শিক্ষা কি এবং কেন?
শিক্ষা নামক কোন বস্তু হঠাৎ করে শিলাবৃষ্টির মতো আকাশ থেকে ঝরে পড়ে নাই। শিক্ষা হচ্ছে মানুষের কর্ম অভিজ্ঞতার একটা সুস্বাদু ফল, যা সকলের খাওয়া বাঞ্চনীয়, না খেলে পার্থিব জীবন অচল। শুধু তাই নয় পরকালের জন্যও শিক্ষার মেহেরবানী অপরিমেয়। তা শুধু আমি নয়, যে কোন ধর্মপ্রবক্তারও একই কথা।মানুষ জ্ঞান অর্জন করতে পারে, অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগাতে পার, এটা মানুষের একটা চমৎকার বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্যকে কার্যকর রূপ দেওয়ার, সম্প্রসারিত করার সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম শিক্ষা। শিক্ষার সবচেয়ে জোরালো মাধ্যম মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা ।
শিক্ষার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে সক্রেটিস বলেছেন, “শিক্ষা হল মিথ্যার অপনোদন ও সত্যের বিকাশ”। এরিস্টটল বলেছেন,” সুস্থ দেহে সুস্থ মন তৈরি করাই হল শিক্ষা”। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মনে করেন, “শিক্ষা হল তাই যা আমাদের কেবল তথ্য পরিবেশনই করে না বিশ্বসত্তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের জীবনকে গড়ে তোলে”। বাংলা ভাষায় ‘শিক্ষা’ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ ‘শাস’ ধাতু থেকে, যার অর্থ হচ্ছে শাসন করা বা উপদেশ দান করা। শিক্ষার ইংরেজি প্রতিশব্দ Education শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ Educere বা Educatum থেকে যার অর্থ to lead out অর্থাৎ ভেতরের সম্ভাবনাকে বাইরে নিয়ে আসা। প্রত্যেক মানুষের মাঝে কিছু না কিছু সম্ভাবনা সুপ্ত অবস্থায় থাকে। শিক্ষার মাধ্যমে এর বিকাশ ঘটে। তাই প্রচলিত অর্থে জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জনই হল শিক্ষা। ব্যাপক অর্থে পদ্ধতিগত জ্ঞান লাভের প্রক্রিয়াকে শিক্ষা বলা হয়। তবে শিক্ষার সামগ্রিক অর্থ হলো সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের অব্যাহত অনুশীলন, ধারাবাহিক সাধনা, অর্জিত জ্ঞানের চর্চা।
পাওলো ফ্রেইরি শিক্ষাকে বিশ্ব পরিবর্তনের প্রধান শক্তি হিসেবে দেখেছেন। সত্তরের দশকে তার শিক্ষা দর্শন সারা পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি করে। শিক্ষা ক্ষেত্রে তাঁর দর্শন ব্রাজিলের সামরিক সরকারের মনঃপুত না হওয়ায় ১৯৬৪ -এ তাঁকে কারারুদ্ধ ও দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়। চিলিতে নির্বাসিত জীবনে তিনি Pedagogy of the Oppressed (অত্যাচারিতের শিক্ষা) নামক বইটি লেখেন। ১৯৭০-এ বইটি প্রকাশিত হলে তিনি সারাবিশ্বে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৯৩ সালে আমিনুল ইসলাম ভুইয়ার অনুবাদে ‘অত্যাচারিতের শিক্ষা’ নামে বইটা বাংলাদেশে প্রকাশিত হয়। পাওলো ফ্রেইরে বিশ্বাস করেন সংলাপের মাধ্যমে বঞ্চিত মানুষ তাদের সমস্যা চিহ্নিত করবে এবং সমাধানের জন্য নিজেরা আত্মসচেতন হয়ে তাদের অধিকার আদায়ে সক্রিয় হবে।
আহমদ ছফার মতে, “ ইউরোপীয় রেনেসাঁর পূর্বে শিক্ষার দর্শনের মূল ভিত্তি ছিল অতীন্দ্রিয়বাদে প্রোথিত। মানুষ জানবে কেন? বুঝবে কেন? জ্ঞান লাভ করবে কেন? এই সবগুলো কেনর জবাব প্রাচীন জগৎ দিয়েছে- কোনো এক অলৌকিক সত্তায় তাকে বিশ্বাসী হতে হবে। যেহেতু মানুষের মন চঞ্চল, ইন্দ্রিয় অসংযত, তাই তাকে একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে দৈনন্দিন শৃংখলার মাধ্যমে এই বিশ্বাসকে চিত্তে চেতনায় স্থির করতে হবে, কোথাও তাকে সকল কিছু সমর্পণ করতে হবে। এই সমর্পণের পাত্রটি কোনো যুগে কোনো সমাজে বহু দেবতা, কোনো সমাজে এক আল্লাহ, কোনো সমাজে অনিবার্য অপ্রতিরোধ্য জন্মান্তরবাদ। একটি শৃংখলার মাধ্যমে একটি কিংবা বহু বিদেহী সত্তার প্রতি স্থির বিশ্বাসী করে তোলাই ছিল প্রাচীন পৃথিবীর শিক্ষাদর্শনের মূল কথা”।
শিক্ষা কি এবং কেন এই প্রশ্ন আকারে ছোট হলেও এই প্রশ্নের জবাব এক কথায় উপস্থাপন সহজসাধ্য নয়। তবে মানব সভ্যতার ইতিহাস বলে শিক্ষার ইতিহাস মানুষের ইতিহাসের মতোই পুরানো। শিক্ষা মানুষের প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত রূপান্তরিত হচ্ছে, সম্প্রসারিত হচ্ছে, প্রতিনিয়তই নিজের সীমানা নিজে অতিক্রম করছে। শিক্ষার এই কাল পরিক্রমায় আজকের আলোচ্য বিষয় প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের বুদ্ধিজীবীদের শিক্ষাভাবনা অথবা বাংলাদেশের অঘটনঘটনপটীয়ান শিক্ষাব্যবস্থা। প্রাচ্য প্রতীচ্যের কিছু খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবীর শিক্ষাভাবনা এক মলাটে জড়ো করেছেন তরুণ চিন্তাবিদ মিনহাজ উদ্দিন মিরান। সময়ের ধারাবাহিকতায় বুদ্ধিজীবীদের শিক্ষাভাবনা এক মলাটে গাঁথতে গিয়ে সংকলকের সাধনায় আদি অন্তে সক্রেটিস থেকে সলিমুল্লাহ খান হয়ে ‘প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের বুদ্ধিজীবীদের শিক্ষা প্রসঙ্গে’ বইটি পরিব্যপ্ত হয়েছে। তিনি খুঁটে খুঁটে দেখেছেন সকল বুদ্ধিজীবীই মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। শিক্ষাকে আপন করে নেয়ার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার মাতৃভাষা। প্রায়োগিক ও ব্যবহারিক শিক্ষাকে কার্যকর রূপ দিতে মাতৃভাষার জুড়ি মেলা ভার। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে ও বিংশ শতাব্দীর প্রথমে মাধ্যমিক শিক্ষার মাধ্যমরূপে মাতৃভাষাকে গ্রহণ করার জন্য আন্দোলন শুরু হয়। ১৯১৭ সালে স্যাডলার কমিশনে মাধ্যমিক শিক্ষার মাধ্যমরূপে মাতৃভাষাকে গ্রহণ করার জন্য আন্দোলন শুরু হয়। ১৯২১ সালে দ্বৈত শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে নিন্ম মাধ্যমিক স্তরে মাতৃভাষায় শিক্ষার মাধ্যম রূপে ভারতীয় ভাষার প্রচলন শুরু হয় এবং ১৯৩৫ সালে স্বায়ত্ত্বশাসন প্রবর্তনের পর থেকে বিদ্যালয় পর্যায়ে মাতৃভাষা শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে গৃহীত হলেও ইংরেজিই শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে চালু থাকে। তবে ভারতীয় শিক্ষাবিদগ্ণ সর্বস্তরে মাতৃভাষায় শিক্ষাদানে আগ্রহী ছিলেন এবং এর সমর্থনে এক ধরনের আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৪৭ -এর পর স্বাধীন ভারতে মাতৃভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম করার আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। এই আন্দোলনের পুরোভাগে ছিলেন বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ। তিনি সারাজীবন এজন্য আন্দোলন করেছেন, কর্তাব্যক্তিদের কাছে আবেদন নিবেদন করেছেন। মাতৃভাষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে পড়িয়ে প্রমাণ করেছেন যে, মাতৃভাষায় পদার্থবিজ্ঞানের জটিল বিষয়ও শিক্ষাদান সম্ভব। বুদ্ধিজীবীদের চিন্তার এই সম্মিলনকে পাঠকের সামনে তুলে ধরতেই তরুণ চিন্তাবিদ মিনহাজ উদ্দিন মিরানের এই যুগান্তকারী প্রয়াস।
মানুষ শিক্ষাকে সহজ লভ্য এবং আধুনিক করার জন্যে স্থান কাল পাত্র ভেদে শিক্ষা নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা এবং পরিকল্পনা করে এগিয়ে চলছে দিন দিন। সেই গবেষণা এবং পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমরা দেশ হিসেবে এবং জাতি হিসেবে কতটুকু অগ্রসর হতে পেরেছি সেটাই বিবেচ্য বিষয়। সেই তুল্য বিচার করতে গেলে প্রথমেই আমরা ফিরে তাকাবো শিক্ষা বিষয়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ দলিল সংবিধান কি বলে। আমাদের সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে শিক্ষা সম্পর্কে এক সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে: রাষ্ট্র ‘ক. একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য; খ. সমাজের প্রয়োজনের সহিত সঙ্গতিপূর্ণ করিবার জন্য এবং সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করিবার উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছাপ্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য; গ.আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’
কুদরাত-এ ক্ষুদা শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে সদ্য স্বাধীন দেশের শিক্ষাভাবনা, শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যাবলির সংক্ষিপ্ত রূপ এরকম : ‘শিক্ষাব্যবস্থা একটি জাতির আশা-আকাংক্ষা রূপায়ণের ও ভবিষ্যত সমাজ নির্মাণের হাতিয়ার। দেশের সব শ্রেণীর জনগণের জীবনে নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনের উপলদ্ধি জাগানো, নানাবিধ সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা অর্জন এবং তাদের মধ্যে বাঞ্জিত নতুন সমাজতান্ত্রিক সমাজ সৃষ্টির প্রেরণা সঞ্চার আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার প্রধান দায়িত্ব ও লক্ষ্য। তদুপরি শিক্ষার সর্বস্তরে জাতীয় মূলনীতি চতুষ্টয়ের সার্থক প্রতিফলন সুনিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার মূলনীতির সঙ্গে আমাদের সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত জাতীয় নীতিমালা চতুষ্টয়ের যোগসাধন করে বাংলাদেশের শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যাবলি নিন্মরূপে নির্ধারণ করা যায়: জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, দেশপ্রেম ও সুনাগরিকত্ব, মানবতা ও বিশ্বনাগরিকত্ব, নৈতিক মূল্যবোধ ও সামাজিক রূপান্তরের হাতিয়াররূপে শিক্ষা, প্রয়োগমুখী অর্থনৈতিক অগ্রগতির অনুকূলে শিক্ষা, কায়িক শ্রমের মর্যাদাদান, নেতৃত্ব ও সংগঠনের গুণাবলি, সৃজনশীলতা ও গবেষণা এবং সামাজিক অগ্রগতি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক প্রগতির লক্ষ্যে শিক্ষা।’
প্রবাদ আছে, বলিতে আপন দুঃখে পরনিন্দা হয়। তবু প্রশ্ন জাগে সংবিধান মতে রাষ্ট্র সেই ব্যবস্থা কতটুকু গ্রহণ করতে পেরেছে? ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর দীর্ঘ চল্লিশ বছর লেগেছে একটা শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে। শিক্ষানীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে একাধিক কমিশন গঠিত হলেও ২০১০ সালের আগে কোন শিক্ষানীতি আলোর মুখ দেখেনি। ফলে শিক্ষা ব্যবস্থা সার্বজনীন রূপ লাভ করেনি। ১৯৫৯ সালে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছিলেন, পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে সরকার একাধিক শিক্ষা প্রণালী কখনো মঞ্জর করেন না।‘ কিন্তু আমাদের দেশে এখন তিন ধরনের শিক্ষা চলছে। সাধারণ, ধর্মপ্রধান এবং ইংরেজি প্রধান।
আলোচ্য এই বইতে বৃটিশ আমলের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে হাল আমলের শিক্ষানীতি ২০১০ পর্যন্ত সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হয়েছে। সংগতকারণেই একটি প্রশ্ন বড় করে ওঠে এসেছে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাটা কেন আজও কার্যকর করা যাচ্ছে না? আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কেন শিক্ষানীতি অনুসৃত নয়?
অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, ‘আমাদের শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থা তো রাষ্ট্রব্যবস্থা ও বিশ্বব্যবস্থারই অংশ। তবু সরকার চাইলে এরই মধ্যে ভালো অনেক কিছু করতে পারত-করতে পারে। শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে বাংলাদেশের সংবিধানে কিছু কথা লেখা আছে। সংবিধানে লেখা আছে একমুখী প্রাথমিক শিক্ষার কথা। কিন্তু কোনো সরকারই তা মান্য করছে না। বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা এখন চৌদ্দভাগে বিভক্ত। এটা সংবিধানের ও রাষ্ট্রের স্বার্থের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। জাতীয় শিক্ষানীতিতে (২০১০) কি লেখা আছে সেটা এখন বড় কথা নয়, সাম্রাজ্যবাদের অনুসারী হয়ে সরকার কি করছে, বাস্তবে শিক্ষাব্যবস্থার রূপ ও প্রকৃতি কেমন দেখা যাচ্ছে, সেটাই বড় কথা।
গত আট বছর ধরে সরকার মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মূলধারার (এনসিটিবি যে ধারার পাঠ্যপুস্তকের জোগান দেয়) প্রতি যথোচিত গুরুত্ব না দিয়ে এবং ধর্মীয় ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির চাপে শিক্ষাব্যবস্থাকে অত্যন্ত বেশি জটিল করে তুলেছে। সরকারি ধারার অনেক লোকে এবং সরকারও এমন কিছু কাজ করে আসছে যেগুলো ধর্মীয় শক্তির জন্য উস্কানিমূলক হয়েছে। মূলধারার শিক্ষাকে সরকার যে রূপ দিয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য তা মোটেই কল্যাণকর নয়। সরকার শিক্ষার বিশ্বমানের কথা বলে সাম্রাজ্যবাদী নীতির অন্ধ অনুসারী হয়ে চলছে। এতে জাতির আত্মসত্তা দারুণভাবে বিপর্যস্ত। সরকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা, হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, বৌদ্ধধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, খ্রিস্টধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা চালু করেছে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে এগুলো থেকে একটি পড়তে হয়। কিন্তু গণতন্ত্র ও নৈতিক শিক্ষা, সমাজতন্ত্র ও নৈতিক শিক্ষা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও নৈতিক শিক্ষা, জাতীয়তাবাদ ও নৈতিক শিক্ষা চালু করেনি। সরকার সাম্প্রদায়িকতা, অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্মনিরপেক্ষতা ইত্যাদি কথা বলে এবং কখনো কখনো নানা রকম উস্কানিমূলক কাজের দ্বারা প্রতিপক্ষকে সক্রিয় করে কি অর্জন করতে চায়, তা বোঝা যায় না। তবে এটা বোঝা যায় যে, সরকার, সরকারি দল ও অন্যান্য দল অনেক কিছু করে কেবল ক্ষমতার জন্য। ‘প্রত্যেক বুদ্ধিজীবীর চিন্তাধারা নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব হলে আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে আরো পরিষ্কার ধারনা পাওয়া যেতো। প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের বুদ্ধিজীবীদের শিক্ষা প্রসঙ্গে মাত্র ৩০৬ পৃষ্ঠার একটি বই শিক্ষা নামক মহাসাগরের একটি বিন্দুমাত্র বলা চলে। সুতরাং শিক্ষাক্ষেত্রে বুদ্ধিজীবীদের চিন্তার সুফল আহরণ করতে হলে এই বিষয়ে আরো পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা এবং মূল্যায়ন প্রয়োজন।
সংকলনটি দুটি পর্বে বিভক্ত। খ্রিস্টপূর্ব ৫৫১ অব্দ থেকে শুরু করে হাল আমল পর্যন্ত খ্যাতিমান অনেক বুদ্ধিজীবীর শিক্ষাচিন্তা এই বইতে স্থান পেয়েছে। শিক্ষার আদ্যপান্থ জানতে বইটা বেশ সহায়ক একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। তবে দুঃখের বিষয় অপ্রত্যাশিত মুদ্রণ প্রমাদ বইটার সৌন্দর্য হানি করেছে। যা মোটেও কাম্য নয়। বিষয়ের গুরুত্ব বিবেচনায় আমি বইটার সাফল্য এবং বহূল প্রচার কামনা করি।