পৃথিবীতে প্রাকৃতিক নিয়মেই ঝড়-বৃষ্টি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে। মহান রাব্বুল আলামিনই সব কিছুর নিয়ন্তা। তার নির্দেশেই সব কিছু হয়ে থাকে। আর প্রকৃতিও আল্লাহর দান। মানুষ বসবাসের উপযোগী করেই প্রকৃতিকে সাজানো হয়েছে। প্রকৃতি মহান আল্লাহ কর্র্তৃক সৃষ্ট এবং আল্লাহ কর্র্তৃক পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত। মাঝেমধ্যে প্রকৃতি বিরূপ রূপ ধারণ করে, প্রকৃতি রূঢ় ও রুষ্ট হয়। যাকে আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে থাকি। যেমন ঘূর্ণিঝড়, কালবৈশাখী, শিলাবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস, ভারী বর্ষণ, বন্যা, খরা, দাবানল, শৈত্যপ্রবাহ, দুর্ভিক্ষ, মহামারী, ভূমিকম্প, সুনামি প্রভৃতি।
ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে মহান আল্লাহ মানুষকে সতর্ক করতে পবিত্র কোরআনে একাধিক আয়াত নাজিল করেন। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, তা পরিমিত ও সুবিন্যস্তভাবে সৃষ্টি করে ভারসাম্য রক্ষা করেছেন। আল্লাহতায়ালা সুরা নাবা’য় বলেছেন, তিনি জমিনকে বিছানা এবং পর্বতরাজিকে পেরেকস্বরূপ সৃষ্টি করেছেন। যাতে জমিন এদিক সেদিক সরে গিয়ে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে।
আকাশে অসংখ্য নক্ষত্র নিজ নিজ কক্ষে ঘুরছে। মহান আল্লাহ সেখানেও ভারসাম্য স্থাপন করেছেন। যাতে সেসবের মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি না হয়। আকাশে সূর্য এবং ভূমণ্ডলে বরফের পাহাড় সৃষ্টি করে আল্লাহ ঠান্ডা ও গরমের মধ্যে ভারসাম্য স্থাপন করেছেন। বায়ুমণ্ডলও সুশৃঙ্খলভাবে সৃষ্টি করেছেন। যাতে কোনো বিঘ্ন না ঘটে।
মহান আল্লাহ বিভিন্ন সময়ে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি দিয়ে আমাদের পরীক্ষা করে থাকেন এবং দেখেন আমরা তার কতটুকু অনুগত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য, কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।’ (সুরা মুলক ২)
যেকোনো ঘূর্ণিঝড় আমাদের জন্য বড় পরীক্ষা। ঘূর্ণিঝড়ের সময় প্রয়োজনীয় সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি আমাদের আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। আশা রাখতে হবে, মহান আল্লাহ আমাদের সব রকমের বিপদাপদ থেকে রক্ষা করবেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘জলে ও স্থলে বিপর্যয় মানুষের কৃতকর্মের ফল।’ (সুরা রুম ৪১) অর্থাৎ আল্লাহর ঘোষণা অনুযায়ী এরূপ পরীক্ষা ও বিপদাপদ আসে মানুষের গুনাহের কারণে। তাই যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে হতাশ না হয়ে নিজের গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে তওবা করা এবং বেশি বেশি তাকে স্মরণ করা।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিপর্যয় ও প্রতিকূল অবস্থায় রাসুল (সা.) খুব বিচলিত হয়ে পড়তেন এবং আল্লাহর শাস্তির ভয় করতেন। এ সময় তিনি তওবা-ইসতেগফার ও নামাজে মশগুল হতেন এবং তার সাহাবাদেরও বেশি বেশি তা করার নির্দেশ দিতেন। তাই যেকোনো ধরনের ঘূর্ণিঝড় বা প্রকৃতিক দুর্যোগের সময়ও আমাদের এ আমলগুলোর প্রতি যত্নবান হতে হবে। বিশেষ করে অতীতের সব গুনাহ ও ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে রাসুল (সা.)-এর শেখানো দোয়া পড়তে হবে।
প্রবল বাতাস প্রবাহিত হলে দোয়া : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা, ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা।’ অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কল্যাণ কামনা করি এবং আপনার কাছে এর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই। (আবু দাউদ)
মেঘের গর্জনের সময় দোয়া : ‘ওয়া ইউসাব্বিহুর রা’দু বিহামদিহি ওয়াল মালাইকাতু মিন খিফাতিহি।’ (সুরা রাদ ১৩) অর্থ : বজ্র ও সব ফেরেশতা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে তার প্রশংসা পাঠ করে। হজরত আবদুল্লাহ ইবন যুবায়ের (রা.) যখন মেঘের গর্জন শুনতেন, তখন কথা বলা বন্ধ করে দিতেন এবং পবিত্র কোরআনের ওপরের আয়াতটি তেলাওয়াত করতেন। (মুয়াত্তা)
ঝড়ের সময় দোয়া : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন খাইরি হাজিহির রিহি ওয়া খাইরা মা ফিহা ওয়া খাইরা মা উরসিলাত বিহি, ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহা, ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উরসিলাত বিহি।’ অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি এর কল্যাণ, এর মধ্যকার কল্যাণ এবং যা এর সঙ্গে প্রেরিত হয়েছে তার কল্যাণ। আর আমি আপনার আশ্রয় চাই এর অনিষ্ট থেকে, এর ভেতরে নিহিত অনিষ্ট থেকে এবং যা এর সঙ্গে প্রেরিত হয়েছে তার অনিষ্ট থেকে। (সহিহ বুখারি)
ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসার কারণ : এক. যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন মহামারী আকারে নতুন নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব হয়, যা আগের লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। দুই. যখন কোনো জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের ওপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ ও কঠিন বিপদ। তিন. যখন কোনো জাতি জাকাত আদায় করে না, তখন আসমান থেকে বৃষ্টিবর্ষণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদি জমিনে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকত তবে আর কখনো বৃষ্টিপাত হতো না। উল্লিখিত পবিত্র কোরআনের আয়াত ও হাদিসের আলোচনা প্রমাণ করে যে, মানুষের গুনাহের কারণেই দুনিয়াতে বিভিন্ন রকম বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। এ বিপর্যয় কখনো সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস, জমিনে ঝড়-তুফান এবং বিভিন্ন মহামারী ও রোগ-ব্যাধি তৈরি করে দেয়।
পৃথিবীর সব ধরনের বিপদাপদ থেকে কেবলমাত্র আল্লাহতায়ালাই পারেন বিশ্ব মানবতাকে রক্ষা করতে। এজন্য বিশ্ব মানবতার উচিত মহান আল্লাহর প্রকৃত বান্দায় পরিণত হওয়া। সৃষ্টিকর্তার আদেশ-নিষেধ মেনে জীবন পরিচালনা করা। তাহলে আশা করা যায় মহান আল্লাহ আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করবেন।