১৫ মে ফিলিস্তিনের ইতিহাসে একটি শোকাবহ দিন। দিবসটি আল-নাকবা বা মহা বিপর্যয়ের দিন হিসেবে পালন করে থাকে ফিলিস্তিনিরা। ১৯৪৮ সালের এই দিন থেকেই ফিলিস্তিনিরা তাদের বাড়িঘর হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়তে শুরু করে। এর আগে ১৪ মে নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে ইসরায়েল।
তখন সেখানে ‘ম্যান্ডেট প্যালেস্টাইন’ নামে এক বিশেষ ব্যবস্থা চালু ছিল। এলাকাটি ছিল ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণে। ইসরায়েলি বাহিনী বেশিরভাগ আরবকে তাদের এলাকা থেকে বহিষ্কার করে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা করে। ইহুদিবাদী আধাসামরিক বাহিনী এবং ইসরায়েলের সেনাবাহিনী এদিন নিজ ভূমি থেকে সাড়ে সাত লাখের বেশি ফিলিস্তিনির শিকড় উপড়ে ফেলে। হত্যা করা হয় অনেককে।
ইসরায়েল তৈরির জন্য ৫৩০ গ্রাম এবং শহরকে পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়। এ সময় অনেক আরব পালিয়ে যান। ১৯৪৮-১৯৪৯ এই দুই বছর আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে প্রচুর ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে। ১৯৬৭ সালের জুন মাসে আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে আবারও যুদ্ধ হয়। তখন জর্দান নদীর পশ্চিম তীর ও গাজা ভূখণ্ড থেকে আরো হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ে।
বর্তমানে প্রায় ৫০ লাখ ফিলিস্তিনি জাতিসংঘে শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত। তাদের বেশিরভাগই বাস করে জর্ডান, গাজা ভূখণ্ড পশ্চিম তীর, সিরিয়া, লেবানন এবং পূর্ব জেরুজালেমে। তাদের এক তৃতীয়াংশ বসবাস করে শরণার্থী শিবিরগুলোতে।
নাকবার পর থেকে গত ৭৬ বছর ধরে ফিলিস্তিনিদের জীবন নিয়ন্ত্রণ করে আসছে ইসরায়েলিরা। ফিলিস্তিনিরা কোন পরিষেবা ব্যবহার করতে পারবে, কোথায় ভ্রমণ করতে পারবে, কী পরিমাণ সম্পদ রাখতে পারবে এবং কোথায় বাড়ি তৈরি করতে পারবে, তা সবই নিয়ন্ত্রণ করে আসছে ইসরায়েল।
প্রতিবছরই ফিলিস্তিনিরা নাকবা দিবসে প্রতিবাদ বিক্ষোভের আয়োজন করে। দিবসটি উপলক্ষে ইসরায়েলি সীমান্তের কাছে জড়ো হয় তারা। এ নিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
ফিলিস্তিনিদের প্রধান দাবি তাদের ভূমিতে ফিরে যাওয়ার অধিকার। এই দাবির ভিত্তি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ১৯৪৮ সালে গৃহীত এক প্রস্তাব। সেখানে বলা হয়েছে, যেসব শরণার্থী তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে চাইবে এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করবে তাদের সেখানে যাওয়ার অনুমতি দিতে হবে।
তবে ইসরায়েলের বক্তব্য ৫০ লাখ শরণার্থীকে ফিরিয়ে নেওয়া অসম্ভব। কারণ সেরকম কিছু হলে তারাই ৮৫ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে পড়বে এবং ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের সমাপ্তি ঘটবে।