বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫, ৬ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

সহসা শান্ত হচ্ছে না মধ্যপ্রাচ্য!

আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:১৮ এএম

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া অব্যাহত রাখা হবে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। মিসরের কায়রোতে আলোচনার পর হামাস গতকাল নতুন করে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নের এই প্রতিশ্রুতি দিল। এতে করে ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির সমাপ্তির যে হুমকি দিয়ে ছিল তা আপাতত বন্ধ হলো। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা অধিগ্রহণের যে পরিকল্পনা দিয়েছেন সেটি ওই অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি সংকট তৈরি করবে। সে ক্ষেত্রে গাজা উপত্যকাকে কেন্দ্র করে  মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা নতুন রূপ নেবে।

এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্যের বরাতে ওয়াশিংটন পোস্টের করা একটি প্রতিবেদন নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে। গত বুধবার সংবাদমাধ্যমটি এক প্রতিবেদনে বলেছে, চলতি বছরের মাঝামাঝি ইরানের পরমাণু স্থাপনায় ‘হামলা চালাতে পারে’ ইসরায়েল। আর সেটি সত্যি হলে মধ্যপ্রাচ্য যে সহসা শান্ত হচ্ছে না সেটি অনায়াসেই বলা যায়। 

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের এমন প্রিএম্পটিভ বা প্রতিরোধমূলক হামলা ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পিছিয়ে যেমন দিতে পারে, তেমনি মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি এবং বিস্তৃত যুদ্ধের ঝুঁকিও সৃষ্টি করতে পারে, জো বাইডেন প্রশাসনের শেষ ও ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের শুরুর দিকে একাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এমনটাই ধারণা দেওয়া হয়েছে।

তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবেদনটির সত্যতা যাচাই করে দেখতে পারেনি বার্তা সংস্থা রয়টার্স। হোয়াইট হাউজ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

ইসরায়েলের সরকার, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ, মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা এবং জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালকের কার্যালয়ও এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।

হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজেস বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে ‘সুযোগ দেবেন না’। তিনি বলেন, যদিও তিনি (ট্রাম্প) ইরানের সরকারের সঙ্গে আমেরিকার দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলোর শান্তিপূর্ণ সমাধানে আলোচনাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন, কিন্তু ইরান যদি চুক্তি করতে শিগগিরই আগ্রহী না হয় তাহলে তিনিও অনির্দিষ্টকালের জন্য অপেক্ষা করবেন না।

জানুয়ারির শুরুর দিকে মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ও জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের গোয়েন্দা অধিদপ্তর ইরানে ইসরায়েলের সম্ভাব্য হামলা নিয়ে মোটামুটি বিস্তৃত গোয়েন্দা প্রতিবেদন দিয়েছে। এতে সতর্কবার্তা দিয়ে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ইরানের ফোরডো ও নাতানজ পরমাণু স্থাপনায় হামলার চেষ্টা চালাতে পারে।

গোয়েন্দা সংস্থার কার্যক্রম সম্বন্ধে অবগত একাধিক বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, গত বছরের অক্টোবরে ইরানে বোমা হামলায় তেহরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং দেশটি পরবর্তী সময়ে যেকোনো আক্রমণ মোকাবিলায় অরক্ষিত ছিল বলে বিশ্বাস ইসরায়েলের।

গাজায় ইসরায়েলের নির্মম আক্রমণকে কেন্দ্র করে গত বছর ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত যুদ্ধের ঝুঁকি সৃষ্টি করেছিল। মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলোতে ইরানে ইসরায়েলের সম্ভাব্য দুটি হামলার আভাস দেওয়া হয়েছে, যার প্রতিটিতে যুক্তরাষ্ট্রকে আকাশপথে পুনরায় জ¦ালানি ভরার সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য দিতে হবে। সম্প্রতি ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখতে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে চান তিনি। সশস্ত্র সংঘাতের বদলে ইরানও চুক্তি করতে চায় বলেই তার বিশ্বাস। গত সোমবার প্রচারিত সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলতে শোনা গেছে যে, প্রত্যেকেই মনে করছে ইসরায়েল আমাদের সহায়তা কিংবা আমাদের অনুমোদন নিয়ে ইরানের ভেতরে বোমা মেরে তছনছ করে দেবে। এটা না হোক তাই চাচ্ছি আমি। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে ওই চুক্তি থেকে বের করে আনেন ও তেহরানের ওপর আগের নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনর্বহাল করেন ট্রাম্প। এরপর থেকে ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পূর্ণোদ্যমে চালু রেখেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা।

অবশ্য পরমাণু আলোচনা ফের শুরুর পথ বের করতে ইরান, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বৈঠকও করেছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছিলেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শিগগিরই এ বিষয়ে ফলপ্রসূ কোনো আলোচনা না হলে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধ আরও বাড়বে। তাতে করে অবধারিতভাবে নতুন সংঘাত হবে মধ্যপ্রাচ্যে। আর সুযোগসন্ধানী ইসরায়েলও এমন কোনো পদক্ষেপ নেবে যাতে করে ফের আরও বেশি সংঘাতময় হয়ে ওঠে অঞ্চলটি। 

আর গাজা ও পশ্চিম তীর থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে গেলেও আরব দেশগুলোর সঙ্গে বিবাদ বাড়বে যুক্তরাষ্ট্রের। গত বুধবার আরব লীগের সেক্রেটারি জেনারেল আহমেদ আবুল গীতও এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেন, ট্রাম্পের প্রস্তাবকে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত