
২২ বছর আগে ঢাকায় প্রথম ডেঙ্গু ভাইরাসবাহী এডিস মশা শনাক্ত হয়। পর্যাপ্তসংখ্যক কীটতত্ত্ববিদের মাধ্যমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম শুরু হলেও বছর না যেতেই তা বন্ধ হয়ে যায়। এখন গতানুগতিক পদ্ধতিতে মশা নিয়ন্ত্রণের কাজ হচ্ছে। ফেলে আসা সময়ের কোনো মৌসুমে ডেঙ্গুর বিস্তার বেশি ছিল, কোনো মৌসুমে ছিল কম। মাঝখানে ১৫ বছর এ রোগটি নিয়ে মানুষের দুর্ভাবনা ছিল না।
২০০০ সালে দেশে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। তখন থেকে তিন বছর রোগটি আতঙ্ক ছড়িয়ে মাঝখানে আক্রান্ত ও মৃত্যু এতটাই কম ছিল যে মানুষ রোগটির কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিল। ২০১৮ সালে আবার আশঙ্কাজনক হারে এর প্রকোপ শুরু হয়। পরের বছর ভয়াবহ আকার ধারণ করে। করোনা মহামারীর প্রথম বছর ২০২০ সালে কম ছিল। পরের বছর মৃত্যু ১০০ ছাড়িয়ে যায়। ২০২২ সালে এসে ডেঙ্গুতে মৃত্যু সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ৩০০-এর কাছাকাছি পৌঁছে যায়। চলতি বছর এর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশ ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ডেঙ্গুর জীবাণুর বাহক এডিস মশার বিস্তার বেড়েছে। এ ছাড়া রোগটির প্রকোপ বাড়া-কমা নির্ভর করে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কম-বেশি হওয়ার ওপর।
সংশ্লিষ্ট সংস্থা তাদের ওপর অর্পিত কাজকে গুরুত্ব না দেওয়ায় এখনো যথাযথ পদ্ধতিগত কাঠামো গড়ে ওঠেনি। যথাযথ পদ্ধতি হচ্ছেÑ কীটতত্ত্ববিদের নেতৃত্বে টিম গঠন করতে হবে। টিম এডিস মশার সর্বোচ্চ জমায়েতের স্থান শনাক্ত করবে। এরপর সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করবে। পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা করে মশার প্রজনন-ধারা বুঝবে এবং বাহিত ভাইরাসের চরিত্র শনাক্ত করবে। কী মাত্রার প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে তার পূর্বাভাস জানাবে এবং নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেবে। সারা বছর এভাবে কাজ চলমান রাখতে হবে। এভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে কলকাতাসহ অনেক শহর সফলতা পেয়েছে।
ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা জেঁকে বসেছে দেশে। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৮৩১ জন; মারা গেছে ৯৫৬ জন। কীটতত্ত্ববিদ ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালে দেশে প্রথম ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। সেবার ৫ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়; আর মারা যায় ৯৩ জন। প্রথমবারের মতো মশাবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাসের খবরে ঢাকাসহ সারা দেশের মানুষ আতঙ্কিত হয়। তৎকালীন সরকার পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়।
অভিজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদদের নিয়ে ৬টি টিম গঠন করা হয়। কীটতত্ত্ববিদরা টিমের নেতৃত্বে ছিলেন। প্রতিটি টিম ৬টি করে ওয়ার্ডে কাজ করেছে। টিমের সদস্যরা মশার প্রজননস্থলে লার্বিসাইড ছিটিয়ে মশা ধ্বংস করতেন। ফগিং মেশিন দিয়ে উড়ন্ত মশাও মারা হতো। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের প্রথম বছরে জোরালো কার্যক্রম চালানো হয়। গবেষণাগার না থাকলেও তখন অভিজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদরা প্রতি মাসে ন্যূনতম ৮৪টি ওয়ার্ডে দুইবার করে ভিজিট করতেন। হাতে-কলমে মানুষকে মশা নিয়ন্ত্রণ কীভাবে করতে হবে তা শেখানো হতো। কয়েক বছর সুফলও মিলেছে।
২০০০ সালেই বৈজ্ঞানিকভাবে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পরে এ ধরনের উদ্যোগ আর নেওয়া হয়নি। ফলে এখন ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশা বেড়েছে। শুরুতে যেসব কীটতত্ত্ববিদ কাজ করেছিলেন, তাদের ধরে রাখতে পারলে এ সময়ে ডেঙ্গু নিয়ে এত দুশ্চিন্তার কারণ থাকত না। এত দিনে একটা সিস্টেম দাঁড়িয়ে যেত। কীটতত্ত্ববিদদের মূল্যায়ন না হওয়ায় তারা অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন। এখন চাহিদা থাকলেও যথেষ্টসংখ্যক কীটতত্ত্ববিদ মেলে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০০০ সালে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল ৫ হাজার ৫৫১ জন এবং মারা গিয়েছিল ৯৩ জন। ২০০১ সালে আক্রান্ত হয় ২ হাজার ৪৩০, মারা যায় ৪৪ জন; ২০০২ সালে আক্রান্ত হয় ৬ হাজার ২৩২, মারা যায় ৫৮ জন; ২০০৩ সালে আক্রান্ত হয় ৪২৬, মারা যায় ১০ জন; ২০০৪ সালে আক্রান্ত হয় ৩ হাজার ৪৩৪, মারা যায় ১৩ জন; ২০০৫ সালে আক্রান্ত হয় ১ হাজার ৪৮, মারা যায় ৪ জন; ২০০৬ সালে আক্রান্ত হয় ২ হাজার ২০০, মারা যায় ১১ জন; ২০০৭ সালে আক্রান্ত হয় ৪৬৮, কেউ মারা যায়নি; ২০০৮ সালে আক্রান্ত হয় ১ হাজার ১৫৩, কেউ মারা যায়নি; ২০০৯ সালে আক্রান্ত ৪৭৪, কেউ মারা যায়নি; ২০১০ সালে আক্রান্ত ৪০৯, কেউ মারা যায়নি; ২০১১ সালে আক্রান্ত ১ হাজার ৩৫৯, মারা যায় ৬ জন; ২০১২ সালে আক্রান্ত হয় ৬৭১, মারা যায় ১ জন; ২০১৩ সালে আক্রান্ত হয় ১ হাজার ৭৪৯, মারা যায় ২ জন; ২০১৪ সালে আক্রান্ত হয় ৩৭৫, কেউ মারা যায়নি; ২০১৫ সালে আক্রান্ত হয় ৩ হাজার ১৬২, মারা যায় ৬ জন; ২০১৬ সালে আক্রান্ত হয় ৬ হাজার ৬০, মারা যায় ১৪ জন; ২০১৭ সালে আক্রান্ত হয় ২ হাজার ৭৬৯, মারা যায় ৮ জন; ২০১৮ সালে আক্রান্ত হয় ১০ হাজার ১৪৮, মারা যায় ২৬ জন; ২০১৯ সালে আক্রান্ত হয় ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪, মারা যায় ১৭৯ জন; ২০২০ সালে আক্রান্ত হয় ১ হাজার ৪০৫, মারা যায় ৭ জন; ২০২১ সালে আক্রান্ত হয় ২৪ হাজার ৪২৯, মারা যায় ১০৫ জন; ২০২২ সালে আক্রান্ত হয় ৬২ হাজার ৩৮২, মারা যায় ২৮১ জন; ২০২৩ সালের ১২ জুলাই পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১৬ হাজার ১৪৩, মারা গেছে ৮৮ জন।
কীটতত্ত্ব¡বিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস মশা ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করেছে। পরিবেশ ও আবহাওয়া বিবেচনায় কোনো বছর কম, কোনো বছর বেশি বিস্তার লাভ করে। ২০০০ সালে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এডিস মশা শনাক্ত করার পর এখনকার পর্যায় আসতে সাড়ে ২২ বছর লেগেছে। এ সময়ে বিজ্ঞানভিত্তিক মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হতো। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার অনীহার কারণে তা হয়নি। এটা খুবই দুঃখজনক। বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে সরকারকে বৈজ্ঞানিক মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এ ছাড়া বিকল্প নেই।’
কীটতত্ত্ব¡বিদ ড. জি এম সাইফুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০০০ সালে ডেঙ্গুর বিস্তার শুরু হলে বৈজ্ঞানিক উপায়ে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। এক বছরের মধ্যে ওই কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন ডেঙ্গুর বিস্তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। সঠিক পদ্ধতি না হলে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটবে না। কলকাতায় বিজ্ঞাননির্ভর পদ্ধতি অনুসরণে সফলতা মিলেছে। সেখানে তারা বাসা-বাড়ির ভেতরেও মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। ঢাকায়ও মশা নিয়ন্ত্রণে বাসা-বাড়ির ভেতরে ঢুকতে হবে।’
কীটতত্ত্ব¡বিদ ও অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০০০ সালে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর বছরখানেক সঠিক নিয়মে কাজ করেছে সিটি করপোরেশন। এরপর গতানুগতিক পদ্ধতিতে কাজ শুরু করে। ফলে ঢাকায় মশা নিয়ন্ত্রণের সঠিক পদ্ধতি গড়ে ওঠেনি, যে কারণে এখন চরম মূল্য দিতে হচ্ছে ঢাকাবাসীকে। ঢাকার এই ব্যর্থতা ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। নগরের এ সমস্যায় ভুগছে গ্রামের মানুষও। যেখানেও মশা নিয়ন্ত্রণের কোনো কাঠামো নেই।’
এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লে. কর্নেল ডা. মো. গোলাম মোস্তফা সারওয়ার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত এক-দেড় দশকে ঢাকায় অনেক নগরায়ণ হয়েছে। বিভিন্ন অবকাঠামো হয়েছে। সেসব জায়গায় পানি জমে থাকাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এসব জায়গায় প্রচুর মশার প্রজনন ঘটছে। বাসা-বাড়িতেও প্রচুর এডিস মশার প্রজনন ঘটছে। বাড়িওয়ালা বা নগরবাসী সচেতন নয়। আমরা এখন ড্রোন ব্যবহার করে বহুতল ভবনের মশার প্রজননস্থল চিহ্নিত করে অভিযান চালাচ্ছি।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. ফজলে সামছুল কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন, দ্রুত নগরায়ণ, বহুতল ভবন নির্মাণ ও শহরে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে পানি জমার স্থান তৈরি হয়েছে। প্লাস্টিকের ব্যবহারও বেড়েছে। বিভিন্ন জায়গায় প্লাস্টিকের পাত্র পড়ে থাকে। এসব জায়গায় মশার প্রজনন ঘটছে। ডিএসসিসিতে মশা নিয়ন্ত্রণে যথাপদ্ধতির ঘাটতি রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সেসব সমস্যার সমাধান বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে। আশা করি, এসব দুর্বলতার নিরসন হবে। মশা নিয়ন্ত্রণে নগরবাসীকেও এগিয়ে আসতে হবে।’
এখন তো ডেঙ্গুর খারাপ অবস্থা। দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। যে হারে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, সারা দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে ও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, তাতে তো মনে হচ্ছে জুলাই-আগস্ট মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বিশাল আকার ধারণ করতে পারে। যদি আমরা এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ ভালো মতো করতে না পারি তাহলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করার আশঙ্কা আছে।
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হলে উড়ন্ত মশা মারতে হবে। বাড়ির বাইরে, আশপাশে পানি জমতে না দেওয়া ও মশা মারার দায়িত্ব প্রশাসনের। কিন্তু নিজের ঘরের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। বাসার ভেতর, ছাদে, জানালার কার্নিশে, ফ্রিজের নিচে, ফুলের টবে পানি জমতে দেওয়া যাবে না, এগুলো পরিষ্কারের ব্যবস্থা করতে হবে, এটা নিজ দায়িত্বে করতে হবে।
এবার ডেঙ্গুর ব্যাপারে বেশি সতর্ক থাকতে হবে। কারণ ধরন বদলে গেছে। অনেক লক্ষণ বোঝায় যায় না। সামান্য জ¦র, সর্দি কাশি, মাথাব্যথা হলেই এবার রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। সে জন্য যারই এসব উপসর্গ দেখা দিচ্ছে, অবহেলা না করে সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু টেস্ট করান। এনএস১ এন্টিজেন্ট টেস্ট করলে এক দিনের মধ্যেই ডেঙ্গু শনাক্ত করা যায়।
দ্রুত টেস্ট করার উদ্দেশ্য হলো, যদি ডেঙ্গু পজিটিভ হয় তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে আগেই চিকিৎসা শুরু করা যায়, তাহলে জটিলতাগুলো এড়ানো সম্ভব। কিন্তু অনেকে দেরি করে। ভাবে, দেখি কী হয়, কালক্ষেপণ করে। যখন অবস্থা মারাত্মক আকার নেয় তখন তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যায়। কিন্তু তখন তো আমরা কিছু করতে পারি না। সে জন্য কেউ অবহেলা করবেন না। বিশেষ করে বাচ্চা, বয়স্ক মানুষ, গর্ভবতী নারী এবং যারা অন্যান্য রোগে ভোগেন, যেমন- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি, লিভার, হৃদরোগÑ তাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এই শ্রেণির মানুষ দ্রুত ডেঙ্গু টেস্ট করাবেন। তাদের যদি ডেঙ্গু হয়েই যায়, তাহলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ভালো।
ডেঙ্গুর যে লক্ষণ, তা পরিবর্তন হয়েছে। আমরা এতদিন বলতাম যে, যাদের ১০৪-১০৫ ডিগ্রির ওপর জ¦র, হাড়ে হাড়ে, গিটে গিটে, ঘাড়, মাথা, পিঠে ও চোখে ব্যথা, গায়ে র্যাশ ওঠে, রক্তে প্লাটিলেট কমে যায়, বমির সঙ্গে রক্তক্ষরণ হয়, এগুলো ডেঙ্গুর লক্ষণ। কিন্তু এবার এ ধরনের রোগী পাওয়া যায় না। এবার আগের মতো উচ্চমাত্রার পাঁচ দিনের জ¦র না-ও হতে পারে, সামান্য জ¦র নিয়েও ডেঙ্গু হতে পারে। আগে বলা হতো, পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলে এবং জ¦র সেরে যাওয়ার পরই কেবল জটিলতা শুরু হয়। তবে এখন দেখা যাচ্ছে, জ¦রের শুরুতেই বা দ্বিতীয়, তৃতীয় দিনেও জটিলতা নিয়ে রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। আকস্মিক রক্তচাপ কমে যাওয়া, ক্যাপিলারি লিকেজ, রক্তের প্লাটিলেট কমে যাওয়া, হেমাটোক্রিট বেড়ে যাওয়াÑ এসব দেখে জটিলতা বোঝা যায়। এবার দেখা যায়, রোগীর ২-৩ দিন জ¦র, মাথাব্যথা হওয়ার পরই শরীর খারাপ হয়ে যায়। এ ধরনের ডেঙ্গুকে শক সিনড্রোম বলে। এবার বেশির ভাগ রোগী এই শক সিনড্রোমেই মারা যাচ্ছে।
ধরনটা বদলে যাওয়ার কারণে বোঝার উপায় থাকে না ডেঙ্গু কি না। রোগীও বোঝে না। ভাবে, একটু জ¦র, গলাব্যথা, দেখি কী হয়। সময়ক্ষেপণ করে, চিকিৎসা নিতে দেরি হয়ে যায়। তা ছাড়া বর্তমানে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তারা প্রায় সবাই দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থবারের মতো সংক্রমিত হচ্ছেন। এসব কারণে জটিলতাও বেশি দেখা যাচ্ছে।
মাঝখানে যে ডেঙ্গুর প্রকোপ কম ছিল, সেটা হতে পারে প্রাকৃতিক কারণে, বা মানুষের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ওঠানামাও কারণ হতে পারে। এবার বেড়ে গেছে। এটার কারণ এমনও হতে পারে, দুই-তিন বছর করোনা গেল। মানুষের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে। ডেঙ্গু বাড়া বা কমার কারণ ব্যাখ্যা করা কঠিন। কিন্তু প্রাকৃতিক বা যে কারণেই হোক, ডেঙ্গু হয়েছে।
ডেঙ্গুর চিকিৎসার ব্যাপারে আমাদের চিকিৎসকরা দক্ষ। চিকিৎসা সবাই ভালো মতোই পারে। চিকিৎসার সমস্যা নেই। রোগীরা আগে আসবে। যারা আসবেন না, তারা ঘরে থাকবেন। প্রচুর পানি, শরবত, গ্লুকোজ, তরল খাবার খাবেন।
বাইরের ওষুধের দোকান থেকে প্যারাসিটামলের বাইরে কোনো ওষুধ খাওয়া যাবে না। এমনকি নিজের ইচ্ছায় বা ফার্মেসির কথা শুনে কোনো ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না। চিকিৎসক প্রেসক্রিপশন দিলে সেটা খাবেন। পরিস্থিতি যদি খারাপ দেখেন তাহলে হাসপাতালে ভর্তি হবেন।
ডেঙ্গু নির্মূল করা যাবে না, নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যেহেতু মশা আছে ও কমবেশি থাকবে, তাই ডেঙ্গুও ওঠানামা করবে। সুতরাং ডেঙ্গু ছিল, আছে ও ভবিষ্যতেও থাকবে। এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সে জন্য জনগণকে সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা চালাতে হবে।
লেখক : ইমেরিটাস অধ্যাপক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
আয়কর আইন ২০২৩-এর আওতায় উৎসে কর বিধিমালা জারি করে দেশের সব এলাকার প্লট, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট এবং বাণিজ্যিক স্থাপনার ‘গেইন’ কর দ্বিগুণ করা হয়েছে। ‘প্রযোজ্য’ হারে বাড়ানো হয়েছে উৎসে কর। আবাসন খাতের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ‘রাজস্বের মারপ্যাঁচে নিবন্ধন ব্যয় ক্ষেত্রবিশেষে ২৪ গুণ হয়েছে। নিবন্ধন খরচ এখন ইতিহাসের সর্বোচ্চ।
অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, বাড়তি কর শেষ পর্যন্ত ক্রেতার ঘাড়ে চাপবে। এতে প্লট-ফ্ল্যাটের দাম বাড়বে। অনেকের পক্ষে এত দামে প্লট-ফ্ল্যাট কেনা সম্ভব হবে না। আবাসন খাতে ধস নামবে।’
চাকরি শেষে এককালীন টাকা পেয়ে চট্টগ্রাম শহরে একটি প্লট বা ফ্ল্যাট কেনার পরিকল্পনা করেও উঁচু কর হারের কারণে পিছিয়ে যান মো. রউফ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জীবনের শেষ সঞ্চয় দিয়ে একটি প্লট বা ফ্ল্যাট কিনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কর যে হারে বেড়েছে প্লট-ফ্ল্যাটের দাম অনেক। এত টাকা আমার নেই।’
কাজী সৌরভ একজন তরুণ ব্যবসায়ী। গত কয়েক বছর ব্যবসা ভালো হওয়ায় এ বছর রাজধানীতে জমি কেনার কথা ভেবেছিলেন। হঠাৎ জমি-নিবন্ধনে উৎসে কর ২৪ গুণ হওয়ায় মো. রউফের মতো তিনিও এ চিন্তা বাদ দিয়েছেন।
নিবন্ধন-কর সবচেয়ে বেশি গুনতে হবে রাজধানীর গুলশান, বনানী, মতিঝিল, দিলকুশা, নর্থ সাউথ রোড, মতিঝিল সম্প্রসারিত এলাকা ও মহাখালী এলাকার স্থাবর সম্পত্তির মালিকদের। এসব এলাকায় সম্পত্তি কিনলে ক্রেতাকে জমি, ফ্ল্যাট বা স্থাপনা নিবন্ধনের জন্য কাঠাপ্রতি দলিল-মূল্যের ৮ শতাংশ বা ২০ লাখ টাকার মধ্যে যেটি বেশি সেটি গুনতে হবে, যা সম্পত্তি-কর হিসেবে সর্বোচ্চ।
আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘বাড়ি বানাতে বেশিরভাগ ক্রেতা তিন বা চার কাঠার প্লট কেনেন। কেউ কেউ ব্যবসার প্রয়োজনে আট বা দশ কাঠা জমিও কেনেন। প্রতি কাঠা জমির দাম ৪০ লাখ টাকা হিসাবে তিন কাঠার একটি প্লটের দাম হয় এক কোটি ২০ লাখ টাকা। দলিলে প্রতি কাঠার দাম ১৫ লাখ টাকা লেখা হলে তিন কাঠা জমির দাম হয় ৪৫ লাখ টাকা। নিবন্ধন খরচ হবে কাঠাপ্রতি দলিল-মূল্যের ৮ শতাংশ বা ২০ লাখ টাকার মধ্যে যেটা বেশি সেটা। কাঠাপ্রতি ২০ লাখ টাকা হিসাবে শুধু কর বাবদ খরচ হবে ৬০ লাখ টাকা। এটা কি বাস্তবসম্মত?’ আবাসন খাতের (প্রথম পৃষ্ঠার পর) সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)-এর সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন (কাজল) দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, ‘নতুন বিধানে প্লট-ফ্ল্যাট কিনতে খরচ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। কয়েক বছর ধরে নিবন্ধন-ব্যয় কমানোর দাবি করছি, কিন্তু তা হয়নি।’ প্রধানমন্ত্রীর কাছে জাতীয় বাজেটে আবাসন খাতের জন্য নেওয়া ব্যবস্থা বদলের দাবি জানান তিনি। বাংলাদেশ ল্যান্ড ডেভেলপারস অ্যাসোসিয়েশন (বিএলডিএ)- এর সভাপতি ও বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতেও প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ হার কমানোর দাবি জানানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘নতুন বিধিমালা অনুযায়ী দেশের যেকোনো এলাকায় স্থাবর সম্পত্তি বা জমি ও ফ্ল্যাটের মালিকানা হস্তান্তরে এলাকাভেদে ২৪ গুণ বা বেশি কর গুনতে হবে। ক্রেতাকে জমি, ফ্ল্যাট বা স্থাপনা নিবন্ধনের জন্য শুধু কর হিসেবেই কাঠাপ্রতি ৩ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হবে। আগে ছিল ১৬৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন এলাকার জমি, জমিসহ বাড়ি, স্থাপনা, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট অথবা ফ্লোর স্পেস হস্তান্তরে কর ছিল দলিলমূল্যের ৪ শতাংশ। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে হয়েছে দলিল-মূল্যের ৮ শতাংশ অথবা এলাকাভেদে কাঠাপ্রতি বিশ লাখ, বার লাখ, দশ লাখ, আট লাখ, ছয় লাখ বা তিন লাখ টাকা। এলাকাভেদে কোথাও কর ২৪ গুণের বেশিও হয়েছে।’ প্রসঙ্গত, আয়কর বিধিমালার ‘সম্পত্তি হস্তান্তর হতে কর আদায় শীর্ষক’ ৬ নম্বর ধারা অনুসারে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় সম্পত্তি-নিবন্ধন কর ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮ শতাংশ করা করা হয়েছে। গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বাইরের এলাকা ও জেলা সদরের পৌর এলাকায় এ কর ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের যেকেনো পৌরসভার আওতাধীন সম্পত্তি-কর ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪ শতাংশ এবং বাকি এলাকায় ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে। কোন এলাকার কত নিবন্ধন-কর রাজধানীর গুলশান, বনানী, মতিঝিল, দিলকুশা, নর্থ সাউথ রোড, মতিঝিল সম্প্রসারিত এলাকা ও মহাখালী এলাকায় নিবন্ধন-কর প্রতি কাঠায় দলিল-মূল্যের ৮ শতাংশ বা ২০ লাখ টাকার মধ্যে যেটি বেশি সেটি। কারওয়ান বাজার এলাকায় দলিল-মূল্যের ৮ শতাংশ বা ১২ লাখ টাকার মধ্যে যেটি বেশি সেটি; চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ ও সিডিএ এভিনিউ এলাকায় দলিল-মূল্যের ৮ শতাংশ বা ৮ লাখ টাকার মধ্যে যেটি বেশি; নারায়ণগঞ্জ, ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, বাড্ডা, সায়েদাবাদ, পোস্তগোলা ও গেন্ডারিয়া এলাকায় দলিল-মূল্যের ৮ শতাংশ বা ৮ লাখ টাকার মধ্যে যেটি বেশি; ঢাকার উত্তরা, সোনারগাঁও, জনপথ, শাহবাগ, পান্থপথ, বাংলামোটর ও কাকরাইল এলাকায় দলিল-মূল্যের ৮ শতাংশ বা ১২ লাখ টাকার মধ্যে যেটি বেশি এবং ঢাকার নবাবপুর ও ফুলবাড়িয়া এলাকায় দলিল-মূল্যের ৮ শতাংশ বা ৬ লাখ টাকার মধ্যে যেটি বেশি। জমিতে যদি কোনো স্থাপনা, বাড়ি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্লোর স্পেস থাকে তাহলে প্রতি বর্গ মিটারে ৮০০ টাকা হারে অথবা ওই স্থাপনা, বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট অথবা ফ্লোর স্পেসের দলিল-মূল্যের ৮ শতাংশের মধ্যে যেটি বেশি তার হারে অতিরিক্ত কর প্রযোজ্য হবে। ঢাকার উত্তরা (সেক্টর ১-৯), খিলগাঁও পুনর্বাসন এলাকা, আজিমপুর, রাজারবাগ পুনর্বাসন এলাকা ও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ, হালিশহর, পাঁচলাইশ ও নাসিরাবাদ-মেহেদিবাগে দলিল-মূল্যের ৮ শতাংশ বা ৩ লাখ টাকার মধ্যে যেটি বেশি, ঢাকার বনানী ডিওএইচএস, ধানম-ি, বারিধারা ডিওএইচএস, মহাখালী ডিওএইচএস, নিকেতন ও বারিধারায় দলিল-মূল্যের ৮ শতাংশ বা ১ লাখ টাকার মধ্যে যেটি বেশি এবং ঢাকার রাজউক পূর্বাচল আবাসিক মডেল টাউন, বসুন্ধরা ও ঝিলমিল আবাসিক এলাকায় দলিল-মূল্যের ৮ শতাংশ বা ৩ লাখ টাকার মধ্যে যেটি বেশি তা দিতে হবে। ঢাকার উত্তরা, নিকুঞ্জ, বাড্ডা পুনর্বাসন এলাকা, গে-ারিয়া পুনর্বাসন, শ্যামপুর পুনর্বাসন, আইজি বাগান ও টঙ্গী এলাকায় দলিল-মূল্যের ৮ শতাংশ বা ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে যেটি বেশি; ঢাকার শ্যামপুর, পোস্তগোলা শিল্প এলাকা ও জুরাইন শিল্প এলাকায় দলিল-মূল্যের ৮ শতাংশ বা ১ লাখ টাকার মধ্যে যেটি বেশি; ঢাকার খিলগাঁও ও রাজারবাগ পুনর্বাসন এলাকায় দলিল-মূল্যের ৮ শতাংশ বা দেড় লাখ টাকার মধ্যে যেটি বেশি এবং ঢাকার গোড়ান ও হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকায় দলিল-মূল্যের ৮ শতাংশ বা ৬০ হাজার টাকার মধ্যে যেটি বেশি।
উজরা জেয়ার এ সফরটি ইতিবাচক হয়েছে। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহ দেখাচ্ছে। তারা এর মধ্যে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে ২৫ মে। এই ভিসানীতি ঘোষণার পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পাল্টাপাল্টি দোষারোপের বিতর্ক শুরু হয়। কারণ যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসানীতিতে নির্দিষ্ট কোনো দল বা গোষ্ঠীর কথা বলেনি। তারা বলেছে, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনে যারা বাধা দেবে, তাদের ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি প্রয়োগ হবে। যা-ই হোক ভিসানীতি ঘোষণার পর বাংলাদেশের বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এই নিয়ে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত করে তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসানীতি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য একটা বড় চাপ তৈরি করেছে। আর সাধারণ মানুষও ভিসা নিয়ে একটা উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে।
উজরা জেয়ার এই সফরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, সেটির একটা স্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে। তা ছাড়া নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদলের কথা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রীরা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যাপারে বলেছেন। তাদের এই সফর অবশ্যই ইতিবাচক।
তা ছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়েও দেশে ও দেশের বাইরে একটা আলোচনা হচ্ছে। উজরা জেয়ার নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদল এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে আইন সংশোধনের কথা বলেছেন আইনমন্ত্রী। সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি হওয়া আস্থাহীনতা কমবে। আমি মনে করি, সবাই যেহেতু চাচ্ছে এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন করা হোক, তাই সরকারের এই উদ্যোগটা সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও আস্থা বাড়বে।
আর নির্বাচন নিয়ে প্রতিনিধিদল যা চেয়েছে, সে অনুযায়ী সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে প্রতিশ্রুতি এসেছে। উজরা সংবাদ সম্মেলনেও সরকারের প্রতিশ্রুতির বিষয়টি তুলে ধরেছেন।
তা ছাড়া মার্কিন প্রতিনিধিদল নির্বাচন ইস্যুতে আরও অনেক আলাপ-আলোচনা করেছে এবং তারা এসব আলোচনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে। তাই আমি মনে করি মার্কিন এই সফর ইতিবাচক এবং কূটনৈতিক চাপের বিষয়টি এখানে নেই।
আর বাংলাদেশকে এখন ৫০ বছর আগের মতো ভাবারও কোনো কারণ নেই। ভূরাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো একটি দেশ তাদের প্রবল চাপ এখানে প্রয়োগ করতে পারে না। আমাদের রাজনীতিকরা যেভাবে বিদেশিদের প্রতি ছুটছেন, বাংলাদেশের অবস্থান সে রকম নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সফর তারই সাক্ষ্য দেয়। তারা বলেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে তারা আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করতে চায় এবং তারা কোনো দলের বা কোনো ব্যক্তির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে আসেনি বলেও বলেছে। আর অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টি অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত, তবে তারা এ ব্যাপারে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের এ সফর একটি ধারাবাহিক সফরের অংশ। এটা কোনো প্রথম সফর না, প্রতি নির্বাচনের আগেই এ রকম সফর হয়ে থাকে। তাই আমি বলব, রাজনৈতিক দলগুলো বা কোনো পক্ষ যেন এটাকে কূটনৈতিক চাপ হিসেবে না দেখে। এটা ১৯৭১-এর বাংলাদেশ, পঁচাত্তরের বাংলাদেশ নয়। কেউ আসল, কিছু করল, চলে গেল। বাংলাদেশ অনেক শক্ত।
সফরের মাধ্যমে চীনের মধ্যস্থতায় চলমান ত্রিপক্ষীয় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগও দূর হবে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আস্থা রাখার সুযোগ কম। যুক্তরাষ্ট্র একই জিনিস করে যাচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা পরিষ্কার না যে তারা মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াবে কি না। তবে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন এবং সেখানে আর্থিক সহায়তা বাড়াতে মার্কিন প্রতিনিধিদলের আহ্বান প্রভাব রাখবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক
সময়টা নব্বই দশকের মাঝামাঝি। অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ তখন ঢাকা আইনজীবী সমিতির (ঢাকা বার) একজন তরুণ সদস্য। এক দুপুরে চেম্বারে বসেই এক স্বজনের মৃত্যুর খবর পান। জানাজা ও দাফনে অংশ নিতে আজিমপুরের উদ্দেশে রওনা হলেও বাধ সাধে পথের অসহনীয় যানজট। আজিমপুরে পৌঁছতে বিকেল গড়িয়ে তখন সন্ধ্যা। গন্তব্যে গিয়ে দেখেন স্বজনের জানাজা ও দাফন হয়ে গেছে। ঘটনাটি মনে দাগ কাটে তার।
জনগণের সমস্যায় আইনি লড়াইয়ের ভাবনার শুরু তখন থেকেই। এরপর আরও নানা সমস্যার বিষয় সামনে আসে। দেশে সরকার আছে, আমজনতার সুরক্ষায় সংবিধানে সবকিছুই আছে। আছে অসংখ্য আইন। আদালত আছে। কিন্তু তারপরও কেন এগুলোর প্রয়োগ ও মানতে সমস্যাÑ এ ভাবনা পেয়ে বসে তাকে। মনজিল মোরসেদের ভাষায়, ‘ভেবে দেখলাম কোথাও না কোথাও ঘাটতি আছে। সুশাসনের ঘাটতি তো আছেই। মানুষের মধ্যে সচেতনতা ফিরিয়ে আনাটাও জরুরি। সেই মানুষটি সরকারের প্রশাসনের হতে পারে। হতে পারে সাধারণ মানুষ। আদালত যেহেতু মানুষের জন্য তাই সাধারণের কাজটি করা অনেকটা সহজ হয়ে যায়। উচ্চ আদালতে যদি সমস্যাগুলো বিশদ ব্যাখ্যা করা যায়, কিছু প্রতিকার হয়তো মিলতেও পারে। এ কারণে আদালতেই দ্বারস্থ হলাম।’
২০ বছরের বেশি সময় আগে সেই শুরু। এরপর সময় অনেক গড়িয়েছে। যেখানেই পরিবেশ নিয়ে ছেলেখেলা সেখানেই ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। যেখানে মৌলিক অধিকার, মানবাধিকারের লঙ্ঘনের অভিযোগ আইনি যুক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে যান আদালতে। যেখানে সরকার বা জনগণের সম্পত্তির অবৈধ দখল বা ধ্বংস সেখানেই তিনি। এজন্য জীবনের ওপর হুমকি এসেছে। সমালোচনাও সইতে হয়েছে। কিন্তু দমে যাননি। জনস্বার্থে লড়াকু এ আইনজীবী বিচারাঙ্গন ছাড়িয়ে নানা মহলের পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন।
১৯৫৯ সালের ২২ জুন ঝালকাঠির কীর্তিপাশা ইউনিয়নের বাউলকান্দা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মনজিল মোরসেদ। স্থানীয় মাধমিক স্কুলে মাধ্যমিক পরীক্ষার পাট চুকিয়ে বরিশাল কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শেষে সেখানেই স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে লাইব্রেরি সায়েন্সে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে ঢাকার বিজয়নগরে সেন্ট্রার ল কলেজ থেকে আইনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সনদভুক্ত আইনজীবী হিসেবে ঢাকা বারে আইন পেশা শুরু করেন। ১৯৯৫ সালে হাইকোর্টের তালিকাভুক্ত আইনজীবী হন। ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর তিনি আপিল বিভাগে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়া স্ত্রী হালিমা আক্তার ও বিদেশে উচ্চ শিক্ষারত দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে তার সংসার।
বড় পরিসরে কাজ করতে ২০০৪ সালে মনজিল মোরসেদ প্রতিষ্ঠা করেন পরিবেশ ও মানবাধিকার সংস্থা এইচআরপিবি (হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ)। প্রায় দুই দশকে সংগঠনটি উচ্চ আদালতে জনস্বার্থে মামলা করেছে অন্তত ৩৩৫টি। যার বেশিরভাগই পরিবেশ দূষণ, নদী দখল ও দূষণ নিয়ে। এর মধ্যে ৯০টি গুরুত্বপূর্ণ মামলায় হাইকোর্টের রুলের পর রায় এসেছে। আর অন্তত ২৩০টি মামলায় অন্তর্বর্তীকালীন আদেশসহ রুল হয়েছে। সব মিলিয়ে মামলাগুলোতে রায় ও অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে এসেছে প্রায় শতভাগ। এসবের মধ্যে ঢাকার পাশের চার নদী রক্ষার মামলা, বুড়িগঙ্গাকে দূষণমুক্ত করা, ঢাকার যানজট নিরসন, ফুটপাত দখলমুক্ত করা, ঢাকার বায়ু ও পরিবেশ দূষণ, দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, যানবাহনে উচ্চৈঃশব্দের হাইড্রোলিক হর্ন নিষিদ্ধকরণ, ২৭ বছর না হওয়া ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন আয়োজন চেয়ে করা মামলা রয়েছে। বগুড়ার মহাস্থানগড়, পুরান ঢাকার লালবাগের কেল্লাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোকে দখলমুক্ত ও সুরক্ষা চেয়ে মামলা করেছেন তিনি। সারা দেশে পুকুর, খাল দখলমুক্ত করা, বায়ুদুষণ রোধে অসংখ্য অবৈধ ইটভাটা ধ্বংস করার মতো মামলা ছাড়াও তার করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে জনস্বার্থের বিরুদ্ধে যায় আইনের এমন বেশ কিছু ধারা অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণার মতো রায় এসেছে উচ্চ আদালত থেকে।
মামলার শুনানিতে তাকে সহযোগিতা করেন সংগঠনের প্যানেলভুক্ত কয়েকজন তরুণ আইনজীবী। জনস্বার্থের মামলা করতে যে খরচটুকু হয় তার পুরোটাই নিজেদের খরচে চালান বলে জানান মনজিল মোরসেদ। পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখায় ২০১৫ সালে সরকার তাকে পরিবেশ পদকে ভূষিত করে।
মনজিল মোরসেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেকেই বলেন, হাইকোর্টে হাজার হাজার রিট মামলা কেন হয়? মামলা কিন্তু হয় সরকারের বিরুদ্ধে। সরকার মানে প্রশাসন। সুশাসনটা দেয় সরকার। আইনের প্রয়োগও তারাই করে। প্রশাসন যদি অর্পিত দায়িত্ব ও যথাযথভাবে কাজ করে তাহলে কিন্তু সুশাসনের ঘাটতি হয় না। কিন্তু আমরা দেখতে পাই, দিন যত যাচ্ছে সুশাসনের ঘাটতিও প্রকট হচ্ছে। আইনের শাসন দুর্বল হচ্ছে। জবাবদিহিতাও ক্রমেই কমে আসছে। এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকলেও সেটি হচ্ছে না। ফলে আদালতই যেহেতু ভরসা মামলাও বাড়ছে।’ তিনি মনে করেন, যদি দায়িত্বরতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা যায়, তাহলে হয়তো অনিয়ম বা অব্যবস্থাপনাগুলো অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসতে বাধ্য।
আইনজীবীদের অনেকেই বলেন, পরিবেশ, জলবায়ু, মানবাধিকার নিয়ে আইনজীবীদের অনেকেই নিয়মিত কিংবা অনিয়মিতভাবে মামলা করেন। আদালতের রুল, আদেশ ও রায় হয়। কিন্তু সাময়িক সমাধানের পর অনেকেই আর পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে উদাসীন থাকেন। এ ক্ষেত্রে মনজিল মোরসেদ ব্যতিক্রম। তার প্রায় প্রতিটি মামলাতেই তিনি ‘কন্টিনেওয়াস ম্যান্ডামাস’ বা মামলার বিষয়বস্তুটি চলমান হিসেবে রাখতে আবেদনে উল্লেখ করেন। রায়ের পরেও দিনের পর দিন লেগে থাকেন।
এ বিষয়ে মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘যে সমস্যা নিয়ে কাজ করি তার বেশিরভাগই অতি জরুরি এবং পরিবেশ, পানি, নদী, বায়ু এগুলো তো চিরন্তন। দেখা গেছে কোনো মামলায় রায় এলো। আদালতের নির্দেশে প্রশাসন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিল। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই কয়েক মাস পরেই পরিস্থিতি আবার আগের পর্যায়ে চলে যায়। এতে আদালতের নির্দেশনাগুলোর অমর্যাদা হয়, তেমনি জনগণের কাক্সিক্ষত সুফল মেলে না। মামলাগুলো এমনভাবে তৈরি করি যাতে এটি চলমান থাকে এবং সময়ে সময়ে তা আদালতের নজরে এনে প্রতিকারের আরজি চাওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট বিবাদীরাও তটস্থ থাকেন যে, ব্যতিক্রম হলে আদালত অবমাননার মতো ঝামেলায় পড়তে হবে।’
পরিবেশকে দূষণ থেকে রক্ষায় পদক্ষেপগুলোকে ‘একধাপ ওপরে উঠে কয়েকধাপ নিচে নামা’র মতো মনে করেন মনজিল মোরসেদ। তিনি বলেন, ইটভাটা, শিল্পের দূষণ বা পানি দূষণ যাই বলেন, এটা একটা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। খুব কম ক্ষেত্রে আমরা প্রতিবেদন পাচ্ছি। কিন্তু এ নিয়ে মামলা করার কারণে একটা বিষয় হয়েছে যে, একসময় জনস্বার্থের ইস্যুতে থমকে দাঁড়ানোর যে পরিস্থিতি, সেটির উত্তরণ হয়েছে।
এ পরিস্থিতির আরও উন্নতির আশা ছিল উল্লেখ করে এই আইনজীবী বলেন, এটা হচ্ছে না প্রশাসনিক দুর্বলতায়। কেননা তাদের অনেকেই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না। রাজনৈতিকভাবে যারা প্রভাবশালী তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারেন না। প্রধানমন্ত্রী বারবার পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ে বলছেন, সতর্ক করছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, সরকারের নেওয়া বেশিরভাগ প্রকল্প নদী-পুকুর দখল করে করা হয়েছে।
পরিবেশ প্রশ্নে ভবিষ্যতে কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকারগুলোর যে ধারা এখন চলছে তাতে অবশ্যই বলা যায়, ভবিষ্যতে জনস্বার্থের মামলারও যেমন খুব প্রয়োজন হবে তেমনি সবকিছুতেই সুশাসনের ব্যত্যয় থাকবে। আদালতের প্রতি যে মনোভাব সেটি দিন দিন দুর্বল হচ্ছে। আদালতের যে কর্তৃত্ব অভিভাবকত্ব এটাও কিন্তু এখন আর মানতে দেখি না। যার ফলে অনেক রায়ই কিন্তু কেউ সেভাবে পাত্তা দেয় না। খুব কম রায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। রায় বাস্তবায়নে আদালতের যে শক্ত অবস্থান থাকার কথা সেটাও আমরা দেখি না। এ ক্ষেত্রে এখন শুধু আদালতের ওপর নির্ভর করলেই হচ্ছে না। সরকারের সদিচ্ছাও থাকতে হবে যে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা কেমন বাংলাদেশ চাই।’
উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতে কুড়িগ্রামে ধরলা-দুধকুমার, লালমনিরহাট ও রংপুরে তিস্তার পানি বেড়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে তিন জেলার নিম্নাঞ্চল ভেসে গিয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। কুড়িগ্রামেই বন্যাকবলিত ১৫ হাজার বাসিন্দা। তলিয়ে গেছে ফসলের ক্ষেত। জামালপুরে যমুনার পানি বাড়লেও বিপদসীমার নিচে রয়েছে।
আমাদের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, গতকাল শুক্রবার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুধকুমার নদের পানি ৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলার পানি ৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। এ ছাড়া শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও এখনো বিপদসীমার নিচে আছে।
জেলার নাগেশ^রী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নে দুধকুমার নদের বাঁধ উপচে প্রায় ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের সিতাইঝাড় এলাকার আইয়ুব আলী বলেন, হঠাৎ করে পানি বাড়ায় বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। তারা ভাবতেও পারেননি এক রাতেই এত পানি হবে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাঈদুল আরীফ জানান, চিলমারী, উলিপুর, সদর, নাগেশ্বরী, রাজারহাট ও ভূরুঙ্গামারীসহ বন্যায় কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, উজানের পাহাড়ি ঢল আর ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে প্লাবিত হয়ে পড়েছে তিস্তার দুই কূল। পানির চাপ নিয়ন্ত্রণে ডালিয়া ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল সকাল ৬টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুপুর ১২টায় পানি কিছুটা কমে ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বিকেল ৩টায় পানি কমে ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে জেলার পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
গবাদি পশু-পাখি নিয়ে বন্যার্তরা উঁচু স্থানে অবস্থান নিয়েছেন। নলকূপ, টয়লেটে পানি ওঠায় বিশুদ্ধ পানির সংকট ও স্যানিটেশন সমস্যায় পড়েছেন তারা। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। পানিতে তলিয়ে গেছে আমন ধানের ক্ষেত ও বীজতলা।
গোবর্ধন এলাকার আজিজার রহমান বলেন, ‘বাড়িতে বুকসমান পানি। সব ডুবে গেছে। রাতে রুটি খেয়ে আছি। সকাল থেকে পেটে কিছু পড়ে নাই।’
ওই এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ স্পার বাঁধে কথা হয় আলেমা বেগম নামের ষাটোর্ধ্ব এক নারীর সঙ্গে। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে বাড়িতে পানি ওঠা শুরু করে। মাঝরাতে বিছানাসমান পানি হয়।
রংপুর প্রতিনিধি জানান, তিস্তা, ধরলা, বুড়ি তিস্তা ও সানিয়াজান নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলাসহ জেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের অধিকাংশ গেট খুলে দেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছে। প্রচ- গতিতে পানি বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে। আরও কী পরিমাণ পানি আসবে তা ধারণা করা যাচ্ছে না। পানির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে তিস্তা ব্যারাজের অধিকাংশ গেট খুলে দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বিকেলে সরেজমিন দেখা যায়, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গঙ্গাচড়া উপজেলার মটুকপুর, চিলাখাল, বিনবিনা, চর নোহালী, ছালাপাক আলালের চর, ইশোরকোল, খলাইয়ের চর, কাশিয়াবাড়ীর চর, ইচলি, চল্লিশসাল চরে বসবাসকারী পরিবারগুলো ফের পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কয়েক হাজার একর আমন ধানের বীজতলাসহ অনেক ফসলি জমি তিস্তার পানিতে ডুবে গেছে। ইতিমধ্যে চর এলাকাগুলোর যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে গেছে।
চল্লিশসাল গ্রামের বাসিন্দা কান্দুরা মুন্সি বলেন, ‘চরে থাকা পরিবারগুলো গরু, ছাগল নিয়া নৌকাত করি উঁচু জায়গাত আসিবার লাগতেছে।’
বাগেরহাট এলাকার সাইয়েদুল ইসলাম বলেন, তাদের বাপ-দাদার ভিটামাটি সবকিছুই নদীর পাড়ে। সে জন্য প্রতি বছর বন্যার কবলে পড়তে হয়। বাঁধ দিয়ে নদী শাসন করার জন্য মিছিল-মিটিং হয়। কিন্তু হয় না। সরকার এটা করলে তাদের উপকার হয়।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, দুই দিন তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপরে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নদীর অববাহিকায় চরাঞ্চলের মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়ার জন্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
জনপ্রতিনিধিদের বরাত দিয়ে নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, তিস্তার পানি বাড়ায় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিস্তা অববাহিকার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ি ও জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের ১৭টি চরাঞ্চলের জনপদের বসতবাড়িতে প্রবেশ করেছে বন্যার পানি। বিভিন্ন সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ওই সব এলাকার বাসিন্দারা। এ ছাড়া ফসলি জমি উজানের ঢলে তলিয়ে গেছে। ফসলি জমি, গবাদিপশুসহ ঘরবাড়ি নিয়ে দুশ্চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে পানিবন্দি পরিবারগুলো। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিস্তাপাড়ের মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলেছে কর্তৃপক্ষ।
নীলফামারীর পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান জানান, তার এলাকার ঝাড়সিংহেশ^র ও পূর্ব ছাতনাই সড়কের খানাপাড়া এলাকায় বন্যার পানির তোড়ে সড়কের একটি অংশ বিধ্বস্ত হয়েছে। ফলে দুই এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
জামালপুর সংবাদদাতা জানান, জেলার দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলায় যমুনা নদীর পানি আবারও বেড়েছে।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বাড়লেও বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিমাপক আব্দুল মান্নান বলেন, তিন-চার দিন পানি বাড়বে। এখনো কোনো এলাকা প্লাবিত হয়নি। বড় ধরনের কোনো বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানান তিনি।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আইন মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি বলছে, আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে। সরকারের এমন নেতিবাচক সিদ্ধান্তের পর এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি দেয়নি দলটি। তবে এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে যোগ হতে পারে বলে জানা গেছে।
৫৩ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও দলীয় নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। বিদেশে নেওয়া ছাড়া তার উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে তার ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। এতে মতামত দিতে আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় আইন মন্ত্রণালয় এতে মতামত দেয়। এ বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেছেন, তার সাময়িক মুক্তির আদেশটা বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) কারাগারে নেওয়া হলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া বাসায় চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন না এমন দুটো শর্ত সাপেক্ষে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে দন্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। দরখাস্তটা নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে আটবার দন্ড স্থগিত করা হয়েছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো সুযোগ আইনে থাকে না। আমরা ৪০১ ধারার উপধারা ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ ব্যাখ্যা করে মতামত পাঠিয়েছি। আমাদের মতামত হলো, ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে, সেটা অতীত এবং মীমাংসিত। এটা আর খোলার কোনো উপায় নেই।’
এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) সাজা স্থগিত রেখে যে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সেটা বাতিল করে তারপর পুনরায় বিবেচনা করার সুযোগ থাকলে সেটা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই উপমহাদেশে ৪০১ ধারার ক্ষমতা যখন প্রয়োগ করে, তখন এটি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না বলে সিদ্ধান্তের নজির আছে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন যে আদেশটা আছে, সেটা যদি বাতিল করা হয়, বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) যদি আবার কারাগারে নেওয়া হয়, তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু এ অবস্থায় আদালতে যেতে পারবেন না।’ খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের বিষয়টি বাতিল করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা অমানবিক হবে, বাতিল করব না।’
আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এক বার্তায় বলেন, ‘আজকের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, দেশে আইনের শাসন নেই। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক ভয়ংকর তামাশা করা হচ্ছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, নির্বাহী বিভাগ চাইলেই কাউকে মুক্তি দিতে পারে।’
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় বিএনপি কী এখন ভাবছে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে।’
আর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর নীলনকশার অংশ। মানবতাবিরোধী ও সরকারের বর্বর ইচ্ছা পূরণের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।’
দলটির নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা না করে, রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করতে না পারলে বিএনপিপ্রধানের মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমেই এই ইস্যুর সুরাহা করতে চায় দলটি।
কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। কিন্তু দেশে চিকিৎসা গ্রহণের শর্তারোপ করা হলে তা যে চিকিৎসার বিবেচনায় না করে রাজনীতির বিবেচনায় করা হবে, সেটা বোঝার মতো বুদ্ধি সাধারণ মানুষের আছে।’
অসুস্থতার কারণে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের মার্চে করোনার সময় টানা দুই বছর কারাভোগের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরেছিলেন খালেদা জিয়া। পরে এ পর্যন্ত তার মুক্তির মেয়াদ আটবার বাড়িয়েছে সরকার।
এরই মধ্যে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ দিতে পরিবারের পক্ষে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এ বিষয়ে আইনি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি পাঠায়।
বিএনপিপ্রধানকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি সরকার ইতিবাচকভাবে দেখতে পারে’। কিন্তু সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘বিদেশে যাওয়ার আবেদন করতে হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত গিয়ে করতে হবে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের পর সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় এবারও ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না। গত শনিবার এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ শঙ্কাই প্রকাশ করেছিলেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা আছে, যেকোনো মূল্যে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকার মরিয়া। সে কারণে হয়তো খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি ঝুঁলিয়ে রাখতে চাইছে এমনটাই মনে করছে সরকারবিরোধীরা। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দিলেই সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলেও বিরোধী নেতাদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। তবে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথাই নেতাদের বলে রেখেছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির হাইকমান্ড মনে করছেন, এ অবস্থায় চলমান এক দফার আন্দোলনে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিষয়টি থাকলেও সেটাকে আরও জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে; যাতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নেয়।
জানা গেছে, এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে দলটি। আজ সোমবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক রয়েছে। সূত্র বলছে, জোটগত ছাড়াও দলীয়ভাবেও কর্মসূচি আসতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক চিকিৎসক জানান, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তার কেবিনে এক্স-রে মেশিন নেওয়া হয়েছিল গতকাল ভোরে। শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে না এলে সিসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ ছিল। দুপুরে তার ইসিজি ও ইকো ডায়াগ্রাম করানো হয়েছে। ফুসফুসের পানি অপসারণের জন্য তার ডান পাশে যে ক্যাথেটার লাগানো ছিল, সেটা আপাতত খুলে ফেলা হয়েছে।
লিভার জটিলতা ছাড়াও ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ফুসফুস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। গত ৯ আগস্ট ফিরোজায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দলীয় মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) সেটআপে কেবিনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে।
জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘ওনার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সে জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানো দরকার।’
হতাশায় শেষ খালেদার অপেক্ষা
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
সাড়ে ৩ বছরে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স
দেশের বিদেশি মুদ্রা আয়ের অন্যতম হাতিয়ার প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের ধস নেমেছে। সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশে অবস্থানকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধপথে ও ব্যাংকের মাধ্যমে মাত্র ১৩৪ কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। গত সাড়ে তিন বছরে এটি সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স। ৪১ মাস আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এর চেয়ে কম ১০৯ কোটি ডলার সমপরিমাণের রেমিট্যান্স এসেছিল। রেমিট্যান্স-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দামের ব্যবধান বেশি হলে হুন্ডিতে লেনদেন বেড়ে যায়। আর যখন হুন্ডির চাহিদা বাড়ে তখন রেমিট্যান্স কমে যায়। গত মাসে ব্যাংকের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দাম ৬ থেকে ৭ টাকা বেশি ছিল। তাই বেশি লাভের আশায় বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন প্রবাসীরা।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজার ছাড়াল
এ বছর অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে ডেঙ্গু। গতকাল রবিবার ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজারের কোটা ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) সারা দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬ জনে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৮৮২ জন।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
অকাজের ৩৭০০ কোটির সেতু
সেতু হয়। কিন্তু সড়ক হয় না। সেতু করার জন্য নানান প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু সেসব সেতু করেই দায়সারা বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়। ভোগান্তি সাধারণ মানুষের। আবার যতগুলো সেতু করার কথা ততগুলো না করেও প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করার প্রতিবেদনও দেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সারা দেশের গ্রামের রাস্তাগুলোতে সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পে। প্রকল্পের এসব অনিয়ম উঠে এসেছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবি আ.লীগ নেতার
আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার। গত শনিবার রাতে তার ফেসবুকে এ দাবি জানিয়ে স্ট্যাটাস দেন তিনি।
মুহূর্তেই স্ট্যাটাসটি ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিএনপির অসংখ্য নেতা, কর্মী-সমর্থক তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রশংসা করেন। অন্যদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নিন্দা জানিয়ে দলীয় সব পদ থেকে তার বহিষ্কারের দাবি জানান।
আবদুল মোতালেব হাওলাদার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘রাজনৈতিক কারণে আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়া হউক।’
স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন অধরাই
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
ফুটপাত থেকে মদের বার সবখানে চাঁদাবাজি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের কমিটি পার করেছে পাঁচ বছরের বেশি সময়। মেয়াদোত্তীর্ণ এ কমিটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। কিছু নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে। সর্বশেষ মদের বার ভাঙচুর ও লুট করে আবারও আলোচনায় এ কমিটির নেতাকর্মীরা।
নতুন কমিটি না হওয়ায় নেতারা বেপরোয়া আচরণের পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছেন বলে মনে করেন সাধারণ কর্মীরা। তারা বলেন, সংগঠনের কর্মকাণ্ডও স্থবির হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান তারা।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মো. রিপন মিয়াকে সভাপতি ও মাহমুদুল হক জুয়েল মোড়লকে সাধারণ সম্পাদক করে তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের জন্য আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে গত বছর ১২ জুন ৩২১ জনের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য।
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ অনুযায়ী, দেশে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ১১৯। এ তালিকায় রয়েছে যারা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, মাজার, ফুটপাত, সিঁড়ি, ওভারব্রিজের নিচে, লঞ্চ টার্মিনাল, ফেরিঘাট, মার্কেটের বারান্দায় দিন কাটান। আর বস্তিতে বসবাস করছে ১৮ লাখ ৪৮৬ জন। তারা মূলত শহর ও উপশহর এলাকায় টিনের ঘর, সেমিপাকা ঘর বা ঘিঞ্জি পাকা ঘরে বাস করে। তবে বস্তিবাসী কারা সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৬ সালে সরকার আবাসন নীতিমালা করেছে। আবাসন উন্নয়ন তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। আবাসন সংকট নিরসন করতে হলে সরকারকে আবাসন তহবিল করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বস্তিবাসী, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত কারা তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। না হলে বোঝা যাবে না কত মানুষ বস্তিতে থাকে।’
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে আবাসন সংকট কাটছে না। স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে আবাসন।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে ৯ লাখ গৃহহীন মানুষকে চিহ্নিত করে। ইতিমধ্যে আট লাখ মানুষের গৃহের ব্যবস্থা করেছে; প্রায় ৪০ লাখ মানুষের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বাকিদের জন্যও শেখ হাসিনা ব্যবস্থা করবেন। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যও আবাসনের ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা তার সৈনিক হিসেবে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
জানা যায়, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার সবার জন্য আবাসন। অঙ্গীকার পূরণে সরকার নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সারা দেশে ৩০টি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, নোয়াখালী, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, শরীয়তপুর, নড়াইল, খুলনা, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব প্রকল্পে ৬ হাজার ৪৩২টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২৭টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পে ৫ হাজার ৯৩০টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হবে। শেরপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, হবিগঞ্জ, সিলেট, ঝিনাইদহ, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে ১৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৩৫টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় রাজউক পূর্বাচল, ঝিলমিল, উত্তরা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় আবাসন প্রকল্পে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ফ্ল্যাটগুলো উচ্চমূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। পূর্বাচল, ঝিলমিল ও উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনেও বিভিন্ন সংস্থা আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন শহরে বসবাসরত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সম্পদশালী ব্যক্তিরা। যাদের অনেক ফ্ল্যাট আছে তারা আরও ফ্ল্যাট কিনছেন। কিন্তু বাস্তুহারা, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত সরকারি এসব আবাসনের সুবিধা পাচ্ছেন না। অল্প দামে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার আবাসন প্রকল্প তৈরি করে যাদের নামে বরাদ্দ দিচ্ছে তারা রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত।
জাতিসংঘ ১৯৮৫ সালে বিশ্ব বসতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশে^ অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার এ দিবসটি পালিত হয়।
বিশ্বজুড়ে বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউ এয়ারের তথ্য অনুযায়ী আজ সোমবার (০২ অক্টোবর) ঢাকার বাতাসের মান ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’। এদিন সকাল ১০টার দিকে ১২৯ স্কোর নিয়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে ঢাকা।
এসময় ১৮৩ স্কোর নিয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকার প্রথম স্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর। ১৬২ স্কোর নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা। ১৬০ স্কোর নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারতের দিল্লি। ১৫৬ স্কোর নিয়ে চতুর্থ ভারতের আরেক শহর করাচি। ১৫৩ স্কোর নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে ইতালির মিলানো।
এ ছাড়া একইসময়ে একিউআই স্কোর ১১৭ স্কোর নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে চীনের উহান। ১১৩ স্কোর নিয়ে অষ্টম স্থানে রয়েছে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর। ১১২ স্কোর নিয়ে নবম স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। ১০৯ স্কোর নিয়ে দশম স্থানে রয়েছে সৌদি আরবের রিয়াদ।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার দূষিত বাতাসের শহরের এ তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই স্কোর একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে কি না, তা জানায়।
একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। একইভাবে একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং স্কোর ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকলে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়।
অপেক্ষা আর মাত্র ৩ দিনের। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই।
শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে। কিং খানের ‘জাওয়ান’ কাঁপাচ্ছে পর্দা, কাটতি বাড়ছে বক্স অফিসে; বিশ্বকাপে আইসিসির পকেট ভরবে তো?
প্রস্তুতি বলছে, ভরবে। উইকেটে হবে রান উৎসব, লড়াই হবে ধুন্ধুমার। তাতেই ২০২৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপ হবে এক ব্লকবাস্টার মেগা হিট।
মাস তিনেক আগে, বিশ্বকাপের মূলপর্বের ম্যাচগুলো যে ১০ ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে সেই ভেন্যুগুলোর কিউরেটরদের সঙ্গে বসেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান কিউরেটর। সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপের একটাই মন্ত্র, রান চাই।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে, ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে ৩ ওয়ানডের সিরিজ খেলেছে সেই ম্যাচগুলো যদিও বিশ্বকাপের ভেন্যুতে হয়নি তবে সেই সব ম্যাচেও রানের বন্যা বয়েছে।
প্রথম দুটো ওয়ানডেতে বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাদের ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার করা ২৭৬ রান অনায়াসে তাড়া করে ৫ উইকেটে জিতেছে ভারত। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ঠেঙিয়ে তুলেছেন ৩৯৯ রান। তিন নম্বর ম্যাচে আবার অস্ট্রেলিয়া করেছে ৩৫২ রান, যা তাড়া করে ভারতও গিয়েছিল ২৮৬ অবধি।
উদ্বোধনী ম্যাচ হবে গুজরাতের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। এখানে সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় গত ১ ফেব্রুয়ারি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। ম্যাচে শুভমান গিল করেন সেঞ্চুরি, ভারত করে ৪ উইকেটে ২৩৪ রান আর জবাবে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ৬৬ রানে।
বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটের ধরন বুঝে ব্যাট করতে পারলে ৫০ ওভারে এখানে রানবন্যা হবে। বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। দুই দল এখানে মুখোমুখি হয়েছে বহুবার, পোশাকের রঙ কখনো রঙিন কিংবা কখনো সাদা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ কমেনি। এই মাঠে অস্ট্রেলিয়া ২৬৯ রান করে ভারতকে ২১ রানে হারিয়েছে সবশেষ ম্যাচে।
আইপিএল চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ঘরের মাঠে সবশেষ মৌসুমে ধোনির ‘ইয়েলো আর্মি’ ৮ ম্যাচ খেলে ২০০ রানের ওপরে করেছে দুইবার, একবার জিতেছে অন্যবার হেরেছে। তবে দুই ইনিংসেই ২০০’র বেশি রান হয়েছে দুটো ম্যাচেই। অর্থাৎ চাইলে চেন্নাইকেও ব্যাটিং স্বর্গে পরিণত করা সম্ভব।
বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হারার পর টানা তিন ওয়ানডে জিতে সিরিজ তো নিশ্চিত করেছেই, টানা তিন ম্যাচে ৩০০’র ওপর রান করেছে। চতুর্থ ওয়ানডেতে তো ৪০০ পার করেছে প্রোটিয়ারা। ব্যাটিং উইকেটে তারাও যে কোনো প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতে পারে। হেনরিক ক্লাসেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৮৩ বলে খেলেছেন ১৭৪ রানের ইনিংস। বিধ্বংসী রূপে ফিরছেন ডেভিড মিলারও।
প্রোটিয়ারা প্রথম ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, দিল্লির অরুন জেটলি স্টেডিয়ামে। সেখানে অবশ্য সবশেষ হয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক ম্যাচেও খেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে তারা অলআউট হয়েছিল মাত্র ৯৯ রানে। দিল্লির মাঠটা হয়তো খানিকটা স্পিনারদের দিকেই ঝুঁকবে, তবে অন্য মাঠগুলোতে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের রান উৎসবে মেতে উঠতে দেখার সম্ভাবনা জোরালো। তাই অনেক সাবেক ক্রিকেটারই প্রোটিয়াদের দেখছেন শেষ চারে।
বিশ্বকাপের আগে ক্লাসেন ছাড়াও ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস খেলেছেন ১৮২ রানের ইনিংস, দারুণ ছন্দে ইংল্যান্ডের ডাভিড মালানও। তবে সেরা ছন্দে নিঃসন্দেহে শুভমান গিল। সবশেষ ৫ ইনিংসে দুটো শতরান আর একটা হাফসেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেলও আছেন দারুণ ছন্দে। দুটো হাফসেঞ্চুরি আর একটা সেঞ্চুরি সবশেষ ৫ ইনিংসে। হায়দ্রাবাদে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের ৩৪৫ রান কিউইরা তাড়া করেছে ৩৮ বল হাতে রেখে।
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করেন, এই বারের বিশ্বকাপে রানবন্যায় বোলারদের জন্য কাজটা হবে কঠিন। দেশ রূপান্তরকে আশরাফুল বলেন, ‘আমাদের পেসাররা গত এক দেড় বছর ধরে খুবই ভালো করছে। তবে যেহেতু ভারতের মাটিতে খেলা, আমরা দেখেছি যে সাড়ে ৩০০’র বেশি রান হচ্ছে প্রতিটা ম্যাচে। কেউ যদি ভালো না করে, তাকে মনে রাখতে হবে যে টুর্নামেন্টে পরের ম্যাচে ফিরে আসতে হবে। একজনের দিন খারাপ যেতেই পারে, কোনো ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান উঠেই যেতে পারে। ৯টা ম্যাচের ভেতর ৪-৫টা ম্যাচে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ রান হতে পারে। তাই বোলারদের ফিরে আসার মানসিকতা থাকতে হবে।’
বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমও বলেছেন যে দেড় মাসের আসরে প্রস্তুত থাকতে হবে যে কোনো কিছুর জন্যই, ‘দেড় মাসের আসর, ৯টা ম্যাচ এই সময়ে খেলতে হবে বা তারও বেশি। অনেক উত্থান-পতন হবে। যে কোনো কিছুর জন্যই তৈরি থাকতে হবে।’
রান উৎসবের বিশ্বকাপ যে হতে যাচ্ছে, তার সব রসদই মজুদ। মাঠগুলোকে করা হয়েছে ব্যাটিং স্বর্গ, বিশ্বকাপে আসার আগে সেরা সেরা ব্যাটসম্যানরাও আছেন ছন্দে। শুধু প্রশ্ন এটাই, রান উৎসবের এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে রান করবেন কে? সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাটিংয়ের ছবিটা যে মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।