শুল্ক ফাঁকি রোধের সুফল পাচ্ছে কাস্টমস। চলতি অর্থবছরের আট মাসেই ৪৮ হাজার ২৭১ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ, যা গত বছরের এ সময়ের তুলনায় ৫ হাজার কোটি টাকা বেশি। ফেব্রুয়ারি মাসেও রেকর্ড ৬ হাজার ১৫২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছিল। এলসি খোলায় ডলারের সহজলভ্যতার পাশাপাশি শুল্ক ফাঁকি রোধ করায় রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও রাজস্ব আদায় বেশি হয়েছে বলে কাস্টমস সংশ্লিষ্টদের অভিমত।
কাস্টমস সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজকে ৮৩ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭৭ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৬৮ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছিল চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৫৫ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ আদায় করেছে ৪৮ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হিসাবে ৪ হাজার ৮০১ কোটি টাকা বাড়তি আদায় হয়েছে। অথচ অর্থবছরের শুরুর প্রথম তিন মাস রাজনৈতিক অস্থিরতার পাশাপাশি ভয়ংকর বন্যায় স্থবির ছিল দেশের অর্থনীতি। কিন্তু তারপরও রাজস্ব আদায়ে গতি কীভাবে?
এ প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম সাইফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, একটি অস্থিতিশীল সরকারের পতনে ও দেশত্যাগে বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশে এখন তুলনামূলক স্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ব্যবসায়ীরা সহজে এলসি খুলতে পারছেন এবং বিদেশ থেকে আমদানি কার্যক্রমও করছেন। আর এরই চিত্র দেখা যায় কাস্টমসের রাজস্ব আহরণে।
তিনি আরও বলেন, দেশে ব্যবসায়ীদের ব্যবসার পরিবেশ সহজ হয়েছে। এতে ব্যবসায়ে গতি পেয়েছে। আমরা চাই এই গতিময় ধারা অব্যাহত থাকুক।
রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে কথা হয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের উপকমিশনার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার পরও এখন আমদানি বেড়েছে। একই সঙ্গে আমরা শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় অনেক কঠোরতা আরোপ করেছি বলে শুল্ক ফাঁকি কমেছে। আর প্রভাব পড়েছে কাস্টমসের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণে।
অভিযোগ রয়েছে, বিগত বছরগুলোতে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে শুল্ক পরিশোধ না করে পণ্য ছাড় করে নেওয়ার প্রবণতা যেমন ছিল, তেমনি মিথ্যা ঘোষণা শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা হতো প্রতিনিয়ত। তবে কাস্টমসের কঠোর অবস্থানে সেই প্রবণতা অনেকটা কমে আসছে। শুল্ক ফাঁকি প্রসঙ্গে সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীরা জানান, আমরা শুল্ক ফাঁকি দিতে চাই না। যথাযথ শুল্ক দিয়ে হয়রানিমুক্ত পরিবেশে আমদানি কার্যক্রম শেষে পণ্য ডেলিভারি নিতে চাই। আর বর্তমানে এ পরিবেশ বিরাজ করছে বলে শুল্ক আদায়ও বেড়েছে।
বাংলাদেশে মোট রাজস্বের ১৭ শতাংশ জোগান দেয় চট্টগ্রাম বন্দর ও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ। অর্থাৎ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি হয়ে থাকে। এর আগে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) পর্যন্ত রাজস্ব আগের অর্থবছরের তুলনায় ২ হাজার ৩৮২ কোটি ১ লাখ টাকা বেশি আদায় করেছিল চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ।