তিনি একজন স্থপতি এবং কণ্ঠশিল্পী। ঠিক সময়মতোই অফিসে এলেন। পড়ন্ত বেলা হলেও, সূর্য ডোবেনি। একটু বিশ্রাম নিয়ে, ছবি তুলতে গেলেন। অন্যদিকে সবাই ব্যস্ত স্টুডিওতে। একটু পরই বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী এলেন। শুরু হলো আড্ডা। ছিলেন সহকারী সম্পাদক তাপস রায়হান, আলোকচিত্র সম্পাদক সাহাদাত পারভেজ, সিনিয়র সহ-সম্পাদক সালাহ উদ্দিন শুভ্র এবং সহ-সম্পাদক এনাম-উজ-জামান বিপুল। ক্যামেরার বাইরে ছিলেন নুরুস সাফা।
সচরাচর যেমনটি বেশভূষা তার। সেদিনও ঠিক তাই। কী যে অসাধারণ গায়কী! হাসতে হাসতে বললেন বসব কোথায়, মাঝখানে? চারদিকে সবাই, উত্তর ঠিকমতো হবে তো! একপলকে সবাইকে দেখে নিলেন। ভাবলেন কিছুক্ষণ। এরপর এলোমেলো কথা বলা। যে যার মতো বলছেন, তিনি অবলীলায় প্রাঞ্জল ভাষায় উত্তর দিচ্ছেন। আবার হাসছেন। এমন সময় ক্যামেরার পেছন থেকে ভেসে এলো কণ্ঠস্বর। সবাই নিজেকে প্রস্তুত করে নিলেন। নুরুস সাফা বললেন রোলিং, ৩ ২ ১ ০ অ্যাকশন। শুরু হলো গুছিয়ে কথা বলা।
তাপস রায়হান : আপনি একজন স্থপতি। ওস্তাদ মিথুন দের কাছে গান শিখতেন। সরকারি চাকরি করতেন। সেটা ছেড়ে দিয়ে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালকের দায়িত্ব নিলেন। এখনো সেখানে। কেন?
লুভা নাহিদ চৌধুরী : সাহিত্য পত্রিকা বা নানারকম সংগীতের আয়োজন, এটা কিন্তু দূরবর্তী নয়। আমার পড়াশোনা তো শিল্প নিয়েই। আর্কিটেকচার পড়ার মজাই হচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে একটি কৌতূহল তৈরি হয়। স্থাপত্যকলায় যখন আমরা পড়ি, তখন কিন্তু শেখানো হয় ডিজাইন, ভারসাম্য সম্বন্ধে, কোনটা কতটুকু যাবে কী যাবে না, কতটা বাড়ানো যায়, সংকোচন করা যায় এটা কিন্তু ব্রড সেন্সে বলছি। পাঠ হিসেবে এটাই মূল স্কেল কেমন হবে, কম্পোজিশন কেমন হবে? ওজন কেমেন হবে? এই শিক্ষাটা কিন্তু আপনি সব জায়গায় ইমপ্লিমেন্ট করতে পারবেন। সব তো কলাবিদ্যারই অংশ।
সালাহ উদ্দিন শুভ্র : স্থাপত্যে আপনার কোনো কাজ আছে?
লুভা নাহিদ চৌধুরী : আছে তো। তবে তেমন বেশি না। সাভারে একটা বাংলো আছে, গাজীপুরে আছে, আমাদের আগের যে অফিস ছিল ওটা করেছি। এ রকম টুকটাক। বড় তেমন কিছু করিনি। কিন্তু এই বলয়ের মধ্যে থাকি বলে কখনো মনে হয়নি, স্থাপত্য থেকে খুব একটা দূরে আছি।
তাপস রায়হান : আপনি তো পাকিস্তান থেকে চলে এলেন ১৯৭৩ সালে? বাবার চাকরির কারণে সেখানে ছিলেন। এরপরই কি বুয়েটে?
লুভা নাহিদ চৌধুরী : আগের প্রশ্নের উত্তরে আসি। আসলে গানের খাতায় প্রথম এন্ট্রি হয়, ১৯৭৫ সালে। মিথুন কাকুর (মিথুন দে) কাছে গান শেখা। যে ভবনে আমরা থাকতাম, সংসদ ভবনের পাশে আভা আলম (সাবেরী আলমের মা) নামে একজন উচ্চাঙ্গ সংগীত শিল্পী ছিলেন। সেই আভা চাচি ছিলেন, আমাদের প্রতিবেশী। তার শিক্ষকই ছিলেন মিথুন কাকু। যে কারণে তার কাছে আমার গান শেখা।
এনাম-উজ-জামান বিপুল : মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনার বয়স কত?
লুভা নাহিদ চৌধুরী : আমার জন্ম ১৯৬২ সালে। কত হয়?
এনাম-উজ-জামান বিপুল : সেই সময়ের কিছু মনে আছে?
লুভা নাহিদ চৌধুরী : বাবা আনিস চৌধুরী কাজ করতেন রেডিও পাকিস্তানে। তিনি গোড়া থেকেই ছিলেন। সংবাদ বিভাগে কাজ করতেন। কাজ শুরু হয়েছিল করাচিতে। ৭০ সালে বঙ্গবন্ধু নির্বাচনের আগে যে নানান জায়গায় গেলেন, তখন কিন্তু বাবার সঙ্গে সঙ্গে আমিও দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছি। খুব একটা কিছু মনে নেই। তবে বরিশালের কথা মনে আছে। ২৫ মার্চ পর্যন্ত কিন্তু আমরা ঢাকাতেই ছিলাম। সেই রাতে ট্যাঙ্ক, গোলাগুলির কথা মনে আছে। তখন আমার বাবা করাচি থেকে চলে আসতে চাইলেন। কিন্তু তাকে আসতে দেওয়া হলো না। এরপর আমরা মনে হয়, সম্ভবত এপিল বা মে মাসের দিকে করাচি চলে যাই।
এনাম-উজ-জামান বিপুল : তখন বাঙালি সেনাবাহিনীর অফিসাররা যেমন অবরুদ্ধ ছিলেন, আপনাদের অবস্থাও কি তেমন ছিল?
লুভা নাহিদ চৌধুরী : ঠিক অবরুদ্ধ ছিলাম না। তবে একটা নজরদারিতে ছিলাম। আমরা ‘গার্ডেন রোড’ নামের একটা অফিসার্স হোস্টেল ছিল, সেখানেই থাকতাম। অধিকাংশ বাঙালি সরকারি চাকুরে থাকতেন। বিশেষ করে যারা নানান ধরনের প্রশিক্ষণের জন্য করাচি যেতেন, তারাই সেখানে থাকতেন। সবকিছু মনে না থাকলেও, মোটামুটি মনে আছে। বাঙালিদের একটা কমিউনিটি সেখানে ছিল। সেখানে বাংলায় বিভিন্ন ধাঁচের গানের চর্চা হতো। এরপর আমরা ১৯৭৩ সালে চলে এলাম দেশে। আসলে বাবার তো ছিল বদলির চাকরি। আমার মা-ও তো চাকরি করতেন। এরপর ভর্তি হলাম, ক্যান্ট মডার্ন স্কুলে। এখন যেটা হয়েছে শহীদ আনোয়ার বালিকা বিদ্যালয়। আর কলেজ ছিল হলি ক্রস। এরপর ভর্তি হলাম বুয়েটে।
সাহাদাত পারভেজ : আপনারা যখন ১৯৭৩ সালে দেশে এলেন, সেটা তো ছিল একটা শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি।
লুভা নাহিদ চৌধুরী : একদম। যখন একাত্তর সালে করাচি গেলাম, তখনই বুঝতে পারলাম পরিস্থিতি পুরো পাল্টে গেছে। আপনারা হয়তো জানেন, সরকারি চাকরিজীবীদের একটা অপশন দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল তোমরা কি বাংলাদেশে ফিরে যাবে, নাকি পাকিস্তানেই থাকবে? তখন অনেকেই বলেছিলেন- বাংলাদেশে ফিরে যাবে। আমরা ’৭২ সালেই ফিরে আসার চেষ্টা করি। কিন্তু পারিনি। আসলে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসার গল্প তো অনেক বড়। যাই হোক।
সালাহ উদ্দিন শুভ্র : আপনারা কি ভারত হয়ে এলেন?
লুভা নাহিদ চৌধুরী : না না, আমরা এসেছি আফগানিস্তান হয়ে।
সাহাদাত পারভেজ : কীভাবে পালিয়ে এলেন আপনারা?
লুভা নাহিদ চৌধুরী : সেটা একটা লম্বা কাহিনি। নানাভাবে অনেকেই পালিয়ে এসেছেন। কেউ কেউ ট্রাকে করে ইসলামাবাদ, পিন্ডি থেকে এসেছে। আসলে কিছু মানুষ তো ছিল, যারা আমাদের সমস্যাটা বুঝত। তারাই বর্ডার পারাপার করত। বিনিময়ে তারা টাকা নিত, বলতে গেলে দালালের কাজ করত। আসলে তখন তো বর্ডার এলাকায় কোনো পক্ষেরই তেমন কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। তবু একটা গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে আসতে হয়েছে। তখন তো আমরা ছিলাম স্টেটলেস। কারণ সঙ্গে কিছুই নিয়ে আসা যেত না।
তাপস রায়হান : পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে এসে আপনার কোনো মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন হয়েছে?
লুভা নাহিদ চৌধুরী : হাহাহাহা। না, না। একদম না। সে যে কী আনন্দ দেশে আসার, সেটা বলে বোঝানো যাবে না। আবার তো সেই সংসদ ভবনের পাশেই থাকতাম। তখনো কিন্তু লেকটা হয়নি। এসএসসি দিলাম ’৭৭ সালে। আর ইন্টারমিডিয়েট ’৭৯ সালে। এরপর তো বুয়েটে। সেটা দীর্ঘ কাহিনি। বের হলাম ’৮৬ সালে। যদিও উচিত ছিল ’৮৪ সালে বের হওয়া।
সাহাদাত পারভেজ : আপনি বুয়েটেই পড়বেন, এটা ভেবেছিলেন?
লুভা নাহিদ চৌধুরী : তখন এত ভাবতে হতো না। কিন্তু আমার পরিবারে স্থপতি ছিলেন। ফলে কিছুটা দেখা, জানার সুযোগ হয়েছে। আমার চাচারা ছিলেন স্থপতি। তাদের তো কাছ থেকে দেখেছি। ফলে কিছুটা তো জানাশোনা ছিলই।
সাহাদাত পারভেজ : বুয়েট থেকে বের হয়ে আপনি তো সরকারি চাকরি করলেন। সেই চাকরি ছেড়ে দিলেন। এটা কেউ করে? হাহাহাহা।
লুভা নাহিদ চৌধুরী : আসলে বাবার খুব ইচ্ছে ছিল আমি সরকারি চাকরি করি। যে কারণে পূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্থাপত্য অধিদপ্তরে জয়েন করি। সেটা ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত করেছি।
সাহাদাত পারভেজ : এরপরই তো আপনি চলে এলেন, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনে। সরকারি চাকরি কি ভালো লাগছিল না?
লুভা নাহিদ চৌধুরী : অনেকটা কারণ ছিল, পরিস্থিতি। সেই সময়টা ছিল আলাদা। তবে সেখানে অনেক কিছু শিখেছি। সেই সময়ই কিন্তু সরকারি কাজে বাংলার ব্যবহারটা শুরু হয়। সেই কাজের তো একটা নিয়ম আছে। আসলে কিছুটা দক্ষতা সেখানেই তৈরি হয়েছে। যাদের সঙ্গে কাজ করেছি অনেক কিছু সেখানে শিখেছি। মানুষ হিসেবে তারা খুব ভালো, উদার ছিলেন। আর বাংলাদেশ ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছে। প্রায় ৯-১০ বছর চাকরি করার পর সেটা ছেড়ে দিই। তখন বাস্তবতার কারণেই চাকরিটা ছেড়ে দিই। মনে হয়েছিল, সেটা আমার জন্য একটু কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আর ব্যক্তিগত জীবনেও কিছুটা পরিবর্তন আসে। মনে হচ্ছিল, আর্থিক দিক দিয়েও একটু সমস্যা হচ্ছে। তখন এত সুযোগ-সুবিধা ছিল না। অনেকটা সেই কারণেই।
তাপস রায়হান : শাস্ত্রীয় সংগীত বা পঞ্চকবির গানের প্রতি আমাদের একটা অনাগ্রহ রয়েছে। বিশেষ করে, এই প্রজন্মের অনেকেই জানে না এই পাঁচজনের গান কি? তারা কোন ঘরানার গান গাইতেন? শুধু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর কাজী নজরুল ইসলামের গান জানি। আবার কেউ ডিএল রায়ের গানও জানেন। কিন্তু বাকি ২ জনের গান একেবারেই অনেকে জানি না। আপনিই তাদের পথটা মসৃণ রেখেছেন। এই যে না জানা, সেই দায় কার?
লুভা নাহিদ চৌধুরী : এদের সঙ্গে কিন্তু পূর্ব বাংলারও একটা যোগ ছিল। অতুল প্রসাদ সেনের জন্ম এই ঢাকাতেই। বাড়ি ফরিদপুর। তারপর ডিএল রায়, রজনীকান্ত সেন এরা পাবনায় ওকালতি করেছেন। ডিএল রায় তো দীর্ঘদিন দিনাজপুরেও ছিলেন। পূর্ব বাংলা তাদের অপরিচিত ছিল না।
তাপস রায়হান : উচ্চাঙ্গ সংগীত নিয়ে আমাদের একটা অনীহা আছে?
লুভা নাহিদ চৌধুরী : এটা নিয়ে একটু ভাববারও আছে। আসলে এটা কখনই সবার জন্য তেমন ছিল না। এটা তো সত্যি। একটা শ্রেণির পৃষ্ঠপোষকতায়, চর্চায় এটা ছিল। এটা সর্বজনীন ছিল এটা কিন্তু বলতে পারি না। আসলে অনীহা না, মানুষকে দিতে হবে? আমরা সবার কাছে ঠিকমতো উপস্থাপন করতে পারছি কি না, সেটাই বিষয়। এটা কিন্তু স্বীকার করতে হবে, আমাদের ছেলেমেয়েরা চট করেই একটা জিনিস আয়ত্ত করতে পারে। এখন কিন্তু এটা কোনো শ্রেণির মধ্যে আবদ্ধ রাখলে চলবে না। সবার জন্য দিতে হবে। আপনি তো জানেন না, কে নিতে পারবে? কোনো জিনিস দিলেই তো গ্রহণের বিষয়টা আসে। নাকি?
সাহাদাত পারভেজ : আপনারা যে শিশুদের জন্য উচ্চাঙ্গ সংগীতের একটা কোর্স চালু করেছিলেন, সেটা এখনো আছে?
লুভা নাহিদ চৌধুরী : আছে তো। বেঙ্গলে এখনো চলছে। বর্তমানে ৯০ জনের মতো ছেলেমেয়ে আছে।
সাহাদাত পারভেজ : আমরা আপনাকে একজন ‘শিল্পী’ হিসেবে জানি। পঞ্চকবির গানে তো আপনি ধ্যানস্থ থাকেন। এত ব্যস্ততার পরও, সময় পাচ্ছেন কীভাবে?
লুভা নাহিদ চৌধুরী : এটা ছাড়া বাঁচাও মুশকিল। এখন যদি বলেন, এত দূষণের মধ্যে শ্বাস নিচ্ছেন কীভাবে! তাহলে? হাহাহাহাহাহা।
সাহাদাত পারভেজ : বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন কাজ নিয়ে আপনাকে ভাবতে হয়। সংগীতের কাজটা কখন করেন?
লুভা নাহিদ চৌধুরী : একদম ভোরবেলা। (মাথা দুলিয়ে বললেন) যখন আপনারা কেউ ফোন করবেন না, তখন। হাহাহাহাহাহাহা।
(সাহাদাত পারভেজ হাসতে হাসতে বললেন- আচ্ছা, তার মানে আপনি এটা করেন ভোরবেলাতে। তাই তো বলি!)
এটা আসলে অনেকটা খেলাধুলার মতোন। নিয়মিত চর্চা করতে হয়। চর্চা না করলে তো আপনি কিছুই করতে পারবেন না।
সালাহ উদ্দিন শুভ্র : বেঙ্গল ফাউন্ডেশনে যুক্ত হওয়ার বিষয়টা যদি আবার বলেন?
লুভা নাহিদ চৌধুরী : বেঙ্গলের একটা স্থাপত্য উপদেশক সংস্থা ছিল। এখনো আছে। আমি সেখানেই এসেছিলাম, এখনো আছি। ১৯৯৯ সালে একদিন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবুল খায়ের সাহেব বললেন- আপনি তো আর্কিটেক্ট। আমি একটা আর্ট ক্যাম্প করব। তখন আমি বনানীতে বসি। আর্ট ক্যাম্প সম্পর্কে তখন কিছুই জানতাম না। ভাবলাম, যদি নতুন কিছু জানা যায় সমস্যা কী? দেখি, জিনিসটা কী? ৯৯ সালেই দুই বাংলার ৫২ জন শিল্পী তার বাসায় এলেন। ছবি আঁকলেন। বিষয়টা বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হলো। এরপর খায়ের সাহেব বললেন- আমি একটা আর্ট গ্যালারি করতে চাই। ধানম-ি ২৭ নম্বরের বাড়িটা তো আগেই ছিল। এরপর বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে নকশার দিকটা ঠিকঠাক করলাম। তিনি তখন বললেন- বাড়ির কোনো পরিবর্তন করা যাবে না। তারপর সেটাকে রেখেই সব ডিজাইন করা হলো। ২০০০ সালে সেটার উদ্বোধন হলো। এর মানে বেঙ্গলে আমার প্রবেশ কিন্তু স্থপতি হিসেবেই। হাহাহাহাহাহাহা।
তাপস রায়হান : বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মূল কাজ সম্পর্কে যদি একটু বলেন?
লুভা নাহিদ চৌধুরী : এটা শিল্প-সাহিত্যের পরিচর্যা কেন্দ্র। মূলত সংগীত নিয়ে কাজ করা। দৃশ্যকলা সম্পর্কে বিভিন্ন কাজ হয়। কারুশিল্প নিয়ে কাজ হয়। প্রকাশনা শিল্প রয়েছে।
এনাম-উজ-জামান বিপুল : ‘কালি ও কলম’ এখনো বের হচ্ছে?
লুভা নাহিদ চৌধুরী : হ্যাঁ, বের হচ্ছে তো। হাসনাত ভাইয়ের পর সুব্রত বড়ুয়া দেখছেন।
সাহাদাত পারভেজ : বেঙ্গলের তো সুন্দর সুন্দর কিছু পত্রিকা ছিল। এটা ছাড়াও ‘চারবেলা চারদিক’, ‘আইস টুডে’ ...
লুভা নাহিদ চৌধুরী : আইস টুডে এখনো আছে।
সাহাদাত পারভেজ : বন্ধ হওয়া পত্রিকা কি আবার প্রকাশের কোনো চিন্তা আছে?
লুভা নাহিদ চৌধুরী : ঠিক সেইরকম নেই। এখানে আর্থিক একটা ব্যাপার আছে। এসব তো নিজে চলতে পারে না। বাজার কাটতি জিনিস তো এগুলো নয়। তবে পাবলিকেশনের সঙ্গে আমি আছি।
তাপস রায়হান : এর মানে আপনার ওপর বাবা আনিস চৌধুরীর প্রভাব ভীষণ...
লুভা নাহিদ চৌধুরী : (মাথা নাড়িয়ে) বাবার যদি ছিটেফোঁটাও পেয়ে থাকি, তাতেই অনেক। মনে হয় কিছুটা প্রভাব আছে। যদিও বাবার মতো আমি খুব একটা সাহিত্যচর্চা করি না। তারপরও এই বলয়ের মধ্যে থাকতে ভালো লাগে।
সালাহ উদ্দিন শুভ্র : আপনার মা সম্পর্কে যদি বলতেন?
লুভা নাহিদ চৌধুরী : আমার মা রাজিয়া চৌধুরী শিলচরের। ওটা হচ্ছে, সিলেট থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে আসামে ওপারে। তারা চলে এসেছিলেন ঢাকায়। যারা চলে আসে, তাদের মাথাটা থাকে ওখানে। হাহাহাহাহাহা। মা নিজেও ভালো গান গাইতেন। অবশ্য কোনো পারফর্ম করেননি। তার খুব উৎসাহ ছিল, আমি গান শিখি। মা ক্যান্ট মডার্ন স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। এমনিতে করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ করেছেন। পরে ’৭৭ সালে মা বিএড করেন।
তাপস রায়হান : বেঙ্গল ফাউন্ডেশন সম্পর্কে যদি আবার একটু বলেন?
লুভা নাহিদ চৌধুরী : ঐ তো। এটা রেজিস্টার্ড একটা অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি পরিচর্যার জন্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে যা কিছু করা সম্ভব তা এই প্রতিষ্ঠান করবে।
এনাম-উজ-জামান বিপুল : এর মানে সবকিছুই সাবসিডি?
লুভা নাহিদ চৌধুরী : তাই তো।
তাপস রায়হান : বেঙ্গল ফাউন্ডেশনে আপনার কত বছর হলো?
লুভা নাহিদ চৌধুরী : ২৫ বছর।
এনাম-উজ-জামান বিপুল : জীবনের শেষ সময় এখানেই কাটাবেন?
লুভা নাহিদ চৌধুরী : জানি না। সেই সিদ্ধান্ত এখনো নিইনি।
তাপস রায়হান : আপনার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কিছু জানতে চাইছি?
লুভা নাহিদ চৌধুরী : আমার বিয়ে হয় ১৯৮৬ সালে। আমরা দশ বছর ঘর করেছি। তিনিও স্থপতি। আমার ছেলে আছে। ওর স্ত্রীও রয়েছে। আমরা একসঙ্গেই থাকি। আমিও বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে। আমারও এক ছেলে। এই তো চলছে। আছি ভালোই। জীবন কেটে যাচ্ছে, নিজস্ব গতিতে।
এভাবেই ...!
তাপস রায়হান : আপনার অতৃপ্তি?
লুভা নাহিদ চৌধুরী : নেই।
তাপস রায়হান : দীর্ঘশ্বাস?
লুভা নাহিদ চৌধুরী : কোনো কিছু নিয়েই আফসোস করি না। হতাশা, নিরাশা নেই।
তাপস রায়হান : স্বপ্ন?
লুভা নাহিদ চৌধুরী : এটা আছে। আমি চাই, আবার সংগীত সম্মেলন হবে। আবার অনেক মানুষ আসবেন।
সবশেষে বলি- আমাদের দেশে অনেক ভালো শ্রোতা, দর্শক আছেন। আমি যা করি, সেটা আমার ভালোবাসা থেকে। এটাই যেন জীবনের শেষ পর্যন্ত থাকে।
গ্রন্থনা : অনিন্দিতা আচার্য
ছবি : আবুল কালাম আজাদ
লোকেশন : গ্রিন লাউঞ্জ