবিধাজনক সময়ে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে এ মাসের শুরুর দিকে সশস্ত্র সংঘর্ষের সময় শূন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগ আবাসস্থল পুড়ে যায়। এরপর বাংলাদেশের নিরাপত্তার স্বার্থে সেখানে থাকা রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরুর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর বলেছেন, ‘আমাদের কমিটি হয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় নেওয়া এ লোকদের যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু তাদের স্থানান্তর বা আশ্রয়ের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। কিন্তু এটা নিশ্চিত যে, নিরাপত্তা ইস্যুতে বর্তমানে ওই অবস্থানে আর কোনো নতুন ক্যাম্প থাকবে না। তাদের অন্য কোথাও স্থানান্তর করা উচিত। সেটি কোথায় হবে সে জায়গা এখনো ঠিক হয়নি। কমিটিতে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন, পুলিশ, গোয়েন্দা এবং বান্দরবান জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধিরা রয়েছেন।’
অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনির বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্ত এলাকায় সশস্ত্র গ্রুপগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের বেশ কয়েকটি ঘটনা লক্ষ করেছি। এটি এ লোকদের জীবনকে বিপন্ন করবে। যেহেতু তারা বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে, মানবিক কারণে তাদের এখানে আশ্রয় দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’
এদিকে শূন্যরেখা থাকা রোহিঙ্গাদের নিয়ে আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গা মূলত নিজ দেশে ফেরার ইচ্ছায় সেখানে থেকে যায়। কিন্তু মিয়ানমারের পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় এবং ২০১৯ সালে বাংলাদেশ আর রোহিঙ্গাদের গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে তারা আটকা পড়ে। অস্থায়ী তাঁবুতেই এতদিন ধরে তারা সেখানে বসবাস করে আসছিল। বাংলাদেশ ১৯৫১ সালে জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ না হলেও ১২ লাখ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে এবং তাদের মানবিক সহায়তা দিয়েছে। যাদের বেশিরভাগই ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক দমনপীড়নের সময় পালিয়ে এসেছে।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রেকর্ড গড়ে সেঞ্চুরি করেছেন মুশফিকুর রহিম। যে ইনিংসটি চোখে লেগে আছে ওপেনার লিটন দাসের। মুশফিকের এদিনের মতো ইনিংস বাংলাদেশের আর কোনো ক্রিকেটারে ব্যাটেই দেখেননি বলে মন্তব্যও করেছেন তিনি।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যায় বাংলাদেশ ইনিংসের পরই। এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৪৯ রানের পুঁজি গড়ে বাংলাদেশ। যা নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
ছয় নম্বরে খেলতে নেমে মুশফিক ৬০ বলে ১০০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ১৪ চার ও ২ ছক্কায়। ম্যাচ শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন লিটন। এ সময় মুশফিকের ইনিংস নিয়ে তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমি যতদিন খেলছি, বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড়ই এভাবে শেষের দিকে গিয়ে ১০০ করেনি।’
মুশফিকে মুদ্ধ লিটন বলে যান, ‘যখন দল থেকে কেউ এরকম একটা সেঞ্চুরি করে, দেখলে অনেক ভালো লাগে। সিনিয়ররা কেউ করলে তো আরও ভালো লাগে। মুশফিক ভাইয়ের শুধু আজকের ইনিংস না, শেষ ম্যাচের ইনিংসটা যদি দেখেন, আমার মনে হয় অসাধারণ ছিল।’
‘যদিও রান বেশি নয়, ৪০ বা এরকম ছিল (২৬ বলে ৪৪)। এটাই কিন্তু বড় ভূমিকা রাখে তিন শর বেশি রান করতে। আজকের ইনিংসটা তো ম্যাচের চিত্র বদলে দিয়েছে।’
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান করেছিল টাইগাররা। এ ম্যাচের আগ পর্যন্ত সেটাই ছিল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতেছিল রেকর্ড ১৮৩ রানের ব্যবধানে। রানের হিসেবে যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। সুবাদে ১-০ তে সিরিজে এগিয়ে তামিম ইকবালের দল।
একই ভেন্যুতে আগামী বৃহস্পতিবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ড. সাদিক আহমেদ বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি নিয়ে গবেষণাধর্মী একটা বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেছেন। গুরুত্বপূর্ণভাবে, তিনি নির্বাচিত কিছু দেশের যারা মোটামুটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে বলা চলে, প্রচেষ্টার আলোকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে, বাংলাদেশের মুদ্রানীতির সীমাবদ্ধতা নিয়েও তার প্রাজ্ঞ প্রতিক্রিয়া পেশ করেছেন। তার এই পর্যবেক্ষণ নীতিনির্ধারক এমনকি সাধারণ পাঠকের নজরে থাকা উচিত বলে মনে করি।
২০২২ সালে বিশ্বে চলমান ‘মারমুখী মূল্যস্ফীতির’ কথা আমরা সবাই জানি। সম্ভবত ২০০৮ সালের পর এমন ঝরোগতিতে বড় অভিঘাত সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে নেই। চলমান মূল্যস্ফীতি কতটা মারমুখী, তা উপলব্ধি করার জন্য কিছু পরিসংখ্যান দিয়েছেন সাদিক আহমেদ যা উল্লেখ না করলেই নয়।
একমাত্র আমেরিকায় মূল্যস্ফীতির হার ২০২১ সালের ১.৪ শতাংশ থেকে ২০২২ সালের জুনে ৯.১ শতাংশে পৌঁছায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নে সেই হার এক বছরের মধ্যে ১.৯ শতাংশ থেকে ১০.৬ শতাংশ লাফিয়ে ওঠে। পার্শ্ববর্তী দেশ থাইল্যান্ডে ২০২২ সালের প্রথম সাত মাসে ৩.২ থেকে ৭.৯ শতাংশ, ভারতে এক বছরে দ্বিগুণ, বাংলাদেশে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ৫.৯ শতাংশ থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৯.৫ শতাংশে অবস্থান নেয় মূল্যস্ফীতির হার।
বিশেষত দেশগুলোর বিদ্যমান পরিবেশ ও নীতি কাঠামোর ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন মাসে ভিন্ন ভিন্ন গতিতে মূল্যস্ফীতি চূড়ায় ওঠা প্রত্যক্ষ করে। কিন্তু আমেরিকা থেকে বাংলাদেশ সব জায়গায় ভোগান্তি মোটামুটি একইরকম। তবে জনগণের অসন্তুষ্টির পরিপ্রেক্ষিতে মূল্যস্ফীতির মুখে নীতিগত প্রতিক্রিয়া অধিকতর দ্রুত এবং দৃঢ় ছিল ঐ সমস্ত দেশে যারা মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে সক্ষম হয়।
মূল্যস্ফীতি লাফিয়ে ওঠার মূলে আছে দুটো কারণ : (ক) কভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের যৌথ প্রভাবের জন্য জোগানে ঘাটতি ঘটে এবং (খ) আমেরিকা ও ইউরোপে চাহিদা চাঙ্গা করার লক্ষ্যে প্রদত্ত কভিডবিরোধী প্রণোদনা প্যাকেজ প্রবর্তন।
যদিও মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী তীক্ষèতার উৎস ছিল জোগানের ঘাটতি এবং সেইহেতু পণ্যের দামের উল্লম্ফন। বিশেষত জ্বালানি দ্রব্য, তারপর নীতিনির্ধারকরা চটজলদি অনুভাবন করতে পেরেছিলেন যে, সমন্বিত প্রচেষ্টার অভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা দুষ্কর।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মুদ্রা কর্র্তৃপক্ষ খুব দ্রুত সুদের হার বাড়িয়ে দিয়ে ঋণের প্রবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রেখে আগ্রাসী চাহিদা ব্যবস্থাপনা নীতি গ্রহণ করলেন (কত আগ্রাসী তার প্রমাণ সুদের হার ত্বরান্বিত হওয়ার কারণে আমেরিকার দুটো ব্যাংকে ধস নামা)। এই পদক্ষেপ পদে পদে এবং চাহিদার প্রকৃতি সংক্রান্ত তথ্যের সঙ্গে সমন্বয় করে করা হয়েছে বলে ধারণা করা যায়। থাইল্যান্ড, ভারত এবং ভিয়েতনামও মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে সুদের হার বৃদ্ধির মাধ্যমে চাহিদা সংকোচন নীতি আলিঙ্গন করেছে।
একমাত্র বাংলাদেশ ব্যতিক্রম যেখানে চাহিদা সংকোচন নীতি গ্রহণ করেইনি বরং চাহিদার চাপে ইন্ধন জুগিয়ে চলেছে ব্যক্তি খাতে ঋণ সম্প্রসারণ এবং রাজস্ব ঘাটতি বৃদ্ধি। যে দেশে কর-জিডিপির অনুপাত দশ শতাংশেরও কম সেই দেশে ব্যাংক থেকে টাকা ধার নেওয়া ছাড়া অর্থায়নের উৎস কোথায়?
বাংলাদেশের মুদ্রানীতি ব্যবস্থাপনার একটা উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য বহু বিতর্কিত ‘ছয়/নয়’ সুদের নীতির অব্যাহত উপস্থিতি। যেখানে গেল সাত মাসের গড় ৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতির বিপরীতে ল্যান্ডিং রেট ৯ শতাংশ। এই শূন্য অথবা ঋণাত্মক সুদের হার ব্যক্তি ঋণের প্রসার ঘটিয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। অপরদিকে, বর্ধিষ্ণু রাজস্ব ঘাটতি সরকারকে ব্যাংক থেকে গেল ১২ মাসে ২৮ শতাংশ হারে ঋণ নিতে বাধ্য করছে।
প্রশ্ন হলো, সুদের হার বৃদ্ধির মাধ্যমে চাহিদা সংকোচন নীতি কতটা ফলদায়ক অন্তত বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতার আলোকে? দেখা গেছে, মূল্যস্ফীতি হ্রাসে বিভিন্ন পদক্ষেপ থেকে সবচেয়ে বেশি কমেছে থাইল্যান্ডে (৫১ শতাংশ) তারপর আমেরিকা ৩৫ শতাংশ, ইইউ-তে ২০ শতাংশ, ভারতে আট শতাংশ। ভিয়েতনামে মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে বেশি নীতিগত গুরুত্ব পাওয়ার কারণে চাহিদা ব্যবস্থাপনায় সাফল্যস্বরূপ (যেমন সুদের হার বৃদ্ধি) বিশ্বে উঁচু মূল্যস্ফীতির মধ্যেও দেশটি ৫ শতাংশের নিচে মূল্যস্ফীতি ধরে রাখতে পেরেছে।
মূল্যস্ফীতি ব্যবস্থাপনায় এই ভালো ফলাফলের বিপরীতে বাংলাদেশের কৃতিত্ব যে তেমন উজ্জ্বল নয়, তা বলা বোধ করি বাহুল্য নয়। আগস্ট ২০২২ থেকে জানুয়ারি ২০২৩ মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে।
বস্তুত সরকারি পরিসংখ্যান তাই বলছে। তাও বৈশ্বিক স্তরে খাদ্যসহ পণ্যের দাম পড়ে যাওয়ার কারণে। মোটকথা, ২০২২ সালের আগস্ট মাসের মূল্যস্ফীতি চূড়া থেকে মাত্র ৭ শতাংশ নেমেছে সংকল্পবদ্ধভাবে স্থিতিশীল রাখার প্রাণান্ত প্রয়াস হিসেবে।
মূল্যস্ফীতি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা সহজেই অনুমেয় এবং কিছু দীক্ষা আমাদের চোখের সামনে উপস্থিত। প্রথমত, এই ধারণাই ভুল যে যেহেতু মূল্যস্ফীতির উৎপত্তি বাইরে থেকে সুতরাং কিছুই করা যাবে না এবং তা কিছুটা আত্মপ্রবঞ্চনাপূর্ণ। মূল্যস্ফীতিকে শক্তিশালী চাহিদা ব্যবস্থাপনা নীতির আওতায় পোষ মানাতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, সুদের হার বাড়িয়ে ব্যক্তি খাতের ঋণের প্রবাহ প্রয়োজন মাফিক রাখা এবং রাজস্ব ঘাটতি সংযত রাখা।
গত আট মাস ধরে চলমান মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশ পৌঁছে কঠোর অভিঘাত হানছে দরিদ্র, নিম্ন আয় এবং মধ্যম আয়ের মানুষগুলোর ওপর এবং তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে তারা কী করছেন তাও জানা। পুষ্টির অভাব, শিক্ষা- স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হ্রাস, মানসিক অস্থিরতা ইত্যাদি। অতএব, কালবিলম্ব না করে অচিরেই এর মোকাবিলা করতে হবে। বিশেষত রাজনৈতিক বিবেচনাপ্রসূত উপদেশ হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এটা করতেই হবে।
মূল্যস্ফীতি নিজে নিজে তো যাবে না। বরং তা অনমনীয় হয়ে উঠতে পারে যদি ঋণ বৃদ্ধি আর ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে ঘাটতি মেটাতে হয়। ঠিক এই মুহূর্তে সব দেশে মূল্যস্ফীতি ব্যবস্থাপনা হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব চেয়ে বড় অগ্রাধিকার। মূল্যস্ফীতি ব্যবস্থাপনাকে বি-রাজনীতিকরণের লক্ষ্যে অনেক উন্নত দেশে স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক রয়েছে যারা সুদের হার নীতির মাধ্যমে ঋণের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে পরিচিত ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’ তেমন স্বাধীনতা ভোগ করে বলে বেয়াকুফও বিশ্বাস করে না। তারপরও বলতে হয় যে- (ক) বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত হবে জরুরি ভিত্তিতে ছয় /নয় সীমা তুলে দিয়ে নমনীয় সুদের হারে ঋণপ্রবাহ ঠিক রাখা, (খ) সুদের হারভিত্তিক মুদ্রানীতি ব্যবস্থাপনাকে সহজতর করার জন্য টি-বিলস বাজার উন্নয়ন করা এবং (গ) সরকারের উচিত হবে রাজস্ব ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে রেখে বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল্যস্ফীতি কৌশলকে সাহায্য করা, রাজস্ব ঘাটতি হ্রাসে কম সুদে বিদেশি ঋণ গ্রহণ এবং বড় বড় পুঁজি-নিবিড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা।
পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেক দেশে করোনার কারণে কৃত্রিম চাহিদা সংকোচন লক্ষ করা গেছে। ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল পড়ন্ত। কিন্তু যেই করোনার করাল গ্রাস থেকে ভোক্তা এবং বিনিয়োগকারী অব্যাহতি পেল, অমনি বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো আছড়ে পড়ল বাজারে। এমনিতে থাকা অপেক্ষাকৃত কম জোগান তার ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চাহিদা-জোগান ব্যবধান বাড়িয়ে দিয়ে মূল্যস্ফীতির আগুনে ঘি ঢালছে।
সুতরাং, বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি একদিকে ডিমান্ড পুল অন্যদিকে কস্ট পুস। অন্তত সুদের হার বৃদ্ধি করে চাহিদা সংকোচন নীতি গ্রহণ করতে পারলে আপাতত বাঁচোয়া।
ব্যবসায়ী কিংবা বিনিয়োগকারীদের ভাষ্য অন্যরকম। সুদের হার বাড়লে, ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ কমবে। যদি প্রশ্ন করা হয় যে, সুদের হার জোর করে নিচে রাখার ফলে গেল ক’বছর বিনিয়োগ বৃদ্ধি কতটুকু হয়েছে, এর উত্তর নিশ্চয় উল্লসিত হওয়ার মতো হবে না। আসলে, ‘বিনিয়োগ’ অনেক উপাদানের ওপর নির্ভর করে। এর মধ্যে সুদের হার অন্যতম, এমনকি প্রধান নিয়ামক।
লেখক: অর্থনীতিবিদ, সাবেক উপাচার্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানা-পুলিশের সদস্যরা ভেজাল ও নিম্নমানের খাদ্যপণ্য বিক্রির অভিযোগ তুলে গণহারে চাঁদাবাজি করছে বলে অভিযোগ করেছেন চাক্তাই রাজাখালী এলাকার কিছু ব্যবসায়ী। তারা বলেছেন, বাকলিয়া থানায় কর্মরত পাঁচজন এসআই এক মাস ধরে ব্যবসায়ীদের অতিষ্ঠ করে তুলেছেন। গভীর রাতে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও গুদামে হানা দিয়ে নিম্নমানের পণ্য বিক্রির অভিযোগ তুলে লাখ লাখ টাকা আদায় করছেন এই পুলিশ কর্মকর্তারা। গতকাল সোমবার বেলা ১১টায়ও রাজাখালী এলাকায় কথিত অভিযানে যান বাকলিয়া থানার এসআই আসাদুল্লাহসহ আরও কিছু পুলিশ সদস্য।
এ সময় আপেল মার্কা ‘আরজে সেমাই’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে হানা দেন তারা। ময়দা নিম্নমানের, ট্রেড লাইসেন্স না থাকা এমন বিভিন্ন অভিযোগ তুলে প্রতিষ্ঠানের মালিক রাকিবকে ধরে থানায় নিয়ে যান এসআই আসাদুল্লাহ। বেলা ১১টা থেকে গতকাল এই প্রতিবেদন লেখার সময় (সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত) রাকিবকে থানায় ‘আটক’ করে রাখা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বাকলিয়া থানায় ‘আটক’ অবস্থা থেকে রাকিব মোবাইল ফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আজ বেলা ১১টার দিকে এসআই আসাদুল্লাহসহ কিছু পুলিশ কনস্টেবল আমার প্রতিষ্ঠানে আসেন। এ সময় এসআই আসাদুল্লাহ আমার প্রতিষ্ঠানের ময়দার মান খারাপ বলে অভিযোগ করে আমাকে থানায় এনে আটক করে রেখেছেন। আমি তাদের বলেছি, আমার প্রতিষ্ঠানের জন্য পণ্য কেনার সব কাগজপত্র আমার কাছে আছে। আমার এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ বা মামলা নেই। তবুও কেন আমাকে থানায় বসিয়ে রাখা হয়েছে।’
রাকিবকে থানায় ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে এসআই আসাদুল্লাহ বলেন, ‘আজ সকালে রাজাখালী এলাকায় গিয়েছিলাম জমিজমা-সংক্রান্ত একটি মামলার তদন্ত করতে। এ সময় রাকিবের প্রতিষ্ঠানে যাই। থানার সেকেন্ড অফিসার তাকে (রাকিব) থানায় আনতে বলেছেন।’
রাকিবের এবং তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে থানায় কোনো অভিযোগ বা মামলা নেই। তা ছাড়া গতকাল সেখানে ভেজালবিরোধী কোনো অভিযানও হয়নি, তাহলে কেন রাকিবকে থানায় নিয়ে আটক করে রাখলেন? এমন প্রশ্ন করলে এসআই আসাদুল্লাহ বলেন, সেকেন্ড অফিসার বিস্তারিত জানাবেন।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে জানান, গত এক মাসের ব্যবধানে চাক্তাই-রাজাখালী এলাকার বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক-কর্মচারীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রায় আট লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছেন আলোচ্য পুলিশ কর্মকর্তারা। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে গতকাল রাতে নিজেদের ব্যবসায়ী সংগঠন চাক্তাই শিল্প ও বণিক সমিতি কার্যালয়ে জরুরি বৈঠক ডাকেন ভুক্তভোগীরা।
তাদের মধ্যে অন্যতম মেসার্স জননী পোলট্রি অ্যান্ড ফিশ ফিডের মালিক রিকু সেন অভিযোগ করে বলেন, ‘এক মাস ধরে বাকলিয়া থানার সাব-ইন্সপেক্টর আমীর হোসেন, মোরশেদ, বেলাল, আসাদ উল্লাহ ও তাজুল ইসলাম বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গভীর রাতে অভিযান পরিচালনার নামে ব্যবসায়ীদের অতিষ্ঠ করে তুলেছেন। ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য বিক্রির অভিযোগ দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এভাবে এক মাসে ৮-১০টি প্রতিষ্ঠান থেকে অন্তত আট লাখ টাকা চাঁদাবাজি করেছেন এই পাঁচ সাব-ইন্সপেক্টর।’
এক মাস ধরে চাঁদাবাজি চললেও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ব্যবসায়ী রিকু সেন বলেন, ‘আমরা আজ রাতে সমিতির কার্যালয়ে বিষয়টি নিয়ে বসব। এরপর সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করব।’
ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে পুলিশ চাঁদা আদায় করেছে সেগুলো হলো মেসার্স জননী পোলট্রি অ্যান্ড ফিশ ফিড, আবদুল্লাহ এন্টারপ্রাইজ, চাল ব্যবসায়ী আহমদ হোসেন, মেসার্স দেলোয়ার সওদাগরের সেমাই ফ্যাক্টরি, রাজাখালী রোডের আক্কাস সওদাগর ও মেসার্স জয়নাল সওদাগরের ময়দার ফ্যাক্টরি।
ভুক্তভোগী আহাম্মদ নুর সওদাগর অভিযোগ করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নিম্নমানের চাল মজুদের অভিযোগ তুলে ১৬-১৭ দিন আগে এসআই আমীর আমার কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা নিয়ে যান। এর ২০-২২ দিন আগে চাল গুদামজাত করার সময় একই অজুহাত তুলে আমার প্রতিষ্ঠানের ক্যাশিয়ার শফির কাছ থেকে সাব-ইন্সপেক্টর মোরশেদ আড়াই লাখ টাকা নিয়েছেন।’
মেসার্স জননী পোলট্রি অ্যান্ড ফিশ ফিড, প্রোপ্রাইটর রিকু সেন অভিযোগ করে বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমার প্রতিষ্ঠানের জন্য আনা ছোলা, মসুর ডাল ও সরিষা ট্রাক থেকে গুদামে নেওয়ার সময় নিম্নমানের অভিযোগ তুলে সাব-ইন্সপেক্টর আমীর হোসেন ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন।’
ভুক্তভোগী রাজাখালী এলাকার পেঁপে মার্কা সেমাই কারখানার মালিক দেলোয়ার সওদাগর বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানে মজুদ থাকা ময়দার মান নিম্নমানের বলে অজুহাত তুলে ৬৫ হাজার টাকা নিয়েছেন বাকলিয়া থানার সাব-ইন্সপেক্টর আমীর হোসেন।’
ব্যবসায়ীরা জানান, একইভাবে মেসার্স আবদুল্লাহ এন্টারপ্রাইজের মালিক সোহাগের গুদামে ‘অভিযান’ চালিয়ে নিম্নমানের মৎস্য খাদ্য বিক্রির অভিযোগ তুলে ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা আদায় করা হয়। সোহাগের গুদামে ‘অভিযানের’ নেতৃত্ব দেন এসআই বেলাল, এসআই আমীর হোসেন ও এসআই তাজুল। রাজাখালী রোডের জনতা বিল্ডিংয়ের সামনে মেসার্স জয়নাল সওদাগরের সেমাই ফ্যাক্টরির ময়দার মান খারাপ বলে আদায় করা হয় ১০ হাজার টাকা, মুসলিম বেকারি গলিতে মেসার্স আবুল কালাম ফিড মিলের পণ্য ট্রাক থেকে নামানোর সময় নেওয়া হয় ১০ হাজার টাকা, রাজাখালী রোডের তেল ব্যবসায়ী আক্কাস সওদাগর থেকে নেওয়া হয় ৬৫ হাজার টাকা এবং চাক্তাই মুসলিম বেকারি গলির ভেতরে ঘি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কুইন কাউ নামক কারখানা থেকে এসআই আমীর নেন ৭০ হাজার টাকা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মনি বেগম, মোহাম্মদ কালু ও মো. আকাশ নামে তিনজন মাদক কারবারি চক্রের সদস্য। রাজাখালী ফায়ার সার্ভিস এলাকায় জুয়ার আসর চালায় কালু। স্থানীয় মুসলিম বেকারি গলি এলাকায় মাদক বিক্রি করে মনি বেগম। কিছু পুলিশের সঙ্গে তাদের সখ্য রয়েছে। পুলিশের সঙ্গে সখ্যকে পুঁজি করে চাক্তাই এলাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের তারা নিয়মিত হয়রানি ও চাঁদাবাজি করছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠায় বাকলিয়া থানার এসআই আমীর হোসেনকে কিছুদিন আগে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে।
তবে বাকলিয়া থানার ওসি আবদুর রহিমের দাবি, পদোন্নতি পাওয়ার পর এসআই আমীরকে কিছুদিন আগে সদরঘাট থানাধীন মাদারবাড়ী ফাঁড়ির ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ বিষয়ে বক্তব্য জানতে গত রবিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে এসআই আমীর হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এদিকে নিজের থানায় কর্মরত পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এমন চাঁদাবাজির অভিযোগ শুনে বিস্মিত হয়েছেন ওসি আবদুর রহিম। তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশ একটা সুশৃঙ্খল বাহিনী। এটা কি মগের মুল্লুক? ব্যবসায়ীরা কেন পুলিশকে বারবার টাকা দেবেন? তারা আমাকে জানাননি কেন? তবে অভিযোগের সত্যতা পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ওসি আবদুর রহিমের সঙ্গে কথা বলার কিছুক্ষণ পর অভিযোগকারীদের নাম-ঠিকানা ও মোবাইল ফোন নম্বর তাকে (ওসি) হোয়াটসঅ্যাপে দেন এই প্রতিবেদক। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলারও অনুরোধ করা হয়। এক ঘণ্টা পর গতকাল সন্ধ্যায় কল করলে ওসি আবদুর রহিম বলেন, ‘ভাই আমি অন্য কাজে ব্যস্ত আছি।’
পাকিস্তানে দুর্বৃত্তদের হামলার ঘটনায় পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) এক নেতাসহ অন্তত দশজন নিহত হয়েছেন।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্যা ডন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের হাভেলিয়ানের কাছে অজ্ঞাত হামলাকারীরা একটি গাড়িকে লক্ষ্য করে রকেট চালিত গ্রেনেড দিয়ে হামলা চালায়। এতে পিটিআইয়ের স্থানীয় জেলা চেয়ারম্যান আতিফ জাদুন খানসহ অন্তত নয়জন নিহত হয়।
অ্যাবোটাবাদ জেলা পুলিশ কর্মকর্তা (ডিপিও) উমর তুফায়েল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, অ্যাবোটাবাদ জেলার ল্যাংড়া এলাকার এক গ্রামে দোয়ার অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পর বাড়ি ফিরছিলেন আতিফসহ আরও কয়েকজন লোক। তখনই জাদুনের গাড়িতে দুর্বৃত্তরা অতর্কিত হামলা চালায় ফলে গাড়ির জ্বালানি ট্যাঙ্কটি বিস্ফোরিত হয়। উমর তুফায়েলের দাবি গাড়িটিতে রকেট হামলা হয়েছিলো।
তুফায়েল জানান, মরদেহগুলো অ্যাবোটাবাদ জেলা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, ঘটনাটি পুরানো শত্রুতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে অবিলম্বে অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে তাদের শাস্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছে পিটিআই।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।