মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৃহস্পতিবার বৈঠক করেছেন নরেন্দ্র মোদি। হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ‘বন্ধু’ মোদিকে আলিঙ্গন করে অভ্যর্থনা জানান ট্রাম্প। তারপর বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে ঠিক হয়, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ অনেকটা বাড়বে। ২০৩০-এর মধ্যে তা ৫০ হাজার কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়া হবে। ভারতকে এফ-৩৫ স্টিলথ যুদ্ধবিমান দেয়া হবে, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা হবে, মুম্বাই হামলার পরিকল্পনার পিছনে থাকা সন্ত্রাসী তাহাবুর রানাকে ভারতের হাতে তুলে দেয়া হবে এবং ভারত অবৈধভাবে ঢোকা সব অভিবাসীকে ফেরত নেবে।
বাণিজ্য চুক্তি
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে মতৈক্য হয়েছে। বলা হয়েছে, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে খুব বড় আকারে বাণিজ্য চুক্তি হবে। ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমরা বাণিজ্য নিয়ে ভারতের সঙ্গে কাজ করব। অদূর ভবিষ্যতে আমরা বড় বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা করব। সেটা দুই দেশের পক্ষেই খুব ভালো হবে।’
মোদিও জানিয়েছেন, ‘খুব দ্রুত বাণিজ্য চুক্তি হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি ডলারে গিয়ে দাঁড়াবে।’
ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমরা ঐতিহাসিক বাণিজ্যপথ ধরে কাজ করতে একমত হয়েছি। এই বাণিজ্যপথ ভারত থেকে শুরু হয়ে ইসরায়েল হয়ে ইতালিকে ছুঁয়ে আমেরিকায় আসবে। সড়ক, রেল এবং সমুদ্রগর্ভস্থ পথে চলা এই বাণিজ্য দুই দেশের অনেক সহযোগী দেশকে ছুঁয়ে যাবে।’
মাসুল নিয়ে
মোদির সঙ্গে আলোচনায় বসার আগেই ট্রাম্প ঘোষণা করেন, আমেরিকা পারস্পরিক মাসুল নীতি চালু করল। কোনো দেশে আমেরিকার জিনিসের উপর শুল্ক থাকলে, ঠিক সেই পরিমাণ শুল্ক তাদের জিনিসের ওপরও আমেরিকা বসাবে।
যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে ট্রাম্প বলেছেন, ‘ভারতে সবচেয়ে বেশি মাসুল চালু আছে। আমি ওদের দোষ দিচ্ছি না। কিন্তু ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য করতে অসুবিধা হত। আমরা রেসিপ্রোকাল নেশন। ভারত যে পরিমাণ মাসুল নেবে, আমরাও সমপরিমাণ মাসুল নেব। ন্যায্যতার স্বার্থে তা করতে হবে। আমি সহজ পন্থায় গেছি।’
এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান পাবে ভারত
ট্রাম্প জানিয়েছেন, ভারতকে এফ-৩৫ স্টিলথ যুদ্ধবিমান বিক্রি করা হবে। ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানো হবে। ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে সামরিক অস্ত্র বিক্রির পরিমাণ বহু হাজার কোটি টাকা বাড়াব। আমরা ভারতকে এফ-৩৫ স্টিলথ যুদ্ধবিমান বিক্রি করব।’
মোদী জানিয়েছেন, ভারত যাতে সামরিক দিক থেকে প্রস্তুত থাকে, তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রমুখ ভূমিকা পালন করছে।
মুম্বাই হামলার অভিযুক্ত প্রত্যর্পণ
মুম্বাইতে ২৬/১১ হামলার অন্যতম অভিযুক্ত তাহায়ুর রানাকে ভারতের হাতে প্রত্যর্পণ করবে আমেরিকা। ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমরা মুম্বাইয়ে ২৬/১১-এর অন্যতম অভিযুক্ত এবং একজন ভয়ংকর মানুষকে ভারতের হাতে তুলে দিচ্ছি। যুক্তরাষ্ট্রের তরফে জানানো হয়, সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট এই অভিযুক্তকে ভারতের হাতে তুলে দেয়ার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী জানিয়েছেন, ভারতে তাকে জেরা করা হবে এবং বিচার হবে। ভারতীয় তদন্তকারীদের মতে, পাকিস্তানি ব্যবসায়ী তাহায়ুব রানা মুম্বাই হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন।
খালিস্তানিদের প্রসঙ্গে
সাংবাদিক সম্মেলনে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়, ভারতের অভিযোগ, খালিস্তানিরাও আমেরিকায় বসে ভারতের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে, তাদেরও কি ভারতের হাতে তুলে দেয়া হবে? বাইডেনের আমলে আমেরিকায় ভারতীয় গোয়েন্দাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল, সে বিষয়ে ট্রাম্পের মত কী?
ট্রাম্প বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাইডেনের সম্পর্ক ভালো ছিল না। তখন অনেক কিছু হয়েছে যা ঠিক নয়। আমরা এখনই একজনকে ভারতের হাতে তুলে দিচ্ছি। আরো এরকম মানুষকে তুলে দেয়া হবে। আমরা অপরাধ নিয়ে ভারতের সঙ্গে কথা বলব।’
অবৈধ অবিবাসীদের ফেরানো হবে
প্রধানমন্ত্রী মোদি জানিয়েছেন, অভিবাসী প্রশ্নটা শুধু ভারতকে নিয়ে নয়। যে কোনো দেশ থেকেই বেআইনিভাবে কেউ ঢুকলে তার সেখানে থাকার কোনো অধিকার নেই। কোনো ভারতীয় ঢুকলে বেআইনিভাবে আমরা তাকে নিতে প্রস্তুত।
মোদি বলেছেন, এখানেই বিষয়টি শেষ হচ্ছে না। যারা এভাবে আসছে, তারা সাধারণ পরিবারের সন্তান। তারা প্রতিশ্রুতি ও লোভে পড়ে যায়। তারা একটা সিস্টেমের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। আমরা চেষ্টা করব, এই সিস্টেমকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে। মানব পাচার যাতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করব।
আদানি প্রসঙ্গে
প্রধানমন্ত্রী মোদিকে প্রশ্ন করা হয়, আদানিকে নিয়ে কি কোনো কথা হয়েছে? মোদি বলেন, ‘ভারত গণতান্ত্রিক দেশ। সারা বিশ্বের মানুষ আমার আত্মীয়। সব ভারতীয় আমার আত্মীয়। কিন্তু কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে এখানে কথা হয় না।’
ইলন মাস্ক
মোদি জানিয়েছেন, ‘ইলন মাস্ককে আমি অনেকদিন ধরে চিনি। তখন আমি মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, তখন থেকে চিনি। স্ত্রী ও বাচ্চাদের নিয়ে তিনি দেখা করতে এসেছিলেন।’