
গতকাল (৮ জুন) সূর্যাস্তের আলো দেখতে গিয়েছিলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ-তে। সকাল এগারোটায়। গত কয়েকদিনের অসহনীয় তাপে ঢাকা মহানগর হাঁসফাঁস করলেও ওখানে তখন টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছিলো। থিকথিকে কাদা জমে গিয়েছিল রাস্তায়। পরে সে বৃষ্টি শহরের সব এলাকায় আশীর্বাদ হয়ে ঝরেছে।
আগে থেকে বলে রেখেছিলাম। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইমার্জেন্সির গেটেই দাঁড়ানো ছিল রুবেল। বললো এপ্রন ছাড়া ঢোকা বারণ। আমি আর জালাল দুটো এপ্রন কিনে রুবেলের সাথে চললাম। ইমার্জেন্সির চার তলায়। লিফটের তিন।
আইসিইউর মুখে তিন চার জনের ছোট্ট জটলা। যে ভাস্তিটি তাঁর সাথে থাকতো, মানে এখনো থাকে, সে, দাদার ছোট বোন, আরো দুই কি তিন জন। আইসিইউতে ঢোকা নিষেধ। তবু ভাবলাম ঢুকবো। কেউ মানা করলো না। এপ্রন, ফেইস মাস্ক, হেড গিয়ার পরে নিলাম। ভিজিটর্স বুকে নাম লিখলাম। রুবেল বললো, ঢুকেই ডান পাশের বেডে। ঢুকলাম। দেখলাম সূর্য শেষ বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দ্বিপ্রহরের সেই প্রখর তেজ তো কবেই নিষ্প্রভ হয়ে গেছে। তার আলো এখন একেবারেই ম্রিয়মান। কুপির আলোয় দেয়ালে কাঁপা ছায়ার মতো।
বিদায় লগ্নে কোথাও কোনো তোড়জোড় নেই। উপচে পড়া কান্না নেই। কোনো দীর্ঘশ্বাস নেই। আলো আছে, কিন্তু চারদিক থেকে আলকাৎরার মতো তরল কালো আঁধার তাকে এমনভাবে ঘিরে ফেলেছে যে দেখলে মনে হয় আলো যেন নিজেও অন্ধকারের কালো এপ্রনে সারা দেহ মুড়িয়ে নিয়েছে।
রণক্লান্ত বিদ্রোহী শুয়ে আছেন স্থির প্রস্তরমূর্তির ন্যায়। সম্বিতহীন। দুটো চোখ বন্ধ। চেহারায় প্রচণ্ড কষ্টের ছাপ।বিরাশি বছরের জীবনের বলতে গেলে সবটুকুইতো ব্যয় করেছেন এদেশের স্বাধীনতা ও জনগণের কল্যাণে। স্বস্তি বলতে যা বোঝায় একদিনের জন্যও তা পাননি। অসুরের মতো খেটেছেন। নাওয়া খাওয়া নিদ্রাহীন কাটিয়েছেন দিনের পরে দিন। পাকিস্তানের মতো মিলিটারি শাসিত একটা দেশে ছাত্র শ্রমিক ও যুব সমাজকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করে তোলা যে কি অসাধ্যসাধনতূল্য তা ১৯৬০-এর দশকের সিরাজুল আলম খানকে যারা দেখেছে, তাঁর সাথে যারা রাজনীতি করেছে, কেবলমাত্র তারাই জানে। অন্যেরা তা কল্পনাও করতে পারবে না।
বেডের এ পাশে বসে আছেন সবার ছোট ভাই পেয়ারুর স্ত্রী, যিনি ব্যারিস্টার ফারাহ খানের মা। দু'তিন জন ডাক্তার বেডের ওপাশটায় মনিটরগুলোর দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে হার্টবিট, প্রেশার, অক্সিজেন সেচুরেশন, টেম্পারেচার এসব দেখছেন। দু'জন ডাক্তার হাঁড়ের উপর চামড়া বসে যাওয়া পা দুটোতে কিছু একটা করার জন্য হাত ছোঁয়াতেই একেবারে শিশুর মতো চিৎকার করে উঠলেন। জ্ঞানহীন, তবু কষ্টের অনুভূতিটা আছে। মিনিট পনের তাঁর রোগশয্যাপাশে কাটিয়ে তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আইসিইউ থেকে বেরিয়ে এলাম। কুল্লু নাফসিন যায়েকাতুল মাউত। সব জীবিতসত্ত্বাকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।
পরিণত বয়সে মৃত্যু অনভিপ্রেত বা অকাম্য কিছু নয়। তবে সে যেন নানাবর্ণের সুগন্ধ পুষ্পসাজেসজ্জিত হাস্যোৎফুল্ল প্রেমাস্পদের বেশে আসে। নির্যাতকের রূপে নয়।
জীবিত সিরাজুল আলম খানের সাথে আর দেখা হবে কি না জানি না। ১৯৬৬ সালে ছাত্র লিগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে ঢাকায় তাঁর সাথে পরিচয়। ছয় দফা আন্দোলন, আগরতলা মামলার প্রতিবাদে গড়ে ওঠা এগারো দফা আন্দোলন, ১৯৭০-এর জাতীয় নির্বাচন, জয় বাঙলা, স্বাধীনতার প্রথম পতাকা, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলো, পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাঙলাদেশে জাসদের গঠন ও জাসদের সমর্থক দৈনিক গণকণ্ঠ প্রতিষ্ঠা ও তা'তে কাজ করতে গিয়ে তাঁর সাথে আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছি। তাঁর স্নেহ পেয়ে ধন্য হয়েছি। গণকণ্ঠের মাধ্যমে সারাদেশে জাসদের প্রচার কাজে জড়িত থেকেছি। সমাজতান্ত্রিক সমাজ গঠনের স্বপ্নে সেই যে বিভোর হয়েছি সে ঘোর এখনো কাটেনি। কাটবেও না কখনো।
যারা স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রভাগের নেতা, সংগঠক ও যোদ্ধা ছিলেন তারা সব সময় সিরাজুল আলম খানকে শ্রদ্ধা ও সম্মানের চোখে দেখেছেন, অকপটে তাঁর অবদান স্বীকার করেছেন। স্বাধীনতার প্রস্তুতিপর্বে ছাত্র-শ্রমিকদের সংগঠিত করা, মুক্তিবাহিনীর গঠন, প্রশিক্ষণ, দেশের অভ্যন্তরে প্রেরণ ইত্যাদিতে তাঁর মূখ্য ভূমিকার কথা বিনম্রচিত্তে স্বীকার করেছেন।
স্বাধীন বাঙলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অঙ্গীকারসমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই তিনি শতভাগ মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে এদেশের প্রথম গণসমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল জাসদ গঠন করেন। উদ্দেশ্য ছিল, স্বাধীন বাঙলাদেশে ঔপনিবেশিক আমলের রাষ্ট্রকাঠামো ও শাসন পদ্ধতি বাতিল করে একটি স্বাধীন গণমুখী শোষণমুক্ত সমাজ কায়েম করার লক্ষ্যে পাকিস্তান আমলের প্রচলিত প্রশাসনব্যবস্থার বদলে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে একটি সর্বদলীয় জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করা।
বাঙলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পরেই যে নামটি সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়ে প্রতিভাত হবে সেটি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সংগঠক ও স্বাধীনতার অন্যতম প্রধান কারিগর সিরাজুল আলম খান।
হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পথে মনে হলো রোগ জরা যন্ত্রণা ও মৃত্যুর কাছে মানুষ কতোটাই না অসহায়! যদি দেখতাম উত্তর দেবার ক্ষমতা আছে তা'হলে একটাই শুধু প্রশ্ন করতাম - দাদা, যারা নিজেদের সব কিছু দিয়ে দেয় তারা নিশ্চয় কিছু একটা পায়। সে পাওয়াটা আপনিও নিশ্চয় পেয়েছেন। সেটা কি? সে প্রশ্ন হয়তো আর কখনোই তাঁকে করা হবে না।
ফেরার পথে জীবনানন্দের পংক্তিগুলো মাথার ভেতরে বকুল ফুলের মতো টুপটাপ ঝরে পড়ছিলো,
"সব রাঙা কামনার শিয়রে যে দেয়ালের মত জাগে ধূসর মৃত্যুর মুখ!
এ জীবনে স্বপ্ন ছিল সত্য ছিল যাহা নিরুত্তর শান্তি পায়
যেন কোন মায়াবীর প্রয়োজনে লাগে,
রোদ নিভে গেলে পরে পাখি পাখালির ডাক শুনিনি কি,
প্রান্তরের কুয়াশায় দেখিনি কি উড়ে গেছে কাক?"
নড়াইল সদর উপজেলার চন্ডিবরপুর ইউনিয়নে দিনব্যাপী বিনা মূল্যে ১২শতাধিক রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছে। একই সাথে বিনা মূল্যে ওষুধ প্রদান করা হয়েছে। নড়াইলের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শরীফ আতিয়ার রহমান স্মৃতি সংসদ ও মানবিক জঙ্গল গ্রামের যৌথ আয়োজনে এ চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়।
মেডিকেল ক্যাম্পে ২২জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। এছাড়া বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি নড়াইল ইউনিটির উদ্যোগে বিনামূল্যে রক্ত পরীক্ষা, গ্রুপ নির্ণয় এবং ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে জঙ্গলগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী।
শিক্ষাবিদ মরহুম শরীফ আতিয়ার রহমানের বড় ছেলে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ডাক্তার শরীফ জাহাঙ্গীর আতীক বলেন, আমার পিতা মরহুম শরীফ আতিয়ার রহমান একজন শিক্ষাবিদ ছিলেন। পিতার আত্মার মাগফেরাত কামনাসহ তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে আমাদের পরিবারের ৬জন চিকিৎসক প্রতি মাসের শেষ শুক্রবারে সারা দিনব্যাপী বিনা মূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি।
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি নড়াইল ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইসমাইল হোসেন লিটন বলেন, বিভিন্ন এলাকায় বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্প এবং মরহুম শরীফ আতিয়ার রহমানের বাড়িতে প্রতিমাসের শেষ শুক্রবার বিনামূল্যে রোগী দেখা হয়। এটি নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। মেডিকেল ক্যাম্প সুষ্ঠভাবে সম্পন্নের জন্য যুব রেডক্রিসেন্টের সদস্যরা সার্বিক সহযোগিতা করে আসছে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন আজ। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মহানায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ৫ সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ শেখ হাসিনা। গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সরকারি ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজের ছাত্র সংসদের সহসভাপতি ছিলেন। তিনি এই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরের বছর সভাপতি ছিলেন। শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একজন সদস্য এবং ছাত্রলীগের রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই শেখ হাসিনা সকল গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা সে সময় পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় বেঁচে যান।
পরবর্তীকালে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে ৬ বছর ভারতে অবস্থান করেন। ১৯৮০ সালে ইংল্যান্ডে থেকে তিনি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে সর্বসম্মতিক্রমে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে অবশেষে তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন।
১৯৮১ সালে দেশে ফিরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার পরপরই তিনি শাসকগোষ্ঠির রোষানলে পড়েন। তাকে বারবার কারান্তরীণ করা হয়। তাঁকে হত্যার জন্য কমপক্ষে ১৯ বার সশস্ত্র হামলা করা হয়।
১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সামরিক সরকার তাকে আটক করে ১৫ দিন অন্তরীণ রাখে। ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি এবং নভেম্বর মাসে তাঁকে দু’বার গৃহবন্দী করা হয়। ১৯৮৫ সালের ২রা মার্চ তাকে আটক করে প্রায় ৩ মাস গৃহবন্দী করে রাখা হয়। ১৯৮৬ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে তিনি ১৫ দিন গৃহবন্দী ছিলেন। ১৯৮৭ সালে ১১ নভেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করে এক মাস অন্তরীণ রাখা হয়।
১৯৮৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হয়ে গৃহবন্দী হন। ১৯৯০ সালে ২৭ নভেম্বর শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধু ভবনে অন্তরীণ করা হয়। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাঁকে গ্রেপ্তার করে সংসদ ভবন চত্বরে সাবজেলে পাঠায়। প্রায় ১ বছর পর ২০০৮ সালের ১১ জুন তিনি মুক্তিলাভ করেন।
শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে উল্লেখযোগ্য হামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনকালে তাকে লক্ষ করে পুলিশের গুলি বর্ষণ। এতে যুবলীগ নেতা নূর হোসেন, বাবুল ও ফাত্তাহ নিহত হন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তাকেসহ তার গাড়ি ক্রেন দিয়ে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিংয়ের সামনে শেখ হাসিনাকে লক্ষ করে এরশাদ সরকারের পুলিশ বাহিনী লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় শেখ হাসিনা অক্ষত থাকলেও ৩০ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী শহীদ হন। লালদিঘি ময়দানে ভাষণ দানকালে তাকে লক্ষ্য করে ২বার গুলি বর্ষণ করা হয়। জনসভা শেষে ফেরার পথে আবারও তার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করা হয়।
১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য বারবার হামলা করা হয়। ১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচন চলাকালে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়।
১৯৯৪ সালে ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে তাঁর কামরা লক্ষ্য করে অবিরাম গুলিবর্ষণ করা হয়। ২০০০ সালে কোটালীপাড়ায় হেলিপ্যাডে এবং শেখ হাসিনার জনসভাস্থলে ৭৬ কেজি ও ৮৪ কেজি ওজনের দু’টি বোমা পুতে রাখা হয়। শেখ হাসিনা পৌঁছার পূর্বেই বোমাগুলো শনাক্ত হওয়ায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান। বিএনপি সরকারের সময় সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা হয় ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট। ঐদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে এক জনসভায় বক্তব্য শেষ করার পরপরই তাকে লক্ষ করে এক ডজনেরও বেশি আর্জেস গ্রেনেড ছোঁড়া হয়। লোমহর্ষক সেই হামলায় শেখ হাসিনা প্রাণে রক্ষা পেলেও আইভি রহমানসহ তার দলের ২২ নেতা-কর্মী নিহত হন এবং প্রায় ৫০০ মানুষ আহত হন। শেখ হাসিনা নিজেও কানে আঘাত পান।
রক্তাক্ত আগস্টের হৃদয়বিদারক ক্ষত বুকে নিয়ে, স্বজন হারানো শেখ হাসিনা দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিলে তিলে নিজেকে তৈরী করেছেন বাংলার জনগণের মুক্তির কান্ডারি হিসেবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এতো ত্যাগ, এতো নির্যাতন আর কোন নেতাকে সইতে হয়নি। একজন শেখ হাসিনা ঝুঁকিপূর্ণ জীবন কাঠিয়ে হয়ে উঠেছেন আজ নির্ভরতার প্রতিক।
শত বাধা-বিপত্তি এবং হত্যার হুমকিসহ দেশী বিদেশি ষড়যন্ত্র অতিক্রম করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অবিচল থেকে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন দুই দশক। তার নেতৃত্বে একুশ বছর পর বাংলাদেশের জনগণ অর্জন করেছিল গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও আইনের শাসন।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আত্মমর্যাদা আর স্বনির্ভর হওয়ার পথকে থামিয়ে দিতে আবারও ষড়যন্ত্র। আবারও বাংলাদেশ কে পেছনে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্রে ৭১ ও ৭৫ এর ঘাতকরা যখন একাট্টা তখন একজন শেখ হাসিনাকেই বাংলাদেশকে টেনে তুলতে হয়েছে অন্ধকারের গহবর থেকে। বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল সরকার প্রধান হিসেবে আজ তিনি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ পেয়েছে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার চারিত্রিক দৃঢ়তা ও সুস্পষ্ট অঙ্গীকারের কারণে।
দেশের রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও ক্ষমতার ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে শেখ হাসিনাকেও বিভিন্ন সময় আপোষ করতে হয়েছে। দলের ভেতরে, বাইরে মেনে নিতে হয়েছে অনেক অযৌক্তিক কর্মকাণ্ড। কিন্তু নিজের আরাধ্য পথ থেকে কখনও বিচ্যুত হননি তিনি। দৃপ্ত অঙ্গীকারে ছুটে চলেছেন বাংলাদেশের স্বপ্ন সারথি হিসেবে। নির্মম আর নিষ্ঠুর বাস্তবতাকে মোকাবিলা করে তার অপরিসীম আত্মত্যাগের ফলেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।
জননেত্রী থেকে এখন বিশ্বনেত্রীতে পরিণত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রবক্তা স্বপ্নদর্শী এই নেত্রী ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণের পর থেকে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে দলকে সুসংগঠিত করেন। তিনবার জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা এবং চারবার সংসদ নেতা, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে নিজের নেতৃত্বকে নিয়ে যান অনন্য উচ্চতায়।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এখন বিশ্বের বিস্ময়কর নেতৃত্ব। দেশ ছাপিয়ে বৈশ্বিক বিষয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তা চেতনা ভূ-রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক। তিনি এক জীবন্ত ইতিহাস।
একবিংশ শতকের অভিযাত্রায় তিনি কীভাবে বাঙালি জাতির কাণ্ডারি হয়েছেন তা এখন ইতিহাসের অনুসন্ধানের বিষয়। বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখতেন সেই স্বপ্ন রূপায়নের দায়িত্ব নিয়ে বাঙালি জাতির আলোর দিশারি হওয়ার ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছেন তারই তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা।
গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলের জন্য জাতিসংঘ কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে একটি রোল মডেল হিসেবে পরিচিত করেছেন। সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনেও তিনি বিশ্ব নেতাদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। মিয়ামনারে জাতিগত সহিংসতায় পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয় দিয়ে সারা বিশ্বে হয়েছেন প্রশংসিত। বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি, একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য সম্পন্ন করা, সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃ প্রতিষ্ঠা, ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্র সীমা বিরোধ নিষ্পত্তি এবং সমুদ্রে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ব্লু ইকোনমির নতুন দিগন্ত উন্মোচন, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন ও ছিটমহল বিনিময়, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সফল উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ জয়, সাবমেরিন যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ।
মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন নতুন উড়াল সেতু, মহাসড়কগুলো ফোর লেনে উন্নীত করা, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭৪ বছর ৪ মাসে উন্নীত, যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন, সাক্ষরতার হার ৭৫.৬০ শতাংশে উন্নীত করা, বছরের প্রথম দিনে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর হাতে বিনা মূল্যে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া, মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতি দান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, প্রত্যেকটি জেলায় একটি করে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ, নারী নীতি প্রণয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, ফাইভ-জি মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহার চালুসহ অসংখ্য ক্ষেত্রে কালোত্তীর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
একজন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। জনকল্যাণমুখী বহুবিধ কার্যক্রমে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রের দিকে। তাঁরই অভিপ্রায়ে বাস্তবায়িত পদ্মাসেতুসহ সহ অসংখ্য মেগাপ্রজেক্ট বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। ভয়াবহ করোনা সংক্রমণের অভিঘাত মোকাবিলা করে উন্নত বিশ্বেও হয়েছেন সমাদৃত। বৈশ্বিক সংকট, অর্থনৈতিক মন্দা ও ক্ষমতাধর রাষ্ট্র সমূহের নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আত্মপ্রত্যয়ী শেখ হাসিনা ছুটে চলেছেন নির্ভীক সংশপ্তক হিসেবে।
টেকসই উন্নয়ন ও মানবিক কল্যাণে শেখ হাসিনার এসব যুগান্তকারী পদক্ষেপ বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।
বাঙালির স্বপ্ন সারথি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সমকালীন বিশ্বের আলোচিত নাম। তার দর্শন, রাষ্ট্রচিন্তা আর জীবনবোধ বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছে উন্নত রাষ্ট্রের দিকে। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে এটা নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য গৌরবের। তার অন্তর্গত উজ্জ্বলতা ও স্নেহসিক্ত, মমতাপূর্ণ হৃদয় সকল কর্মীদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার, সফল রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। অভিবাদন।
লেখক : সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মী।
সম্মোহনী নেতৃত্বের সমান্তরালে শেখ হাসিনাকে রূপান্তরের নেতৃত্বও বলা যায়; যে দুটো গুণ বঙ্গবন্ধুর মধ্যেও ছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু সময় পেয়েছিলেন ১,৩১৪ দিন; যে সময়ে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশ যে অনেক বদলে গেছে, তার প্রমাণ বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক সূচকে প্রতীয়মান। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি যে ভালোবাসা তা অনন্য। দেশের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে তার উন্নয়নের যাদুর কাঠির স্পর্শে সজীব হয়নি। এখন এটি ধ্রুব সত্য যে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।
প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনা এবং গতিশীল নেতৃত্বে দেশ করোনা মহামারি দক্ষতার সাথে মোকাবেলায় সমর্থ হয়। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রেরিত একটি বার্তায় বাংলাদেশকে এশিয়ার মধ্যে একটি নেতৃত্বশীল দেশ হয়ে ওঠায় প্রশংসা করা হয়েছে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে পররাষ্ট্র নীতিতে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার কৌশল, পাশাপাশি এশিয়ার দু'টি বৃহৎ রাজনৈতিক পরাশক্তি চীন এবং ভারতকে আস্থায় রেখে নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতির কৌশল বিশ্ববাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছে। এমনকি খোদ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও এ ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট।
দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সম্ভাবনার নতুন দিগন্তে বাংলাদেশ। দীর্ঘদিন নেতৃত্বে থেকে শেখ হাসিনা সত্যিই বদলে দিয়েছে বাংলাদেশ। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত একটি বড় অর্জন। বিশ্বের বুকে আজ বাংলাদেশ মর্যাদার আসনে দাঁড়িয়েছে। গোটাবিশ্ব দেখেছে বাংলাদেশের উন্নয়ন সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার ম্যাজিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় ও সাহসী নেতৃত্বের কারণেই বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কাছে জনগণের প্রত্যাশাটাও অনেক বেশি। তবে সবচেয়ে বেশি কঠিন ছিল শেখ হাসিনার এগিয়ে চলার পথ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে ছাত্রজীবন থেকে প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। বর্তমানে শুধু জাতীয় নেতাই নন, তিনি আজ একজন বিচক্ষণ বিশ্বনেতা হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাহসী নেতৃত্ব জনগণের কাছে আদর্শ ও অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে আছেন দেশের দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতা শেখ হাসিনা।জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে যত রাজনৈতিক বিতর্ক থাকুক না কেন, অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়ন পরিকল্পনার অটল বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার মূল কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। শেখ হাসিনার যুগোপযোগী ও ক্যারিশম্যাটিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব, চারিত্রিক দৃঢ়তা, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা একটি পড়ন্ত-ক্ষয়িষ্ণু রাজনৈতিক দলকে উজ্জীবিত, গতিশীল ও সক্ষম দলে পরিণত করেছে। দলকে টানা দীর্ঘতম সময় ধরে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রাখার একক কৃতিত্ব শেখ হাসিনার। সেই ১৯৮১ সালে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে তিনি প্রথমে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামোকে সুসংহত করেন এবং স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নিজেকে জাতীয় রাজনীতির অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্রে পরিণত করেন।
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে পিতা-মাতাসহ পরিবারের প্রায় সব সদস্যের মৃত্যুর পর থেকে দেশে বৈরী রাজনৈতিক পরিবেশ, বিলুপ্তপ্রায় আওয়ামী লীগকে অন্যতম রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত করা, একুশ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকার পর ১৯৯৬ সালে দলকে পুনরায় ক্ষমতায় নিয়ে আসা, নিজের সুযোগ্য নেতৃত্বের স্বাক্ষর রেখে যাওয়া এবং ৭ বছরের মধ্যে সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগকে দেশের একক রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত করার ইতিহাস এখনও গল্পের মতো মনে হয়। এর পেছনে রয়েছে পিতার কাছ থেকে পাওয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বের শিক্ষা এবং কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেকে সময়ের সাথে মানিয়ে নেয়ার মধ্য দিয়ে সংকট উত্তরণের অনুকরণীয় রাজনৈতিক শিক্ষা ও নিরলস চেষ্টা। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কঠিন বাস্তবতার মধ্যেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার স্থিতিশীল ধারাক্রম বিশ্বে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মূল্যায়নে গত এক দশকে তৃতীয় বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। এ কৃতিত্ব শেখ হাসিনা এবং তার সুযোগ্য নেতৃত্বের। দল, সরকার এবং রাজনীতিতে তিনি ইতোমধ্যে অপরিহার্য একক শক্তিতে পরিণত হয়েছেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধিতে দেশের প্রতিটি জেলায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। বর্তমানে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঈর্ষণীয়। স্বপ্নের পদ্মাসেতু দৃশ্যমান , বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ, মেট্রোরেল চালু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়ন, উপজেলাভিত্তিক মডেল মসজিদ প্রতিষ্ঠা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমৃদ্ধ জনপদে পরিণত হয়েছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সরকার প্রধান থাকায়, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি, একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য সম্পন্ন করা, সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি এবং সমুদ্রে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাসহ অসংখ্য ক্ষেত্রে কালোত্তীর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের নতুন সংযোজন স্মার্ট বাংলাদেশ, যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হচ্ছে বর্তমান সরকার কর্তৃক। 'স্মার্ট বাংলাদেশ' বলতে স্মার্ট নাগরিক, সমাজ, অর্থনীতি ও স্মার্ট সরকার গড়ে তোলা হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও আর্থিক খাতের কার্যক্রম স্মার্ট পদ্ধতিতে রূপান্তর হবে। এ জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন এবং এর উন্নয়নে একটি দক্ষ ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন কার্যক্রম ডিজিটাইজেশন করা হবে। ২০৪১ সাল নাগাদ একটি 'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ে তোলা সরকারের নতুন রূপকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে সারা বছর ধরে বিভিন্ন সরকারি সেবা সহজীকরণ করতে এটুআই বেশ কিছু ডিজিটাল প্রোগ্রাম উদ্ভাবন ও বাস্তবায়ন করেছে। বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে উন্নীত করার লক্ষ্যে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' এর সফল বাস্তবায়ন সরকারকে 'ভিশন-২০৪১' এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে একটি উদ্ভাবন ও জ্ঞানভিত্তিক 'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ার নতুন লক্ষ্য গ্রহণ করতে উৎসাহ যুগিয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশের প্রত্যেকটা সিটিজেন প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবে। স্মার্ট সিটিজেন উইথ স্মার্ট ইকোনমি; অর্থাৎ ইকোনমির সমস্ত কার্যক্রম এই প্রযুক্তি ব্যবহারে সম্পন্ন হবে। স্মার্ট গভর্নমেন্ট; ইতোমধ্যে এটি অনেকটা বাস্তবায়ন হয়েছে । মূল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে আমাদের সমস্ত সমাজটাই হবে স্মার্ট সোসাইটি যা সময়ের অপেক্ষা মাত্র। সুতরাং বলা যায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিভিত্তিক, জ্ঞানভিত্তিক এবং উদ্ভাবনী বাংলাদেশ। স্মার্ট সিটি ও স্মার্ট ভিলেজ বাস্তবায়নের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট ট্রান্সর্পোটেশন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, নগর প্রশাসন, জননিরাপত্তা, কৃষি, ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে।
পরিশেষে বলতে চাই, নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও প্রতিকূলতার মধ্যেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যেভাবে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে চলছে তার তুলনা নেই। বিশেষত বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক ঋণচুক্তি বাতিলের পরও পদ্মাসেতুর মতো মেগা প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়নসহ অবকাঠামোখাতে দেশকে আমূল পাল্টে দেয়ার মতো উন্নয়নের কৃতিত্ব শেখ হাসিনার। তার ব্যক্তিগত দৃঢ়তা ও সাহসী নেতৃত্বের কারণেই তা সম্ভব হয়েছে। এটি স্বীকার করতে হবে, দেশের এই সত্যিকারের বদলে যাওয়ার প্রধান রূপকারই হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘তলাবিহীন ঝুড়ির’ অপবাদকে চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশ এখন সারাবিশ্বের সামনে উন্নয়নের রোল মডেল। জাতীয়-আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র এবং নানা চড়াই-উতরাই ও অন্ধকারের যুগ পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন-সমৃদ্ধির মহাসোপানে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ গোটাবিশ্বের সামনে এক বিস্ময়ের নাম। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের নতুন সংযোজন স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে অনন্য উচ্চতায় আসীন হবে বাংলাদেশ।
লেখক: সাবেক সহ-সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।
শরতের আকাশে মেঘের ভেলা। আজও জানালায় উঁকি দিয়ে তা দেখেছি। গোধুলি করে ঠিক দিনের অন্তিম ক্ষণে কাশবনের প্রান্ত ঘেষে রঙধনু পরখ করা। অশান্ত মনকে দমন করার ক্ষেত্র, ফলত প্রস্তুত হয় নাই। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের মত করে যেন! উপরন্ত শেখ হাসিনাকে ছাড়া বাংলাদেশ, চিন্তাই করা যায় না। মনের মধ্যে শান্তি নেই। গাছের ছায়াই তো নেই বাংলার রাজ্যের প্রকৃতিতে। আমাদের শ্রেষ্ঠ মানুষটিই যে দেশে নেই। এই মুহূর্তের অবকাশ হল, অহেতুক উপদ্রবের মত করে! কোনো ছুটি নেই, যদিও আগামী তিন দিন বিশ্রাম নেয়ার মতই উপলক্ষ। কিন্তু, একজন শেখ হাসিনাকে ছাড়া দেশটি এতিমের মত। চলা যায় না। প্রিয় জননেত্রী, বাংলাদেশ তোমার অপেক্ষায়! এদিকে আজকের এই বিশেষ দিনে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয়, প্রিয় মা তুল্য নেত্রী, আপনাকে দেশের নেতৃত্ব দিয়ে যেতে হবে। অনিশেষ শ্রদ্ধায় বলছি, শুভ জন্মদিন!
এদিকে কোথাও যেন একটা ষড়যন্ত্রের গন্ধ রয়েছে। ওরা নীল আকাশে অন্ধকারের আয়োজনে যেয়ে প্রতীকী রুপ নিয়ে যেন অপেক্ষারত! ঝড় আনতে চায়! রাজনৈতিক অপশক্তি হয়ে প্রিয় অন্তরীক্ষে কালোশক্তির মত করে ওরা মেঘ জমিয়েছে। বিশ্বাস আছে, আমাদের শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক সত্তা শেখ হাসিনার বিনীত উদ্যোগে ওদের আস্ফালন বন্ধ হবে। আসবে হেমন্ত, আসন্ন শীতে বিজয় উৎসবে মাতবে বাংলাদেশ। যারা মুক্তিযুদ্ধ করে এই দেশকে স্বাধীন করেছিল, তাদের মুখে হাসি ফিরবেই। বাংলাদেশ কথা বলতে জানে। যা একদিন মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর শ্লেষে দেখেছিল তামাম পৃথিবী। আর এখন দেখাচ্ছেন একজন শেখ হাসিনা।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৮তম অধিবেশনের ফাঁকে ইউএনজিএ প্ল্যাটফর্ম অব উইমেন লিডারদের বার্ষিক সভায় শেখ হাসিনা বললেন, নারীদের জীবনে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলতে তাদের অবশ্যই নেতৃত্বের অবস্থানে থাকতে হবে।
শেখ হাসিনা দীপ্ত উচ্চারণে থেকে বলেন, ‘আমাদের কর্মকাণ্ডকে অংশগ্রহণ থেকে নেতৃত্বে উন্নীত করতে হবে এবং নেতৃত্বের ক্ষেত্রে জাতিসংঘকে অবশ্যই উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। এটা দুঃখজনক যে জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে এখন পর্যন্ত কোনও নারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সময় এসেছে, আমরা শিগগিরই একজনকে পাবো।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক ছদ্মাবরণে সাংস্কৃতিক পরিক্রমার ফলাফল খোঁজার চেষ্টা তাকে মহান করে। সত্যটা বলার যে সাহস তিনি অর্জন করেছেন, তা শুধুই ধারণ করা যায়। একজন পুরোদস্তুর ধার্মিক মানুষটির সত্য বচনের ধার এতটাই, যা চলার পথে উদাহরণ হয়ে যায়। তিনি একবার বলেছিলেন, মুক্তমত প্রকাশের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় অনূভুতিতে কেহ যেন আঘাত করার অপচেষ্টা না করে। আবার তিনিই সব সময় বলে থাকেন, কাউকে হত্যা করে তথা জঙ্গিবাদকে ধারণ করার মধ্য দিয়ে ইসলামের বিজয় সাধিত হয় না। ইসলাম শান্তির ধর্ম।
এই শান্তির খোঁজেই প্রিয় বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দাঁড়িয়ে আছে। পুরো বিশ্ব তা দেখছে। বৈশ্বিক শান্তি রক্ষায় সর্বোচ্চ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে বাংলাদেশ, তা কি কেহ অস্বীকার করতে পারে ?
শেখ হাসিনা আধুনিক বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক মিরাকল। তিনি কী করেননি? কী পারেননি? আন্দোলন করে স্বৈরাচারী সরকার বিদায় করেছেন। ২৩ বছর পর স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি দেশের শাসনভার পায় তার নেতৃত্বে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন, জাতির জনকের হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে। এমন অসাধ্য কাজ সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। ২৩ বছর ক্রমাগত নির্যাতন, নিপীড়নের পরেও একটি দল টিকে ছিল এটাই তো এক বড় বিস্ময়। শেখ হাসিনা হাল না ধরলে তা কতটুকু সম্ভব হতো তা ঐতিহাসিক আর রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে বরাবরই বড় একটি আলোচনার বিষয়।
শেখ হাসিনাকে মিরাকল কেন বলছি? কারণ, তার এমন কিছু রাজনৈতিক গুণের প্রমাণ আমরা দেখেছি যেগুলো বিস্ময়ের উদ্রেক করে। তিনি দলের এমন এক অবস্থানে ছিলেন, যেখান থেকে চাইলেই শুধু নির্দেশ জারি করেও দল চালাতে পারতেন। এতো পরিশ্রম না করলেও পারতেন। কিন্তু এটা যে সাধারণ মানের নেতাদের ভাবনা। শেখ হাসিনার ভাবনা ভিন্ন, তিনি অসাধারণ, তার ভাবনা ও কাজও তাই। দেশের ৬৪টি জেলা, সাড়ে চার হাজার ইউনিয়নের সাংগঠনিক অবস্থা তার নখদর্পণে। তিনি জানেন কোথায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন, কোথায় তার কোন নেতাকর্মীর ত্যাগ, অবদান কতটুকু, কে বঞ্চিত আর কে আখের গুছিয়েছে। এমন বিচক্ষণ আর পরিশ্রমী না হলে হয়তো তিনি যে অসাধ্য সাধন করেছেন তা হতো না। এমন পরিশ্রমী না হলে হয়ত সাফল্যের চূড়ায় ওঠা যেত না। এজন্যই শেখ হাসিনাকে বাঙালি জাতির জন্য আল্লাহর রহমত বলে থাকি আমি। কেননা, সততা, দেশ প্রেম, এত ত্যাগ, এত পরিশ্রম, এত মেধা সবকিছুর সমান সমন্বয় বঙ্গবন্ধুর পর তার কন্যা শেখ হাসিনার মাঝে রয়েছে। তিনি আমাদের বিস্ময় নেত্রী।
শেখ হাসিনার বহু সিদ্ধান্ত সমকালের বিচারে সমকালীন বোদ্ধাদের বোধের অতীত। তাই সমালোচনাও সইতে হয় তাকে। কিন্তু একটি মহৎ সাহিত্য যেমন কয়েক যুগ না পেরোলে তার প্রকৃত প্রশংসা জোটে না, তেমনই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত যত সময় যায় ততো সঠিক বলে প্রতীয়মান হয়।
শেখ হাসিনার মতো যোগ্য নেতৃত্ব যদি দেশের হাল না ধরতেন, তাহলে দেশ আজ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হতো। স্মরণ করুন ২০০১ সালের পর দেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের ভয়াবহ দিনের কথা। অনেক এলাকায় তখন জঙ্গিনেতা লাদেনের ছবি নিয়ে প্রকাশ্যে মিছিল করত উগ্রবাদীরা। বাংলা ভাই, আব্দুর রহমানের মতো পাষণ্ড জঙ্গিরা এদেশকে আফগানিস্তান বানানোর পণ করেছিল। জঙ্গিনেতাদের এসব পরিকল্পনা যেন ঠিক বিএনপি-জামায়াতের আদর্শেরই প্রতিফলন।
কেননা তারা সারাজীবন বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র, আফগানিস্তানের মতো জঙ্গিদের অভয়ারণ্য হিসেবে দেখতে চায়। তাই তৎকালীন সরকার জঙ্গিদের ছিল পৃষ্ঠপোষক। শেখ হাসিনা সরকারে থাকুন বা বিরোধীদলে— তিনি থাকলে উগ্রবাদীদের স্বপ্ন কখনই বাস্তবায়ন হবে না, তা তারা জানত। তাই শেখ হাসিনাকে প্রাণে মারার জন্য হামলা চালায় তারা। জোট সরকারের সহায়তায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা সেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির জনককে হত্যারই ধারাবাহিকতা। সেই একই অপশক্তির একই উদ্দেশ্যে একই অপকর্ম।
২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ের পর বাংলাদেশের দিশা আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দিকে ঠিক করেন শেখ হাসিনা। জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার ও রায় কার্যকর, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর এই দুটি কারণে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এমন এক সুসংহত স্থানে নিয়ে গেছেন, যার সুফল আমাদের পরিবর্তী প্রজন্ম ভোগ করবে। কারণ, তখন আর স্বাধীনতাবিরোধী কোনো শক্তির এত আস্ফালন থাকবে না। শেখ হাসিনা তাদের নির্মূল করেছেন।
উন্নয়নের এক মহাকাব্য রচনা হয়েছে শেখ হাসিনার হাত ধরে। দেশের অর্থনীতির আকার এত দ্রুত বাড়ছে যে- এখন দাঁড়িয়ে আজ থেকে বারো বছর আগের বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা দেখলে অবিশ্বাস্য মনে হয়। সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানের সাফল্য চোখ ধাঁধানো নয়।
শুধু অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক পর্যায়ে শান্তি নয়, বৈশ্বিক শান্তির জন্যও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত। চলতি বছরের মে মাসে জাতিসংঘ বাংলাদেশের পাঁচ জন শান্তিরক্ষীকে তাদের অসামান্য অবদানের জন্য ‘দ্যাগ হ্যামারশোল্ড মেডেল’ দিয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন যুদ্ধপ্রবণ দেশে শান্তিরক্ষায় নিজেদের জীবন অকাতরে বিলিয়ে দিয়ে তারা এই স্বীকৃতি পেয়েছেন। শান্তির জন্য রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয় দেয়া, ২০০৯ সালের পর থেকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে হাসিনা সরকারের জিরো টলারেন্স, শান্তিরক্ষীদের অবদান— সব মিলিয়ে শেখ হাসিনার বাংলাদেশকে এবং তাঁকে একজন উচুস্তরের রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উত্তীর্ণ করায়।
শেখ হাসিনার নিজের আর কি হারানোর আছে? তিনি একটা রাষ্ট্রযন্ত্রের চালক, যা ছুটছে। উন্নয়নের কিংবা মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সামাজিক নিরাপত্তা প্রদানকরত উদ্যোগগুলোর প্রতি সম্মান জানানোর আবারো তাই সময় আসছে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনমানুষের রায় বা ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তাকেই এই রাষ্ট্রের চালক হিসাবে দায়িত্ব নিতে হবে।
মেঘ তাই কেটে যাবে। ঝড়-সাইক্লোনে যারা ভাসতে চায়, তাদেরকে বলতে চাই যে, জনস্বার্থ সংরক্ষণ করে মানুষের জন্য রাজনীতি করুন। এতে করে ফল ভাল হবে। বিরাজনীতিকরণের যে স্বপ্ন একটি শ্রেণি দেখতে চাইছে, তাদের কে বলব, আমাদের সরকার প্রধান এখন আর দুর্বল সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন না, তিনি গণমুখী এক অদম্য মানবিক রাজনৈতিক সত্তা, যিনি বৈশ্বিক রাজনীতির যে আভিজাত্যের তাঁবু, সেখানেও উঁচু আসন পেতে অভ্যস্ত। তিনি শক্তিশালী চরিত্র হয়েই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার প্রধান ও অনন্য পর্যায়ের রাষ্ট্রপ্রধানও বটে।
শেখ হাসিনার ৭৭-তম জন্মদিনে মনের মধ্যে উচ্ছ্বাসও আছে। তার মুখাবয়বের দৃষ্টি সেরে আমরা মুজিব সেনা হয়ে রাজপথে লড়তে যাওয়ার সংকল্পে চলে যেতে পারি। এই পৃথিবীর মধ্যে তিনি সেই নেতৃত্ব, যিনি ঘরের মায়ের মত, সমাজ থেকে রাষ্ট্রেরও মা। মায়ের জন্য সন্তানেরা লড়বে। শুধুমাত্র তার দীর্ঘজীবন কামনা করা ছাড়া পরম করুণাময়ের কাছে আর কিছু চাওয়ার নেই। আজ আলাদা করেই আমার আমাদের মায়ের জন্য হাত ধরে মোনাজাতে যেতে চাই। এক অদম্য সত্তার আয়ু হোক শত বছরের! জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
লেখক: ড. কাজী এরতেজা হাসানসম্পাদক ও প্রকাশকদৈনিক ভোরের পাতা ও দি পিপলস টাইমসসহ-সভাপতি, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগপ্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ইরান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিসহ সভাপতি, ইন্ডিয়ান ইম্পোর্টারস চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিসাবেক পরিচালক, এফবিসিসিআই
ডভ এইচ লেভিন হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও লোকপ্রশাসন বিভাগে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে পড়ান। লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি নিয়ে কার্নেগি-মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব পলিটিক্স অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিতে পোস্ট ডক ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। তার গবেষণার মূল মনোযোগে ছিল বিভিন্ন দেশের নির্বাচনে বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর পক্ষপাতমূলক হস্তক্ষেপ। এসব নিয়ে তিনি একটি বই লেখেন। ‘মেডলিং ইন দ্য ব্যালট বক্স : দ্য কজেস অ্যান্ড এফেক্টস অব পার্টিজান ইলেক্টরাল ইন্টারভেনশনস’ নামের বইটি ২০২০ সালে প্রকাশ করে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। পরের বছর তা জার্ভিস-শ্রোয়েডার বেস্ট বুক অ্যাওয়ার্ড পায়।
বইটার শুরু হয়েছে ২০১৩ সালের গোড়ার দিকের একটি ঘটনা দিয়ে। কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিনকয়েক আগের কথা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আফ্রিকাবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি অব স্টেট জনি কারসন এক সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ্যে সতর্ক করেন যে, উহুরু কেনিয়াত্তা বিজয়ী হলে তার জন্য কেনিয়ানদের ‘গুরুতর পরিণতি’ ভোগ করতে হবে। কেনিয়াত্তার বিরুদ্ধে তখন আন্তর্জাতিক আদালতের একটি তদন্ত চলছিল। একজন প্রার্থীকে হারিয়ে আরেকজনকে জেতানোর এই যে মার্কিন প্রচেষ্টা, তা ওই নির্বাচনে সফল হয়নি। কিন্তু বিস্ময়করভাবে নির্বাচনে জেতার পর যখন কেনিয়াত্তা ইউএস-আফ্রিকা সামিটে অংশ নেন, তখন থেকে বেশ কিছুদিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সেই তিক্ততার আর দেখা মেলেনি তার।
এমন দৃষ্টান্ত যে দুনিয়ায় কত, তার একটা সংখ্যা বের করে আনার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন লেভিন। ১৯৪৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশে^র স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোতে মোট ৯৩৭টি জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে লেভিন ১১৭টি পক্ষপাতমূলক নির্বাচনী হস্তক্ষেপের ঘটনা তার বইতে তুলে এনেছেন। তার হিসাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ১১.৩ শতাংশ নির্বাচনে পক্ষপাতমূলক হস্তক্ষেপ করা হয়েছে কিংবা বলা যায় এই সময়কালে প্রতি ৯টি নির্বাচনের একটি এই হস্তক্ষেপের শিকার হয়েছে। লেভিন বলছেন, এর মধ্যে ৮১টি ঘটনা ঘটিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, শতকরা হিসাবে যা ৬৯ ভাগ। একই সময়ে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন বা রাশিয়া ঘটিয়েছে ৩৬টি ঘটনা, যা মোট ঘটনার ৩১ শতাংশ। তিনি দেখিয়েছেন, ৬০টি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্রে এই হস্তক্ষেপগুলো ঘটেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সব থেকে বেশি হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টা চালিয়েছেন ইতালির নির্বাচনে, সংখ্যায় যা দাঁড়ায় ৮ বার। এর বাইরে জাপানে ৫ বার, ইসরায়েল, লাওস ও শ্রীলঙ্কায় ৪ বার করে হস্তক্ষেপ প্রচেষ্টা হয়েছে।
ভিনদেশের নির্বাচনে নাক গলানোর এই প্রবণতা নিয়ে লেভিনের আলোচনা নতুন কিছু নয়। দীর্ঘ সময় ধরে তা চলে আসছে। লেভিনের পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট যে, এক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সব থেকে বেশি তৎপর। একটা সময় ছিল, যখন এসব কাজে গোপনে টাকা ঢালত মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। সেগুলো ছিল কভারড বা গোপনীয় অপারেশনের আদলে। সামরিক অভ্যুত্থান থেকে শুরু করে শ্রমসংস্থাকে কাজে লাগিয়ে এসব কাজ করা হয়। এমনকি নির্বাচিত রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানকে হত্যার অভিযোগও তাদের বিরুদ্ধে আছে বেশ শক্তভাবে। এসব তথ্য আজ আর কারও অজানা নেই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের তাতে কিছুই আসে-যায়নি। কারণ, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাদের ক্ষমতা বদলের দোকানদারির নতুন নতুন আধুনিক সংস্করণ হাজির হয়েছে বাজারে। আর বিশ্বজুড়ে তার খদ্দেরও কম নেই!
প্রধানত ষাটের দশকের শেষভাগে বেশ কিছু মার্কিন বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে বিদেশি রাষ্ট্রে হস্তক্ষেপের জন্য হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে সিআইএ অর্থ তহবিল দিচ্ছে বলে তথ্য প্রকাশিত হয়। সেই সময় লিন্ডন বি জনসন প্রশাসন এ ধরনের তহবিল বন্ধ করে একটি পাবলিক-প্রাইভেট মেকানিজমভিত্তিক তহবিল গঠনের মাধ্যমে একটি সংস্থা স্থাপনের সুপারিশ করে, যাদের কাজ হবে বিদেশি কার্যক্রমে অর্থায়ন। ১৯৭৪ সালে প্রাক্তন সিআইএ বিশেষজ্ঞ ভিক্টর মার্চেটি সংস্থাটির গোপন সব অপারেশনের ফিরিস্তি প্রকাশ করেন।
একই বছর নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক শেমুর হার্স দেশে দেশে সরকার বদলে সিআইএর গোপন মিশন নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। পরের বছর প্রাক্তন সিআইএ এজেন্ট ফিলিপ এগি লাতিন আমেরিকার রাজনীতিতে সিআইএর হস্তক্ষেপ ও প্রভাব বিস্তার নিয়ে একটি বই লিখলে বিষয়টি আরও খোলাসা হয়ে যায়। কিন্তু ততদিনে মার্কিনদের এই ক্ষমতা বদলের দোকানদারির শিকার হয়ে বসে আছে চিলি থেকে শুরু করে ছোট্ট দ্বীপ ব্রিটিশ গায়ানাও। শেষে পুরনো পদ্ধতি বদলের সিদ্ধান্ত নেয় মার্কিন প্রশাসন। ১৯৮১ সালে ওয়েস্টমিনিস্টার প্রাসাদে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সামনে বৈদেশিক নীতি নিয়ে ভাষণ দিতে গিয়ে তৎকালীন ইউএস প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান একটি নতুন মার্কিন সংস্থা তৈরির ঘোষণা দেন, যা উদার আদর্শ, বাজার অর্থনীতি ও মার্কিন আদলের গণতন্ত্রকে উৎসাহিত করবে।
এরপর ইউএসএআইডি থেকে অর্থ নিয়ে একটি আধা বেসরকারি অলাভজনক করপোরেশন প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়। যার নাম দেওয়া হয় ন্যাশনাল এন্ডোমেন্ট ফর ডেমোক্রেসি (এনইডি)। যে সংস্থার সহপ্রতিষ্ঠাতা অ্যালেন ওয়েনস্টেইন ১৯৯১ সালে বলেছিলেন, ‘আজকাল আমরা যা (প্রকাশ্যে) করি, তার অনেকগুলোই ২৫ বছর আগে সিআইএ গোপনে করত।’ প্রতিষ্ঠার পর থেকে পৃথিবীর নানা দেশে এনইডির পরিকল্পিত অর্থায়নের ফলাফল নিয়ে বিতর্ক আছে। এই সংস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলাপ রয়েছে আমার ‘সিআইএ থেকে এনইডি : গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা নাকি মার্কিন মেডলিং মেশিন’ নামের বইতে। সেখানে আলোচনা করা হয়েছে, কীভাবে এনইডিকে কাজে লাগিয়ে চোখের সামনে গণতন্ত্রের নামে ভিনদেশে নাক গলিয়ে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করে নেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
সাম্পªতিক ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার পর থেকে বিশ্ব শক্তিগুলোর নানা তৎপরতা চোখে পড়ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের দোকানদারিও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। চলতি বছরের ২৪ মে মার্কিন প্রশাসন বাংলাদেশকে বাগে আনতে একটি ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। যদিও তারা বলছেন, বাংলাদেশের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিরুদ্ধে যারা কাজ করবেন, তাদের জন্য এই ঘোষণা। অতি সম্প্রতি সেই ঘোষণা আবার দফায় দফায় কার্পেটের ভাঁজ খোলার মতো নতুন নতুন তথ্য নিয়ে হাজির হচ্ছে আমাদের সামনে। এগুলোর ব্যাখ্যা বিশেস্নষণও চলছে। মার্কিন অ্যাম্বাসি সামাজিক মাধ্যমে পেইড স্পন্সরশিপ দিয়ে এই তথ্য বেশি বেশি প্রচারের ব্যবস্থা করেছে। ভিসানীতি ওদের নিজস্ব ব্যাপার। কাকে দেবে, কাকে দেবে না– সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রই বুঝবে ভালো। কিন্তু ভাঙা ক্যাসেটের এই রেকর্ড বারবার ব্যবহারের প্রবণতা থেকে কিছু প্রশ্ন জাগা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান সমুন্নত রাখতে শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। এটিও সত্যি যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৃহৎ শক্তিগুলো ভিনদেশে হস্তক্ষেপের জন্য সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অংশকে ব্যবহার করে থাকে। কাজেই সেই পরিবেশ দূর করে আস্থা ফেরানোর চ্যালেঞ্জ নিজ নিজ রাষ্ট্রকে নিতে হবে। কিন্তু মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের বিবৃতিতে দেখা যাচ্ছে, ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাদানকারী’দের ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনছে দেশটি। বলা হচ্ছে, এতে ওই ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরাও অন্তর্ভুক্ত হবেন। যদি তাদের ‘অপরাধী’ও ধরে নিই, তাহলেও প্রশ্ন ওঠা সংগত যে, পৃথিবীর তাবৎ গণতন্ত্র আর মানবাধিকারের রক্ষাকর্তা হিসেবে আবির্ভূত রাষ্ট্রটি তাহলে ‘কিন পানিশমেন্ট’ ধারণার পক্ষে? তাহলে এতদিন ধরে তারা যে এ ধরনের ব্যবস্থার জন্য স্বৈরতন্ত্রকে দায়ী করে আসছিলেন, তার কী হবে? কারণ, আধুনিক আইনের খুব সাধারণ ব্যাপার হলো, একের অপরাধের সাজা অন্যকে দেওয়া ন্যায়বিচার নয়। যদিও মার্কিন মুলুকেই গ্রানাইট সিটির মতো কিছু শহরে ‘নিরাপদ আবাসের’ নামে একজনের অপরাধের সাজা পুরো পরিবারসমেত দেওয়া হয়! আবার মাত্র দুদিন আগে এক টেলিভিশন চ্যানেলে মার্কিন অ্যাম্বাসেডর পিটার হাস বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় গণমাধ্যমও আসবে! মনে রাখা জরুরি, কয়েক বছর আগে ভিসার জন্য দেশটি আবেদনকারীর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের হদিস চেয়েছিল। যাতে ওসব দেখে-টেখে তারা ভিসা দেওয়া-না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার রক্ষক দাবিকারীদের এসব সিদ্ধান্ত কোন স্বাধীনতা সমুন্নত করে কে জানে! লেখার শুরুতে যে বইটির কথা বলা হয়েছে, শেষে আবারও ফিরতে হবে তার কাছে। লেভিনের গবেষণা থেকে বেরিয়ে আসা একটি চমকপ্রদ পর্যবেক্ষণ এই বইয়ে স্থান পেয়েছে, যা এ বিষয়ে আমাদের একটি পুরনো দৃষ্টিভঙ্গিকে নাড়িয়ে দিতে পারে। গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি না পেলে সেসব রাষ্ট্রে এমন বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটে বলে সচরাচর বলা হয়ে থাক। কিন্তু লেভিন দেখিয়েছেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শুরুর কিংবা রাষ্ট্রের প্রথম নির্বাচনে পক্ষপাতমূলক হস্তক্ষেপের ঘটনা মাত্র ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ। ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ হস্তক্ষেপ একই রাষ্ট্রে একাধিকবার ঘটেছে। আর একই রাষ্ট্রে পর পর নির্বাচনে ধারাবাহিক হস্তক্ষেপের হার ৭১ শতাংশ।
অঞ্চলভিত্তিক রাষ্ট্রগুলোতে হস্তক্ষেপের সংখ্যা ও সময়কাল বিশেস্নষণ করে লেভিন জানান, বৃহৎ রাষ্ট্রের এই হস্তক্ষেপ প্রকৃতপক্ষে তাদের নিজস্ব উদ্দেশ্য সাধনে ব্যবহৃত হয়। যদিও বেশির ভাগ ড়্গেত্রেই বিষয়টিকে নানা রকম আকর্ষণীয় প্রপঞ্চ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়ে থাকে। উপস্থাপন যত আকর্ষণীয় নামেই হোক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন কৌশলের মূল লক্ষ্য, তাদের নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ভীতি প্রদর্শন, যেখানে প্রয়োজনে তারা মধ্যযুগীয় ‘কিন পানিশমেন্ট’ ধারণা প্রয়োগ করতেও মরিয়া। কাজেই বিশ্ব সম্প্রদায়কে এই বার্তাটি নেওয়া উচিত যে, সিআইএ থেকে এনইডি হয়ে এখন ভিসানীতি মার্কিন হস্তক্ষেপ কৌশলের নতুন সংযোজন।
লেখক: সংবাদকর্মী, লেখক ও চলচ্চিত্রকর্মী
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
আজ আন্তর্জাতিক ৩৩তম প্রবীণ দিবস। ১৯৯০ সালে জাতিসংঘ প্রতিবছর ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রবীণদের সুরক্ষা এবং অধিকার নিশ্চিতে ১৯৯১ সাল থেকে এ দিবসটি পালন শুরু হয়।
প্রবীণরা সমাজে সম্মানিত ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। তাদের প্রতি যত্নশীল হওয়া সবারই কর্তব্য। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উৎকর্ষ ও আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতির কারণে দেশে প্রবীণের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
বর্তমান কর্মব্যস্ত জীবনধারা এবং একক পারিবারিক সংস্কৃতিতে বয়স্কদের সুস্থ ও সুখী রাখা আগের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তাঁদের যত্নের প্রয়োজন হবে আগের চেয়ে বেশি। এই সময়ে তাঁদের যত্ন নেওয়ার জন্য কয়েকটি কথা মাথায় রাখা দরকার।
বৃদ্ধ বয়সে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রমে ভোগেন বেশিরভাগ প্রবীণ। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, অস্টিওপোরোসিস, চোখের অসুখ, পুরুষদের প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া, কিডনিতে ও লিভারের নানা সমস্যায় ভোগেন প্রবীণরা।
বয়সের সাথে সাথে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে এ সময় মানুষ খুব সহজে রোগাক্রান্ত হয়। সুতরাং বাড়ির প্রবীণ মানুষটি কোনো রোগে আক্রান্ত হলে তার সঠিক যত্নের পাশাপাশি নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সময়মত ওষুধ খাওয়াতে হবে।
শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকার ফলে শরীরে বয়সের প্রভাব কমে যায়। প্রবীণদের জন্য হালকা কিছু ব্যায়াম করা জরুরি যা হৃদস্পন্দন বাড়ায় এবং সঠিক রক্তপ্রবাহ বজায় রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া ব্যায়াম শরীর এবং মন ভালো রাখে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরে ডায়াবিটিস, আলজাইমার এবং ডিমেনশিয়া হওয়ার আশঙ্কাও কমে।
প্রবীণদের গুরুতর রোগের ঝুঁকি কমাতে সুষম খাদ্য দিতে হবে। তাঁদের কম স্যাচুরেটেড ফ্যাট আইটেম (ঘি-তেল-মাখন-বিস্কুট-চর্বিহীন মাংস) এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার বেশি দেওয়া উচিত। প্রবীণ ব্যক্তিদের তাজা খাবার খেতে হবে এবং বেশি করে পানি ও তরল জাতীয় খাবার দিতে হবে। প্রবীণদের উপযুক্ত পরিমাণে ফল, সবজি এবং গোটা শস্য দিতে হবে।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রবীণদের ঘুমের সমস্যা দেখা যায়। এই বয়সে ঘুমের অভাবে হার্ট ও মস্তিষ্ক সংক্রান্ত নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই পরিমিত পরিমাণে ঘুমানো উচিত, প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঘুমের ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। ভালো ঘুমের জন্য শরীরচর্চা, যোগব্যায়াম, ধ্যান, গান শোনা, হাঁটাহাঁটি করার অভ্যাস করা যেতে পারে।
বৃদ্ধ বলে যে প্রবীণকে নিয়ে কোথায় ঘুরতে যাবেন না, এ কাজটি কখনো করবেন না। তাদেরও ইচ্ছে হয় খোলণা হাওয়ায় সময় কাটানোর। মাঝে মধ্যে তাকে নিয়ে ঘুরতে যান। এ ছাড়া পরিবারের সবার সঙ্গে যদি সময় কাটাতে পছন্দ করেন তাহলে তাকে বেশি সময় দিন। এ ছাড়া টিভি দেখা, গান শোনা, বই পড়াসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ব্যবস্থা রাখুন প্রবীণের কাছে।
যেখানে প্রবীণ থাকেন সে স্থান বা সেই বাড়ি যথাসম্ভব নিরাপদ রাখার চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টা করতে হবে খোলামেলা পরিবেশে রাখার এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্ন স্থানে রাখার। প্রবীণের ব্যবহৃত বাথরুম যেনো পিচ্ছিল না হয়।
বর্তমান সময়ে সবাই কর্মব্যস্ত। পরিবারে যদি কোনো প্রবীণ থাকেন ও তার দেখাশুনা করার জন্য পরিবারের কোনো মানুষ না থাকলে দেখাশোনার জন্য কেয়ারটেকার রাখুন। যিনি সব সময় প্রবীণের দেখাশুনা করবেন। তবে কর্মব্যস্ততা শেষে চেষ্টা করুন নিজে সময় দেয়ার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনীতি অনেকটাই কূটনৈতিক পরিম-লে আবর্তিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বন্ধুরাষ্ট্র ও উন্নয়ন অংশীদার বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার নানামুখী কর্মকান্ড ও তার প্রভাব নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সম্পাদকীয় বিভাগের সাঈদ জুবেরী
দেশ রূপান্তর : ভোটের আগে বিদেশি কূটনীতিকদের তৎপরতা বাংলাদেশে নতুন নয়। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনপূর্ব রাজনীতিতে বিদেশিদের বিভিন্ন তৎপরতা নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। পরিস্থিতি নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
ইমতিয়াজ আহমেদ : এটা তো নতুন না। আগেও হয়েছে, এবারও হচ্ছে। কিন্তু একটা জিনিস হলো যে মিডিয়ার সংখ্যা যেহেতু অনেক বেড়েছে, তারপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রসার ঘটেছে বলে এখন আলোচনা অনেক বেশি হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু আমি মনে করি এটা নতুন না, এটা কমবেশি আগেও হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো এই ধরনের তৎপরতা বাংলাদেশের গণতন্ত্রে কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে। আমাদের বড় বড় যেসব পরিবর্তন হয়েছে, এখন পর্যন্ত যতটুকুই গণতন্ত্র আছে সেসব জনগণের মাধ্যমেই এসেছে, জনগণের স্যাক্রিফাইসের মাধ্যমেই অর্জিত হয়েছে। মনে রাখতে হবে সেটা ৭১ থেকে শুরু করে বড় ধরনের ত্যাগের মাধ্যমে কিন্তু এ দেশের মানুষ গণতন্ত্রের চর্চা করে আসছে। এখানকার জনগণ যেভাবে গণতন্ত্রকে বুঝেছে, তারা সেভাবেই সেটা অর্জন করেছে। এখানে বাইরের শক্তি বিশেষ করে কূটনীতিকদের তৎপরতায় বাংলাদেশের গণতন্ত্র ঠিক হয়েছে তার নজির পাওয়া যায় না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে বিদেশিরা এখন এসব কেন করছে। অনেক দেশই তো আছে যেখানে সেই ধরনের গণতন্ত্র নেই। কিন্তু তাদের সঙ্গে তো যারা এদেশে তৎপরতা দেখাচ্ছে তারা ভালো সম্পর্ক রাখছে। বোঝাই যাচ্ছে যে, এখানে অন্য কারণ থাকতে পারে।
দেশ রূপান্তর : তারা তো বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের সঙ্গে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সুশাসনের মতো বিষয়কে যুক্ত করেছে...
ইমতিয়াজ আহমেদ : তারা সেগুলোর প্রচার করে। কিন্তু কথা হচ্ছে যে, অনেক দেশেই, যাদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আছে, সেখানে তো সেই ধরনের গণতন্ত্রের চর্চা বলতে গেলে একেবারেই নেই। কিন্তু তারপরও তারা সম্পর্ক রাখে এবং সেখানে গণতন্ত্রের জন্য তাদের কোনো ভূমিকা রাখতেও দেখি না। যেমন পাকিস্তানের কথা যদি ধরি বা মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক এমন দেশ রয়েছে যাদের সঙ্গে তাদের বিরাট সম্পর্ক রয়েছে। তাই স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে যে এর কারণ কী? হতে পারে যে তাদের উদ্দেশ্য হয়তো সৎ। এটা ধরে নিলেও আপনি যেসব বললেন গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সুশাসন ইত্যাদির জন্য তাদের চেয়ে আমার মনে হয় অভ্যন্তরীণ রাজনীতিই দায়ী। এখানে যেহেতু বড় ধরনের বিভাজন আছে এবং বিশেষ করে যারা অপজিশনে থাকে তারা এই জিনিসগুলোকে সামনে নিয়ে আসে, তা সে যে দলেরই হোক না কেন। যখন যারা অপজিশনে থাকে তখন তারা এই বিদেশি কূটনীতিক বা বিদেশিদের একটা হস্তক্ষেপ চান বা তাদের কাছে এসব নিয়ে নালিশ করেন। বিদেশি হস্তক্ষেপ বা তাদের কথা বলার স্পেসটা দেশের রাজনীতিবিদরাই করে দেয়।
দেশ রূপান্তর : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ভিসানীতির যে ঘোষণা দিয়েছিল সেটা প্রয়োগের পদক্ষেপ নেওয়া শুরুর কথাও জানিয়েছে তারা। তারা তো সেখানে পুলিশ, প্রশাসন, বিরোধী দলের কথাও বলেছে। বিচার বিভাগ, এমনকি সাংবাদিকদেরও এর আওতায় এনেছে। এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার চাপ কি কোনো ধরনের প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন?
ইমতিয়াজ আহমেদ : এটা তো একটা অসম্মানের ব্যাপার। মনে হচ্ছে বাংলাদেশের সবাই একেবারে আমেরিকায় যাওয়ার জন্য রীতিমতো রেডি। সাংবাদিক থেকে শুরু করে পুলিশ, একেবারে সবাই। এই ধারণাটা কেন হয়েছে আমি জানি না।
দেশ রূপান্তর : এই ধারণার কি বাস্তবতা নেই? রাজনীতিবিদ ছাড়া যেসব পেশাজীবীকে ভিসানীতির আওতায় আনার কথা বলা হচ্ছে তাদের বিদেশমুখিতা বা তাদের পরিবারের বিদেশে সেটেল হওয়ার একটা প্রবণতা তো আছেই।
ইমতিয়াজ আহমেদ : কথা হচ্ছে এর পার্সেন্টেজটা কত? আমরা তো ১৭০ মিলিয়ন মানুষের একটা দেশ। আমি যদি সংখ্যা হিসেবে ধরি, সেই দেশের কয়জন আছে যারা বিদেশে চলে যেতে চাচ্ছে। কাজেই এসব কথাবার্তা খুবই হিউমিলিয়েটিং। আমি জানি না তাদের ধারণা কেন হয়েছে, যে বাংলাদেশের সবাই আমেরিকা যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে আছে। এই চিন্তাভাবনা বা মানসিকতাটার কথা আমি জানি না। এটা কি তারাই তৈরি করে নিয়েছে নাকি আমাদের লোকেরা তাদের এমন বুঝিয়েছে? সেজন্যই বলছি যে তাদের হয়তো সৎ ইচ্ছা থাকতে পারে যে আমাদের একটা গণতান্ত্রিক কাঠামো হোক। কিন্তু এ ধরনের কথাবার্তায় আমাদের যে বিভাজনের রাজনীতি সেটা কমছে না বাড়ছে? সহজ উত্তর হবে, এটা তো বাড়ছে। এটা তারা বাড়াচ্ছে কেন। এটা কি তারা জেনেশুনেই বাড়াচ্ছে, নাকি না জেনেশুনে বাড়াচ্ছে? সেই জায়গায় আমার মনে হয় একটু চিন্তা করা দরকার। কারণ যেই গণতন্ত্র তারা চাচ্ছে বা যেই গণতন্ত্র আমরা চাচ্ছি সেটা যদি হয় পশ্চিমা কাঠামোর গণতন্ত্র, তাহলে তো প্রথমে দরকার বড় বড় দলগুলোর মধ্যে ন্যূনতম আস্থা। এটা হচ্ছে ন্যূন্যতম শর্ত। এখন এই ন্যূন্যতম শর্তের ব্যাপারে তো তারা কোনো কন্ট্রিবিউট করছে না। আমার শেষ কথা হলো বাংলাদেশের গণতন্ত্র বাংলাদেশের জনগণকেই ঠিক করতে হবে। বাইরের শক্তি এসে এটা ঠিক করে দেবে, এমন নজির পৃথিবীতে নেই। আমাদের মিডিয়া যে একজনকে এত গুরুত্ব দিচ্ছে, দেখা হলেই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করছে, এখন তাকে একটা কিছু তো বলতে হবে। তাকে যদি বলা হয়, ভিসানীতিতে কি মিডিয়াও পড়বে, সে স্বাভাবিকভাবেই বলবে যে হ্যাঁ, মিডিয়াও পড়বে। বিভিন্নভাবে এখন যে নাম ছড়ানো হচ্ছে, যেখানে সে বলেছে যে, আমাদের আইনে কোনোভাবেই নাম দেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু একাধিক পত্রিকা নাম দিয়ে বলে যাচ্ছে অমুকের বিরুদ্ধে স্যাংশন হয়েছে, তমুকের ভিসা বাতিল হয়েছে। আমরা যে এগুলো করছি, এটা তো আত্মঘাতী ব্যাপার। পলিটিক্যালি এক পক্ষ আরেক পক্ষের নাম বলে যাচ্ছে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে, এটা করে তারা এদেশে বিভাজনটা আরও বাড়াল। আমার মনে হয় তাদের খোলাখুলিভাবে বলা উচিত যে তোমরা যেটা করছ তাতে করে তো বাংলাদেশে কোনোভাবেই গণতন্ত্র বাড়বে না, বরং দিন দিন অবস্থা আরও জটিল হবে। তবে শেষ বিচারে ওই জনগণের ওপরই ভরসা।
দেশ রূপান্তর : এমন আলাপও রয়েছে যে নির্বাচন কেন্দ্র করে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে সেনা সদস্য প্রেরণে এবং পশ্চিমা বিশ্বে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিতে বাধা আসতে পারে। এর সম্ভাবনা কতটুকু, বাধা আসলে কেমন প্রতিক্রিয়া হতে পারে?
ইমতিয়াজ আহমেদ : কোনোই সম্ভাবনা নেই। কারণ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কোনো এক সদস্যের কারণে এটা বন্ধ হয়ে যাবে না। আমরা ভুলে যাই যে, নিরাপত্তা পরিষদে চীন-রাশিয়াও আছে। বিশ্বে অনেক দেশ আছে যেখানে পশ্চিমা কাঠামোর গণতন্ত্র নেই। যারা এটা বলে প্রচার করছে, তারা এটা কেন করছে সেটা আমার জানা নেই। জাতিসংঘের পিস কিপারদের মধ্যে পাকিস্তানের মতো দেশও রয়েছে। বাংলাদেশ সেখানে এক নম্বরে গিয়েছে তাদের পেশাদারিত্বের কারণে। পিস কিপিংয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে যারা প্রশ্ন করে তারা জেনেশুনে করে নাকি না জেনে করে? আর গার্মেন্টস সেক্টরে বাংলাদেশ আমেরিকা বা ইউরোপীয় ইউনিয়নে যে মার্কেট তৈরি করেছে সেটা কোনো মানবিক কারণে হয়নি। এটা খেয়াল রাখতে হবে। এটা একেবারেই ধণতান্ত্রিক প্রিন্সিপাল মেনে হয়েছে। আমাদের থেকে পণ্য নিয়ে তারা বেশি প্রফিট পাচ্ছে বলেই আমরা সেখানে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিতে অবস্থান তৈরি করতে পেরেছি। আমাদের গার্মেন্টস ওনাররা যতটা না প্রফিট পান সেখানকার ওনাররা আরও অনেক অনেক বেশি প্রফিট পান এখান থেকে পণ্য নিয়ে। আমাদের ওনাররা যদি ৬ ডলার লাভ পান, সেখানকার ওনাররা ৩০ ডলার প্রফিট করেন। এটা একেবারে তাদেরই হিসাব করা। মিয়ানমারের কথা যদি ধরেন, যেখানে আমেরিকা বলছে যে তারা একটা জেনোসাইড করেছে, তারা বার্মা অ্যাক্ট নামে একটা অ্যাক্টও করেছে সেখানে তারা বলেছে কোনোভাবেই মিয়ানমার থেকে ইমপোর্ট বন্ধ করা যাবে না। এটা তাদের যারা ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট বা আমদানিকারক তাদের চাপেই হয়তো করেছে। ফলে এসব বুঝতে হবে।
দেশ রূপান্তর : সাম্প্রতিক সময়ে নাইজেরিয়া, হাইতি, সুদান ও নিকারাগুয়াকে মার্কিন ভিসানীতির ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। অনেকের মতে, তাদের ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস ভ্যালু’ বাংলাদেশের চেয়ে কম। তারাই এই ভিসানীতি আমলে নেয়নি, ফলে এ নিয়ে বাংলাদেশের শঙ্কিত হওয়ার কোনোও কারণ নেই। আপনার মত কী?
ইমতিয়াজ আহমেদ : একেবারেই, এটা একটা ভালো প্রশ্ন এবং প্রকৃত উদাহরণ। যেসব দেশে তারা ভিসা রেস্ট্রিকশন দিয়েছে কোনোটাই, কোনোটাই কাজে লাগেনি। এটা যে কেবল এখন তা না, কিউবাতে তারা কত বছর ধরে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। তাই বলে কিউবা কি বসে রয়েছে? ইরান, নর্থ কোরিয়া কি বসে আছে। কথা হচ্ছে যে, এই চিন্তাটা, এটা কেন হয় আমি জানি না। কোন কাঠামোতে এটা আসে সেটা আমি বুঝি না, কারণ আমেরিকাকে বোঝা খুবই মুশকিল। আসলে ওই ধরনের রেস্ট্রিকশন দিয়ে একটা দেশের মধ্যে পরিবর্তন আনার চিন্তাটাই একটা কলোনিয়াল চিন্তাভাবনা। যেখানে বাংলাদেশের জনগণ যথেষ্ট সচেতন, তারা প্রচুর স্যাক্রিফাইস করেছে। তো সেই জায়গায় ভরসা রাখতে হবে। যখন জনগণ চাইবে, বড় রকমের পরিবর্তন তখন কেউ থামাতে পারবে না।
দেশ রূপান্তর : নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ বৃদ্ধির মধ্যে ঢাকা সফর করেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। ধারণা করা হচ্ছে তিনি পুতিনের বার্তা দিতে এসেছেন। যুক্তরাষ্ট্র যখন চাপ দিচ্ছে তখন রাশিয়ার বার্তা মার্কিন অবস্থানকে নমনীয় নাকি আরও কঠোর করবে?
ইমতিয়াজ আহমেদ : আসলে যে জিনিসটা খেয়াল রাখতে হবে পৃথিবী একটা বহুমাত্রিকতার দিকে যাচ্ছে।
দেশ রূপান্তর : কেউ কেউ মনে করেন, বাংলাদেশকে চীনের আধিপত্যের প্রভাবমুক্ত রাখতে ভূরাজনৈতিক স্বার্থে বাইডেন প্রশাসনের চাপ। এটাও তো বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে। আপনার মন্তব্য কী?
ইমতিয়াজ আহমেদ : হ্যাঁ, আমি সেটাই বলছি। বাংলাদেশের যারা এটা বলেন তাদের মেন্টালিটি এখনো কলোনাইজড হয়ে আছে। তারা মনেই করে যে বাংলাদেশকে একটা না একটা বলয়ের মধ্যেই থাকতে হবে। আমরা যেহেতু সবসময় একটা পরাধীনতার মধ্যে থেকেছি, সেহেতু আমাদের মানসিকতাও পরাধীন হয়ে গেছে। আমার মনে হয় না যে একাত্তরের ওই স্বাধীনতা আমাদের মস্তিষ্কে এখনো ঠিকমতো ঢুকতে পেরেছে। কথা হলো এককেন্দ্রিক যে পৃথিবীটা হয়েছিল, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরে সেই জায়গাতে পৃথিবীটা এখন নেই। একটা পরিবর্তন হচ্ছে এবং একটা বহুমাত্রিক বা যেটাকে আমরা মাল্টিপোলার ওয়ার্ল্ড বলছি, পৃথিবীটা সেদিকে যাচ্ছে। এবং সেখানে কিন্তু একাধিক দেশের উত্থান বা পুনরুত্থান হচ্ছে। সেখানে চীনের যেমন উত্থান হচ্ছে, ভারতেরও হচ্ছে। টার্কিরও পুনরুত্থান ঘটছে। তারপর সাউথ আফ্রিকা আছে, এখানে রাশিয়ারও একটা পুনরুত্থান হচ্ছে। মাল্টিপোলারে একাধিক দেশ কিন্তু উঠে আসছে। এবং এটা থামানোর কোনো উপায় নেই। সেই জায়গাতে লাভরভের আসা, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক করা, ভারতের সঙ্গে বড় আকারে সম্পর্কিত থাকা... এ সবই হলো নিউ নরমাল। এটাকে ওইভাবে দেখা ঠিক হবে না যে ইনি আসছেন, তারমানে আমরা এই বলয়ে চলে যাচ্ছি বা আমরা আমেরিকাকে একটা জবাব দিচ্ছি, তা না। আমাদের সঙ্গে আমেরিকার বহুমাত্রিক সম্পর্ক আছে। একাধিক কাঠামোগত সম্পর্ক তৈরি করা আছে। আমার মনে হয় না, বর্তমান যে সরকার আছে দেশটিতে, তার অপজিশন এভাবে বিষয়গুলো দেখে। দেখা যাবে, যদি রিপাবলিকানরা আগামীতে ক্ষমতায় আসে তাহলে দেখা যাবে পুরো বিষয়টাই পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয় এটাকে নিউ নরমাল হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই দেখা দরকার। এটাই স্বাভাবিক যে বাংলাদেশের ওপর একটা এটেনশন তৈরি হচ্ছে, এর কারণ হচ্ছে বাংলাদেশ এই ১৫/২০ বছরে একটা কাঠামো তৈরি করতে পেরেছে, যার একটা ভবিষ্যৎ আছে। ফলে সবাই চাচ্ছে সেই কাঠামোর সঙ্গে পার্টনারশিপ করে যেন প্রফিট করতে পারে। আমরা তো একটা ক্যাপিটালিস্ট ওয়ার্ল্ডে বসবাস করছি, এখানে কোনো কাঠামোই আদর্শ না। কম্পিটিশন আছে, আবার কো-অপারেশনও আছে। সেই জায়গায় জাপান যেভাবে চাইবে আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক করতে চীনও চাইবে, আমেরিকাও চাইবে এমনকি টার্কি, রাশিয়াও চাইবে। এটাই নিউ নরমাল। এবং আমি মনে করি বিভিন্ন ডেলিগেশন আসাটাও এ কারণে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাখোঁর বাংলাদেশ আসাটাও এর অংশ। আমেরিকার আশা হয়তো আমরা বোয়িং কিনব। কিন্তু আমরা বোয়িং কিনব না এয়ারবাস কিনব, সেই নেগোশিয়েশনটা তো রাখতে হবে। মাল্টিাপোলারাইজেশন, এটাই নতুন বাস্তবতা।
দেশ রূপান্তর : হঠাৎ করে ড. ইউনূস সামনে আসার কারণ কী? মার্কিন ভিসানীতির পেছনে ফ্রেন্ডস অব ইউনূসের ভূমিকা কতটুকু?
ইমতিয়াজ আহমেদ : এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো এভিডেন্স নেই। অ্যাকাডেমিশিয়ানদের এটা একটা সমস্যা। রাজনীতিবিদ হলে একটা কথা বলে দেওয়া যেত। কথাটা হচ্ছে ওনার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো হয়েছে আশা করা যায় আদালত বিষয়গুলো দেখবে। আমার মনে হয় না এখানে সরলীকরণ করা ঠিক হবে। ড. ইউনূসের বা তাকে নিয়ে সমস্যাটা অনেক আগে থেকেই ছিল। একেকটা সময়ে আমরা একেকভাবে বিষয়গুলোর সমাধান করতে দেখেছি। তার যে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি হিসেবে থাকার বিষয়টা একভাবে সমাধান হয়েছে। আবার ট্যাক্সের বিষয়টার সমাধান হলো আরেকভাবে। তাই না? তো কথা হচ্ছে গিয়ে এই প্রসেসটা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমভাবে ছিল। তার কারণেই যে এখন আমেরিকা ভিসানীতি দিয়েছে এটা বেশি সরলীকরণ হয়ে যায়। এটার কোনো এভিডেন্সও নেই, ধরেন এটা নিয়ে যদি কোনো রিপোর্টও হতো, বা এ নিয়ে কেউ বলাবলি করেছে সেটা প্রকাশ পেল তেমনও তো এভিডেন্স এখন পর্যন্ত পাইনি। কারণ, তার প্রতি তাদের সাপোর্ট সবসময়ই ছিল, এটা নতুন না, যেটাকে ফ্রেন্ডস অফ ইউনূস বলা হচ্ছে।
দেশ রূপান্তর : ভারতের অবস্থান অনেকটা নীরব ছিল। অবশ্য জি-২০ সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ ও সেখানে প্রধানমন্ত্রীর তৎপরতার মধ্যে অনেকে এক ধরনের বার্তা খুঁজেছেন। সার্বিকভাবে এখানে ভারতের ভূমিকা কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
ইমতিয়াজ আহমেদ : একটা হলো ভারতের সঙ্গে এই সরকারের একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এটা এই বিজেপি সরকারের সঙ্গে না, সম্পর্কটা ভারতের সঙ্গে। ভারতের একটা বড় ধরনের কন্সাসনেস তৈরি হয়েছে বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে। সেটা হলো ভারতের অন্যতম যে সমস্যা, বিশেষ করে দেশটির নর্থ-ইস্টের যে জঙ্গিবাদ বা মিলিটেন্সি বা ইনসার্জেন্সি বলি সে বিষয়ে বাংলাদেশের জিরো টলারেন্সের ফলে তার একটা সমাধান হয়েছে। বলতে গেলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা মৌলিক পরিবর্তন এই সরকার করতে পেরেছে। এটা অন্য সরকার করতে পারেনি বরং অন্য সরকারের সময় বিশেষ করে বিএনপির সরকার যখন ছিল, তখন এটা একটা বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করেছে। সেদিক থেকে বাংলাদেশের অন্য রাজনৈতিক দল ভবিষ্যতে সেটা পারবে কি না, তা আমরা জানি না। করে দেখাব, আর করে দেখানোটা তো এক না। যার কারণে জি-২০ তে বাংলাদেশকে ভারতের আমন্ত্রণ জানানোটা খুবই স্বাভাবিক। যারা আগে বলেছিল যে, ভারত বোধ হয় এবার অন্য চিন্তা করছে, আমি মনে করি এক্ষেত্রে অন্য চিন্তা করার অবস্থাই নেই। এটা খুবই স্বাভাবিক আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে জি-২০ সম্মেলনে আমন্ত্রণ করা এবং ভারতের পক্ষ থেকে তাকে বড় ধরনের একটা প্ল্যাটফর্ম দেওয়া।
দেশ রূপান্তর : বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সেলফি নিয়ে আমাদের এখানে তো বেশ আলোচনা হয়েছে। এই সেলফি ডিপ্লোমেসির কী প্রভাব?
ইমতিয়াজ আহমেদ : পত্রিকায় যেভাবে খবর দেয় সেটা দুঃখজনক। আমেরিকানরাও যারা আছেন তারাও মনে করেন যে, আমার ছবি পত্রিকায় ছাপিয়েছে সেটা তো সাংঘাতিক ব্যাপার। হা হা হা। ফলে, মিডিয়া, অ্যাকাডেমিশিয়ান, গবেষক, টক শোয়ের গেস্ট আমাদের সবারই পেশাদারিত্ব বাড়ানো দরকার যে কোনটা আমরা নিরুৎসাহিত করব আর কোনটা না। সেই জায়গায় আমরা যদি না যেতে পারি, তাহলে মনে হবে যে সাংঘাতিক কিছু একটা হয়ে যাচ্ছে। এই ভিসা রেস্ট্রিকশন, তারপর নানা রকম বিবৃতিকে আমরা যদি কম গুরুত্ব দিতে পারতাম।
দেশ রূপান্তর : গুরুত্বের ব্যাপারটা তো দিপক্ষীয়। বিরোধীরা যেমন ভিসানীতিকে গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করেছে, সরকার দলীয়রাও বাইডেন-হাসিনার সেলফিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে।
ইমতিয়াজ আহমেদ : কারা কীভাবে কাকে গুরুত্ব দিচ্ছে সেদিকে আমি যাচ্ছি না। কেউ নেগেটিভলি দিচ্ছে, কেউ পজিটিভলি দিচ্ছে। কথা হচ্ছে, আমি অ্যাকাডেমিশিয়ান হিসেবে বলছি, যে আমরা গুরুত্বটা যদি একটু কম দিতাম তাহলে ভালো হতো। মানে একটা দেশের প্রেসিডেন্ট আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তুলতেই পারেন, সেটা তো অস্বাভাবিক কিছু না। মনে রাখতে হবে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক সরকারপ্রধান। সেই জায়গাতে তিনি নিজেই তো একটা বড় আকর্ষণ। আমি মনে করি যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একটা দেশের নারী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সেলফিটা বাইডেনও দেখাতে চাইবেন। আমাদের নেগেটিভটা দিয়েই আমরা দেখছি। হয়তো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নারী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছবিটা বাইডেন তো মধ্যপ্রাচ্যে দেখাতে চাইতে পারে। এগুলোকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি, আমাদের মনে রাখতে হবে যে আমেরিকার সঙ্গে আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ক রয়েছে। তারা অনেক সময় অনেক পদক্ষেপ নেয়, সেগুলো যে তারা সব বুঝেশুনে নেয় তা না, সেটা তো পরিষ্কার। আফগানিস্তানের ব্যাপরেই আমরা জানি যে তার পলিসিতে ভুল ছিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে অনেক বছর পরে তারা বুঝতে পারে যে তারা ভুল পদক্ষেপ নিয়েছে।
দেশ রূপান্তর : নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের গুরুত্ব কতটুকু?
ইমতিয়াজ আহমেদ : আমি মনে করি না যে এর কোনো গুরুত্ব আছে। নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আসা না আসায় গণতন্ত্রের তেমন কিছু যায় আসে না। আমি নিজেই ১৯৯৬ সালে পাকিস্তানের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হিসেবে গিয়েছিলাম। যে নির্বাচনে নওয়াজ শরিফ জিতল। তাতে কি পাকিস্তানের গণতন্ত্রে বড় কোনো পরিবর্তন হয়েছে? অনেকেই বলবেন যে পাকিস্তানের গণতন্ত্র আরও পেছনে চলে গিয়েছে। কাজেই আমি মনে করি না যে এই আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দিয়ে বাংলাদেশের বা যে কোনো দেশের গণতন্ত্র ঠিক করা যায়। আর এখন যে টেকনোলজি তৈরি হয়েছে, তারা আসুক বা না আসুক, এমনিতেই তো খবরাখবর রাখা যায়। আর তারা এসেই বা কী করবে? ভোটের দিনেই তো আর নির্বাচন হয় না। নির্বাচনের যে প্রক্রিয়া, তাতে ভোটের অনেক আগেই কিন্তু নির্বাচন শুরু হয়ে যায়। নমিনেশনের একটা সমস্যা রয়েছে, আমেরিকাতেই তো মিলিয়নিয়ার ছাড়া কেউ নমিনেশন পান না। তো আমেরিকার গণতন্ত্রের মধ্যেই বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। পাশাপাশি ব্ল্যাক লাইফ ম্যাটারের মতো ইত্যাদি বিষয় আছে। কাজেই ওই ভোটের দিন পর্যবেক্ষণ করে গণতন্ত্রকে ঠিক করা যাবে না। প্রসেসটা অনেক বড়। আমি মনে করি, আমেরিকানদের চেয়ে বাংলাদেশের জনগণ যথেষ্ট সচেতন বিশেষ করে রাজনীতির ব্যাপারে অনেক সচেতন, ঐতিহাসিকভাবেই। তারাই ঠিক করবেন। ওই নির্বাচন পর্যবেক্ষক দিয়ে বা ভিসানীতি দিয়ে এটা ঠিক হবে না, এদেশের জনগণই ঠিক করবেন, যেখানে ঘাটতি আছে।
বিশ্বের প্রায় ৩০০ কোটি মানুষের জন্য ‘ডেঙ্গু’ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়াতে ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি। শীতপ্রধান দেশের চেয়ে নিরক্ষীয় এলাকাতেই এডিস মশা বেশি জন্মানোর ফলে দক্ষিণ এশিয়াতে এর প্রকোপ বাড়ছে। এই রোগে প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আক্রান্ত হন লাখ লাখ মানুষ, মৃত্যু হয় হাজার হাজার।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
একদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের খবরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। এই নিয়ে পুলিশের কানাঘুষা চলছে। ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কী হতে পারে তা নিয়ে চলছে বিচার-বিশ্লেষণ। একই সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতা কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় তা নিয়েও দুশ্চিন্তা বেড়েছে পুলিশের। দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে পুলিশ সদর দপ্তরও ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আদালতে গিয়ে অনুমতি নিতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য তাকে (খালেদা জিয়া) আবারও কারাগারে যেতে হবে বলেও জানান তিনি। যুক্তরাষ্ট্র সফররত প্রধানমন্ত্রী ওয়াশিংটন ডিসিতে স্থানীয় সময় বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভয়েস অব আমেরিকাকে (ভিওএ) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে দলটির নেতাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তাদের নেত্রীকে বিদেশে যেতে হলে আবারও আদালতে যেতে হবে, জেলে যেতে হবে প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর পরিস্থিতি বদলে গেছে বলে তারা মনে করছেন।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরটি মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে কার্যকর কোনো আইন না থাকায় এই মন্তব্য হাওর-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। এমন মন্তব্যের সূত্র অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ আইন-১৯৫০-এর ৯০(২) ধারা এবং ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েল-১৯৯০-এর ৩২৬ ধারার বিধান অনুযায়ী কৃষিজমিকে অকৃষি শ্রেণিতে পরিবর্তন করে শিল্প, বাণিজ্যিক বা আবাসিক কাজে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘তারা বলে আর অনুমতি নেবে না। অবৈধ সরকার থেকে অনুমতি নেবে না। তাহলে অবৈধ সরকারের কাছে খালেদা জিয়ার মুক্তির আবেদন কেন করে? এ সরকার যদি অবৈধ হয়, এখানে কেন আবেদন?’ বিএনপিকে হুঁশিয়ারি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মিটিং করতে গেলে সরকারের অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি না নিলে খবর আছে। পালাবার পথ পাবেন না।’
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলা নিয়ে ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেসব তথ্য উল্লেখ করেছেন সেগুলো ‘মিথ্যাচার’ বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘ভয়েস অব আমেরিকাকে প্রধানমন্ত্রী কিছু কথা বলেছেন, যেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির মামলা নেই। তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রাখা হয়েছে।’
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
ভোটাধিকার, সন্ত্রাস-দখলদারিমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস, সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করেছে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রঐক্য’ নামে একটি ছাত্রজোট। ৯ দফার ভিত্তিতে ১৫টি ছাত্র সংগঠনকে নিয়ে এই ছাত্রঐক্য হয়। যার বেশিরভাগই বাম ধারার ছাত্র সংগঠন এবং নামসর্বস্ব। ক্যাম্পাসগুলোতে যাদের তেমন কোনো অবস্থান নেই। তাই প্রশ্ন উঠেছে, এসব ছাত্র সংগঠনকে নিয়ে আদৌও আন্দোলন সফল করা যাবে কি না।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনীতি অনেকটাই কূটনৈতিক পরিম-লে আবর্তিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বন্ধুরাষ্ট্র ও উন্নয়ন অংশীদার বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার নানামুখী কর্মকান্ড ও তার প্রভাব নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সম্পাদকীয় বিভাগের সাঈদ জুবেরী
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে সৌদি আরব ও ইসরায়েল ঐতিহাসিক চুক্তির রূপরেখা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। হোয়াইট হাউস গত শুক্রবার এ কথা জানায়। কয়েক দশকের শত্রুতামূলক সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে উভয় দেশের মধ্যে চুক্তি প্রণয়নে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘চুক্তি চূড়ান্ত করতে সব পক্ষই তৎপর রয়েছে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী ও চরমপন্থিদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠছে কানাডা, যা দিন দিন দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে তুলছে দিল্লির। যুক্তরাষ্ট্রের থিংকট্যাংক সংস্থা হাডসন ইনস্টিটিউটে দেওয়া এক বক্তব্যে এই অভিযোগ করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম গতকাল শনিবার জানায়, গত শুক্রবার হাডসন ইনস্টিটিউটে বক্তব্য দেন জয়শঙ্কর। তার বক্তব্য শেষে একজন সাংবাদিক কানাডার সঙ্গে ভারতের সাম্প্রতিক টানাপোড়েন নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘কানাডার প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি কিছু অভিযোগ করেছেন।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
হৃদরোগ বললে হৃৎপিন্ডের অসুস্থতা বোঝায়। হৃদরোগকে দুই ধরনের। এক জন্মগত হৃদরোগ জন্মের পর হৃৎপিন্ডের দেয়ালে ছিদ্র, ভাল্বের গঠনে ত্রুটিজনিত সমস্যা। এ ধরনের সমস্যা দেখা যায় ১ থেকে ২ ভাগ। দুই অর্জিত হৃদরোগ বাতজ্বরজনিত, যাকে রিউমেটিক হার্ট ডিজিজ (জঐউ) বলা হয়। এটা হার্টের ভাল্বের ক্ষতি করে। অবশিষ্ট প্রায় ৯৭-৯৮% হৃদরোগই মূলত হার্টের নিজের রক্তনালির প্রতিবন্ধকতা বা ব্লকজনিত।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল-ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্টের কাজ প্রায় শেষের দিকে। এ প্রকল্পে ঋণ দিয়ে আসছে জাপান। ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটির এ প্রকল্পে প্রায় ৪৪ হাজার কোটিই ঋণ দেওয়ার কথা জাইকার। এরই অংশ হিসেবে সপ্তম পর্যায়ে জাপানের সঙ্গে আরও ১৫০ কোটি ডলারের ঋণ দেওয়ার চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। গতকাল শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে ঋণের সুদের হারের সীমা। এতে ব্যাংকগুলোতে ঋণের বিপরীতে সুদের হার বেড়েছে। কিন্তু আমানতে সুদের হার বাড়ায়নি ব্যাংকগুলো। এতে ব্যাংকে ঋণ এবং আমানতের সুদের হার দিন দিন বাড়ছে। গত আগস্টে ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান বা স্প্রেড বেড়ে ১৯ মাসে সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে। এই সময় স্প্রেড ছিল ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
গত শুক্রবার দেশের ১৮টি হলে মুক্তি পেয়েছে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী এস ডি রুবেল অভিনীত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘বৃদ্ধাশ্রম’। এই ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবেও আত্মপ্রকাশ হয়েছে তার। ছবিতে তার নায়িকা ইয়ামিন হক ববি। আপাতত সিনেমার প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও নিয়মিত নতুন গান প্রকাশ করছেন। নতুন সিনেমার কাজেও হাত দিয়েছেন। সমসাময়িক বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন মাসিদ রণ
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ‘নিশাত বাহিনীর’ সদস্যরা ভাড়ায় খেটে তান্ডব চালিয়ে বালু লুট করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর প্রতিবাদ করায় একই পরিবারের নারীসহ চারজনকে পিটিয়ে আহত করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ নিশাত বাহিনীর চার সদস্যকে আটক করেছে। গতকাল শনিবার দুপুরে উপজেলার হাটাবো শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় এলাকায় ঘটে এ ঘটনা। এ ঘটনার পর নিশাত বাহিনীর অব্যাহত হুমকির মুখে বালুর গদির মালিক মোবারক হোসেনসহ পরিবারের সদস্যরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
অপেক্ষা আর মাত্র ৪ দিনের। তারপরই শুরু হয়ে যাবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ইংল্যান্ডের চার বছরের রাজত্ব আরও চার বছর টিকিয়ে রাখার আর বাকিদের সেই মুকুট কেড়ে নেওয়ার লড়াই শুরু হবে গতবারের দুই ফাইনালিস্টের লড়াই দিয়েই। শাহরুখ খানকে দিয়ে প্রোমো আর রণবীর সিংকে দিয়ে থিম সং, আইসিসি জানান দিয়েছে ক্রিকেটে বলিউডি আবেগের মিশেল ভালোই থাকবে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
রাজধানীর অদূরে আশুলিয়ায় বহুতল ভবনের একটি ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রী ও তাদের ১২ বছর বয়সী ছেলের গলা কাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার রাত ১০টার দিকে জামগড়া জামগড়া ফকিরবাড়ির মোড় এলাকার মেহেদী হাসানের মালিকানাধীন ছয়তলা ভবনের চারতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
‘জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে আমার স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলাম সুস্থ করতে। কিন্তু ফিরে এলো লাশ হয়ে। কয়েকজন আনসার সদস্যের কারণে মাত্র এক সপ্তাহে আমার পুরো পরিবার এলোমেলো হয়ে গেছে। অভিযোগ করেছিলাম হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষের কাছে। তারা তদন্ত কমিটি গঠন করে আনসার টিমকে বদলি করে দায় সারতে চায়। কিন্তু আমার সংসার যে এলামেলো হয়ে গেল, এর বিচার কি শুধু বদলি?’ কথাগুলো বলছিলেন, রাজধানীর শ্যামলী এলাকার বাসিন্দা সেলিম রেজা।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
১৯ শতকে স্পেনে খনিশ্রমিকরা একটি গুহায় খননকাজ চালানোর সময় জুতার মতো কিছু বস্তু খুঁজে পান। পরে সেগুলো ঘাসের তৈরি জুতা বলে নিশ্চিতও হওয়া যায়। তবে জুতাগুলোর বয়স কত তখন ধারণা ছিল না গবেষকদের। সম্প্রতি কার্বন ডেটিংয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ায় গেছে, আবিষ্কৃত জুতাগুলো কম করে হলেও ছয় হাজার বছর আগের।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
এক দফা দাবিতে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহ জেলায় নতুন করে ২২টি মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় প্রায় পৌনে তিন শো নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। এ ছাড়া সাভারের আমিনবাজারে বিএনপির সমাবেশ শেষে হেমায়েতপুর এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ও গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে উপজেলায় বিএনপির ৪০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
মালদ্বীপে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন বিরোধীদলীয় প্রার্থী মোহাম্মদ মুইজু (৪৫)। দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে প্রাথমিক ফলাফলে তাকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। গতকাল শনিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সান এমবি। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ২ লাখ ৮২ হাজার ৮০৪ জনের ভোট দেওয়ার কথা ছিল। তবে নির্বাচনে ভোটদানের হার ছিল ৮৬ শতাংশ, যা প্রথম দফার ৭৯ শতাংশের চেয়ে বেশি।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম ও কুমিল্লার বটগ্রাম মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা নুরুল হক। আলেমদের অবস্থান সুসংহত করাসহ জেলার মাদ্রাসাগুলোকে একতাবদ্ধ রাখা ও শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তার বিশেষ অবদান রয়েছে। সাদাসিধে চলাফেরায় অভ্যস্ত আশি বছর বয়সী এই আলেম বেশ কয়েকটি মাদ্রাসায় দীর্ঘদিন ধরে হাদিসের বিশুদ্ধতম গ্রন্থ সহিহ বোখারি শরিফের দরস দেন। তার বর্ণাঢ্য জীবন নিয়ে লিখেছেন শামসুদ্দীন সাদী
বিস্তারিত পড়ুন এখানে
রক্তশূন্যতা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ একটি বিষয়। রক্তশূন্যতা অন্য রোগের সঙ্গে একটি উপসর্গ হতে পারে। কখনোবা নিজেই একটি রোগ হতে পারে। রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কোনো কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে নেমে গেলে তাকে বলা হয় অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা।
শরীরে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর লোহিত রক্তকণিকার অভাব হলে অ্যানিমিয়া হয়। ফলে রক্ত পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন বহনে অক্ষম হয়ে পড়ে। অ্যানিমিয়া অস্থায়ী বা দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে এবং হালকা থেকে গুরুতর পর্যন্ত হতে পারে।
রক্তাল্পতার সবচেয়ে প্রধান লক্ষণগুলির মধ্যে একটি হল ক্লান্তি। এ ছাড়া অন্যান্য লক্ষণগুলোর মধ্যে হলো,
দুর্বলতা
অনিয়মিত হৃদস্পন্দন
মাথা ঘোরা বা হালকা মাথাব্যথা
ঠান্ডা হাত পা
ফ্যাকাশে বা হলুদ ত্বক
নিঃশ্বাসের দুর্বলতা
বুক ব্যাথা
মাথাব্যথা
বেশিরভাগ অ্যানিমিক রোগীদের প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ মিলিগ্রাম আয়রন খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। রক্তাল্পতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে যে খাবারগুলি তা হল,
ফলমূলে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। প্রতিদিন আয়রনযুক্ত ফল যেমন আপেল, টমেটো, বেদানা, কলা, আঙ্গুর, কমলা, গাজর ইত্যাদি খেলে রক্তশূন্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই সরাসরি আয়রন গ্রহণ করতে প্রতিদিন ২-৩ টি ফল খেতে ভুলবেন না।
পালং শাকের মতো গাঢ় শাক-সবজি আয়রনের একটি বড় উৎস। এ ছাড়া বিভিন্ন রকম সবজি, যেমন কচু শাক, কচুর লতি, কচু, পালং শাক, বিট, লেটুস, ব্রকোলি, ধনিয়া পাতা এবং পুদিনা পাতা নিয়মিত খেলে রক্তশূন্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কারণ এই শাক সবজিগুলোতে আয়রনের পাশাপাশি ফলিক এসিড আছে যা রক্তের হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
বাদাম এবং বীজ হল সবচেয়ে পুষ্টিকর-ঘন খাবার। এক আউন্স পেস্তা একজন ব্যক্তির প্রয়োজনীয় দৈনিক আয়রনের ৬.১ ভাগ সরবরাহ করে থাকে। বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও শণ বীজ, সূর্যমুখী বীজ, কুমড়ো বীজ, পেস্তা, আখরোট এগুলো শরীরের প্রয়োজনীয় আয়রন দিয়ে থাকে।
মাংস ও মাছে রয়েছে শরীরের জন্য পর্যাপ্ত আয়রন। বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ আয়রনের ভাল উৎস। তাছাড়া ছোট মাছ যেমন-শিং মাছ, টেংরা মাছ ইত্যাদি সব মাছেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। রক্ত স্বল্পতায় ভুগছেন এমন রোগীদের জন্য সবজির সাথে মুরগির মাংসের স্যুপ আয়রন সমৃদ্ধ খাবার তৈরি করতে পারে।
এ ছাড়া কলিজা, স্যামন মাছ, টুনা, চর্বিহীন গরুর মাংস, চিংড়ি, মুরগির মাংসও রক্ত স্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।
উচ্চ স্তরের আয়রন ও প্রোটিনের সমৃদ্ধ উৎস হল ডিম। যাদের রক্ত স্বল্পতা রয়েছে তাদের সকালেওর নাস্তায় ডিম অবশ্যই রাখা উচিত। ডিমের মধ্যে রয়েছে প্রোটিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। রক্তস্বল্পতা কমিয়ে শরীরে রক্তের পরিমাণ বাড়াতে ডিম খুব উপকারী। ডিমের কুসুমের মধ্যে থাকা আয়রন শরীরে লোহিত রক্তের কণিকার পরিমাণ বাড়ায়।
দুধ শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও প্রোটিন যোগাতে সাহায্য করে। দুধে খুব বেশি পরিমাণে আয়রন না থাকলেও এতে প্রায় সব রকমের ভিটামিন আছে। এছাড়াও দুধে আছে পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম। এই খাদ্য উপাদানগুলো রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়িয়ে রক্তশূন্যতা দূর করতে সহায়তা করে। তাই রক্তশূন্যতার রোগীদের জন্য নিয়মিত দুধ খাওয়া উপকারী।
অ্যানিমিয়া বা রক্ত স্বল্পতা রোগীদের জন্য মটরশুটি এবং মসুর ডালকে একটি সুপারফুড বলে মনে করা হয়। আধা কাপ মসুর ডালে প্রায় ৩.৩ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে, যা সারাদিনে শরীরের চাহিদার প্রায় ২০%। মটরশুটি এবং ডাল প্রচুর পরিমাণে আয়রন সরবরাহ করে।
এ ছাড়া ছোলা, কালো শিম, সয়াবিন এগুলোতেও প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে যা শরীরে রক্ত উৎপাদনে সাহায্য করে।
কুইনোয়া, ওটস, গম, ফোর্টিফাইড পাস্তা, শস্য জাতীয় খাবারে প্রয়োজনীয় আয়রন পাওয়া যায়। এগুলি সকলেই আয়রন সমৃদ্ধ এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
মধু আয়রনের একটি ভালো উৎস। আয়রন ছাড়াও মধুতে কপার ও ম্যাঙ্গানিজ আছে। এই উপাদানগুলো শরীরে হিমোগ্লোবিন প্রস্তুত করতে সহায়তা করে। তাই রক্তশূন্যতা দূর করতে প্রতিদিন ১ চামচ মধুর সাথে পরিমাণগত লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন।
১. কিছু ধরণের খাবার শরীর থেকে আয়রন শোষণ করে থাকে। তাই শরীরে রক্ত স্বল্পতা থাকলে এই সমস্ত খাবার না খাওয়াই শ্রেয়। যেমন দই, কাঁচা দুধ, পনির, ব্রকলি, টোফু, চা-কফি ইত্যাদি।
২. খাবার খাওয়ার এক ঘণ্টা আগে–পরে চা, কফি, কোনো কোমল পানীয় খেলে খাবারের আয়রন শরীরে ঠিকভাবে শোষিত হতে পারে না। তাই এরকম অভ্যাস থাকতে বদলে ফেলুন।
৩. খালিপেটে ফল খাবেন না। ফলের ভিটামিন সি খাবারের আয়রনকে শোষিত হতে সাহায্য করে।
৪. মাছ, মাংস ও ডিম খাওয়ার পর দুধের খাবার খাওয়া ঠিক নয়।
৫. অতিরিক্ত ভাঁজা-পোড়া বা জাঙ্ক ফুড খাওয়া উচিত নয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’