মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১
দেশ রূপান্তর

কিডনি বিকলে বছরে মরছে ৪০ হাজার

আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৫, ০৬:৫৬ এএম

দেশে ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে ডায়ালাইসিসের ওপর নির্ভরশীল এমন প্রায় ৪০ হাজার রোগী বছরে কিডনি বিকল হয়ে মারা যায়। হঠাৎ কিডনি বিকল হওয়া আরও প্রায় ৩০ হাজার রোগীর সাময়িক ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হয়। এই রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। অথচ প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করলে কিডনি রোগপ্রতিরোধ করা যায় ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের মাধ্যমে কিডনি রোগ এড়ানো যায়।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল বৈঠকে কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটির (ক্যাম্পস) প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক ডা. এমএ সামাদ তার প্রবন্ধে এসব তথ্য জানান। বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় ক্যাম্পস ‘কিডনি স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণ : প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই বৈঠকের আয়োজন করে।

মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ডা. এমএ সামাদ বলেন, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৮৫ কোটি মানুষ শুধু দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত। এ সংখ্যা ডায়াবেটিক রোগীদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ এবং ক্যানসার রোগীদের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ। মৃত্যুর কারণ হিসেবে কিডনি রোগ ১৯৯০ সালে ছিল ১৯তম স্থানে, বর্তমানে দাঁড়িয়েছে সপ্তম স্থানে। এভাবে চলতে থাকলে ২০৪০ সালে দখল করে নেবে পঞ্চম স্থান। আবার উন্নয়নশীল বা স্বল্পোন্নত দেশে কিডনি রোগের হার সবচেয়ে বেশি।

এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, বাংলাদেশেও কিডনি রোগের প্রাদুর্ভাব উদ্বেগজনক। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, স্থূলতা, নেফ্রাইটিস, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান, নিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, বংশগত কিডনি রোগ, মূত্রতন্ত্রের প্রদাহ ও পাথুরে রোগী কিডনি রোগের সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম। কিডনি বিকলের চিকিৎসা সর্বাধিক ব্যয়বহুল। অথচ এই রোগ প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করে চিকিৎসার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়। এর জন্য প্রয়োজন গণসচেতনতা।

কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন-উর-রশিদ বলেন, এ রোগের জটিলতা ও চিকিৎসা ব্যয় বেশি। তাই প্রতিরোধই একমাত্র উপায়। দেশের ১৮ হাজার ৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিকে ১৫০ টাকা খরচ করে উচ্চ রক্তচাপ, ইউরিন, ডায়াবেটিস টেস্টের ব্যবস্থা করা গেলে কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগেই প্রিভেনশন করা যাবে।

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, কিডনি রোগপ্রতিরোধে সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। বিশেষ করে বাচ্চাদের এবং যুবসমাজের মধ্যে যাতে কিডনি রোগ প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে কিডনি রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলছে। গত ১০ বছরে দেড় কোটি কিডনি রোগীর সংখ্যা বেড়ে এখন সাড়ে ৩ কোটি। জেলাপর্যায়ে ডায়ালাইসিস সেন্টার চালু হচ্ছে। এতে সেবা সহজলভ্য হবে। কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট আইন সংশোধন হলে কিডনি দাতা সংকট কেটে যাবে। খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন করতে হবে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজে বাচ্চাদের ফাস্টফুড খাবার গ্রহণ কমিয়ে দিতে হবে। কেননা স্থূলতার জন্য কিডনি সমস্যা বেশি হয়।

পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. আফরোজা বেগম বলেন, শিশুদের কিডনি রোগ অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা সম্ভব। অপরিণত বাচ্চা জন্মগ্রহণ করতে তাকে নিয়মিত ফলোআপে রাখতে হবে। কিডনি সমস্যায় থাকা বাচ্চাদের বেশিরভাগই ইউরিনে ইনফেকশন করে। খুব দ্রুত বাচ্চাদের চিকিৎসা করলে কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।

বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব ডা. ফরহাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, দেশে কিডনি ডায়ালাইসিসের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স প্রয়োজন। আরও বেশি অভিজ্ঞ চিকিৎসক প্রয়োজন।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত