সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

যুক্তরাষ্ট্রে গোলাপের ৯ বাড়ি-ফ্ল্যাটের সন্ধান

আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৫, ০৬:২৬ এএম

শেখ হাসিনার সাবেক বিশেষ সহকারী মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য  আবদুুস সোবহান মিয়া গোলাপের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে নয়টি ফ্ল্যাট ও বাড়ি ক্রয়সহ ৬৮ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তার ব্যাংক হিসাবে ৯৭ কোটি ৬৩ লাখ ২৩ হাজার ৩৮৮ টাকা লেনদেনের অভিযোগে মামলা করার অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গতকাল বুধবার মামলার এ অনুমোদন দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, সাবেক এমপি আবদুুস সোবহান গোলাপ ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ অর্থ উপাজর্ন ও অর্থপাচার করে নিউইয়র্কের কুইন্স এলাকায় ৯টি ফ্ল্যাট ও বাড়ি কিনেছেন। এ ছাড়া দেশে অবৈধ সম্পদ ও ব্যাংকে সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. আবদুস সোবহান মিয়া ওরফে গোলাপ এমপি হিসেবে পাবলিক সার্ভেন্ট হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কুইন্স-এ ৯টি ফ্ল্যাট ও বাড়ি ক্রয় করেন। যার মূল্য বাংলাদেশি টাকায় ৩২ কোটি টাকা। এ ছাড়া তার আরও ৩৪ লাখ ২৭ হাজার ৯৬০ টাকার স্থাবর এবং ৩৭ কোটি ১৬ লাখ ৬৯ হাজার ৬৭ টাকার অস্থাবরসহ মোট ৬৯ কোটি ৭৬ লাখ ৭৯ হাজার ২৯৪ টাকার সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া যায়। এর মধ্যে গ্রহণযোগ্য আয়ের পরিমাণ ১ কোটি ৪৪ লাখ ৩ হাজার ৬২৯ টাকা। অবশিষ্ট ৬৮ কোটি ৩২ লাখ ৭৫ হাজার ৬৬৫ টাকার সম্পদ অবৈধ উপায়ে অর্জন করেন তিনি। এ ছাড়া তার নিজ নামে ৫১টি ব্যাংক হিসাবে মোট ৯৭ কোটি ৬৩ লাখ ২৩ হাজার ৩৮৮ টাকার অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারার এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে।

জানা গেছে, আবদুস সোবহান মিয়া ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে মাদারীপুর-৩ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন।

অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ‘অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট’ বা ওসিসিআরপি তাদের একটি প্রতিবেদনে আবদুস সোবহান মিয়ার (গোলাপ) যুক্তরাষ্ট্রের ৪০ লাখ ডলার ব্যয়ে একাধিক বাড়ি ক্রয়ের তথ্য প্রকাশ করে। ২০২৩ সালের ১৩ জানুয়ারি ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি ২০১৪ সালে প্রথম নিউইয়র্কে অ্যাপার্টমেন্ট কেনা শুরু করেন। ওই বছর নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস এলাকায় একটি সুউচ্চ ভবনে অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন। পরের পাঁচ বছরে তিনি নিউইয়র্কে একে একে মোট নয়টি প্রপার্টি বা সম্পত্তির (ফ্ল্যাট বা বাড়ি) মালিক হন। এসব সম্পত্তির মূল্য ৪০ লাখ ডলারের বেশি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আশির দশকে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর মোহাম্মদ আবদুস সোবহান মিয়া কম বেতনের কাজ, যেমন- পিৎজা তৈরি, ওষুধের দোকানে কাজ, লাইসেন্স ছাড়া ট্যাক্সি চালাতেন বলে জানান তার সহকর্মীরা। এ সব কাজ থেকে যে আয় হয় তা দিয়ে এভাবে অ্যাপার্টমেন্ট বা বাড়ি কেনা সম্ভব নয়। এ সব সম্পত্তি কিনতে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাঠানো হয়েছে কি না- তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ বাংলাদেশ থেকে সম্পত্তি কেনার জন্য বিদেশে অর্থ পাঠানোর সুযোগ নেই। দুদক ২০২৩ সালের জুন মাসে গোলাপের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত