স্বামী ফারজান হোসেন সজীবের (৩৬) নিথর দেহ শোয়ানো আছে লাশঘরের স্ট্রেচারে। তার মরদেহ নিতে এসে হাসপাতালের চেয়ারে বসে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী লাকি আক্তার। পাশে বসে সজীবের বোন সানজিদা তার ভাবি লাকিকে সান্ত¡না দিচ্ছেন। কিন্তু কিছুতেই লাকির কান্না থামছে না। কাঁদছেন হাসপাতালে ছুটে আসা আত্মীয়-স্বজনরাও।
গতকাল শুক্রবার বিকোল ৪টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে শোকাবহ এই দৃশ্য। সজীব চট্টগ্রাম নগরের বকশিরহাট এলাকার রামজয় মহাজন লেনের বাসিন্দা মো. রফিকের ছেলে। তাদের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়।
পুলিশ জানায়, সজীব একসময় বর্তমানে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। সর্বশেষ তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। গত ২৬ মার্চ রাতে নগরের কোতোয়ালি থানা পুলিশের অভিযানে সজীবকে গ্রেপ্তার। পরদিন তাকে ডাকাতির প্রস্তুতির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজিরের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে সজীবকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে দাবি করেছেন তার স্ত্রী লাকি আক্তার।
তিনি (লাকি আক্তার) দেশ রূপান্তরকে জানান, বেলা ১১টার দিকে কারাগার থেকে তার স্বামী স্ট্রোক করেছেন বলে সংবাদ পান তিনি। এ সময় স্বামীর এনআইডি নিয়ে দ্রুত তাকে চমেক হাসপাতালে যেতে বলা হয়। এরপর দুপুর দেড়টার দিকে আরেকটি মোবাইল নম্বর থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তি তাকে (লাকি আক্তার) কল করে বলেন, ‘আপনার স্বামী টয়লেটে গোসল করা নিয়ে অন্য বন্দির সঙ্গে মারপিট করেছেন। তার মাথা ফেটে গেছে। তাকে শাস্তি হিসেবে অন্য কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। দ্রুত ২০ হাজার টাকা পাঠান। টাকা না দিলে তাকে অনেক মারধর করবে।’ এ সময় স্বামীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে অজ্ঞাত ওই ব্যক্তি মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
দুপুর ২টার দিকে চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এসে স্বামীর নিথর দেহ লাশঘরে পড়ে থাকতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন লাকি। এ সময় চিকিৎসকরা লাকি এবং আত্মীয়-স্বজনদের জানান, সজীবকে বেলা সোয়া ১১টার দিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। সজীবের মৃতদেহ হাসপাতালে রেখে কারারক্ষীরা পালিয়ে যান বলে অভিযোগ করেছেন সজীবের আত্মীয় মো. আবু তালেব।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল হোসেন বলেন, ‘সজীব ২৭ মার্চ থেকে কারাগারের যমুনা ভবনের সাত নম্বর ওয়ার্ডে ছিলেন। আজ (শুক্রবার) সকালে সজীব বুকে ব্যথা অনুভব করার কথা জানালে তাকে চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’