
মধুপুরের মোহন মিয়া তখন মধ্যপর্যায়ের মাতব্বর, লেখালেখিতে মাঝ গাঙে, সারা গাঁয়ে তখন এদিক-সেদিক তাকানোর মাতম চলছে। ওস্তাদরা বলছেন হয় ডান নয় বাম একটা পক্ষে যেতে হবে, নিরপেক্ষ থাকতে গিয়ে নিজেকে উভয় পক্ষ থেকে ছোড়া তীরে বৈষম্য বঞ্চনা বেড়াজালে আটকানো মানে নিজের সঙ্গে নিজের প্রতারণা। এটা কি ঠিক, এ প্রশ্ন উঠছে। মোহন মিয়া ভাবল এদিক-সেদিক তাকানোর জন্য যে চশমা দরকার তা তো তার নেই। গাঁয়ে ইতিমধ্যে মাঝামাঝি তাকানোর জোর দাবি উঠছে। সবাই বলছে এদিক কিংবা সেদিক কোনো দিকেই ভরসা নেই। যে যায় লঙ্কায় সেই হয়ে যায় রাবণ। মোহন মিয়া এ পক্ষেও না ও পক্ষেও নাসে নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা শুরু করল। খোদ নিরপেক্ষতারই পায়ের তলায় মাটি রাখেনি পক্ষ-বিপক্ষের লোকেরাই।
কিন্তু মোহন মিয়ার আকিঞ্চন আকাক্সক্ষা, তার বড় শখ ও স্বপ্ন একদিন নাতিশীতোষ্ণতার সুবাতাস বইতেই হবে মধুপুরের মৌবনে। মধুপুরের গ্রামটাকে সোনার গাঁ বানানোর কথা যারা বলেন তারা আসলে দেখা গেল মাছ চাষের লক্ষ্য যেমন থাকে মাছগুলোকে খাওয়ার জন্যই, মাছ সত্যিকার অর্থে হৃষ্টপুষ্ট হোক, সুস্বাদু হোক, তাদের সুনাম-সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়–ক সবখানে, এটা যারা চায় না তাদেরই তর সয় না পাছে অপর পক্ষ তা সাবাড় করে ফেলে। সুতরাং মাছের বংশবৃদ্ধি নয় মোটামুটি খাওয়ার মতো হলেই মাছ ধরো আর খাও। মোহন মিয়া দেখে সোনার গাঁকে সোনা তো দূরের কথা রৌপ্যের পর্যায় পর্যন্ত যেতে দিচ্ছে না কেউ। চারদিকে শুধু খাই খাই ভাব। যে যখন যেভাবে পারে সবাই খাওয়ায় ব্যস্ত। গাছ বড় হতে দেয় না। মাছ বড় হতে দেয় না। অগত্যা মোহন মিয়া ভাবল সে কোনো পক্ষ নেবে না। খাওয়াতেও না পাওয়াতেও না।
মোহন মিয়ার ওস্তাদ একদিন জিজ্ঞেস করল কীরে তুই দেখি ‘সাতেও না পাঁচেও না’ ব্যাপার কী? মোহন মিয়া বিরস বদনে বলে, না স্যার দেখি কী হয়, কতক্ষণ নিরপেক্ষ থাকতে পারি। একদিন না একদিন উভয়পক্ষের সংখ্যা ভারী হবেই। ওস্তাদ প্রমাদ গুনলেন আর বললেন মোহন একটা পক্ষে থাকাই ভালো, তা-না হলে তুই বড় হতে পারবিনে। তোকে দুই পক্ষই টেনে নামাবে। তুই যদি দাঁড়াতেই না পারিস তুই দৌড়াবি কী করে। তোকে তো এগুতে হবে। সাথে মধুপুর গ্রামকেও।
অটল অনড় মোহন মিয়া ভাবল কোনো পক্ষে গেলেই তো নিরপেক্ষতার পথ থেকে সরে আসা হবে। আপস করা হবে। এ কারণেই তো সমাজ ও অর্থনীতি এগুচ্ছে না। নিরপেক্ষতা শব্দটির ক্লিয়ারেন্স নেই বলে সে চিন্তা-চেতনা আচার-আচরণে, কথা-কাজ ও আমলে মধ্যপন্থা অবলম্বনেরই পণ করল। যদিও এখন যে সময় যাচ্ছে তাতে মধ্যপন্থায় থাকাও তার জন্য বেজায় কঠিন। কোনো পক্ষের দিকে আসলে সে একটু এগুতে থাকলে অপরপক্ষ এসে তাকে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার ভয় দেখায়, ভাঙেও। সাহস করে মোহন মিয়া আবার দাঁড়াবার জন্য তার মতিগতিতে মান বাড়ায় কমায়। আগে যে পক্ষের অনুকূলে ছিল সে তারাই এখন তাকে বিপক্ষ মনে করে। মোহন মিয়া তবুও ভাবে, যে যা ভাবে ভাবুক এর জন্য নিজের লাভ-লোকসানের ধার না ধেরে মোহন মিয়া মধ্যপন্থা অবলম্বনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
মোহন মিয়া শিখেছে ইংরেজিতে একটা কথা আছে বীপবংং ড়ভ ধহুঃযরহম রং নধফ অর্থাৎ কোনো কিছুর বাড়াবাড়িই খারাপ। মাত্রা অতিক্রম করলে অনেক ভালো জিনিস মন্দ রূপ বা আকার ধারণ করতে পারে। যেমন মাত্রা অতিক্রম করলেই সাহস হঠকারিতায়, আত্মউৎসর্গ আত্মহত্যায়, প্রতিযোগিতা হিংসায়, ধর্মভীরুতা ধর্মান্ধতায় পরিণত হতে পারে। অবস্থা বিশেষে সমালোচনা পরচর্চায়, প্রশংসা চাটুবাদে, তেজ ক্রোধে, দেশপ্রেম দেশদ্রোহিতার স্তরে নেমে আসতে পারে। নাতিশীতোষ্ণ তাপমাত্রা যেমন সবার পছন্দ তেমনি সুরের মধ্যে পঞ্চম-স্বরই মিষ্ট এবং শ্রেষ্ঠ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বারবার বলেছেন তোমরা কোনো কিছুতেই সীমালঙ্ঘন কোরো না। আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীকে ভালোবাসেন না। লোকমান হাকিম তার ছেলেক উপদেশের ছলে বলেছেন, মাটিতে হাঁটবে মধ্যম মেজাজে আর তোমার স্বর হওয়া উচিত মোলায়েম, স্বরের মধ্যে গাধার স্বরই নিকৃষ্ট।
প্রত্যেকের উচিত খাওয়া-দাওয়া, চাওয়া-পাওয়া, চিন্তা-চেতনা, আশা-প্রত্যাশা, আগ্রহ-আকাক্সক্ষার ক্ষেত্রে একটা পরিমিত বোধ মেনে চলা। ক্যানভাসের রং ও তুলির সুষম সমন্বয়ে শিল্পের সার্থকতা ফুটে ওঠে। পারিপার্শ্বিক সব কিছুর পরিমিত অবস্থান ও শৃঙ্খলাম-িত উপস্থাপনার মধ্যেই সৌন্দর্যের যথার্থ বিকাশ। নিয়মনিষ্ঠা পালন ও সহনশীলতা প্রকাশ যে কোনো পরিবেশ পরিস্থিতিতে দান করে এক অনুপম মর্যাদা। অধিক ভোজনই অধিকাংশ রোগ-বালাইয়ের কারণ। পরিমিত আহার শরীর ও মনের জন্য অপরিহার্য। আর মাত্রাতিরিক্ত চাহিদা সরবরাহে সমস্যা সৃষ্টি করে। আয়-বৈষম্যে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। অধিক পরিশ্রমে মন ও শরীর ভেঙে পড়ে। অতি কথনে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়। অতিরিক্ত সব কিছু খারাপ। অতিভক্তি চোরের লক্ষণ নামে একটি প্রবাদও চালু আছে।
বাড়াবাড়ি কখনোই সুখকর হয় না। অতি উত্তেজিত ব্যক্তির হার্ট বিট ও রক্তের চাপ বাড়ে। অতি দ্রুত চলাচলকারী গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সমূহ বিপদের কারণ ঘটাতে পারে। চলনে আচার-আচরণে ব্যবহারে মধ্যম পন্থা অবলম্বনই সেরা অভ্যাস বলে বিবেচিত।
আনন্দ-সর্বনাশে অধিক উচ্ছ্বাস কিংবা অতিশোকে কাতর হতে নেই। আনন্দের পরে বিষাদ আসছে আর বিষাদের পর আনন্দ আসবেই এই বোধ ও বিশ্বাসে সব পর্যায়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা বা রাখার উপকারিতা অস্বীকার করা যায় না। ভগবদ গীতার (অধ্যায়-২ শ্লোক-১৫) যেমন বলা হয়েছে, ‘O best (Arjuna), the person who is not disturbed by happiness and distress and is steady in both is certainly eligible for liberation.’
প্রত্যেকেরই চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে, আশা-আকাক্সক্ষা ও প্রয়াশ প্রচেষ্টার মধ্যে পরিমিতি বোধ থাকা চাই। আমি বা আমরা যা পারি বা আমাদের প্রাপ্য তার বেশি করতে যাওয়া বা পাওয়ার আকাক্সক্ষা বা চেষ্টায় নানান বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। আহারের ক্ষেত্রে কথাটা আরও বেশি খাটে। অধিক আহার শরীরকে দুর্বল করে দেয়। যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু আহার করা উচিত। অতি শ্লথগতির গাড়ি গন্তব্যে পৌঁছাতে যেমন বিলম্ব করে তেমনি অতি দ্রুতগতির গাড়ি গন্তব্যে হয়তো আদৌ নাই পৌঁছাতে পারে। অতি দ্রুতগামী সে খরগোশের কাহিনী আমরা জানি। কচ্ছপের ধীর ও পরিমিত গতির কাছে তার পরাজয় ছিল নিশ্চিত। অতিবর্ষণে বন্যা হয়, অধিক শীতে কাতর হয়, অতি গরমে হাঁসফাঁস করে সবাই। সবার স্বপ্ন থাকে বসন্তের বাতাস, নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশ, পরিমিত বর্ষা আর মধ্যম বা পঞ্চম সুরের গান।
মধ্যপন্থা অবলম্বনে বিপদের ঝুঁকি কম। মধ্যম অবস্থানে থাকলে উঁচু মাত্রায় উঠতে যেমন সুবিধা হয়, নিচু মাত্রায় নামার ক্ষেত্রেও অসুবিধা হয় না। অথচ অতি নিম্ন মাত্রায় থাকলে তাকে মধ্যপন্থা পেরিয়ে উচ্চ পন্থায় যেতে বেশ বেগ পেতে হয়। আবার উচ্চ পন্থা থেকে মধ্য পন্থা হয়ে নিম্ন পন্থায় নামতেও বেশ বিব্রতকর হতে হয়। বিশ্বাস ও বয়ানে মধ্যপন্থা নিরাপদ ও সুশ্রাব্য। কোকিলের স্বর পঞ্চম ও মধ্যমানের বলেই এত মিষ্ট। পক্ষান্তরে কাকের স্বর সপ্তম, কর্কশ সুশ্রাব্য নয়। মধ্যপন্থার সুর বা স্বর সহজে অন্যের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। পক্ষান্তরে উচ্চ গ্রামের গান বা কথাবার্তা আশ্রাব্য ও ঝগড়া বাদানুবাদের ভাষা। চরম অবস্থান গ্রহণে সহজে সমঝোতা হয় না। সমাধান খুুঁজে পাওয়া কষ্টকর হয়। মিষ্টি সুরের গান বা কথা সব সময়ই মোলায়েম ও কোমল প্রশান্তির পরিচয় তুলে ধরে আনন্দ ও উপভোগের সুযোগ সৃষ্টি করে।
জীবনযাত্রায় সব পর্যায়ে মধ্যপন্থা অবলম্বনের আবশ্যকতা রয়েছে। সম্পদ সসীম বা সীমিত অথচ চাহিদা অসীম বা অবারিত। সীমিত সম্পদ দিয়ে অসীম চাহিদা মেটাতে সবাইকে পরিমিতিবোধ মেনে চলতেই হয় সময় সীমাবদ্ধ। করণীয় অনেক কিছু। স্বল্প সময়ের সদ্ব্যবহার করতে গিয়ে বিচক্ষণতার বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে অতি ধীরে কিংবা অতি দ্রুততার সাথে কোনো কিছু চাওয়া বা করতে যাওয়া সমস্যা হয়েই থাকে।
যারা প্রকৃত বুদ্ধিমান তারা আজকের ঘটনা নিয়ে আজ ভাবেন না। এটি তারা ভেবেছিলেন বেশ কিছুদিন আগে এবং আজ যা ভাবছেন, তা আজকের জন্য নয়, ভাবছেন বেশ কিছুদিন পরের জন্য। যারা তাৎক্ষণিক ঘটনায় আপ্লুত, বিমোহিত, বিমর্ষ কিংবা উৎফুল্ল হন, তারা অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে খুব একটা স্বচ্ছ ধারণা পোষণ করতে সক্ষম বলে মনে হয় না। সময় যেহেতু দ্রুত পরিবর্তনশীল, সেহেতু তাৎক্ষণিক বলে কিছু নেই এবং তাৎক্ষণিকের ঘটনায় চূড়ান্ত সবকিছু ভাবাও সঠিক নয়। তবে তাৎক্ষণিকের ঘটনা কিন্তু তাৎক্ষণিক নয়, এটি সময়ের ধারাবাহিকতারই একটি অংশ। সে কারণেও তাৎক্ষণিকই চূড়ন্ত নয়। অতীতের অভিজ্ঞতা বর্তমানের কার্যকারণকে এবং ভবিষ্যতের প্রতি দৃষ্টিক্ষেপে প্রভাব ফেলতে বাধ্য। সুতরাং বর্তমানের ঘটনাকে সতর্ক ও সংহত ও সংযমের সঙ্গে গ্রহণ করা উচিত, পরবর্তী সময়ে কী ঘটে তার জন্য। এটা করতে পারলে উত্তেজনা পরিহার করা সম্ভব।
ভোগবাদীরা অবশ্য বলেন, কাল কী হবে, সে চিন্তা পরে হবে আজকেরটা উদযাপন বা উপভোগ করে নাও। এটা তারা বলেন উপভোগ বা আনন্দের জন্য, দুঃখ-ভোগের বেলায় নয়। আনন্দ উপভোগের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের উৎকণ্ঠার বাদ সাধা উচিত নয় কিন্তু সময়ের ধারাবাহিতার প্রশ্নে তা একটা বিভ্রান্তি বিশেষ, সংশয়বাদীরা তাই তৎক্ষণিকতাকে উপভোগ করতে পারেন না।
কিন্তু সংশয় আর সংযম-সুস্থিরতা এক কথা নয়। সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা হলো মধ্যপন্থা। সুতরাং সিদ্ধান্ত হলো, আনন্দের হোক আর দুঃখের হোক তাৎক্ষণিকতায় বিভোর ও বিমর্ষ হওয়া, কোনোটাই কাম্য নয়। সংযম সংহত উপায়ে তা গ্রহণ এবং উদ্বেগ উৎকণ্ঠারহিত উপায়ে তা গ্রহণ করা উচিত। মধ্যপন্থা অবলম্বনই শ্রেষ্ঠ উপায়।
লেখক: এনবিআর-এর সাবেক চেয়ারম্যান ও কলামিস্ট
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা নানা কারণে বারবার বাধাগ্রস্ত হয়ে আসছে। দাবি আদায়ে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে মানুষের সংগঠিত হওয়া, প্রতিবাদ জানানো কিংবা ধর্মঘট অন্যতম গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু এই অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম আমরা বলপ্রয়োগ ও সহিংসতায় পর্যবসিত হতে দেখেছি। রাজনৈতিক আন্দোলন কিংবা দেশশাসন দুটোই করে রাজনৈতিক দল। কিন্তু এসব সংঘাতে প্রাণ হারায়, পঙ্গু হয় সাধারণ মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধনকৃত অলাভজনক স্বাধীন সংগঠন আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডেটা প্রজেক্টের (এসিএলইডি) ২০১৮ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেই রাজনৈতিক বৈরিতা ও বিরোধে সবচেয়ে বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেখা গেছে নির্বাচনের আগে ও পরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বৈরিতার চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই অস্থির হয়ে পড়ছে রাজনৈতিক পরিবেশ, উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজপথ। এর জের ধরে একদিকে অভিযোগ আসছে দমন-পীড়ন, বলপ্রয়োগ ও অপকৌশলের, অন্যদিকে সংঘাত-সহিংসতা ও প্রাণহানির পুরনো শঙ্কা ফিরে আসছে।
ঢাকায় বিএনপির আগামী ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতি সে সাক্ষ্যই দেয়। সর্বশেষ গতকাল বুধবার, রাজধানীর নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এতে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতারা। পুলিশের দাবি, ‘বিএনপির নেতাকর্মীরা অনুমতি ছাড়াই রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করছিলেন। তাদের সরে যেতে বারবার অনুরোধ করা হলেও তারা কথা শোনেনি। একপর্যায়ে তাদের সরিয়ে দিতে গেলে তারা পুলিশের ওপর হামলা করেন।’ ঘটনা যাই হোক না কেন পুলিশ প্রাণহানির দায় এড়াতে পারে না। রাজনৈতিক সংঘাতে পুলিশকে বলপ্রয়োগের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে কৌশলী হতে হবে। আবার ক্ষমতাসীনদের বেলায় যেখানে সেখানে রাস্তা আটকে সভা-সমাবেশে পুলিশকে কখনো ‘অনুমতি’ নিয়ে তৎপর হতে যেখানে দেখা যায় না, সেখানে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে আইন কি কেবল বিরোধী দমনের জন্য তৈরি কি না। উপরন্তু, পুলিশের একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে বলপ্রয়োগ করে ঢুকে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার যেমন অপ্রত্যাশিত তেমনি জব্দ তালিকায় খিঁচুড়ি থাকার ঘটনাটিও উল্লেখযোগ্য। অন্যদিকে, নয়াপল্টনের মতো রাজধানীর ব্যস্ত সড়কে সমাবেশ যে যানজটের শহরে জনভোগান্তির মাত্রা বাড়িয়ে তোলে সেটিও ভুলে গেলে চলবে না। তবে, এর আগে বিএনপির অন্যান্য বিভাগীয় সমাবেশের ঠিক আগে প্রতিটি ক্ষেত্রে সেখানে ‘কাকতালীয়ভাবে’ পরিবহন ধর্মঘটের বিষয়টি বিএনপিকে সমাবেশের স্থান নিয়ে অনড় অবস্থানের দিকে ঠেলে দিয়েছে কি না ভাবা দরকার।
আগামী ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবসও বটে। এ প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ এক বিবৃতিতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ অনুষ্ঠান এবং মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ মানবাধিকার সনদের বিভিন্ন বিধান মেনে চলার অঙ্গীকার রক্ষায় বাংলাদেশকে তাগিদ দিয়েছে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ‘আইনের শাসনের প্রতি সম্মান দেখাতে এবং সহিংসতা, হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন থেকে বিরত থাকতে আমরা সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানাই।’ এর আগে, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছিলেন রাজনৈতিক সহিংসতা ও নির্বাচনী অস্থিতিশীলতা বিনিয়োগকারীদের ভীত করে। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে দেশে রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে মোট ৩৮৭টি। এতে নিহত হয়েছেন ৫৮ জন এবং আহত হয়েছেন ৫ হাজার ৪০০ জন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় নির্বাচনসহ রাজনৈতিক কারণে দেশের প্রায় সব জেলায় এসব সহিংস ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন ভবিষ্যতে, বিশেষ করে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। তেমনটি ঘটলে তা হবে দেশ ও জনগণের জন্য অশুভ ও অকল্যাণকর, যা বলাই বাহুল্য। এ অবস্থায় উভয় দলের রাজনীতিকদের শুভবুদ্ধির উদয় হওয়া জরুরি। আমরা জানি, বিশ্ব একটি অর্থনৈতিক সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো সমস্যা সমাধানের উদ্যোগকেই শ্রেয় বলে মনে করি আমরা। অনেকে মনে করেন, দেশের দুই বড় রাজনৈতিক দলের মধ্যে যে বৈরী সম্পর্ক চলছে, তা দেশকে পিছিয়ে দিচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধপরায়ণতার রাজনীতি পরিহার করে দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করে, তাহলে উন্নয়ন আরও বেগবান হবে। সংঘাত-সহিংসতার পথ ধরে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হলে দেশে গণতন্ত্র বিপন্ন হতে পারে, যা কারও কাম্য নয়। এসব বিষয় মাথায় রেখে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে সবাই সহনশীলতার পরিচয় দেবেন, এটাই প্রত্যাশা।
দুনিয়ায় মানুষের সব কাজই গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে কোরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে তা দেখতে পাবে এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে তাও দেখতে পাবে।’ সুরা যিলযাল : ৭-৮
আয়াতে আরবি ‘যাররাহ’ শব্দকে বস্তুর সবচেয়ে ছোট অংশ বোঝাতে বাংলায় ‘অণু পরিমাণ’ বলা হয়েছে। কোনো কোনো আলেমের কাছে পিঁপড়া থেকেও ছোট বস্তুকে যাররাহ বোঝায়। কেউ বলেন, মাটিতে হাত মেরে ঝেড়ে ফেলার পর হাতে যে মাটি অবশিষ্ট থাকে, সেটাই যাররাহ। আবার কেউ বলেন, ঘরের দরজা কিংবা জানালার ছিদ্র দিয়ে সূর্যের ছটার সঙ্গে যে ধূলিকণা দেখা যায়, সেটাই হলোযাররাহ।
ইসলামের দৃষ্টিতে এই অণু পরিমাণ সৎকাজেরও মূল্য রয়েছে, অনুরূপ অবস্থা অসৎকাজের। অসৎকাজ যত ছোটই হোক না কেন, অবশ্যই তার হিসাব হবে এবং তা কোনোক্রমেই উপেক্ষার মতো নয়। তাই কোনো ছোট সৎকাজকে ছোট মনে করে তা পরিত্যাগ করা উচিত নয়। কারণ এ ধরনের অনেক সৎকাজ মিলে দয়াময় আল্লাহর কাছে একটি অনেক বড় সৎকাজ গণ্য হতে পারে। অনুরূপভাবে কোনো ছোট ও নগণ্য অসৎকাজও না করা। কারণ এ ধরনের অনেকগুলো ছোট গোনাহ একত্র হয়ে বিরাট গোনাহের স্তূপ হয়ে যেতে পারে। হাদিসে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো, তা এক টুকরো খেজুর দান কিংবা একটি ভালো কথা বলার বিনিময়েই হোক না কেন।’ সহিহ বোখারি : ৬৫৪০
হাদিসে আরও ইরশাদ হয়েছে, সাহাবি হজরত আবু যর গিফারি (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন, ‘কোনো ভালো কাজকে সামান্য মনে করো না। যদিও তা হয় তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ।’ সহিহ মুসলিম : ২৬২৬
হাদিসে একজন মুসলিমের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎকে ভালো কাজ উল্লেখ করে এই ভালো কাজের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। স্বয়ং আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রিয় সাহাবিকে এ বিষয়ে উৎসাহিত করেছেন। বর্ণিত হাদিসের আলোকে ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, ‘একজন মুসলিমের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ মুস্তাহাব ও পছন্দনীয় আমল। রাসুলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত।’
আল্লাহর রাসুল (সা.) একটি মূলনীতি উল্লেখ করে এ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। মূলনীতিটি হচ্ছে, ‘তুমি কোনো ভালো কাজকেই সামান্য মনে করো না।’ এটা দুনিয়ায় করণীয় সম্পর্কে একটি বড় মূলনীতি। কোনো ভালো কাজকে সামান্য মনে করে ত্যাগ না করা। বিষয়টি ভালোভাবে অনুধাবন করলে অনেক ধরনের বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।
প্রশ্ন হলো, ভালো ও মন্দকাজ কাকে বলে? ইবাদত-বন্দেগি অবশ্যই ভালো কাজ। এই মূলনীতি ইবাদত-বন্দেগির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। একটু সময় পেলেন, তা দুই রাকাত নফল নামাজ, আধা পৃষ্ঠা কোরআন মজিদ তেলাওয়াত কিংবা তাসবিহ পাঠ করতে পারেন। আবার ওই সময়টুকুই আপনি অযথা গল্পগুজব, গিবত-শেকায়েতে নষ্ট করতে পারেন।
এভাবে আচার-ব্যবহার, লেনদেন, কথাবার্তা, সামাজিকতা ও চলাফেরার ক্ষেত্রেও ইচ্ছা করলে ছোট ছোট ভালো কাজ করা যায়। মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলা, সত্যিকারের অভাবীকে ঋণ পরিশোধের সময় বাড়িয়েও দেওয়া থেকে শুরু করে সবার সঙ্গে নম্র-কোমল ব্যবহার করা। সাধ্যমতো মানুষের উপকার করা। আগন্তুককে পথ চেনানো ইত্যাদি। এর বিপরীত কাজগুলোই গোনাহের কাজ।
কোনো কাজ সামান্য মনে করার বিভিন্ন কারণ হতে পারেকাজটি ছোট বলে সামান্য মনে করা, নিজের অবস্থার নিরিখে কাজটিকে সামান্য মনে করা ইত্যাদি। অনেক মানুষের এমন ধারণা, আমি তো অনেক গোনাহ করেছি, অনেক পাপ করেছি, আমার সামান্য নেক আমলে আর কী হবে? না, শরিয়ত বলে, তুমি সামান্য নেক আমলকেও সামান্য মনে করো না। হতে পারে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই ভালো কাজের বিনিময়ে তোমাকে আরও ভালো কাজ করার তওফিক দান করবেন, হতে পারে এই ভালো কাজের কারণে আল্লাহতায়ালা তোমাকে মাফ করে দেবেন। অন্য হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মেয়েদের সম্বোধন করে বলেছেন, ‘হে মুসলিম মেয়েরা! কোনো প্রতিবেশী তার প্রতিবেশিনীর বাড়িতে কোনো জিনিস পাঠানোকে সামান্য ও নগণ্য মনে করো না, তা ছাগলের পায়ের একটি খুর হলেও।’ সহিহ বোখারি : ৬০১৭
রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্যত্র বলেন, ‘হে আয়েশা! যেসব গোনাহকে ছোট মনে করা হয়, সেগুলো থেকে দূরে থাকো। কারণ আল্লাহর দরবারে সেগুলো সম্পর্কেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ ইবনে মাজাহ : ৪২৪৩
নবী করিম (সা.) আরও বলেন, ‘সাবধান, ছোট গোনাহসমূহ থেকে নিজেকে রক্ষা করো। কারণ সেগুলো সব মানুষের ওপর একত্র হয়ে তাকে ধ্বংস করে দেবে।’ মুসনাদে আহমাদ : ১/৪০২
সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে আরেকটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের জুতার ফিতার চেয়েও জান্নাত তোমাদের হাতের নাগালে আর জাহান্নামও তেমনি।’ সহিহ বোখারি : ৬১২৩
আল্লামা ইবনুল জাওযি (রহ.) বলেন, হাদিসের অর্থ, জান্নাতে যাওয়া খুব সোজা। শুধু নিয়ত শুদ্ধ করো আর আল্লাহর হুকুম মানো। তেমনি জাহান্নামের যাওয়াও কঠিন নয়। মনমতো চলো আর গোনাহ করো। ইবনে বাত্তাল (রহ.) বলেন, বর্ণিত হাদিসে এই বার্তা রয়েছে যে, আল্লাহর আনুগত্য মানুষকে জান্নাতে পৌঁছায় আর আল্লাহর অবাধ্যতা জাহান্নামে নিক্ষেপ করে। আর কোনো কোনো ক্ষেত্রে আনুগত্য ও অবাধ্যতা দুটোই হয় খুব সহজ কাজে।
সহিহ বোখারির ভাষ্যকার ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, ‘সুতরাং প্রত্যেকের কর্তব্য, সামান্য ভালো কাজও সামান্য ভেবে ছেড়ে না দেওয়া। আর সামান্য গোনাহতেও সামান্য ভেবে লিপ্ত না হওয়া। কারও তো জানা নেই, কোন ভালো কাজটি তার জন্য আল্লাহর করুণা ও বরকত বয়ে আনবে। তেমনি কোন মন্দকাজ তাকে আল্লাহর অসন্তুষ্টির শিকার করবে।’
ইসলামের এতসব শিক্ষা ও নির্দেশনার সারকথা, ভালো মানুষ হওয়া। আমাদের সব শিক্ষা-দীক্ষা, সেটা জাগতিক শিক্ষা হোক বা ধর্মীয় শিক্ষা, প্রকৃত অর্থে যা শিক্ষা তার সারকথা হচ্ছে, ‘তুমি একজন ভালো মানুষ হও।’
লেখক : শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক লেখক
গত ২৮ নভেম্বর চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। ফল ঘোষণার পরপরই প্রতি বছরের মতো পরীক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্য ও পরিচিতরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিনন্দন জানাতে শুরু করে এবং নিজেদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে থাকে। এটি একটি বহুল প্রচলিত প্রথায় পরিণত হয়েছে।
প্রত্যেকবার যখন পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়, তখন সবাই যারা জিপিএ ৫ পায় তাদের অভিনন্দন জানাই এবং তারা কত মেধাবী সেটা বোঝানোর জন্য বিভিন্ন স্তুতিবাক্য বর্ষণ করতে থাকে। যারা ভালো করেছে এবং ভালো কিছু অর্জন করেছে তাদের অভিনন্দন জানাব সেটা খুব স্বাভাবিক, তাতে কোনো সমস্যা নেই। তবে চিন্তার বিষয় হলো, এই যে যারা জিপিএ ৫ পেয়েছে তাদের অভিনন্দন জানাতে গিয়ে আমরা এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়ি। আমরা ভাবি না যে যারা জিপিএ ৫ পায়নি তাদের কথা ভুলে গেলে চলবে না।
মনে প্রশ্ন আসে, যারা জিপিএ ৫ পায়নি বা প্রত্যাশিত ফল অর্জন করতে পারেনি তাদের কথা কি আমরা কখনো ভাবি? তারা মানসিকভাবে কেমন বোধ করে? ওই শিক্ষার্থীরাও যে চেষ্টা করেছে সে কথা কেউ বলে না বা সে কথা স্বীকার করার প্রয়োজন বোধ করে না। সমাজ হিসেবে আমরা যে তাদের প্রচেষ্টাকে অগ্রাহ্য করছি তাদের মানসিকতার ওপর এর প্রভাব কী?
এ বছর পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছে। ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জিপিএ ৫ পেয়েছে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন, যা পরীক্ষার্থীর মাত্র ১৩.৫১ শতাংশ। এর মানে হলো আমরা শুধু ১৩.৫১ শতাংশ শিক্ষার্থীকে অভিনন্দন জানাচ্ছি, বাকি প্রায় ৭৪ শতাংশ শিক্ষার্থী আমাদের শুভেচ্ছার বাইরে রয়ে যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো, এই ৭৪ শতাংশ শিক্ষার্থী কি ভালো ফল আনার জন্য চেষ্টা করেনি। অবশ্যই করেছে, কিন্তু সে কথা ফল প্রকাশের পর সবাই ভুলে যাই।
এর কারণ সামাজিকভাবে আমরা যারা অর্জন করে শুধু তাদের অভিনন্দন জানাতে এবং যারা চেষ্টা করেও কাক্সিক্ষত ফল আনতে পারে না তাদের ভুলে যেতে বা অবহেলা করতে অভ্যস্ত এবং এই বিশ্বাস নিয়ে বেড়ে উঠি। শুধু সফলদের সাফল্যের জয়গান গাওয়ার এই প্রবণতার অনেক অর্থ ও দীর্ঘপ্রসারী প্রভাব আছে। সমাজে এ ধরনের প্রবণতার অর্থ হলো আমরা শুধু ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করার বিষয়ে বেশি মনোযোগী। ফলের পেছনের গল্প অথবা কে কতটুকু পরিশ্রম করেছে সেটা বিবেচ্য নয়। সমাজের জন্য যেন শুধু ফল গুরুত্বপূর্ণ, অন্যকিছু নয়। এ কারণে, আমরা এটা মানতে নারাজ যে অন্যান্য শিক্ষার্থী যারা জিপিএ ৪ বা তার বেশি পেয়েছে তারাও কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যয়ন করেছে। যার ফলে জিপিএ ৫ ছাড়া আমরা আর কিছু বুঝি না, বুঝতে চাই না।
সমাজ যখন এমন আচরণ করে তখন শিক্ষার্থীরা ভুল বার্তা পায়। তারা বিশ্বাস করা শুরু করে, আপনি যদি এই সমাজে সম্মান নিয়ে টিকে থাকতে চান তবে একটি জিনিসই গুরুত্বপূর্ণ, আর তা হলো সাফল্য! এই শিক্ষার্থীরা যত বড় হতে থাকে তারা তত সাফল্যের পেছনে দৌড়াতে থাকে। এই অসুস্থ প্রতিযোগিতার প্রভাব এই শিক্ষার্থীদের জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে প্রতিফলিত হয়। যত সামনে যেতে থাকে এর প্রতিফলন এবং সাফল্যের নেশা তত মারাত্মক রূপ ধারণ করে।
যখন এই ছেলেমেয়েরাই পরবর্তী পর্যায়ে এইচএসসি পরীক্ষার জন্য পড়ালেখা করে তখন তারা তাদের পড়াশোনাকে আর উপভোগ করে না, বরং মন ও মননে শুধু জিপিএ ৫ পাওয়ার চিন্তা ঘুরপাক খায়। বিশদ জ্ঞান অর্জন না করে আগ্রাসী অধ্যয়নে (টিয়া পাখির মতো) বেশি মনোযোগী হয়ে পড়ে। পরবর্তীকালে, যখন এই শিক্ষার্থীরা তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পা রাখবে, তখনো তাদের উচ্চশিক্ষার প্রতি মানসিকতার পরিবর্তন আসে না। পুরোপুরি ফলনির্ভর হয়ে যায় পড়াশোনা।
এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখন আর শেখে না, আগ্রহ দেখায় না, অন্বেষণ করে না, করে শুধু বিসিএসের বই মুখস্থই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কারণ তারা জানে ভালোভাবে পড়াশোনা করলেও দিন শেষে সমাজ তা খেয়াল করবে না। সমাজের মানুষ শুধু দেখবে বিশ্ববিদ্যালয় শেষে আপনি বিসিএস ক্যাডার বা ছাত্রজীবন শেষে সরকারি চাকরি পেয়েছেন কি না।
সাফল্যের পেছনে এই দৌড় সারা জীবন চলতে থাকে। ফলে, জীবন আর উপভোগ্য ও শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা থাকে না, হয়ে যায় লাভ-ক্ষতির ব্যালেন্স-শিট। একসময় এ জীবন দুর্বিষহ মনে হয়, ভাবে কিছুই তো পেলাম না। সফলতা বুঝি আরও পাওয়া যেত, মনে হয় আরও অনেক দূর যাওয়া যেত। আসলে এই দৌড় একটা মোহ, এক ধরনের সামাজিক বিভ্রম (সোশ্যাল প্রোগ্রামিং)।
ফলনির্ভরতার পরিপ্রেক্ষিতে একজন শিক্ষার্থীর প্রচেষ্টাকে মূল্যায়ন করার এই প্রবণতা এই দর্শনের দিকেও ইঙ্গিত করে যে, আমরা ভালো মানবিক গুণাবলিসম্পপন্ন এবং পরোপকারী মনোভাবের ভালো মানুষ তৈরি করতে আগ্রহী নই। এই কারণে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা জিপিএনির্ভর, আর শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবইনির্ভর। এর বাইরে না শিক্ষাব্যবস্থার কিছু দেওয়ার আছে, না শিক্ষার্থীদের কিছু নেওয়ার আছে। এই সংস্কৃতি অনুকরণীয় না, মঙ্গলময়ও না।
বাস্তবে যারা সফল হয়নি বা প্রত্যাশিত ফল পায়নি তাদের সাহায্যে আমাদের বেশি এগিয়ে আসা প্রয়োজন। কাক্সিক্ষত ফল অর্জন না করার কষ্টে তারা যেন মানসিকভাবে দুর্বল বোধ না করে। যখন পরিবারের সদস্য ও বন্ধুরাও তাদের প্রচেষ্টাকে আমলে নেয় না, এই কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আরও ভেঙে পড়ে।
এমন সংস্কৃতি শিক্ষার্থীদের দুভাবে প্রভাবিত করে। এক, এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই অপমান সহ্য করতে না পেরে কঠিন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়। এ কারণে প্রতি বছরের এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর কাক্সিক্ষত ফল না পেয়ে সারা দেশে বহু শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার খবর পাওয়া যায়। দ্বিতীয়ত, এমন আচরণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়ালেখা নিয়ে এক ধরনের চাপ ও ভয় তৈরি করে। শিক্ষার্থীদের মনে পরীক্ষা নিয়ে স্থায়ী ভয় ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়। পরিসংখ্যান ও সমীক্ষা অন্তত এমনটাই বলছে।
সম্প্রতি আঁচল ফাউন্ডেশন ‘বেড়েই চলেছে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার : আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়া কতটা জরুরি’ শীর্ষক একটি সমীক্ষায় উঠে আসা বিভিন্ন তথ্য সংবাদমাধ্যমের সামনে তুলে ধরে। এই সমীক্ষা অনুসারে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত আট মাসে ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল স্কুলশিক্ষার্থী এবং এমন বেপরোয়া সিদ্ধান্তের পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া এবং পড়াশোনার চাপকে উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে আঁচল ফাউন্ডেশন। এই সমীক্ষা থেকে এটা স্পষ্ট বোঝা যায় যে, শুধু সফলদের বাহবা ও উৎসাহ দেওয়ার যে সংস্কৃতি আমরা তৈরি করেছি তা অন্যদের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।
আমাদের এই মানসিক সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে যেতে হবে এবং প্রচলিত রীতি বদলাতে হবে। আসুন যারা পিছিয়ে পড়েছে এবং জিপিএ ৫ অর্জন করতে পারেনি তাদেরও অভিনন্দন জানাই। আসুন আমরা সেই শিক্ষার্থীদেরও অভিনন্দন জানাই যারা চেষ্টা করেছে, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। পরিবর্তনের এখনই সময়।
লেখক: কলামিস্ট
কবি জন মিলটনের জন্ম ১৬০৮ সালের ৯ ডিসেম্বর লন্ডনের ব্রিড স্ট্রিটে। তার বাবা সিনিয়র জন মিলটন ও মা সারাহ জেফরি। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন গম্ভীর প্রকৃতির ও চিন্তাশীল। প্রথমে তাকে সেন্ট পল স্কুলে ভর্তি করা হয়। পরে কেমব্রিজের ক্রাইস্ট কলেজে ভর্তি হন এবং ১৬২৯ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক লাভ করেন। ১৬৩২ সালে স্নাতকোত্তর লাভের পর তাকে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে কর্মভার গ্রহণের অনুরোধ জানানো হলে তিনি তা গ্রহণ না করে হর্টনে বাবার কাছে চলে যান। উদ্দেশ্য চার্চের পাদ্রি হওয়া। এ সময় তিনি অনেক কবিতা রচনা করেন। তার মনে আকাক্সক্ষা ছিল রোম পরিভ্রমণের। ১৬৩৭ সালে মায়ের মৃত্যুর পর তার সাংসারিক বন্ধন শিথিল হয়ে আসে। বাবার অনুমতি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন দেশ ভ্রমণে। বহু খ্যাতনামা কবি ও সাহিত্যিকের সংস্পর্শে তিনি নিত্যনতুন জ্ঞানসুধা পান করতে থাকেন। রোমে প্রবাসজীবনের বেশির ভাগ সময় কাটে ভ্যাটিকান লাইব্রেরিতে বসে। রোমের অতীত সভ্যতা নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে ক্ল্যাসিক সাহিত্যের প্রেমে পড়ে যান তিনি। ১৬৪৯ সালে রাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি লাতিন সেক্রেটারি হিসেবে নিযুক্ত হন। এ সময় তার জীবনে দুর্ভোগ নেমে আসে। তিনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। ১৬৬০ সালে তিনি চাকরিচ্যুত হন। তার সব রচনা আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। লন্ডনের অদূরে গ্রামের ছোট্ট কুটিরে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নেন। এ সময় তিনি রচনা করেন দুটি মহাকাব্য ‘প্যারাডাইস লস্ট’ ও ‘প্যারাডাইস রিগেইন্ড’। তিনি মুখে বলে যেতেন আর তা লিপিবদ্ধ করতেন তার মেয়ে। ১৬৭৪ সালের ৮ নভেম্বর তিনি মারা যান।
ভাড়া করা বিমানে উড়িয়ে নিয়েও মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রথম ম্যাচে একাদশে রাখল না দিল্লি ক্যাপিটালস। আসরে তাদের শুরুটাও ভালো হলো না। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারল মোস্তাফিজবিহীন দিল্লি।
ঘরের মাঠে ৫০ রানের জয়ে আসর শুরু করল লক্ষ্ণৌ। ১৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দিল্লি থামে ৯ উইকেটে ১৪৩ রানে। ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়ে লক্ষ্ণৌয়ের জয়ের নায়ক মার্ক উড।
এদিন দিল্লির ব্যাটিং ছিল পুরো ফ্লপ। দলের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ৪৮ বলে ৫৬ রান করেছেন। পাশাপাশি রাইলি রোশো ২০ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু বাকিরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ফলে যা হরার তাই হলো ম্যাচের ফল।
এর আগে স্বাগতিক দলের হয়ে ঝড় তোলেন কাইল মেয়ার্স। এই ক্যারিবীয়ান ৩৮ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন। ২টি চারের সঙ্গে হাঁকান ৭টি ছক্কা। এ ছাড়া নিকোলস পুরান ২১ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯৩ রানের পুঁজি গড়ে লক্ষ্ণৌ।
গত অক্টোবরের পর আর্সেনালের জার্সিতে প্রথম গোলের দেখা পেলেন গাব্রিয়েল জেসুস। তার আবার জোড়া গোল। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের জ্বলে ওঠার দিনে লিডস ইউনাইটেডকে উড়িয়ে ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ফের আট পয়েন্টে এগিয়ে গেল আর্সেনাল।
ঘরের মাঠে শনিবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ৪-১ গোলে জিতে আর্সেনাল। স্পট কিকে দলকে প্রথম এগিয়ে দেন জেসুস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বেন হোয়াইট ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। এর খানিক পরই জোড়া গোল পূর্ণ করেন জেসুস।
এরপর লিডস একটি গোল শোধ করলেও গ্রানিত জাকার গোলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
আন্তর্জাতিক বিরতি থেকে ফেরার পর এটিই প্রথম ম্যাচ ছিল আর্সেনালের। বিরতিতে যাওয়ার আগে নিজেদের মাঠে একই ব্যবধানে তারা হারিয়েছিল ক্রিস্টাল প্যালেসকে।
এই জয়ে ২৯ ম্যাচে ৭২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল গানাররা। ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর প্রথমবার প্রিমিয়ার লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখছে আর্সেনাল। তাদের সঙ্গে গত লিগের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ব্যবধান ৮।
গানারদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে সিটি। একই দিন তারাও নিজেদের মাঠে লিভারপুলকে উড়িয়ে দিয়েছে ৪-১ গোলে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।