হালকা শাস্তি কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানার
আশরাফুল হক | ১৩ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০
মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে কুড়িগ্রামে সাংবাদিক আটকের ঘটনায় তৎকালীন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোছা. সুলতানা পারভীনকে দুই বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) স্থগিত করে লঘুদন্ড দেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এর ফলে মধ্যরাতে সাংবাদিক হেনস্তার ঘটনায় অভিযুক্ত সবার বিভাগীয় বিচার প্রায় শেষ হয়েছে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী সুলতানা পারভীন সরকারি একটি পুকুর সরকারি অর্থে সংস্কার করে তার নিজের নামে ‘সুলতানা সরোবর’ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যা নিয়ে ‘কাবিখার টাকায় পুকুর সংস্কার করে ডিসির নামে নামকরণ’ শিরোনামে বাংলা ট্রিবিউনে প্রতিবেদন করেছিলেন নিউজপোর্টালটির কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম। এছাড়াও জেলায় তার নানা অনিয়ম নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন আরিফুল। এসব কারণে ডিসি তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাজা দিয়ে তাকে জেলে পাঠিয়েছেন দেশ রূপান্তরের কাছে এমনই অভিযোগ করেছেন আরিফুল ইসলাম।
ডিসি সুলতানা পারভীনের আগে এনডিসি রাহাতুল ইসলামের তিনটি ইনক্রিমেন্ট কর্তন করা হয়েছে। আরডিসি নাজিম উদ্দিনকে নিম্নধাপে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর রিন্টু বিকাশ চাকমাকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। যদিও রিন্টু বিকাশ চাকমার বিষয়টির এখনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। তবে অন্যদের প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। তাদের মধ্যে এনডিসি রাহাতুল ইসলামকে বরিশাল ডিসি অফিসে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভাগীয় মামলার সাজা দেওয়ার প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নতুন করে পোস্টিং দেওয়ার আর কোনো বাধা নেই। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও পোস্টিংয়ের জন্য যোগাযোগ করছেন বলে জানা গেছে।
গত বছর ১৪ মার্চ কুড়িগ্রামে মধ্যরাতে বাড়িতে ঢুকে বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে ধরে নিয়ে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত এক বছরের কারাদ- দেয়। আরিফুলের বাড়িতে আধা বোতল মদ এবং গাঁজা পাওয়ার অভিযোগ আনা হয়। এভাবে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে একজন সাংবাদিককে ধরে এনে সাজা দেওয়ার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যম এ ঘটনা ফলাও করে প্রচার করলে সরকার তদন্ত কমিটি গঠন করে। ডিসি সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দিন এবং দুই সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এসএম রাহাতুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়।
কুড়িগ্রামে সাংবাদিক হেনস্তার মতো ঘটনার বিভাগীয় বিচার দ্রুত শেষ করা হয়েছে। সাধারণত এ ধরনের চাঞ্চল্যকর ঘটনার বিভাগীয় বিচার আরও সময় লাগে। এ ঘটনার বিচারে অপেক্ষাকৃত কম সময় লাগলেও বিচারের শাস্তি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হেনস্তার শিকার সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, ‘এটা বিচারের নামে প্রহসন। ভুক্তভোগী হিসেবে আমি জানি সুলতানা পারভীনের ব্যক্তিগত আক্রোশে এবং তারই সরাসরি নির্দেশে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নামে আমাকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানোর অপচেষ্টা হয়েছে এবং আমাকে পাশবিক নির্যাতন করে বিনা অপরাধে জেল খাটানো হয়েছে। এরপরও তার নামমাত্র শাস্তি পাওয়ার অর্থ হলো ন্যায়বিচার লঙ্ঘিত হয়েছে। এখানে যে বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে প্রভাবিত হয়েছে তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। একজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশ ছাড়া তার অধস্তন তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কোনো অভিযান পরিচালনা করতে পারেন না। আমি আদালতে গিয়েছি, আমার দৃঢ় বিশ্বাস আদালতে আমি ন্যায়বিচার পাব এবং অপরাধীরা উপযুক্ত শাস্তি পাবেন। সাংবাদিকতার অপরাধে সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে আমাকে অন্যায়ভাবে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এটা প্রমাণ হওয়ার পরও অভিযুক্তদের উপযুক্ত শাস্তি না হওয়ার অর্থ হলো মন্ত্রণালয় ন্যায়বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছে।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০২০ সালের ১৮ মার্চ এ ঘটনায় সুলতানা পারভীনকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়। তিনি ২৫ জুন এর লিখিত জবাব দেন। একই বছরের ৯ আগস্ট তার ব্যক্তিগত শুনানি হয়। তার লিখিত বক্তব্য ও মৌখিক জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় বিভাগীয় মামলাটি তদন্তের জন্য তদন্ত বোর্ড গঠন করা হয়। তদন্ত বোর্ডের আহ্বায়ক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আলী কদর গত ২ মে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। সেখানে তিনি সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন। বোর্ডের তদন্ত প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি পর্যালোচনা করে সুলতানা পারভীনকে গুরুদন্ড দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে গত ৮ জুন দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়। দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর নোটিসের জবাব, অভিযোগের গুরুত্ব ও প্রশাসনিক দিক বিবেচনা করে তাকে দুই বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখার লঘুদ- দেওয়া হয়।
সুলতানা পারভীনের আগে আরডিসি নাজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার ও মোবাইল কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এনডিসি এসএম রাহাতুল ইসলাম বিভাগীয় মামলায় আনা অভিযোগের জবাব দিয়েছেন। কারণ দর্শানো নোটিসের জবাবে সুলতানা পারভীন জানিয়েছেন, তিনি মধ্যরাতে সাংবাদিক আটক ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সময় ঘুমিয়ে ছিলেন। মোবাইল ফোনে আসা ‘মিসড’ কল নম্বরে পরের দিন সকালে ফোন ব্যাক করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিবের কাছ থেকে প্রথম ঘটনা শুনেছেন।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বিভাগীয় মামলায় সুলতানা পারভীনের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনার অভিযোগ আনা হয়েছে। এর জবাবে তিনি বলেছেন, পত্রিকাগুলো কিসের ভিত্তিতে এ অভিযোগ করেছে তা তার বোধগম্য নয়। তিনি জানিয়েছেন, তিনি কোনো মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেননি। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য তিনি কোনো মৌখিক বা লিখিত নির্দেশনা দেননি। এ বিষয়ে তিনি অবগত ছিলেন না।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মধ্যরাতে সাংবাদিক আটকের সময় সেখানে উপস্থিত না থাকার দাবি করেছেন আরডিসি নাজিম উদ্দিন। তিনি শুধু কাস্টডি ওয়ারেন্টের সাজাপ্রাপ্ত আসামি সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে জেলখানায় গ্রহণের পদ্ধতিগত আনুষ্ঠানিকতা করার দাবি করেছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কারণ দর্শানো নোটিসের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। গত বছর ৩ জুন তিনি কারণ দর্শানোর নোটিসের জবাব দেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকার দাবি করলেও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমার কারণ দর্শানো নোটিসের জবাবে নাজিম উদ্দিনের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়। ঘটনাস্থলে তার উপস্থিতির কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রকাশ হয়েছে।
শেয়ার করুন
আশরাফুল হক | ১৩ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০

মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে কুড়িগ্রামে সাংবাদিক আটকের ঘটনায় তৎকালীন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোছা. সুলতানা পারভীনকে দুই বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) স্থগিত করে লঘুদন্ড দেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এর ফলে মধ্যরাতে সাংবাদিক হেনস্তার ঘটনায় অভিযুক্ত সবার বিভাগীয় বিচার প্রায় শেষ হয়েছে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী সুলতানা পারভীন সরকারি একটি পুকুর সরকারি অর্থে সংস্কার করে তার নিজের নামে ‘সুলতানা সরোবর’ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যা নিয়ে ‘কাবিখার টাকায় পুকুর সংস্কার করে ডিসির নামে নামকরণ’ শিরোনামে বাংলা ট্রিবিউনে প্রতিবেদন করেছিলেন নিউজপোর্টালটির কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম। এছাড়াও জেলায় তার নানা অনিয়ম নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন আরিফুল। এসব কারণে ডিসি তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাজা দিয়ে তাকে জেলে পাঠিয়েছেন দেশ রূপান্তরের কাছে এমনই অভিযোগ করেছেন আরিফুল ইসলাম।
ডিসি সুলতানা পারভীনের আগে এনডিসি রাহাতুল ইসলামের তিনটি ইনক্রিমেন্ট কর্তন করা হয়েছে। আরডিসি নাজিম উদ্দিনকে নিম্নধাপে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর রিন্টু বিকাশ চাকমাকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। যদিও রিন্টু বিকাশ চাকমার বিষয়টির এখনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। তবে অন্যদের প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। তাদের মধ্যে এনডিসি রাহাতুল ইসলামকে বরিশাল ডিসি অফিসে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভাগীয় মামলার সাজা দেওয়ার প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নতুন করে পোস্টিং দেওয়ার আর কোনো বাধা নেই। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও পোস্টিংয়ের জন্য যোগাযোগ করছেন বলে জানা গেছে।
গত বছর ১৪ মার্চ কুড়িগ্রামে মধ্যরাতে বাড়িতে ঢুকে বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে ধরে নিয়ে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত এক বছরের কারাদ- দেয়। আরিফুলের বাড়িতে আধা বোতল মদ এবং গাঁজা পাওয়ার অভিযোগ আনা হয়। এভাবে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে একজন সাংবাদিককে ধরে এনে সাজা দেওয়ার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যম এ ঘটনা ফলাও করে প্রচার করলে সরকার তদন্ত কমিটি গঠন করে। ডিসি সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দিন এবং দুই সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এসএম রাহাতুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়।
কুড়িগ্রামে সাংবাদিক হেনস্তার মতো ঘটনার বিভাগীয় বিচার দ্রুত শেষ করা হয়েছে। সাধারণত এ ধরনের চাঞ্চল্যকর ঘটনার বিভাগীয় বিচার আরও সময় লাগে। এ ঘটনার বিচারে অপেক্ষাকৃত কম সময় লাগলেও বিচারের শাস্তি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হেনস্তার শিকার সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, ‘এটা বিচারের নামে প্রহসন। ভুক্তভোগী হিসেবে আমি জানি সুলতানা পারভীনের ব্যক্তিগত আক্রোশে এবং তারই সরাসরি নির্দেশে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নামে আমাকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানোর অপচেষ্টা হয়েছে এবং আমাকে পাশবিক নির্যাতন করে বিনা অপরাধে জেল খাটানো হয়েছে। এরপরও তার নামমাত্র শাস্তি পাওয়ার অর্থ হলো ন্যায়বিচার লঙ্ঘিত হয়েছে। এখানে যে বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে প্রভাবিত হয়েছে তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। একজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশ ছাড়া তার অধস্তন তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কোনো অভিযান পরিচালনা করতে পারেন না। আমি আদালতে গিয়েছি, আমার দৃঢ় বিশ্বাস আদালতে আমি ন্যায়বিচার পাব এবং অপরাধীরা উপযুক্ত শাস্তি পাবেন। সাংবাদিকতার অপরাধে সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে আমাকে অন্যায়ভাবে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এটা প্রমাণ হওয়ার পরও অভিযুক্তদের উপযুক্ত শাস্তি না হওয়ার অর্থ হলো মন্ত্রণালয় ন্যায়বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছে।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০২০ সালের ১৮ মার্চ এ ঘটনায় সুলতানা পারভীনকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়। তিনি ২৫ জুন এর লিখিত জবাব দেন। একই বছরের ৯ আগস্ট তার ব্যক্তিগত শুনানি হয়। তার লিখিত বক্তব্য ও মৌখিক জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় বিভাগীয় মামলাটি তদন্তের জন্য তদন্ত বোর্ড গঠন করা হয়। তদন্ত বোর্ডের আহ্বায়ক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আলী কদর গত ২ মে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। সেখানে তিনি সুলতানা পারভীনের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন। বোর্ডের তদন্ত প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি পর্যালোচনা করে সুলতানা পারভীনকে গুরুদন্ড দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে গত ৮ জুন দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়। দ্বিতীয় কারণ দর্শানোর নোটিসের জবাব, অভিযোগের গুরুত্ব ও প্রশাসনিক দিক বিবেচনা করে তাকে দুই বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখার লঘুদ- দেওয়া হয়।
সুলতানা পারভীনের আগে আরডিসি নাজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার ও মোবাইল কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এনডিসি এসএম রাহাতুল ইসলাম বিভাগীয় মামলায় আনা অভিযোগের জবাব দিয়েছেন। কারণ দর্শানো নোটিসের জবাবে সুলতানা পারভীন জানিয়েছেন, তিনি মধ্যরাতে সাংবাদিক আটক ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সময় ঘুমিয়ে ছিলেন। মোবাইল ফোনে আসা ‘মিসড’ কল নম্বরে পরের দিন সকালে ফোন ব্যাক করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম সচিবের কাছ থেকে প্রথম ঘটনা শুনেছেন।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বিভাগীয় মামলায় সুলতানা পারভীনের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনার অভিযোগ আনা হয়েছে। এর জবাবে তিনি বলেছেন, পত্রিকাগুলো কিসের ভিত্তিতে এ অভিযোগ করেছে তা তার বোধগম্য নয়। তিনি জানিয়েছেন, তিনি কোনো মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেননি। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য তিনি কোনো মৌখিক বা লিখিত নির্দেশনা দেননি। এ বিষয়ে তিনি অবগত ছিলেন না।
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মধ্যরাতে সাংবাদিক আটকের সময় সেখানে উপস্থিত না থাকার দাবি করেছেন আরডিসি নাজিম উদ্দিন। তিনি শুধু কাস্টডি ওয়ারেন্টের সাজাপ্রাপ্ত আসামি সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে জেলখানায় গ্রহণের পদ্ধতিগত আনুষ্ঠানিকতা করার দাবি করেছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কারণ দর্শানো নোটিসের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। গত বছর ৩ জুন তিনি কারণ দর্শানোর নোটিসের জবাব দেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকার দাবি করলেও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমার কারণ দর্শানো নোটিসের জবাবে নাজিম উদ্দিনের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়। ঘটনাস্থলে তার উপস্থিতির কথা বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রকাশ হয়েছে।