শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

জীবনের শ্রেষ্ঠ নির্দেশিকা আল কোরআন

আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৩০ এএম

বর্তমান পৃথিবী মোকাবিলা করছে বহুমাত্রিক সমস্যা। মানুষ জর্জরিত নানা অশান্তিতে। এসবের ধরন যেমন বিচিত্র তেমনই অনেক জটিল দিকও রয়েছে। বিভিন্ন আঙ্গিকে আর বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে এসব নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। প্রকৃতপক্ষে এ সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য অবশ্যই এর ওপর প্রচুর অধ্যয়ন করা আবশ্যক, আর এতে গবেষণায় প্রাপ্ত ফল সমস্যাগুলো সমাধান করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এটি সুখকর ও সন্তুষ্টিজনক এক বিষয় হবে, যদি আমরা সবাই একসঙ্গে একত্রিত ও একমত হয়ে এ সমস্যাগুলো নিরসনে আমাদের চিন্তা-ভাবনাকে পরস্পরের সঙ্গে আদান-প্রদান করে আমাদের নিজ নিজ ধর্মের ভিত্তিতে এ সমস্যাগুলো সমাধানের পথ খুঁজি, তবে আশা করা যায় তা খুঁজে পাওয়াটা খুব কঠিন হবে না।

মানুষের কার্যকলাপের বিভিন্ন দিকগুলো ঐশী মর্যাদার উচ্চমান অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হলে বিশ^ বহুবিধ সমস্যার কবল থেকে মুক্তি পেতে পারে। এসব সমস্যার প্রতি যথাযথ দৃষ্টি দিয়ে মূল্যায়ন করা হলে, আর একে অপরের ধর্ম বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করে সহমর্মিতার নীতি ও শিক্ষার আলোকে উদ্দীপ্ত আদর্শের দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে বিশ্ব নেতারা সহসাই তাবৎ সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে পাবেন, নিশ্চিতভাবেই এটা বলা যায়।

বিশ্বাসগত দিক থেকে যে নীতিমালার ওপর ভিত্তি করে ইসলাম পরিপূর্ণতার দাবি করে, তা হলো জাতি, বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য সুন্দর সাবলীল জীবন পথের সব মৌলিক বিধান সংবলিত মহান নির্দেশিকা আল কোরআন। কারণ এতে বর্ণিত শিক্ষামালা অন্য কোনো সোর্স থেকে প্রাপ্ত নির্দেশনা নয়, বরং বিশ্বজগতের স্রষ্টা স্বয়ং নিজ করুণায় মানুষের সার্বিক মঙ্গলের জন্য স্বীয় বাণী পূর্ণাকারে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে মহানবী (সা.)-এর কাছে পাঠিয়েছেন।

বর্তমানে উদ্ভূত সমস্যাগুলোর গভীরে অন্তর্নিহিত বিষয়াবলি সম্পর্কে অনেকেই এ সত্যটি বুঝে উঠতে পারে না যে, আমরা যে জগতে বাস করছি তা দ্রুততার সঙ্গে উন্নততর এক মাত্রায় একাকার হয়ে যাচ্ছে। মানবজাতি এখন একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের সঙ্গে বসবাস করা সময়ের দাবি। অন্য কথায়, তাদের মাঝে সত্যিকারেই ভ্রাতৃত্ববোধের চেতনা সমুন্নত রাখা এখন বাস্তবে প্রকাশমান এক সত্য। এ জন্য অবশ্যম্ভাবীরূপে অনেক কিছুরই সমন্বয় সাধন করা শিখতে হবে। এমন অবস্থায় চোখ-কান বুজে থাকা আত্মহত্যারই নামান্তর। অতএব, এ যুগে কূপম-ূকতার কোনো ঠাঁই থাকতে পারে না।

এখন মানুষের চাহিদা পূরণ করতে হলে চাই এমন একটি বিশ্বাসপূর্ণ ব্যবস্থাপনা, যা সর্বজনীনতার স্তরে মানুষের অধিকার ও বিকাশমান ক্রমোন্নতিধারা নিশ্চিত করবে। পবিত্র কোরআনের শুরুতেই রয়েছে, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সমগ্র বিশ্বজগতের প্রতিপালক।’ (সুরা ফাতিহা) এ আয়াত সামগ্রিকভাবে এক মানবতা আর একই মহাবিশ্বের ধারণা উপস্থাপন করে গোটা মানবজাতিকে এক সূত্রে গেঁথে দিয়েছে। ইসলামের বার্তা মানবজাতির কোনো অংশের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়। এটি সমগ্র মানবজাতিকে এবং সমগ্র বিশ্ব জগৎকে ধারণ করে রয়েছে। অনুরূপভাবে পবিত্র কোরআনে আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘আপনি বলুন, হে মানুষ! নিশ্চয় আমি তোমাদের সবার জন্য আসমানসমূহ ও পৃথিবীর রাজত্বের অধিকারী আল্লাহর (প্রেরিত) রাসুল। তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি জীবিত করেন এবং মৃত্যুও দেন। অতএব, তোমরা ইমান আনো আল্লাহ এবং তার বার্তাবাহক উম্মি (নিরক্ষর) নবীর প্রতি, যে আল্লাহ ও তার বাণীগুলোতে ইমান রাখে এবং তোমরা তাকে অনুসরণ করো, যাতে তোমরা হেদায়াত লাভ করো।’ (সুরা আরাফ ১৫৮)

ইসলাম মানুষের মাঝে সর্বজনীন ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করে। পবিত্র কোরআনে ঐক্যবদ্ধ থাকার শিক্ষাদান করে বলা হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর রশি দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পর বিভক্ত হয়ো না। আর আল্লাহর সেই অনুগ্রহ স্মরণ করো যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, তখন তিনি তোমাদের হৃদয় প্রীতির বাঁধনে বেঁধে দিলেন এবং তোমরা তারই অনুগ্রহে ভাই ভাই হয়ে গেলে। আর তোমরা এক অগ্নিকুণ্ডের কিনারায় ছিলে, তিনি তা থেকে রক্ষা করলেন। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য তার আয়াতগুলো সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যেন তোমরা হেদায়াত লাভ করো।’ (সুরা আলে ইমরান ১০৩)

বর্তমান সময়ে মানুষ ধ্বংসের অতল গহ্বরের কিনারায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। এ যুগের জন্যও তিনি পথনির্দেশ দান করেছেন, আর তার সেই আদেশের ব্যাখ্যা দিয়ে জানিয়েও দিয়েছেন, মানবজাতি কী করে সঠিকভাবে পরিচালিত হতে পারে? ইসলাম মানুষের গায়ের রঙ, জাতি, ভাষা ইত্যাদি বৈচিত্র্যকে নির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্য সাধনের জন্য উপযোগী ও উপকারী বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘তার নিদর্শনাবলির মাঝে রয়েছে আকাশগুলো ও পৃথিবীর সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও রঙের বিভিন্নতা। নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা রুম ২২) কিন্তু এ ঘোষণা একচেটিয়াভাবে কাউকেই বিশেষ কোনো অগ্রাধিকার প্রদান করে না, কেননা কারও সত্যিকারের সম্মান নির্ভর করে শুধু তার নিজ জীবনে প্রতিপালিত পবিত্রতা ও ন্যায়পরায়ণতার ওপর। বর্ণ, জাতি বা গোষ্ঠী সম্পর্কিত বা পরিবার, পদ, সম্পদ থেকে প্রাপ্ত পার্থক্যসূচক কোনো বিশেষাধিকার যদি দৃষ্টিগোচর হয়ও, তবে এ ঘোষণা দ্বারা তা বিলুপ্ত হয়ে যায়। কারণ ঘোষিত এ নীতিমালা দ্বারা ইসলাম সমগ্র মানবজাতিতে এক মহান ভ্রাতৃত্ববোধ জাগরূক রেখে আমাদের সবার মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠায় উদ্বুদ্ধ করে এবং সৎকর্ম সাধনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমাদের পরস্পরের সঙ্গে সদ্ব্যবহার ও সদাচরণ করার শিক্ষা দেয়।

সুতরাং ইসলাম মৌলিক একত্বের ওপর ভিত্তি করে নিজেকে উপস্থাপন করায় স্রষ্টার একত্ব, মহাবিশ্বের একতা, মানুষের ঐক্য এবং জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখার মাধ্যমে এক সামগ্রিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণ করাই হলো ইসলামের উদ্দেশ্য, যাতে মানুষের কার্যকলাপের সব দিকের মধ্যে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে এমন একটি ভারসাম্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়, স্থায়িত্বের মানে যা হবে কালোত্তীর্ণ আর উন্নতির দুয়ার থাকবে অবারিত। আল্লাহপাক সবাইকে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা অনুসরণ করে জীবন পরিচালনার তওফিক দান করুন। আমিন।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত