মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২
দেশ রূপান্তর

সাগরের তলদেশে হচ্ছে দীর্ঘতম সুড়ঙ্গ

আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:০১ এএম

বাল্টিক সাগরের তল দিয়ে ইউরোপের দেশ ডেনমার্ক ও জার্মানির মধ্যে তৈরি করা হচ্ছে একটি সুড়ঙ্গ। আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সুড়ঙ্গ হতে যাচ্ছে এটি। ১৮ কিলোমিটার (১১ মাইল) দীর্ঘ এই সড়ক ও রেল সুড়ঙ্গ ভ্রমণের সময় কমিয়ে দেবে এবং ইউরোপের বাদবাকি অংশের সঙ্গে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ ডেনমার্কের যোগাযোগেরও উন্নয়ন ঘটাবে। সুড়ঙ্গটির কিছু অংশ আগেই তৈরি করা হয়েছে। পানির নিচের অধিকাংশ টানেলের মতো মাটির নিচে বোরিং করে বানানো হচ্ছে না এটি। বরং ৯০টি আগে থেকে তৈরি অংশ জুড়ে দিয়ে সাগরের তলদেশে লেগো ইটের মতো করে জোড়া লাগানো হচ্ছে। প্রতিটি অংশের দৈর্ঘ্য ২১৭ মিটার, প্রস্থ ৪২ মিটার ও ওজন ৭৩ হাজার টনের বেশি। দুটি টিউবে ট্রেন ও দুটিতে গাড়ি চলবে বিশাল অংশগুলো সমুদ্রে ডুবিয়ে একটির সঙ্গে অন্যটি জোড়া দেওয়া হবে। এরপর ভেতরেও করা হবে অনেক কাজ। বিবিসি জানায়, প্রকল্পের মূল নির্মাণস্থল হচ্ছে ডেনমার্কের দক্ষিণ-পূর্বে লোল্যান্ড দ্বীপের উপকূলে সুড়ঙ্গটির উত্তরের প্রবেশপথ। এলাকাটির আয়তন ৫০০ হেক্টরের বেশি। সেখানে আছে পোতাশ্রয় এবং কারখানাও। সেখানেই সুড়ঙ্গের অংশগুলো তৈরি করা হচ্ছে, যেগুলোকে বলা হচ্ছে ‘এলিমেন্টস’। এই সুড়ঙ্গ দিয়ে জার্মানির উত্তরাংশের সঙ্গে যুক্ত হবে ডেনমার্ক। ফলে রেলযাত্রী ও গাড়ি চালকদেরকে এখনকার তুলনায় ১৬০ কিলোমিটার পথ কম পাড়ি দিতে হবে৷ সুড়ঙ্গটির নির্মাণ ব্যয় প্রায় ৭৪০ কোটি ইউরো। এর বেশির ভাগ খরচই দিচ্ছে ডেনমার্ক। আর ইউরোপীয় কমিশন দিচ্ছে ১৩০ কোটি ইউরো।

সুড়ঙ্গ নির্মাণকারী ড্যানিশ রাষ্ট্রীয় কোম্পানি ফেমার্ন এর প্রধান নির্বাহী হেনরিক ভিনসেন্টসেন মনে করেন, ২০২৯ সালে জার্মানির সঙ্গে সুড়ঙ্গ সংযোগ চালুর লক্ষ্য পূরণে এই প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক৷

ওই অঞ্চলে এটিই এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ এই প্রকল্প। এর লক্ষ্য হলো, ইউরোপ মহাদেশ জুড়ে ভ্রমণ আরও দ্রুত করে তুলে বিমানযাত্রা কমিয়ে আনা। সুড়ঙ্গ নির্মাণ শেষ হয়ে গেলে গাড়িতে মাত্র ১০ মিনিট আর ট্রেনে মাত্র ৭ মিনিটেই দক্ষিণ ডেনমার্কের রডবিহ্যাভন থেকে উত্তর জার্মানির পুটগার্টেনে ভ্রমণ করা সম্ভব হবে। যেখানে আগে ফেরি পারাপারে ৪৫ মিনিট সময় লাগত। আর সুড়ঙ্গের নতুন রেলপথে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন থেকে জার্মানির হামবুর্গ যাওয়ার সময়ও কমে আসবে। ডেনমার্কের লোল্যান্ড দ্বীপ একসময় অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা এলাকা ছিল। স্থানীয়দের আশা, এই টানেল নতুন ব্যবসা, কর্মসংস্থান ও পর্যটন বাড়াবে। এ ছাড়া চালু হওয়ার পর প্রতিদিন টানেলটি দিয়ে ১২ হাজার গাড়ি ও ১০০টির বেশি ট্রেন চলবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই রাজস্ব থেকেই ধীরে ধীরে প্রকল্পের জন্য নেওয়া ঋণ শোধ করা হবে। যা শোধ করতে প্রায় ৪০ বছর সময় লাগবে।

সর্বশেষ সর্বাধিক পঠিত আলোচিত